মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০১:৫৯ পূর্বাহ্ন

সুন্নাতের আলো বিদ‘আতের অন্ধকার

মূল : ড. সাঈদ ইবনু আলী ইবনু ওয়াহাফ আল-ক্বাহত্বানী
অনুবাদ : হাফীযুর রহমান বিন দিলজার হোসাইন*


(২য় কিস্তি)

(২) الفرقة الناجية তথা মুক্তিপ্রাপ্ত দল

জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত দল হল, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উম্মতের বিভক্ত দলসমূহের আলোচনার প্রাক্কালে তাদেরকে পৃথকভাবে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, كُلُّهَا فِي النَّارِ إِلَّا وَاحِدَةٌ أَيْ لَيْسَتْ فَي النَّارِ ‘তারা সকলেই জাহান্নামী হবে একটি দল (ফিরক্বা) ব্যতীত অর্থাৎ তারা (ঐ একটি দল) জাহান্নামে যাবে না’।[১]

(৩) الطّائفة المنصورة তথা সাহায্যপ্রাপ্ত দল

মু‘আবিয়া (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রাসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,

لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِىْ قَائِمَةً بِأَمْرِ الله لَا يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ أَوْ خَالَفَهُمْ حَتَّى يَأْتِىَ أَمْرُ اللهِ وَهُمْ ظَاهِرُوْنَ عَلَى النَّاسِ.

‘আমার উম্মতের একটি জামা‘আত (ঐক্যবদ্ধ দল) আল্লাহর নির্দেশের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। যারা তাদের সঙ্গ ত্যাগ করবে বা বিরোধিতা করবে, তারা তাদের কোনই ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। এভাবে আল্লাহর নির্দেশ তথা ক্বিয়ামত এসে পড়বে আর তারা তখনও লোকের উপর বিজয়ী থাকবে’।[২]

মুগীরাহ ইবনু শু‘বাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেন, لَا يَزَالُ نَاسٌ مِنْ أُمَّتِىْ ظَاهِرِيْنَ حَتَّى يَأْتِيَهُمْ أَمْرُ اللهِ وَهُمْ ظَاهِرُوْنَ ‘আমার উম্মতের একটি দল সর্বদাই বিজয়ী থাকবে। এমনকি যখন ক্বিয়ামত আসবে তখনও তারা বিজয়ী থাকবে’।[৩]

ছাওবান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِىْ ظَاهِرِيْنَ عَلَى الْحَقِّ لَا يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتَّى يَأْتِىَ أَمْرُ اللهِ وَهُمْ كَذَلِكَ ‘আমার উম্মতের একটি দল সর্বদাই হক্বের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। তাঁদের সঙ্গ ত্যাগ করে কেউ তাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। এমনকি এভাবে আল্লাহ্র নির্দেশ অর্থাৎ ক্বিয়ামত এসে পড়বে আর তারা যেমনটি ছিল তেমনটিই থাকবে।[৪]

জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِىْ يُقَاتِلُوْنَ عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِيْنَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ ‘আমার উম্মতের একটি দল সর্বদাই হক্বের উপর জিহাদ করে ক্বিয়ামত পর্যন্ত বিজয় হতে থাকবে’।[৫]

(৪)المعتصمون المتمسكون بكتاب الله وسنة رسوله ﷺ  তথা আল্লাহর কিতাব তথা কুরআন ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাতের সুদৃঢ়ভাবে ধারণকারী

আনছার ও মুহাজির ছাহাবায়ে কেরাম যে আদর্শের উপর ছিলেন, তারাও সে আদর্শের অনুসারী হবে। এজন্যই রাসূল (ﷺ) বলেন, مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِىْ ‘আমি ও আমার ছাহাবাগণ যার উপরে আছি তার উপর থাকবে’।[৬]

(৫) هم القدوة الصالحة الذين يهدون إلي الحق وبه يعملون তথা সৎ ও উত্তম অনুসরণীয় ব্যক্তিবর্গ, যারা সত্যের পথপ্রদর্শক এবং সে অনুযায়ী আমলকারী

আইয়ূব সিখতিয়ানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

إِنَّ مِنْ سَعَادَةِ الْحَدَثِ وَالْأَعْجَمِيِّ أَن يُّوَفَّقَهُمَا اللهِ لِعَالِمٍ مِنْ أَهْلِ السُّنَّةِ.

‘ঐ হাদাছ[৭] তথা যুবক ও অনারবী ব্যক্তি সৌভাগ্যবান, যাকে আল্লাহ তা‘আলা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের একজন আলেমের সাহচর্য লাভের তাওফীক দিয়েছেন’।[৮] ফুযাইল ইবনু ঈয়ায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

إن لله عباداً يُحيي بِهمُ البلادَ وهم أصحاب السنة ومن كان يعقل ما يَدخُلُ جَوفَهُ من حِلّه كان من حزب الله.

‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলার এমন কিছু বান্দা রয়েছে, যাদের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা দেশকে জীবন্ত (জীবিত) করেন অর্থাৎ হেদায়াত দান করেন, তারাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ এবং যে ব্যক্তি বুঝতে পারে যে, যা তার পেটে প্রবেশ করেছে তা হালাল, সেই আল্লাহর দলের অন্তর্ভুক্ত’।[৯]

(৬) أهل السنة خيار الناس ينهون عن البدع وأهلها তথা আহলুস সুন্নাহগণ উৎকৃষ্ট মানুষ, যারা বিদ‘আত ও বিদ‘আতপন্থীদের বাধাদানকারী

অর্থাৎ যারা বিদ‘আতপন্থীদের সকল প্রকার বিদ‘আত ও কুসংস্কার থেকে মানুষকে নিরুৎসাহিত করে তারাই আহলুস্ সুন্নাহ্ ওয়াল জামা‘আত ও সর্বোত্তম মানুষ। আবূ বকর ইবনু আইয়াশ (রাহিমাহুল্লাহ)-কে জিজ্ঞেস করা হল, সুন্নী (আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত) কারা? উত্তরে তিনি বলেন, الذي إذا ذُكِرَتِ الأهواء لم يتعصب إلى شيء منها ‘যাদের সামনে প্রবৃত্তি নিয়ে আলোচনা করা হলে সেদিকে মনোযোগ দেয় না’।[১০] শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, أن أهل السنة هم خيار الأمة ووسطها الذين على الصراط المستقيم طريق الحق والاعتدال ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ হচ্ছে সর্বোত্তম ও মধ্যমপন্থী উম্মত, যারা সহজ-সরল, সঠিক ও ইনসাফপূর্ণ পথের অনুসারী’।[১১]

(৭) أهل السنة هم الغرباء إذا فسد الناس তথা আহলুস সুন্নাহগণ সংখ্যায় কম হবে, যখন লোকেরা বিপথগামী হয়ে যায়

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, بَدَأَ الإِسْلامَُ غَرِيْبًا وَسَيَعُوْدُ كَمَا بَدَأَ غَرِيْبًا فَطُوْبَى لِلْغُرَبَاءِ ‘ইসলাম শুরু হয়েছে অল্প সংখ্যক ব্যক্তি দ্বারা অচিরেই তা আবার শুরুর মত অল্প সংখ্যকের দিকে ফিরে যাবে। সুতরাং অল্প সংখ্যক ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ’।[১২]

অন্যত্র ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে রেওয়াত যে, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করা হল, গুরাবা অর্থাৎ অচেনা দুর্বল দল কারা? তিনি বললেন, النُّزَاعُ مِنَ الْقَبَائِلِ ‘ঐ সকল লোক, যারা আল্লাহর জন্য পরিবার-পরিজন’[১৩] ও স্বজাতি থেকে দূরে রয়েছে’।[১৪]

ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল ‘আছ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! অচেনা ক্ষুদ্র দল কারা? তিনি বললেন, أُنَاسٌ صَالِحُوْنَ فِىْ أُنَاسِ سَوْءٍ كَثِيْرٍ مَنْ يَعْصِيْهِمْ أَكْثَرُ مِمَّنْ يُطِيْعُهُمْ ‘অধিকাংশ পাপীদের মধ্যে কিছু সৎকর্মপরায়ণ লোক; তাদের আনুগত্যকারীর সংখ্যার চেয়ে অবাধ্যকারীদের সংখ্যা বেশি’।[১৫] অন্য সূত্রে এক হাদীছে রয়েছে, اَلَّذِيْنَ يُصْلِحُوْنَ إِذَا فَسَدَ النَّاسُ ‘লোকেরা যখন পথহারা হয়ে যাবে, তখন তারা তাদেরকে সংশোধন করবে’।[১৬]

সুতরাং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ হল, বিদ‘আতপন্থী ও প্রবৃত্তির অনুসারী সদস্যমূহের বিপরীতে ছোট্ট একটি সঠিক দল।

(৮) أهل السنة هم الذين يحملون العلم তথা আহলুস সুন্নাহগণ জ্ঞানের ধারক-বাহক

আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ জ্ঞানের ধারক-বাহক। এবং তারা উক্ত জ্ঞানের ধারক-বাহক। তারা সীমালঙ্ঘনকারীদের সীমালঙ্ঘন, ভ্রান্তপন্থীদের ভ্রান্তমত এবং মূর্খদের অপব্যাখ্যা খ-ন করেন। এজন্যই ইবনু সিরীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

لَمْ يَكُوْنُوْا يَسْأَلُوْنَ عَنِ الْإِسْنَادِ فَلَمَّا وَقَعَتِ الْفِتْنَةُ قَالُوْا سَمُّوْا لَنَا رِجَالَكُمْ فَيُنْظَرُ إِلَى أَهْلِ السُّنَّةِ فَيُؤْخَذُ حَدِيْثُهُمْ وَيُنْظَرُ إِلَى أَهْلِ الْبِدَعِ فَلَا يُؤْخَذُ حَدِيْثُهُمْ.

‘এমন এক সময় ছিল যখন লোকেরা হাদীছের সনদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করত না। কিন্তু পরে যখন ফিৎনা (হাদীছের নামে মিথ্যা কথার আমদানী) দেখা দিল, তখন লোকেরা হাদীছ বর্ণনাকারীদেরকে বলল, তোমরা যাদের নিকট থেকে হাদীছ গ্রহণ করেছ, আমাদের নিকট তাদের নাম বল। (তারা এ কথা এ কারণে জানতে চাইত যে), যারা আহলুস সুন্নাহ ওয়ালা জামা‘আহর অনুসারী তাদের হাদীছ গ্রহণ করা হবে, আর যারা বিদ‘আতপন্থী তাদের হাদীছ বর্জন করা হবে’।[১৭]

(৯) أهل السنة هم الذين يحزن الناس لفراقهم তথা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের কোন একজন মারা গেলে তারা ব্যথিত হন

আইয়ূব সিখতিয়ানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, إني أُخبرُ بموت الرجل من أهل السنة فكأنما أفقد بعض أعضائي ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের কোন একজন ব্যক্তির মৃত্যুর খবর শুনলে মনে হয় যেন আমি আমার একটি অঙ্গ হারিয়ে ফেলেছি’।[১৮] তিনি আরো বলেন, إن الذين يتمنون موتَ أهل السُّنَّةِ يريدون أن يطفئوا نور الله بأفواههم والله مُتِمّ نوره ولو كره الكافرون ‘যারা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের কোন ব্যক্তির মৃত্যু কামনা করে, তারা ফুৎকার দিয়ে আল্লাহর আলোকে (ইসলামকে) নিভিয়ে দিতে চায় কিন্তু আল্লাহ তাঁর আলো (ইসলাম)-কে পরিপূর্ণ করবেন যদিও তা কাফেররা অপসন্দ করে’।[১৯]

তৃতীয় পরিচ্ছেদ : সুন্নাত একটি পূর্ণাঙ্গ নে‘মত

‘নে‘মত দু’প্রকার। যথা : প্রথমতঃ نعمة مطلق দ্বিতীয়তঃ نعمة مقيدة। প্রথমতঃ نعمة مطلق : যারা স্থায়ী সৌভাগ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট। এ নে‘মত হল, ইসলাম ও রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাত। ইহকালীন ও পরকালীন সৌভাগ্য তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর নির্ভরশীল- ১. ইসলাম ২. সুন্নাহ ও ৩. দুনিয়া ও আখেরাতের সুস্থতা।

ইসলাম ও সুন্নাত এমন একটি নে‘মত, যার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারি। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন যেন আমরা তাঁর নিকট ছালাতের মাধ্যমে প্রার্থনা করি এবং এ পথের অনুসারীদের ও তাদের বৈশিষ্ট্যের পদাঙ্ক অনুসরণ করি। যাদের তিনি সর্বোত্তম বন্ধুর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ مَنۡ یُّطِعِ اللّٰہَ وَ الرَّسُوۡلَ فَاُولٰٓئِکَ مَعَ الَّذِیۡنَ اَنۡعَمَ اللّٰہُ عَلَیۡہِمۡ مِّنَ النَّبِیّٖنَ وَ الصِّدِّیۡقِیۡنَ وَ الشُّہَدَآءِ وَ الصّٰلِحِیۡنَ ۚ وَ حَسُنَ اُولٰٓئِکَ رَفِیۡقًا.  

‘যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে, তারা নবী, ছিদ্দীক, শহীদ এবং নেককার লোকদের সঙ্গী হবে, যাদের প্রতি আল্লাহর নে‘মত দান করেছেন, তারা কতই না উত্তম সঙ্গী’ (সূরা আন-নিসা : ৬৯)।

আল-কুরআনে বর্ণিত এ চার প্রকারের লোকই সাধারণত নে‘মতের অধিকারী। যাদের উদ্দেশ্য করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, اَلۡیَوۡمَ اَکۡمَلۡتُ لَکُمۡ دِیۡنَکُمۡ وَ اَتۡمَمۡتُ عَلَیۡکُمۡ نِعۡمَتِیۡ وَ رَضِیۡتُ لَکُمُ الۡاِسۡلَامَ دِیۡنًا ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নে‘মত পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসাবে কবুল করে নিলাম’ (সূরা আল-মায়িদাহ : ৩)। এ আয়াতে দ্বীন ইসলাম নামক নে‘মতকে পূর্ণাঙ্গ ও পরিপূর্ণ করে দেয়ার ঘোষণা রয়েছে। উমার ইবনু আব্দুল আযীয (রাহিমাহুল্লাহ)বলেন, إِنَّ لِلإِيْمَانِ فَرَائِضَ وَشَرَائِعَ وَحُدُوْدًا وَسُنَنًا فَمَنِ اسْتَكْمَلَهَا اسْتَكْمَلَ الإِيْمَانَ ‘ঈমানের কতকগুলো ফরয, কতকগুলো হুকুম-আহকাম, বিধি-নিষেধ এবং সুন্নাত রয়েছে। যে এগুলো পরিপূর্ণরূপে আদায় করে, সে তার ঈমানকে পূর্ণ করে’।[২০]

দ্বীন হল আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত শরী‘আত, যা তাঁর আদেশ-নিষেধ ও ভালোবাসার সমন্বয়কে বুঝায়। যে নে‘মত দ্বারা মুসলিমদের বিশেষিত করা হয়েছে, তা হল ইসলাম ও সুন্নাতের নে‘মত। এটি এমন নে‘মত, যা অর্জিত হলে প্রকৃত সন্তুষ্ট ও খুশি হওয়া যায়। আর আল্লাহ তা‘আলার নে‘মতের উপর খুশি হলে আল্লাহ তা‘আলাও খুশি হন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন

قُلۡ بِفَضۡلِ اللّٰہِ وَ بِرَحۡمَتِہٖ فَبِذٰلِکَ فَلۡیَفۡرَحُوۡا ؕ ہُوَ  خَیۡرٌ  مِّمَّا  یَجۡمَعُوۡنَ.

‘(হে নবী!) আপনি বলুন, আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ার বদৌলতে (তা এসেছে), এজন্য তারা আনন্দিত হোক। তারা যা স্তূপীকৃত করেছে তার চেয়ে তা (হেদায়াত ও রহমতপূর্ণ কুরআন) উত্তম’ (সূরা ইউনুস : ৫৮)। সালাফে ছালেহীনের মতে, আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ হল ইসলাম ও সুন্নাহ। উভয়ের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভ করার নামই হল অন্তরের সজীবতা। যখনই মানুষের মাঝে উভয়টা সুদৃঢ় হবে, তখনই হৃদয় অত্যধিক আনন্দিত হবে এবং সুন্নাতের সংস্পর্শে ধন্য হবে’।[২১]

দ্বিতীয়তঃ نعمة مقيدة ‘শর্তযুক্ত নে‘মত’। যেমন স্বাস্থগত নে‘মত, সম্পদশালী হওয়া, শারীরিক সুস্থতা, সম্মান বৃদ্ধি, অধিক সন্তান হওয়া ও পূণ্যবতী ও সুন্দরী স্ত্রী লাভ করা ইত্যাদি। আর এ জাতীয় নে‘মত পাপী, পূর্ণবান, মুমিন, কাফের সকলেই পেয়ে থাকে। তখন এ কথা বলা হয় যে, কাফেরকে আল্লাহ তা‘আলা এ নে‘মত দান করেছেন, তখন তা সত্য বলে গণ্য হবে। আর শর্তযুক্ত নে‘মত কাফির ও পাপীকে আস্তে আস্তে পাকড়াও করার উদ্দেশে দেয়া হয়। শর্তযুক্ত নে‘মতের ফলাফল হচ্ছে শাস্তি ও দুর্ভাগ্য, যে সাধারণ নে‘মতের স্বাদ আস্বাদন করেনি’।[২২]

 (ইনশাআল্লাহ চলবে)



* নারায়ণপুর, নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর।

[১]. আল্লামা ছালেহ ইবনু ফাওযান আল-ফাওযান, উছুলি আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ, পৃ. ১১।

[২]. ছহীহ বুখারী, ‘মর্যাদা ও গুণাবলী’ অধ্যায়, ‘হাদ্দাছানা মুহাম্মাদ ইবনু মুছান্নাহ’ অনুচ্ছেদ, ৪র্থ খ-, পৃ. ২২৫, হা/৩৬৪১; ছহীহ মুসলিম, ‘নেতৃত্ব’ অধ্যায়, ‘নবী করীম (ﷺ)-এর বাণী: ‘আমার উম্মতের একদল লোক হক্বের উপর ক্বায়েম (প্রতিষ্ঠিত) থাকবে বিরোধিরা তাঁদের ক্ষতি করতে পারবে না’ অনুচ্ছেদ, ২য় খ-, পৃ. ১৫২৪, হা/১০৩৭, শব্দ তাঁরই।

[৩]. ছহীহ বুখারী, ‘মর্যাদা ও গুণাবলী’ অধ্যায়, ‘হাদ্দাছানা মুহাম্মাদ ইবনু মুছান্নাহ’ অনুচ্ছেদ, ৪র্থ খ-, পৃ. ২২৫, হা/৩৬৪০; ছহীহ মুসলিম, ‘নেতৃত্ব’ অধ্যায়, ‘নবী করীম (ﷺ)-এর বাণী: ‘আমার উম্মতের একদল লোক হক্বের উপর ক্বায়েম (প্রতিষ্ঠিত) থাকবে বিরোধিরা তাঁদের ক্ষতি করতে পারবে না’ অনুচ্ছেদ, ২য় খ-, পৃ. ১৫২৩, হা/১৯২১।

[৪]. ছহীহ মুসলিম, প্রাগুক্ত, ২য় খ-, পৃ. ১৫২৩, হা/১৯২০।

[৫]. ছহীহ মুসলিম, প্রাগুক্ত, ২য় খ-, পৃ. ১৫২৩, হা/১৯২৩।

[৬]. তিরমিযী ‘ঈমান’ অধ্যায়, ‘এই উম্মতের অনৈক্য’ অনুচ্ছেদ, ৫ম খ-, পৃ. ২৬, হা/২৬৪১, সনদ হাসান।

[৭]. الحدث (আল-হাদাছ অর্থ: যুবক বা তরুণ)। দ্র. : আন-নিহায়া ফী গারীবুল হাদীছ ওয়াল আছার, ‘দালের সঙ্গে ‘হা’ মূল শব্দ, حدث হাদাছ, ১ম খ-, পৃ. ৩৫১।

[৮]. আল-লালকায়ী, শারহু উছূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ, ১ম খ-, পৃ. ৬৬, আছার নং-৩০।

[৯]. শারহু উছূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ, ১ম খ-, পৃ. ৭২, আছার নং-৫১।

[১০]. শারহু উছূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ, ১ম খ-, পৃ. ৭২, আছার নং-৫৩।

[১১]. ফাতাওয়া ইবনু তায়মিয়াহ, ৩য় খ-, পৃ. ৩৬৮-৩৬৯; বায়ানু আক্বীদাতি আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ ওয়া লুযূমু ইত্তিবাউহা, ১ম খ-, পৃ. ৮; উল্লেখ্য যে, আমি ইবনু তায়মিয়াহ ঢ়-এর গ্রন্থে বর্ণনাটি পাইনি (অনুবাদক)।

[১২]. ছহীহ মুসলিম, ‘ঈমান’ অধ্যায়, ‘শুরুতে ইসলাম ছিল অপরিচিত; শীঘ্রই আবার তা অপরিচিতের ন্যায় হয়ে যাবে’ অনুচ্ছেদ, ১ম খ-, পৃ. ১৩০, হা/১৪৫।

[১৩]. النُّزَاعُ তথা ‘তারাই আগন্তক (অপরিচিত), যারা স্বীয় পরিবার ও নিকট আত্মীয়-স্বজন হতে বিরত থেকেছেন। অর্থাৎ দূরে ও অদৃশ্য হওয়া। এর অর্থ হচ্ছে, মুহাজিরদের জন্য সুসংবাদ যারা আল্লাহ তা‘আলার জন্য স্বদেশ ছেড়ে হিজরত করে থাকেন’। দ্র. : ইবনু আছীর, আন-নিহায়া, ৫ম খ-, পৃ. ১৪১।

[১৪]. মুসনাদে আহমাদ, ১ম খ-, পৃ. ৩৯৮, হা/৩৭৮৪, সনদ ছহীহ।

[১৫]. মুসনাদে আহমাদ, ২য় খ-, পৃ. ১৭৭, ২২২, হা/৬৬৫০; সনদ হাসান লিগাইরিহি, ছহীহুল জামে‘, হা/৩৯২১।

[১৬]. মুসনাদে আহমাদ, ৪ম খ-, পৃ. ১৭৩, হা/১৬৭৩৬; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১২৭৬।

[১৭]. ছহীহ মুসলিম, ‘ভূমিকা’ ‘হাদীছের সনদ বর্ণনা করা দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত’ অনুচ্ছেদ, ১ম খ-, পৃ. ১৫।

[১৮]. শারহু উছূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ, ১ম খ-, পৃ. ৬৬, আছার নং-২৯; আবূ নু‘আইম, হিলয়াতুল আওলিয়া, ৯ম খ-, পৃ. ৩।

[১৯]. আলকায়ী, শরহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ, ১/৬৮পৃঃ, হা/৩৫।

[২০]. ছহীহ বুখারী, ‘ঈমান’ অধ্যায়, তা‘লীকভাবে, নবী করীম (ﷺ)-এর বাণী, ‘ইসলাম পাঁচটি স্তম্বের উপর প্রতিষ্ঠিত’ অনুচ্ছেদ, ১ম খ-, পৃ. ৯।

[২১]. ইবনুল ক্বাইয়িম, ইজতিমাঊল জুয়ূশিল ইসলামিয়্যাহ আলা গাযওয়াল মু‘আত্তালা ওয়াল জাহমিয়া, ২য় খ-, পৃ. ৩৩-৩৬, ৩৮।

[২২]. ইজতিমাঊল জুয়ূশিল ইসলামিয়্যাহ আলা গাযওয়াল মু‘আত্তালা ওয়াল জাহমিয়া, ২য় খ-, পৃ. ৩৬।




ইসরাঈলি বর্বরতায় রক্তাক্ত মানবতা - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
যিলহজ্জ মাসের আমল ও তার ফযীলত - মুহাম্মাদ জাহিদুল ইসলাম
রামাযানের স্বরূপ - আল-ইখলাছ ডেস্ক
বিদ‘আত পরিচিতি (২৫ তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
এমফিল ও পিএইচডি : গবেষণার প্রকৃতি ও পদ্ধতি - ড. মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ
ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ১১ রাক‘আতের নির্দেশ দিয়েছিলেন - ব্রাদার রাহুল হোসেন (রুহুল আমিন)
পরবর্তীদের তুলনায় সালাফদের ইলমী শ্রেষ্ঠত্ব (৪র্থ কিস্তি) - অনুবাদ : আযহার বিন আব্দুল মান্নান
ছালাতের সঠিক সময় ও বিভ্রান্তি নিরসন (৬ষ্ঠ কিস্তি) - মাইনুল ইসলাম মঈন
শরী‘আত অনুসরণের মূলনীতি - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ (২য় কিস্তি) - অনুবাদ : মুহাম্মদ ইমরান বিন ইদরিস
ফাযায়েলে কুরআন (৫ম কিস্তি) - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
তাক্বওয়াই মুক্তির সোপান - আব্দুর রশীদ

ফেসবুক পেজ