মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০১:১৫ পূর্বাহ্ন

মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ

-আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম*


ভূমিকা

মাতুরীদী মতবাদ ভ্রান্ত ও বিদ‘আতী ফের্কাসমূহের অনত্যম। এই ফের্কা অহীকে যুক্তি, বুদ্ধি ও দর্শনের আলোকে ব্যাখ্যা করে থাকে। তারা আল্লাহর ছিফাতসমূহকে অস্বীকার ও অপব্যাখ্যা করে থাকে। তাদের আক্বীদার মূল বিষয় হল- মানবীয় বুদ্ধি-বিবেককে অহীর উপর প্রাধান্য দেয়া। মু‘তাযিলারা নিজেদেরকে তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্বের অনুসারী দাবী করতে গিয়ে আল্লাহর সত্তা ব্যতীত তারা অন্যান্য ছিফাতসমূহকে অস্বীকার করে। আশ‘আরীরা সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য হওয়ার যুক্তিতে আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর কিছু কিছু অস্বীকার করে। আর মাতুরীদীরা মু‘তাযিলাদের বিরোধিতা করার জন্য নতুন যুক্তি, বুদ্ধিমত্তা এবং দার্শনিক ব্যাখ্যা দিয়ে দ্বীনের নতুন ব্যাখ্যা প্রদান করেছে। যা ভ্রান্ত বৈ কিছুই নয়। নিম্নে ‘মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ’ সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হল।

মাতুরীদী মতবাদ

মাতুরীদী একটি বিদ‘আতী ধর্মতাত্ত্বিক ফের্কা। এদেরকে আবূ মানছূর আল-মাতুরীদীর দিকে নিছবত করা হয়ে থাকে। মূলত তারা মু‘তাযিলা ও জাহমিয়্যাদের দার্শনিক ব্যাখ্যার বিরোধিতা করা এবং যুক্তি ও দর্শন ভিত্তিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে দ্বীনের আক্বীদা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে থাকে।[১] মাতুরীদী মতবাদ হিজরী তৃতীয় শতাব্দীর অন্যতম আলিম ‘আবূ মানছূর মুহাম্মাদ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু মাহমূদ’-এর দিকে সম্পৃক্ত করা হয়।[২] তার উপাধি হল ‘আল-মাতুরীদী’। জন্মস্থানের দিকে নিছবত করে তাকে মাতুরীদী[৩] বলা হয়।[৪] তার জন্ম তারিখ সম্পর্কে স্পষ্ট হওয়া যায়নি। তবে তিনি ৩৩৩ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি তৎকালীন বিখ্যাত হানাফী আলেমদের নিকট ইলমুল কালাম ও ফিক্বহী জ্ঞান অর্জন করেন। তৎকালীন কিবারুল উলামার মধ্যে তার অন্যতম শিক্ষক হলেন- নাছর ইবনু ইয়াহইয়া আল-বালখী (মৃ. ৩৮৬ হি.)।[৫]

মাতুরীদি মতবাদের উৎপত্তি ও বিকাশ

২৮৫ হিজরীর পর থেকে এই মতবাদের সূচনা। তৎকালীন সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত মাতুরীদি মতবাদের অনেক স্তর বা ধাপ অতিবাহিত হয়েছে। যেমন,

১. ভিত্তিস্থাপনের স্তর : ২৮৫ হিজরী থেকে ৩৩৩ হিজরী পর্যন্ত ভিত্তিস্থাপনের স্তর। এই সময়ে আবূ মানছূর আল-মাতুরীদি (২৮৫-৩৩৩ হি.) ‘মাতুরীদি’ মতবাদ প্রচলন করেন। এই স্তর মু‘তাযিলাদের সাথে কঠিন তর্ক-বিতর্কের সময় হিসাবে চি‎হ্নিত। তখন মু‘তাযিলা সহ অন্যান্য মতবাদের মধ্যে আক্বীদাগত মতপার্থক্য ব্যাপক আকারে দেখা দেয়। উল্লেখ্য, এই সময় আশ‘আরী মতবাদেরও উৎপত্তি হয়।[৬]

২. তৈরিকরণ বা গঠনের স্তর : ৩৩৩ হিজরী থেকে ৪০০ হিজরী পর্যন্ত তৈরিকরণ বা গঠনের স্তর। আবূ মানছূর আল-মাতুরীদির ছাত্রদের স্তরকে তৈরিকরণ বা গঠনের স্তর (৩৩৩-৪০০ হি.) বলা হয়। পরবর্তীতে তাদের প্রভাবে যারা প্রভাবিত হয়েছিল তারাও এই স্তরের অন্তর্ভুক্ত। এই সময় বিভিন্ন ধর্মতাত্ত্বিক মতবাদের প্রকাশ ঘটে। আবূ মানছূর আল-মাতুরীদির ছাত্রবৃন্দ এবং এই মতবাদের অনুসারীদের ছাত্রবৃন্দ তাদের শায়খ ও ইমামদের চিন্তা, দর্শনকে বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেয় এবং প্রচার করে।[৭]

৩. কিতাব রচনা এবং সুদৃঢ় হওয়ার স্তর : ৪০০ হিজরী থেকে ৭০০ হিজরী পর্যন্ত সময় হল- কিতাব রচনা ও সৃদৃঢ় হওয়ার স্তর। এই স্তরকে আবার দু’ভাগে ভাগ করা যায়। ৪০০ হিজরী থেকে ৫০০ হিজরী এবং ৫০০ থেকে ৭০০ হিজরী। যেমন,

ক. বাযদূবি (৪০০-৫০০ হি.) স্তর : এই স্তরে পূর্ববর্তী আক্বীদা এবং লেখনির ব্যাপক প্রচার ও প্রসার করা হয়।[৮]

খ. নাসাফী (৫০০-৭০০ হি.) স্তর : এই স্তরে ব্যাপকভাবে মাতুরীদি আক্বীদার দলীল একত্রিত করা হয়। আবুল মা‘ঈন আন-নাসাফী (মৃ. ৫০৮ হি.), নাজমুদ্দীন ওমর আন-নাসাফী (মৃ. ৫৩৭ হি.) এবং হাফিযুদ্দীন আব্দুল্লাহ আন-নাসাফী (মৃ. ৭১০ হি.) এই স্তরের অন্যতম ব্যক্তিত্ব।[৯] এই স্তরের অন্যতম ব্যক্তি হল- আবূ মুহাম্মাদ নূরুদ্দীন আহমাদ ইবনু মুহাম্মাদ আছ-ছাবূনী (মৃ ৫৮০ হি.)। তার সময়কে ‘ছাবূনী স্তরও’ বলা যায়। এই সময় মাতুরীদিদের শ্রেষ্ঠ সময় বলে উল্লেখ করাও হয়ে থাকে। কারণ এ সময় মাতুরীদি এবং আশ‘আরীদের মধ্যে ব্যাপক বিতর্কের মাধ্যমে সময়টা বৈশিষ্ট্যম-িত।[১০]

৪. বিস্তৃতি, প্রচার ও প্রসারের স্তর : ৭০০ হিজরী থেকে ১৩০০ হিজরী পর্যন্ত সময়কে বিস্তৃতি, প্রচার ও প্রসারের স্তর বলা হয়। এটাকে ওছমানী সাম্রাজ্যের দিকে নিছবত করে ওছমানী (৭০০-১৩০০ হি.) স্তরও বলা হয়।[১১] ওছমানী সাম্রাজ্যের সুলতানদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতায় পৃথিবীর প্রাচ্যদেশ হতে পাশ্চাত্য পর্যন্ত, আরব, অনারব, ভারতবর্ষ, তুর্কীজাতি, পারস্য এবং রোমকদের মধ্যে এই মতবাদ ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি, প্রসার ও প্রসার ঘটে।[১২] এই স্তরে মাতুরীদি আক্বীদার উপর বিভিন্ন বিষয়ের আলোকে মূল বই, ব্যাখ্যাগ্রন্থ, ব্যাখ্যার ব্যাখ্যাগ্রন্থ, হাশিয়া বা পাদটীকা, হাশিয়ার উপর হাশিয়া লিপিবদ্ধ করা হয়।[১৩] সালাফগণ এই স্তরকে আবার কয়েকটি স্তরে বিন্যাস করেছেন।[১৪] যেমন,

(ক) ওবাইদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (মৃ. ৭৪৭ হি.) স্তর।

(খ) তাফতাযানী (৭১২-৭৯২ হি.) স্তর।

(গ) জুরজানী (৭৪০-৮১৬ হি.) স্তর।

(ঘ) ইবনুল হুমাম (৭৯০-৮৬১ হি.) স্তর।[১৫] 

(ঙ) দেওবন্দী স্তর : ১২৮৩ হিজরী থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ‘দেওবন্দী স্তর’ বলা হয়। দেওবন্দ[১৬] মাদরাসার দিকে সম্পৃক্ত করে এই স্তরের নামকরণ করা হয়েছে। যা ‘মুহাম্মাদ ক্বাসিম নানূতূবী’ প্রতিষ্ঠা করেন। হাদীছ, হাদীছের ব্যাখ্যাসহ অন্যান্য বই পুস্তক অধিকহারে রচনার কারণে এই স্তরটি মাতুরীদিদের অন্যতম স্তরে পরিণত হয়েছে। দেওবন্দিরা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের বিরোধিতা করে এবং তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে। তাদের মধ্যে সুবিধাবাদিরা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতকে ‘ওয়াহাবী’ নামকরণ করেছে। এমনকি তাদেরকে কুৎসিত, নোংরা, বিকৃত ভাষায় গালিগালাজ করে এবং অরুচিকর ভাষায় বিদ্রুপাত্মক উপাধিতে ভূষিত করে।[১৭]

মাতুরীদি আক্বীদার লোকজন তাছাউফপন্থী তথা ছূফী তরীকায় বিশ্বাসী। তাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছে কবরপূজারী। যার সাক্ষ্য দেয় তাদের আক্বীদার অন্যতম কিতাব শায়েখ খলীল আহমাদ শাহরানপূরীর লিখিত ‘আল-মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ’ বই।[১৮] মাওলানা খলীল আহমাদ সাহারানপূরী বলেন, ‘আমরা, আমাদের জামাত শরী‘আতের সকল বিধান-প্রবিধানে আল্লাহর ইচ্ছায় ইমাম আযম আবু হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ)-এর অনুসারী। আকাইদের ক্ষেত্রে আবুল হাসান আশ‘আরী (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম আবু মনসুর মাতুরীদি (রাহিমাহুল্লাহ)-এর অনুসারী এবং ‘তারই সাথে তরীকতে ছূফিয়ার ক্ষেত্রে আমরা নকশাবন্দিয়া, চিশতিয়া, শুহরাওয়ার্দিয়া ও মুজাদ্দেদিয়ার সাথে সম্পর্ক রাখি’।[১৯]

দেওবন্দিদের শাখা

দেওবন্দিদের শাখা দু’টি। ১. তা‘লীম ও তাদরীস এবং ২. তাবলীগ ও তারবিয়াহ। যা ‘জামা‘আতে তাবলীগ’ অর্থাৎ তাবলীগ জামা‘আত নামে পরিচিত।[২০] এই স্তরে তাদের মধ্যে ব্যাপক ভালো আমলের পাশাপাশি বিভিন্ন কুসংস্কার, উপকথা, কল্পকাহিনী, কবরপূজারী ও ছূফীবাদের অনুপ্রবেশ ঘটে। আর এ কারণে এই জামা‘আতে মাতুরীদিয়াদের এই স্তর ভিন্ন আকার ধারণ করে। এই জামা‘আত গোপনে পর্যায়ক্রমে ছূফীদের চিন্তা-চেতনা, তাদের দর্শন প্রকাশ করে বা ছড়িয়ে দেয়। দেওবন্দীদের অন্যতম একজন বড় লেখক এবং তাদের অন্যতম সাময়িকী ‘আত-তাজাল্লী’-এর সম্পাদক শায়খ ‘আমির আল-উছমানী স্বীকার করেছেন যে,أن كل بلاء وبدعة  وخرافة دخلت علي الديوبندية إنما دخلت من أبواب التصوف ‘প্রত্যেক দুর্যোগ, বিদ‘আত, কুসংস্কার এবং কল্পকাহিনী তখনি দেওবন্দীদের মধ্যে প্রবেশ করেছে, যখন থেকে ছূফীবাদ বা আধ্যাত্মিকতা প্রবেশ করেছে’।[২১]

তাবলীগ জামা‘আত

শায়খ মুহাম্মাদ ইলিয়াস হিন্দী হানাফী দেওবন্দী (১৩০৩-১৩৬৩ হি./১৮৮৫-১৯৪৪ খ্রি.) এই জামা‘আত প্রতিষ্ঠা করেন। শায়খ মুহাম্মাদ যাকারিয়া (১৩১৭-১৪০২ হি./১৮৯৮-১৯৮২ খ্রি.) এই জামা‘আতের উপর অসংখ্য বই রচনা করেন।[২২] শায়খ মুহাম্মাদ ইলিয়াস দেওবন্দী (১৩০৩-১৩৬৩ হি./১৮৮৫-১৯৪৪ খ্রি.) ১৯২১ সালে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের ‘মেওয়াত’ এলাকায় ‘ফিরোযপুর নিমক’ গ্রামে তাবলীগ জামা‘আত প্রতিষ্ঠা করেন। উক্ত ফের্কার মূল গ্রন্থ ‘তাবলীগী নেছাব’, যা ‘ফাযায়েলে আমল’ বলে পরিচিত। এর লেখক হলেন ইলিয়াস ছাহেবের জামাই, ভাতিজা এবং ছাত্র মাওলানা যাকারিয়া (১৩১৭-১৪০২ হি./১৮৯৮-১৯৮২ খ্রি.)। উক্ত গ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৯৭৫ মোতাবেক ১৩৯৫ হিজরীতে।[২৩] ‘ফাযায়েলে সাদাকাত’ও তার অন্যতম কিতাব। মাওলানা ইলিয়াস (রাহিমাহুল্লাহ)-এর পুত্র মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ কান্ধলভী (১৯১৭-১৯৬৫ খ্রি.) প্রণীত এবং মুহাম্মাদ সা‘দ কর্তৃক উর্দূ অনুদিত ‘মুন্তাখাব হাদীস’ বইটিও তাদের অনুসরণীয়। এটি প্রথম ২০০০ সালে প্রকাশিত হয়। উক্ত কিতাব ছাড়াও মাওলানা আশরাফ আলীর রচিত ‘বেহেশতী যেওর’, ‘নিয়ামুল কুরআন’, ‘হুকুকূল ইসলাম ও হুকুকূল ওয়ালিয়াইন’, ও ‘মক্বছূদুল মুমিনীন’-কে অনুসরণ করে থাকে। এছাড়াও হাফেয মাওলানা মুফতী হাবীব ছামদানী রচিত বই ‘তাবলীগের কাজ কি? ছয় নম্বর ও আয়নায়ে হুরের বয়ান সহ’ বইটিও অন্যতম।

(চ) বেরীলভী স্তর

১২৭২ হিজরী থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বেরীলভী স্তর। তাদের নেতা বা প্রধান আহমাদ রেযা খান আফগানী হানাফী আল-মাতুরীদি আছ-ছূফী আল-কুবূরী (মৃ. ১৩৪০ হি.)-এর দিকে সম্পৃক্ত করা হয়।[২৪] আহমাদ রেযা ভারতের উত্তর প্রদেশের ‘বেরীলী’ শহরে জন্ম গ্রহণ করেন।[২৫] এই দিক থেকেই এই স্তরকে বেরীলভী স্তর বলা হয়। তিনি নিজেকে ‘আব্দুল মুছত্বফা’ নামে নামকরণ করেছেন।[২৬] যে সকল আক্বীদাকে বেরীলভীগণ আঁকড়ে ধরে আছে, সে আক্বীদাসমূহ বেরীলভী মতবাদের অনুসারীগণের মুজাদ্দিদ আহমাদ রেযা খাঁন বেরীলভী কর্তৃক রচনা করা ও তা সুবিন্যস্ত করার কাজ সম্পাদিত হয়েছে। বেরিলভী নামকরণের পিছনে কারণও সেটাই।[২৭]

এই স্তর কবর পূজা, মূর্তি পূজা সহ স্পষ্ট শিরক দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। তাছাড়া দেওবন্দীদের সাথে বেরিলভীদের শত্রুতাও স্পষ্ট আকার ধারণ করে। দেওবন্দিদের কাফের ফৎওয়া দেয়া থেকে শুরু করে অন্যান্য শত্রুতাও তারা অবশিষ্ট রাখেনি। যেমনভাবে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতকে কাফের সাব্যস্ত করা থেকে শুরু করে তাদেরকে ‘ওয়াহাবী’ বলে সম্বোধন করে ক্ষেপিয়ে তুলা এবং ‘ওয়াহাবী’ নামকরণ করা কোনটাই অবশিষ্ট রাখেনি।[২৮]

(ছ) কাওছারী স্তর

১২৯৬ হিজরী থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত কাওছারী স্তর। সালাফীদের অন্যতম শক্র ‘মুহাম্মাদ যাহিদ আল-কাওছার আল-জারকাসী আল-হানাফী আল-মাতুরীদী’[২৯] (মৃ. ১৩৭১ হি.)-এর দিকে সম্পৃক্ত। তার নামের দিকে সম্পৃক্ত করে এই স্তরকে ‘কাওছারী স্তর’ বলা হয়। এই স্তর আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের সাথে কঠিন শক্রতা, ইসলামের ইমামদের প্রতি তিরস্কার, নিন্দা, অপবাদ এবং তাদেরকে অভিশাপ দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। এ সময়ে তারা মুশরিক ও কাফেরদের মত মূর্তি ও কবরপূজা আরম্ভ করে। শুধু তাই নয়, এই স্তর মানুষদেরকে শিরক এবং কবরপূজার দিকে দা‘ওয়াত দেয়ার স্তর। কবরের উপর মসজিদ, কবর কেন্দ্রিক মসজিদ, গম্বুজ, খিলান, মিনার এবং তাঁবু তৈরির বৈধতা প্রদান করা হয় এই স্তরে।[৩০] কাওছারী (১২৯৬-১৩৭১ হি.) উপরিউক্ত বিষয়ের উপর অনেক লেখনির মাধ্যমে জাহমিয়্যাদের আক্বীদা এবং কবরপূজা জীবন্ত ও সজীব করে তুলেছে। সে এমন কিছু কুসংস্কার এবং শিরকের প্রচলন করেছে, যা তাওহীদুল উলূহিয়্যাতের বিপরীত।

(ইনশাআল্লাহ চলবে)

*পি-এইচ. ডি গবেষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

তথ্যসূত্র :
[১]. আন-নাদওয়াতু ‘আলামিয়্যাতু লিশশাবাবিল ইসলামী, সম্পাদনা : ড. মানিঈ ইবনু হাম্মাদ আল-জুহানী, মাওসূ‘আতুল মাইসিরাতু ফিল আদইয়ান ওয়াল মাযাহিব ওয়াল আহযাবিল মু‘আছারাহ, (দারুন নাদওয়াতুল ‘আলামিয়্যা, তাবি), ১ম খণ্ড, পৃ. ২৯।
[২]. ড. মাহমূদ মুহাম্মাদ মাযরূ‘আ, দিরাসাতু ফিল ফিরাক্বিল ইসলামী (কায়রো : দারুল কুতুবিল মিছরিয়্যা, ১৪৩৭ হি./২০১৬ খ্রি.), পৃ. ১৭২; ফিরাকুল মু‘আছারাহ, পৃ. ১২২৭।
[৩]. মাতুরীদী একটি গ্রামের নাম। এটি উজবেকিস্তানের অন্যতম শহর সামারকন্দের অন্তর্গত।
[৪]. দিরাসাতু ফিল ফিরাক্বিল ইসলামী, পৃ. ১৭২; ফিরাকুল মু‘আছারাহ, পৃ. ১২২৭।
[৫]. ইয়াহইয়া আল-বালখী তৃতীয় হিজরীর মাঝামাঝি সময়ে জন্মগ্রহণ করেন। দ্র. : ফিরাকুল মু‘আছারাহ, পৃ. ১২২৭।
[৬]. শামসুদ্দীন সালাফী আল-আফগানী, আদা’ঊ মাতুরীদিয়াতি লিল আক্বীদাতিস সালাফিয়্যা আল-মাতুরীদিয়া- আল-মাতুরীদিয়া ওয়া মাওক্বিফুহুম মিন তাওহীদিল আসমা’ই ওয়াছ ছিফাত (ত্বায়েফ : মাকতাবাতুছ ছিদ্দীক, ২য় সংস্করণ, ১৪১৯ হি./১৯৯৮ খৃ.), ১ম খণ্ড, পৃ. ২৮৬।
[৭]. প্রাগুক্ত ।
[৮]. আদা’ঊ মাতুরীদিয়াতি লিল আক্বীদাতিস সালাফিয়্যা আল-মাতুরীদিয়া, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৮৬।
[৯]. প্রাগুক্ত, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৮৭।
[১০]. প্রাগুক্ত।
[১১]. প্রাগুক্ত।
[১২]. প্রাগুক্ত, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৮৮।
[১৩]. প্রাগুক্ত।
[১৪]. প্রাগুক্ত, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৮৭।
[১৫]. প্রাগুক্ত।
[১৬]. দেওবন্দ মাদরাসার মূল নাম হল ‘দারুল উলূম দেওবন্দ’। যা ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর জেলার দেওবন্দ নামক স্থানে অবস্থিত। ১৮৮৬ সালে বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ইসলামী পণ্ডিত এটি প্রতিষ্ঠা করেন। ‘মুহাম্মাদ ক্বাসিম নানূতূবী’ তাদের প্রধান ছিলেন। অন্যদের মধ্যে ছিলেন মাওলানা রশীদ আহমেদ গাঙ্গুহী ও হাজী সৈয়দ আবিদ হুসাইন। দ্রষ্টব্য : উইকিপিডিয়া।
[১৭]. আদা’ঊ মাতুরীদিয়াতি লিল আক্বীদাতিস সালাফিয়্যা আল-মাতুরীদিয়া, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৮৮।
[১৮]. প্রাগুক্ত।
[১৯]. মাওলানা খলীল আহমদ সাহরানপুরী, আল-মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ, ভাষান্তর, অধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ আব্দুল হাকীম, দেওবন্দী আহলে সুন্নাতের আক্বীদা (সিলেট : আল হাবীব ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ১৪৩৩ হি./২০১২ খৃ.), পৃ. ২২।
[২০]. প্রাগুক্ত।
[২১]. আদা’ঊ মাতুরীদিয়াতি লিল আক্বীদাতিস সালাফিয়্যা আল-মাতুরীদিয়া, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৯০।
[২২]. প্রাগুক্ত, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৮৯।
[২৩]. মুযাফফর বিন মুহসিন, ভ্রান্তির বেড়াজালে ইক্বামতে দ্বীন (রাজশাহী : বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ, ২য় সংস্করণ, জুলাই ২০১৪ খৃ.), পৃ. ১২১; ড. মুহাম্মাদ জামাল উদ্দিন, ইসলামী দাওয়াহ ও তাবলীগ জামায়াত : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ (ঢাকা : ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, জানুয়ারী ২০০৬ খৃ.), পৃ. ৭৭।
[২৪]. আদা’ঊ মাতুরীদিয়াতি লিল আক্বীদাতিস সালাফিয়্যা আল-মাতুরীদিয়া, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৯০।
[২৫]. শায়খ ইহসান ইলাহী যহীর, বেরেলভী মতবাদ : আক্বীদা-বিশ্বাস ও ইতিহাস; অনুবাদ : আবূ রুমাইসা মুহাম্মাদ নুর আব্দুল্লাহ হাবীব (পাবনা : আল-হুদা একাডেমী, ১৪৩৬ হি./২০১৫ খৃ.), পৃ. ২৮।
[২৬]. আদা’ঊ মাতুরীদিয়াতি লিল আক্বীদাতিস সালাফিয়্যা আল-মাতুরীদিয়া, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৯০: বেরেলভী মতবাদ : আক্বীদা-বিশ্বাস ও ইতিহাস, পৃ. ২৮।
[২৭]. বেরেলভী মতবাদ : আক্বীদা-বিশ্বাস ও ইতিহাস, পৃ. ২৮-এর বরাতে ‘দায়িরাহ আল-মা‘আরিফা আল ইসলামিয়্যাহ’ (পাঞ্জাব : জামি‘আহ পাঞ্জাব, ১৯৬৯ খৃ.), ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৪৮৫।
[২৮]. আদা’ঊ মাতুরীদিয়াতি লিল আক্বীদাতিস সালাফিয়্যা আল-মাতুরীদিয়া, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৯০।
[২৯]. মুহাম্মাদ যাহিদ আল-কাওছার আল-জারকাসী আল-হানাফী আল-মাতুরীদি ১৮৭৯ সালে ডাজসে, বর্তমানে তুরস্কে (অটোমান সাম্রাজ্যের) সার্কাসিয়ান বংশোদ্ভূত এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি অটোমান সাম্রাজ্যের ‘শেষ শায়খুল ইসলাম’ নামে পরিচিত ছিলেন। অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পরে কামালবাদীরা ধর্মীয় পণ্ডিত শ্রেণির উপর একটি সহিংস ফাটল শুরু করে। তখন তিনি কায়রো, তারপরে সিরিয়ায় এবং অবশেষে কায়রোতে অবস্থান করেন এবং সেখান থেকে তার মতবাদের প্রচার ও প্রসার করেন। দ্র. উইকিপিডিয়া।
[৩০]. আদা’ঊ মাতুরীদিয়াতি লিল আক্বীদাতিস সালাফিয়্যা আল-মাতুরীদিয়া, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৯১। 




বিদ‘আত পরিচিত (২১তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
কর্যে হাসানাহ প্রদানের গুরুত্ব ও ফযীলত - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
হজ্জ ও ওমরার সঠিক পদ্ধতি (২য় কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (৬ষ্ঠ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
আল-কুরআনের প্রতি ঈমান আনয়নের স্বরূপ - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
ক্রোধের ভয়াবহতা ও তার শারঈ চিকিৎসা - হাসিবুর রহমান বুখারী
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (৪র্থ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আত সম্পর্কে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের অবস্থান (৫ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির
সূদ-ঘুষ ও অবৈধ ব্যবসা (৫ম কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
পরবর্তীদের তুলনায় সালাফদের ইলমী শ্রেষ্ঠত্ব (৫ম কিস্তি) - অনুবাদ : আযহার বিন আব্দুল মান্নান
ইসলামী জামা‘আতের মূল স্তম্ভ (৬ষ্ঠ কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন
দু‘আ ও যিকর : আল্লাহর অনুগ্রহ ও প্রশান্তি লাভের মাধ্যম (৩য় কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম

ফেসবুক পেজ