সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০১:৩৮ পূর্বাহ্ন

সুন্নাতের আলো বিদ‘আতের অন্ধকার

মূল : ড. সাঈদ ইবনু আলী ইবনু ওয়াহাফ আল-ক্বাহত্বানী
অনুবাদ : হাফীযুর রহমান বিন দিলজার হোসাইন *


(৩য় কিস্তি)

চতুর্থ পরিচ্ছেদ : সুন্নাতের অবস্থান

সুন্নাত হল আল্লাহ তা‘আলার সুরক্ষিত দূর্গ এবং তাতে প্রবেশকারীর জন্য নিরাপদ স্থান। এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এতে প্রবেশকারী গন্তব্যে পৌঁছে যাবে। সুন্নাত প্রাত্যহিক জীবনে আমলের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা পায়। সুন্নাত অনুযায়ী আমলের ক্ষেত্রে দুর্বলতার কারণে সুন্নাতের নূর বা আলো হ্রাস পায়। মুনাফিক ও বিদ‘আতপন্থীদের নিকট থেকে সুন্নাতের নূর বা আলোও দূর হয়ে যায়। তাইতো ক্বিয়ামতের দিন সুন্নাতের অনুসারীদের চেহারা উজ্জ্বল হবে। পক্ষান্তরে কাফের ও বিদ‘আতপন্থীদের চেহারা কৃষ্ণবর্ণ ও মলিন হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, یَّوۡمَ تَبۡیَضُّ وُجُوۡہٌ  وَّ تَسۡوَدُّ وُجُوۡہٌ ‘সেদিন কিছু চেহারা উজ্জ্বল হবে আর কিছু চেহারা কালো হবে’ (সূরা আলে-ইমরান : ১০৬)। ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, تبيض وجوه أهل السنة والائتلاف وتسود وجوه أهل البدعة والتفرق ‘আহলুস সুন্নাহ অর্থাৎ সুন্নাতের অনুসারীদের ঐক্যবদ্ধ ব্যক্তিদের চেহারা উজ্জ্বল হবে ও বিদ‘আতপন্থীদের ও বিভক্ত সৃষ্টিকারীদের চেহারা কালো হবে’।[১] আর সুন্নাত হল জীবন ও নূর বা আলো, যা বান্দার সৌভাগ্য, হেদায়াত ও বিজয় নিয়ে আসবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

اَوَ مَنۡ کَانَ مَیۡتًا فَاَحۡیَیۡنٰہُ وَ جَعَلۡنَا لَہٗ نُوۡرًا یَّمۡشِیۡ بِہٖ فِی النَّاسِ کَمَنۡ مَّثَلُہٗ فِی الظُّلُمٰتِ لَیۡسَ بِخَارِجٍ مِّنۡہَا ؕ کَذٰلِکَ زُیِّنَ لِلۡکٰفِرِیۡنَ مَا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ.  

‘যে ব্যক্তি মৃত ছিল, তাকে আমরা জীবিত করলাম, তার জন্য আলোর ব্যবস্থা করলাম; যার সাহায্যে সে মানুষের মাঝে চলাফেরা করে। সে কি তার মত যে অন্ধকারে নিমজ্জিত, তাত্থেকে সে কখনো বেরিয়ে আসতে পারবে না। এটা এজন্য যে, কাফেররা যা করছে তা তাদের জন্য চাকচিক্যময় করে দেয়া হয়েছে’ (আল-আন‘আম : ১২২)। আল্লাহই তাওফীকদাতা’।[২]

পঞ্চম পরিচ্ছেদ : সুন্নাতপন্থী ও বিদ‘আতপন্থীদের অবস্থান

প্রথমতঃ সুন্নাতের অনুসারীর অবস্থান

প্রকৃত সুন্নাতের অনুসারী ব্যক্তি সজিব, সতেজ ও আলোকিত হৃদয়ের অধিকারী হয়। যা আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করেছেন। এটি ঈমানদারদের একটি গুণ বা বৈশিষ্ট্য। কেননা সজিব ও আলোকিত হৃদয়ের অধিকারী ব্যক্তি আল্লাহর পক্ষ থেকে জ্ঞান, বুদ্ধি ও হেদায়াতপ্রাপ্ত। তারা তাওহীদের বিশ^াসী ও রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রকৃত অনুসারী হওয়ার তাওফীক লাভ করে থাকে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রার্থনা করে বলতেন,

الله تعالى أن يجعل له نوراً في قلبه، وسمعه، وبصره، ولسانه، ومن فوقه، ومن تحته، وعن يمينه، وعن شماله، ومن خلفه ومن أمامه، وأن يجعل له نوراً، وأن يجعل ذاته نوراً، وفي بشره، ولحمه، وعظمه، ولحمه، ودمه،  

‘আল্লাহ তা‘আলা যেন তাঁর অন্তরে, কানে, চোখে, জিহ্বায়, উপরে, নিচে, ডানে-বামে, সামনে-পিছনে, নূর বা আলো দান করেন। তাঁর ব্যক্তি সত্তাকেও যেন নূরের দ্বারা আলোকিত করেন। তাঁর গোশত, হাঁড় ও রক্তের মধ্যেও যেন নূর দান করেন। রাসূল (ﷺ) এভাবে তাঁর নিজ সত্তা, সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীন অনুভূতি এবং ষষ্ঠদিকের জন্য আল্লাহর নিকট নূর প্রার্থনা করেছেন। প্রত্যেক মুমিনের ভিতর-বাহির, কথা-কাজ ইত্যাদি সবই সমোজ্জ্বল। আর এ আলো মুমিন ব্যক্তির জন্য ক্বিয়ামতের দিন তার ঈমানের শক্তির দৃঢ়তা ও দুর্বলতার উপর ভিত্তি করে প্রকাশিত হবে। এ আলো তার সামনে পিছনে চলতে থাকবে। সেদিন কারো কারো নূরের জ্যোতি হবে সূর্যের জ্যোতির ন্যায় আবার কারো চন্দ্রের জ্যোতির ন্যায়, আবার কারো কারো জ্যোতি হবে লম্বা খেজুরের গাছের ন্যায়, কারো জ্যোতি হবে দ-ায়মান মানুষের ন্যায়। এমনকি মুমিনদের কাউকে তার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলের মাথায় নূর দেয়া হবে। তা একবার জ¦লবে আবার নিভে যাবে। মূল কথা দুনিয়াতে যে যতটুকু ঈমানের শক্তিতে বলিয়ান ছিল ক্বিয়ামতের দিন তাকে ততটুকু ঈমানের জ্যোতি দেয়া হবে’।[৩]

দ্বিতীয়তঃ সুন্নাতের অনুসারীদের অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। (মানুষের মধ্যে) অনেক প-িত তা অর্জন করতে পেরেছে। আর তাদের বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো নি¤œরূপ:

১.   আল-কুরআন ও সুন্নাহ এমনভাবে আঁকড়ে ধরা যেমনভাবে মাড়ির দাঁত দিয়ে কোন কিছু আঁকড়ে ধরা হয়, যা সহজে ছুটে না।

২.  দ্বীনের মৌলিক বিধানাবলী ও তার শাখা-প্রশাখার ব্যাপারে আল-কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ করা।

৩.  সুন্নাহর অনুসারীদের ও দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধারণকারীদের ভালোবাসা ও বিদ‘আতীদের ঘৃণা করা।

৪.  সুন্নাহর অনুসারীরা সংখ্যায় কম হলেও নিজেকে একাকী না ভাবা। কেননা সততা মুমিনদের হারানো সম্পদ। সে সত্যকে গ্রহণ করে যদিও মানুষ তার বিরোধিতা করে থাকে।

৫.  আল-কুরআন ও সুন্নাহর আদর্শ বাস্তবায়নের নিমিত্তে কথা ও কাজে সত্যাশ্রয়ী হওয়া।

৬.  রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কেই একমাত্র আদর্শের মাপকাঠি হিসাবে গ্রহণ করা। কারণ তার চরিত্রই হচ্ছে আল-কুরআনের প্রতিচ্ছবি।[৪]

তৃতীয়তঃ বিদ‘আতের অনুসারীদের অবস্থান

বিদ‘আতের অনুসারীরা মৃত্যু ও অন্ধকারাচ্ছন্ন হৃদয়ের অধিকারী। আল্লাহ তা‘আলা অবিশ^াসীকে মৃত্যু ও অন্ধকারে নিমজ্জিত ব্যক্তি হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। মৃত্যু ও অন্ধকার হৃদয় সম্পন্ন ব্যক্তি আল্লাহ ও দ্বীনের পরিচয় সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে অজ্ঞ। আল্লাহ তা‘আলা তাদের অবস্থার উপমা দিয়েছেন যে, তারা মৃত জীবিত নয়। কেননা তারা অন্ধকারে রয়েছে তাত্থেকে বের হবে না। এখানে তাদের যাবতীয় কথা, কাজ এমনকি তাদের গোটা জীবনটাই অন্ধকারাচ্ছন্ন। পরিশেষে তাদের কবর হবে অন্ধকারময়। যখন ক্বিয়ামতের দিন পুলছিরাত পার হওয়ার জন্য মানুষের মাঝে নূর বণ্টন করা হবে, তখনও তাদের অন্ধকারের মধ্যেই রাখা হবে। এ নূর তারা পাবে না। তাদের আবাসস্থল হবে জাহান্নাম। আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় বান্দাদের মধ্য থেকে যারা কল্যাণ কামনা করে, তাকে অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখান। আর যারা কল্যাণ কামনা করে না তাকে অন্ধকারের মধ্যেই রেখে দেন’।[৫]

দ্বিতীয় অধ্যায় : বিদ‘আতের অন্ধকার

প্রথম পরিচ্ছেদ : বিদ‘আতের পরিচয়

বিদ‘আতের শাব্দিক অর্থ : অভিধানবেত্তগণ বলেন,

اَلْحَدَثُ فِي الدِّيْنِ بَعْدَ الْاِكْمَالِ أَوْ مَا اسْتُحْدِثَ بَعْدَ النَّبيِّ ﷺ مِنَ الْأَهْوَاءِ وَالْأَعْمَالِ

‘দ্বীন পরিপূর্ণ হওয়ার পর তাতে নতুন কিছু প্রবর্তিত হওয়া অথবা নবী করীম (ﷺ)-এর মৃত্যুর পর দ্বীনের মধ্যে নতুন চিন্তাধারা ও আমলসমূহ’।[৬] যেমন পূর্ব কোন নমুনা ছাড়াই কোন কথা বা কাজ আবিষ্কার করলে আরবরা বলে, أبْدَعْتُ الشَّيءَ قَوْلًا أَوْ فِعْلًا ‘তথা পূর্ব কোন নমুনা ছাড়াই আমি এ কথা বা কাজ আবিষ্কার করেছি’।[৭] আর বিদ‘আত শব্দের মূল ধাতু হল بِدَعٌ, যার অর্থ পূর্ববর্তী কোন নমুনা ছাড়াই নতুন কিছু আবিষ্কার করা। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী, بَدِیۡعُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ‘আল্লাহ আকাশম-লী ও পৃথিবী সৃষ্টিকারী’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১১৭; সূরা আল-আন‘আম : ১০১)। অর্থাৎ পূর্ববর্তী কোন নমুনা ছাড়াই আকাশ-যমীনের সৃষ্টিকারী’।[৮]

পারিভাষিক অর্থ

ওলামায়ে কেরাম বিদ‘আতের বিভিন্ন সংজ্ঞা বর্ণনা করেছেন, যা একটি অপরটির পরিপূরক।

১- শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, اَلْبِدْعَةَ فِي الدِّيْنِ هِيَ مَا لَمْ يَشْرَعْهُ اللهُ وَرَسُوْلُهُ وَهُوَ مَا لَمْ يَأْمُرْ بِهِ أَمْرَ إيْجَابٍ وَلَا اسْتِحْبَابٍ ‘দ্বীনের মধ্যে বিদ‘আত হচ্ছে এমন আমল, যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) ইসলামে প্রবর্তন করেননি এবং মুস্তাহাব বা ওয়াজিব হিসাবে এর কোন অনুমোদন দেননি’।[৯] তিনি আরো বলেন, ‘বিদ‘আত (সাধারণত) দু’প্রকার। যথা : (ক) কথা ও বিশ^াসের মধ্যে বিদ‘আত ও (খ) ইবাদত ও কর্মের মধ্যে বিদ‘আত। এখানে প্রথম প্রকার দ্বিতীয় প্রকারের অন্তর্ভুক্ত, যেমনি প্রথম প্রকার দ্বিতীয় প্রকারের দিকে আহ্বান করে’।[১০]

ইবনু তাইমিয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ) আরো বলেন, ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) ও অন্য আলেমগণ স্বীয় মাযহাবে ঘোষণা দিয়েছেন যে, স্বভাব ও ইবাদতের সমষ্টির নাম ‘আমল। আর ইবাদত হচ্ছে, একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে যা কিছু এসেছে সে অনুযায়ী আমল করা। স্বভাবের মূল হচ্ছে, আল্লাহ যা নিষিদ্ধ করেছেন একমাত্র তাই নিষিদ্ধ মনে করা’।[১১]  বিদ‘আতের পরিচয় প্রদান করে শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ) আরো বলেন,

مَا خَالَفَتْ الْكِتَابَ وَالسُّنَّةَ أَوْ إجْمَاعَ سَلَفِ الْأُمَّةِ مِنْ الِاعْتِقَادَاتِ وَالْعِبَادَاتِ. كَأَقْوَالِ الْخَوَارِجِ وَالرَّوَافِضِ وَالْقَدَرِيَّةِ وَالْجَهْمِيَّة وَكَاَلَّذِيْنَ يَتَعَبَّدُوْنَ بِالرَّقْصِ وَالْغِنَاءِ فِي الْمَسَاجِدِ وَاَلَّذِيْنَ يَتَعَبَّدُوْنَ بِحَلْقِ اللِّحَى وَأَكْلِ الْحَشِيْشَةِ وَأَنْوَاعِ ذَلِكَ مِنْ الْبِدَعِ الَّتِيْ يَتَعَبَّدُ بِهَا طَوَائِفُ مِنْ الْمُخَالِفِيْنَ لِلْكِتَابِ وَالسُّنَّةِ وَاَللهُ أَعْلَمُ.

‘ইবাদত ও বিশ^াসে কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমায়ে উম্মতের পরিপন্থী কাজ করা। যথা- খারেজী, রাফেযী, ক্বাদারিয়া ও জাহমিয়াদের কথাবার্তা বা বিশ^াস অথবা মসজিদে যিকির-আযকারের নামে নাচ-গানের অনুষ্ঠানকে ইবাদত মনে করে এবং যারা দাড়ি মু-ন করে ও হাশীশ (এক প্রকার মাদক) পান করাকে ইবাদত মনে করে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকার নতুন আবিষ্কার, যাকে আল-কুরআন ও সুন্নাহর বিরোধিতাকারী বিভিন্ন দল ইবাদত মনে করে, আল্লাহই অধিক অবগত’।[১২]

২- ইমাম শাত্বেবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, البدعة طريقة في الدين مخترعة تضاهي الشرعية يقصد بالسلوك عليها المبالغة في التعبد لله سبحانه ‘‘বিদ‘আত হল- দ্বীন ইসলামের মধ্যে এমন কর্মনীতি চালু করা, যা শরী‘আতের বিপরীত[১৩] এবং যা করে আল্লাহর ইবাদতের ব্যাপারে আতিশয্য ও বাড়াবাড়ি করা হয়’।[১৪]

যারা স্বভাবগত কাজকে বিদ‘আতের অন্তর্ভুক্ত মনে করে না এটা তাদের অভিমত। তারা শুধু শরী‘আত বহির্ভূত কাজকেই ইবাদত হিসাবে পালন করাকে বিদ‘আত বলে। আর যারা স্বভাবগত কাজকেও বিদ‘আতের অন্তর্ভুক্ত মনে করে তারা বলেন, বিদ‘আত হল দ্বীনের মধ্যে নবাবিস্কৃত বিষয় যা শরী‘আতের কার্যক্রমের সাদৃশ্য এবং বিদ‘আতী কার্যকলাপের মাধ্যমে তা উদ্দেশ্য করা হয়, যা শরী‘আতের কার্যক্রমের মাধ্যমে উদ্দেশ্য নেয়া হয়’।[১৫] অতঃপর তিনি আরও একটি সংজ্ঞা বর্ণনা করেন,

أن العادات من حيث هي عادية لا بدعة فيها، ومن حيث يتعبد بها، أو توضع وضع التّعبُّد تدخلها البدعة، فحصل بذلك أنه جمع بين التعريفين ومثل للأمور العادية التي لابد فيها من التعبُّد: بالبيع، والشراء، والنكاح، والطلاق، والإيجارات، والجنايات .. لأنها مقيدة بأمور وشروط وضوابط شرعية لا خيرة للمكلف فيها .

‘স্বভাবগত কাজকে অভ্যাস হিসাবে মনে করলে তা বিদ‘আত হবে না। কিন্তু তা যদি ইবাদত হিসাবে নামকরণ করা হয় তাহলে তা বিদ‘আত হবে। এখানে তিনি দু’টি সংজ্ঞা একত্র করেছেন। স্বভাবগত বিষয় যা ইবাদতের শামিল। যেমন ক্রয়-বিক্রয়, বিবাহ, ত্বালাক্ব, ভাড়া দেয়া, কিংবা বিভিন্ন অপরাধের শাস্তিমূলক বিষয়াবলী ইত্যাদি। কেননা এগুলোর কিছু শর্ত ও নিয়মাবলী রয়েছে যে সম্পর্কে মানুষকে কোন স্বাধীনতা দেয়া হয়নি’।[১৬]

৩- হাফেয ইবনু রজব (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন[১৭], ‘বিদ‘আত হচ্ছে দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু বিষয় প্রচলন করা, যা শরী‘আতে কোন ভিত্তি নেই। শরী‘আতে যার ভিত্তি আছে তা শারঈ দৃষ্টিকোনে বিদ‘আত হবে না। যদিও তা আভিধানিক দৃষ্টিকোনে বিদ‘আত হয়। এমন প্রত্যেক বস্তু যা দ্বীনের অংশ হিসাবে চালিয়ে দেয়া হয় অথচ ইসলামে এর কোন ভিত্তি নেই, তা স্পষ্ট ভ্রষ্টতা। দ্বীন ইসলাম এসব ভ্রষ্টতা থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র। চাই সেটা বিশ^াসগত তথা আক্বীদা কর্মমূলক হোক কিংবা প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য বক্তব্যধর্মী বিষয়াদী হোক না কেন। মূল কথা দ্বীন নবাবিস্কৃত বিদ‘আত থেকে মুক্ত ও পবিত্র। সালফে ছালেহীনের অভিমতে কতিপয় নবাবিস্কৃত বিষয়কে উত্তম বলা হয়েছে, এর দ্বারা আভিধানিক অর্থে বিদ‘আত বুঝানো হয়েছে, শরী‘আতে নিষিদ্ধ বিদ‘আত বুঝানো হয়নি। যেমন, (এক) ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর যুগে রামাযান মাসে যখন লোকজন মসজিদে একজন ইমামের পিছনে তারাবীহর ছালাত আদায় করার জন্য একত্রিত হল, তখন তিনি বের হলেন এবং লোকজনকে এ অবস্থায় দেখে বললেন, এটা কতই না সুন্দর বিদ‘আত’।[১৮] ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর এ কথার উদ্দেশ্য হচ্ছে, ইতিপূর্বে এ ধরনের কাজ এভাবে কখনো সংঘটিত হয়নি, অথচ এটার শরী‘আতে ভিত্তি আছে।

(দুই) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রামাযান মাসে ক্বিয়ামুল লাইলের অর্থাৎ রাতের নফল ছালাতের জন্য উৎসাহ প্রদান করেছেন। তাঁর জীবদ্দশায় লোকজন মসজিদে এসে কেউ জামা‘আতে, কেউ একা ক্বিয়ামুল লাইল অর্থাৎ নফল ছালাত আদায় করতেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছাহাবীদের নিয়ে মাঝে মাঝে জামা‘আতে ছালাত আদায় করতেন। তিনি ভবিষ্যতে উম্মতের অক্ষমতার বিষয় ও পরে তা ফরয করে দেয়ার আশঙ্কায় তা আদায় করা থেকে বিরত থেকেছেন। আর এই (ভয়টি) রাসূল (ﷺ)-এর মৃত্যুর পরে দূরীভূত হয়ে গিয়েছে’।[১৯]

(তিন) অনুরূপ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উম্মতকে খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতের অনুসরণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আর জামা‘আতবদ্ধ ক্বিয়ামুল লাইল তথা তারাবীহ খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত’।[২০]

বিদ‘আতের প্রকারভেদ

বিদ‘আত সাধারণত দু’ধরনের। যথা : (১) কুফরী বিদ‘আত, যার মাধ্যমে উক্ত বিদ‘আতপন্থী ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়। (২) ফাসেকী তথা পাপাচারী বিদ‘আত, যার মাধমে উক্ত বিদ‘আতপন্থী ইসলাম থেকে বের হয়ে যায় না। কিন্তু গোনাহগার হবে।[২১]

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : আমল কবুল হওয়ার শর্তসমূহ

আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যকৃত কোন আমল আল্লাহ তা‘আলার নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তাতে দু’টি শর্ত পাওয়া না যাবে। শর্ত-১ : ইখলাছের (আন্তরিকতার) সাথে ইবাদত করা অর্থাৎ আমল বা ‘ইবাদত একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য করা। নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى ‘প্রতিটি কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে’।[২২] শর্ত-২ : রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর অনুসরণ। যেমনটি নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ ‘যে ব্যক্তি আমাদের পক্ষ থেকে স্বীকৃত নয় এমন কোন আমল করল, তা প্রত্যাখ্যাত’।[২৩]

সুতরাং যার আমল একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাত অনুযায়ী হবে, তাহলে তার আমল গ্রহণযোগ্য হবে। আর যদি এ দু’টি শর্ত বা কোন একটি পাওয়া না যায়, তাহলে তা প্রত্যাখ্যাত হবে। এ বিষয়টি আল্লাহ তা‘আলা বাণীর অন্তর্ভুক্ত। তিনি বলেন, وَ قَدِمۡنَاۤ اِلٰی مَا عَمِلُوۡا مِنۡ عَمَلٍ فَجَعَلۡنٰہُ  ہَبَآءً  مَّنۡثُوۡرًا  ‘আমরা তাদের কর্মগুলোর প্রতি মনোনিবেশ করব, অতঃপর তা বিক্ষিপ্ত ধুলিকনায় পরিণত করে দিব’ (আল-ফুরক্বান : ২৩)। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি উক্ত শর্তদ্বয়যুক্ত আমল করবে সে আল্লাহর এ বাণীর অন্তর্ভুক্ত হবে- وَ مَنۡ اَحۡسَنُ دِیۡنًا مِّمَّنۡ اَسۡلَمَ  وَجۡہَہٗ لِلّٰہِ وَ ہُوَ مُحۡسِنٌ ‘আর সে ব্যক্তি অপেক্ষা দ্বীনের মধ্যে কে বেশি উত্তম, যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে, অধিকন্তু সে সৎকর্মশীল’ (সূরা আন-নিসা : ১২৫)।

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, مَنۡ اَسۡلَمَ وَجۡہَہٗ  لِلّٰہِ وَ ہُوَ  مُحۡسِنٌ فَلَہٗۤ اَجۡرُہٗ عِنۡدَ رَبِّہٖ ۪ وَ لَا خَوۡفٌ عَلَیۡہِمۡ  وَ لَا ہُمۡ  یَحۡزَنُوۡنَ ‘বরং সে ব্যক্তি আল্লাহ্র নিকট আত্মসমর্পণ করে আর সৎকর্মশীল হয়, তার জন্য তার প্রতিপালকের নিকট পুণ্যফল রয়েছে, তাদের কোন ভয় নেই, তাদের কোন দুঃখ নেই’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১১২)। সুতরাং ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত হাদীছটি- إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ ‘প্রতিটি কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল।[২৪] আন্তরিক আমল বা কার্যাবলীর মানদ-। আর আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত হাদীছটি- مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ ‘যে ব্যক্তি আমাদের পক্ষ থেকে স্বীকৃত নয় এমন কোন আমল করল, তা প্রত্যাখ্যাত’।[২৫] বাহ্যিক আমল বা কার্যাবলীর মানদ-। এ হাদীছ দু’টির মধ্যে দ্বীনের সকল বিষয় অর্থাৎ মৌলিক ও শাখা-প্রশাখা, বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীন সকল কথা বা কাজ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে’।[২৬]

ইমান নববী (রাহিমাহুল্লাহ) আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর হাদীছের উপর মূল্যবান কথা বলেছেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বাণী, ‘যে ব্যক্তি আমাদের শরী‘আতে এমন কিছু সৃষ্টি করল, যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত’। দ্বিতীয় বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আমাদের পক্ষ থেকে স্বীকৃত নয় এমন কোন ‘আমল করল, তা প্রত্যাখ্যাত’। হাদীছদ্বয়ের উল্লেখিত শব্দ ‘আর-রাদ্দুন’ সম্পর্কে আরবগণ বলেন, শব্দটি এখানে ‘মারদূদ’ তথা ‘প্রত্যাখ্যাত’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, যে আমল রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পক্ষ থেকে অনুমোদিত নয় তা বাতিল, প্রত্যাখ্যাত ও অগ্রহণযোগ্য। এ হাদীছটি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি মূলনীতি। এর মাধ্যমে সকল প্রকারের বিদ‘আত, নবাবিষ্কৃত ও বানোয়াট বিষয়াবলীর মূলোৎপাটন করা হয়েছে। তবে আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর বর্ণনা দু’টির প্রথমটিতে ‘মান আহদাছা’ ও দ্বিতীয়টিতে ‘মান ‘আমিলা’ শব্দ এসেছে। এ হাদীছদ্বয়ের মাধ্যমে সকল প্রকার বিদ‘আতকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যথা- কেউ পূর্ব প্রবর্তিত বিদ‘আত অনুযায়ী আমল করল কিন্তু সে নিজে এর প্রবর্তক নয়, তাহলে তাকে দ্বিতীয় হাদীছের অন্তর্ভুক্ত বলা হবে। মোটকথা সকল প্রকার বিদ‘আত চাই সেটা ‘আমল করা হোক বা প্রবর্তন করা হোক, সবই পথভ্রষ্টতার শামিল ও প্রত্যাখ্যাত’।[২৭]

 

 (ইনশাআল্লাহ চলবে)



* নারায়ণপুর, নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর।

[১]. ইজতিমাঊল জুয়ূশিল ‘ইলমিয়্যাহ, ২য় খ-, পৃ. ৩৯; তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, ১ম খ-, পৃ. ৩৬৯; জামিঊল বায়ান আন তা‘বীল আইয়ূল কুরআন, ৭ম খ-, পৃ. ৯৩।

[২]. ইজতিমাউল জুয়ূশিল ইলমিয়্যাহ, ২য় খ-, পৃ. ৩৮।

[৩]. ইজতিমাউল জুয়ূশিল ইলমিয়্যাহ, ২য় খ-, পৃ. ৩৯। (কিঞ্চিত পরিবর্তিত)।

[৪]. আছ-ছাবূনী, আক্বীদাতুস সালফ ওয়া আছহাবুল হাদীছ, পৃ. ১৪৭; ড. ছালেহ ইবনু সা‘দ আস-সুহাইমী, তানবীহিল ঊলিল আবছার ইলা কামালউদ্দীন ওয়ামা ফিল বিদ‘ঈ মিনাল আখত্বার, পৃ. ২৬৪।

[৫]. ইজতিমাউল জুয়ূশিল ইলমিয়্যাহ, ২য় খ-, পৃ. ৩৯-৪০। (কিঞ্চিত পরিবর্তিত)।

[৬]. আল-কামূসুল মুহীত্ব, (عين) ‘আঈন’ অনুচ্ছেদ, (دال) ‘দাল’ পরিচ্ছেদ, পৃ. ৯০৬; লিসানুল আরব, ৮ম খ-, পৃ. ৬; মাজমূঊল ফাতাওয়া লিইবনি তাইমিয়াহ, ৩৫শ খ-, পৃ. ৪১৪।

[৭]. ইবনু ফারেস, মু‘জামুল মাক্বায়ীসি ফিল লুগাহ, ১ম খ-, পৃ. ২০৯।

[৮]. ইমাম শাত্বেবী, আল-ই‘তিছাম, ১ম খ-, পৃ. ৪৯; আর-রাগেব ইছফাহানী, মুফরাদাত আলফাযীল কুরআন, পৃ. ১১১।

[৯]. ইবনু তাইমিয়াহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া, ৪র্থ খ-, পৃ. ১০৭-১০৮।

[১০]. ইবনু তাইমিয়াহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া, ২২শ খ-, পৃ. ৩০৬।

[১১]. ইবনু তাইমিয়াহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া, ৪র্থ খ-, পৃ. ১৯৬।

[১২]. ইবনু তাইমিয়াহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া, ১৮শ খ-, পৃ. ৩৪৬।

[১৩]. ইমাম শাতিবী, আল-ই‘তিছাম, ১ম খ-, পৃ. ৫৩।

[১৪]. আবূ ইসহাক্ব আশ-শাতিবী, আল-ই‘তিছাম (মিসর : আল-মাকতাবাতুত তিজারিয়াতিল কুবরা, তা.বি.), পৃ. ৩৭। 

[১৫]. আল-ই‘তিছাম, ১ম খ-, পৃ. ৫০-৫৬।

[১৬]. প্রাগুক্ত, আল-ই‘তিছাম, ২য় খ-, পৃ. ৫৬৮, ৫৬৯, ৫৭০, ৫৯৪।

[১৭]. জামিঊল উলূম ওয়াল হিকাম, ২য় খ-, পৃ. ১২৮। (খুবই কিঞ্চিত পরিবর্তিত)।

[১৮]. ছহীহ বুখারী, হা/২০১০।

[১৯]. ছহীহ বুখারী, হা/২০১২।

[২০]. জামিঊল ঊলূম ওয়াল হিকাম, ২য় খ-, পৃ. ১২৯।

[২১]. ইমাম শাতিবী, আল-ই‘তিছাম, ২য় খ-, পৃ. ৫১৬।

[২২]. ছহীহ বুখারী, হা/১; ছহীহ মুসলিম, হা/১৯০৭।

[২৩]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮; ছহীহ মুসলিমের বর্ণনা, ‘যে ব্যক্তি আমাদের শরী‘আতে এমন কিছু নতুন সৃষ্টি করল, যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত’, দ্র. : ছহীহ বুখারী, হা/২৬৯৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮।

[২৪]. ছহীহ বুখারী, হা/১; ছহীহ মুসলিম, হা/১৯০৭।

[২৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮।

[২৬]. সা‘দী, হুজ্জাতুল কুলূব আল-আবরার ও কুররাতুল উয়ূন, পৃ. ১০।

[২৭]. ইমাম নববী, শরহু ছহীহ মুসলিম, ১৪শ খ-, পৃ. ২৫৭; কুরতুবী, আল-মাফহুম লিমা আশকালা মিন তালখীছু কিতাবু মুসলিম, ৬ষ্ঠ খ-, পৃ. ১৭১।




সুন্নাতের আলো বিদ‘আতের অন্ধকার - অনুবাদ : হাফীযুর রহমান বিন দিলজার হোসাইন
ইখলাছই পরকালের জীবনতরী - আব্দুল গাফফার মাদানী
সচ্চরিত্রই মানব উন্নতির চাবিকাঠি - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
সালাফী মানহাজের বৈশিষ্ট্য (শেষ কিস্তি) - হাসিবুর রহমান বুখারী
ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা (৪র্থ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আযীযুর রহমান
ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ১১ রাক‘আতের নির্দেশ দিয়েছিলেন - ব্রাদার রাহুল হোসেন (রুহুল আমিন)
রামাযানে দান-ছাদাক্বাহ - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
বিদ‘আত পরিচিতি - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
সালাফী মানহাজ অনুসরণের মর্যাদা - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
শরী‘আত অনুসরণের মূলনীতি (২য় কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
বিদ‘আত পরিচিতি (৯ম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ছয়টি মূলনীতির ব্যাখ্যা (২য় কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির

ফেসবুক পেজ