বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০৩:২৫ পূর্বাহ্ন

মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ

-আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম*


(২২তম কিস্তি) 

৭. চার ইমামের যে কোন একজনের অনুসরণ করা ওয়াজিব

দেওবন্দীদের অন্যতম আক্বীদা হল চার ইমামের যে কোন একজনের অনুসরণ করা ওয়াজিব। তাছাড়া যে ব্যক্তি ইমামের তাক্বলীদ করে না, সে নিজ খেয়ালখুশির অনুসারী। আর তাক্বলীদ ব্যতীত নিজেকে ধ্বংসের অতলে নিক্ষেপনের নামান্তর। এমনকি সে মুলহিদ[১] ও জিন্দিক[২] হয়ে যেতে পারে। দেওবন্দীদের কিতাব ‘আল মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ’-এ বলা হয়েছে যে,

‘অবশ্যই শরীয়তের বিধান প্রবিধান সমূহের পালনে এ যুগে চার ইমামের যে কোন এক জনের অনুসরণ করা অভিশয় প্রয়োজন এমনকি ওয়াজিব। কেননা আমরা ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছি ইমামের তাক্বলীদ ব্যতীত নিজ খেয়াল খুশির অনুসরণ নিজেকে ধ্বংসের অতলে নিক্ষেপনের নামান্তর। এমনকি এসে সে মুলহিদ ও জিন্দিক হয়ে যেতে পারে আল্লাহ রক্ষা করুন! আমরা ও আমাদের মাশায়েখ এ বিষয়ে শরীয়তে তামাম বিধান-প্রবিধান পালনে ইমাম আজম আবু হানিফা রহ. এর একচ্ছত্র অনুসারী। আল্লাহ যেন আমরণ এর উপর দায়িক ও কায়িম রাখে। আমাদের হাশর ও নশর যেন তাদেরই সাথে হয়। মহান আল্লাহর দরবারে এ মোদের করুণ আর্তি। এ বিষয়ে আমাদের মাশায়েখ গণের অগণিত প্রকাশিত জগতবিখ্যাত পুস্থকাদি রয়েছে’।[৩]

পর্যালোচনা

মহান আল্লাহ কিতাব তথা আল-কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন; নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি বা ইমামকে নয়। কেননা কুরআন ও সুন্নাহ মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অভ্রান্ত সত্যের চূড়ান্ত উৎস (সূরা আশ-শু‘আরা : ১৯২-১৯৫; সূরা আন-নাজম : ৩-৪)। মহান আল্লাহ বলেন,یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَطِیۡعُوا اللّٰہَ وَ رَسُوۡلَہٗ  وَ لَا تَوَلَّوۡا عَنۡہُ وَ اَنۡتُمۡ تَسۡمَعُوۡنَ ‘হে মুমিনগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর আনুগত্য কর, তোমরা যখন তাঁর কথা শুনছো তখন তোমরা তাঁর আনুগত্য হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না’ (সূরা আল-আনফাল : ২০)। মহান আল্লাহ বলেন,

قُلۡ  اِنۡ کُنۡتُمۡ تُحِبُّوۡنَ اللّٰہَ فَاتَّبِعُوۡنِیۡ یُحۡبِبۡکُمُ اللّٰہُ وَ یَغۡفِرۡ لَکُمۡ ذُنُوۡبَکُمۡ ؕ وَ اللّٰہُ غَفُوۡرٌ  رَّحِیۡمٌ .  قُلۡ اَطِیۡعُوا اللّٰہَ وَ الرَّسُوۡلَ ۚ فَاِنۡ تَوَلَّوۡا فَاِنَّ اللّٰہَ  لَا یُحِبُّ الۡکٰفِرِیۡنَ

(হে নবী) আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন ও তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়। আপনি বলুন, তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের অনুসরণ কর; কিন্তু যদি তারা ফিরে যায়, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ অবিশ্বাসীদেরকে ভালোবাসেন না’ (সূরা আলে ‘ইমরান : ৩১-৩২)। মহান আল্লাহ বলেন, وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنَا مِنۡ رَّسُوۡلٍ اِلَّا لِیُطَاعَ بِاِذۡنِ اللّٰہِ ‘আমরা এতদ্ব্যতীত কোনই রাসূল প্রেরণ করিনি যে, আল্লাহ আদেশে তাদের আনুগত্য স্বীকার করা হবে’ (সূরা আন-নিসা : ৬৪)। মহান আল্লাহ বলেন, مَنۡ یُّطِعِ الرَّسُوۡلَ فَقَدۡ اَطَاعَ اللّٰہَ ۚ وَ مَنۡ تَوَلّٰی  فَمَاۤ  اَرۡسَلۡنٰکَ عَلَیۡہِمۡ حَفِیۡظًا  ‘যে কেউ রাসূলের অনুগত হয় নিশ্চয়ই সে আল্লাহরই অনুগত হয়ে থাকে; এবং যে ফিরে যায় আমরা তার জন্য আপনাকে রক্ষকরূপে প্রেরণ করিনি’ (সূরা আন-নিসা : ৮০)।

মহান আল্লাহ বলেন,وَ مَاۤ  اٰتٰىکُمُ الرَّسُوۡلُ  فَخُذُوۡہُ ٭ وَ مَا نَہٰىکُمۡ  عَنۡہُ فَانۡتَہُوۡا ۚ وَ  اتَّقُوا اللّٰہَ ؕ اِنَّ اللّٰہَ شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ  ‘রাসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা হতে বিরত থাকো এবং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর’ (সূরা আল-হাশর : ৭)।

শরী‘আত আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, مَنْ أَحْدَثَ فِىْ أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ ‘যদি কেউ আমাদের শরী‘আতে এমন নতুন কিছুর সৃষ্টি করল, যা তাতে নেই- তবে তা প্রত্যাখ্যাত’।[৪] তাই আল্লাহ এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর অনুসরণ করা ছাড়া আখেরাতে পরিত্রাণ পাওয়া এবং জান্নাত লাভের বিকল্প কোন পথ, অনুসরণ এবং উপায় নেই। হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ كُلُّ أُمَّتِىْ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ إِلَّا مَنْ أَبَى  قِيْلَ وَمَنْ أبَى؟ قَالَ مَنْ أَطَاعَنِىْ دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِىْ فَقَدْ أَبَى

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আমার উম্মতের সকলেই জান্নাতে প্রবেশ করবে কেবল অস্বীকারকারী ব্যতীত। জিজ্ঞেস করা হল, কে অস্বীকারকারী? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে আমার অবাধ্যতা করল, সে অস্বীকারকারী।[৫]

জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,فَمَنْ أَطَاعَ مُحَمَّدًا ﷺ فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ وَمَنْ عَصَى مُحَمَّدًا ﷺ فَقَدْ عَصَى اللهَ ‘যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর আনুগত্য করল, সে আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর অবাধ্য হল, সে আল্লাহর অবাধ্য হল’।[৬]

রাসূলুল্লাহ (ﷺ)  উম্মতের নিকট উজ্জ্বল ও পরিচ্ছন্ন দ্বীন নিয়ে এসেছেন। আজকে যদি নবী মূসা (আলাইহিস সালাম)ও বেঁচে থাকতেন, তাহলে তাঁর অনুসরণ ব্যতীত তাঁর কোন গত্যন্তর থাকত না।[৭] অথচ বর্তমানে এক শ্রেণীর মানুষ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর অনুসরণ পরিত্যাগ করে ব্যক্তি ও নির্দিষ্ট ব্যক্তির অনুসরণকে ওয়াজিব মনে করছে। তাঁর সুন্নাতকে পরিত্যাগ করে ব্যক্তির ফিক্হ-কে গ্রহণ করছে। যা শরী‘আত বিরোধী। হাদীছে এসেছে,

জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাওরাতের একটি কপি নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট আগমন করলেন। অতঃপর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! এটি তাওরাতের একটি কপি। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) চুপ রইলেন। অতঃপর ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) পড়তে শুরু করলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর চেহারা পরিবর্তিত হল। তখন আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ওমরকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন, তোমার সর্বনাশ হৌক! তুমি কি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর চেহারার অবস্থা দেখছ না? তখন ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর চেহারার দিকে তাকালেন। অতঃপর বললেন, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ক্রোধ হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমরা আল্লাহকে প্রতিপালক হিসাবে, ইসলামকে দ্বীন হিসাবে এবং মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে নবী হিসাবে পেয়ে সন্তুষ্ট রয়েছি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন,

وَالَّذِيْ نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَوْ بَدَا لَكُمْ مُوْسَى فَاتَّبَعْتُمُوْهُ وَتَرَكْتُمُوْنِيْ لَضَلَلْتُمْ عَنْ سَوَاءِ السَّبِيْلِ وَلَوْ كَانَ حَيًّا وَأَدْرَكَ نُبُوَّتِيْ لَاتَّبَعَنِيْ

‘যার হাতে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর জীবন নিহিত, তার কসম করে বলছি, যদি আজ মূসা তোমাদের নিকটে আবির্ভূত হতেন আর তোমরা তার অনুসরণ করতে এবং আমাকে পরিত্যাগ করতে, তাহলে অবশ্যই তোমরা সরল পথ হতে বিচ্যুত হতে। যদি মূসা বেঁচে থাকতেন ও আমার নবুঅতকাল পেতেন, তাহলে অবশ্যই তিনি আমার অনুসরণ করতেন।[৮]

মূসা (আলাইহিস সালাম) ছিলেন একজন নবী ও রাসূল। নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর সময়ও যদি তিনি বেঁচে থাকতেন, তাহলে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর অনুসরণ করা ছাড়া তাঁর কোন গত্যন্তর থাকত না। তিনি মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর অনুসরণ করতে বাধ্য হতেন। তাহলে মাযহাবের নামে ইমামদের অনুসরণ করা ওয়াজিব হয় কি করে? অথচ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ব্যতীত অন্যের অনুসরণ করার পরিণতি ভয়াবহ। যেমন-

১. যারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বিধানের প্রতি আনুগত্য করে না, বরং বিভিন্ন ফিক্বহি বুঝ, কিয়াস বা তুলনা এবং বাতিল উদ্ভাবন (বিদ‘আত) করে সুন্নাহর বিরুদ্ধে আপত্তি তুলে, মহান আল্লাহ তাদের ঈমান অস্বীকার করার কথা উল্লেখ করেছেন।[৯] ‘ইমাম ও মাযহাবের অনুসরণ ওয়াজিব’-এর নামে বহু মানুষ সুন্নাহ-কে পদদলিত করে মাযহাব বা ফের্ক্বার অন্ধত্বে ডুবে আছে। মহান আল্লাহ নিম্নের আয়াত দ্বারা ঐ সকল নামধারী মুসলিম-মুমিনকে সর্তক করেছেন, যারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর যে কোন সিদ্ধান্তকে দ্বিধাহীন অন্তরে গ্রহণ করতে পারেনি। মহান আল্লাহ বলেন,

فَلَا وَ رَبِّکَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ حَتّٰی  یُحَکِّمُوۡکَ فِیۡمَا شَجَرَ  بَیۡنَہُمۡ ثُمَّ  لَا  یَجِدُوۡا فِیۡۤ  اَنۡفُسِہِمۡ حَرَجًا  مِّمَّا قَضَیۡتَ  وَ یُسَلِّمُوۡا  تَسۡلِیۡمًا

‘অতএব আপনার প্রতিপালকের শপথ! তারা কখনও মুমিন হতে পারবে না, যে পর্যন্ত আপনাকে তাদের সমস্ত আভ্যন্তরীণ বিরোধের বিচারক হিসাবে মেনে না নিবে, তৎপর আপনি যে বিচার করবেন তা দ্বিধাহীন অন্তরে গ্রহণ না করবে এবং ওটা শান্তভাবে পরিগ্রহণ না করবে’ (সূরা আন-নিসা : ৬৫)।

একজন আনছারী রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পানি বণ্ঠন নীতি অন্তর থেকে মেনে নিতে পারেনি। এজন্য সে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পানি বণ্ঠন নীতিতে অভিযোগ করেছিল। ফলে উপরিউক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে। হাদীছে এসেছে, ঊরওয়া (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘হাররা’ হতে প্রবাহিত নালার পানি বণ্টন সম্পর্কে যুবায়ের এক আনছারের সাথে ঝগড়া হল। তখন নবী করীম (ﷺ) বললেন, হে যুবায়ের!, তুমি তোমার জমিতে পানি দাও, অতঃপর তোমার প্রতিবেশীর জমির দিকে পানি পাঠাও। তখন আনছারী বলে উঠল, আপনার ফুফাত ভাই, তাই তো। অতঃপর এটাতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। এবার তিনি বললেন, اسْقِ يَا زُبَيْرُ ثُمَّ احْبِسِ الْمَاءَ حَتَّى يَرْجِعَ إِلَى الْجَدْرِ ثُمَّ أَرْسِلِ الْمَاءَ إِلَى جَارِكَ ‘হে যুবায়ের!, তুমি তোমার জমিতে পানি দাও, অতঃপর তা আটকে রাখ, যাতে পানি আইল পর্যন্ত পৌঁছে। অতঃপর তোমার প্রতিবেশীর জমির দিকে পানি পাঠাও’। এখন নবী করীম (ﷺ) স্পষ্ট নির্দেশ দ্বারা যুবায়েরকে তার পূর্ণ হক দিয়ে দিলেন, যখন আনছারী তাঁকে রাগান্বিত করল। আর প্রথমে তাদেরকে এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে উভয়ের সুবিধা ছিল।[১০] যুবাইর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আল্লাহর কসম! আমার মনে হয়, এ আয়াতটি এ সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে : ‘অতএব আপনার প্রতিপালকের শপথ! তারা কখনও মুমিন হতে পারবে না, যে পর্যন্ত আপনাকে তাদের সমস্ত আভ্যন্তরীণ বিরোধের বিচারক হিসাবে মেনে না নিবে, ...’ (সূরা আন-নিসা : ৬৫)।[১১]

২. যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পথ এবং অনুসরণ বাদ দিয়ে অন্য কোন ব্যক্তির পথ এবং অনুসরণ করবে, সে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। হাদীছে এসেছে, আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, একদা তিনজন ব্যক্তি নবী করীম (ﷺ)-এর স্ত্রীগণের নিকট আগমন করে নবী করীম (ﷺ)-এর ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। অতঃপর যখন তাদেরকে অবহিত করা হল, তখন তারা তাঁর ইবাদতকে কম মনে করল এবং বলল, নবী করীম (ﷺ) থেকে আমরা কত দূরে! অথচ তাঁর পূর্বের এবং পরের সকল গুনাহ ক্ষমা করা হয়েছে। অতঃপর তাদের একজন বলল, আমি সর্বদা সারা রাত ছালাতে রত থাকব। অন্যজন বলল, আমি প্রতিদিন ছিয়াম পালন করব, কখনো ইফতার করব না। অন্যজন বলল, আমি নারীসঙ্গ থেকে দূরে থাকব, কখনো বিয়ে করব না। এমন সময় নবী করীম (ﷺ) উপস্থিত হলেন এবং বললেন, তোমরাই কি সেই লোকেরা, যারা এরূপ এরূপ কথা বলছিলে? শুনে রাখ,

وَاللهِ إِنِّىْ لَأَخْشَاكُمْ لِلهِ وَأَتْقَاكُمْ لَهُ  لَكِنِّىْ أَصُوْمُ وَأُفْطِرُ وَأُصَلِّى وَأَرْقُدُ وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِىْ فَلَيْسَ مِنِّىْ

‘আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক আল্লাহভীরু এবং সর্বাধিক তাক্বওয়াশীল। কিন্তু আমি ছিয়াম রাখি আবার ছেড়েও দেই। ছালাত আদায় করি এবং নিদ্রাও যাই। আমি বিবাহ করেছি। অতএব যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত হতে মুখ ফিরিয়ে নিবে, সে আমার দলভুক্ত নয়’।[১২]

এ হাদীছে (فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِىْ فَلَيْسَ مِنِّىْ)-এর ব্যাখ্যায় ইবনু হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, مَنْ تَرَكَ طَرِيْقَتِيْ وَأَخَذَ بِطَرِيْقَةِ غَيْرِيْ فَلَيْسَ مِنِّيْ ‘যে আমার পথ পরিত্যাগ করবে এবং আমি ছাড়া অন্যের পথ আকঁড়ে ধরবে, সে আমার দলভুক্ত নয়’।[১৩] শুধু তাই নয়, যারা নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর অনুসরণ ব্যতীত নিজ বা কোন ব্যক্তির অনুসরণের দিকে ঝুঁকে পড়বে, তারা মূলত রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সর্বোত্তম হেদায়াত পরিত্যাগ করে সন্ন্যাসীর দিকে ঝুঁকে পড়ল এবং ইত্তেবা থেকে বের হয়ে বিদ‘আতে লিপ্ত হল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর শেষ উক্তি দ্বারা এটাই বুঝিয়েছেন।[১৪]

রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর অনুসরণ ব্যতীত অন্যের অনুসরণ ওয়াজিব মনে করলে ধ্বংস সুনিশ্চিত

মহান আল্লাহ বলেন,

وَ مَا کَانَ  لِمُؤۡمِنٍ وَّ لَا مُؤۡمِنَۃٍ  اِذَا قَضَی اللّٰہُ  وَ رَسُوۡلُہٗۤ  اَمۡرًا اَنۡ  یَّکُوۡنَ  لَہُمُ الۡخِیَرَۃُ  مِنۡ اَمۡرِہِمۡ ؕ وَ مَنۡ یَّعۡصِ اللّٰہَ وَ رَسُوۡلَہٗ  فَقَدۡ  ضَلَّ  ضَلٰلًا  مُّبِیۡنًا

‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে ফয়সালা করলে কোন মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর নিজেদের কোন ব্যাপারে অন্য কোন সিদ্ধান্তের ইখতিয়ার থাকবে না। কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কে অমান্য করলে সে তো স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে’ (সূরা আল-আহযাব : ৩৬)।

যারা মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর অনুসরণ ব্যতীত অন্যের অনুসরণকে ওয়াজিব মনে করে তারা মূলত যালিম। মহান আল্লাহ যালিমদের অনুশোচনার ব্যাপারে আল-কুরআনে সংবাদ দিয়েছেন। যারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পথ থেকে সরে যায় এবং  তাঁর পথ ছাড়া অন্য পথ অনুসরণ করে। ক্বিয়ামতের দিন তারা অনুশোচনা করবে। মহান আল্লাহ বলেন,

وَ  یَوۡمَ یَعَضُّ الظَّالِمُ عَلٰی  یَدَیۡہِ یَقُوۡلُ یٰلَیۡتَنِی اتَّخَذۡتُ مَعَ الرَّسُوۡلِ سَبِیۡلًا . یٰوَیۡلَتٰی لَیۡتَنِیۡ لَمۡ اَتَّخِذۡ فُلَانًا خَلِیۡلًا  . لَقَدۡ اَضَلَّنِیۡ عَنِ الذِّکۡرِ  بَعۡدَ  اِذۡ جَآءَنِیۡ ؕ وَ کَانَ الشَّیۡطٰنُ لِلۡاِنۡسَانِ خَذُوۡلًا

‘যালিম ব্যক্তি সেদিন নিজ হস্তদ্বয় দংশন করে বলবেঃ হায়, আমি যদি রাসূল (ﷺ)-এর সাথে সৎপথ অবলম্বন করতাম। হায়, দুর্ভোগ আমার, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম। আমাকে তো সে বিভ্রান্ত করেছিল আমার নিকট উপদেশ পৌছবার পর; শয়তান মানুষের জন্য মহাপ্রতারক’ (সূরা আল-ফুরক্বান : ২৭-২৯)। মহান আল্লাহ বলেন,

یَوۡمَ تُقَلَّبُ وُجُوۡہُہُمۡ فِی النَّارِ یَقُوۡلُوۡنَ یٰلَیۡتَنَاۤ  اَطَعۡنَا اللّٰہَ  وَ اَطَعۡنَا الرَّسُوۡلَا . وَ قَالُوۡا رَبَّنَاۤ  اِنَّاۤ  اَطَعۡنَا سَادَتَنَا وَ کُبَرَآءَنَا  فَاَضَلُّوۡنَا السَّبِیۡلَا . رَبَّنَاۤ  اٰتِہِمۡ ضِعۡفَیۡنِ مِنَ الۡعَذَابِ وَ الۡعَنۡہُمۡ  لَعۡنًا کَبِیۡرًا

‘যেদিন তাদের মুখমন্ডল অগ্নিতে উলট-পালট করা হবে সেদিন তারা বলবেঃ হায়! আমরা যদি আল্লাহকে মানতাম ও রাসূল-কে মানতাম! তারা আরো বলবেঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আমাদের নেতা ও বড়দের আনুগত্য করেছিলাম এবং তারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের দ্বিগুণ শাস্তি প্রদান করুন এবং তাদেরকে দিন মহা অভিশাপ’ (সূরা আল-আহযাব : ৬৬-৬৮)।

عَنْ أَبِىْ مُوْسَى رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّمَا مَثَلِىْ وَمَثَلُ مَا بَعَثَنِىْ اللهُ بِهِ كَمَثَلِ رَجُلٍ أَتَى قَوْمًا فَقَالَ يَا قَوْمِ إِنِّىْ رَأَيْتُ الْجَيْشَ بِعَيْنَىَّ وَإِنِّىْ أَنَا النَّذِيْرُ الْعُرْيَانُ فَالنَّجَاءَ النَّجَاءَ فَأَطَاعَهُ طَائِفَةٌ مِّنْ قَوْمِهِ فَأَدْلَجُوْا فَانْطَلَقُوْا عَلَىْ مَهَلِهِمْ فَنَجَوْا وَكَذَّبَتْ طَائِفَةٌ مِّنْهُمْ فَأَصْبَحُوْا مَكَانَهُمْ فَصَبَّحَهُمُ الْجَيْشُ فَأَهْلَكَهُمْ وَاجْتَاحَهُمْ فَذَلِكَ مَثَلُ مَنْ أَطَاعَنِىْ فَاتَّبَعَ مَا جِئْتُ بِهِ مَنْ عَصَانِىْ وَكَذَّبَ جِئْتُ بِهِ مِنَ الْحَقِّ

আবূ মূসা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আমার এবং যেসব বিষয় নিয়ে আল্লাহ আমাকে পাঠিয়েছেন তার উদাহরণ হল, এক ব্যক্তির ন্যায়, যে তাঁর  কওমের নিকট আগমন করল এবং বলল, হে আমার কওম! আমি আমার এই দুই চোখ দিয়ে শত্রুসৈন্য দেখে এসেছি এবং আমি তোমাদের জন্য ‘উলংগ সতর্ককারী’। অতএব বাঁচার জন্য জলদি কর, জলদি কর! কওমের একদল লোক তাঁর কথা মেনে নিয়ে রাতেই চলে গেল। তাতে তারা ধীরে সুস্থে যেতে পারল এবং বেঁচে গেল। পক্ষান্তরে অপরদল যারা তার কথা মিথ্যা মনে করল, তারা নিজেদের স্থানেই সকাল করল। ফলে ভোরেই শত্রু তাদের উপরে আপতিত হল এবং তাদেরকে ধ্বংস করল ও সমূলে উৎখাত করল। এটি হল সেই ব্যক্তির উদাহরণ, যে আমার আনুগত্য করল ও আমি যা এনেছি তাঁর অনুসরণ করল এবং যে আমার অবাধ্য হয়েছে ও আমি যে সত্য নিয়ে আগমন করেছি, তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল।[১৫]

عَنْ أبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَثَلِىْ كَمَثَلِ رَجُلٍ اسْتَوْقَدَ نَارًا فَلَمَّا أَضَاءَتْ مَا حَوْلَهَا جَعَلَ الْفَرَاشُ وَهَذِهِ الدَّوَابُّ الَّتِىْ تَقَعُ فِىْ النَّارِ يَقَعْنَ فِىْهَا جَعَلَ يَحْجَزُهُنَّ وَيَغْلِبْنَهُ فَيَقْتَحِمْنَ فِىْهَا فَأَنَا آخُذُ بِحُجَزِكُمْ عَنِ النَّارِ وَأَنْتُمْ تَقْتَحِمُوْنَ فِىْهَا

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আমার উদাহরণ সেই ব্যক্তির ন্যায়, যে আগুন জ্বালালো। অতঃপর যখন আগুন চারিদিক আলোকিত করল, তখন পতঙ্গ সমূহ এবং ঐসকল কীট যারা আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তারা দলে দলে উক্ত আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়তে লাগল। আগুন প্রজ্জ্বলনকারী তাদের বাধা দিতে লাগল। তারা তাকে পরাজিত করে তাতে ঝাঁপিয়ে পড়তে লাগল। আমিও সেরূপ তোমাদের কোমর ধরে টানছি আগুন হতে, আর তোমরা তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ছ।[১৬] ছহীহ মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে,

أَنَا آخِذٌ بِحُجَزِكُمْ عَنِ النَّارِ هَلُمَّ عَنِ النَّارِ هَلُمَّ عَنِ النَّارِ فَتَغْلِبُوْنِىْ تَقَحَّمُوْنَ فِىْهَا 

‘আমি তোমাদের কোমর ধরে তোমাদেরকে আগুন হতে টানছি এবং বলছি, আমার দিকে এসো আগুন হতে দূরে থাক! আমার দিকে এসো আগুন হতে দূরে থাক! কিন্তু তোমরা আমাকে পরাস্ত করে আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ছ।[১৭]

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ব্যতীত অন্যের অনুসরণের সীমাবদ্ধতা

শরী‘আতে মহান আল্লাহ এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর অনুসরণ ব্যতীত সালাফগণের মানহাজ এবং আল্লাহর আইন পালনে শাসকের অনুসরণ করার নির্দেশ রয়েছে। তবে তাতে রয়েছে সীমাবদ্ধতা।

১. সালাফদের মানহাজ তথা তাদের পথ-পদ্ধতী আঁকড়ে ধরা ও অনুসরণ করা : যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বিরোধিতা করে এবং তিনি যা নিয়ে এসেছেন অর্থাৎ কুরআন ও সুন্নাহর দলীলের বিরোধিতা করে এবং সত্যবাদীদের (যারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পথ, তরীকা, আক্বীদা ও আমল ধারণ করে) বিপরীত পথ ও মানহাজ অনুসরণ করে তাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন,

وَ مَنۡ یُّشَاقِقِ الرَّسُوۡلَ مِنۡۢ بَعۡدِ مَا تَبَیَّنَ لَہُ الۡہُدٰی وَ یَتَّبِعۡ غَیۡرَ  سَبِیۡلِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ نُوَلِّہٖ مَا تَوَلّٰی وَ نُصۡلِہٖ جَہَنَّمَ ؕ وَ سَآءَتۡ مَصِیۡرًا

আর সুপথ প্রকাশিত হওয়ার পর যে রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং বিশ্বাসীগণের বিপরীত পথে অনুগামী হয়, তবে সে যাতে অভিনিবিষ্ট- আমরা তাকে তাতেই প্রত্যাবর্তিত করব ও তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব এবং ওটা নিকৃষ্টতর প্রত্যাবর্তন স্থল’ (সূরা আন-নিসা : ১১৫)। অর্থাৎ যে ব্যক্তি শরী‘আতের বিপরীত পথে চলে; রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যে দিকে চলার নির্দেশ দেন সে তার বিপরীত দিকে চলে, অথচ সত্য তার নিকট প্রকাশিত হয়ে পড়েছে, সে দলীল প্রমাণাদি দেখেছে; আমিও তাকে ঐ বক্র ও খারাপ পথেই ফিরিয়ে দিব। ঐ খারাপ পথই তখন তার নিকট ভাল বলে মনে হবে, অতঃপর সে জাহান্নামে পৌঁছে যাবে।

মুসলিমদের পথ ছেড়ে দিয়ে অন্য পথ অনুসন্ধান করাই হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বিরুদ্ধাচরণ করা। তা কখনও হয়ত রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর স্পষ্ট কথারই উল্টা হতে পারে, আবার কখনও কখনও ঐ জিনিসের বিপরীত হতে পারে যার উপর মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর উম্মত (ছাহাবীগণ) সবাই একমত রয়েছে। তাদের ভদ্রতা ও নম্রতার কারণে মহান আল্লাহ তাদেরকে ভুল হতে রক্ষা করেছেন।[১৮] এ বিষয়ে বহু ছহীহ হাদীছ রয়েছে। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পর থেকে ক্বিয়ামত পূর্ব পর্যন্ত সময়টা বহু মতভেদ ও ফেতনায় জর্জরিত সময়। এমন সময় মানুষ কার অনুসরণ করবে, শরী‘আতে সে ব্যাপারে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। হাদীছে এসেছে,

ইরবায বিন সারিয়া (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একদা আমাদের নিয়ে ছালাত আদায় করলেন। অতঃপর আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসলেন এবং আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী ভাষায় ওয়ায করলেন যে, চক্ষু সমূহ অশ্রুসিক্ত হল এবং হৃদয় সমূহ ভীত-সন্ত্রস্ত হল। অতঃপর জনৈক লোক বলে উঠল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! মনে হচ্ছে এটা বিদায়ী উপদেশ। অতএব আপনি আমাদেরকে আরও বেশী উপদেশ দিন। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন,

أُوْصِيْكُمْ بِتَقْوَى اللهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَإِنْ كَانَ عَبْدًا حَبَشِيًّا فَإِنَّهُ مَنْ يَّعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِىْ فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيْرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِىْ وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ الْمَهْدِيِّيْنَ تَمَسَّكُوْا بِهَا وَعَضُّوْا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُوْرِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَّكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ

‘আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতির এবং আমীরের আদেশ শুনতে ও মানতে উপদেশ দিচ্ছি, যদিও তিনি একজন হাবশী গোলামও হন। কেননা আমার পরে তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে, তারা সত্বর বহু মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাতকে এবং সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরবে। তাকে কঠিনভাবে ধরবে এবং মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে। সাবধান! দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি সমূহ হতে দূরে থাকবে। কেননা দ্বীনের ব্যাপারে নতুন সৃষ্টি হল বিদ‘আত এবং প্রত্যেক বিদ‘আতই হল ভ্রষ্টতা।[১৯]

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَيَأْتِيَنَّ عَلَىْ أُمَّتِيْ مَا أَتَىْ عَلَىْ بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ حَذْوَ النَّعْلِ بِالنَّعْلِ حَتَّى إِنَّ كَانَ مِنْهُمْ مَنْ أَتَى أُمَّهُ عَلَانِيَةً لَكَانَ فِىْ أُمَّتِيْ مَنْ يَّصْنَعُ ذَلِكَ وَإِنَّ بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ تَفَرَّقَتْ عَلَىْ ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِيْنَ مِلَّةً وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِيْ عَلَىْ ثَلَاثٍ وَّسَبْعِيْنَ مِلَّةً كُلُّهُمْ فِىْ النَّارِ إِلَّا مِلَّةً وَّاحِدَةً قَالُوْا وَمن هِيَ يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ ﷺ مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِيْ

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, অবশ্যই আমার উম্মতের উপর এমন একটি সময় আসবে যেমন বনী ইসরাঈলের উপর আগমন করেছিল, যেমন এক পায়ের জুতা অপর পায়ের জুতার ন্যায়। এমনকি তাদের মধ্যে যদি কেউ তাঁর মায়ের সাথে প্রকাশ্যে যেনা করে, তাহলে আমার উম্মতের মধ্যে এমনি লোক থাকবে, যারা এমন কাজ করবে। আর বনূ ইসরাঈল ৭২টি ফের্ক্বায় বিভক্ত হয়েছিল, আমার উম্মত ৭৩ ফের্ক্বায় বিভক্ত হবে। সবাই জাহান্নামে যাবে, একটি দল ব্যতীত। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! সেটি কোন্ দল? রাসূলুল্লাহ (ﷺ)  বললেন, আমি ও আমার ছাহাবীগণ যার উপরে আছি।[২০]

নবী করীম (ﷺ)-এর ছাহাবীদের অনুসরণ করা শরী‘আত; তাক্বলীদ নয়। কিন্তু অনেকেই ভুল, ভুল বুঝের কারণে ও ধারণাপ্রসূত বলে থাকে যে, ছাহাবীদের অনুসরণ করা তাক্বলীদ। সালাফে-ছালেহীন এ ব্যাপারে স্পষ্ট বক্তব্য পেশ করেছেন যে, নবী করীম (ﷺ)-এর ছাহাবীদের অনুসরণ করা তাক্বলীদ নয় বরং দলীলের অনুসরণ। ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃ. ৭২৮ হি.) বলেছেন,التقليد قبول القول بغير دليل فليس المصير إلى الإجماع تقليدا لأن الإجماع دليل ‘দলীলবিহীন কার কোন কথা গ্রহণ করাকে তাক্বলীদ বলে। তবে ইজমা‘র দিকে প্রত্যাবর্তন করা তাক্বলীদ না। কেননা ইজমা‘ হল দলীল’।[২১]

শায়খ ছালেহ আল-উছায়মীন (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃ. ১৪২১ হি.) বলেছেন, তাক্বলীদ হল ‘দলীলবিহীন কার কোন কথার অনুসরণ করা’।[২২] তবে নবী করীম (ﷺ), আহলুল ইজমা‘ এবং ছাহাবীদের অনুসরণকে তাক্বলীদ বলা যাবে না। কেননা তাদের অনুসরণ হল দলীল। কিন্তু এর বাহিরে তাক্বলীদ সেটাই, যা রূপক ও ব্যাপক অর্থে গ্রহণ করা হয়।[২৩]

হানাফীদের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ ‘মুসাল্লামুছ ছুবূত’-এ বলা হয়েছে, নবী করীম (ﷺ) বা ইজমার দিকে প্রত্যাবর্তন করা এই (তাক্বলীদের) অন্তর্ভুক্ত নয়।[২৪]

হানাফীদের গ্রহণযোগ্য কিতাব ‘ফাওয়াতিহুর রাহমূত’-এ বলা হয়েছে, ‘আর নবী করীম (ﷺ) এবং ইজমার দিকে প্রত্যাবর্তন করা তাক্বলীদের অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা এটি দলীলের দিকে প্রত্যাবর্তন।[২৫]

২. আল্লাহর আইন পালনে আমীর বা শাসকের অনুসরণ করা : মহান আল্লাহ বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَطِیۡعُوا اللّٰہَ وَ اَطِیۡعُوا الرَّسُوۡلَ وَ اُولِی الۡاَمۡرِ مِنۡکُمۡ ۚ فَاِنۡ تَنَازَعۡتُمۡ فِیۡ شَیۡءٍ فَرُدُّوۡہُ اِلَی اللّٰہِ وَ الرَّسُوۡلِ  اِنۡ کُنۡتُمۡ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰہِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ ؕ ذٰلِکَ خَیۡرٌ  وَّ  اَحۡسَنُ  تَاۡوِیۡلًا 

‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর ও রাসূলের অনুগত হও এবং তোমাদের জন্য যারা বিচারক তাদের; অতঃপর যদি তোমাদের মতবিরোধ হয় তাহলে আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যাবর্তিত হও, যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস করে থাক; এটাই কল্যাণকর ও শ্রেষ্ঠতর পরিসমাপ্তি’ (সূরা আন-নিসা : ৫৯)।

আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একটি ছোট অভিযানে আব্দুল্লাহ ইবনু হুযাইফা ইবনু কায়েসকে প্রেরণ করেন। তাঁর ব্যাপারে (یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَطِیۡعُوا اللّٰہَ وَ اَطِیۡعُوا الرَّسُوۡلَ وَ اُولِی الۡاَمۡرِ مِنۡکُمۡ) এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।[২৬]

আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এক সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন এবং এক ব্যক্তিকে তার আমীর নিযুক্ত করেন। সে একটি অগ্নিকুণ্ড প্রজ্জ্বলিত করল এবং তাদেরকে তাতে ঝাঁপ দিতে নির্দেশ দিল। একদল লোক তাতে ঝাঁপ দিতে প্রস্তুতি নিল এবং অপর একদল বলল, আমরা (ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে তো) আগুন থেকেই পালিয়ে এসেছি। (সুতরাং আগুনে ঝাঁপ দেয়ার প্রশ্নই উঠে না) যথাসময়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দরবারে সে ব্যাপারটি উত্থাপিত হল। তখন তিনি যারা আগুনে ঝাঁপ দিতে প্রস্তুত হয়েছিল তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, لَوْ دَخَلْتُمُوْهَا لَمْ تَزَالُوْا فِيْهَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ ‘যদি তোমরা তাতে প্রবেশ করতে তাহলে ক্বিয়ামত পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করতে’। পক্ষান্তরে অপরদলকে লক্ষ্য করে তিনি ভাল কথা বললেন। তিনি আরো বললেন, لَا طَاعَةَ فِىْ مَعْصِيَةِ اللهِ إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِى الْمَعْرُوْفِ ‘আল্লাহর অবাধ্যতা হয়ে এমন কাজে আনুগত্য নেই। আনুগত্য কেবলই ভাল কাজে’।[২৭] অপর বর্ণনায় রয়েছে,

যখন তারা আগুন প্রজ্জ্বলিত করল। তারপর সে বলল, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কি তোমাদেরকে আমার কথা শুনার এবং আমার আনুগত্য করার নির্দেশ দেননি? তারা বলল, জী-হ্যাঁ। তখন সে বলল, তাহলে তোমরা এবার এ আগুনে ঝাঁপ দাও। তখন তাঁরা পরস্পরে পরস্পরের দিকে তাকাতে শুরু করল। তারপর তারা বলল, আমরা তো এ আগুন থেকে বাঁচার জন্যই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর শরণাপন্ন হয়েছি। তারা আগুনে ঝাঁপ দিলেন না। তাঁর ক্রোধ প্রশমিত হল এবং আগুন নিভিয়ে দেয়া হল। তারপর যখন তাঁরা ফিরে এল এবং নবী (ﷺ)-এর নিকট বিষয়টি উত্থাপন করল, তখন তিনি বললেন, لَوْ دَخَلُوْهَا مَا خَرَجُوْا مِنْهَا إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِى الْمَعْرُوْفِ ‘যদি তাঁরা তখন আগুনে ঝাঁপ দিত, তাহলে আর বেরোতে পারত না। আনুগত্য কেবল সৎ কাজে’।[২৮]

মুসলিমের উপর অবশ্য পালনীয় কর্তব্য হচ্ছে নেতা, শাসক, আমীর, ইমামগণ যতক্ষণ আল্লাহর কিতাব অনুসারে পরিচালিত করে ততক্ষণ তার কথা শোনা ও মানা। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,إِنْ أُمِّرَ عَلَيْكُمْ عَبْدٌ مُجَدَّعٌ يَقُوْدُكُمْ بِكِتَابِ اللهِ تَعَالَى فَاسْمَعُوْا لَهُ وَأَطِيْعُوْا ‘যদি তোমাদের উপর কোন হাত-পা কাটা গোলামকেও আমীর নিযুক্ত করা হয়। আর সে তোমাদেরকে আল্লাহর কিতাব অনুসারে পরিচালিত করে তবে তোমরা তার কথা শুনবে এবং মানবে’।[২৯]

যখন আল্লাহর অবাধ্যতার আদেশ-নির্দেশ করা হয়; তাহলে  তা শুনবেও না এবং মানবেও না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)  বলেছেন,

 عَلَى الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ فِيْمَا أَحَبَّ وَكَرِهَ إِلَّا أَنْ يُؤْمَرَ بِمَعْصِيَةٍ فَإِنْ أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ فَلَا سَمْعَ وَلَا طَاعَةَ

‘মুসলিম ব্যক্তির অবশ্য পালনীয় কর্তব্য হচ্ছে শোনা ও মানা তার প্রতিটি প্রিয় ও অপ্রিয় ব্যাপারে যতক্ষণ না তাকে আল্লাহর অবাধ্যতার আদেশ করা হয়। যদি আল্লাহর অবাধ্যতার নির্দেশ তাকে দেয়া হয় তাহলে তা শুনবেও না এবং মানবেও না’।[৩০] কেননা পাপের কাজ ছাড়া অন্য সব ব্যাপারে আনুগত্য আবশ্যক এবং পাপ কাজের ক্ষেত্রে (আনুগত্য) হারাম।[৩১]

অতএব ইমামদের অনুসরণ ওয়াজিব তখনই হবে, যখন তা কুরআন-সুন্নাহ অনুসারে হবে। আর কুরআন-সুন্নাহ পরিত্যাগ করে ইমামদের অনুসরণ হারাম বলে বিবেচিত হবে। যাকে শরী‘আতের পরিভাষায় তাক্বলীদ বা দলীলবিহীন অন্ধ অনুসরণ বলে। যার ব্যাপারে ইমামগণ সতর্ক ও সাবধান করেছেন।

(ইনশাআল্লাহ চলবে)

* পি-এইচ. ডি গবেষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

তথ্যসূত্র :
[১]. ইলহাদ অর্থ অস্বীকার করা বা অবিশ্বাস করা। কোন জিনিসের দিকে ঝুঁকে পড়াকে ইলহাদ বলা হয়। কবরকে লাহাদ বলা হয় একারণেই যে, কবরে লাশ ঝুঁকে পড়ে। আর ইলহাদ হল আল্লাহর নামের অস্বীকার করা। আর যে আল্লাহর নামকে অস্বীকার করে তাকে মুলহিদ বলা হয়। দ্র. আবুল ফিদা ইসমাঈল ইবনু কাছীর, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম (দারুত ত্বায়্যিবা, ২য় সংস্করণ, ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.), ৩য় খণ্ড, পৃ. ৫১৬; ড. ছালেহ ইবনু ফাওযান ইবনু আব্দুল্লাহ আল-ফাওযান, ই‘আনাতুল মুসতাফীদ বিশারহি কিতাবিত তাওহীদ (মুওয়াস্সাসাতুর রিসালাহ, ৩য় সংস্করণ ১৪২৩ হি./২০০২ খ্রি.), ২য় খণ্ড, পৃ. ২১৩।
[২]. যিন্দীক অর্থ নাস্তিক বা অবিশ্বাসী। যিন্দীক হল যাদের কোন ধর্ম নেই, যাদের আল্লাহর এককত্ব ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস নেই এবং যারা আক্বীদার সকল মূলনীতিকে অস্বীকার করে।
[৩]. দেওবন্দী আহলে সুন্নাতের আক্বীদা, পৃ. ৩৫।
[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/২৬৯৭, ‘সন্ধি’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮। 
[৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৭২৮০, ‘ই‘তিছাম’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২; মিশকাত, হা/১৪৩।
[৬]. ছহীহ বুখারী, হা/৭২৮১, ‘ই‘তিছাম’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২; মিশকাত, হা/১৪৪।
[৭]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫১৯৫; বায়হাক্বী-শু‘আবুল ঈমান, হা/১৭৪; মিশকাত, হা/১৭৭, সনদ হাসান।
[৮]. দারেমী, হা/৪৪৩, সনদ হাসান; মিশকাত, হা/১৯৪।
[৯]. যারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাহ-কে পরিত্যাগ করে অথবা ক্বিয়াস বা বিদ‘আত তৈরির মাধ্যমে নবী (ﷺ)-এর আনুগত্য করে না অথবা সুন্নাহ হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বা নেয়; তাদের ঈমান অস্বীকার করার ব্যাপারে ইমাম ইবনু হিব্বান (রাহিমাহুল্লাহ) অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন,

ذِكْرُ نَفْيِ الْإِيْمَانِ عَمَّنْ لَمْ يَخْضَعْ لِسُنَنِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ أَوْ اعْتَرَضَ عَلَيْهَا بِالْمُقَايَسَاتِ الْمَقْلُوْبَةِ وَالْمُخْتَرَعَاتِ الدَّاحِضَةِ 

      ‘ঐ সমস্ত ব্যক্তির ঈমান অস্বীকারের আলোচনা; যারা আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর আইনের প্রতি আনুগত্য করেননি অথবা উল্টো তুলনা এবং বাতিল উদ্ভাবন করে সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে’। দ্র. ছহীহ ইবনু হিব্বান, ১ম খণ্ড, পৃ. ২০৩।

[১০]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৫৮৫; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/২৪; মিশকাত, হা/২৯৯৩।
[১১]. ছহীহ বুখারী, হা/২৩৫৯, ২৩৬০।
[১২]. ছহীহ বুখারী, হা/৫০৬৩, ‘বিবাহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪০২, ‘বিবাহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১।  
[১৩]. ইবনু হাজার ‘আসক্বালানী, ফাতহুল বারী শারহু ছহীহিল বুখারী, ৯ম খণ্ড (বৈরূত : দারুল মা‘রিফা, ১৩৭৯ হি.), পৃ. ১০৫।  
[১৪]. ইমাম শাওক্বানী, নায়তুল আওত্বার, ৬ষ্ঠ খণ্ড (মিশর : দারুল হাদীছ, ১৪১৩ হি.), পৃ. ১২৩।  
[১৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৭২৮৩, ‘ই‘তিছাম’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২; ছহীহ মুসলিম, হা/২২৮৩; মিশকাত, হা/১৪৮।      
[১৬]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৪৮৩, ‘রিক্বাক্ব’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৬; মিশকাত, হা/১৪৯।        
[১৭]. ছহীহ মুসলিম, হা/২২৮৪; মিশকাত, হা/১৪৯।        
[১৮]. তাফসীর ইবনু কাছীর, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪১২।        
[১৯]. আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৭, ‘সুন্নাহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৬; মিশকাত, হা/১৬৫।  
[২০]. তিরমিযী, হা/২৬৪১, ‘ঈমান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৮; মিশকাত, হা/১৭১।
[২১]­. ইবনু তাইমিয়াহ, মুসাওয়্যাদাতু ফী উছূলিল ফিকহ; তাহক্বীক : মুহাম্মাদ মুহীউদ্দীন আব্দুল হামীদ (দারুল কিতাবিল ‘আরাবী, তাবি), ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৬২।
[২২]­. মুহাম্মাদ ইবনু ছালেহ আল-উছায়মীন, আল-উছূল মিন ইলমিল উছূল (দারু ইবনু জাওযী, ১৪২৬ হিঃ), ১ম খণ্ড, পৃ. ৮৭।
[২৩]­. اتباع النبي صلّى الله عليه وسلّم واتباع أهل الإجماع واتباع الصحابي إذا قلنا أن قوله حجة فلا يسمى اتباع شيء من ذلك تقليداً لأنه اتباع للحجة لكن قد يسمى تقليداً على وجه المجاز والتوسع.; আল-উছূল মিন ইলমিল উছূল, ১ম খণ্ড, পৃ. ৮৭।
[২৪]­. যুবায়ের আলী যাঈ, ইসলামে তাক্বলীদের বিধান; অনুবাদ : আহমাদুল্লাহ (রাজশাহী : হাদীছ ফাউণ্ডেশণ বাংলাদেশ, ২০১৭ খ্রি.), পৃ. ৯; মুসাল্লামুছ ছুবূত (ছাপা : ১৩১৬ হি.), পৃ. ২৮৯, ফাওয়াতিহূর রাহমূত, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪০০।
[২৫]­. ইসলামে তাক্বলীদের বিধান, পৃ. ১০; ফাওয়াতিহুর রাহমূত বি-শারহি মুসাল্লামিছ ছুবূত ফী উছূলিল ফিক্বহ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪০০।
[২৬]­. ছহীহ বুখারী, হা/৪৫৮৪; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৩৪।   
[২৭]­. ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৪০।   
[২৮]­. ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৪০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০১৮।   
[২৯]­. ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৩৮।   
[৩০]­. ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৩৯।   
[৩১]­. ছহীহ মুসলিম, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৪৬৫। 




প্রসঙ্গসমূহ »: ভ্রান্ত মতবাদ
সুন্নাতের রূপরেখা (৪র্থ কিস্তি) - মাইনুল ইসলাম মঈন
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (৪র্থ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
সালাম প্রদানের গুরুত্ব ও মর্যাদা (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আরিফ হুসাইন
সালাম প্রদানের গুরুত্ব ও মর্যাদা - মুহাম্মাদ আরিফ হুসাইন
দ্বীনি শিক্ষার গুরুত্ব - আব্দুল গাফফার মাদানী
জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে ইসলাম শিক্ষার আবশ্যকতা - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ইসলামে বিবাহের গুরুত্ব (৩য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আবূ সাঈদ
ইখলাছই পরকালের জীবনতরী (৪র্থ কিস্তি) - আব্দুল গাফফার মাদানী
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (১১তম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (১৪তম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
ইসলামী শিষ্টাচার - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
ইসলামী জামা‘আতের মূল স্তম্ভ (১১তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন

ফেসবুক পেজ