ইসলামী পুনর্জাগরণের প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণের উপায়
- ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
(৮ম কিস্তি)
(৭) মুসলিম উম্মাহর বিভক্তি
রাসূল (ﷺ)-এর মৃত্যুর পর পরই ইসলামের নামে অসংখ্য মতবাদ, দল ও পথের আবির্ভাব ঘটে। মিথ্যা ও উদ্ভট দর্শনের ফলে মুসলিম ঐক্য ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। ইসলামের প্রকৃত ঐতিহ্য ও সম্মান বিনষ্ট হয়। এভাবে রাসূল (ﷺ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী কার্যকর হয়। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, একদা রাসূল (ﷺ) আমাদের জন্য একটি সোজা রেখা টানলেন এবং বললেন, এটা আল্লাহর পথ। অতঃপর তিনি ঐ রেখার ডানে এবং বামে বেশ কিছু রেখা টানলেন। তারপর বললেন, এগুলোও পথ। তবে এই পথগুলোর প্রত্যেকটিতেই শয়তান রয়েছে, সে মানুষকে তার দিকে ডাকছে। অতঃপর তিনি সোজা রেখাটির উপর ডান হাত রেখে নিম্নোক্ত আয়াত পাঠ করলেন,
وَ اَنَّ ہٰذَا صِرَاطِیۡ مُسۡتَقِیۡمًا فَاتَّبِعُوۡہُ ۚ وَ لَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِکُمۡ عَنۡ سَبِیۡلِہٖ
‘নিশ্চয় এই সোজ-সরল পথটিই আমার পথ। তোমরা কেবল এই পথেরই অনুসরণ করবে; অন্যান্য পথের অনুসরণ করো না। নইলে তা তোমাদেরকে এই পথ থেকে বিচ্যুত করে দিবে’।[১] অন্যত্র তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় বানী ইসরাঈলরা ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল। আর আমার উম্মত বিভক্ত হবে ৭৩ দলে। একটি দল ব্যতীত সবই জাহান্নামে যাবে। ছাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, সেই দলটি কোন্ দল? রাসূল (ﷺ) উত্তরে বললেন, مَا أَنَا عَلَيْهِ الْيَوْمَ وَأَصْحَابِىْ ‘আমি ও আমার ছাহাবীগণ আজকের দিনে যে নীতির উপর আছি, তার উপরে যে দলটি থাকবে’।[২] অন্য হাদীছে বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে অচিরেই অসংখ্য ভ্রান্ত দলের আবির্ভাব ঘটবে। তারা নিত্যনতুন অনেক বিদ‘আতী আমল সৃষ্টি করবে।[৩] অন্যত্র রাসূল (ﷺ) বলেন, অনেক দল আমার পথ ছেড়ে অন্য পথে চলবে এবং আমার আদর্শ ছেড়ে অন্যের আদর্শ গ্রহণ করবে।[৪]
উক্ত ভবিষ্যদ্বাণীগুলোতে সতর্ক করা হলেও মুসলিমরা অসংখ্য দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তারা জান্নাতের পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে নিজেদের তৈরি থিওরি ও বিভক্তির পথে পরিচালিত হচ্ছে। ফলে ইসলামের পুনর্জাগরণ চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এক প্লাটফরমে একত্রিত করা সম্ভব হচ্ছে না। আলেমগণের মতানৈক্য ও আমলের ভিন্নতা সমাজকে অতিষ্ট করে তুলেছে। ‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে ঐক্যবদ্ধভাবে দৃঢ়তার সাথে আঁকড়ে ধরো’ আল্লাহর এই চিরন্তন নির্দেশকে উপেক্ষা করে মানব রচিত আইন ও বিধানের দিকে জনগণ ধাবিত হচ্ছে।
বিভিন্ন দলের পরিচিতি ও পর্যালোচনা
(১) খারেজী মতবাদ
ফের্কাবন্দীর ইতিহাসে প্রধান ভ্রান্ত দল হল খারেজী। নেতৃত্ব বা রাষ্ট্রক্ষমতাকে কেন্দ্র করে তাদের উদ্ভব। রাজনৈতিক দল হিসাবে তাদের মূল টার্গেট ছিল যেকোন পন্থায় রাষ্ট্রক্ষমতা অর্জন করা। রাসূল (ﷺ)-এর মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে উক্ত মতবাদের আবির্ভাব লক্ষ্য করা যায়। কাবীরা গোনাহগার ব্যক্তি কাফের এবং হত্যাযজ্ঞ অপরাধী এই বিশ্বাসের আলোকে তারা মানুষ হত্যা করে কথিত দ্বীন কায়েমের প্রচেষ্টা চালায়। এভাবেই তারা ইসলামের মধ্যে প্রথম বিভ্রান্তির বীজ বপন করে। ইসলামে এদের কোন স্থান নেই। ইমাম ইবনু হাযম আন্দালুসী (৩৮৪-৪৫৬ হি.) বলেন,
وَقَدْ تُسَمَّ بِاسْمِ الْإِسْلَامِ مِنْ أَجْمَعَ جَمِيْعِ فِرَقِ أَهْلِ الْإِسْلَامِ عَلَى أَنَّهُ لَيْسَ مُسْلِمًا مِثْلُ طَوَائِفَ مِنَ الْخَوَارِجِ
‘ইসলামী দলসমূহের মধ্যে অনেক ফের্কারই ইসলামের নামে নামকরণ করা হয়েছে। মূলত সেগুলো ইসলামী দল নয়। যেমন খারেজী জোট’।[৫] অন্যত্র তিনি বিভিন্ন ফের্কার বর্ণনা দেয়ার পর বলেন, مُجْمِعُوْنَ عَلَى أَنَّهُمْ عَلَى غَيْرِ الْإِسْلَامِ نَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الْخَذْلَانِ ‘ঐ দলগুলো সবই ইসলাম বহির্ভূত। আমরা তাদের প্রতারণা হতে আল্লাহর নিকট পরিত্রাণ ভিক্ষা করছি’।[৬] অতঃপর ওমর ও ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর হত্যার মাধ্যমে তাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়। সবশেষে চতুর্থ খলীফা আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে হত্যা করার মাধ্যমে তাদের আত্মপ্রকাশ ঘটে। তবে চরমপন্থী খারেজীরা যে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহ্র চিরন্তন শত্রু, সে বিষয়ে রাসূল (ﷺ) পূর্বেই সতর্ক করে দিয়েছেন। একাধিকবার হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করার কারণে এ বিষয়ে বর্ণিত হাদীছের সংখ্যা ‘মুতাওয়াতির’ পর্যায়ে পৌঁছেছে।[৭] আবুযার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন,
سَيَكُوْنُ بَعْدِىْ مِنْ أُمَّتِىْ قَوْمٌ يَقْرَأُوْنَ الْقُرْآنَ لَايُجَاوِزُ حَلَاقِيْمَهُمْ يَخْرُجُوْنَ مِنَ الدِّيْنِ كَمَا يَخْرُجُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ ثُمَّ لَايعُوْدُوْنَ فِيْهِ هُمْ شَرُّ الْخَلْقِ وَالْخَلْقِيَّةِ
‘অচিরেই আমার পরে আমার উম্মতের মধ্যে এমন একটি সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটবে, যারা পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করবে, কিন্তু তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা ইসলাম থেকে অনুরূপ তীব্র গতিতে বের হয়ে যাবে, যেমন শিকার ভেদ করে তীর বেরিয়ে যায়। অতঃপর তারা আর ইসলামে ফিরে আসবে না। তারাই সৃষ্টির সর্বনিকৃষ্ট মানুষ’।[৮] আবু সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রাসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি,
يَخْرُجُ فِيْكُمْ قَوْمٌ تَحْقِرُوْنَ َصَلَاتَكُمْ مَعَ صَلَاتِهِمْ وَصِيَامَكُمْ مَعَ صِيَامِهِمْ وَعَمَلَكُمْ مَعَ عَمَلِهِمْ وَيَقْرَءُوْنَ الْقُرْآنَ لَايُجَاوِزُ حَنَاجِرَهُمْ يَمْرُقُوْنَ مِنَ الدِّيْنِ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ ... يَقْتُلُوْنَ أَهْلَ الْإِسْلَامِ وَيدَعُوْنَ أَهْلَ الْأَوْثَانِ لَئِنْ أَنَا أَدْرَكْتُهُمْ لَأَقْتُلَنَّهُمْ قَتْلَ عَادٍ
‘তোমাদের মধ্যে একটি সম্প্রদায় বের হবে। তোমরা তাদের ছালাতের তুলনায় তোমাদের ছালাতকে অতি তুচ্ছ মনে করবে, তাদের ছিয়ামের তুলনায় তোমাদের ছিয়ামকে এবং তাদের আমলের তুলনায় তোমাদের আমলকে তুচ্ছ জ্ঞান করবে। তারা কুরআন তেলাওয়াত করবে কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা ইসলাম থেকে এমন তীব্র গতিতে বের হয়ে যাবে, যেমন শিকার ভেদ করে তীর বেরিয়ে যায়।...তারা মুসলিমদেরকে হত্যা করবে এবং মূর্তিপূজকদের ছেড়ে দিবে। রাসূল (ﷺ) বলেন, আমি যদি তাদেরকে পাই, তাহলে অবশ্যই ‘আদ সম্প্রদায়ের ন্যায় হত্যা করব’।[৯]
রাসূল (ﷺ)-এর উক্ত ভবিষ্যদ্বাণীর বাস্তবায়ন তাঁর জীবনের শেষ দিকে শুরু হয়। ইয়ামান থেকে আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কর্তৃক প্রেরিত গণীমতের মাল যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বণ্টন করছিলেন, তখন চরমপন্থীদের তৎকালীন নেতা বনু তামীম গোত্রের যুল-খুওয়াইছির বণ্টনে সন্দেহ প্রকাশ করে রাসূল (ﷺ)-কে ঔদ্ধত্য দেখিয়ে বলেছিল, يَا مُحَمَّدُ اِتَّقِ اللهَ فَقَالَ مَنْ يُّطِيْعُ اللهَ إِذَا عَصَيْتُهُ ‘হে মুহাম্মাদ! আল্লাহকে ভয় কর। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উত্তরে বলেন, আমিই যদি আল্লাহর অবাধ্যতা করি, তবে কে তাঁর আনুগত্য করবে?’[১০] অন্য বর্ণনায় রয়েছে, সে বলেছিল, اِعْدِلْ يَا رَسُوْلَ اللهِ ‘হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আপনি ইনছাফ করুন।[১১]
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মৃত্যুর পর খারেজীরা আত্মপ্রকাশ করতে পারেনি। কারণ ইসলাম বিরোধী যাবতীয় চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রথম খলীফা আবুবকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ছিলেন খড়গহস্ত। অনুরূপ অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুদ্রকঠোর আপোসহীন খলীফা ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর খেলাফতকালেও চরমপন্থীরা মাথা চাড়া দিতে পারেনি। কিন্তু আবু লু’লু নামক জনৈক অগ্নিপূজক বাহ্যিকভাবে ইসলাম গ্রহণ করে গোপনে মদীনায় প্রবেশ করে। ২৩ হিজরীর ২৬ যিলহজ্জ তারিখে ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) যখন ইমাম হয়ে ফজরের ছালাত আদায় করছিলেন, তখন সে ছদ্মবেশে প্রথম কাতারে অবস্থান করে। অতঃপর সুযোগ বুঝে আবু লু’লু তীক্ষè তরবারী দ্বারা তিন বা ছয়বার তাঁর কোমরে আঘাত করে। তিনদিন পর তিনি শাহাদাত বরণ করেন। ফলে চরমপন্থী তৎপরতার পুনরুত্থান ঘটে। উল্লেখ্য, ঐ দিন সে আরো ১৩ জনকে আঘাত করে। তন্মধ্যে ৯ জন ছাহাবী শাহাদাত বরণ করেন। ঐ ঘাতক পালিয়ে যেতে না পেরে নিজের অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করে।[১২]
অতঃপর ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে খলীফা নিযুক্ত করা হলে তাঁর বিরুদ্ধে চরমপন্থীরা অনেক অভিযোগ পেশ করে। উক্ত মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে আব্দুল্লাহ বিন সাবা মিসর, কূফা, বছরার সাধারণ মুসলিমদেরকে ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে। ফলে ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) জনসম্মুখে সকল অভিযোগ খণ্ডন করেন। অভিযোগগুলো মিথ্যা প্রমাণিত হলে প্রকৃত মুসলিমরা মর্মাহত হয়ে ফিরে যায়। আর ইহুদী ক্রীড়নকরা মদীনায় থেকে যায়।[১৩] আব্দুল্লাহ বিন সাবা ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে খেলাফতের দায়িত্ব থেকে অপসারণ করার চেষ্টা অব্যাহত রাখে। অবশেষে সে খলীফাকে হত্যা করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে এবং ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে হত্যা করাই সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ বলে ঘোষণা করে। তারা মদীনায় ঢুকে ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর বাড়ী অবরোধ করে। দীর্ঘ চল্লিশ বা সাতচল্লিশ দিন অবরোধ করে রেখে ক্ষুধার্ত অবস্থায় খারেজীরা তাকে হত্যা করে। ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তখন ছিয়াম অবস্থায় ছিলেন এবং পবিত্র কুরআনের সূরা বাক্বারাহ ১৩৭ নং আয়াত পাঠ করছিলেন।[১৪] ‘গাফেক্বী বিন হারব’ নামক ঘাতক তাঁর মুখমণ্ডলে ও মাথার অগ্রভাগে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে।[১৫] ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বর্বরোচিত ঘটনা হলেও খারেজীরা আড়ালেই থেকে যায়।
অতঃপর আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর খেলাফতকালে তাদের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। আব্দুল্লাহ বিন সাবার ইহুদী জোট মুসলিমদের অভ্যন্তরে থেকেই তাদের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখে। তারই ফলশ্রুতিতে ৩৬ হিজরীতে আলী ও আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর মাঝে উষ্ট্রের যুদ্ধ সংঘটিত হয়।[১৬] অনুরূপ তাদেরই যোগসাজশে আলী ও মু‘আবিয়া (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর মাঝে ৩৭ হিজরীর ছফর মাসের ১ম তারিখে বুধবার ছিফফিনের যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। মূলত এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করেই চরমপন্থীরা আত্মপ্রকাশ করে।
কিছুদিন যুদ্ধ চলার পর মু‘আবিয়া (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর দল পরাজিত হওয়ার আশংকায় তরবারির মাথায় পবিত্র কুরআন উঁচু করে যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানায়।[১৭] উক্ত আহ্বানে আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) সাড়া দেন এবং মীমাংসার জন্য তৃতীয় পক্ষ নির্ধারণের ঘোষণা দেন। এ কারণে আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর দল থেকে চরমপন্থীরা বের হয়ে যায়। অর্থাৎ আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর পক্ষে আবু মূসা আশ‘আরী এবং মু‘আবিয়া (রাযিয়াল্লাহু আনহুম)-এর পক্ষে আমর ইবনুল ‘আছ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে নির্ধারণ করার সম্মতি প্রকাশ করলে আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর দল থেকে ১২ বা ১৬ হাযার সৈন্য বের হয়ে ‘হারুরাহ’ নামক স্থানে চলে যায়। ইতিহাসে এদেরকেই ‘খারেজী’ বা দলত্যাগী বলা হয়। আর আক্বীদাগতভাবে উগ্র হওয়ায় তাদেরকে চরমপন্থী বলা হয়। তারা ৯টি প্রধান দলে বিভক্ত হয়ে যায়।[১৮] এছাড়া তারা আক্বীদাগত মতপার্থক্যের কারণে বহু দলে বিভক্ত। আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর বিরুদ্ধে তাদের অন্যতম অভিযোগ ছিল, মীমাংসার জন্য তৃতীয় পক্ষ নির্ধারণ করে কুরআনের হুকুম লংঘন করেছেন (সূরা ইউসুফ : ৪০ ও ৬৭; সূরা আল-আন‘আম : ৫৭)। মূলত জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে তারা পবিত্র কুরআনের অপব্যাখ্যা করে বিভ্রান্ত হয়েছিল।
তারা আলী, মু‘আবিয়া, আবু মূসা আশ‘আরী, আমর ইবনুল ‘আছ, ইবনু আব্বাসসহ উভয় পক্ষের সকল মুসলিমকে উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে কাফের ও হত্যাযোগ্য অপরাধী বলে ফৎওয়া দেয় এবং তাঁদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। এদের প্রধান নেতা ছিল আব্দুল্লাহ ইবনুল কুউওয়া। জলীলুল ক্বদর ছাহাবী আব্দুল্লাহ বিন খাব্বাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) যখনই ফিৎনা সংক্রান্ত রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী তাদের সামনে পেশ করেছেন, তখনই তারা তাঁর গলায় ছুরি চালিয়ে তাকে হত্যা করে। তাঁর গর্ভবতী স্ত্রীকেও নির্মমভাবে যবহে করে হত্যা করে এবং পেট ফেড়ে সন্তানকে বাইরে ফেলে দেয়! তাঁর অসহায় স্ত্রী ‘আমি গর্ভবতী মহিলা, তোমরা কি আল্লাহকে ভয় কর না’ বলে করজোড়ে আবেদন করলেও ঘাতকরা তাকে রেহাই দেয়নি।[১৯]
তাদের এই ঔদ্ধত্য চরম সীমায় পৌঁছলে আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাদেরকে সমূলে উৎখাত করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে তাদেরকে বুঝানোর জন্য আবার আবু আইয়ূব আনছারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে পাঠান। তাতে কিছু সংখ্যক লোক ফিরে আসে। যারা ফিরে আসেনি তারা বলেছিল, كُلُّنَا قَتْلُ إِخْوَانِكُمْ وَنَحْنُ مُسْتَحِلُّوْنَ دِمَائَهُمْ وَدِمَائَكُم ‘আমরা তোমাদের ভাইদেরকে হত্যা করেছি। কারণ আমরা তাদের রক্ত এবং তোমাদের রক্ত হালাল মনে করি’।[২০] অবশেষে আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাদের সকলকে ‘নাহরাওয়ান’ নামক স্থানে হত্যা করেন। তবে কয়েকজন বেঁচে যায়। তারা বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। আল্লামা শহরস্তানী (৪৭৯-৫৪৮ হি.) বলেন, ظَهَرَتْ بِدْعُ الْخَوَارِجِ فِىْ هَذِهِ الْمَوَاضِعِ مِنْهُمْ وَبَقِيَتْ إِلَى الْيَوْمِ ‘এ সমস্ত স্থানগুলো থেকে খারেজী ফেৎনা প্রকাশিত হয়েছে এবং আজও অবশিষ্ট আছে’।[২১]
যারা সেদিন বেঁচে গিয়েছিল তারা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন যাবৎ প্রস্তুতি গ্রহণ করে। অতঃপর আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে হত্যা করার জন্য অতি গোপনে আব্দুর রহমান বিন মুলজামকে নির্বাচন করে। অনুরূপ বারাক বিন আব্দুল্লাহকে মু‘আবিয়া (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর জন্য এবং আমর ইবনুল ‘আছ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে হত্যা করার জন্য আমর ইবনু বাকরকে নির্বাচন করে। আব্দুর রহমান বিন মুলজাম তার দু’জন সহযোগী ওরদান ও শাবীবকে সঙ্গে নিয়ে ৪০ হিজরীর ১৭ রামাযান জুম‘আর রাতে কূফায় গমন করে। ফজরের সময় আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর বাড়ীর দরজায় অস্ত্র নিয়ে ওঁত পেতে থাকে। তিনি বাড়ী থেকে বের হয়ে যখন ‘ছালাত’ ‘ছালাত’ বলে মানুষকে ডাকতে ডাকতে মসজিদের দিকে যাচ্ছিলেন, তখনই তারা আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর মাথায় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এতে তাঁর দাড়ি রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়। তৎক্ষণাৎ মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন।[২২] এ সময় আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে লক্ষ্য করে ঐ রক্ত পিপাসু বলেছিল, لَاحُكْمَ إِلاَّ لِلهِ لَيْسَ لَكَ يَا عَلِىُّ وَلاَ لِأَصْحَابِكَ ‘হে আলী! আল্লাহ ছাড়া কারো বিধান নেই। তোমার জন্যও নেই, তোমার সাথীদের জন্যও নেই’।[২৩] তিনদিন পর ৪০ হিজরীর ২১ রামাযান ৬৩ বা ৬৪ বছর বয়সে তিনি শাহাদাত বরণ করেন।
ঐ দিন একই সময়ে মু‘আবিয়া (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে আঘাত করলেও তিনি বেঁচে যান। আমর ইবনুল ‘আছ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ভীষণ অসুস্থ থাকার কারণে তিনি সেদিন মসজিদে আসতে পারেননি। তাই তিনি বেঁচে যান। তবে তাঁর স্থলাভিষিক্ত ইমাম খারেজাহ ইবনু আবী হাবীবাহকে ঐ ঘাতক হত্যা করে।[২৪] পূর্বের কৃত স্থূল সিদ্ধান্ত কার্যকর করা ও আকস্মাৎ গুপ্ত হত্যার এমন জঘন্য দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে আর আছে কি-না সন্দেহ।
شَغَلَتِ الدَّوْلَةُ الْإِسْلاَمِيَّةُ فَتْرَةً طَوِيْلَةً مِنَ الزَّمَنِ وَقَدْ بَسَطُوْا نُفُوْذَهُمُ السِّيَاسِيىَّ عَلَى بَقَاعٍ وَاسِعَةٍ مِنَ الدَّوْلَةِ الْإِسْلاَمِيَّةِ فِى الْمَشْرِقِ وَفِى الْمَغْرِبِ الْعَرَبِى
‘খারেজীদের কারণে কালের দীর্ঘ একটি সময় মুসলিম রাষ্ট্র সমূহ অস্থির ছিল। তারা তাদের রাজনৈতিক মতবাদকে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের আরবীয় মুসলিম রাষ্ট্র সমূহের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রসার লাভ করেছে’।[২৫]
চরমপন্থীদের এই ঔদ্ধত্যের কারণ সম্পর্কে পূর্বসূরি বিদ্বানগণ বলেন, إِنَّ هَؤُلاَءِ الْجَهْلَةَ الضَّلاَلُ وَالْأَشْقِيَاءُ فِى الْأَقْوَالِ وَالْأَفْعَالِ ‘ঐ সমস্ত মূর্খ লোকেরা পথভ্রষ্ট এবং কথা ও কর্মের ক্ষেত্রে চরম হতভাগ্য’।[২৬] ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ)ও (৭০১-৭৭৪ হি.) তাদের উক্ত পরিণতির জন্য অজ্ঞতাকেই দায়ী করেছেন। অতঃপর তাদের শরী‘আত বিরোধী কতিপয় অপকর্মের সমালোচনা করে বলেন,
يَعْتَقِدُوْنَ بِجَهْلِهِمْ وَقِلَّةِ عِلْمِهِمْ وَعَقْلِهِمْ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ يَرْضَى رَبَّ الْأَرْضِ وَالسَّمَوَاتِ وَلَمْ يَعْلَمُوْا أَنَّهُ مِنْ أَكْبَرِ الْكَبَائِرِ الْمُوْبِقَاتِ وَالْعَظاَئِمِ وَالْخَطِيْئَاتِ وَأَنَّهُ مِمَّا زَيَّنَهُ لَهُمْ إِبْلِيْسُ الشَّيْطَانُ الرَّجِيْمُ الْمَطْرُوْدُ ... وَاللهُ الْمَسْؤُوْلُ أَنْ يَّعْصِمَنَا مِنْهُ بِحَوْلِهِ وَقُوَّتِهِ إِنَّهُ مُجِيْبُ الدَّعْوَاتِ
‘তাদের মূর্খতা ও জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে তারা বিশ্বাস করে যে, তাদের এ সমস্ত কর্মকাণ্ড আসমান-যমীনের প্রতিপালককে সন্তুষ্ট করে। অথচ তারা জানে না যে, তা কাবীরা গোনাহ সমূহের মধ্যে বড় গোনাহ এবং ধ্বংসাত্মক অন্যায়। বহিস্কৃত-বিতাড়িত ইবলীস শয়তান এই কর্মকাণ্ডের প্রতি তাদেরকে উৎসাহিত করে থাকে।... আমরা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি যে, তিনি যেন তাঁর মহাশক্তি ও ক্ষমতা দ্বারা ঐ কুমন্ত্রণা হতে আমাদেরকে রক্ষা করেন। তিনিই প্রার্থনা মঞ্জুরকারী’।[২৭]
খারেজীদের আক্বীদা
‘আক্বীদা’ হল মুসলিম জীবনের মৌল ভিত্তি। ইসলামের বিধি-বিধান সংক্রান্ত বিষয়ে দৃঢ় বিশ্বাসই সফলতা-ব্যর্থতার মূল চাবিকাঠি। আক্বীদা বিশুদ্ধ হলে মুমিন জীবনের কথা, কর্ম সবকিছুই আল্লাহর নিকট গৃহীত হবে এবং চূড়ান্ত প্রতিদানে আখেরাতে ধন্য হবে। পক্ষান্তরে আক্বীদায় সামান্যতম ত্রুটি থাকলে আল্লাহর শানে কোন কিছুই গৃহীত হবে না। ফলে পারলৌকিক জীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত হতে হবে। তাছাড়া এ আক্বীদার কারণে পার্থিব জীবনেও নেমে আসে নানা রকম বিপর্যয়।
(ক) খারেজীদের আক্বীদা হল- হৃদয়ে বিশ্বাস মুখে স্বীকৃতি ও কর্মে বাস্তবায়ন তিনটিই ঈমানের মূল ও অবিচ্ছিন্ন অংশ। এজন্য তারা কাবীরা গোনাহগার ব্যক্তিকে ঈমানহীন কাফের মনে করে।[২৮] (খ) তাদের মতে ঈমানের হ্রাস-বৃদ্ধি নেই।[২৯] (গ) তাদের মতে কাবীরা গোনাহগার ব্যক্তি কাফের হওয়ায় হত্যাযোগ্য অপরাধী এবং তওবা না করে মারা গেলে চিরস্থায়ী জাহান্নামী।[৩০] (ঘ) ওছমান ও আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) সহ তাঁদের হাতে বায়‘আতকারী সকল ছাহাবী কাফের। ছিফফিনের যুদ্ধে আলী ও মু‘আবিয়া (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) উভয়ের পক্ষে যারা অংশ গ্রহণ করেছিলেন, যারা তাদের সন্ধিতে সন্তুষ্ট ছিলেন বা আজও আছেন তারা সকলেই কাফের, তাদের রক্তও হালাল।[৩১] (ঙ) খারেজী চরমপন্থীরা গোনাহগার শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা, সশস্ত্র সংগ্রাম করা ওয়াজিব মনে করে এবং শাসকসহ তার সমর্থক প্রজা সাধারণের রক্ত হালাল মনে করে।[৩২] (চ) চরমপন্থীরা নিজস্ব জ্ঞান দ্বারা কুরআন-হাদীছের মনগড়া ব্যাখ্যা করে। তারা রাসূল (ﷺ) ও ছাহাবায়ে কেরাম, সালাফে ছালেহীনের ব্যাখ্যার প্রতি মোটেই ভ্রƒক্ষেপ করে না।[৩৩] (ছ) খারেজীদের মৌলিক উদ্দেশ্য হল- যে কোন পন্থায় রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করা।[৩৪]
চরমপন্থী খারেজীদের উক্ত আক্বীদার সাথে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদার কোনরূপ সম্পর্ক নেই। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মতে কেউ কোন কুফরী কাজ করলেই তৎক্ষণাৎ কাফের হয়ে যায় না, বরং সে ফাসিক, যালেম কিংবা পাপী সাব্যস্ত হয়। ইমাম ইবনু হাযম আন্দালুসী (৩৮৪-৪৫৬ হি.) বলেন,
وَأمَّا نَحْنُ فَنَقُوْلُ إِنَّ كُلَّ مَنْ كَفَرَ فَهُوَ فَاسِقٌ ظَالِمٌ عَاصِىٌ وَلَيْسَ كُلُّ فَاسِقٍ ظَالِمٍ عَاصٍ كَافِرًا بَلْ قَدْ يَكُوْنُ مُؤْمِنًا بِاللهِ التَّوْفِيْقِ
‘আমরা বলি প্রত্যেকেই যারা কুফরী করে তার ফাসিক, যালেম, পাপী। আর প্রত্যেক ফাসিক, যালেম পাপী কাফের নয়, বরং আল্লাহর মর্জি অনুযায়ী কিছুটা হলেও মুমিন থাকে’।[৩৫] আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মতে- কাবীরা গোনাহগার ব্যক্তি ফাসিক বা অপূর্ণাঙ্গ মুমিন। পাপের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকায় ঈমান শূন্য হলেও সে ইসলাম থেকে খারিজ নয় এবং চিরস্থায়ী জাহান্নামীও নয়। জাহান্নামে পাপের শাস্তি ভোগের পর কালেমা ত্বাইয়েবার বরকতে এক সময় সে জান্নাতে যাবে।
(২) শী‘আ মতবাদ
শী‘আ অর্থ অনুসারী, গোষ্ঠী, সাহায্যকারী ইত্যাদি।[৩৬] ইহুদীদের ষড়যন্ত্রের ফসল হিসাবে আলী এবং মু‘আবিয়া (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর মাঝে সংঘটিত যুদ্ধকে কেন্দ্র করে শী‘আ সম্প্রদায়ের জন্ম হয়। মু‘আবিয়া (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর পক্ষ যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার আশঙ্কায় আপোস করার জন্য যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানায়। ফলে মীমাংসার জন্য আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর পক্ষে আবু মূসা আশ‘আরী আর মু‘আবিয়া (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর পক্ষে আমর ইবনুল আছকে শালিস নিযুক্ত করা হয়। এতে একশ্রেণীর লোক আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর পক্ষ ত্যাগ করে। তারা ইতিহাসে ‘খারেজী’ বলে পরিচিত। আরেক শ্র্রেণী এই প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে। কিন্তু তারা নিষ্ক্রিয় থাকে। তাদেরকেই ‘শী‘আ’ বলা হয়।[৩৭] কেউ বলেন, আবুবকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে খলীফা নির্বাচনের সময়ই তারা আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর পক্ষে অবস্থান করেছিল। তাঁকে তারা খলীফা হিসাবে মেনে নেয়নি।[৩৮]
শী‘আরা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় ইমাম বা নেতা নিযুক্তির ব্যাপারে বাড়াবাড়ি প্রদর্শন করে। অতি ভক্তির কারণে আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) সম্পর্কে তারা কতিপয় ভ্রান্ত আক্বীদার জন্ম দেয়। তারা যে রাসূল (ﷺ)-এর পরিবার সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে, সে সম্পর্কে তিনি পূর্বেই ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) দাঁড়িয়ে খুৎবা দেয়ার সময় আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর বাসস্থানের দিকে ইশারা করে বলেন, এই দিক থেকে ফেৎনা প্রকাশিত হবে। যে দিক থেকে শয়তানের শিং-এর মাঝ দিয়ে সূর্য উদিত হয়। এ কথা তিনি তিনবার বলেন।[৩৯] অন্য হাদীছে এসেছে, ইরাক থেকে ফেৎনা বের হবে।[৪০] ইরাকের কূফা থেকেই শী‘আদের ফেৎনা প্রকাশিত হয়েছে। রাসূল (ﷺ)-এর পরিবারের উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে এবং তাদের বিরুদ্ধে কটূক্তির মধ্য দিয়েই শী‘আদের সূচনা হয়েছে।[৪১] শী‘আদের আক্বীদা ও দাবী কুরআন-সুন্নাহর আলোকে গ্রহণযোগ্য নয়। তারা রাসূল (ﷺ) ও তাঁর পরিবার সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করে থাকে। এছাড়া ইসলামী শরী‘আতের অনেক কিছুই বিকৃত করেছে। লক্ষ লক্ষ জাল হাদীছ তৈরি করে সুন্নাতকে বিনষ্ট করেছে। তাই আব্দুল করীম শহরাস্তানী (৪৭৯-৫৪৮ হি.) বলেন,
إِنَّ دَعْوَى الشِّيْعَةِ لَيْسَتْ حُجَّةً عَلَى الْقُرْآنِ وَلاَ عَلَى الْمُسْلِمِيْنَ لِأَنَّ الشِّيْعَةَ غَيْرُ مُسْلِمِيْنَ
‘শী‘আদের দাবী সমূহ কুরআনের উপরও দলীল নির্ভর নয়, মুসলিমদের উপরও নয়। কারণ শী‘আরা মুসলিমদের অন্তর্ভুুক্ত নয়’।[৪২] তাদের শাখা রাফেযী ফের্কাও অনেক মিথ্যাচার করেছে। রাসূল (ﷺ), ছাহাবায়ে কেরাম এবং শরী‘আতের ব্যাপারে তারা সর্বোচ্চ মিথ্যাচার করেছে। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ বলেন, اَلرَّافِضَةُ أَكْذَبُ النَّاسِ وَذَلِكَ فِيْهِمْ قَدِيْمٌ ‘রাফেযী ফের্কা মানুষের মধ্যে বড় মিথ্যাবাদী। আর এটা তাদের প্রাচীন অভ্যাস’।[৪৩] অতঃপর তিনি বলেন,
وَقَدِ اتَّفَقَ أَهْلُ الْعِلْمِ بِالنَّقْلِ وَالرِّوَايَةِ وَالْإِسْنَادِ عَلَى أَنَّ الرَّافِضَةَ أَكْذَبُ الطَّوَائِفِ
‘মুহাদ্দিছগণ এ মর্মে একমত পোষণ করেছেন যে, হাদীছের বর্ণনা, সনদ ও বিবৃতি প্রকাশের ক্ষেত্রে রাফেযীরা অন্যান্য দলের চেয়ে সর্বাধিক মিথ্যাবাদী’।[৪৪] ইমাম মালেক ও শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ) প্রমুখকে তাদের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তারাও অনুরূপ উত্তর দেন।[৪৫] তারা যে মুসলিম নয় সে সম্পর্কে কঠোর সমালোচনা করে ইমাম ইবনু হাযম আন্দালুসী (৩৮৪-৪৫৬ হি.) বলেন,
وَأَمَّا قَوْلُهُمْ فِىْ دَعْوَى الرَّوَافِضِ تَبْدِيْلُ الْقِرَاءَتِ فَإِنَّ الرَّوَافِضَ لَيْسُوْا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ إِنَّمَا هِىَ فَرَقٌ حَدَثٌ.. وَهِىَ طَائِفَةٌ تَجْرِىْ مَجْرَى الْيَهُوْدِ وَالنَّصَرَى فِى الْكِذْبِ وَالْكُفْرِ
‘রাফেযীদের দাবী সমূহের অন্যতম হল, কুরআনের ইবারতের পরিবর্তন। কারণ তারা ইসলামের অন্তর্ভুক্ত নয়; বরং তারা নতুন একটি ফের্কা। এটি এমন একটি দল যারা মিথ্যাচার ও কুফরীর দিক থেকে ইহুদী-খ্রীষ্টানদের স্রোতে পরিচালিত হয়’।[৪৬]
শী‘আদের আক্বীদা
(ক) শী‘আদের আসল দাবী ইমামত বা রাষ্ট্রীয় নেতা নির্বাচন করা। তাই তারা নেতৃত্বকে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার সাথে সংযুক্ত করেছে। যেমন- اَلْإِيْمَانُ بِالْإِمَامِ جُزْءٌ مِنَ الْإِيْمَانِ بِاللهِ ‘নেতৃত্বের প্রতি ঈমান আনয়ন করা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার অংশ’ (নাঊযুবিল্লাহ)।[৪৭] এছাড়া তারা নেতৃত্বকে দ্বীনের রুকন সমূহের মধ্যে একটি রুকন হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। যেমন- وَيَعْتَبِرُ الشِّيْعَةُ الْإِمَامَةَ.. رُكْنًا مِنْ أَرْكَانِ الْإِسْلاَمِ ‘শী‘আরা রাষ্ট্রক্ষমতাকে ইসলামের রুকন সমূহের একটি রুকন গণ্য করে থাকে’।[৪৮]
(খ) তাদের আক্বীদা মতে ইমাম নির্বাচনের অধিকার শুধু আল্লাহ প্রেরিত নবীর। তিনি যাকে অছী নিযুক্ত করে যাবেন তিনিই ইমাম বা খলীফা হবেন। প্রত্যেকেই এভাবে অছী নির্বাচন করে যাবেন। ক্বিয়ামত পর্যন্ত এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।[৪৯]
(গ) আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ছিলেন রাসূল (ﷺ)-এর অছী। আর ক্বিয়ামত পর্যন্ত তাঁর পরিবার থেকেই খলীফা নির্বাচিত হবে। তাই তারা আবুবকর, ওমর এবং ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে খলীফা বলে স্বীকার করে না; বরং আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে বাদ দিয়ে যে সমস্ত ছাহাবী তাঁদের হাতে বায়‘আত করেছেন, তারা সকলেই কাফের।[৫০]
(ঘ) ‘রাষ্ট্রক্ষমতা’ অর্জনকে দ্বীনের মূলনীতি সমূহের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান মূলনীতি নির্ধারণ করা অথবা ঈমান ও ইসলামের রুকন সমূহের অন্তর্ভুক্ত করা খারেজী, শী‘আ ও রাফেযীদের থেকে চলে আসা একটি ভ্রান্ত মতবাদ। যার সাথে ইসলামের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই, বরং আহলেসুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত আহলেহাদীছগণের মতে এটি চরম মিথ্যাচার। পথভ্রষ্ট শী‘আদের অন্যতম দল ‘রাফেযীরা’ প্রথম তিন খলীফাকে অস্বীকার করে, সর্বদা গালমন্দ করে এবং তাঁদের কাফের মনে করে। ইসলাম বহির্ভূত সেই রাফেযী দলভুক্ত জনৈক লেখক ইবনুল মুত্তাহির নেতৃত্ব অর্জন করাকে দ্বীনের মূলনীতি ও ঈমানের রুকন সমূহের মধ্যে প্রধান বিষয় হিসাবে উল্লেখ করেছেন। যেমন-
أَهَمُّ الْمَطَالِبِ فِىْ أَحْكَامِ الدِّيْنِ وَأَشْرَفُ مَسَائِلِ الْمُسْلِمِيْنَ وَهِىَ مَسْئَلَةُ الْإِمَامَةِ
‘দ্বীনের আহকাম ও মুসলিমদের কার্যক্রমের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল, ইমামত বা রাষ্ট্রক্ষমতা’।[৫১] এই ভ্রান্ত দর্শনের বিরুদ্ধে শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তায়মিয়াহ (৬৬১-৭২৮ হি.) বলেছেন,
إِنَّ مَسْئَلَةَ الْإِمَامَةِ أَهَمُّ الْمَطَالِبِ فِىْ أَحْكَامِ الدِّيْنِ وَأَشْرَفُ مَسَائِلِ الْمُسْلِمِيْنَ كِذْبٌ بِإِجْمَاعِ الْمُسْلِمِيْنَ ... بَلْ هُوَ كُفْرٌ
‘নেতৃত্বের প্রসঙ্গকে দ্বীনের আহকামের দাবীগুলোর মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করা এবং মুসলিমদের অন্যান্য তামাম বিষয়ের মধ্যে তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া মুসলিম উম্মাহর ঐকমত্যে চরম মিথ্যাচার, .. বরং এটা কুফরী’।[৫২]
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
তথ্যসূত্র :
[১]. আহমাদ হা/৪১৪২; সনদ হাসান, মিশকাত, হা/১৬৬, ‘কিতাব ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ।
[২]. তিরমিযী, হা/২৬৪১।
[৩]. আবূ দাঊদ, হা/৪৫৯৭।
[৪]. ছহীহুল বুখারী, হা/৭০৮৪, ‘ফিৎনা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১১; মিশকাত, হা/৫৩৮২।
[৫]. আল-ফিছাল ফিল মিলাল ওয়াল আহওয়া ওয়ান নিহান, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৭১।
[৬]. আল-ফিছাল ফিল মিলাল, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৭২।
[৭]. আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ, ৭ম খণ্ড, পৃ. ৩০১।
[৮]. ছহীহ মুসলিম, হা/১০৬৭, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘খারেজী চরমপন্থীরা সর্বনিকৃষ্ট’ অনুচ্ছেদ-৫০।
[৯]. ছহীহুল বুখারী, হা/৫০৫৮, ২/৭৫৬ পৃঃ, ‘পবিত্র কুরআনের ফযীলত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৬।
[১০]. ছহীহুল বুখারী, হা/৭৪৩২; ছহীহ মুসলিম, হা/১০৬৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪৮; আবুল ফিদা ইসমাঈল ইবনু ওমর ইবনু কাছীর আল-ক্বারশী আদ-দিমাষ্কী, আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ, ৭ম খণ্ড (কায়রো : দারুর রাইয়ান, ১৯৮৮ খৃ./১৪০৮ হি.), পৃ. ৩১০।
[১১]. ছহীহ মুসলিম, হা/১০৬৪, ‘যাকাত’ অধ্যায়-৪৮।
[১২]. মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব, মুখতাছার সীরাতির রাসূল (ছাঃ) (দামিষ্ক : মাকতাবাতু দারিল ফীহা, ১৪১৪ হি.), পৃ. ৬২২; আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ৭ম খণ্ড, পৃ. ১৪১-৪২।
[১৩]. আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ, ৭ম খণ্ড, পৃ. ১৭৮-৭৯।
[১৪]. আবী নু‘আইম আল-আছবাহানী, মা‘রিফাতুছ ছাহাবা, তাহক্বীক্ব : ডঃ মুহাম্মাদ রাবী ওছমান, ১ম খণ্ড (রিয়ায : মাকতাবাতুল হারামাইন, ১৯৯৮ খৃ./১৪০৮ হি.), পৃ. ২৪৬-৪৭।
[১৫]. মুখতাছার সীরাতির রাসূল (ﷺ), পৃ. ৬২৭; আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ, ৭ম খণ্ড, পৃ. ১৯৭।
[১৬]. শায়খ মুহাম্মাদ আল-খাযারী বেক, ইতমামুল ওয়াফা ফী সীরাতিল খুলাফা (মিসর : আল-মাকতাবাতুত তিজারিয়াহ আল-জুবরা, তাবি), পৃ. ১৭৯-৮১; মুখতাছার সীরাতির রাসূল (ﷺ), পৃ. ৬৩৪।
[১৭]. আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ৭ম খণ্ড, পৃ. ২৭২ ও ২৮৪-৮৫।
[১৮]. আল-মিলাল ওয়ান-নিহাল, পৃ. ১১৫; আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ৭ম খণ্ড, পৃ. ২৮৯-২৯৩।
[১৯]. আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ, ৭ম খণ্ড, পৃ. ২৯৮।
[২০]. আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ, ৭ম খণ্ড, পৃ. ২৯৯-৩০০।
[২১]. আল-মিলাল ওয়ান নিহাল, পৃ. ১১৭।
[২২]. হাফেয ইবনে হাজার আল-আসক্বালানী, তাহযীবুত তাহযীব, ৭ম খণ্ড (বৈরুত : দারুল মা‘রেফাহ, ১৯৯৪ খৃ./১৪১৫ হি.), পৃ. ২৮৭।
[২৩]. মা‘রিফাতুছ ছাহাবাহ, ১ম খণ্ড, ২৮৯-৯২; আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ৭ম খণ্ড, পৃ. ৩৩৯ ও ৩৪১-৪৩।
[২৪]. ইতমামুল ওয়াফা, পৃ. ১৯৯।
[২৫]. ড. গালিব ইবনু আলী ইওয়াজী, ফিরাকুন মু‘আছিরাহ, ১ম খণ্ড ( জিদ্দা : আল-মাকতাবাতুল আছরিয়াহ আয-যাহাবিয়াহ, ৪র্থ প্রকাশ : ২০০১ খৃ./১৪২২ হি.), পৃ. ২২৬।
[২৬]. আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ৭ম খণ্ড, পৃ. ২৯৬-৯৭।
[২৭]. আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ৭ম খণ্ড, পৃ. ২৯৭।
[২৮]. ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইসহাক্ব ইবনু মানদাহ (৩১০-৩৯৫ হি.), কিতাবুল ঈমান, তাহক্বীক্ব : আলী বিন মুহাম্মাদ আল-ফক্বীহী, ১ম খণ্ড (মদীনা : মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৮১ খৃ./১৪০১ হি.), ১/৩৩১ ।
[২৯]. কাৎফুছ ছামার, পৃ. ৬৭-এর টীকা দ্র.।
[৩০]. ফিরাকুন মু‘আছিরাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৭৩; আল-মিলাল ওয়ান নিহাল, পৃ. ১১৪।
[৩১]. আব্দুল ক্বাহির ইবনু ত্বাহির ইবনু মুহাম্মাদ আল-বাগদাদী, আল-ফারকু বায়নাল ফিরাক্ব ওয়া বায়ানুল ফিরক্বাতিন নাজিয়াহ (বৈরুত : দারুল আফাক আল-জাদীদাহ, ১৯৭৭ খৃ.), পৃ. ৬১; ফিরাকুন মু‘আছিরাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৯০।
[৩২]. ফিরাকুন মু‘আছিরাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৭৪-৭৬ ও ২৮৫-২৯১।
[৩৩]. ফিরাকুন মু‘আছিরাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৭৮-২৭৯।
[৩৪]. ফিরাকুন মু‘আছিরাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ২২৬।
[৩৫]. আল-ফিছাল ফিল মিলাল, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৫৫।
[৩৬]. আল-মিলাল ওয়ান নিহাল, পৃ. ১৪৫।
[৩৭]. আত-তারীখুল ইসলামী, পৃ. ২৭৪-২৭৭।
[৩৮]. আমিনুল ইসলাম, মুসলিম ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন (ঢাকা : বাংলা একাডেমী, ডিসেম্বর ১৯৮৫ খৃ.), পৃ. ৭৩।
[৩৯]. ছহীহুল বুখারী, পৃ. ৩৯০, হা/৩১০৪।
[৪০]. আহমাদ হা/৬৩০২, সনদ ছহীহ।
[৪১]. ছহীহুল বুখারী, হা/৩৭৫৩; বিস্তারিত দ্র. সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৪৯৪-এর ব্যাখ্যা।-إن من تلك الفتن طعن الشيعة في كبار الصحابة رضي الله عنهم كالسيدة عائشة الصديقة بنت الصديق التي نزلت براءتها من السماء
[৪২]. আল-মিলাল ওয়ান নিহাল, পৃ. ৭৮।
[৪৩]. ইবনু তায়মিয়াহ, মুখতাছার মিনহাজুস সুন্নাহ, ১ম খণ্ড (রিয়ায : মাকতাবাতুল কাওছার, ১৯৯১ খৃ./১৪১১ হি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ২৫।
[৪৪]. মুখতাছার মিনহাজুস সুন্নাহ, ১ম খণ্ড, পৃঃ ২৫।
[৪৫]. মুখতাছার মিনহাজুস সুন্নাহ, ১ম খণ্ড, পৃঃ ২৫-২৭।
[৪৬]. আল-ফিছাল ফিল মিলাল, ২য় খণ্ড, পৃ. ৬৫।
[৪৭]. ফিরাকুন মু‘আছিরাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৬০।
[৪৮]. ফিরাকুন মু‘আছিরাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৫৯।
[৪৯]. আল-ফাছল ফিল মিলাল, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ১৩৭।
[৫০]. আল-ফাছল ফিল মিলাল, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ১৩৭।
[৫১]. মিনহাজুস সুন্নাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৮।
[৫২]. মুখতাছার মিনহাজুস সুন্নাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৮।
প্রসঙ্গসমূহ »:
আক্বীদা বা বিশ্বাস