রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ০৮:৪৬ অপরাহ্ন

বিদ‘আত পরিচিতি

-ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান*


 (২৭তম কিস্তি) 

বিদ‘আত প্রতিরোধের উপায়

ইসলাম পরিপূর্ণ একটি জীবন ব্যবস্থা। এখানে কোন বিষয় সংযোজন ও বিয়োজনের সুযোগ নেই। মস্তিষ্ক প্রসূত কোন চিন্তা-চেতনা, থিওরি, মতবাদ, ইযম ও তরীকা উদ্ভাবন ও তাতে অনুপ্রবেশের অধিকার কারো নেই। ইসলামের প্রতিটি বিধান ও নিয়ম-নীতি শুধু একজন মানুষের সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তিশীল। তিনি হ্যাঁ বললে, হ্যাঁ; আর না বললে, না। তিনি হলেন আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (ﷺ), যাকে আল্লাহ তা‘আলা বিশ্ববাসীর নিকট প্রেরণ করেছেন এবং তাঁর আনুগত্য করাকে মানবজাতিকে ফরয বা আবশ্যক সাব্যস্ত করেছেন। কেননা আল্লাহ তা‘আলার অনুমতি ব্যতীত ও মস্তিষ্ক প্রসূত কোন কথা কখনো তিনি বলেন না। অনুরূপভাবে নন্দিত যুগ হিসাবে ছাহাবায়ে কেরাম ও তাবে‘ঈগণের যুগের বিষয়গুলোও ধর্তব্য। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, কালক্রমে পূর্ণাঙ্গ শরী‘আতের মধ্যে শরী‘আতকে অসম্পূর্ণ প্রমাণকারী কিছু নতুন নতুন ইবাদতের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। প্রকৃত অবস্থাকে বিলুপ্ত করে সেখানে মানুষের তৈরি নতুন কোন বিধান চালু করা হয়েছে। ইসলামের এমন কোন বিষয় নেই, যেখানে মানুষের তৈরি করা কোন ইযম, তরীকা, মতবাদ ও কোন নিয়ম-পদ্ধতি নতুনরূপে মাথা চাড়া দেয়নি। বিদ‘আতের রাহুগ্রাসে পতিত হয়নি এমন কোন ‘আমল ও ‘আক্বীদাহ আজ অবশিষ্ট নেই। ফলে মুসলিমদের কষ্টার্জিত ‘আমল-‘ইবাদত যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি অপরিমাণ গুনাহের অংশীদার হচ্ছে। অথচ শরী‘আত প্রণেতার নির্দেশিত পথ ও পন্থা ব্যতীত সকল কাজই ভ্রষ্ট ও বাতিল হিসাবে গণ্য। অন্যদিকে জাহান্নাম হল বিদ‘আতকারীর ভয়াবহ পরিণাম। তাই আখিরাত বিধ্বংসী এই বিদ‘আতকে প্রতিরোধ ও নির্মূল করার বিকল্প কোন পথ নেই। অতএব বিদ‘আত প্রতিরোধের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা প্রতিটি হক্বপন্থী মুসলিমের উপর দ্বীনি দায়িত্ব ও কর্তব্য। 

বিদ‘আত প্রতিরোধের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

ইসলামের শান্তিময় আবেদন, এর বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা, অপরিমেয় শক্তিমত্তার ধ্বংস, বিনষ্ট ও নস্যাতের পিছনে যে সকল বিষয় দায়ী, তন্মধ্যে বিদ‘আত অন্যতম একটি বিষয়। কেননা বিদ‘আতের মাধ্যমে ইসলামী শরী‘আতের মৌল উৎসের দ্বিতীয় উৎস হাদীছ তথা সুন্নাতুর রাসূল (ﷺ) হুমকীর সম্মুখীন হয়। সুন্নাত দুনিয়ার বুক থেকে মিটে যায়। প্রকারন্তরে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর রিসালাতের বিরুদ্ধাচরণ করা হয়। যা মারাত্মক অপরাধ। সুতরাং ইসলামী শরী‘আতকে রক্ষা করতে হলে বিদ‘আত প্রতিরোধে সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক। এখানেই বিদ‘আত প্রতিরোধের গুরুত্ব প্রস্ফুটিত হয়েছে। এছাড়া বিদ‘আতী কর্মকা- শয়তানী কর্মকা-েরই একটি নব্য সংস্করণ মাত্র। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ خَطَبَ النَّاسَ فِيْ حَجَّةِ الْوَدَاعِ، فَقَالَ: ্রقَدْ يَئِسَ الشَّيْطَانُ بِأَنْ يُعْبَدَ بِأَرْضِكُمْ وَلَكِنَّهُ رَضِيَ أَنْ يُطَاعَ فِيْمَا سِوَى ذَلِكَ مِمَّا تُحَاقِرُوْنَ مِنْ أَعْمَالِكُمْ، فَاحْذَرُوْا يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّيْ قَدْ تَرَكْتُ فِيْكُمْ مَا إِنِ اعْتَصَمْتُمْ بِهِ فَلَنْ تَضِلُّوْا أَبَدًا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ ﷺ.

‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বিদায় হজ্জের ভাষণে বলেছেন, শয়তান তোমাদের ভূখ-ে মূর্তিপূজা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সম্পূর্ণরূপে নিরাশ হয়ে গিয়েছে। তবে সে আশাবাদী যে, তোমরা মূর্তিপূজা ব্যতীত অন্যান্য এমন এমন কাজে তার আনুগত্য করবে যেগুলোকে তোমরা সামান্য/ছোট বিষয় জ্ঞান করবে। কাজেই হে লোক সকল! (সামান্য/ছোট দেখিয়ে সে যেন তোমাদেরকে বিদ‘আতে লিপ্ত করতে না পারে) আমি তোমাদের এমন জিনিস রেখে যাচ্ছি, যদি তোমরা সে জিনিস দৃঢ়ভাবে ধারণ কর, তহালে কখনো গোমরাহ হবে না। তাহলো আল্লাহ তা‘আলার কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাত’।[১] বিদ‘আত প্রতিরোধের গুরুত্ব কতটুকু নি¤েœর আলোচনায় তা পরিষ্কাররূপে প্রস্ফুটিত হবে ইনশাআল্লাহ।

ক. বিদ‘আত মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির মাধ্যম: বিদ‘আত লোকদেরকে বিভক্তির দিকে আহ্বান করে এবং পারস্পরিক দুশমনী ও ঘৃণার জন্ম দেয়। তাইতো বর্তমানে মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি চরম আকার রূপ নিয়েছে। কেননা অধিকাংশ মুসলিম আজ কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ বাদ দিয়ে ভ্রষ্ট বিদ‘আতের সাথে আকণ্ঠ জড়িয়ে পড়েছে। অতএব অখ- মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধতা পুনরুদ্ধারের জন্যই বিদ‘আত প্রতিরোধ করা যরূরী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ لَا تَکُوۡنُوۡا کَالَّذِیۡنَ تَفَرَّقُوۡا وَ اخۡتَلَفُوۡا مِنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَہُمُ الۡبَیِّنٰتُ ؕ وَ اُولٰٓئِکَ لَہُمۡ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ.

‘তোমরা সেই সব লোকদের মত হয়ো না যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণাদি আসার পরেও মতভেদ করেছে, তাদের জন্য রয়েছে ভয়ংকর আযাব’ (সূরা আলে ইমরান : ১০৫)। অন্যত্র তিনি বলেন,

وَ  اَنَّ  ہٰذَا صِرَاطِیۡ مُسۡتَقِیۡمًا فَاتَّبِعُوۡہُ ۚ وَ لَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ  فَتَفَرَّقَ  بِکُمۡ عَنۡ سَبِیۡلِہٖ ؕ.

‘নিশ্চয় এটিই আমার সোজা সরল পথ তোমরা তারই অনুসরণ কর। তোমরা বহু পথের অনুসরণ করো না। কারণ তা তোমাদেরকে তাঁর এক পথ হতে বিচ্ছিন্ন করে দিবে’ (সূরা আল-আন‘আম : ১৫৩)। তিনি আরও বলেন,

اِنَّ الَّذِیۡنَ فَرَّقُوۡا دِیۡنَہُمۡ  وَ کَانُوۡا  شِیَعًا لَّسۡتَ مِنۡہُمۡ فِیۡ شَیۡءٍ

‘নিশ্চয় যারা তাদের দ্বীনকে খ--বিখ- করেছে এবং তারা দলে দলে বিভক্ত হয়ে গেছে আপনি তাদের কোন কিছুতেই অংশীদার নন’ (সূরা আল-আন‘আম : ১৫৯)।

অতএব দ্বীন পরিপূর্ণরূপে ও সুস্পষ্টভাবে আসার পরেও যদি কোন ব্যক্তি তাতে সন্তুষ্ট হতে না পেরে নতুন কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটায়, তা ইসলামের মধ্যে বিভক্তির কারণ এতে কোন সন্দেহ নেই। আর এ বিভক্তিই পরস্পরের মাঝে দুশমনী সৃষ্টি করে। যার জলন্ত প্রমাণ আমরা সমাজের মাঝে দিবালোকের ন্যায় প্রত্যক্ষ করছি।

খ. বিদ‘আত যেমন দুনিয়াতে বেইজ্জতী, লাঞ্ছনা ও ফেতনার সৃষ্টি করে, তেমনি আখিরাতে তার উপর আল্লাহর ক্রোধ চাপিয়ে দেয়া হয়: বিদ‘আতীর উপর দুনিয়াতে বেইজ্জতী ও লাঞ্ছনা রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

اِنَّ الَّذِیۡنَ اتَّخَذُوا الۡعِجۡلَ سَیَنَالُہُمۡ غَضَبٌ مِّنۡ رَّبِّہِمۡ وَ ذِلَّۃٌ فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ؕ وَ کَذٰلِکَ نَجۡزِی الۡمُفۡتَرِیۡنَ.

‘অবশ্যই যারা গাভীর বাচ্চাকে উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে তাদের উপর তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে দুনিয়াতেই ক্রোধ ও লাঞ্ছনা এসে পড়বে। মিথ্যারোপকারীদেরকে আমরা অনুরূপ শাস্তি দিয়ে থাকি’ (সূরা আল-আ‘রাফ: ১৫২)। মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর যুগে সামেরীর প্ররোচনায় গাভীর বাচ্চা দ্বারা তারা পথভ্রষ্ট হয়েছিল এমনকি তারা তার ইবাদতও করেছিল। আল্লাহ তা‘আলা আয়াতের শেষে বলেছেন, ‘মিথ্যারোপকারীদেরকে আমরা অনুরূপ শাস্তি দিয়ে থাকি’- বাক্যটি একটি ব্যাপকভিত্তিক কথা। এর সাথে বিদ‘আতেরও সাদৃশ্যতা আছে। কারণ সকল প্রকার বিদ‘আতও আল্লাহর উপর মিথ্যারোপের শামিল। যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

قَدۡ خَسِرَ الَّذِیۡنَ قَتَلُوۡۤا  اَوۡلَادَہُمۡ سَفَہًۢا بِغَیۡرِ عِلۡمٍ وَّ حَرَّمُوۡا مَا رَزَقَہُمُ اللّٰہُ افۡتِرَآءً  عَلَی اللّٰہِ ؕ قَدۡ ضَلُّوۡا وَ  مَا کَانُوۡا  مُہۡتَدِیۡنَ.

‘নিশ্চয় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যারা নিজ সন্তানদেরকে নির্বুদ্ধিতাবশতঃ বিনা জ্ঞানে হত্যা করেছে এবং আল্লাহ তাদেরকে যেসব রিযিক দিয়েছিলেন, সেগুলোকে আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে হারাম করে দিয়েছে। নিশ্চয় তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং সুপথগামী হয়নি’ (সূরা আল-আন‘আম: ১৪০)।

বিদ‘আতী গুনাহের সাথে জড়িত, আল্লাহর অবাধ্য। আল্লাহ যা করতে নিষেধ করেছেন সে তার সাথে জড়িত। তার সে অবস্থায় মৃত্যু হলে অমঙ্গলজনক মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া কিয়ামত দিবসে তাকে অমঙ্গলজনক পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে। এছাড়া বিদ‘আতীর উপর দুনিয়াতে যেমন বেইজ্জতী রয়েছে, তেমনি আখেরাতেও তার উপর আল্লাহর ক্রোধ চাপিয়ে দেয়া হবে। যেমন হাদীছে এসেছে,

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنِّيْ فَرَطُكُمْ عَلَى الْحَوْضِ مَنْ مَرَّ عَلَيَّ شَرِبَ وَمَنْ شَرِبَ لَمْ يَظْمَأْ أَبَدًا لَيَرِدَنَّ عَلَيَّ أَقْوَامٌ أَعْرِفُهُمْ وَيَعْرِفُوْنَنِي ثُمَّ يُحَالُ بَيْنِيْ وَبَيْنَهُمْ فَأَقُوْلُ إِنَّهُمْ مِنِّيْ فَيُقَالُ إِنَّكَ لَا تَدْرِيْ مَا أَحْدَثُوْا بَعْدَكَ؟ فَأَقُوْلُ سُحْقًا سُحْقاً لِمَنْ غَيَّرَ بَعْدِيْ.

সাহল ইবনু সা‘দ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আমি তোমাদের আগেই হাউযের নিকট পৌঁছব। যে ব্যক্তি আমার নিকট পৌঁছবে সে তার পানি পান করবে। আর যে একবার পানি পান করবে, সে আর কখনও পিপাসিত হবে না। আমার নিকট এমন কিছু লোক আসবে, যাদেরকে আমি চিনতে পারব এবং তারাও আমাকে চিনতে পারবে। অতঃপর আমার ও তাদের মধ্যে আড়াল করে দেয়া হবে। তখন আমি বলব, এরা তো আমার উম্মত, তখন আমাকে বলা হবে, আপনি জানেন না, আপনার অবর্তমানে তারা কত যে নতুন-নতুন মত ও পথ আবিষ্কার করেছে। তখন আমি বলব, দূর হও, দূর হও যারা আমার অবর্তমানে আমার দ্বীনকে পরিবর্তন করেছে।[২]

অতএব আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে যে ব্যক্তিই হোক না কেন, যত বড়ই আলেম, অলী-আওলিয়া, বুযুর্গানে দ্বীন ও পীরে কামেল হোক না কেন যদি বিদ‘আত সৃষ্টি করে থাকে, তাহলে তার বিদ‘আতের কারণে লজ্জিত ও লাঞ্ছিত হতে হবে। তাবেঈদের যুগে বাস্তবে বিদ‘আতীদের ভাগ্যে এমনটিই ঘটেছিল। তাদেরকে তাদের বিদ‘আত নিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছিল। সুতরাং দুনিয়ার বেইজ্জতী, অপমান, অবহেলা, লাঞ্ছনা ও পরকালে আল্লাহর ক্রোধ থেকে বাঁচার জন্য বিদ‘আত প্রতিরোধ করা প্রয়োজন।

বিদ‘আতের প্রতিরোধের গুরুত্ব সম্পর্কে ইমাম আবূ হামিদ আল-গাযযালী (৪৫০-৫০৫ হি./১০৫৮-১১১১ খ্রি.) (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

البدع كلها ينبغي أن تحسم أبوابها وتنكر على المبتدعين بدعهم وإن اعتقدوا أنها الحق.

‘বিদ‘আত যত রকমেরই হোক, সবগুলোরই দ্বার রুদ্ধ করতে হবে, আর বিদ‘আতীদের মুখের ওপর নিক্ষেপ করতে হবে তাদের বিদ‘আতসমূহ; তারা তাকে যতই হক বলে বিশ্বাস করুক না কেন’।[৩]

ড. ছালিহ ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘বিদ‘আতীদের প্রতিবাদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আলিমদের পদ্ধতি হলো- তারা এ ব্যাপারে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাতের উপর নির্ভর করে থাকেন। আর এটিই হলো সঠিক ও সন্তোষজনক পদ্ধতি। তারা বিদ‘আতীদের কথাগুলো প্রথমে বর্ণনা করেন। তারপর একটি একটি করে খ-ন করেন। সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরা ওয়াজিব এবং বিদ‘আত থেকে বিরত থাকা যরূরী, এসকল বিষয়ে তারা কুরআন ও ছহীহ হাদীছ থেকে প্রমাণাদি উপস্থিত করে থাকেন। বিদ‘আতীদের প্রতিবাদে তারা অসংখ্য বই-পুস্তকও রচনা করেছেন’।[৪]

বিদ‘আত প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা

বিদ‘আতী ও গোমরাহ ব্যক্তিদের প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা অত্যন্ত কঠোর। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

مَا مِنْ نَبِىٍّ بَعَثَهُ اللهُ فِىْ أُمَّةٍ قَبْلِىْ إِلَّا كَانَ لَهُ فِىْ أُمَّتِهِ حَوَارِيُّوْنَ وَأَصْحَابٌ يَأْخُذُوْنَ بِسُنَّتِهِ وَيَقْتَدُوْنَ بِأَمْرِهِ ثُمَّ إِنَّهَا تَخْلُفُ مِنْ بَعْدِهِمْ خُلُوْفٌ يَقُوْلُوْنَ مَا لَا يَفْعَلُوْنَ وَيَفْعَلُوْنَ مَا لَا يُؤْمَرُوْنَ فَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِيَدِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِلِسَانِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِقَلْبِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلَيْسَ وَرَاءَ ذَلِكَ مِنَ الْإِيْمَانِ حَبَّةُ خَرْدَلٍ.

‘আমার পূর্বে আল্লাহ এমন কোন নবীকে তাঁর উম্মতের মধ্যে প্রেরণ করেননি, যাদের মধ্যে তাঁর জন্য ‘হাওয়ারী’ এবং সাথীবৃন্দ ছিল না। তারা তাদের নবীর সুন্নাত গ্রহণ করত এবং তাঁর আদেশ-নিষেধের অনুসরণ করত। অতঃপর এমন সব লোক তাদের স্থলাভিষিক্ত হল, তারা এমন কথা বলত, যা নিজেরা করত না। নিজেরা এমন কাজ করত, যার নির্দেশ তাদের দেয়া হয়নি। অতএব যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজের হাত দ্বারা জিহাদ করবে, সে মুমিন। যে ব্যক্তি যবান দ্বারা জিহাদ করবে, সেও মুমিন এবং যে ব্যক্তি অন্তর দ্বারা জিহাদ করবে, সেও মুমিন। এরপর এক সরিষাদানা পরিমাণও ঈমান নেই’।[৫] ‘আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন, আমি নবী (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি যে,

يَأْتِىْ فِى آخِرِ الزَّمَانِ قَوْمٌ حُدَثَاءُ الْأَسْنَانِ، سُفَهَاءُ الْأَحْلَامِ، يَقُوْلُوْنَ مِنْ خَيْرِ قَوْلِ الْبَرِيَّةِ، يَمْرُقُوْنَ مِنَ الإِسْلَامِ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ، لَا يُجَاوِزُ إِيْمَانُهُمْ حَنَاجِرَهُمْ، فَأَيْنَمَا لَقِيْتُمُوْهُمْ فَاقْتُلُوْهُمْ، فَإِنَّ قَتْلَهُمْ أَجْرٌ لِمَنْ قَتَلَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

‘শেষ যুগে একদল যুবকের আবির্ভাব ঘটবে যারা হবে স্বল্পবুদ্ধি সম্পন্ন। তারা মুখে খুব ভাল কথা বলবে। তারা ইসলাম হতে বেরিয়ে যাবে যেভাবে তীর ধনুক হতে বেরিয়ে যায়। তাদের ঈমান গলদেশ পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করবে না। যেখানেই এদের সঙ্গে তোমাদের দেখা মিলবে, এদেরকে তোমরা হত্যা করে ফেলবে। যারা তাদের হত্যা করবে তাদের এই হত্যার পুরস্কার আছে ক্বিয়ামতের দিন’।[৬] উক্ত হাদীছদ্বয়ে বিদ‘আতীদের বৈশিষ্ট্য খুবই চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। সাথে সাথে বিদ‘আতের ভয়াবহতা ও তা প্রতিরোধের দিক-নির্দেশনা প্রদনা করা হয়েছে।

বিদ‘আত প্রতিরোধ না করার ভয়াবহতা

বিদ‘আত ইসলাম বিধ্বংসী মারণাস্ত্র। দুনিয়াতে ফিতনা ও পরকালে কঠিন আযাবের মাধ্যম। পৃথিবীতে যাতে করে বিদ‘আতের ফিতনা ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ না করে সেজন্য তা প্রতিরোধে ইসলামে অত্যন্ত জোরালো নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া বিদ‘আত প্রতিরোধে প্রচেষ্টা না করার ভয়াবহতাও ঘোষিত হয়েছে। বিদ‘আত যে ফিতনা সৃষ্টি মাধ্যম তার বর্ণনায় আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

فَلۡیَحۡذَرِ الَّذِیۡنَ یُخَالِفُوۡنَ عَنۡ اَمۡرِہٖۤ  اَنۡ تُصِیۡبَہُمۡ فِتۡنَۃٌ  اَوۡ یُصِیۡبَہُمۡ عَذَابٌ  اَلِیۡمٌ.

‘সুতরাং যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদের উপর আপতিত হবে অথবা আপতিত হবে তাদের উপর কঠিন শাস্তি’ (সূরা আন-নূর : ৬৩)। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) (১৬৪-২৪১ হি./৭৮০-৮৫৫ খ্রি.) বলেছেন,

عجبت لقوم عرفوا الإسناد وصحته ويذهبون إلى رأى سفيان والله تعالى يقول (فَلۡیَحۡذَرِ الَّذِیۡنَ یُخَالِفُوۡنَ عَنۡ اَمۡرِہٖۤ  اَنۡ تُصِیۡبَہُمۡ فِتۡنَۃٌ  اَوۡ یُصِیۡبَہُمۡ عَذَابٌ  اَلِیۡمٌ)(النور:63) أتدري ما الفتنة؟ الفتنة الشرك، لعله إذا رد بعض قوله أن يقع في قلبه شيء من الزيغ فيهلك.


‘আমি ঐ গোত্রের ব্যাপারে আশ্চর্য হই যে, যখন তারা হাদীছের সনদের বিশুদ্ধতা জানার পরেও সুফইয়ানের মতের দিকে ধাপিত হয়। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আদেশের বিরোধিতা করে, তারা এ বিষয়ে সতর্ক হোক যে, তাদেরকে ফিতনা তথা বিপর্যয় স্পর্শ করবে অথবা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে’ (সূরা আন-নূর : ৬৩)। তুমি কি জান, ফিতনা কী? ফিতনা হল- শিরক। কখনো হয়তো কেউ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর কোন একটি কথাকে প্রত্যাখ্যান করল। হতে পারে তখন তার অন্তরে বক্রতা চলে আসবে। অতঃপর সে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে’।[৭] ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) (৭০১-৭৭৪ হি.) এই আয়াত সম্পর্কে বলেছেন,

فَلْيَحْذَرِ وليخْشَ من خالف شريعة الرسول باطنًا أو ظاهرًا { أَنْ تُصِيْبَهُمْ فِتْنَةٌ } أي في قلوبهم من كفر أو نفاق أو بدعة {أَوْ يُصِيْبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ } أي في الدنيا بقتل أو حَد أو حبس أو نحو ذلك.


‘ فَلْيَحْذَر‘সাবধান’ অর্থাৎ যারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর শরী‘আতের প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে বিরোধিতা করে, তাদের ভয় করা উচিত। أَنْ تُصِيْبَهُمْ فِتْنَةٌ ‘তাদেরকে ফিতনা স্পষ্ট করবে’ অর্থাৎ তাদের অন্তরে কুফরী অথবা কপটতা অথবা বিদ‘আত স্পর্শ করবে। أَوْ يُصِيْبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ ‘তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি গ্রাস করবে’ অর্থাৎ দুনিয়াতে হত্যা, দ-বিধি, গ্রেফতার অথবা অন্য কিছুর মাধ্যমে’।[৮]

অন্যদিকে বিপর্যয় প্রতিরোধ না করলে শাস্তি সকলকে গ্রাস করবে বলে আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন,

وَ اتَّقُوۡا فِتۡنَۃً لَّا تُصِیۡبَنَّ الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡا مِنۡکُمۡ خَآصَّۃً ۚ وَ اعۡلَمُوۡۤا  اَنَّ اللّٰہَ  شَدِیۡدُ  الۡعِقَابِ.

‘তোমরা সেই ফিতনাকে ভয় কর, যা তোমাদের মধ্যকার যালিম ও পাপিষ্ঠদেরকেই বিশেষভাবে আক্রান্ত করবে না (বরং সবারই মধ্যে এটা সংক্রমিত হয়ে পড়বে এবং প্রত্যেককেই বিপদগ্রস্ত করবে), তোমরা জেনে রাখ যে, আল্লাহ শাস্তিদানে খুব কঠোর’ (সূরা আল-আনফাল : ২৫)। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন,

أَمَرَ اللهُ الْمُؤْمِنِيْنَ أَلَّا يُقِرُّوا الْمُنْكَرَ بَيْنَ ظَهْرَانِيهِمْ إِلَيْهِمْ فَيَعُمَّهُمُ اللهُ بِالْعَذَابِ.

‘আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদেরকে আদেশ করেছেন যে, তারা যেন তাদের সামনে ঘটা কোন খারাপ কাজের স্বীকৃতি না দেয়। তাহলে আল্লাহ তা‘আলা অপরাধীদের সাথে তাদেরকেও আযাব দ্বারা ঘিরে ফেলবেন’।[৯] উক্ত বক্তব্যের পর ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, وَهَذَا تَفْسِيْرٌ حَسَنٌ جِدًّا ‘এটি আয়াতের বেশ চমৎকার একটি তাফসীর’।[১০]

অতএব বুঝা যায় যে, মুনকার বা খারাপ কাজ সমূহের মধ্যে বিদ‘আত অন্যতম একটি খারাপ কাজ। সুতরাং কোন প্রকৃত মুসলিম তথা সুন্নাহপন্থীর সম্মুখে বিদ‘আতসহ অন্যান্য খারাপ সংঘটিত হলে তার প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অন্যথা বিদ‘আতীদের বিদ‘আতের কারণে নিপতিত হওয়া শাস্তি আহলুল বিদঈ ও আহলুস সুন্নাহসহ সকলকেই গ্রাস করবে। যেখান থেকে মুক্তির কোন উপায় নেই। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে হেফাযত করুন। আমীন

বিদ‘আত প্রতিরোধে ছাহাবী ও তাবেঈগণের ভূমিকা

ছাহাবী, তাবেঈ ও তাবে‘ তাবেঈগণ বিদ‘আতের বিরুদ্ধে একমত ছিলেন। তাঁরা কেউ বিদ‘আতকে প্রশ্রয় দিতেন না। সর্বদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাতের উপর আমল করতেন, তার দিকে মানুষকে আহ্বান করতেন। সাথে সাথে বিদ‘আত থেকে বিরত থাকতেন। বিদ‘আতের খারাবী ও পরিণতি বর্ণনা করতেন। এজন্যই তাদের সমকালীন যুগকে ‘খাইরুন কুরুন’ তথা সর্বোত্তম যুগ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বিদ‘আত প্রতিরোধে তাঁদের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে অগ্রগামী। যা নি¤েœ উল্লেখ করা হল:

ক. ছাহাবীগণ বিদ‘আত বরদাশত করতেন না

এক- খলীফাতুল মুসলিমীন আবূ বকর ছিদ্দীক (রাযিয়াল্লাহু আনহু)

বিদ‘আদের বিরুদ্ধ আবূ বকর ছিদ্দীক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ছিলেন অত্যন্ত কঠোর। তিনি কোন রকম বিদ‘আতকে প্রশ্রয় দিতেন না। যেমন,

১- ইবনু আবী মুলাইকা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

سئل أبو بكر الصديق رضي الله عنه عن آية من كتاب الله؟ فقال: أية أرض تقلني أو أية سماء تظلني، أو أين أذهب، وكيف أصنع؟ إذا أنا قلت في آية من كتاب الله بغير ما أراد الله بها.

‘আবূ বকর আছ-ছিদ্দীক (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে আল্লাহর কিতাবের একটি আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি বললেন, কোন্ ভূমি আমাকে নিয়ে যাবে, কোন্ আকাশ আমাকে ছায়া দেবে বা আমি কোথায় যাব এবং আমি কিভাবে করব? অথচ আল্লাহ‌র কিতাবের একটি আয়াত সম্পর্কে আল্লাহ যা ইচ্ছা করেছেন তা ছাড়া আমি অন্য কিছু বলি’।[১১] আবূ বকর ছিদ্দীক (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর উক্ত বক্তব্য বিদ‘আতীদের শরী‘আত বিকৃতির বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ রয়েছে। কেননা বিদ‘আতীরা শরী‘আতকে বিকৃত করে কথা বলে ও তদনুযায়ী কাজ করে থাকে।

২- হানযালা ইবনু রাবী‘ আল-উসাইদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

لَقِيَنِيْ أَبُوْ بَكْرٍ فَقَالَ كَيْفَ أَنْتَ يَا حَنْظَلَةُ؟ قُلْتُ نَافَقَ حَنْظَلَةُ قَالَ سُبْحَانَ اللهِ مَا تَقُوْلُ؟ قُلْتُ نَكُوْنُ عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ يُذَكِّرُنَا بِالنَّارِ وَالْجَنَّةِ كَأَنَّا رَأْيُ عَيْنٍ فَإِذَا خَرَجْنَا مِنْ عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ عَافَسْنَا الْأَزْوَاجَ وَالْأَوْلَادَ وَالضَّيْعَاتِ نَسِيْنَا كَثِيْرًا قَالَ أَبُوْ بَكْرٍ فَوَ اللهِ إِنَّا لَنَلْقَى مِثْلَ هٰذَا  فَانْطَلَقْتُ أَنَا وَأَبُوْ بَكْرٍ حَتَّى دَخَلْنَا عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فَقُلْتُ نَافَقَ حَنْظَلَةُ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ وَمَا ذَاكَ؟ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ نَكُوْنُ عِنْدَكَ تُذَكِّرُنَا بِالنَّارِ وَالْجَنَّةِ كَأَنَّا رَأْيَ عَيْنٍ فَإِذَا خَرَجْنَا مِنْ عِنْدِكَ عَافَسْنَا الْأَزْوَاجَ وَالْأَوْلَادَ وَالضَّيْعَاتِ نَسِيْنَا كَثِيْرًا فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ لَوْ تَدُوْمُوْنَ عَلٰى مَا تَكُوْنُوْنَ عِنْدِيْ وَفِي الذِّكْرِ لَصَافَحَتْكُمُ الْمَلَائِكَةُ عَلٰى فُرُشِكُمْ وَفِيْ طُرُقِكُمْ وَلَكِنْ يَا حَنْظَلَةُ سَاعَةً وَسَاعَةً ثَلَاثَ مَرَّاتٍ.

‘আমার সাথে আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর সাক্ষাৎ হল। তিনি বললেন, কেমন আছ হানযালা? আমি বললাম, হানযালা মুনাফিক হয়ে গেছে। তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ! এ কী বল হানযালা? আমি বললাম, আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট থাকি, তিনি আমাদের জান্নাত-জাহান্নাম স্মরণ করিয়ে দেন যেন আমরা তাদের চোখে দেখি, কিন্তু আমরা যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট হতে বের হয়ে আসি এবং বিবি-বাচ্চা ও খেত-খামারে লিপ্ত হই, তার অনেকটা ভুলে যাই। তখন আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, আমরাও এরূপই অনুভব করি। অতঃপর আমি ও আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট গেলাম এবং আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! হানযালা মুনাফিক হয়ে গেছে; তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, এ কেমন কথা? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমরা আপনার নিকট থাকি, আর আপনি আমাদেরকে জান্নাত-জাহান্নামের কথা স্মরণ করে দেন যেন তা আমাদের চোখে দেখা কিন্তু যখন আমরা আপনার নিকট হতে বের হয়ে আসি এবং সন্তান-সন্ততি ও খেত-খামারে লিপ্ত হই, তখন এটার অনেকটা ভুলে যাই। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তাঁর কসম যাঁর হাতে আমার জীবন রয়েছে, যদি তোমরা সর্বদা ঐরূপ থাকতে, যেরূপ আমার নিকট থাক এবং সর্বদা যিকির-ফিকিরে থাকতে, নিশ্চয় ফেরেশতাগণ তোমাদের বিছানায় ও তোমাদের রাস্তায় তোমাদের সাথে মুছাফাহা করতেন; কিন্তু কখনও ঐরূপ আর কখনও এরূপ হবেই হানযালা! এটা তিনি তিনবার বললেন’।[১২] ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আবূ বকর ছিদ্দীক (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর فَوَ اللهِ إِنَّا لَنَلْقَى مِثْلَ هٰذَا ‘আল্লাহর কসম! আমরাও এরূপই অনুভব করি’ বক্তব্যে পথভ্রষ্ট বিদ‘আতী ছূফীদের প্রতিবাদ রয়েছে। কেননা তারা ধারণা করে যে, হাদীছে রাসূল (ﷺ)-এর সাথে থাকার অবস্থাটা তাদের সর্বদা চলমান থাকে। পরিবার, সন্তান-সন্ততি ও অর্থ-সম্পদের কারণে তার কোন ঘাটতি পড়ে না’।[১৩]

৩- ইবনু মুকাররম ইবনু আসলামী (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

لما نزلت {الم-غُلِبَتِ الرُّوْمُ } قالت قريش لأبي بكر رحمه الله: يا ابن أبي قحافة، لعل هذا من كلام صاحبك؟ قال: لا، ولكنه كلام الله عز وجل.

‘যখন নাযিল হল (আল্লাহ তা‘আলার বাণী): ‘আলিফ লাম মীম, রূম বিজয় লাভ করেছে’ (সূরা আর-রূম: ১-২), তখন এক কুরাইশ আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে বলল, হে ইবনু আবী কুহাফাহ! সম্ভবত এটি তোমার সঙ্গী তথা মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর বাণী। তখন তিনি বললেন, না, বরং তা আল্লাহ তা‘আলার কালাম বা বাণী’।[১৪] উক্ত বক্তব্যের দ্বারা অধিক যুক্তিবাদী ভ্রান্ত বিদ‘আতী গোষ্ঠী মু‘তাযিলাদের বিরোধিতা করা হয়েছে। কেননা তারা মনে করে যে, কুরআন আল্লাহর কালাম নয়। বরং অন্যান্য সৃষ্টির মত সৃষ্ট কোন কিতাব। অথচ এটা চূড়ান্তভাবে সঠিক নয়। বরং তা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদা বিরোধী বক্তব্য।

৪- ক্বাইস ইবনু আবী হাযিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি আবূ বকর ছিদ্দীক্ব (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে বলতে শুনেছি যে, إِيَّاكُمْ وَاْلكِذْبُ فَإِنَّ الْكِذْبَ مَجَانِبِ الْإِيْمَانِ ‘তোমরা মিথ্যা থেকে সাবধান থাক। কেননা মিথ্যা ঈমানের পরিপন্থী বিষয়’।[১৫] উক্ত বক্তব্যের দ্বারা পথভ্রষ্ট বিদ‘আতী মুরজিয়াদের বিরোধিতা করা হয়েছে। কেননা তারা বিশ্বাস করে যে, আমল ঈমানের অন্তর্ভুক্ত নয়।[১৬] ঈমান হল মৌখিক স্বীকৃতি এবং অন্তরের বিশ্বাস।[১৭] পাপ কাজ ঈমানের কোন ক্ষতি করে না।[১৮] কাবীরাগুনাহ করলেও সে পূর্ণ মুমিন। আর এ কারণে তার শাস্তি হবে না।[১৯] অথচ আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) মিথ্যা ঈমানের পরিপন্থী বিষয় হিসাবে উল্লেখ করেছেন। যা মুরজিয়াদের আক্বীদার চরম বিরোধিতা।

দুই- আমীরুল মুমিনীন উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু)

বিদ‘আত মূলোৎপাটনে আমীরুল মুমিনীন উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক ও কঠোর স্বভাবের মানুষ। তিনি বিদ‘আতকে সহ্যই করতেন না। যেমন,

১- হজ্জে ত্বাওয়াফের সময় হাজারে আসওয়াদে চুম্বন করা একটি শরী‘আত স্বীকৃত পদ্ধতি। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পাথরটিকে চুম্বন করেছেন। মূলত শরী‘আতের বিধান হিসাবেই তাকে চুম্বন করা হলেও ভাল-মন্দের কোন ক্ষমতা তার নেই। মানুষ যাতে করে এ জাতীয় ভুলের মধ্যে না পড়ে এজন্য উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) সতর্ক করেছেন। ‘আবিস ইবনু রাবী‘আহ (রাহিমাহুল্লাহ) উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণনা করেছেন যে,

أَنَّهُ جَاءَ إِلَى الْحَجَرِ الْأَسْوَدِ فَقَبَّلَهُ، فَقَالَ إِنِّىْ أَعْلَمُ أَنَّكَ حَجَرٌ لَا تَضُرُّ وَلَا تَنْفَعُ، وَلَوْلَا أَنِّىْ رَأَيْتُ النَّبِىَّ ﷺ يُقَبِّلُكَ مَا قَبَّلْتُكَ.

‘তিনি হাজারে আসওয়াদের কাছে এসে তা চুম্বন করে বললেন, আমি অবশ্যই জানি যে, তুমি একখানা পাথর মাত্র, তুমি কারো কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পার না। নবী (ﷺ)-কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখলে কখনো আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না’।[২০]

সুধী পাঠক! হাজারে আসওয়াদ একটি পাথর মাত্র। এ পাথরের ভাল-মন্দের নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) করেছেন বিধায় আমাদের জন্য তা করা সুন্নাহ। আর ভাল-মন্দের অধিকারী বিশ্বাস করে কেউ করলে তা বিশ্বাসগত বিদ‘আত হয়ে যাবে। উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এই বিদ‘আতের বিরোধিতা করার জন্যই উক্ত কথা বলেছিলেন।

২- ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হিশাম ইবনু হাকীম (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে রাসূল (ﷺ)-এর জীবদ্দশায় সূরা ফুরক্বান তিলাওয়াত করতে শুনেছি এবং গভীর মনোযোগ দিয়ে আমি তাঁর ক্বিরাআত শুনেছি। তিনি বিভিন্নভাবে ক্বিরায়াত পাঠ করেছেন; অথচ রাসূল (ﷺ) আমাকে এভাবে শিক্ষা দেননি। এ কারণে ছালাতের মাঝে আমি তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য উদ্যত হয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু বড় কষ্টে নিজেকে সামলে নিলাম। তারপর সে সালাম ফিরালে আমি চাদর দিয়ে তার গলা পেঁচিয়ে ধরলাম এবং জিজ্ঞেস করলাম, তোমাকে এ সূরা যেভাবে পাঠ করতে শুনলাম, এভাবে তোমাকে কে শিক্ষা দিয়েছে? সে বলল, রাসূল (ﷺ)ই আমাকে এভাবে শিক্ষা দিয়েছেন। আমি বললাম, তুমি মিথ্যা বলছ। কারণ, তুমি যেভাবে পাঠ করেছ, এর থেকে ভিন্নভাবে রাসূল (ﷺ) আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন। এরপর আমি তাকে জোর করে টেনে রাসূল (ﷺ)-এর কাছে নিয়ে গেলাম এবং বললাম,

إِنِّىْ سَمِعْتُ هَذَا يَقْرَأُ بِسُوْرَةِ الْفُرْقَانِ عَلَى حُرُوْفٍ لَمْ تُقْرِئْنِيهَا. فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ ্রأَرْسِلْهُ اقْرَأْ يَا هِشَامُগ্ধ . فَقَرَأَ عَلَيْهِ الْقِرَاءَةَ الَّتِىْ سَمِعْتُهُ يَقْرَأُগ্ধ . فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ ্রكَذَلِكَ أُنْزِلَتْগ্ধ . ثُمَّ قَالَ ্রاقْرَأْ يَا عُمَرُগ্ধ . فَقَرَأْتُ الْقِرَاءَةَ الَّتِىْ أَقْرَأَنِىْ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ ্রكَذَلِكَ أُنْزِلَتْ، إِنَّ هَذَا الْقُرْآنَ أُنْزِلَ عَلَى سَبْعَةِ أَحْرُفٍ فَاقْرَءُوْا مَا تَيَسَّرَ مِنْهُগ্ধ.

‘আপনি আমাকে সূরা ফুরক্বান যেভাবে পাঠ করতে শিখিয়েছেন এ লোককে আমি এর থেকে ভিন্নভাবে তা পাঠ করতে শুনেছি। এ কথা শুনে রাসূল (ﷺ) বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। হিশাম, তুমি পাঠ করে শোনাও। তারপর সে সেভাবে পাঠ করে শোনাল, যেভাবে আমি তাঁকে পাঠ করতে শুনেছি। তখন আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বললেন, এভাবেই অবতীর্ণ করা হয়েছে। এরপর বললেন, হে ‘উমার! তুমিও পড়। সুতরাং আমাকে তিনি যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন, সেভাবেই আমি পাঠ করলাম। এবারও রাসূল (ﷺ) বললেন, এভাবেও কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। এ কুরআন সাত ভাষায় অবতীর্ণ করা হয়েছে। সুতরাং তোমাদের জন্য যা বেশি সহজ, সেভাবেই তোমরা পাঠ কর’।[২১]

উক্ত হাদীছে সুন্নাহ পরিপন্থী কোন আমলের ব্যাপারে উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর দৃষ্টিভঙ্গি সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত হয়। অর্থাৎ বিদ‘আত প্রতিরোধে তিনি ছিলেন অত্যন্ত কঠোর ও আপোসহীন।

৩- প্রখ্যাত তাবেঈ নাফি‘ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

كان الناس يأتون الشجرة التي يقال لها شجرة الرضوان فيصلون عندها قال فبلغ ذلك عمر بن الخطاب فأوعدهم فيها وأمر بها فقطعت.

‘লোকেরা একটি গাছের নিকট যাতায়াত করত, গাছটিকে ‘শাজারাতুর রিযওয়ান’ বা রিযওয়ানের গাছ বলা হত। সেখানে তারা (বরকতের আশায়) ছালাত আদায় করত। বিষয়টি উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর নিকট পৌঁছলে তিনি এর জন্য লোকদেরকে ধমক দেন এবং গাছটি (কেটে ফেলার) নির্দেশ দেন। অতঃপর গাছটি কেটে ফেলা হয়’।[২২]

৪- প্রখ্যাত তাবেঈ হাসান আল-বাছরী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

أن عمران بن حصين أحرم من البصرة فقدم على عمر فأغلظ له ونهاه عن ذلك، فقال: "يتحدث الناس أن رجلاً من أصحاب محمّد صلى الله عليه وسلم أحرم من مصرٍ من الأمصار.

‘একবার ইমরান ইবনু হুসাইন (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বাছরা থেকে ইহরাম পরে খলীফার কাছে এলেন। ইহরাম বাঁধার যে নির্দিষ্ট জায়গা আছে, তিনি তারও বহু আগে থেকেই ইহরাম বেঁধেছেন। খলীফা (উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু)) বিষয়টি জানতে পেরে তাকে কড়া কড়া কথা শুনিয়েছিলেন। ভবিষ্যতে তিনি যেন আর এমনটি না করেন সেজন্য সতর্ক করে দিয়ে বললেন, আপনি কি চান যে লোকে বলুক, ছাহাবীদের একজন অমুক অঞ্চল থেকে ইহরাম পরেছে’।[২৩]

(ইনশাআল্লাহ চলবে)


* শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আল-ইসলামিয়্যাহ, খড়খড়ি, রাজশাহী।

তথ্যসূত্র :
[১]. আল-মুসতাদরাক আলাছ ছহীহাইন, হা/৩১৮।   

[২]. ছহীহ বুখারী, হা/৬২২৭; ছহীহ মুসলিম, হা/২৮৪১; মিশকাত, হা/৫৫৭১।

[৩]. মুহাম্মাদ ইবনু মুহাম্মাদ আল-গাযযালী আবূ হামিদ, ইহইয়াউ উলূমিদ দ্বীন, ২য় খ- (বৈরুত : দারুল মা‘আরিফাহ, ৩া.বি.), পৃ. ৩২৭।

[৪]. ড. ছালিহ ইবনু ফাওযান আল-ফাওযান, আল-ইরশাদু ইলা ছহীহিল ই‘তিকাদি ওয়ার রাদ্দি ‘আলা আহলিশ শিরকি ওয়াল ইলহাদ, পৃ. ৩০২-৩০৩।

[৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/৫০; মিশকাত, হা/১৫৭।     

[৬]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৬১১, ৫০৫৭; আবূ দাঊদ, হা/৪৭৬৭; নাসাঈ, হা/৪১০২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬১৬।     

[৭]. শায়খ বিন বায, মাজমূঊ ফাতাওয়া, ১ম খ-, পৃ. ২১৯; মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, ৫ম খ-, পৃ. ২৪৯।

[৮]. আবুল ফিদা ইসমাঈল ইবনু কাছীর আদ-দিমাস্কী, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম (দারুল দাওয়াহ, ২য় সংস্করণ, ১৪২১ হি./১৯৯৯ খ্রি.), ৬ষ্ঠ খ-, পৃ. ৯০।

[৯]. তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, ৪র্থ খ-, পৃ. ৩৮।     

[১০]. তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, ৪র্থ খ-, পৃ. ৩৮।     

[১১]. আবূ সাহল মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুর রহমান আল-মাগরভী, মাওসূ‘আতু মাওয়াক্বিফুস সালাফ (কায়রো: আল-মাকতাবাতুল ইসলামিয়্যাহ, ১ম সংস্করণ, তাবি), ১ম খ-, পৃ. ১২।     

[১২]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৫০; মিশকাত, হা/২২৬৮।

[১৩]. উমার ইবনু হাফিয আল-আনছারী আল-কুরতুবী, আল-মুফহিমু লিমা আশকালা মিন তালখীছি কিতাবিল মুসলিম, ৭ম খ-, পৃ. ৬৭।

[১৪]. ইবনু বাত্তাহ, আল-ইবানাহ (রিয়াদ: দারুর রায়াহ, ২য় সংস্করণ, ১৪১৫ হি./১৯৯৪ খ্রি.), ৫ম খ-, পৃ. ২৭৪।

[১৫]. আব্দুল্লাহ ইবনু আব্দুল হামীদ আল-আছরী, আল-ঈমানু হাক্বীক্বাতুহু, পৃ. ১০১।

[১৬]­. ফাতাওয়া আশ-শাবাকাতুল ইসলামিয়াহ, ২য় খ-, পৃ. ৪৭৩৬।

[১৭]­. ফাতাওয়া আশ-শাবাকাতুল ইসলামিয়াহ, ৩য় খ-, পৃ. ১৮৬।

[১৮]­. আবূ সানাদ ফাৎহুল্লাহ, আলাফ ফাতাওয়া লি-শাইখিল আলবানী, ২য় খ-, পৃ. ১৩০।

[১৯]­. মুহাম্মাদ ইবনু ছালেহ ইবনু মুহাম্মাদ আল-উছায়মীন, মাজমূঊ ফাতাওয়া ও রাসাইল (দারুল ওত্বান, ১৪১৩ হি.), ৪র্থ খ-, পৃ. ৩০৪।

[২০]­. ছহীহ বুখারী, হা/১৫৯৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১২৭৬; আবূ দাঊদ, হা/১৮৭৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৬১।

[২১]­. ছহীহ বুখারী, হা/৪৯৯২; ছহীহ মুসলিম, হা/৮১৮; আবূ দাঊদ, হা/১৪৭৫; তিরমিযী, হা/২৯৪৩; নাসাঈ, হা/৯৩৮।

[২২]­. মুহাম্মাদ ইবনু সা‘দ, আত-ত্বাবাকাতুল কুবরা (বৈরূত: দারু ছাদির, তাবি), ২য় খ-, পৃ. ১০০।

[২৩]­. ইউসুফ ইবনু হাসান ইবনু আব্দুল হাদী আল-মুবাররাদ, মাহযুছ ছাওয়াব ফী ফাযাইলি আমীরিল মুমিনীন উমার ইবনুল খাত্তাব (মদীনা, সঊদী আরব: ইমাদাতুল বাহছিল ইলমী বিল জামি‘আলি ইসলামিয়্যাহ, ১ম সংস্করণ, ১৪২০ হি./১৯৯০ খ্রি.), ২য় খ-, পৃ. ৫৩৬।




বিদ‘আত পরিচিতি (২৯তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
কুরবানীর মাসায়েল - আল-ইখলাছ ডেস্ক
ইসলামে বিবাহের গুরুত্ব (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আবূ সাঈদ
ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমন সংশয় নিরসন - হাসিবুর রহমান বুখারী
মীলাদুন্নবী ও আমাদের অবস্থান - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (২০তম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমন সংশয় নিরসন (১০ম কিস্তি) - হাসিবুর রহমান বুখারী
ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আযীযুর রহমান
বিদ‘আত পরিচিতি (১২তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ইখলাছই পরকালের জীবনতরী (৫ম কিস্তি)  - আব্দুল গাফফার মাদানী
প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আত সম্পর্কে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের অবস্থান - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির
সচ্চরিত্রই মানব উন্নতির চাবিকাঠি - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর

ফেসবুক পেজ