রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ০৮:২৫ অপরাহ্ন

বিদ‘আত পরিচিতি

-ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান*


 (২৮তম কিস্তি) 

৫- আবূ ওয়াইল (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

جَلَسْتُ مَعَ شَيْبَةَ عَلَى الْكُرْسِىِّ فِى الْكَعْبَةِ فَقَالَ لَقَدْ جَلَسَ هَذَا الْمَجْلِسَ عُمَرُ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ فَقَالَ لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ لَا أَدَعَ فِيْهَا صَفْرَاءَ وَلَا بَيْضَاءَ إِلَّا قَسَمْتُهُ. قُلْتُ إِنَّ صَاحِبَيْكَ لَمْ يَفْعَلَا. قَالَ هُمَا الْمَرْآنِ أَقْتَدِىْ بِهِمَا

‘কা‘বার সামনে আমি শাইবার সাথে কুরসীতে বসলাম। তখন তিনি বললেন, ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এখানে বসেই বলেছিলেন, আমি কা‘বা ঘরে রক্ষিত সোনা ও রূপা বণ্টন করে দেয়ার ইচ্ছা করেছি। (শাইবাহ বলেন) আমি বললাম, আপনার উভয় সঙ্গী [আল্লাহর রাসূল (ﷺ) ও আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)] তো এরূপ করেননি। তিনি বললেন, তাঁরা এমন দু’ব্যক্তিত্ব যাঁদের অনুসরণ আমি করব’।[১]

৬- ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মেম্বারের উপরে বসে উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন যে,

إِنَّ اللهَ بَعَثَ مُحَمَّدًا ﷺ بِالْحَقِّ وَأَنْزَلَ عَلَيْهِ الْكِتَابَ فَكَانَ مِمَّا أَنْزَلَ اللهُ آيَةُ الرَّجْمِ، فَقَرَأْنَاهَا وَعَقَلْنَاهَا وَوَعَيْنَاهَا، رَجَمَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺوَرَجَمْنَا بَعْدَهُ، فَأَخْشَى إِنْ طَالَ بِالنَّاسِ زَمَانٌ أَنْ يَقُوْلَ قَائِلٌ وَاللهِ مَا نَجِدُ آيَةَ الرَّجْمِ فِىْ كِتَابِ اللهِ ، فَيَضِلُّوْا بِتَرْكِ فَرِيْضَةٍ أَنْزَلَهَا اللهُ، وَالرَّجْمُ فِىْ كِتَابِ اللهِ حَقٌّ عَلَى مَنْ زَنَى إِذَا أُحْصِنَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ، إِذَا قَامَتِ الْبَيِّنَةُ أَوْ كَانَ الْحَبَلُ أَوْ الْاِعْتِرَافُ

‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন। আর তাঁর উপর কিতাব অবতীর্ণ করেছেন এবং আল্লাহর অবতীর্ণ বিষয়াদির একটি ছিল রজমের আয়াত। আমরা সে আয়াত পড়েছি, বুঝেছি, আয়ত্ত করেছি। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) পাথর মেরে হত্যা করেছেন। আমরাও তাঁর পরে পাথর মেরে হত্যা করেছি। আমি আশঙ্কা করছি যে, দীর্ঘকাল অতিবাহিত হবার পর কোন লোক এ কথা বলে ফেলতে পারে যে, আল্লাহ্‌র কসম! আমরা আল্লাহ্‌র কিতাবে পাথর মেরে হত্যার আয়াত পাচ্ছি না। ফলে তারা এমন একটি ফরয ত্যাগের কারণে পথভ্রষ্ট হবে, যা আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী ঐ ব্যক্তির উপর পাথর মেরে হত্যা অবধারিত, যে বিবাহিত হবার পর যিনা করবে, সে পুরুষ হোক বা নারী। যখন সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাবে অথবা গর্ভ বা স্বীকারোক্তি পাওয়া যাবে’।[২]

৭- আমর ইবনু আশজা‘ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন,

إِنَّهُ سَيَأْتِىْ نَاسٌ يُجَادِلُوْنَكُمْ بِشُبُهَاتِ الْقُرْآنِ فَخُذُوْهُمْ بِالسُّنَنِ، فَإِنَّ أَصْحَابَ السُّنَنِ أَعْلَمُ بِكِتَابِ اللهِ

‘নিশ্চয় খুব শীঘ্রই এমন কিছু মানুষের আবির্ভাব ঘটবে, যারা কুরআনের শুবহাত তথা মুতাশাবিহ বা সাদৃশ্য আয়াত নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করবে। এমতাবস্থায় তোমরা সুন্নাহকে আঁকড়ে ধর। কেননা সুন্নাতের অনুসারীগণই আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে অধিক জ্ঞান রাখেন’।[৩]

৮- শা‘বী (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত, أْنَّ عُمَرَ بْنِ الَّخَطَّابِ كَانَ يَضْرِبُ الرَّجَبِيَّيِنَ الَّذِيْنَ يَصُوْمُوْنَ رَجَبَ كُلَّهُ ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) রজবী লোকদের প্রহার করতেন। যারা গোটা রজব মাস ছিয়াম রাখত’।[৪] উল্লেখ্য, রজব মাসের নিয়তে ছিয়াম পালন করা বিদ‘আত।

১০- যায়িদ ইবনু আসলাম (রাহিমাহুল্লাহ) হতে তার পিতার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে বলতে শুনেছি,

فِيْمَ الرَّمَلَانُ الْيَوْمَ وَالْكَشْفُ عَنِ المَنَاكِبِ وَقَدْ أَطَّأَ اللهُ الْإِسْلَامَ، وَنَفَى الْكُفْرَ وَأَهْلَهُ مَعَ ذَلِكَ لَا نَدَعُ شَيْئًا كُنَّا نَفْعَلُهُ عَلَى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ.

‘রমল করা এবং কাঁধ খোলা রাখা এখন তেমন গুরুত্ববহ নয়। কেননা মহান আল্লাহ ইসলামকে বিজয়ী ও শক্তিশালী করেছেন এবং কুফর ও কাফির দু’টিই নির্মূল করেছেন। তথাপি আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সময়ে যে কাজ করেছি তা কখনো বর্জন করবো না’।[৫]

১১- হুযাইফা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

بَيْنَا نَحْنُ جُلُوْسٌ عِنْدَ عُمَرَ قَالَ أَيُّكُمْ يَحْفَظُ قَوْلَ النَّبِىِّ ﷺ فِى الْفِتْنَةِ. قَالَ ্রفِتْنَةُ الرَّجُلِ فِىْ أَهْلِهِ وَمَالِهِ وَوَلَدِهِ وَجَارِهِ، تُكَفِّرُهَا الصَّلَاةُ وَالصَّدَقَةُ وَالْأَمْرُ بِالْمَعْرُوْفِ وَالنَّهْىُ عَنِ الْمُنْكَرِগ্ধ. قَالَ لَيْسَ عَنْ هَذَا أَسْأَلُكَ، وَلَكِنِ الَّتِىْ تَمُوْجُ كَمَوْجِ الْبَحْرِ. قَالَ لَيْسَ عَلَيْكَ مِنْهَا بَأْسٌ يَا أَمِيْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ، إِنَّ بَيْنَكَ وَبَيْنَهَا بَابًا مُغْلَقًا. قَالَ عُمَرُ أَيُكْسَرُ الْبَابُ أَمْ يُفْتَحُ قَالَ بَلْ يُكْسَرُ. قَالَ عُمَرُ إِذًا لَا يُغْلَقَ أَبَدًا. قُلْتُ أَجَلْ. قُلْنَا لِحُذَيْفَةَ أَكَانَ عُمَرُ يَعْلَمُ الْبَابَ قَالَ نَعَمْ كَمَا أَعْلَمُ أَنَّ دُوْنَ غَدٍ لَيْلَةً، وَذَلِكَ أَنِّىْ حَدَّثْتُهُ حَدِيْثًا لَيْسَ بِالأَغَالِيْطِ. فَهِبْنَا أَنْ نَسْأَلَهُ مَنِ الْبَابِ فَأَمَرْنَا مَسْرُوْقًا فَسَأَلَهُ فَقَالَ مَنِ الْبَابُ قَالَ عُمَرُ.

‘একবার আমরা উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। হঠাৎ তিনি বললেন, ফিতনা সম্পর্কে নবী (ﷺ)-এর বক্তব্য তোমাদের মধ্যে কে স্মরণ রেখেছে? হুযাইফা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, (নবী (ﷺ)) বলেছেন), মানুষ নিজের পরিবার, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি ও প্রতিবেশীর ব্যাপারে যে ফিত‌নায় পতিত হয়, ছালাত, ছাদাক্বাহ, সৎকাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ তার সে পাপকে মুছে ফেলে। তিনি বলেন, আমি তোমাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিনি এবং সে ফিতনার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছি যা সাগর লহরীর মত ঢেউ খেলবে। হুযাইফা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন! সে ফিত‌নায় আপনার কোন অসুবিধা হবে না। কেননা সে ফিতনা ও আপনার মাঝে একটি বন্ধ দরজা আছে। উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, দরজাটি কি ভেঙ্গে ফেলা হবে, না খুলে দেয়া হবে? তিনি বললেন, না বরং ভেঙ্গে ফেলা হবে। ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, তা হলে তো সেটা আর কখনো বন্ধ করা যাবে না। (হুযাইফা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন) আমি বললাম, হ্যাঁ। (শাক্বীক্ব (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন), আমরা হুযাইফা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কি দরজাটি সম্পর্কে জানতেন? উওরে তিনি বললেন, হ্যাঁ। যেমন আমি সুনিশ্চিতভাবে জানি যে, আগামী দিনের পর রাত আসবে। কেননা আমি তাকে এমন হাদীছ বর্ণনা করেছিলাম যা ত্রুটিমুক্ত। (শাক্বীক্ব (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন) দরজাটি কে সম্পর্কে আমরা হুযাইফা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে জিজ্ঞেস করতে আমরা ভয় পাচ্ছিলাম, তাই আমরা মাসরূক্বকে জিজ্ঞেস করতে বললাম। তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, দরজাটি কে? উওরে তিনি বললেন, ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) (নিজেই)’।[৬]

১২- আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ‘উয়াইনাহ ইব‌নু হিছন ইবনু হুযাইফা ইবনু বদর (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর ভাতিজা হুর ইবনু কায়স ইবনু হিছন-এর কাছে আসলেন। ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) যাদের নিজে সন্নিকটে রাখতেন, হুর ইবনু কায়স (রাহিমাহুল্লাহ) ছিলেন তাদেরই একজন। যুবক হোক কিংবা বৃদ্ধ ক্বারী (আলিম) ব্যক্তিরাই ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর মজলিসের সদস্য ও পরামর্শদাতা ছিলেন। উয়ায়না তার ভাতিজাকে বললেন, হে ভাতিজা! তোমার কি আমীরের নিকট এভটুকু প্রভাব আছে যে আমার জন্য সাক্ষাতের অনুমতি গ্রহণ করতে পারবে? সে বলল, আমি আপনার ব্যাপারে তাঁর কাছে অনুমতি চাইব। ইব‌নু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, তিনি (হুর) ‘উয়াইনার জন্য অনুমতি চাইলেন। তারপর যখন ‘উয়াইনাহ (রাহিমাহুল্লাহ) ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর নিকট গেলেন, তখন সে বলল,

يَا ابْنَ الْخَطَّابِ وَاللهِ مَا تُعْطِيْنَا الْجَزْلَ، وَمَا تَحْكُمُ بَيْنَنَا بِالْعَدْلِ. فَغَضِبَ عُمَرُ حَتَّى هَمَّ بِأَنْ يَقَعَ بِهِ فَقَالَ الْحُرُّ يَا أَمِيْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ إِنَّ اللهَ تَعَالَى قَالَ لِنَبِيِّهِ ﷺ (خُذِ الۡعَفۡوَ وَ اۡمُرۡ بِالۡعُرۡفِ وَ اَعۡرِضۡ عَنِ  الۡجٰہِلِیۡنَ) وَإِنَّ هَذَا مِنَ الْجَاهِلِيْنَ. فَوَالله مَا جَاوَزَهَا عُمَرُ حِيْنَ تَلَاهَا عَلَيْهِ، وَكَانَ وَقَّافًا عِنْدَ كِتَابِ اللهِ

‘হে ইবনু খাত্তাব! আল্লাহর কসম! আপনি আমাদের মাল দিচ্ছেন না, আবার ইনছাফের ভিত্তিতে আমাদের মাঝে ফায়সালাও করছেন না। তখন ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) রেগে গেলেন, এমনকি তিনি তাকে মারতে উদ্যত হলেন। তখন হুর বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন। আল্লাহ তাঁর নবী (ﷺ)-কে বলেছেন, ‘তুমি ক্ষমা অবলম্বন কর, সৎকাজের আদেশ দাও, আর নির্বোধদের উপেক্ষা কর’ (সূরা আল-আ‘রাফ: ১৯৯)। এ লোকটি একজন মূর্খ। আল্লাহর শপথ! ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর সামনে এ আয়াতটি পাঠ করা হলে তিনি তা এতটুকু লংঘন করলেন না। বস্তুত তিনি মহান আল্লাহ তা‘আলার কিতাবের বড়ই অনুগত ছিলেন’।[৭]

১৩- শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ক্বাযী শুরাইহের নিকট চিঠি লিখেন এই মর্মে যে,

اقْضِ بِمَا فِيْ كِتَابِ اللهِ فَإِنْ لَمْ يَكُنْ فَبِمَا فِيْ سُنَّةِ رَسُوْلِ اللهِ فَإِنْ لَمْ يَكُنْ فَبِمَا اجْتَمَعَ عَلَيْهِ النَّاسُ وَفِيْ رِوَايَةٍ فَبِمَا قَضَى بِهِ الصَّالِحُوْنَ

‘আল্লাহ তা‘আলার কিতাব অনুযায়ী বিচার করবেন। কোন বিষয় যদি সেখানে না পান, তাহলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাহর আলোকে বিচার করবেন। সেখানেও যদি না পান, তাহলে মানুষেরা যার উপর ঐকমত্য করেছে তার ভিত্তিতে (বিচার করবেন)। অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, আপনার পূর্ববর্তী সৎকর্মশীলদের বিচারের আলোকে বিচার করবেন’।[৮]

১৪- ইবনু ওয়াযাহ (রাহিমাহুল্লাহ) উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন,

أَصْدَقُ الْقِيْلَ قِيْلَ اللهِ، وَإِنْ أَحْسَنَ الْهُدَي هُدَي مُحَمَّدٌ ﷺ، وَإِنَّ شّرَّ الْأُمُوْرِ مُحْدَثَاتُهَا، أَلَا وَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٍ، وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٍ، وَكُلَّ ضَلَالَةٍ فِي النَّارِ

‘সর্বোত্তম সত্য বক্তব্য হল আল্লাহ তা‘আলার বক্তব্য। আর সর্বোত্তম আদর্শ হল মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর আদর্শ। আর সর্বনিকৃষ্ট বিষয় হল (দ্বীনের মধ্যে) কোন কিছু নতুন সৃষ্টি। জেনে রেখ! প্রত্যেক নতুন সৃষ্টি হল বিদ‘আত আর প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম’।[৯]

১৫- জাহমিয়্যাহদের প্রতিরোধে উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর বক্তব্য: ইউসুফ ইবনু মিহরান (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, বাছরায় ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) আমাদেরকে খুতবায় বলেন, একবার আমীরুল মুমিনীন উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন এবং বললেন,

أيها الناس، إنه سيكون في هذه الأمة أقوام يكذبون بالرجم، ويكذبون بالدجال، ويكذبون بالحوض، ويكذبون بالشفاعة، ويكذبون بعذاب القبر، ويكذبون بقوم يخرجون من النار بعد ما امتحشوا

‘হে মানুষেরা! অতি শীঘ্রই এই উম্মতের মাঝে একটি গোষ্ঠী প্রকাশ পাবে, যারা রজম, দাজ্জাল, হাউযে কাউছার, শাফা‘আহ, কবরের আযাব এবং জাহান্নামে পরিপূর্ণরূপে শাস্তি ভোগের পর যাদেরকে বের করা হবে এমন গোত্রকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে’।[১০] তিনি আরো বলেন, إِنَّ هَذَا الْقُرْآنَ كَلَامُ اللهِ فَضَعُوْهُ عَلَى مَوَاضِعِه ‘এই কুরআন আল্লাহর কালাম তথা বাণী। সুতরাং তাকে তার যথাযথ স্থানেই রাখ’।[১১]

তিন- আমীরুল মুমিনীন উছমান ইবনু আফফান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)

রাফেযী তথা শী‘আরা পথভ্রষ্ট বিদ‘আতীদের অন্তর্ভুক্ত। আর ইসলামের তৃতীয় খলীফা আমীরুল মুমিনীন উছমান ইবনু আফফান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) রাফেযী তথা শী‘আদের বিরুদ্ধে ব্যাপক কঠোর ছিলেন। উল্লেখ্য, শী‘আরা আবূ বকর, উমার ও উছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহুম)-কে ইসলামের খলীফা হিসাবে বিশ্বাস করে না। তারা উক্ত খলীফাত্রয়কে কাফির বলে বিশ্বাস করে। যা তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে ছেড়েছে। নিম্নের ঘটনায় শী‘আদের বিরুদ্ধে উছমান ইবনু আফফান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর অবস্থান স্পষ্ট হবে:

১- যায়েদ ইবনু আসলাম (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, ‘উছমান ইবনু আফফান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর পরে খলীফার চুক্তিটি লিখেছিলেন, তাই তিনি তাকে আদেশ করেছিলেন যে কারও নাম না রাখতে এবং লোকটির নাম ছেড়ে দিতে। এমতাবস্থায় আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) অজ্ঞান হয়ে গেলেন। ফলে উছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) চুক্তিটি গ্রহণ করেছিলেন এবং তাতে উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর নাম লিখেছিলেন। এই সময় আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) জ্ঞান ফিরে পেলেন এবং বললেন, আমরা চুক্তিটি দেখলাম যেখানে উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর নাম লেখা আছে। তিনি আরো বলেন, এটা কে লিখেছে? উছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, আমি। তখন আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, আল্লাহ আপনার প্রতি রহম করুন এবং আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আল্লাহর কসম! আপনি যদি নিজে লিখে থাকেন তবে আপনি এর যোগ্য হবেন’।[১২]

২- মু‘তাযিলাদের বিরোধিতা করে উছমান ইবনু আফফান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ما أحب أن يأتي علي يوم وليلة لا أنظر في كلام الله يعني القراءة في المصحف ‘আমি পসন্দ করি না যে, আমার উপর এমন একটি দিন এবং রাত আসে যখন আমি আল্লাহর বাণী অর্থাৎ কুরআন পাঠের দিকে মনোযোগ দেই না’।[১৩]

চার- আমীরুল মুমিনীন আলী ইবনু আবী তালিব (রাযিয়াল্লাহু আনহু)

ইসলামের চতুর্থ খলীফা আমীরুল মুমিনীন আলী ইবনু আবী তালিব (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর সময়কালে বিদ‘আতীরা ব্যাপকভাবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। আর তিনিও ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর ও আপোসহীন। যেমন,

১- আলী ইবনু আবী তালিব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, سيأتي قوم يجادلونكم  فخذوهم بالسنن فإن أصحاب السنن أعلم بكتاب الله ‘অতি শীঘ্রই এমন একটি গোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটবে, যারা তোমাদের সাথে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হবে। এমতাবস্থায় তোমরা সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরবে। কেননা নিশ্চয় সুন্নাহর অনুসারীগণ আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে সর্বাধিক বেশি জ্ঞান রাখেন’।[১৪]

২- মারওয়ান ইবনু হাকাম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,

شَهِدْتُ عُثْمَانَ وَعَلِيًّا رَضِىَ اللهُ عَنْهَا وَعُثْمَانُ يَنْهَى عَنِ الْمُتْعَةِ وَأَنْ يُجْمَعَ بَيْنَهُمَا. فَلَمَّا رَأَى عَلِىٌّ، أَهَلَّ بِهِمَا لَبَّيْكَ بِعُمْرَةٍ وَحَجَّةٍ قَالَ مَا كُنْتُ لأَدَعَ سُنَّةَ النَّبِىِّ ﷺ لِقَوْلِ أَحَدٍ.

‘আমি উছমান ও আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর সাথে (উসফান নামক স্থানে) উপস্থিত ছিলাম। সেখানে উছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তামাত্তু’, হজ্জ ও ‘উমরাহ একত্রে আদায় করতে নিষেধ করতেন। আর আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এ অবস্থা দেখে হজ্জ ও ‘উমরাহ’র ইহ‌রাম একত্রে বেঁধে তালবিয়া পাঠ করেন-  لَبَّيْكَ بِعُمْرَةٍ وَحَجَّةٍ (হে আল্লাহ! আমি ‘উমরাহ ও হজ্জ-এর ইহরাম বেঁধে হাযির হলাম) এবং বললেন, কারো কথায় আমি নবী (ﷺ)-এর সুন্নাত বর্জন করতে পারব না’।[১৫]

৩- আলী ইবনু আবী তালিব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, إياكم والخصومة فإنها تمحق الدين ‘তোমরা (বিদ‘আতীদের ন্যায়) ঝগড়া-বিবাদ থেকে সাবধান থাক। কেননা তা দ্বীনকে নষ্ট করে দিবে’।[১৬]

৪- ইবরাহীম তায়মী (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার পিতা বর্ণনা করেছেন যে,

خَطَبَنَا عَلِىٌّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَلَى مِنْبَرٍ مِنْ آجُرٍّ ، وَعَلَيْهِ سَيْفٌ فِيْهِ صَحِيْفَةٌ مُعَلَّقَةٌ فَقَالَ وَاللهِ مَا عِنْدَنَا مِنْ كِتَابٍ يُقْرَأُ إِلَّا كِتَابُ اللهِ وَمَا فِىْ هَذِهِ الصَّحِيْفَةِ. فَنَشَرَهَا فَإِذَا فِيْهَا أَسْنَانُ الْإِبِلِ وَإِذَا فِيْهَا ্রالْمَدِيْنَةُ حَرَمٌ مِنْ عَيْرٍ إِلَى كَذَا، فَمَنْ أَحْدَثَ فِيْهَا حَدَثًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ، لَا يَقْبَلُ اللهُ مِنْهُ صَرْفًا وَلَا عَدْلًا

‘একবার আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) পাকা ইটের তৈরি একটি মিম্বরে উঠে আমাদের উদ্দেশ্যে খুৎ‌বা দিলেন। তাঁর সাথে একটি তলোয়ার ছিল, যার মাঝে একটি ছহীফা ঝুলছিল। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আমাদের কাছে আল্লাহর কিতাব এবং যা এই ছহীফাতে লেখা আছে এ ব্যতীত অন্য এমন কোন কিতাব নেই যা পাঠ করা যেতে পারে। তারপর তিনি তা খুললেন। তাতে উটের বয়স সম্পর্কে লেখা ছিল এবং লেখা ছিল যে, ‘আয়র’ পর্বত থেকে অমুক স্থান পর্যন্ত মদীনা হারাম (পবিত্র এলাকা) বলে গণ্য হবে। যে কেউ এখানে কোন নতুন সৃষ্টি তথা বিদ‘আত করবে তার উপর আল্লাহ, ফেরেশতাম-লী ও সকল মানুষের অভিশাপ’।[১৭]

৫- আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

لَوْ كَانَ الدِّيْنُ بِالرَّأْيِ لَكَانَ أَسْفَلُ الْخُفِّ أَوْلَىْ بِالْمَسْحِ مِنْ أَعْلَاهُ وَقَدْ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَمْسَحُ عَلَىْ ظَاهِرِ خَفَّيْهِ

‘যদি দ্বীন বুদ্ধি বা রায় অনুসারেই হত, তাহলে মোযার উপর দিক অপেক্ষা নিচের দিক মাসাহ করাই উত্তম হত; অথচ আমি রাসূল (ﷺ)-কে তাঁর মোযাদ্বয়ের উপরে মাসাহ করতে দেখেছি’।[১৮]

৬- আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

اقْضُوْا كَمَا كُنْتُمْ تَقْضُوْنَ، فَإِنِّىْ أَكْرَهُ الاِخْتِلَافَ حَتَّى يَكُوْنَ لِلنَّاسِ جَمَاعَةٌ، أَوْ أَمُوْتَ كَمَا مَاتَ أَصْحَابِى 

‘তোমরা আগে হতে যেভাবে ফয়সালা করে আসছ সেভাবেই কর। কেননা পারস্পরিক বিবাদ আমি অপসন্দ করি। যেন সকল লোক এক দলভুক্ত হয়ে থাকে। অথবা আমি এমন অবস্থায় দুনিয়া হতে বিদায় হই যেভাবে আমার সাথীগণ দুনিয়া হতে বিদায় নিয়েছেন’।[১৯]

৭- বর্তমানে ইলমহীন অনেকেই ফৎওয়া প্রদান করে থাকে। না জানা সত্ত্বেও মনগড়া প্রশ্নোত্তরে সমাজ আজ ছেয়ে গেছে। অথচ জানা না থাকলে করণীয় সম্পর্কে আজ থেকে দেড়হাহজার বছর পূর্বে আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলে গেছেন। তিনি বলেছেন,

وَابَرْدَهَا عَلَى الْكَبِدِ. ثَلاَثَ مَرَّاتٍ قَالُوا : وَمَا ذَلِكَ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ؟ قَالَ : أَنْ يُسْأَلَ الرَّجُلُ عَمَّا لاَ يَعْلَمُ فَيَقُولُ اللَّهُ أَعْلَمُ

‘অন্তরকে চাদর পরাও। একথা তিনি তিনবার বললেন। অতঃপর (তাঁর সাথীরা) বলল যে, হে আমীরুল মুমিনীন! সেটা কী? তিনি বললেন, কোন ব্যক্তি যদি কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হয়, যা সে জানে না; তাহলে সে বলবে, আল্লাহ তা‘আলাই সব জানেন’।[২০]

৮- আলী ইবনু আবু তালীব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, إِذَا حَدَّثْتُكُمْ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺحَدِيْثًا، فَظُنُّوْا بِهِ الَّذِيْ هُوَ أَهْنَاهُ، وَأَهْدَاهُ، وَأَتْقَاهُ ‘আমি তোমাদের নিকট রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাদীছ বর্ণনা করলে তোমরা মনে রাখবে যে, তিনি ছিলেন সর্বাধিক ধার্মিক, হিদায়াতপ্রাপ্ত ও আল্লাহভীরু’।[২১]

৯- রাফেযী শী‘আরা অল্প কিছু ছাহাবী ব্যতীত আবূ বকর, উমার ও উছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) সহ বাকী সকল ছাহাবীকে কাফির বলে থাকে। তাদের উক্ত ভ্রান্ত আক্বীদার বিরোধিতা করে আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, رَحِمَ اللهُ أَبَا بَكْرٍ هُوَ أَوَّلُ مَنْ جَمَعَ الْقُرْآنَ بَيْنَ اللَّوْحَيْنِ ‘আল্লাহ তা‘আলা আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর উপর রহম করুন। তিনিই প্রথম দু’টি ফলকের মাঝে আল-কুরআন একত্রিত করেছিলেন’।[২২] ইবনু ‘আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন,

إِنِّىْ لَوَاقِفٌ فِىْ قَوْمٍ، فَدَعَوُا اللهَ لِعُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ وَقَدْ وُضِعَ عَلَى سَرِيْرِهِ، إِذَا رَجُلٌ مِنْ خَلْفِى قَدْ وَضَعَ مِرْفَقَهُ عَلَى مَنْكِبِى، يَقُولُ رَحِمَكَ اللهُ، إِنْ كُنْتُ لأَرْجُوْ أَنْ يَجْعَلَكَ اللهُ مَعَ صَاحِبَيْكَ، لأَنِّىْ كَثِيْرًا مِمَّا كُنْتُ أَسْمَعُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ كُنْتُ وَأَبُوْ بَكْرٍ وَعُمَرُ، وَفَعَلْتُ وَأَبُوْ بَكْرٍ وَعُمَرُ، وَانْطَلَقْتُ وَأَبُوْ بَكْرٍ وَعُمَرُ. فَإِنْ كُنْتُ لأَرْجُوْ أَنْ يَجْعَلَكَ اللهُ مَعَهُمَا. فَالْتَفَتُّ فَإِذَا هُوَ عَلِىُّ بْنُ أَبِىْ طَالِبٍ

‘আমিও ঐ দলের সঙ্গে দু‘আয় রত ছিলাম, যারা ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর জন্য দু‘আ করেছিল। তখন তাঁর লাশটি খাটের উপর রাখা ছিল। এমন সময় এক লোক হঠাৎ আমার পিছন দিক হতে তার কনুই আমার কাঁধের উপর রেখে ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে লক্ষ্য করে বলল, আল্লাহ‌ আপনার প্রতি রহম করুন। আমি অবশ্য এ আশা পোষণ করি যে, আল্লাহ্‌ আপনাকে আপনার উভয় সঙ্গীর সঙ্গেই রাখবেন। কেননা আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-কে অনেক বার বলতে শুনেছি যে, ‘আমি, আবূ বাক্‌র ও ‘উমার এক সঙ্গে ছিলাম’, ‘আমি, আবূ বাক্‌র ও ‘উমার এ কাজ করেছি’। ‘আমি, আবূ বাক্‌র ও ‘উমার চলেছি। আমি এ আশাই পোষণ করি যে, আল্লাহ্‌ তা‘আলা আপনাকে তাদের দু’জনের সাথেই রাখবেন। আমি পেছনে চেয়ে দেখলাম, তিনি ‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাযিয়াল্লাহু আনহু)’।[২৩]

কূফা নগরীতে মিম্বারের উপরে খুত্ববায় দাঁড়িয়ে আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, إِنَّ خَيْرَ هَذِهِ الْأُمَّةِ بَعْدَ نَبِيِّهَا أَبُو بَكْرٍ , ثُمَّ خَيْرُهُمْ بَعْدَ أَبِي بَكْرٍ عُمَرُ  ‘নিশ্চয় এই উম্মতের নবী (ﷺ)-এর পর সর্বাধিক মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি হলেন আবূ বকর ছিদ্দীক্ব (রাযিয়াল্লাহু আনহু)। অতঃপর আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর পরে সর্বোত্তম ব্যক্তি হলেন উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু)’।[২৪] মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফিইয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করলাম,

أَيُّ النَّاسِ خَيْرٌ بَعْدَ النَّبِيِّ ﷺ؟ قَالَ أَبُوْ بَكْرٍ قُلْتُ ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ عُمَرُ وَخَشِيْتُ أَنْ يَقُوْلَ عُثْمَانُ قُلْتُ ثُمَّ أَنْتَ قَالَ مَا أَنَا إِلَّا رَجُلٌ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ

‘নবী করীম (ﷺ)-এর পর কোন্ ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা উত্তম? তিনি বললেন, আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)। আমি আবার বললাম, তারপর কোন্ ব্যক্তি? তিনি বললেন, উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু)। আমার আশঙ্কা হল, এবার তিনি উছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর কথা বলবেন। তাই আমি বললাম, অতঃপর তো আপনিই উত্তম। তিনি বললেন, আমি তো অন্যান্য মুসলিমদের মধ্যে একজন সাধারণ ব্যক্তি’।[২৫]

১০- আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বিদ‘আতী ভ্রান্ত গোষ্ঠী জাহমিয়্যাহদেরও বিরোধিতা করেছেন। উমারাহ ইবনু আব্দ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে বলতে শুনেছি যে, مِنْ تَمَامِ النِّعْمَةِ دُخُوْلُ الْجَنَّةِ وَالنَّظَرُ إِلَى وَجْهِ اللهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى فِيْ جَنَّتِهِ ‘পরিপূর্ণ নে‘মত হল- জান্নাতে প্রবেশ করা এবং আল্লাহর জান্নাতে তাঁর চেহারার দিকে তাকানো’।[২৬]

১১- পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম বিদ‘আত হল খালেজীদের বিদ‘আত। আর এই খারেজীদের আত্মপ্রকাশ হয়েছিল আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর সময়। তিনি তাদেরকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করেছিলেন। আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) খারিজীদের সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন,

فِيْهِمْ رَجُلٌ مُخْدَجُ الْيَدِ أَوْ مُوْدَنُ الْيَدِ أَوْ مَثْدُوْنُ الْيَدِ لَوْلَا أَنْ تَبْطَرُوْا لَحَدَّثْتُكُمْ بِمَا وَعَدَ اللهُ الَّذِيْنَ يَقْتُلُوْنَهُمْ عَلَى لِسَانِ مُحَمَّدٍ ﷺ قَالَ قُلْتُ آنْتَ سَمِعْتَهُ مِنْ مُحَمَّدٍ ﷺ قَالَ إِى وَرَبِّ الْكَعْبَةِ إِى وَرَبِّ الْكَعْبَةِ إِى وَرَبِّ الْكَعْبَةِ

‘তাদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি থাকবে যার হাত খাটো বা মহিলাদের স্তনের ন্যায় হবে। তোমরা যদি অহংকারে লিপ্ত না হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে পার তাহলে আমি তোমাদেরকে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর যবানে আল্লাহ প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি সম্বন্ধে আলোচনা করব, যা তিনি তাদের হত্যাকারীদের সম্পর্কে বলেছেন।  মুহাম্মাদ ইবনু ‘আবীদাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি সরাসরি মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর মুখে এ কথা শুনেছেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ, কা‘বার প্রভুর শপথ! হ্যাঁ কা‘বার প্রভুর শপথ! হ্যাঁ, কা‘বার প্রভুর শপথ!’।[২৭]

১২- সালামাহ ইবনু কুহাইল (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, যায়িদ ইবনু ওয়াহব আল‌-জুহানী (রাহিমাহুল্লাহ) জানিয়েছেন যে, তিনি আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর সঙ্গে সেই সৈন্যদলের সঙ্গে ছিলেন যারা খারিজীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন। আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘হে জনতা! আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, আমার উম্মতের মধ্য হতে এমন একটি গোত্রের আত্মপ্রকাশ ঘটবে যাদের কুরআন পাঠের সামনে তোমাদের তিলাওয়াত কিছুই নয়, তোমাদের ছালাত তাদের ছালাতের তুলনায় কিছুই নয় এবং তোমাদের ছিয়াম তাদের ছিয়ামের তুলনায় কিছুই নয়। তারা কুরআন পড়বে নেকী লাভের আশায়, কিন্তু পরিণতি হবে তার বিপরীত। তাদের ছালাত তাদের কন্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তীর যেভাবে ধনুক হতে বেরিয়ে যায়, তারাও ঠিক সেভাবে ইসলাম হতে দূরে সরে যাবে। যেসব সৈন্য তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে তারা যদি সেই ছওয়াবের কথা জানতে পারে যা তাদের নবী (ﷺ) নিজ মুখে তাদের জন্য বলেছেন, তাহলে তারা অন্যান্য আমল করা ছেড়ে দিবে এবং এরই উপর নির্ভর করে বসে থাকবে। এই দলের নিদর্শন হলো, তাদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি থাকবে যার বাহু থাকবে কিন্তু হাত থাকবে না এবং তার বাহুর উপর স্তনের বোঁটার ন্যায় একটি বোঁটা থাকবে এবং তার উপর সাদা লোম থাকবে। তোমরা কি তোমাদের ছেলেমেয়ে ও ধন-সম্পদ এদের আয়ত্তে রেখে মু‘আবিয়াহ ও সিরিয়াবাসীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যেতে চাও? আল্লাহর কসম! আমার ধারণা যে, এরাই সেই গোত্রের। কেননা এরা হারামভাবে রক্ত প্রবাহিত করছে এবং চারণভূমি হতে মানুষের পশু লুট করছে। অতএব তোমরা আল্লাহর নাম নিয়ে বের হও। সালামাহ ইবনু কুহাইল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমার কাছে যায়িদ ইবনু ওয়াহাব খারিজীদের নিকট গমনের ঘটনা পর্যায়ক্রমে বর্ণনা করে বলেন, অবশেষে আমরা একটি পুল অতিক্রম করে যখন দুই দল মুখোমুখি হলাম, আর খারিজীদের সেনাপ্রধান ছিল ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ওয়াহাব আর-রাসিবী।

সে তাদেরকে বলল, তোমরা বল্লম ছুঁড়ো এবং খাপ থেকে তরবারি বের কর। এমন যেনো না হয় যে, তারা তোমাদেরকে ওয়াদা দিয়ে বলবে যেমন হারুরার দিবসে তারা ওয়াদা দিয়েছিল। তিনি বলেন, অতঃপর তারা বল্লম নিক্ষেপ করতে লাগল ও খাপ থেকে তরবারি বের করল এবং মুসলিমরা বল্লম ছুঁড়ে তাদেরকে প্রতিরোধ করল এবং একের পর এক তারা নিহত হতে থাকল। তিনি বলেন, ঐদিন ‘আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর পক্ষের দুই ব্যক্তি শহীদ হল। আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, তোমরা নিহতদের মধ্যে ছোট হাতবিশিষ্ট ব্যক্তিকে খোঁজ কর; কিন্তু তারা তাকে পেলো না। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) নিজে উঠে পরস্পরের উপর পরে থাকা লাশের নিকট এসে বললেন, এদেরকে বের কর। তারা তাকে ভূলুন্ঠিত অবস্থায় পেয়ে গেলে তিনি আল্লাহু আকবার উচ্চারণ করে বললেন, আল্লাহ সত্য বলেছেন এবং তাঁর রাসূলও। এরপর ‘উবাইদাহ আস-সালমানী তার নিকট দাঁড়িয়ে বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন! সেই আল্লাহর কসম যিনি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই! আপনি কি একথা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, সেই আল্লাহর কসম! যিনি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই। ‘উবাইদাহ তিনবার কসম করে তার নিকট প্রশ্ন করলে তিনিও তিনবার কসম করে একই জবাব দেন’।[২৮]

                          (ইনশাআল্লাহ চলবে)

* শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আল-ইসলামিয়্যাহ, খড়খড়ি, রাজশাহী।


তথ্য সূত্র :
[১]­. ছহীহ বুখারী, হা/১৫৯৪; ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/৭১৯৬।
[২]­. ছহীহ বুখারী, হা/৬৮৩০; ছহীহ মুসলিম, হা/১৬৯১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৯১; দারেমী, হা/২৩২২।
[৩]­. দারেমী, হা/১১৯; যাম্মুল কালাম, পৃ. ৬৮; জামিঊ বায়ানিল ইলমি ওয়া ফাযলিহ, ২য় খণ্ড, পৃ. ১০১০।
[৪]­. মা জা’য়া ফিল বিদঈ, পৃ. ৯৩।
[৫]­. আবূ দাঊদ, হা/১৮৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩১৭, সনদ ছহীহ।
[৬]­. ছহীহ বুখারী, হা/৭০৯৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৪; মিশকাত, হা/৫৪৩৫।
[৭]­. ছহীহ বুখারী, হা/৭২৮৬; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/১৬৬৪৬; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৭৯৬১।
[৮]­. মাজমূঊল ফাতাওয়া, ২০শ খণ্ড, পৃ. ৪৯৮।
[৯]­. মা জা’আ ফিল বিদঈ, পৃ. ৬২; ইবনু আব্দুল বার্র, জামিঊ বায়ানিল ইলমি ওয়া ফাযলিহ (বৈরূত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, ১৩৯৮ হি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ১৫৮।
[১০]­. আল-আজুর্রী, আশ-শারী‘আত, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৪৪, আছার নং-৭৫৯।
[১১]­. হাফিয ইবনু আহমাদ ইবনু আলী আল-হুকমী, মা‘আরিযুল কবুল বিশারহি সালমিল উছূল ইলা ইলমিল উছূল (দাম্মাম: দারু ইবনিল ক্বাইয়িম, ১ম সংস্করণ, ১৪১০ হি./১৯৯০ খ্রি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ২৬০।
[১২]­. ইয়াহইয়া ইবনু আবিল খায়র আল-উমরানী, আল-ইনতিছারু ফির রাদ্দি আলাল মু‘তাযিলাতিল ক্বাদারিয়াতিল আশরার (রিয়াদ : আযওয়াউস সালাফ, ১৯৯৯ খ্রি.), ৩য় খণ্ড, পৃ. ৮৬৮।
[১৩]­. হাফিয ইবনু আহমাদ ইবনু আলী আল-হুকমী, মা‘আরিজুল কুবূল বিশারহি সালমিল উছূল ইলা ইলমিল উছূল (দাম্মাম: দারু ইবনিল ক্বাইয়িম, ১ম সংস্করণ, ১৪১০ হি./১৯৯০ খ্রি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ২৬১।
[১৪]­. আবুল কাসিম ইসমাঈল ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু ফযল আত-তাইমী আল-ইছপাহানী, আল-হুজ্জাহ ফী বায়ানিল মুহাজ্জাহ ওয়া শারহু আক্বীদাতি আহলিস সুন্নাহ, তাহক্বীক্ব : মুহাম্মাদ ইবনু রাবী ইবনু হাদী আল-মাদখালী (রিয়াদ : দারুল রাইয়্যাহ, ১৪১৯ হি./১৯৯৯ খ্রি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৪০।
[১৫]­. ছহীহ বুখারী, হা/১৫৬৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৩৯।
[১৬]­. শারহু উছূলি ই‘তিক্বাদি আহলিহ সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ১২৭, আছার নং-২১১।
[১৭]­. ছহীহ বুখারী, হা/৩১৭২, ৬৭৫৫, ৭৩০০; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৬৬; তিরমিযী, হা/২১২৭; মিশকাত, হা/২৭২৮।
[১৮]. আবূ দাঊদ, হা/১৬২; মিশকাত, হা/৫২৫, সনদ ছহীহ।
[১৯]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৭০৭।
[২০]. দারেমী, হা/১৭৮।
[২১]. ইবনু মাজাহ, হা/২০, সনদ ছহীহ।
[২২]. আবূ বকর মুহাম্মাদ ইবনুল হুসাইন ইবনু আব্দুল্লাহ আল-আজুর্রী আল-বাগদাদী, আশ-শারী‘আত (রিয়াদ: দারুল ওয়াত্বান, ২য় সংস্করণ, ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.), ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ১৭৮৩, আছার নং-১২৪২।
[২৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৬৭৭; ছহীহ মুসলিম, হা/২৩৮৯।
[২৪]. আজুর্রী, আশ-শারী‘আত, ৫ম খণ্ড, পৃ. ২৩২৪, আছার নং-১৮১১।
[২৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৬৭১; মিশকাত, হা/৬০১৫।
[২৬]. হাফেয ইবনু আহমাদ ইবনু আলী আল-হুকমী, মা‘আরিজিল কুবূল বিশারহি সালমিল উছূল ইলা ইলমিল উছূল (দাম্মাম: দারু ইবনিল ক্বাইয়িম, ১ম সংস্করণ, ১৪১০ হি./১৯৯০ খ্রি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৩৫।
[২৭]. ছহীহ মুসলিম, হা/১০৬৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬২৬।
[২৮]. ছহীহ মুসলিম, হা/১০৬৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৭৬৮।




সালাফী মানহাজের মূলনীতিসমূহ (৩য় কিস্তি) - আব্দুল গাফফার মাদানী
ইসলামী পুনর্জাগরণের মূলনীতি (৬ষ্ঠ কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
সালাফী মানহাজ অনুসরণের মর্যাদা - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ফাযায়েলে কুরআন (৩য় কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
ঈদুল ফিতরে করণীয় ও বর্জনীয় - আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে কুরআন (৫ম কিস্তি) - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (২য় কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা (৩য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আযীযুর রহমান
সালাফী মানহাজের মূলনীতিসমূহ (শেষ কিস্তি) - আব্দুল গাফফার মাদানী
কুরবানীর মাসায়েল - ইবাদুল্লাহ বিন আব্বাস
সুন্নাতের রূপরেখা - মাইনুল ইসলাম মঈন
কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা (৩য় কিস্তি) - অনুবাদ : হাফীযুর রহমান বিন দিলজার হোসাইন

ফেসবুক পেজ