বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৮ অপরাহ্ন

আধুনিক যুগে দাওয়াতী কাজের পদ্ধতি

-মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী*


(২য় কিস্তি)


হতাশ হওয়া

বদর যুদ্ধে মাত্র ৩১৩ জন নিরস্ত্র ছাহাবী ১০০০ স্বশস্ত্র কাফের যোদ্ধাদের সাথে জয়লাভ করার অন্যতম কারণ ছিল সৎ সাহস বা ঈমানী শক্তি। যেকোন দাঈের প্রথম গুণাবলী হল- ‘আমি পারব’ এই মানসিকতা রাখা। মানুষ এই আশা নিয়েই সর্বদা সামনে এগিয়ে যায়। কখনো জয়ী হয় আবার কখনো পরাজিত হয়। দাওয়াতী ময়দানে অনেক দাঈকে দেখা যায় যে, তারা নিরাশ হয়ে গেছে এই মর্মে যে, তাদের কথা আর মানুষ শুনবে না, মানবে না, গ্রহণ করবে না ইত্যাদি। ফলে সে দাওয়াতী কাজ বন্ধ করে দেয়। আবার এমনও হয় যে, দাঈগণ মনে করেন আমরা বিপদে পড়লে আল্লাহর সাহায্য অবশ্যই আসবে। কিন্ত বিপদ ধারাবাহিকভাবে আসতেই আছে অথচ আল্লাহর সাহায্য আসে না। আল্লাহর প্রত্যক্ষ মদদের ব্যাপারে খুব তাড়াহুড়া করে ফেলে। এজন্য আল্লাহর মদদের ব্যাপারে অথবা সাধারণ মানুষের দাওয়াত গ্রহণের ব্যাপারে মহান আল্লাহ একাধিকবার রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ধৈর্যধারণের জন্য আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, فَاصۡبِرۡ اِنَّ الۡعَاقِبَۃَ لِلۡمُتَّقِیۡنَ ‘আপনি ধৈর্যধারণ করুন। যারা ভয় করে চলে, সন্দেহ নেই যে, তাদের পরিণাম অবশ্যই ভাল’ (সূরা হূদ : ৪৯)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,


وَ لَقَدۡ کُذِّبَتۡ رُسُلٌ مِّنۡ قَبۡلِکَ فَصَبَرُوۡا عَلٰی مَا کُذِّبُوۡا وَ اُوۡذُوۡا حَتّٰۤی اَتٰہُمۡ نَصۡرُنَا


‘আপনার পূর্ববর্তী অনেক নবীকে মিথ্যারোপ করা হয়েছে, তাঁরা এতে ধৈর্যধারণ করেছেন। তাদের কাছে আমার সাহায্য পৌঁছা পর্যন্ত তারা নির্যাতিত হয়েছেন’ (সূরা আল-আন‘আম : ৩৪)।


দীর্ঘদিন দাওয়াতী কাজ করেও ভাল কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি এজন্য অনেকের ভিতরে হতাশা কাজ করে। অথচ রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ছাহাবীরা কাজ করে গেছেন কোন হতাশা ছাড়ায়। খাব্বাব ইবনু আরাত (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,


شَكَوْنَا إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَهْوَ مُتَوَسِّدٌ بُرْدَةً لَهُ فِىْ ظِلِّ الْكَعْبَةِ قُلْنَا لَهُ أَلَا تَسْتَنْصِرُ لَنَا أَلَا تَدْعُو اللهَ لَنَا قَالَ كَانَ الرَّجُلُ فِيْمَنْ قَبْلَكُمْ يُحْفَرُ لَهُ فِى الْأَرْضِ فَيُجْعَلُ فِيْهِ فَيُجَاءُ بِالْمِنْشَارِ فَيُوْضَعُ عَلَى رَأْسِهِ فَيُشَقُّ بِاثْنَتَيْنِ وَمَا يَصُدُّهُ ذَلِكَ عَنْ دِيْنِهِ وَيُمْشَطُ بِأَمْشَاطِ الْحَدِيْدِ مَا دُوْنَ لَحْمِهِ مِنْ عَظْمٍ أَوْ عَصَبٍ وَمَا يَصُدُّهُ ذَلِكَ عَنْ دِيْنِهِ وَاللهِ لَيُتِمَّنَّ هَذَا الْأَمْرَ حَتَّى يَسِيْرَ الرَّاكِبُ مِنْ صَنْعَاءَ إِلَى حَضْرَمَوْتَ لَا يَخَافُ إِلَّا اللهَ أَوِ الذِّئْبَ عَلَى غَنَمِهِ وَلَكِنَّكُمْ تَسْتَعْجِلُوْنَ


‘আমরা নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট অভিযোগ করলাম। তখন তিনি তাঁর চাদরকে বালিশ বানিয়ে কা‘বা শরীফের ছায়ায় বিশ্রাম করছিলেন। আমরা তাঁকে বললাম, আপনি কি আমাদের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করবেন না? আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহ‌র নিকট দু‘আ করবেন না? তিনি বললেন, তোমাদের আগের লোকদের অবস্থা ছিল এই যে, তাদের জন্য মাটিতে গর্ত খুঁড়া হত এবং ঐ গর্তে তাকে পোতে রেখে করাত দিয়ে তার মাথা দ্বিখ-িত করা হত। এটা তাদেরকে দ্বীন হতে টলাতে পারত না। লোহার চিরুনী দিয়ে শরীরের হাড় গোশত ও শিরা-উপশিরা সব কিছু ছিন্নভিন্ন করে দিত। এটা তাদেরকে দ্বীন হতে সরাতে পারেনি। আল্লাহর কসম! আল্লাহ এ দ্বীনকে অবশ্যই পূর্ণতা দান করবেন। তখন একজন উষ্ট্রারোহী ছান‘আ হতে হাযরামাউত পর্যন্ত সফর করবে, অথচ সে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকেও ভয় করবে না। অথবা তার মেষপালের জন্য নেকড়ে বাঘের ভয়ও করবে না। কিন্তু তোমরা তাড়াহুড়া করছ’।[১]


দাঈদের বুঝা উচিত যে, তাদের হতাশ হলে চলবে না। নবীগণ, ছাহাবীগণ কিভাবে দিনাতিপাত করেছেন। ছাবাহীগণ রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যু পরবর্তী সময় কত কঠিন দিন পার করেছেন তা বর্ণনাতীত। সুতরাং ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। যে যে কাজের দায়িত্বশীল তা যথাযথভাবে পালন করুন, যাতে কোন ধরনের হতাশা পেয়ে না বসে এবং মানসিক দুর্বলতাও যেন গ্রাস না করে। ঈমানী শক্তিকে বলিয়ান করে দাওয়াতী ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। আল্লাহ সহায় হবেন ইনশাআল্লাহ।


নিজে আমল না করে অন্যকে আদেশ দেয়া

দাঈদের আরো একটি অন্যতম রোগ হল- কোন কাজ নিজে না করে অন্যকে আদেশ দেয়। অথচ আল্লাহর কাছে এটা মহা অপরাধ। শরী‘আতে এ ধরণের আলেমদের জন্য ভয়াবহ শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,


یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لِمَ تَقُوۡلُوۡنَ مَا لَا تَفۡعَلُوۡنَ- کَبُرَ مَقۡتًا عِنۡدَ اللّٰہِ اَنۡ تَقُوۡلُوۡا مَا لَا تَفۡعَلُوۡنَ


‘হে মুমিনগণ! তোমরা যা কর না, তা কেন বল? তোমরা যা কর না তা বলা আল্লাহর কাছে খুবই অসন্তোষজনক’ (সূরা আছ-ছফফ : ২-৩)। উসামা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন,


يُجَاءُ بِالرَّجُلِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُلْقَى فِى النَّارِ فَتَنْدَلِقُ أَقْتَابُهُ فِى النَّارِ فَيَدُوْرُ كَمَا يَدُوْرُ الْحِمَارُ بِرَحَاهُ فَيَجْتَمِعُ أَهْلُ النَّارِ عَلَيْهِ فَيَقُوْلُوْنَ أَىْ فُلَانُ مَا شَأْنُكَ أَلَيْسَ كُنْتَ تَأْمُرُنَا بِالْمَعْرُوْفِ وَتَنْهَى عَنِ الْمُنْكَرِ قَالَ كُنْتُ آمُرُكُمْ بِالْمَعْرُوْفِ وَلَا آتِيْهِ وَأَنْهَاكُمْ عَنِ الْمُنْكَرِ وَآتِيهِ


‘ক্বিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আনা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তখন আগুনে পুড়ে তার নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যাবে। এ সময় সে ঘুরতে থাকবে যেমন গাধা তার চাকা নিয়ে তার চারপাশে ঘুরতে থাকে। তখন জাহান্নামবাসীরা তার নিকট একত্রিত হয়ে তাকে বলবে, হে অমুক! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি আমাদের সৎ কাজের আদেশ করতে আর অন্যায় কাজ হতে নিষেধ করতে? সে বলবে, আমি তোমাদেরকে সৎ কাজে আদেশ করতাম বটে, কিন্তু আমি তা করতাম না। আর আমি তোমাদেরকে অন্যায় কাজ হতে নিষেধ করতাম, অথচ আমিই তা করতাম’।[২]


দাঈদের সর্বদা আল্লাহকে স্মরণ করার জন্য তাকীদ প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, اِذۡہَبۡ اَنۡتَ وَ اَخُوۡکَ بِاٰیٰتِیۡ وَ لَا تَنِیَا فِیۡ ذِکۡرِیۡ ‘(হে মূসা!) আমার নিদর্শন নিয়ে তুমি ও তোমার ভাই (ফেরাঊনের কাছে) যাও এবং আমাকে স্মরণে অলসতা কর না’ (সূরা ত্বোহা : ৪২)। یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا لَقِیۡتُمۡ فِئَۃً فَاثۡبُتُوۡا وَ اذۡکُرُوا اللّٰہَ کَثِیۡرًا لَّعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা যখন কোন বাহিনীর সাথে সংঘাতে লিপ্ত হও, তখন সুদৃঢ় থাক এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর’ (সূরা আল-আনফাল : ৪৫)। দাঈগণ সতর্ক থাকবেন যে, যখন যে বিষয়ে সে মানুষকে আহ্বান করবে তা নিজের মাঝে আছে কি না? উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, কোন দাঈ জামা‘আতে ছালাতের জন্য মানুষকে হাদীছের বাণী উচ্চারণ করে সতর্ক করেন। অথচ দাঈ নিজেই জামা‘আতে ছালাত আদায় করেন না, তাহলে তার দাওয়াত মানুষের মাঝে কোন প্রভাব পড়বে না। আমরা জানি কোন দাঈ যদি দাড়ি না রাখে, তাহলে তার কাছে অন্তত দাড়ির বক্তব্য শোনা যাবে না। তার মাঝে যদি প্রকাশ্যে কোন হারাম অভ্যাস থাকে, তাহলে সে কখনো সেই হারাম থেকে মানুষকে বিরত থাকার কথা বলতে পারবে না। তাই দাঈদের দাওয়াত দেয়ার আগে তা নিজের মাঝে বাস্তবায়ন করতে হবে।


দাঈদের গুণাবলী

প্রকৃত দাঈ তিনিই, যিনি নিজেকে আল্লাহর কাছে জান্নাতের বিনিময়ে বিক্রয় করে দেন (সূরা আত-তওবাহ : ১১১)। দাঈদের একটি বিষয় স্মরণ রাখা উচিত যে, মহান আল্লাহ নিজে দাওয়াত দিয়েছেন। অতঃপর রাসূলগণ দাওয়াত দিয়েছেন। অর্থাৎ যে কাজ নবী-রাসূলগণ করেছেন ঠিক সে কাজই সে করতে যাচ্ছে। সুতরাং কাজের ক্ষেত্রে তাঁদের মাঝে যে আমানত বা দায়িত্ববোধ ছিল তা দাঈদের মধ্যেও থাকা উচিত। দাঈদের গুণাবলী নিম্নরূপ :


ইখলাছ বা একনিষ্ঠতা

একজন মুমিন যত আমলই করুক না কেন তাতে যদি ইখলাছ না থাকে, তাহলে তা একবারেই বাতিল। মহান আল্লাহ বলেন, وَ قَدِمۡنَاۤ اِلٰی مَا عَمِلُوۡا مِنۡ عَمَلٍ فَجَعَلۡنٰہُ ہَبَآءً مَّنۡثُوۡرًا ‘আমরা তাদের কৃতকর্মের প্রতি মনোনিবেশ করব, অতঃপর সেগুলোকে ধূলিকণারূপে করে দেব’ (সূরা আল-ফুরক্বান : ২৪)। তাছাড়াও বলা হয় أعز الشيئ فى الدنيا الإخلاص ‘দুনিয়াতে সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস হল ইখলাছ’। মূলত ইখলাছ হল সকল ধরনের কাজের চাবিকাঠি। ইখলাছ বিহীন দাওয়াতী কাজ সহ কোন আমলই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই দাওয়াতী কাজের ক্ষেত্রে ইখলাছ হতে হবে পরিপূর্ণ। যারা দুনিয়া অন্বেষণ করে তারা যেন মরীচিকা খুঁজে। সে দূর থেকে দেখে পানযোগ্য পানি। কিন্তু নিকটে গিয়ে দেখে ধারণা তাকে ফাঁকি দিয়েছে, মৃত্যু ঘনিয়ে এসেছে, তার আশা বাকীই রয়ে গেছে। অন্যদিকে তৃষ্ণাও চরমে উঠেছে। অতঃপর সে পুরো জীবনে অনুতপ্ত হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অতএব ইখলাছই পরকালে মুক্তির একমাত্র উপায়। যেমন, জনৈক ছাহাবী কেবল পরিপূর্ণ ইখলাছের সাথে জিহাদ করেন অতঃপর তার নিয়ত অনুযায়ী আল্লাহ তাকে কবুলও করেন। যেমন, ‘একজন গ্রাম্য ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে ইসলাম গ্রহণ করলে গণীমত হিসাবে সে কিছু সম্পদ পায়। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে এসে তিনি বলেন, আমি তো এগুলো নেয়ার জন্য আসিনি; আমি এসেছি ইসলামের জন্য যুদ্ধ করতে করতে আমার গলা বরাবর যেন তীর লেগে শহীদ হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে আশ্বস্ত করে বললেন, তোমার নিয়ত যদি একনিষ্ঠ হয়, তাহলে তোমার সে আশা সত্য হবে। কিছুক্ষণ পরে ছাহাবী শত্রু নিধনের জন্য দৌড়ে গেল এবং ঠিক ঐভাবেই শহীদ হল যেভাবে সে আশা করেছিল। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দেখে বললেন, তার নিয়ত সত্যই পূর্ণ হয়েছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় জুব্বা দ্বারা কাফন দিলেন এবং নিজেই জানাযার ছালাত আদায় করলেন। ছালাতের মাঝে হৃদয়স্পর্শী দু‘আ করলেন’।[৩] অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ‘সেই ব্যক্তিই আমার শাফা‘আত পেয়ে ধন্য হবে, যে অন্তর থেকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে’।[৪]


আত্মবিশ্বাসী হওয়া

বিশ্বাস মানুষকে অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। মানুষ তার চলার পথে নানাভাবে শেখে। অভিজ্ঞতা দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, বাবা-মা, ভাই-বোন, শিক্ষক, বন্ধু, প্রকৃতি সবকিছু থেকেই শিক্ষা নিলেও সবচেয়ে বড় শিক্ষক সে নিজে। অর্থাৎ শেখার আত্মবিশ্বাস যদি নিজের মধ্যে না থাকে, তাহলে কেউ তাকে শেখাতে পারবে না। সফলতা নিয়ে ভাবনার প্রয়োজন নেই। কারণ সফলতা সবটুকু করতে পারার নাম নয়; বরং সাধ্যমত চেষ্টা করার নাম সফলতা। যা নবী-রাসূলদের জিবনীতে দেখা যায়। হক্ব-বাতিলের প্রথম দ্বন্দ্ব বদর যুদ্ধের কথাই যদি ধরা যায়, মাত্র ৩১৩ জন ছাহাবী এক হাজার স্বশস্ত্র যোদ্ধার সাথে কিভাবে জয়ী হতে পারে! ৭০ জন যোদ্ধাকে হত্যা করা এবং ৭০ জনকে আটক করা। এটা কিভাবে সম্ভব? উত্তর একটিই তাদের আত্মবিশ্বাস ছিল প্রবল, মানসিক শক্তি ছিল অনেক বেশী, যা কাফেরদের মাঝে ছিল না। বরং এর বিপরীতে ইবনুল ক্বাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘দুনিয়াতে যারা অলস বা দুর্বল মানসিকতার অথবা যাদের আত্মবিশ্বাস নেই, মানুষের মধ্যে তারাই সবচেয়ে বোকা, তারা কোন কাজেরই নয়। তারা যদি বেঁচে থাকে, মানুষ এদের মূল্যায়ন করে না, মারা গেলে অল্প দিনেই হারিয়ে যায়- যেন দেশ ও জাতির কল্যাণ হল। তাদের মৃত্যুতে আসমানবাসীর কেউ কাঁদে না এমনকি দুনিয়ার বোকারাও আফসোস করে না’।[৫]


দাঈদের অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। তা না হলে তারা অল্পতেই ময়দান থেকে হারিয়ে যাবে। কোনভাবেই হীনবল হওয়া যাবে না বা আত্মবিশ্বাস হারানো যাবে না। আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, اَلْمُؤْمِن الْقَوِيّ خَيْر وَأَحَبُّ إِلَى اللهِ مِنْ الْمُؤْمِن الضَّعِيْفِ وَفِيْ كُلّ خَيْرٍ ‘শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিনের চাইতে উত্তম এবং আল্লাহর নিকট প্রিয়। যদিও উভয়ের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে’।[৬] উক্ত হাদীছে ‘শক্তিশালী মুমিন’ বলতে ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘দুনিয়াতে আত্মবিশ্বাসী, আখেরাতের ব্যাপারে সচেতন, জিহাদের মাঠে শত্রুদের মোকাবেলায় অগ্রগামী এবং জিহাদের ময়দানে অগ্রভাগে যারা থাকে তারাই শক্তিশালী মুমিন’।[৭] তাই দাওয়াতী ময়দানে অনেক বেশী আত্মবিশ্বাস অর্জন করুন।


সাধারণ মানুষের সাথে মেশা

দাওয়াতী কাজ করতে হবে মানুষের সাথে। অর্থাৎ যাকে দাওয়াত দেয়া হবে তিনিও মানুষ। এমন কোন ভাষা ব্যবহার করা যাবে না, যা সে বুঝে না বা এমন কোন ভঙ্গিমাও করা যাবে না, যা তাদের কাছে পরিচিত নয়। অতি জ্ঞান জাহির করা কিংবা নিজের বিজ্ঞতা প্রমাণ করা কখনই সুন্দর দাঈদের বৈশিষ্ট্য নয়। দাওয়াতী ময়দানে বিভিন্ন ধরণের মানুষের মুখোমুখি হতে হবে। কেউ অল্পতেই রেগে যাবে, তাদের ভাষায় গালিগালাজ করবে, বিভিন্নভাবে অপমান-অপদস্ত করবে এ সব কিছুই হজম করার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। একদিন মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উস্তাদ শায়খ মুহাম্মাদ বিন হাদী বিন আলী আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, শায়খ! অনেক স্থানে কট্টোর বিদ‘আতী, কবরপূজারী এবং বেনামাযী আছে। অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও দাঈদেরকে তাদের সাথে বসবাস করতে হয়। সুতরাং তারা দাঈদের নিকট থেকে কেমন ব্যবহার আশা করতে পারে? উত্তরে তিনি বললেন, তুমি তো বিদ‘আতী কবর পূজারীদের সাথে বসবাস করছ, যারা নামে হলেও মুসলিম। কিন্তু আমাদের নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাদের সাথে বসবাস করতেন? তিনি যাদের সাথে বসবাস করতেন, তারা তো মুসলিমই নয়। মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের সাথে কিভাবে চলাফেরা করেছেন বা কেমন আচরণ প্রদর্শন করেছেন সেটা দেখ। ঐটাই আমাদের আদর্শ এবং তোমার প্রশ্নের উত্তর।


সুধী পাঠক! মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আদর্শ বুকে ধারণ করে অন্যের সামনে দাওয়াত নিয়ে যাচ্ছি তাহলে সোনালী যুগের সেই জান্নাত পাগল সাহাবীরা কিভাবে অন্যের সাথে চলাফেরা করতেন মেলামেশা করতেন। যে অমুসলিমদের মধ্যে নিজের বাবা মা আত্মীয় স্বজন পর্যন্ত ছিল। হাদীছে এসেছে,


عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ঃ الْمُؤْمِنُ الَّذِيْ يُخَالِطُ النَّاسَ وَيَصْبِرُ عَلَى أَذَاهُمْ أَعْظَمُ أَجْرًا مِنَ الْمُؤْمِنِ الَّذِي لَا يُخَالِطُ النَّاسَ وَلَا يَصْبِرُ عَلَى أَذَاهُمْ


ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে মুমিন ব্যক্তি মানুষের সাথে মেলামেশা করে এবং তাদের যন্ত্রণায় ধৈর্যধারণ করে সে এমন মুমিন ব্যক্তির তুলনায় অধিক ছওয়াবের অধিকারী হয়, যে জনগণের সাথে মেলামেশা করে না এবং তাদের যন্ত্রণায় ধৈর্যধারণও করে না।[৮] গরীবের ক্ষুধা বুঝার জন্য যেমন ছিয়াম রাখা উচিত, অনুরূপভাবে অন্যের কষ্ট বুঝার জন্য তাদের পাশে যাওয়া উচিত। যা দাঈদের বিশেষ একটি গুণ।


ধৈর্যধারণ করা বা সংযমী হওয়া

দাঈদের প্রত্যেকটা গুণের অধিকারী হওয়া আবশ্যক হলেও ধৈর্যধারণ থাকাটা অপরিহার্য। যাকে দাওয়াতী কাজের মেরুদ-ও বলা যেতে পারে। দাওয়াতী ময়দানে টিকে থাকার অন্যতম রণকৌশল হল ধৈর্যধারণ। সামাজিক বা ধর্মীয় যেকোন কাজের ব্যাপারে যাই হোক না কেন বিশেষ করে দাওয়াতী ময়দানে ধৈর্যের বিকল্প ভাবা অকল্পনীয়। মহান আল্লাহ নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অনেক স্থানেই ধৈর্যের ব্যাপারে তাকীদ করেছেন। আল্লাহ বলেন,


وَ اِنۡ کَانَ کَبُرَ عَلَیۡکَ اِعۡرَاضُہُمۡ فَاِنِ اسۡتَطَعۡتَ اَنۡ تَبۡتَغِیَ نَفَقًا فِی الۡاَرۡضِ اَوۡ سُلَّمًا فِی السَّمَآءِ فَتَاۡتِیَہُمۡ بِاٰیَۃٍ ؕ وَ لَوۡ شَآءَ اللّٰہُ لَجَمَعَہُمۡ عَلَی الۡہُدٰی فَلَا تَکُوۡنَنَّ مِنَ الۡجٰہِلِیۡنَ.


‘আর যদি তাদের বিমুখতা আপনার পক্ষে কষ্টকর হয়, তবে আপনি যদি ভুলে কোন সুড়ঙ্গ অথবা আকাশে কোন সিঁড়ি অনুসন্ধান করতে সমর্থ হন, অতঃপর তাদের কাছে কোন একটি মু‘জিযা আনতে পারেন, নিয়ে আসুন’ (সূরা আল-আন‘আম : ৩৫)। মূলত এ আয়াতে ধৈর্যের ব্যাপারে আল্লাহ তাঁর নবীকে সতর্ক করেছেন।[৯] অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন, فَاصۡبِرۡ صَبۡرًا جَمِیۡلًا ‘অতএব, আপনি উত্তম ছবর করুন’ (সূরা আল-মা‘আরিজ : ৫)।


ছবরের ফলাফল কল্যাণ ছাড়া কোন অকল্যাণ আসে না। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘পবিত্র কুরআনে যত বিষয় আলোচিত হয়েছে তার মধ্যে ধৈর্যের বিষয়কে আল্লাহ বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন। কুরআনে প্রায় ৯০ স্থানে ছবরের কথা বলা হয়েছে। এতে বুঝা যায় দাঈদের ছবর কতটুকু প্রয়োজন’।[১০] লুক্বমান (রাহিমাহুল্লাহ) ছেলেকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিলেন, দাওয়াতী ময়দানে মানুষকে ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ হতে নিষেধ করতে গিয়ে কোন সময় বিপদ আসলে ধৈর্যধারণ করতে হবে। কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,


یٰبُنَیَّ اَقِمِ الصَّلٰوۃَ وَ اۡمُرۡ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ انۡہَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ اصۡبِرۡ عَلٰی مَاۤ اَصَابَکَ اِنَّ ذٰلِکَ مِنۡ عَزۡمِ الۡاُمُوۡرِ


‘হে বৎস! ছালাত কায়েম কর, সৎকাজের আদেশ দাও, মন্দকাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে ধৈর্যধারণ কর। নিশ্চয় এটা সাহসিকতার কাজ’ (সূরা লুক্বমান : ১৭)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,


وَ اصۡبِرۡ وَ مَا صَبۡرُکَ اِلَّا بِاللّٰہِ وَ لَا تَحۡزَنۡ عَلَیۡہِمۡ وَ لَا تَکُ فِیۡ ضَیۡقٍ مِّمَّا یَمۡکُرُوۡنَ


‘আপনি ধৈর্যধারণ করুন, আপনার ধৈর্য আল্লাহর ব্যতীত অন্য কারো জন্য নয়, তাদের জন্য দুঃখ করবেন না এবং তাদের চক্রান্তের কারণে মন ছোট করবেন না’ (সূরা আন-নাহল : ১২৭)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,


فَبِمَا رَحۡمَۃٍ مِّنَ اللّٰہِ لِنۡتَ لَہُمۡ وَ لَوۡ کُنۡتَ فَظًّا غَلِیۡظَ الۡقَلۡبِ لَانۡفَضُّوۡا مِنۡ حَوۡلِکَ فَاعۡفُ عَنۡہُمۡ وَ اسۡتَغۡفِرۡ لَہُمۡ وَ شَاوِرۡہُمۡ فِی الۡاَمۡرِ فَاِذَا عَزَمۡتَ فَتَوَکَّلۡ عَلَی اللّٰہِ اِنَّ اللّٰہَ یُحِبُّ الۡمُتَوَکِّلِیۡنَ


‘আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন পক্ষান্তরে আপনি যদি রাগ ও কঠিন হৃদয় হতেন, তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। কাজেই আপনি তাদের ক্ষমা করুন এবং কাজে কর্মে তাদের পরামর্শ করুন। অতঃপর যখন কোন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহ তা‘আলার উপর ভরসা করুন। আল্লাহ ভরসাকারীদের ভালবাসেন’ (সূরা আলে ‘ইমরান : ১৫৯)। উক্ত আয়াতে বর্ণিত সবগুলোই বিষয়ই ধৈর্যের সাথে সম্পৃক্ত।


ক্ষমা করা

দাঈকে ক্ষমা করে দেয়ার মত মহান গুণের অধিকারী হতে হবে। এতে শ্রোতার মনের বিদ্বেষ ভাব দূরীভূত হয়ে দাঈর সাথে গড়ে উঠবে এক অপূর্ব ভালবাসা। এদিকে ইঙ্গিত করেই মহান আল্লাহ বলেন,


وَ لَا تَسۡتَوِی الۡحَسَنَۃُ وَ لَا السَّیِّئَۃُ اِدۡفَعۡ بِالَّتِیۡ ہِیَ اَحۡسَنُ فَاِذَا الَّذِیۡ بَیۡنَکَ وَ بَیۡنَہٗ عَدَاوَۃٌ کَاَنَّہٗ وَلِیٌّ حَمِیۡمٌ.


‘ভাল ও মন্দ সমান নয়। জওয়াবে তাই বলুন যা উৎকৃষ্ট। তখন দেখবেন আপনার সাথে যে ব্যক্তির শত্রুতা রয়েছে, সে যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে গেছে’ (সূরা হা-মীম সিজদা : ৩৪)।


তাদের জন্য দু‘আ করা

এটি একটি সম্মানজনক ব্যতিক্রমধর্মী কৌশল। দাওয়াতের বিষয়টি শুধু আমার পক্ষ থেকে তা নয়; বরং আল্লাহর কাছে তার হেদায়াতের জন্য দু‘আ করা। আমরা জানি হেদায়াতের একমাত্র মালিক হলেন মহান আল্লাহ। আমরা যতই পীড়াপীড়ি করি না কেন আল্লাহ না চাইলে হেদায়াত সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ বলেন, اِنَّکَ لَا تَہۡدِیۡ مَنۡ اَحۡبَبۡتَ وَ لٰکِنَّ اللّٰہَ یَہۡدِیۡ مَنۡ یَّشَآءُ وَ ہُوَ اَعۡلَمُ بِالۡمُہۡتَدِیۡنَ ‘আপনি যাকে ভালবাসেন ইচ্ছা করলেই তাকে সৎপথে আনতে পারবেন না। তবে আল্লাহই যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনয়ন করেন এবং তিনিই ভাল জানেন সৎপথ অনুসরণকারীদেরকে’ (সূরা আল-ক্বাছাছ : ৫৬)। দাঈ যতই চেষ্টা করুক না কেন, আল্লাহ না চাইলে সে সঠিক পথ পাবে না। তাই শ্রোতার জন্য দু‘আ করাও দাঈদের একটি ব্যতিক্রমধর্মী কৌশল। এতে করে তার প্রতি ব্যক্তিগত মুহাব্বত তৈরি হয়, তার প্রতি শুভাকাক্সক্ষী হয়। কারণ মহান আল্লাহ রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার কথা উল্লেখ করেছেন (সূরা মুহাম্মাদ : ১৯; সূরা আলে ‘ইমরান : ১৫৯)।


আল্লাহর উপর ভরসা করা

কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহর উপর ভরসা করে, তাহলে যেকোন কাজেই সে সফল হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহর উপর ভরসা বলতে সর্বদা আল্লাহকে স্মরণ করা। মহান আল্লাহ যখন মূসা ও হারূন (আলাইহিস সালাম)-কে ফেরাঊনের কাছে প্রেরণ করেন, তখন আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছিলেন সর্বদা আল্লাহকে স্মরণ করার জন্য এবং কোনভাবেই আল্লাহকে যেন ভুলে না যায় (সূরা ত্বোহা : ৪২)। কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে, কোন কাজ শুরু করার ব্যাপারে বা নতুন কোন স্থানে যাত্রার প্রাক্কালে অবশ্যই দাঈদের আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে। বিভিন্ন হাদীছের মাধ্যমে এই শিক্ষা মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহর উপর ভরসা করেই কম সংখ্যক হলেও মুসলিমরা সর্বদা বিজয়ী হয়েছেন। নবীগণ সফলতা লাভ করেছেন এই আল্লাহ ভরসা দিয়েই। বিভিন্ন যুদ্ধে মুসলিম মুজাহিদদের মূল অস্ত্র ছিল আল্লাহ ভরসা। দাওয়াতী ময়দানও একটি জিহাদী ময়দান তাই সেখানেও অবশ্যই আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে।


নম্রতা

দাঈদের অন্যতম গুণবালী হল- ন¤্রতা, বিনয়ী হওয়া, নরম স্বরে কথা বলা, অন্যকে প্রাধান্য দেয়া। বর্তমানে অধিকাংশ দাঈর মধ্যে ন¤্রতার অভাব। বলা হয় পৃথিবীতে সব জিনিসের ওযন আছে এমনকি বাতাসেরও ওযন আছে। অনুরূপ ইলমেরও ওযন আছে। ইলমের ওযনের ভারে যাদের মাথা অন্য আলেমের সামনে নীচু থাকবে বুঝতে হবে তার মাঝে সত্যিই ইলম আছে। কথা, কর্ম, কৌশল, বক্তৃতা, লেনদেন সর্বক্ষেত্রে অন্যকে প্রাধান্য দেয়া দাঈদের অন্যতম গুণ। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সর্বদা বিনয়ী হতে বলেছেন। মহান আল্লাহ বলেন,


لَا تَمُدَّنَّ عَیۡنَیۡکَ اِلٰی مَا مَتَّعۡنَا بِہٖۤ اَزۡوَاجًا مِّنۡہُمۡ وَ لَا تَحۡزَنۡ عَلَیۡہِمۡ وَ اخۡفِضۡ جَنَاحَکَ لِلۡمُؤۡمِنِیۡنَ


‘আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে ভোগ বিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি তার প্রতি আপনি কখনও আপনার চক্ষুদ্বয় প্রসারিত করবেন না; তাদের অবস্থার জন্য আপনি চিন্তা করবেন না; আপনি মুমিনদের জন্য আপনার বাহুকে অবনমিত করুন’ (সূরা আল-হিজর : ৮৮)।


(চলবে ইনশাআল্লাহ)


* এম.ফিল গবেষক, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।


[১]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৬১২; মিশকাত, হা/৫৮৫৮।


[২]. ছহীহ বুখারী, হা/৩২৬৭; মিশকাত, হা/৫১৩৯।


[৩]. নাসাঈ, হা/১৯৫৩, সনদ ছহীহ।


[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/৯৯।


[৫]. মিফতাহ দার সা‘আদাহ, পৃ. ১১০।


[৬]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৬৪।


[৭]. শারহু নববী, ৯ম খণ্ড, পৃ. ১১৯।


[৮]. ইবনু মাজাহ, হা/৪০৩২, সনদ ছহীহ।


[৯]. তাফসীরে ত্বাবারী, ১১তম খণ্ড, পৃ. ৩৩৭।


[১০]. দারস সাফর হাওয়ালী, ৪৪তম খণ্ড, পৃ. ২।





প্রসঙ্গসমূহ »: সমাজ-সংস্কার দাওয়াত
ইসলামী পুনর্জাগরণের প্রতিবন্ধকতা ও তার সমাধান - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
জঙ্গিবাদ বনাম ইসলাম (৪র্থ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমন সংশয় নিরসন (১০ম কিস্তি) - হাসিবুর রহমান বুখারী
জঙ্গিবাদ বনাম ইসলাম (৩য় কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
ইখলাছ বিহীন আমল ও তার পরিণতি - আব্দুল গাফফার মাদানী
আল-কুরআন এক জীবন্ত মু‘জিযা - আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইউনুস
জীবন ব্যবস্থা হিসাবে আল-কুরআনের মূল্যায়ন - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
পরবর্তীদের তুলনায় সালাফদের ইলমী শ্রেষ্ঠত্ব (৪র্থ কিস্তি) - অনুবাদ : আযহার বিন আব্দুল মান্নান
ইসলামী তাবলীগ বনাম ইলিয়াসী তাবলীগ (৪র্থ কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আযীযুর রহমান
সুন্নাতের আলো বিদ‘আতের অন্ধকার (৪র্থ কিস্তি) - অনুবাদ : হাফীযুর রহমান বিন দিলজার হোসাইন
সচ্চরিত্রই মানব উন্নতির চাবিকাঠি - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর

ফেসবুক পেজ