ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা
-মুহাম্মাদ আযীযুর রহমান*
(৫ম কিস্তি)
ইসলাম ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে খেজুর
মহান আল্লাহ দুনিয়ায় মানুষকে নে‘মতপূর্ণ ও বরকতপূর্ণ যে সকল ফল-ফলাদি ও খাবার দিয়েছেন তন্মধ্যে খেজুর অন্যতম। খেজুর সুস্বাদু, পুষ্টিকর, স্বাস্থ্যসম্মত এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ। বিশ্বের প্রায় সকলদেশে খেজুর পাওয়া যায়। খেজুর উন্নতমানের ইফতারিও বটে। খেজুরকে আরবীতে (نخلة) ‘নাখলা’ এবং ইংরেজীতে Date বলা হয়। সঊদী আরব, ইরাক, ইরান, পাকিস্তান, ভারত এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় খেজুর উৎপন্ন হয়। সঊদী আরব, ইরাক ও ইরান উন্নতমানের খেজুরের জন্য বিখ্যাত। আরব বেদুঈনরা শুধু খেজুর খেয়েই জীবনযাপন করত। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের দিনে খেজুর খেতেন।[১] খেজুর আকার-আকৃতি ও স্বাদ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। আজওয়া, সুখ্খাল, শাকবী, বরনী, জারী জালী, কালদাহ, মরিয়াম হল সর্বাধিক উন্নতমানের খেজুর। শুকনা খেজুরকে ‘খোরমা’ বলে। অনেক বাড়িতে ঈদের দিনে খোরমা সরু করে কেটে কেটে দুধের মধ্যে জ্বালিয়ে খায়। এটাও খুবই সুস্বাদু খাবার। এমনকি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট অত্যন্ত প্রিয় ফল ছিল খেজুর।
খেজুর সম্পর্কে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন
খেজুর মহান আল্লাহ প্রদত্ত এক বিশেষ নে‘মত। পবিত্র কুরআনের ১৩টি সূরাতে আল্লাহ তা‘আলা খেজুর সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَاَنۡۢبَتۡنَا فِیۡہَا حَبًّا - وَّ عِنَبًا وَّ قَضۡبًا - وَّ زَیۡتُوۡنًا وَّ نَخۡلًا
‘আমরা যমীনে উৎপন্ন করেছি শস্য, আঙ্গুর, শাক-সবজি, যাইতুন ও খেজুর’ (সূরা আল-‘আবাছা : ২৭-২৯)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ مِنۡ ثَمَرٰتِ النَّخِیۡلِ وَ الۡاَعۡنَابِ تَتَّخِذُوۡنَ مِنۡہُ سَکَرًا وَّ رِزۡقًا حَسَنًا اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیَۃً لِّقَوۡمٍ یَّعۡقِلُوۡنَ
‘আর খেজুর বৃক্ষ ও আঙ্গুর ফল হতে তোমরা মধ্যম ও উত্তম খাদ্য তৈরি করে থাক। নিশ্চয় এতে বোধ সম্পন্ন জাতির জন্য নিদর্শন রয়েছে’ (সূরা আল-নাহল : ৬৭)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
وَ ہُوَ الَّذِیۡۤ اَنۡزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَخۡرَجۡنَا بِہٖ نَبَاتَ کُلِّ شَیۡءٍ فَاَخۡرَجۡنَا مِنۡہُ خَضِرًا نُّخۡرِجُ مِنۡہُ حَبًّا مُّتَرَاکِبًا وَ مِنَ النَّخۡلِ مِنۡ طَلۡعِہَا قِنۡوَانٌ دَانِیَۃٌ وَّ جَنّٰتٍ مِّنۡ اَعۡنَابٍ وَّ الزَّیۡتُوۡنَ وَ الرُّمَّانَ مُشۡتَبِہًا وَّ غَیۡرَ مُتَشَابِہٍ اُنۡظُرُوۡۤا اِلٰی ثَمَرِہٖۤ اِذَاۤ اَثۡمَرَ وَ یَنۡعِہٖ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکُمۡ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یُّؤۡمِنُوۡنَ
‘আর তিনি আকাশ থেকে বৃষ্টিবর্ষণ করে থাকেন। আমরা এর দ্বারা সকল প্রকার গাছপালা উৎপাদন করি, সবুজ-শ্যামল ফসল নির্গত করি যা থেকে যুগ্ম বীজ উৎপন্ন করি। এর ফলে বসন্তকালে খেজুর গাছের গলা থেকে খেজুর ছড়া থোকায় থোকায় ঝুলতে থাকে। অনুরূপভাবে বেদানা, জলপাই, আঙ্গুর প্রভৃতি গাছের বাগান তৈরি করি। এগুলো শ্রেণীগতভাবে এক ধরনের হলেও বৈচিত্র ভিন্ন। ঐ সমস্ত গাছে যখন ফল ধরে তখন এই ফলের কাঁচা-পাকা দৃশ্য আমাদের চোখে প্রশান্তি এনে দেয়। চেয়ে দেখ! যারা বিশ্বাসী তাদের জন্য ঐসব দ্রব্যের মধ্যে নিদর্শন রয়েছে’ (সূরা আল-আন‘আম : ৯৯)। তিনি আরো বলেন,
وَ ہُزِّیۡۤ اِلَیۡکِ بِجِذۡعِ النَّخۡلَۃِ تُسٰقِطۡ عَلَیۡکِ رُطَبًا جَنِیًّا
‘খেজুর গাছের গোড়া ধরে তোমার নিজের দিকে ঝাঁকুনি দাও, তাহলে সুপরিপক্ক সুস্বাদু খেজুর তোমার কাছে ঝরে পড়বে’ (সূরা মারইয়াম : ২৫)। উল্লেখ্য যে, কুমারী মারইয়াম (আলাইহিস সালাম) যখন খেজুর গাছের নীচে বাচ্চা প্রসব করে দুর্বল এবং তীব্র ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়েন, তখন আল্লাহ মারইয়াম (আলাইহিস সালাম) -কে এই নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীছের আলোকে খেজুর
সা‘দ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি, مَنْ تَصَبَّحَ بِسَبْعِ تَمَرَاتٍ عَجْوَةً لَمْ يَضُرَّهُ ذَلِكَ الْيَوْمَ سُمٌّ وَلَا سِحْرٌ ‘যে ব্যক্তি সকালে ৭টি আজওয়া খেজুর খাবে, সেদিন কোন বিষ ও জাদুটোনা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না’।[২] আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,إِنَّ فِى عَجْوَةِ الْعَالِيَةِ شِفَاءً أَوْ إِنَّهَا تِرْيَاقٌ أَوَّلَ الْبُكْرَةِ ‘মদীনার উচ্চ ভূমির আজওয়া খেজুরের মধ্যে রোগের নিরাময় রয়েছে’। আর ভোরে তা (খাওয়া) বিষের প্রতিষেধক’।[৩] অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ جَعْفَرِ بْنِ أَبِىْ طَالِبٍ قَالَ رَأَيْتُ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْكُلُ الرُّطَبَ بِالْقِثَّاءِ
আব্দুল্লাহ ইবনু জা‘ফর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে শসার সাথে তাজা খেজুর খেতে দেখেছি।[৪]
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ رَأَيْتُ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُقْعِيًا يَأْكُلُ تَمْرًا. وَفِيْ رِوَايَةٍ أُخْرَي- يَأْكُلُ مِنْهُ أَكْلًا ذَرِيْعًا
আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উপুর হয়ে বসে খেজুর খেতে দেখেছি। অপর বর্ণনায় আছে, তিনি উহা খুব তাড়াতাড়ি খাচ্ছিলেন।[৫] উল্লেখিত হাদীছসমূহ দ্বারা বুঝা যায়, খেজুর বহু রোগের প্রতিশেধক। মহান আল্লাহ খেজুরের মধ্যে অনেক রোগের মহৌষধী গুণাগুণ সংস্থাপন করেছেন।
খেজুরের রসের পুষ্টিগুণ
খেজুরের রস খুবই সুস্বাদু ও মিষ্টি। গাছের গলায় হাড়ি/প্লাস্টিকের পট ঝুঁলিয়ে এই রস সংগ্রহ করা হয়। এই রস পানে দেহ ও মন সতেজ হয়। এই রস জ্বাল দিয়ে আঠালো গুড় বানানো হয়।[৬] খেজুরের রস পুষ্টিকর পানীয়। খেজুর গাছের উপরিভাগ থেকে এই সুস্বাদু রস বের করা হয়। এটি অত্যন্ত সুপেয় পানীয়। এই রসে প্রচুর ভিটামিন এবং ১৪% শর্করা পাওয়া যায়। টাটকা কাঁচা রস যেমন মজা তার চেয়ে বেশী উপাদেয় খেজুরের গুড়। আয়ুর্বেদী মতে, খেজুরের রস হজমশক্তি বৃদ্ধি করে, শুক্র ও মূত্র বাড়ায়, বাত ও শ্লেষ্মা কমায়।[৭]
ইফতারী হিসাবে খেজুরের গুরুত্ব
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُفْطِرُ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّىَ عَلَى رُطَبَاتٍ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ رُطَبَاتٌ فَتُمَيْرَاتٍ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تُمَيْرَاتٌ حَسَا حَسَوَاتٍ مِنْ مَاءٍ
আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছালাতের পূর্বে (মাগরিব) কয়েকটি তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তিনি তাজা খেজুর না পেলে শুকনা খেজুর (খুরমা) দিয়ে ইফতার করতেন। আর যদি তাও না পেতেন তাহলে কয়েক ঢোক পানি পান করে নিতেন।[৮]
জ্ঞাতব্য : ছিয়াম পালনের কারণে ভিটামিন, খনিজ লবণ, রক্তশূণ্যতা, স্নায়ুবিক দুর্বলতা, প্রোটিন ও সুগার ইত্যাদির অভাব দেখা দিতে পারে। সেজন্য ইফতারে ৪/৫টি খেজুর খেলে ভিটামিন এ. বি. বি২, খনিজ লবণ, আয়রণ, ক্যালরী, চর্বী, সুগার, ফাইবার ও নিকোটিন এ্যাসিড ইত্যাদি দ্রুত ঘাটতি পূরণ করে শরীরের পূর্ণ শক্তি ফিরিয়ে দেয়। শুধু ছিয়াম নয়, যে কোন সময় শারীরিক দুর্বলতার জন্য ঔষধ হিসাবে আমাদের অন্তত দু’বেলা ২/৪টি করে খেজুর খাওয়া খুবই উপকারী।[৯]
খেজুরের উপকারিতা
(১) সারাদিন ছিয়ামব্রত পালনের পর অভুক্ত অবস্থায় খেজুর খেলে পাকস্থলীর উপর কোন চাপ পড়ে না।
(২) খেজুরে যে শর্করা থাকে তা দ্রুত শোষিত হয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে সারাদিনের ক্লান্তি ও কষ্ট লাঘব হয় এবং শরীরে দ্রুত শক্তি পায়।
(৩) খেজুরে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার বা আঁশ থাকে। ছিয়াম রেখে পানি কম পান করা ছাড়াও বিভিন্ন কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। খেজুরের ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং খারাপ কোলেস্টরেল এলডিএল হ্রাসে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
(৪) সারাদিন ছিয়াম পালন করার পর মন শুধু খেতে চায়। ফলে বেশী খেলে ছিয়ামের আদর্শ পালিত হয় না এবং পাকস্থলীর উপর চাপ পড়ে। ইফতারীতে খেজুর খেলে অতিরিক্ত ক্ষুধার চাপ কমে যায়। ফলে ছিয়ামের সুফল পাওয়া যায়।
(৫) খাবার ডাইজেষ্ট বা হজমের জন্য পাকস্থলীর নিঃসৃত রস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। খেজুর পাকস্থলি থেকে রস নিঃসরণের হার বাড়িয়ে দেয়। ফলে সহজে হজম হয়।
(৬) খেজুর প্রসব যন্ত্রণা কমাতে সাহায্য করে। এটি জরায়ুর মাংসপেশি দ্রুত সংকোচন-প্রসারণ ঘটিয়ে তাড়াতাড়ি প্রসব হতে সাহায্য করে। এছাড়াও খেজুর প্রসব পরবর্তী কোষ্ঠকাঠিন্য ও রক্তক্ষরণ কমিয়ে দেয়।
(৭) খেজুর রক্তের অম্ল ও ক্ষারের ভারসাম্য বজায় রাখে।[১০]
(৮) খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণে এন্টি-অক্সিডেন্ট, যা মানব শরীরে রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
(৯) খেজুরে আছে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ লবণ, যা পানিশূণ্যতা রোধে সহায়ক। খেজুর শরীরের স্বাভাবিক গঠন ও স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সহায়তা করে। থাকা যায় দীর্ঘক্ষণ সজীব ও সতেজ।
(১০) খেজুর হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
(১১) খেজুর মধুর, শীতল, স্নিগ্ধ, রুচি বর্ধক, ক্ষয় ও রক্ত-পিত্ত রোগ নিবারক। অপুষ্টিজনিত সমস্যা দূর করে, বল বাড়ায় ও শুক্র বৃদ্ধি করে।
(১২) খেজুর লো-প্রেসার, প্যারালাইসিস ও মাথা ঘোরা বন্ধ করে। রক্ত স্বল্পতায় খেজুরে থাকা আয়রণ খুবই উপকারী।
(১৩) ইফতার ও সাহারীতে ২/৪টি খেজুর খেলে খেজুরের পুষ্টি ও ভেষজ গুণ সুষ্ঠুভাবে ছিয়াম রাখতে বিশেষভাবে সহায়তা করে।
(১৪) খেজুর পেটের গ্যাস, শ্লেষ্মা ও কফ দূর করে। শুষ্ক কাশি ও এ্যাজমা রোগে উপকারী।
(১৫) খেজুরের বীচির চূর্ণ প্রবাহিত রক্ত ও আমাশয় বন্ধ করে।
(১৬) পেশাবের জালা-যন্ত্রণা দূর করে ও মূত্রাশয়ের পাথরের জন্য বিশেষ উপকারী।[১১]
ইসলাম ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
ইসলাম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উপর অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। নিজের শরীর পাক-পবিত্র রাখা, পোশাক পরিচ্ছেদ, বিছানা-পত্র, আসবাবপত্র ও ঘরবাড়ি ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব¡ আরোপ করেছে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহর বাণী, اِنَّ اللّٰہَ یُحِبُّ التَّوَّابِیۡنَ وَ یُحِبُّ الۡمُتَطَہِّرِیۡنَ ‘নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২২২)। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, اَلطُّهُوْرُ شَطْرُ الْإِيْمَانِ ‘পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক’।[১২] পবিত্রতা সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে মোট ১৮ টি সূরায় ২৭ বার ‘ত্বাহারাৎ’ শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে। হাদীছেও এ সম্পর্কে বড় বড় অধ্যায় রচিত হয়েছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে তাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব অপরিসীম।
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় দাঁতনের গুরুত্ব
আধুনিক বিশ্বে প্রাতঃকালে মিসওয়াক বা দাঁতন করা সভ্যতার পরিচায়ক। এটা ক্ষুদ্র কাজ হলেও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এর গুরুত্ব অপরসীম। দাঁত, মাড়ি, জিহবা, গলা ও মস্তিস্কের দূষিত ও ক্ষতিকারক পদার্থগুলোকে দাঁতনের মাধ্যমে খুব সহজেই নির্গত করা সম্ভব। এর মাধ্যমে দাঁত, মাড়ি এবং মুখের সমস্ত প্রকার রোগ থেকে নিরাপদ থাকা যায়। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, لَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِىْ لَأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ مَعَ كُلِّ وُضُوْءٍ ‘আমার উম্মতের কষ্টবোধ হবে এই আশঙ্কা না থাকলে প্রত্যেক ছালাতের সময় দাঁতন করার নির্দেশ দিতাম’।[১৩] রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ঘুম থেকে উঠতেন অথবা তাহজ্জুদ ছালাতের জন্য যখন উঠতেন তখনই দাঁতন করতেন।[১৪] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, اَلسِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ ‘মিসওয়াক হল মুখ পরিষ্কারকারী এবং আল্লাহর সন্তোষ লাভের উপায়’।[১৫] অতএব স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ঘুম থেকে উঠে এবং খাওয়ার পরে নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার অর্থাৎ দাঁতন বা মিসওয়াক করা সকলের অপরিহার্য কর্তব্য।
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ওযূ ও গোসলের গুরুত্ব
পবিত্রতা অর্জনের অন্যতম গুরুত্বপূর্র্ণ মাধ্যম ওযূ ও গোসল। ওযূর মাধ্যমে হাত ও পায়ের শেষ ভাগ, মুখের জিহ্বা, ঠোঁট, নাক, চক্ষু এবং মুখমণ্ডল পানি দ্বারা ধৌত করলে শরীর হয় সজীব, মস্তিষ্ক হয় সতেজ, মনে স্ফূর্তি, উদ্দম ও অনাবিল প্রশান্তির উদ্রেক হয়। শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় বায়ুমণ্ডল থেকে অসংখ্য জীবাণু পেটে গিয়ে ধ্বংস হয়ে যায়। ওযূর অঙ্গগুলো ৩ বার ধোয়ার কারণে শরীরে আটকে থাকা জীবাণুগুলো দূরীভূত হয়ে যায়। এভাবে ছালাত আদায়কারী মুসলিমগণ ওযূর মাধ্যমে সম্পূর্ণ পরিস্কার ও জীবাণুমুক্ত হয়ে সুন্দরভাবে জীবন-যাপন করতে পারে।
গোসল ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্দেশনা, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। জুমু‘আর দিন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গোসল করে যেতে বলেছেন। অন্যান্য কঠিন কাজ করা, স্বামী-স্ত্রী এক সঙ্গে থাকার ফলে দেহের আভ্যন্তরীণ অপদার্থ বস্তুগুলো বেরিয়ে আসে। এ কারণে গোসল ফরয হয়। আর এ গোসলের মাধ্যমে মনের প্রসন্নতা আসে, সকল প্রকার ময়লা-আবর্জনা ও অপবিত্র জিনিস থেকে শরীরকে পবিত্র করে। ফলে সুস্বাস্থ্যের জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
* চাঁদপুর, খুলনা।
তথ্যসূত্র :
[১]. ছহীহ বুখারী, হা/৯৫৩; মিশকাত, হা/১৪৩৩।
[২]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৭৭৯; ছহীহ মুসলিম, হা/২০৪৭; আবূ দাঊদ, হা/৩৮৭৬; মিশকাত, হা/৪১৯০।
[৩]. ছহীহ মুসলিম, হা/২০৪৮; মিশকাত, হা/৪১৯১।
[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৪৪০; মিশকাত হা/৪১৮৫।
[৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/২০৪৪; মিশকাত, হা/৪১৮৭।
[৬]. Scientific indication in the Holy Quran, P.281.
[৭]. দৈনিক ইনকিলাব, ২৯ অক্টোবর ২০১৪, পৃ. ১৩।
[৮]. তিরমিযী, হা/৬৯৬; মিশকাত, হা/১৯৯১, সনদ ছহীহ।
[৯]. মাসিক আত-তাহরীক, অক্টোবর/০৬, ডিসেম্বর/০৫; দৈনিক ইত্তেফাক ২৬/০৬/২০১৫; ডা. মোড়ল নজরুল ইসলাম।
[১০]. বিডি প্রতিদিন, ০২ জুলাই ২০১৫; ভোরের কাগজ, ২৩ জুন ২০১৫।
[১১]. মাসিক আত-তাহরীক, অক্টোবর/০৬, ডিসেম্বর/০৫; দৈনিক ইত্তেফাক ২৬/০৬/২০১৫।
[১২]. ছহীহ মুসলিম, হা/২২৩; মিশকাত, হা/২৮১।
[১৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৮৮৭; আবূ দাঊদ, হা/৪৭; মিশকাত, হা/৩৭৬।
[১৪]. ছহীহ বুখারী, হা/২৪৫; ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৫।
[১৫]. নাসাঈ, হা/৫; মিশকাত, হা/৩৮১, সনদ ছহীহ।
প্রসঙ্গসমূহ »:
চিকিৎসা