মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৯:০২ পূর্বাহ্ন

ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমন সংশয় নিরসন

-হাসিবুর রহমান বুখারী*


(১৪তম কিস্তি) 

কে দাজ্জালকে প্রতিহত করবেন?

ইতিপূর্বে আমরা আলোচনা করেছি যে, আখেরী যামানায় মুসলিমদের সমস্ত রকমের দুঃখ, কষ্ট, অত্যাচার ও উৎপীড়ন থেকে মুক্ত করতে এই উম্মতের মধ্যে ইমাম মাহদী নামে একজন সৎ লোক আগমন করবেন। মাক্বামে ইবরাহীম এবং রুকনে ইয়ামানীর মধ্যবর্তী স্থানে মুসলিমগণ তাঁর হাতে বাই‘আত করবে। তাঁকে হত্যা করার জন্য সিরিয়া থেকে একদল সৈন্য প্রেরণ করা হবে। সৈন্যদলটি যখন মক্কার পথে ‘বায়দা’ নামক স্থানে পৌঁছবে তখন ভূমিধসে সকল সৈন্য ধ্বংস হয়ে যাবে। আল্লাহ তা‘আলা ইমাম মাহদীকে এভাবেই তাঁর শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করবেন। তিনি মুসলিমদের খলীফা হয়ে শরী‘আতের মাধ্যমে বিচার-ফায়সালা করবেন। তাঁর যামানায় মুসলিমদের মাঝে চরম সুখ-শান্তি বিরাজ করবে। যেমন আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। নবী (ﷺ) বলেন, ‘আখেরী যামানায় আমার উম্মতের মধ্যে ইমাম মাহদীর আগমন ঘটবে। তাঁর শাসনামলে আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে, ভূপৃষ্ঠ প্রচুর ফসল উৎপন্ন করবে, তিনি মানুষের মাঝে সমানভাবে প্রচুর সম্পদ বিতরণ করবেন, গৃহপালিত পশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং উম্মতে মুহাম্মাদীর সম্মান বৃদ্ধি পাবে। তিনি সাত বছর কিংবা আট বছর জীবিত থাকবেন।[১] অন্যত্র তিনি বলেন, ‘আমার বংশ থেকেই মাহদী আবির্ভূত হবে, সে হবে প্রশস্ত ললাট ও উন্নত নাকবিশিষ্ট। পৃথিবী হতে যুলুম-অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়ন দূরীভূত করে সমপরিমাণ ন্যায়বিচার ও ইনসাফ দ্বারা তা পরিপূর্ণ করে দিবেন। সাত বছর পর্যন্ত তিনি রাজত্ব করবেন’।[২] মূলত মুসলিমদের এই সুখ-শান্তি বিনষ্ট করার জন্যই দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে।

ক্বিয়ামতের বড় আলামাতগুলোর মধ্যে প্রকাশের দিক থেকে প্রথম হল দাজ্জালের আগমন। ইমাম মাহদীর আগমনের কিছু কাল পরেই দাজ্জালের আগমন ঘটবে এবং তারও কিছু কাল পরে হাদীছের ভাষানুযায়ী তাকে হত্যা করার জন্য ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমন ঘটবে। অন্তত কিছুটা সময় হলেও তারা তিনজন একইসাথে পৃথিবীতে অবস্থান করবে। সুতরাং বলা যায় যে, ইমাম মাহদী না আসা পর্যন্ত দাজ্জাল আসবে না। আর দাজ্জাল না আসা পর্যন্ত ঈসা (আলাইহিস সালাম) আসবেন না।

একদিন ইমাম মাহদী দামেস্কের মসজিদে ফজরের ছালাতের সময় ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর সাথে সাক্ষাৎ করবেন। প্রথমে তিনি ঈসা (আলাইহিস সালাম)-কে ছালাতের ইমামতি করার অনুরোধ জানাবেন। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করলে স্বয়ং ইমাম মাহদী ইমামতি করবেন। ঈসা (আলাইহিস সালাম) ইমাম মাহদীর পিছনে মুক্তাদী হিসাবে ছালাত আদায় করবেন। অতঃপর তিনি ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর সাথে যোগ দিয়ে দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বের হবেন এবং দাজ্জালকে হত্যার কাজে ঈসা (আলাইহিস সালাম)-কে সহায়তা করবেন। অতঃপর তিনি সাত বছর মতান্তরে নয় বছর পৃথিবীতে বসবাস করে মৃত্যুবরণ করবেন।

আল-কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর অবতরণ

শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, অন্তিমকালে ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর এই ধরনীতে অবতরণ করা ক্বিয়ামতের দশটি বড় আলামতের দ্বিতীয়টি। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

وَ اِنَّہٗ  لَعِلۡمٌ  لِّلسَّاعَۃِ  فَلَا تَمۡتَرُنَّ بِہَا وَ اتَّبِعُوۡنِ ؕ ہٰذَا صِرَاطٌ مُّسۡتَقِیۡمٌ- وَ لَا یَصُدَّنَّکُمُ الشَّیۡطٰنُ ۚ اِنَّہٗ  لَکُمۡ عَدُوٌّ  مُّبِیۡنٌ

‘আর নিশ্চয় ‘ঈসা ক্বিয়ামতের নিশ্চিত নিদর্শন, কাজেই তোমারা ক্বিয়ামতে সন্দেহ কর না। আর তোমরা আমারই অনুসরণ কর। এটাই সরল পথ। শয়তান যেন তোমাদেরকে কিছুতেই বাধা না দেয়, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’। (সূরা আয-যুখরুফ : ৬১-৬২)। অর্থাৎ ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমনের মাধ্যমে জানা যাবে ক্বিয়ামত কতটা সন্নিকটে। তাঁর আগমন পৃথিবী ধ্বংস এবং পরকাল সংঘটিত হওয়ার বড় প্রমাণ।[৩]

‘ইলমুন শব্দের অর্থ নিদর্শন। অধিকাংশ মুফাসসিরের নিকট এখানে অর্থ হল- ক্বিয়ামতের নিকটতম সময়ে তাঁর আসমান থেকে অবতরণ হবে। এ কথা অনেক ছহীহ ও বহুধা সূত্রে বর্ণিত হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। আর এই অবতরণ এ কথার নিদর্শন হবে যে, ক্বিয়ামত অতি নিকটে। এই জন্যই কেউ কেউ এটাকে ‘আঈন এবং লামে যবর দিয়ে ‘আলামুন (عَلَمٌ) পড়েছেন। যার অর্থ হয়, নিদর্শন। আবার কারো নিকট তাঁকে ক্বিয়ামতের নিদর্শন গণ্য করা হয়েছে তাঁর জন্মের অলৌকিকতার ভিত্তিতে। অর্থাৎ যেভাবে মহান আল্লাহ তাঁকে বিনা পিতায় সৃষ্টি করেছেন, তাঁর এই জন্ম প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষকে পুনরায় জীবিত করবেন। সুতরাং আল্লাহর অলৌকিক ক্ষমতার দিকে লক্ষ্য করলে ক্বিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ থাকে না। إِنَّهُ তে সর্বনাম থেকে উদ্দিষ্ট হলেন ঈসা (আলাইহিস সালাম)। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,

وَ اِنۡ مِّنۡ اَہۡلِ الۡکِتٰبِ اِلَّا لَیُؤۡمِنَنَّ بِہٖ قَبۡلَ مَوۡتِہٖ ۚ وَ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ  یَکُوۡنُ عَلَیۡہِمۡ  شَہِیۡدًا

‘কিতাবধারীদের মধ্য থেকে প্রত্যেকে তার মৃত্যুর পূর্বে তার উপর ঈমান আনবেই। আর ক্বিয়ামতের দিন তিনি তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হবেন’ (সূরা আন-নিসা : ১৫৯)।

উপরিউক্ত আয়াতের আলোকে ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ইবনু জারীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মত এটিই যে, ইয়াহুদীরা হিংসা-বিদ্বেষ ও শক্রতার কারণে তাৎক্ষণিকভাবে যদিও নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে চিন্তা করে না এবং ঈসা (আলাইহিস সালাম) সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে, এমনকি মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর নবুওয়তকেও অস্বীকার করে, কিন্তু তাদের মৃত্যুর পূর্বে এমন এক সময় আসবে, যখন তাদের দৃষ্টির সম্মুখে সত্য উন্মোচিত হবে, তখন তারা যথার্থই বুঝতে পারবে যে, ঈসা (আলাইহিস সালাম) ও মুহাম্মাদ (ﷺ) সম্পর্কে তাদের ধারণা একান্তই ভ্রান্তিপূর্ণ ছিল। ইয়াহুদীরা ধারণা করে যে, ঈসা (আলাইহিস সালাম)-কে হত্যা করা হয়েছে, আর খ্রীষ্টানরা মনে করে যে, তাকে শূলবিদ্ধ করা হয়েছে। এ আয়াতে (مَوْتِه) অর্থাৎ ‘মৃত্যুর পূর্বে’ শব্দে ইয়াহুদীদের মৃত্যুর দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এমতাবস্থায় অত্র আয়াতের তাফসীর এই যে, প্রত্যেক ইয়াহুদীই তার অন্তিম মুহূর্তে যখন আখেরাতের দৃশ্যাবলী অবলোকন করবে, তখন ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর নবুওয়তের সত্যতা ও নিজেদের বাতুলতা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে এবং তার প্রতি ঈমান আনয়ন করতে বাধ্য হবে। কিন্তু তখনকার ঈমান তাদের আদৌ কোন উপকারে আসবে না, যেমন লোহিত সাগরে ডুবে মরার সময় ফিরাউনের ঈমান ফলপ্রসূ হয়নি।

এ আয়াতের দ্বিতীয় তাফসীর যা ছাহাবায়ে কিরাম ও তাবিঈগণের বিপুল জামা‘আত কর্তৃক গৃহীত ও ছহীহ হাদীছ দ্বারা সমর্থিত হয়েছে, তা হল (مَوْتِه) ‘তার মৃত্যু’ শব্দের সর্বনামে ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর মৃত্যু বোঝানো হয়েছে। এমতাবস্থায় অত্র আয়াতের তাফসীর হল- কিতাবধারীরা এখন যদিও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর প্রতি সত্যিকার ঈমান আনে না, ইয়াহুদীরা তো তাকে নবী বলে স্বীকারই করে না, বরং ভণ্ড, মিথ্যাবাদী ইত্যকার আপত্তিকর বিশেষণে ভূষিত করে। অপরদিকে খ্রীষ্টানরা যদিও ঈসা মাসীহ‌ (আলাইহিস সালাম)-কে ভক্তি ও মান্য করার দাবীদার, কিন্তু তাদের মধ্যে একদল ইয়াহুদীদের মতই ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার এবং মৃত্যুবরণ করার কথায় স্বীকৃতি প্রদান করে চরম মূর্খতার পরিচয় দিচ্ছে। কুরআনুল কারীমের এই আয়াতে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে, ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টানরা বর্তমানে যদিও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর প্রতি যথাযথ ঈমান রাখে না, বরং শৈথিল্য বা বাড়াবাড়ি করে, কিন্তু ক্বিয়ামতের নিকটবর্তী যুগে তিনি যখন পুনরায় পৃথিবীতে অবতরণ করবেন, তখন এরাও তাঁর প্রতি পুরোপুরি ঈমান আনয়ন করবে। খ্রীষ্টানরা তখন মুসলিমদের মত ছহীহ আক্বীদা ও বিশ্বাসের সাথে ঈমানদার হবে। ইয়াহুদীদের মধ্যে যারা তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করবে, তাদেরকে নিধন ও নিশ্চিহ্ন করা হবে, অবশিষ্টরা ইসলাম গ্রহণ করবে। তখন সমগ্র দুনিয়া থেকে সর্বপ্রকার কুফরী ধ্যান-ধারণা, আচার-অনুষ্ঠান উৎক্ষিপ্ত হয়ে যাবে, সর্বত্র ইসলামের একচ্ছত্র প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হবে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা পরবর্তীতে আসছে।

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, এর অর্থ ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর মৃত্যুর পূর্বে’। এ বাক্যটি তিনি তিনবার উচ্চারণ করেন। অন্য হাদীছে এসেছে, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ! ‘অবশ্যই ইবনে মারইয়াম ‘ফাজ্জ আর রাওহা’ থেকে হাজ্জ বা উমরা অথবা উভয়টির জন্যই ইহরাম বাঁধবেন’।[৪]

মোটকথা ক্বিয়ামতের পূর্বে ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমনের ব্যাপারটি সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হয়েছে। যখন তিনি আসবেন তখন সমস্ত বিভ্রান্ত ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টানরা ঈসা (আলাইহিস সালাম) ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সমর্থ হবে।[৫] অনুরূপভাবে মুতাওয়াতির হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত যে, ঈসা (আলাইহিস সালাম) আখিরী যামানায় অবতরণ করবেন। আবূ হুরায়রা, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ, উছমান ইবনু আবিল ‘আছ, আবূ উমামাহ, নাওওয়াস ইবনু সাম‘আন, আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল ‘আছ সহ অসংখ্য ছাহাবী থেকে এ সম্পর্কে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। এই সমস্ত হাদীছে তাঁর অবতরণের স্থান ও সময় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তিনি শাম তথা দামেশক্বের উজ্জ্বল মিনারায় অবতরণ করবেন। আর এটি ঘটবে ফজরের ছালাতের ইক্বামতের সময়।[৬]

(১) ছহীহ বুখারীর মধ্যে ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন 'بَابُ نُزُوْلِ عِيْسَى ابْنِ مَرْيَمَ عَلَيْهِمَا السَّلَام' অর্থাৎ মারইয়াম পুত্র ‘ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর অবতরণ’। (অধ্যায় নং ৬০, অনুচ্ছেদ নং ৪৯)। অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত হাদীছ দু’টি বর্ণনা করেন। যেমন,

(ক) আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, শপথ সেই সত্তার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, শীঘ্রই তোমাদের মধ্যে মারইয়ামের পুত্র ঈসা (আলাইহিস সালাম) শাসক ও ন্যায় বিচারক হিসাবে আগমন করবেন। তিনি ‘ক্রুশ’ ভেঙ্গে ফেলবেন, শূকর হত্যা করবেন এবং তিনি যুদ্ধের সমাপ্তি টানবেন। তখন সম্পদের ঢেউ বয়ে চলবে। এমনকি কেউ তা গ্রহণ করতে চাইবে না। তখন আল্লাহকে একটি সাজদাহ করা সমগ্র দুনিয়া এবং তার মধ্যকার সমস্ত সম্পদ হতে অধিক মূল্যবান বলে গণ্য হবে। অতঃপর আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, তোমরা ইচ্ছা করলে এর সমর্থনে এ আয়াতটি পড়তে পার, ‘কিতাবীদের মধ্যে প্রত্যেকে তাঁর (অর্থাৎ ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর) মৃত্যুর পূর্বে তাঁকে বিশ্বাস করবেই এবং ক্বিয়ামতের দিন তিনি তাদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবেন’ (সূরা আন-নিসা : ১৫৯)।[৭]

উপরিউক্ত হাদীছের আলোকে হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সে সময় পৃথিবীর বুকে একটিই ধর্ম অবশিষ্ট থাকবে, আর তা হল- ইসলাম। সেদিন জিজিয়া কর প্রদান করার মত কোন আহলুজ-জিম্মাহ অবশিষ্ট থাকবে না’।[৮] অন্যত্র তিনি বলেন, আলেমগণ বলেছেন, ঈসা (আলাইহিস সালাম)-কে আখিরী যামানায় অবতরণ করার তাৎপর্য হল- ইয়াহুদীদের ভ্রান্ত আক্বীদার যোগ্য জবাব দেয়া। কেননা তারা ধারণা পোষণ করে যে, তারা তাকে হত্যা করেছে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের মিথ্যা প্রকাশ করে দেবেন এবং তিনিই তাদেরকে হত্যা করবেন। বলা হয় যে, তিনি উম্মতে মুহাম্মাদীর সংস্কারক হিসাবে আসবেন এবং দাজ্জালকে হত্যা করবেন।[৯]

(খ) আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের অবস্থা কেমন হবে যখন তোমাদের মধ্যে মারইয়াম পুত্র ঈসা (আলাইহিস সালাম) অবতরণ করবেন আর তোমাদের ইমাম তোমাদের মধ্য থেকেই হবে।[১০]

(২) আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না রোমীয় (সিরিয়ার অন্তর্গত) সেনাবাহিনী আমাক অথবা দাবিক নহরের কাছে অবতীর্ণ হবে। তখন তাদের মুকাবিলায় মাদীনা হতে এ দুনিয়ার সর্বোত্তম মানুষের এক দল সৈন্য বের হবে। তারপর উভয় দল সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান হবার পর রোমীয়গণ বলবে, তোমরা ঐ সমস্ত লোকেদের থেকে পৃথক হয়ে যাও, যারা আমাদের লোকেদেরকে বন্দী করেছে। আমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করব। তখন মুসলিমগণ বলবেন, আল্লাহর শপথ আমরা আমাদের ভাইদের থেকে কখনো সম্পর্কচ্ছেদ করব না। পরিশেষে তাদের পরস্পর যুদ্ধ হবে। এ যুদ্ধে মুসলিমদের এক তৃতীয়াংশ সৈন্য পলায়ন করবে। আল্লাহ তা‘আলা কখনো তাদের তাওবাহ গ্রহণ করবেন না। সৈন্যদের এক তৃতীয়াংশ নিহত হবে এবং তাঁরা হবে আল্লাহর কাছে শহীদদের মাঝে সর্বোত্তম শহীদ। আর সৈন্যদের অপর তৃতীয়াংশ বিজয়ী হবে। জীবনে আর কখনো তাঁরা ফিতনায় আক্রান্ত হবেন না। তাঁরাই কুস্তুন্তুনিয়া বা কনস্টান্টিনোপল বিজয় করবেন।

অতঃপর তাঁরা নিজেদের তলোয়ার যাইতুন বৃক্ষে লটকিয়ে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ ভাগ করতে থাকবে। এমতাবস্থায় তাঁদের মধ্যে শয়তান উচ্চৈঃস্বরে বলতে থাকবে, দাজ্জাল তোমাদের পেছনে তোমাদের পরিবার-পরিজনের মধ্যে চলে এসেছে। এ কথা শুনে মুসলিমরা সেখান থেকে বের হবে। অথচ এ ছিল মিথ্যা সংবাদ। তাঁরা যখন সিরিয়া পৌঁছবে তখন দাজ্জালের আগমন ঘটবে। যখন মুসলিম বাহিনী দাজ্জালের সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন এবং সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান হতে শুরু করা মাত্রই তৎক্ষণাৎ ছালাতের উদ্দেশ্যে মুয়াযযিন কর্তৃক ইক্বামত দেয়া হবে এবং এ মুহূর্তে ঈসা ইবনু মারইয়াম (আলাইহিস সালাম) আকাশ থেকে দামিশক্বের জুমু‘আহ্ মসজিদের মিনারায় অবতরণ করবেন এবং মুসলিমদের ইমামতি করে ছালাত আদায় করাবেন। আল্লাহর শত্রু দাজ্জাল তাঁকে দেখা মাত্রই বিগলিত হয়ে যাবে যেমন লবণ পানিতে মিশে যায়। যদি ঈসা (আলাইহিস সালাম) তাকে এমনিই ছেড়ে দেন তবে সে নিজে নিজেই বিগলিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। অবশ্য আল্লাহ তা‘আলা ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর হাতে তাকে হত্যা করবেন এবং রক্তমাখা সে বর্শাটি তিনি লোকেদের সকলকেই দেখাবেন।[১১]

(৩) অন্যত্র রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যেই দাজ্জালের আবির্ভাব হবে এবং সে চল্লিশ পর্যন্ত অবস্থান করবে। আমি জানি না চল্লিশ দিন, না চল্লিশ মাস, না চল্লিশ বছর। এ সময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মারইয়াম তনয় ঈসা (আলাইহিস সালাম)-কে প্রেরণ করবেন। তাঁর আকৃতি উরওয়াহ ইবনু মাসউদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর আকৃতির অবিকল হবে। তিনি দাজ্জালকে সন্ধান করে তাকে ধ্বংস করে দিবেন। তারপর সাতটি বছর লোকেরা এমনভাবে অতিবাহিত করবে যে, দু’ব্যক্তির মধ্যে কোন শক্রতা থাকবে না। তখন আল্লাহ তা‘আলা সিরিয়ার দিক হতে শীতল বাতাস প্রবাহিত করবেন। ফলে যার হৃদয়ে কল্যাণ বা ঈমান থাকবে, এ ধরনের কোন লোকই এ দুনিয়াতে আর বেঁচে থাকবে না। বরং এ ধরনের প্রত্যেকের জান আল্লাহ তা‘আলা কবয করে নিবেন। এমনকি তোমাদের কোন লোক যদি পর্বতের গভীরে গিয়ে আত্মগোপন করে তবে সেখানেও বাতাস তার কাছে পৌঁছে তার জান কবয করে নিবে’।[১২]

(৪) আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘দাজ্জাল পূর্বদিক থেকে আগমন করে মদীনায় প্রবেশ করতে চাইবে। এমনকি সে উহুদ পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। এরপর ফেরেশতারা তার চেহারা (গতি) সিরিয়ার দিকে ফিরিয়ে দেবেন এবং সেখানেই সে ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর হাতে ধ্বংস হবে’।[১৩]

(৫) তাঁর অবস্থা সম্পর্কে সর্বাধিক বিস্তারিত হাদীছ হচ্ছে নাওয়াস ইবনু সাম‘আন (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত হাদীছটি। সেখানে বলা হয়েছে, ‘একদা সকালে রাসূল (ﷺ) দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করলেন। আলোচনার সময় তিনি তার ব্যক্তিত্বকে খুবই তুচ্ছ করে তুলে ধরলেন। পরে অনেক গুরুত্ব সহকারে উপস্থাপন করলেন যাতে তাকে আমরা ঐ বৃক্ষরাজির নির্দিষ্ট এলাকায় (আবাসস্থল সম্পর্কে) ধারণা করতে লাগলাম। এরপর আমরা সন্ধ্যায় আবার তাঁর কাছে গেলাম। তিনি আমাদের মধ্যে এর প্রভাব দেখতে পেয়ে বললেন, তোমাদের ব্যাপার কী? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আপনি সকালে দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করেছেন এবং এতে আপনি কখনো ব্যক্তিত্বকে তুচ্ছ করে তুলে ধরেছেন, আবার কখনো তার ব্যক্তিত্বকে বড় করে তুলে ধরেছেন। ফলে আমরা মনে করেছি যে, দাজ্জাল বুঝি এই বাগানের মধ্যেই বিদ্যমান। এ কথা শুনে তিনি বললেন, দাজ্জাল নয়, বরং আমি তোমাদের ব্যাপারে অন্য কিছুর অধিক আশঙ্কা করছি। তবে শোন, আমি তোমাদের মধ্যে বিদ্যমান থাকাবস্থায় যদি দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ হয় তবে আমি নিজেই তাকে প্রতিহত করব। তোমাদের প্রয়োজন হবে না। আর যদি আমি তোমাদের মাঝে না থাকাবস্থায় দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ হয়, তবে প্রত্যেক মুমিন লোক নিজের পক্ষ হতে তাকে প্রতিহত করবে। প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আল্লাহ তা‘আলাই হলেন আমার পক্ষ হতে তত্ত্বাবধানকারী। দাজ্জাল যুবক এবং ঘন চুল বিশিষ্ট হবে, চোখ আঙ্গুরের ন্যায় হবে। আমি তাকে কাফির ‘আবদুল উয্যা ইবনু কাতান এর মত মনে করছি। তোমাদের যে কেউ দাজ্জালের সময়কাল পাবে সে যেন সূরা আল-কাহফের প্রথমোক্ত আয়াতসমূহ পাঠ করে। সে ইরাক ও সিরিয়ার মধ্যপথ হতে আবির্ভূত হবে। সে ডানে-বামে দুর্যোগ সৃষ্টি করবে। হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা অটল থাকবে।

আমরা প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! সে পৃথিবীতে কয়দিন অবস্থান করবে? উত্তরে রাসূল (ﷺ) বললেন, চল্লিশ দিন পর্যন্ত। এর প্রথম দিনটি এক বছরের সমান, দ্বিতীয় দিন এক মাসের সমান এবং তৃতীয় দিন এক সপ্তাহের সমান হবে। অবশিষ্ট দিনগুলো তোমাদের দিনসমূহের মতই হবে। আমরা প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! যেদিন এক বছরের সমান হবে, সেটাতে এক দিনের ছালাতই কি আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে? উত্তরে তিনি বললেন, না, বরং তোমরা সেদিন হিসাব করে তোমাদের দিনের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে নিবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! দুনিয়াতে দাজ্জালের অগ্রসরতা কী রকম বৃদ্ধি পাবে? তিনি বললেন, বাতাসের প্রবাহ মেঘমালাকে যে রকম হাকিয়ে নিয়ে যায়। সে এক সম্প্রদায়ের কাছে এসে তাদেরকে কুফুরীর দিকে ডাকবে। তারা তার উপর ঈমান আনবে এবং তার আহ্বানে সাড়া দিবে। অতঃপর সে আকাশমণ্ডলীকে আদেশ করবে। আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করবে এবং ভূমিকে নির্দেশ দিবে, ফলে ভূমি গাছ-পালা ও শস্য উৎপন্ন করবে। তারপর সন্ধ্যায় তাদের গবাদি পশুগুলো পূর্বের চেয়ে বেশি লম্বা কুজ, প্রশস্ত স্তন এবং পেটভর্তি অবস্থায় তাদের কাছে ফিরে আসবে।

তারপর দাজ্জাল অপর এক সম্প্রদায়ের কাছে আসবে এবং তাদেরকে কুফুরীর প্রতি ডাকবে। তারা তার কথাকে উপেক্ষা করবে। ফলে সে তাদের নিকট হতে প্রত্যাবর্তন করবে। সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে দুর্ভিক্ষ ও পানির অনটন দেখা দিবে এবং তাদের হাতে তাদের ধন-সম্পদ কিছুই থাকবে না। তখন দাজ্জাল এক পতিত স্থান অতিক্রমকালে সেটাকে সম্বোধন করে বলবে, তুমি তোমার গুপ্তধন বের করে দাও। তখন যমীনের ধন-ভাণ্ডার বের হয়ে তার চতুষ্পার্শে একত্রিত হতে থাকবে, যেমন মধু মক্ষিকা তাদের সর্দারের চারপাশে সমবেত হয়। অতঃপর দাজ্জাল এক যুবক ব্যক্তিকে ডেকে আনবে এবং তাকে তরবারী দ্বারা আঘাত করে তীরের লক্ষ্যস্থলের ন্যায় দু’টুকরো করে ফেলবে। তারপর সে আবার তাকে আহ্বান করবে। যুবক আলোকময় হাস্যোজ্জল চেহারায় তার সম্মুখে এগিয়ে আসবে। এ সময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঈসা ইবনু মারইয়াম (আলাইহিস সালাম)-কে প্রেরণ করবেন। তিনি দুই ফেরেশতার কাঁধের উপর ভর করে ওয়ারস ও জাফরান রংয়ের এর জোড়া কাপড় পরিহিত অবস্থায় দামেশক্ব নগরীর পূর্ব দিকের উজ্জ্বল মিনারে অবতরণ করবেন। যখন তিনি তাঁর মাথা ঝুঁকবেন তখন ফোটা ফোটা ঘাম তাঁর শরীর থেকে গড়িয়ে পড়বে। তিনি যে কাফিরের কাছে যাবেন সে তাঁর শ্বাসের বাতাসে ধ্বংস হয়ে যাবে। তাঁর দৃষ্টি যতদূর পর্যন্ত যাবে তাঁর শ্বাসও ততদূর পর্যন্ত পৌঁছবে। তিনি দাজ্জালকে সন্ধান করতে থাকবেন। অবশেষে তাকে বাবে ‘লুদ’ নামক স্থানে গিয়ে পাকড়াও করবেন এবং তাকে হত্যা করবেন।

অতঃপর ঈসা (আলাইহিস সালাম) ঐ সম্প্রদায়ের নিকট যাবেন, যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা দাজ্জালের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছেন। ঈসা (আলাইহিস সালাম) তাদের কাছে গিয়ে তাদের চেহারায় হাত বুলিয়ে জান্নাতে তাদের স্থানসমূহের ব্যাপারে খবর দিবেন। এমন সময় আল্লাহ তা‘আলা ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর প্রতি এ মর্মে ওয়াহী অবতীর্ণ করবেন যে, আমি আমার এমন বান্দাদের আবির্ভাব ঘটেয়েছি, যাদের সঙ্গে কারোর-ই যুদ্ধ করার ক্ষমতা নেই। অতঃপর তুমি আমার মুমিন বান্দাদেরকে নিয়ে তুর পাহাড়ে চলে যাও। তখন আল্লাহ তা‘আলা ইয়া’জূজ-মা’জূজ জাতিকে পাঠাবেন। তারা ছাড়া পেয়ে পৃথিবীর সব প্রান্তে দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। তাদের প্রথম দলটি ‘বুহাইরায়ে তাবরিয়া’ অর্থাৎ ভূমধ্যসাগর উপকূলে এসে এর সমুদয় পানি পান করে নিঃশেষ করে দিবে। তারপর তাদের সর্বশেষ দলটি এ স্থান দিয়ে যাত্রাকালে বলবে, এ সমুদ্রে কোন সময় পানি ছিল কি?

তারা আল্লাহর নবী ঈসা (আলাইহিস সালাম) এবং তাঁর সাথীদেরকে অবরোধ করে রাখবে। ফলে তাদের নিকট একটি বলদের মাথা বর্তমানে তোমাদের নিকট একশ’ দীনারের মূল্যের চেয়েও অধিক মূল্যবান প্রতিপন্ন হবে। তখন আল্লাহর নবী ঈসা (আলাইহিস সালাম) এবং তাঁর সঙ্গীগণ আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবেন। ফলে আল্লাহ তা‘আলা ইয়া’জূজ-মা’জূজ সম্প্রদায়ের প্রতি আযাব পাঠাবেন। তাদের ঘাড়ে এক প্রকার পোকা হবে। এতে একজন মানুষের মৃত্যুর মত তারাও সবাই মরে নিঃশেষ হয়ে যাবে। তারপর ঈসা (আলাইহিস সালাম) ও তাঁর সঙ্গীগণ পাহাড়ের গর্ত থেকে ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে আসবেন। কিন্তু তারা অর্ধ হাত জায়গাও এমন পাবেন না যথায় তাদের পচা লাশ ও লাশের দুর্গন্ধ নেই। অতঃপর ‘ঈসা (আলাইহিস সালাম) এবং তাঁর সঙ্গীগণ পুনরায় আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা উটের ঘাড়ের মত লম্বা এক ধরনের পাখি পাঠাবেন। তারা তাদেরকে বহন করে আল্লাহর ইচ্ছানুসারে কোন স্থানে নিয়ে ফেলবে।

এরপর আল্লাহ এমন মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন যার ফলে কাঁচা-পাকা কোন গৃহই আর অবশিষ্ট থাকবে না। এতে যমীন বিধৌত হয়ে উদ্ভিদ শূন্য মৃত্তিকায় পরিণত হবে। অতঃপর পুনরায় যমীনকে এ মর্মে নির্দেশ দেয়া হবে যে, হে যমীন! তুমি আবার শস্য উৎপন্ন কর এবং তোমার বরকত ফিরিয়ে দাও। সেদিন একদল মানুষ একটি ডালিম ভক্ষণ করবে এবং এর বাকলের নিচে লোকেরা ছায়া গ্রহণ করবে। দুধের মধ্যে বরকত হবে। ফলে দুগ্ধবতী একটি উটই একদল মানুষের জন্য যথেষ্ট হবে, দুগ্ধবতী একটি গাভী একগোত্রীয় মানুষের জন্য যথেষ্ট হবে এবং যথেষ্ট হবে দুগ্ধবতী একটি বকরী এক দাদার সন্তানদের (একটি ছোট গোত্রের) জন্য। এ সময় আল্লাহ তা‘আলা অত্যন্ত আরামদায়ক একটি বায়ু প্রেরণ করবেন। এ বায়ু সকল মুমিন লোকদের বগলে গিয়ে লাগবে এবং সমস্ত মুমিন মুসলিমদের রূহ কবয করে নিয়ে যাবে। তখন একমাত্র মন্দ লোকেরাই এ পৃথিবীতে অবশিষ্ট থাকবে। তারা গাধার ন্যায় পরস্পর একে অন্যের সাথে প্রকাশ্যে ব্যভিচারে লিপ্ত হবে। এদের উপরই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে।[১৪]

(ইনশাআল্লাহ চলবে)


* মুর্শিদাবাদ, ভারত।

তথ্যসূত্র :
[১]. মুস্তাদরাকুল হাকিম, হা/৮৬৭৩; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৭১১, তাখরীজু সুনান আবী দাঊদ, ৬/৩৪৩ পৃ.; তাখরীজুল মুসনাদ, ১৭/২৫৫ পৃ.।
[২]. আবূ দাঊদ, হা/৪২৮৫, সনদ হাসান, ছহীহুল জামি‘, হা/৬৭৩৬; মিশকাত, হা/৫৩৮২; মুস্তাদরাকুল হাকিম, হা/৮৬৭০।
[৩]. আল-হিদায়া, ১০/৬৬৮৬ পৃ.।
[৪]. ছহীহ মুসলিম, হা/১২৫২।
[৫]. তাফসীরে ইবনে কাছীর, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৫৪।
[৬]. ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৩০৩২৩৮।
[৭]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৪৪৮, ২২২২; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৫।
[৮]. ফাৎহুল বারী, ৬/৫৬৮ পৃ.।
[৯]. ফাৎহুল বারী, ৬/৪৯৩ পৃ.।
[১০]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৪৪৯, ২২২২; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৬৮৪।
[১১]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৮৯৭; ছহীহুল জামি‘, হা/৭৪৩৩; আল-মুসতাদরাক লিল হাকিম, হা/৮৪৮৬; মিশকাত, হা/৫৪২১।
[১২]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৯৪০।
[১৩]. ছহীহ মুসলিম হা/১৩৮০।
[১৪]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৯৩৭ ‘কিতাবুল ফিতান’; তিরমিযী, হা/২২৪০, ইবনু মাজাহ, হা/৪০৭৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৬২৯।




প্রসঙ্গসমূহ »: ঈমান-আক্বীদা
ইসলামী জামা‘আতের মূল স্তম্ভ (১৪তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন
ইসলামী ভ্রাতৃত্বের গুরুত্ব ও মূল্যায়ন - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন
ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা (৪র্থ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আযীযুর রহমান
বিদ‘আত পরিচিতি (১৫তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
জঙ্গিবাদ বনাম ইসলাম (২য় কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
ছালাতে একাগ্রতা অর্জনের ৩৩টি উপায় (শেষ কিস্তি) - আব্দুল হাকীম বিন আব্দুল হাফীজ
ফাযায়েলে কুরআন (৪র্থ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
সচ্চরিত্রই মানব উন্নতির চাবিকাঠি - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ইসলামী তাবলীগ বনাম ইলিয়াসী তাবলীগ (শেষ কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
বিদ‘আত পরিচিতি (৯ম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
পরনিন্দা চর্চা ও তার পরিণাম - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ছয়টি মূলনীতির ব্যাখ্যা (২য় কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির

ফেসবুক পেজ