ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় যুবসমাজ
- ড. মেসবাহুল ইসলাম বিন মাহতাবুদ্দীন
(২য় কিস্তি)
২. ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষের জন্মসূত্রে প্রাপ্ত ফিতরাতকে জাগিয়ে তুলার কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فِطۡرَتَ اللّٰہِ الَّتِیۡ فَطَرَ النَّاسَ عَلَیۡہَا ؕ لَا تَبۡدِیۡلَ لِخَلۡقِ اللّٰہِ ‘এটা আল্লাহর দেয়া ফিতরাত স্বভাবগত প্রকৃতি, যার উপর তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই (সূরা আর-রূম: ৩০)। চোখের দৃষ্টিশক্তি কার্যকর করার জন্য যেমন আলোর প্রয়োজন, তেমনি মানুষের জন্মগত ফিতরাতকে ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য দাওয়াতের প্রয়োজন। অন্যভাবে বলা যায়, মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যেমন খাদ্যের প্রয়োজন, তেমনি জীবনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য আল্লাহ প্রদত্ত হিদায়াত প্রয়োজন। আল্লাহ প্রদত্ত এ হিদায়াত প্রচার-প্রসারের কার্যক্রমকেই বলা হয় ইসলামী প্রচার ও প্রতিষ্ঠা। ফলে পৃথিবীতে সুষ্ঠুভাবে জীবন যাপন করার জন্য ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠা একটি অপরিহার্য বিষয়।
পৃথিবীর অগণিত মানুষ আল্লাহর পরিচয় লাভের জন্য উন্মুখ। আল্লাহর পরিচয় ও মানুষ সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে নিম্নের আয়াতেও স্পষ্ট হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, الَّذِیۡ خَلَقَ الۡمَوۡتَ وَ الۡحَیٰوۃَ لِیَبۡلُوَکُمۡ اَیُّکُمۡ اَحۡسَنُ عَمَلًا ؕ وَ ہُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡغَفُوۡرُ ۙ ‘যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু এবং জীবন তোমাদের এ পরীক্ষা করার জন্য যে, তোমাদের কাজ কর্মে কে উত্তম আমলকারী। আর তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল’ (সূরা আল-মুলক : ২)। যুগে যুগে দার্শনিকগণ এ বিষয়টি নিয়ে নানারূপ বিতর্কে লিপ্ত হয়েছেন। কেউ সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করেছে, কেউ মহান স্রষ্টাকে মানবীয় চরিত্রের রূপ দিয়েছে, আবার কেউ আল্লাহকে সঠিক অর্থে মেনে নিয়েছে, কিন্তু তার সত্তা এবং গুণাবলী সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে নিজে বিপথগামী হয়েছে, অন্যদেরকেও বিপথগামী করেছে। মূলত স্রষ্টা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভের উপাদান হচ্ছে অহীর জ্ঞান। আল-কুরআনে মহান আল্লাহর সত্তা এবং গুণাবলী সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। আল্লাহর সত্তা এবং গুণাবলীতে সঠিক বিশ্বাসকেই তাওহীদ বলা হয়। আল্লাহর অস্তিত্ব এবং গুণাবলী সংক্রান্ত যাবতীয় বিভ্রান্তি অপনোদনের মাধ্যমে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠা প্রধান দায়িত্ব। এ জন্য পৃথিবীর বিশাল অঙ্গনে আল্লাহর সঠিক পরিচয় তুলে ধরার ক্ষেত্রে ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব অপরিসীম।
সামাজিক অপরাধ যেমন সূদ, ঘুষ, দুর্নীতি, অপহরণ, লুণ্ঠন, সন্ত্রাস, ছিনতাই, চোরাকারবার, মাদকাসক্তি, শিরক, বিদ‘আত, কুসংস্কার ও অপসংস্কৃতি দূর করে একটি ইসলামী সমাজ গঠনের জন্য ইসলামী দাওয়াতের গুরুত্ব অপরিসীম। এছাড়া কল্যাণকর জীবন লাভের জন্য একটি নির্ভুল দিক-নির্দেশনা বা জীবন বিধান প্রয়োজন। এ প্রয়োজনের তাকীদেই মানুষ নিজ নিজ প্রজ্ঞা এবং বিবেক বুদ্ধির সাহায্যে জীবন বিধান রচনা করে। কিন্তু বাস্তবতার আলোকে দেখা যায় যে, মানবরচিত জীবন বিধান তাদের জীবন সমস্যার স্থায়ী কোন সমাধান দিতে পারেনি, বরং ক্ষেত্র বিশেষে কিছু সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে অসংখ্য সমস্যার জন্ম দিয়েছে। ফলে সে বিধান অচল ও অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এর কারণ সঠিক দিক-নির্দেশনা প্রদানের জন্য মানবজীবনের ভূত-ভবিষ্যত সম্পর্কে যে সীমাহীন প্রজ্ঞা প্রয়োজন সেটি মানুষের নেই। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ مَاۤ اُوۡتِیۡتُمۡ مِّنَ الۡعِلۡمِ اِلَّا قَلِیۡلًا
‘তোমাদেরকে অতি সামান্যই জ্ঞান দেয়া হয়েছে’ (সূরা বানী ইসরাঈল: ৮৫)।
মানুষের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা ও সংকীর্ণতা হেতু মানব জীবনে সঠিক দিক-নির্দেশনা লাভে ইসলামী দাওয়াত একান্ত যরূরী। মানুষের উদ্ভাবিত আইন দ্বারা কোন এক শ্রেণিস্বার্থ কোন না কোন পর্যায়ে কাজ করে। তাই এ সমস্ত বিধান ও আইন এমন সত্তা কর্তৃক হওয়া প্রয়োজন, যিনি মানবীয় ঐ সকল স্বার্থ দ্ব›েদ্ধর ঊর্ধ্বে। আর তিনিই হতে পারেন সর্ব বিচারে স্থান-কাল-পাত্র ভেদে সকল মানুষের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা। আর তাঁরই বিধান ইসলাম। যিনি সৃষ্টিকর্তা তিনিই ভালভাবে জানেন তাঁর সৃষ্টি মানুষের জন্য সবচেয়ে কল্যাণকর কী কী হতে পারে। আর আল্লাহ তা‘আলাও বলেছেন, اَلَا یَعۡلَمُ مَنۡ خَلَقَ ؕ وَ ہُوَ اللَّطِیۡفُ الۡخَبِیۡرُ ‘যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি কি তার সৃষ্টি সম্পর্কে জানেন না, অথচ তিনি সূক্ষ্মজ্ঞানী, সম্যক জ্ঞাত’ (সূরা আল-মুলক: ১৪)। সুতরাং তার প্রদত্ত জীবন বিধান ইসলাম ভুল ত্রুটির ঊর্ধ্বে হবে, এটাই স্বাভাবিক। অতএব দাওয়াতী কাজ করে সেই ইসলামের প্রচার করা মানব জীবনের জন্য অতীব প্রয়োজন। আর এটা স্বতঃসিদ্ধ যে, যদি কোন একটি কাজ সম্পাদন ব্যতীত আরেকটি গুরুত্বপূণ কাজ সম্পাদন সম্ভব না হয়, তবে সে কাজটিও গুরুত্বপূর্ণ। তাই ইসলামের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যের আবেদনের মধ্যেও ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার তাৎপর্য ও গুরুত্ব নিহিত। মানব সমাজে ইসলামী জীবন ব্যবস্থার প্রয়োজন থাকলে তার প্রচারেরও প্রয়োজন রয়েছে।
আদর্শিক মতানৈক্যের অপনোদন ও আদর্শিক শুন্যতা পূরণে ইসলামী প্রচার ও প্রতিষ্ঠা একান্ত যরূরী। পৃথিবীতে বহু মতবাদ রয়েছে। যেগুলোর কোন মতবাদই মানুষের মুক্তি দিতে পারে না। অথচ এ মতবাদে জড়িয়ে পড়ে তাদের ঈমান-‘আক্বীদা ও আমলকে চরম হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। মানব সমাজে এ অবস্থা সৃষ্টি হত না যদি ইসলামী আদর্শকে সঠিকভাবে তাদের সামনে তুলে ধরা যেত। তাই ইসলামী আদর্শকে দাওয়াতের মাধ্যমে মানব সমাজে তুলে ধরা এবং আদর্শিক শূন্যতা পূরণ করা প্রতিটি মুসলিমের ঈমানী দায়িত্ব। শায়খ আবূ যাহরা উল্লেখ করেছেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর পর জার্মানের জনসাধারণ ইসলামের প্রতি অত্যন্ত আগ্রহ দেখিয়েছিল, কিন্তু সেখানে তখন ইসলামী দা‘ঈ ছিল না। একমাত্র কিছু কাদিয়ানী ব্যতীত’।[১] অতএব বিশ্বের কোন এলাকায় আদর্শিক শূন্যতার জন্য মুসলিমই দায়ী। আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হওয়ার আগেই প্রতেক্যেই স্বচ্ছ ইসলামের আদর্শ প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যকীয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ثُمَّ کَانَ مِنَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ تَوَاصَوۡا بِالصَّبۡرِ وَ تَوَاصَوۡا بِالۡمَرۡحَمَۃِ ‘তারপর তাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হওয়া যারা ঈমান এনেছে এবং যারা পরস্পরকে উপদেশ দেয় ধৈর্যধারণের ও দয়া করুণার’ (সূরা আল-বালাদ: ১৭)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ الۡعَصۡرِ-اِنَّ الۡاِنۡسَانَ لَفِیۡ خُسۡرٍ -اِلَّا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ وَ تَوَاصَوۡا بِالۡحَقِّ ۬ۙ وَ تَوَاصَوۡا بِالصَّبۡرِ
‘কালের শপথ! নিশ্চয় মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে নিপতিত। তবে তারা ব্যতীত, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, পরস্পরকে হকের উপদেশ দেয় এবং পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দেয়’ (সূরা আল-আছর: ১-৩)।
মহান আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত নির্ভুল ব্যবস্থাই মানুষের জন্য চিরস্থায়ী এবং কল্যাণকর দিক-নির্দেশনা। এ জীবন ব্যবস্থাই সমগ্র বিশ্বে ‘আল-কুরআন’ নামে পরিচিত। এর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ রাসূল (ﷺ)-এর হাদীছ হিসাবে সংরক্ষিত। আজকের অশান্ত পৃথিবীর শান্তিহারা মানুষের নিকট আল-কুরআনের শান্তির আহ্বানকে পৌঁছে দেয়াই ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার দাবী। তাই ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল (ﷺ) মানব জাতিকে বিভিন্নভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন।
ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় মানুষ সমাজে অনেক বাধার সম্মুখীন হন। সমাজে বসবাসরত কেউ তার শুভাকাক্সক্ষী হন। শুভাকাক্সক্ষী যারা হন তারা তার কল্যাণ চান। তারা তার সমস্যা হোক তা চান না। তারা তার কোন ক্ষতি হোক তাও চান না। কিন্তু যারা তারা কল্যাণ কামনা করে না। যারা তার বিরোধিতা করে তাদের সাথে তার জওয়াব কেমন হবে। এব্যাপারে অনেকেই দ্বিধান্বিত। কারণ ফেসবুক, ইউটিউব, ইন্টারনেট, বই, পত্রিকায় আমরা দেখতে পাই যে, কোন মত কোন কথা কারো বিরুদ্ধে গেলে ঝাঁপিয়ে পড়ে তার বিরুদ্ধে গীবত, তোহমত, অপবাদ, অশ্লীল কথার ছড়াছড়ি। এমনকি কিছু মন্তব্য এমনি কুৎসিত যে তা ভাষায় প্রকাশ করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। কিন্তু মহান আল্লাহ তা বলে দিয়েছেন,
وَ مَنۡ اَحۡسَنُ قَوۡلًا مِّمَّنۡ دَعَاۤ اِلَی اللّٰہِ وَ عَمِلَ صَالِحًا وَّ قَالَ اِنَّنِیۡ مِنَ الۡمُسۡلِمِیۡنَ- وَ لَا تَسۡتَوِی الۡحَسَنَۃُ وَ لَا السَّیِّئَۃُ ؕ اِدۡفَعۡ بِالَّتِیۡ ہِیَ اَحۡسَنُ فَاِذَا الَّذِیۡ بَیۡنَکَ وَ بَیۡنَہٗ عَدَاوَۃٌ کَاَنَّہٗ وَلِیٌّ حَمِیۡمٌ
‘ঐ ব্যক্তির কথার চেয়ে কার কথা উত্তম হতে পারে, যে আল্লাহর পথে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে যে, নিশ্চয় আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত। সৎকর্ম ও অসৎকর্ম সমান নয়। প্রতুত্তর নম্রভাবে দাও, দেখবে তোমার শত্রু অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে পরিণত হয়েছে’ (সূরা বানী ইসরাঈল: ৮৫)। কাজেই ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই কেবল আধুনিক দাওয়াতী কার্যক্রম সহ সমাজের বিরোধী গ্রুপের জওয়াব দেওয়া শিখা যাবে।
ইসলামী দাওয়া ব্যাপক কল্যাণ অর্জনের মাধ্যম। ইসলামী দাওয়াতের মাধ্যমে কেউ যদি হেদায়াত প্রাপ্ত হয়। তাহলে যে ব্যক্তির প্রচেষ্টার মাধ্যমে হেদায়াত প্রাপ্ত হয়। তার আমলনামায় সমপরিপাণ নেকী লিপিবদ্ধ করা হয়। হেদায়াতপ্রাপ্ত ব্যক্তি হেদায়াত পেয়ে যে বিষটি আমলে পরিণত করেছে। এর জন্য আমলকারী তার আমলের জন্য নেকী পাবে। অনুরূপ যার মাধ্যমে হেদায়াতপ্রাপ্ত হয়েছে। তিনিও তার কাজের প্রতিদান হিসাবে পূর্ণ নেকী পাবেন এতে কারো নেকী কম-বেশী করা হয় না। যেমন, আবূ মাসঊদ আল-আনছারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেন,
مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ
‘যে ব্যক্তি কল্যাণের পথ দেখাবে সে ব্যক্তি ঐ ব্যক্তির সমপরিমাণ নেকী পাবে, যে ঐ পথে চলবে’।[২] অন্যত্র তিনি আরো বলেন, জাবীর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেন,
مَنْ سَنَّ فِي الإِسْلَامِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مَنْ غَيْرِ أَنْ يُّنْقَصَ مِنْ أُجُوْرِهِمْ شَيْئٌ وَمَنْ سَنَّ فِيْ الإِسْلَامِ سُنَّةً سَيِّئَةً كَانَ عَلَيْهِ وَزْرُهَا وَ وَزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ مِنْ غَيْرِ أِنْ يُّنْقَصَ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْئٌ
‘যে ব্যক্তি (দাওয়াতের মাধ্যমে) ইসলামের একটি (মৃত) সুন্নাত চালু করবে সে তার নেকী পাবে এবং ঐ সুন্নাতের প্রতি মানুষ আমল করে যত নেকী পাবে তাদের সমপরিমাণ নেকী তার আমলনামায় লেখা হবে, তবে তাদের কারো নেকী কম করা হবে না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ইসলামে কোন মন্দ আমল চালু করবে সে জন্য তার পাপ রয়েছে। আর ঐ মন্দ আমল করে যত লোক যে পরিমাণ পাপ অর্জন করবে সবার সমপরিমাণ পাপ তার আমলনামায় লেখা হবে, তবে তাদের কারো পাপ এতটুকুও কম করা হবে না’।[৩] ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই একজন ব্যক্তি তার আমলনামায় নেকী যুক্ত করতে পারে। এটার অভাবে মানব জাতি নেকী থেকে যেমন বঞ্চিত তেমনি তারা প্রভূত কল্যাণ থেকেও মাহরূম হন।
ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠা ইসলামের প্রতীক। ইসলাম এমন একটি ধর্ম, যা প্রচারধর্মী। তাকে হিন্দু ধর্মের মত নির্দিষ্ট কোন ভূখণ্ডে আটকিয়ে রাখা যাবে না বা ইয়াহুদীদের মতে নির্দিষ্ট কোন জনগোষ্ঠীর জন্য সীমাবদ্ধ করা যাবে না। যুগে যুগে যত মানবগোষ্ঠী আসবে, সকলের জন্য ইসলাম উন্মুক্ত। তাই মুসলিমদের দায়িত্ব সমগ্র মানব জাতির সামনে ইসলামকে তুলে ধরা। আর এটা প্রচার ও প্রসারের জন্য দাওয়াতী কাজকে সর্বাগ্রে বিবেচনায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। একজন মুসলিম মানেই সে একজন দা‘ঈ, তার সামর্থ কম হোক আর বেশী হোক। সর্বাবস্থায় তাদের পরস্পরের মাঝে যেমনি ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে, তেমনি অমুসলিমদের মাঝেও ইসলামের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরবে। এটাই ইসলমের প্রকৃতি এবং ইসলামের অনুসারীদের স্বভাব। যেমন ইসলামের দাওয়াতের ব্যাপারে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে।
عَنِ الْحَسَنِ مُرْسَلًا قَالَ سُئِلَ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ عَنْ رَجُلَيْنِ كَانَا فِيْ بَنِيْ إِسْرَئِيْلَ أَحَدُهُمَا كَانَ عَالِمًا يُصَلِّ الْمَكْتُوْبَةَ ثُمَّ يَجْلِسَ فَيُعَلِّمُ النَّاسُ الْخَيْرَ وَالْآخَرُ يَصُمُ النَّهَارَ وَيَقُوْمُ اللَّيْلَ أَيُّهُمَا أَفْضَلُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ فَضْلُ هذَا الْعَالِمِ الَّذِيْ يُصَلِّى الْمَكْتُوبَةَ ثُمَّ يَجْلِسَ فَيُعَلِّمُ النَّاسَ الْخَيْرَ عَلَى الْعَابِدَ الَّذِي يَصُوْمُ النَّهَارَ وَيَقُوْمُ اللَّيْلَ كَفَضْلِىْ عَلَى أَدْنَاكُمْ
হাসান বাছারী (রাহিমাহুল্লাহ) হতে মুরসাল সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, ‘বনী ইসলাঈলের দু’জন লোক সম্পর্কে রাসূল (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তাদের একজন ছিলেন আলেম। তিনি কেবল ফরয সালাত আদায় করতেন। অতঃপর লোকদেরকে দ্বীন শিক্ষা দিতেন। অপরজন ছিলেন আবেদ। যিনি দিনে ছিয়াম পালন করতেন এবং রাতে ছালাত আদায় করতেন। তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কে? রাসূল (ﷺ) উত্তরে বললেন, আলেম, যে শুধু ফরয ছালাত আদায় করে এবং লোকদেরকে দ্বীন শিক্ষা দেয় সে উত্তম ঐ আবেদের চেয়ে, যে দিনভর ছিয়াম পালন করে এবং রাতভর ছালাত আদায় করে। উভয়ের মধ্যে মর্যাদার পার্থক্য এরূপ যেমন আমার ও তোমাদের মধ্যে রয়েছে’।[৪]
ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠা যুদ্ধে অংশ গ্রহণের সমান। মুসলিমদের বিরুদ্ধে কোন ইসলাম বিদ্বেষী কর্মতৎপরতা মোকাবিলার প্রয়োজনে অস্ত্র ধারণের বিষয়টির গুরুত্ব ইসলামের জীবন ব্যবস্থায় অপরিসীম। বরং এর মর্যাদা ইসলামে শীর্ষ স্থান দেয়া হয়েছে। এতদসত্ত্বেও আল্লাহ তা‘আলা সকল মুসলিমকে একযোগে অমুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বের হয়ে যাবার বিষয়টি পসন্দ করেননি। বরং তাঁর দৃষ্টিতে মুসলিমদের মাঝে এমন এক দল বিশেজ্ঞ শ্রেণি হওয়া প্রয়োজন, যারা ইসলামী দাওয়াতী কাজে এককভাবে নিবিষ্ট হবে। দ্বীন সম্পর্কে গভীর জ্ঞানার্জন করে মানুষকে তা শিক্ষা দিবে। বিভিন্ন বিষয়ে সতর্ক করবে, যেন তারা সত্য থেকে বিচ্যুত না হয়। মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন,
وَ مَا کَانَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ لِیَنۡفِرُوۡا کَآفَّۃً ؕ فَلَوۡ لَا نَفَرَ مِنۡ کُلِّ فِرۡقَۃٍ مِّنۡہُمۡ طَآئِفَۃٌ لِّیَتَفَقَّہُوۡا فِی الدِّیۡنِ وَ لِیُنۡذِرُوۡا قَوۡمَہُمۡ اِذَا رَجَعُوۡۤا اِلَیۡہِمۡ لَعَلَّہُمۡ یَحۡذَرُوۡنَ
‘আর মুমিনদের এটাও সমীচীন নয় যে, (জিহাদের জন্য) সবাই একত্রে বের হয়ে পড়ে; সুতরাং এমন কেন করা হয় না যে, তাদের প্রত্যেকটি বড় দল হতে এক একটি ছোট দল বহির্গত হয়, যাতে তারা ধর্মজ্ঞান অর্জন করতে পারে, আর যাতে তারা নিজ কওমকে (নাফারমানী হতে) ভয় প্রদর্শন করে যখন তারা ওদের নিকট প্রত্যাবর্তন করে, যেন তারা সতর্ক হয়’ (সূরা আত-তাওবাহ: ১২২)। এ আয়াতটিতে আল্লাহ তা‘আলা জ্ঞান চর্চা ও তা সম্পর্কে অন্যকে অবহিতকরণ তথা দাওয়াতী কাজটিকে জিহাদের সমতুল্য হিসাবে ঘোষণা করেছেন। অর্থাৎ বিশেষ পরিস্থিতিতে তথা মুসলিমদের যরূরী অবস্থাতেও একাংশ যুদ্ধে চলে যাবে, আর একাংশ বিশেষভাবে দাওয়াতী কাজে আত্মনিয়োগ করবে। সুতরাং দাওয়াতী কাজ থেকে কখনো বিচ্যুত হওয়া যাবে না। অতএব দাওয়াতী কাজ যুদ্ধের সমতুল্য। বরং গুরুত্বে দিক দিয়ে জিহাদের ব্যাপকার্থে দাওয়াতী কাজ শ্রেষ্ঠ জিহাদ। নবী (ﷺ) বলেন, كَلِمَةُ حَقٍّ عِنْدَ ذِى سُلْطَانٍ جَائِرٍ ‘অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে সত্যের বাণী তুলে ধরাও শ্রেষ্ঠ জিহাদ’।[৫]
প্রবাহমান আমলের মধ্যে ইসলাম ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠাও একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। যেমন হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন,
إِنَّ مِمَّا يَلْحَقُ الْمُؤْمِنُ مِنْ عَمَلِهِ وَ حَسَنَاتِهِ بَعْدَ مَوْتِهِ عِلْمًا عَلِمَهُ وَ نَشَرَهُ وَوَلَدًا صَالِحًا تَرَكَهُ أَوْ مُصْحَفًا وَّرَثَهُ أَوْ مَسْجِدًا بَنَاهُ أَوْ بَيْتًا لِإِبْنِ السَّبِيْلِ بَنَاهُ أَوْ نَهَرًا أَجْرَاهُ أوْ صَدَقَةً أَخْرَجَهَا مِنْ مَالِهِ فِي صِحَّتِهِ وَحَيَاتِهِ تَلحَقُهُ مِنْ بَعْدِ مَوْتِهِ
‘মুমিনের মৃত্যুর পর যে সব নেক আমলের নেকী মুমিনের নিকট পৌঁছবে তা হচ্ছে (১) ইলম, যা শিক্ষা করেছে এবং দাওয়াতের মাধ্যমে প্রচার ও প্রসার করেছে (২) নেক সন্তান, যাকে পৃথিবীতে রেখে গেছে (৩) কুরআন, যা ওয়াকফ করে রেখে গেছে। (৪) মসজিদ, যা সে নির্মাণ করে গেছে (৫) সরাইখানা, যা সে পথিকের জন্য নির্মাণ করে গেছে (৬) খাল, যা সে খনন করে গেছে অথবা ছাদাক্বা, যা সে সুস্থ ও জীবিত থাকাবস্থায় দান করে গেছে’। [৬]
ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ইবাদত হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। ‘উছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ ‘তোমাদের মাঝে সবচেয়ে উত্তম ঐ ব্যক্তি যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়’। অর্থাৎ প্রচারের মাধ্যমে অপরকে শিক্ষা দেয়’।[৭]
ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠা শ্রেষ্ঠ আমলের মধ্যে অন্যতম। কারণ ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠাকে উট কুরবানীর সাথে তুলনা করা হয়েছে। যেমন হাদীছে এসেছে,
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ قَالَ خَرَجَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ وَ نَحْنُ فِي الصُّفَّةِ فَقَالَ أَيُّكُمْ يُحِبُّ أَنْ يَّغْدُوَ كُلَّ يَوْمٍ إِلَى بُطْحَانَ أَوْ الْعَقِيْقِ قَيَأْتِيْ بِنَقَتَيْنِ كَوْمَاوَيْنِ فِيْ غَيْرِ إِثْمٍ وَلَا قَطْعِ رَحْمٍ فَقُلْنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ كُلُّنَا يُحِبُّ ذَلِكَ فَقَالَ أَفَلَا يَغْدُوْ أحَدُكُمْ إِلَى الْمَسْجِدِ فَيُعَلِّمُ أَوْ يَقْرَأُ آيَتَيْنِ مَنْ كِتَابِ اللهِ خَيْرٌ لَّهُ مَنْ نَّاقَةٍ أَوْ نَاقَتَيْنِ وَثَلَاثٌ خَيْرٌلَّهُ مَنْ ثَلَاثٍ وأَرْبَعٌ خَيْرٌ لَّهُ مِنْ أَرْبَعٍ وَّمِنْ أَعْدَادِهِنَّ مِنَ الْإبِلِ
উক্ববা ইবনু ‘আমের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) একদা বাড়ী থেকে বের হলেন, তখন আমরা আহলেছুফফার সাথে উপবিষ্ট ছিলাম। তিনি বললেন, ‘তোমাদে মধ্যে কে আছ যে বুত্বহান অথবা আক্বীক্ব নামক স্থানে যেতে চাও এবং দু’টি মোটা তাজা উটনী নিয়ে আসতে চাও। যা চুরিও নয়, ছিনিয়েও নেয়া নয়। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমরা সবাই যেতে চাই। রাসূল (ﷺ) বললেন, তোমাদের কোন ব্যক্তি সকালে মসজিদে যাবে এবং দু’টি আয়াত শিখিয়ে দিবে অথবা (মানুষের সামনে) পরিবেশন করবে। এই আয়াত দু’টি উটের চেয়ে উত্তম, তিনটি আয়াত তিনটি উটের চেয়ে উত্তম, চারটি আয়াত চারটি উটের চেয়ে উত্তম। এভাবে যত আয়াত পরিবেশন করবে তত উটের চেয়ে উত্তম হবে। [৮]
ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠা জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার অন্যতম একটি মাধ্যম। মুসলিমদের চূড়ান্ত কামনা হচ্ছে জান্নাত লাভ এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি। কাজেই ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠা না থাকলে মুসলিম জাতি জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার অন্যতম একটি মাধ্যম থেকে বঞ্চিত হবে। তাই সকল মুসলিমের জন্য ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করা একান্ত যরূরী। যেমন হাদীছে এসেছে,
عن أبي عَبْسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَا أَغْبَرَتْ قَدَمَا عَبْدٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَتَمَسَّهُ النَّارُ
আবূ ‘আবস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহর পথে চলে কারো দু’পা ধুলায় মলিন হলে তকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। [৯]
ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠাকে পৃথিবী ও পৃথিবীর মধ্যেকার সকল কিছু হতে উত্তম ঘোষণা করা হয়েছে। কাজেই ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠা না থাকলে মুসলিম জাতি বৃহত্তর নেকী হতে বঞ্চিত হবে। যেমন হাদীছে এসেছে,
عن أنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَغَدْوَةٌ فِيْ سبِيْلِ اللهِ أَوْ رَوْحَةٌ خَيْرٌ مِّنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا
আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘আল্লাহর পথে সকাল-সন্ধ্যায় কিছু সময় ব্যয় করা দুনিয়া এবং তার মধ্যে যা কিছু আছে সবকিছুর চেয়েও উত্তম’।[১০]
عن سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ رِبَاطُ يَوْمٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا
সাহল ইবনু সা‘দ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘একদিন আল্লাহর পথে সময় ব্যয় করা অথবা প্রস্তুত থাকা পৃথিবী এবং তার উপর যা কিছু আছে সব কিছুর চেয়েও উত্তম’।[১১]
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
* প্রভাষক, দেওগাঁ রহমানিয়া ফাযিল ডিগ্রী মাদরাসা, ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর।
তথ্যসূত্র :
[১]. শায়খ আবূ যাহরা, আদ-দা‘ওয়াতু ইলাল ইসলাম (কায়রো : দারুল ফিকরিল ‘আরাবী, সংস্করণ ১৯৯২ খ্রি.), পৃ.৮৫।
[২]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৯৩; আবূ দাঊদ, হা/৫১২৯; মিশকাত, হা/২০৯।
[৩]. ছহীহ মুসলিম, হা/১০১৭; নাসাঈ, হা/২৫৫৪; মিশকাত, হা/২১০।
[৪]. দারেমী, হা/৩৪০; মিশকাত, হা/২৫০, সনদ হাসান।
[৫]. ইবনু মাজাহ, হা/৪০১২, সনদ হাসান ছহীহ।
[৬]. ছহীহ ইবনু খুযাইমাহ, হা/২৪৯০; মিশকাত, হা/২৫৪, সনদ হাসান।
[৭]. ছহীহ বুখারী, হা/৫০২৭।
[৮]. ছহীহ মুসলিম, হা/৮০৩; মিশকাত, হা/২১১০।
[৯]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৮১১; মিশকাত, হা/৩৭৯৪।
[১০]. ছহীহ বুখারী, হা/২৭৯২; তিরমিযী, হা/১৬৫১; মিশকাত, হা/৩৭৯২।
[১১]. ছহীহ বুখারী, হা/২৮৯২; মিশকাত, হা/৩৭৯১।
প্রসঙ্গসমূহ »:
যুবসমাজ