রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ০৭:১৮ অপরাহ্ন

জঙ্গিবাদ বনাম ইসলাম

–আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম*


(৩য় কিস্তি)

[২য় কিস্তির পর]

(২). আল্লাহর পথে কুফরী শক্তির বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করা

আল্লাহর পথে কুফরী শক্তির বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করাকেও জিহাদ বলা হয়। এটা জিহাদের সর্বোচ্চ স্তর। যাকে ক্বিতাল বলা হয়। উহুদ যুদ্ধে মুমিনদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, اَمۡ حَسِبۡتُمۡ اَنۡ تَدۡخُلُوا الۡجَنَّۃَ وَ لَمَّا یَعۡلَمِ اللّٰہُ الَّذِیۡنَ جٰہَدُوۡا مِنۡکُمۡ وَ یَعۡلَمَ الصّٰبِرِیۡنَ ‘তোমরা কি ধারণা করছ যে, তোমরাই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ কারা জিহাদ করে এবং কারা ধৈর্যশীল আল্লাহ তোমাদের মধ্য হতে তাদেরকে কখনও পরীক্ষা করেননি?’ (সূরা আলে ইমরান : ১৪২)। এখানে এই জিহাদ অর্থ কুফরী শক্তির বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করা।[১] এই জিহাদকে আরবীতে ক্বিতাল (اَلْقِتَالُ) বলা হয়। اَلْقِتَالُ (ক্বিতাল) শব্দটি বাবে মুফা‘আলার মাছদার। অর্থ হল- যুদ্ধ করা, লড়াই করা, শত্রুতা করা, অভিশাপ দেয়া ইত্যাদি। যেমন-

১. পরস্পরে যুদ্ধ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الۡقِتَالُ ‘তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হয়েছে’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২১৬)।
২. প্রতিরোধ বা লড়াই করা। যেমন ছালাত আদায়কারীর সামনে দিয়ে গমনকারীর বিরুদ্ধে শাস্তিস্বরূপ রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, فَلْيُقَاتِلْهُ فَإِنَّهُ شَيْطَانٌ ‘তাহলে সে যেন তার সাথে লড়াই করে। কারণ সে একটা শয়তান’।[২]
৩. লা‘নত করা। যেমন ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান এবং কাফিরদের প্রতি লা‘নত করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,قٰتَلَہُمُ اللّٰہُ اَنّٰی یُؤۡفَکُوۡنَ ‘আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করুন! তারা কোন পথে চলছে’ (সূরা আত-তাওবাহ : ৩০)।

আল্লাহ তা‘আলা কুফরী শক্তির বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করার নির্দেশ প্রদান করে বলেন,

اَلَا تُقَاتِلُوۡنَ قَوۡمًا نَّکَثُوۡۤا اَیۡمَانَہُمۡ وَ ہَمُّوۡا بِاِخۡرَاجِ الرَّسُوۡلِ وَ ہُمۡ بَدَءُوۡکُمۡ اَوَّلَ مَرَّۃٍ اَتَخۡشَوۡنَہُمۡ فَاللّٰہُ اَحَقُّ اَنۡ تَخۡشَوۡہُ اِنۡ کُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ .قَاتِلُوۡہُمۡ یُعَذِّبۡہُمُ اللّٰہُ بِاَیۡدِیۡکُمۡ وَ یُخۡزِہِمۡ وَ یَنۡصُرۡکُمۡ عَلَیۡہِمۡ وَ یَشۡفِ صُدُوۡرَ قَوۡمٍ مُّؤۡمِنِیۡنَ . وَ یُذۡہِبۡ غَیۡظَ قُلُوۡبِہِمۡ وَ یَتُوۡبُ اللّٰہُ عَلٰی مَنۡ یَّشَآءُ وَ اللّٰہُ عَلِیۡمٌ حَکِیۡمٌ . اَمۡ حَسِبۡتُمۡ اَنۡ تُتۡرَکُوۡا وَ لَمَّا یَعۡلَمِ اللّٰہُ الَّذِیۡنَ جٰہَدُوۡا مِنۡکُمۡ وَ لَمۡ یَتَّخِذُوۡا مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ وَ لَا رَسُوۡلِہٖ وَ لَا الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَلِیۡجَۃً وَ اللّٰہُ خَبِیۡرٌۢ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ

‘তোমরা এমন লোকদের বিরুদ্ধে কেন যুদ্ধ করবে না যারা নিজেদের শপথগুলো ভঙ্গ করে ফেলেছে, আর রাসূলকে দেশান্তর করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এবং তারা তোমাদের বিরুদ্ধে নিজেরাই প্রথমে বিবাদ সৃষ্টি করেছে? বস্তুত আল্লাহই হচ্ছেন এ বিষয়ে বেশি হক্বদার যে, তোমরা তাঁকে ভয় কর, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো। তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ কর, আল্লাহ তোমাদের হাতে তাদের শাস্তি প্রদান করবেন এবং তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন, আর তোমাদেরকে তাদের উপর সাহায্য করবেন এবং মুমিনদের অন্তরসমূহকে প্রশান্ত ও ঠা-া করবেন। আর তাদের অন্তরসমূহের ক্ষোভ দূর করে দিবেন এবং (ঐ কাফিরদের মধ্যকার) যার প্রতি ইচ্ছা হয় তাওবাহ কবুল করবেন, আল্লাহ মহাজ্ঞানী প্রজ্ঞাময়। তোমরা কি ধারণা করেছ যে, তোমাদেরকে এভাবেই ছেড়ে দেয়া হবে? অথচ আল্লাহ তো এখনও সেই সব লোককে প্রকাশ করেননি, যারা তোমাদের মধ্য হতে জিহাদ করেছে এবং আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনগণ ছাড়া অন্য কাউকেও অন্তরঙ্গ বন্ধরূপে গ্রহণ করেনি; আর আল্লাহ তোমাদের সমস্ত কর্মের পূর্ণ খবর রাখেন’ (সূরা আত-তাওবা : ১২-১৬)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, لٰکِنِ الرَّسُوۡلُ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مَعَہٗ جٰہَدُوۡا بِاَمۡوَالِہِمۡ وَ اَنۡفُسِہِمۡ وَ اُولٰٓئِکَ لَہُمُ الۡخَیۡرٰتُ وَ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ ‘কিন্তু রাসূল ও তার সঙ্গীদের মধ্যে যারা মুসলিম ছিল তারা নিজেদের ধন সম্পদ ও প্রাণ দ্বারা জিহাদ করল; তাদেরই জন্য রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ এবং তারাই হচ্ছে সফলকাম’ (সূরা আত-তাওবাহ : ৮৮)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

ثُمَّ اِنَّ رَبَّکَ لِلَّذِیۡنَ ہَاجَرُوۡا مِنۡۢ بَعۡدِ مَا فُتِنُوۡا ثُمَّ جٰہَدُوۡا وَ صَبَرُوۡۤا اِنَّ رَبَّکَ مِنۡۢ بَعۡدِہَا لَغَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ

‘(তোমরা রবের পথে থেকে) যারা নির্যাতিত হবার পর হিজরত করে এবং পরে জিহাদ করে এবং ধৈর্য ধারণ করে; আপনার রব এসব কিছুর পর, তাদের প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা আন-নাহল : ১১০)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَتَّخِذُوۡا عَدُوِّیۡ وَ عَدُوَّکُمۡ اَوۡلِیَآءَ تُلۡقُوۡنَ اِلَیۡہِمۡ بِالۡمَوَدَّۃِ وَ قَدۡ کَفَرُوۡا بِمَا جَآءَکُمۡ مِّنَ الۡحَقِّ یُخۡرِجُوۡنَ الرَّسُوۡلَ وَ اِیَّاکُمۡ اَنۡ تُؤۡمِنُوۡا بِاللّٰہِ رَبِّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ خَرَجۡتُمۡ جِہَادًا فِیۡ سَبِیۡلِیۡ وَ ابۡتِغَآءَ مَرۡضَاتِیۡ تُسِرُّوۡنَ اِلَیۡہِمۡ بِالۡمَوَدَّۃِ وَ اَنَا اَعۡلَمُ بِمَاۤ اَخۡفَیۡتُمۡ وَ مَاۤ اَعۡلَنۡتُمۡ وَ مَنۡ یَّفۡعَلۡہُ مِنۡکُمۡ فَقَدۡ ضَلَّ سَوَآءَ السَّبِیۡلِ

‘হে মুমিনগণ! আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কর না; তোমরা কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করছ, অথচ তারা তোমাদের নিকট যে সত্য এসেছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এবং তোমাদেরকে বহিস্কৃত করেছে এই কারণে যে, তোমরা তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহকে বিশ্বাস কর। যদি তোমরা আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য আমার পথে জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হয়ে থাক, তবে কেন তোমরা তাদের সাথে গোপনে বন্ধুত্ব করছ? তোমরা যা গোপন কর এবং তোমরা যা প্রকাশ কর তা আমি সম্যক অবগত। তোমাদের যে কেউ এটা করে সে তো বিচ্যুত হয় সরল পথ হতে’ (সূরা আল-মুমতাহিনা : ১)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَ لَنَبۡلُوَنَّکُمۡ حَتّٰی نَعۡلَمَ الۡمُجٰہِدِیۡنَ مِنۡکُمۡ وَ الصّٰبِرِیۡنَ وَ نَبۡلُوَا۠ اَخۡبَارَکُمۡ ۡ ‘আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব, যতক্ষণ না আমরা জেনে নেই তোমাদের মধ্যে কে জিহাদকারী ও ধৈর্যশীল এবং আমরা তোমাদের কার্যাবলী পরীক্ষা করি’ (সূরা মুহাম্মাদ : ৩১)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الۡقِتَالُ وَ ہُوَ کُرۡہٌ لَّکُمۡ وَ عَسٰۤی اَنۡ تَکۡرَہُوۡا شَیۡئًا وَّ ہُوَ خَیۡرٌ لَّکُمۡ وَ عَسٰۤی اَنۡ تُحِبُّوۡا شَیۡئًا وَّ ہُوَ شَرٌّ لَّکُمۡ وَ اللّٰہُ یَعۡلَمُ وَ اَنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ 

‘তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হয়েছে। অথচ তা তোমাদের জন্য কষ্টকর। বহু বিষয় এমন রয়েছে, যা তোমরা অপসন্দ কর। অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আবার বহু বিষয় এমন রয়েছে, যা তোমরা পসন্দ কর। অথচ তা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। বস্তুতঃ আল্লাহ অধিক জানেন, কিন্তু তোমরা জানো না’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২১৬)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, اِنَّ اللّٰہَ یُحِبُّ الَّذِیۡنَ یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِہٖ صَفًّا کَاَنَّہُمۡ بُنۡیَانٌ مَّرۡصُوۡصٌ ‘যারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে সারিবদ্ধভাবে সুদৃঢ় প্রাচীরের মত, আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন’ (সূরা আছ-ছাফ্ফ : ৪)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

قَدۡ کَانَ لَکُمۡ اٰیَۃٌ فِیۡ فِئَتَیۡنِ الۡتَقَتَا فِئَۃٌ تُقَاتِلُ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ وَ اُخۡرٰی کَافِرَۃٌ یَّرَوۡنَہُمۡ مِّثۡلَیۡہِمۡ رَاۡیَ الۡعَیۡنِ وَ اللّٰہُ یُؤَیِّدُ بِنَصۡرِہٖ مَنۡ یَّشَآءُ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَعِبۡرَۃً لِّاُولِی الۡاَبۡصَارِ

‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য দু’টি দলের পরস্পর সম্মুখীন হওয়ার মধ্যে (বদরের যুদ্ধে) নিদর্শন রয়েছে, তাদের একদল আল্লাহর পথে সংগ্রাম করছিল এবং অপর দল অবিশ্বাসী ছিল, যারা প্রত্যক্ষ দৃষ্টিতে তাদেরকে দ্বিগুণ দেখছিল এবং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তদীয় সাহায্য দানে শক্তিশালী করেন, নিশ্চয়ই এর মধ্যে চক্ষুষ্মানদের জন্য উপদেশ রয়েছে’ (সূরা আলে ইমরান : ১৩)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَ اِذۡ غَدَوۡتَ مِنۡ اَہۡلِکَ تُبَوِّیُٔ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ مَقَاعِدَ لِلۡقِتَالِ وَ اللّٰہُ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ ‘(হে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)!) আর স্মরণ করুন, যখন আপনি আপনার পরিজনের নিকট হতে ভোরবেলায় বের হয়ে মুমিনদের যুদ্ধের জন্য ঘাঁটিতে বিন্যস্ত করেছিলেন, আর আল্লাহ তা‘আলা তো সব শোনেন, সব জানেন’ (সূরা আলে ইমরান : ১২১)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

اِنۡفِرُوۡا خِفَافًا وَّ ثِقَالًا وَّ جَاہِدُوۡا بِاَمۡوَالِکُمۡ وَ اَنۡفُسِکُمۡ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ – لَوۡ کَانَ عَرَضًا قَرِیۡبًا وَّ سَفَرًا قَاصِدًا لَّاتَّبَعُوۡکَ وَ لٰکِنۡۢ بَعُدَتۡ عَلَیۡہِمُ الشُّقَّۃُ وَ سَیَحۡلِفُوۡنَ بِاللّٰہِ لَوِ اسۡتَطَعۡنَا لَخَرَجۡنَا مَعَکُمۡ یُہۡلِکُوۡنَ اَنۡفُسَہُمۡ وَ اللّٰہُ یَعۡلَمُ اِنَّہُمۡ لَکٰذِبُوۡنَ

‘তোমরা অভিযানে বের হয়ে পড়, স্বল্প সরঞ্জামের সাথে কিংবা প্রচুর সরঞ্জামের সাথে; এবং জিহাদ কর আল্লাহর পথে নিজেদের মাল দিয়ে ও নিজেদের জান দিয়ে। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা জানতে। যদি আশু লাভের সম্ভাবনা থাকত এবং সফরও সহজ হত, তবে তারা অবশ্যই আপনার অনুগামী হত, কিন্তু তাদের কাছে যাত্রাপথ দীর্ঘ মনে হল। আর তারা এখনই আল্লাহর নামে শপথ করে বলবে; আমাদের সাধ্য থাকলে নিশ্চয়ই আমরা তোমাদের সাথে বের হতাম। তারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করছে। আল্লাহ জানেন যে, তারা তো মিথ্যাবাদী’ (সূরা আত-তাওবাহ : ৪১-৪২)।

রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,جَاهِدُوْا الْمُشْرِكِيْنَ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ وَأَلْسِنَتِكُمْ ‘তোমরা মুশরিকদের সাথে তোমাদের জান, মাল ও মুখ দ্বারা জিহাদ কর।[৩] আব্দুল্লাহ ইবনু হুবাশী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করা হল, সর্বোত্তম জিহাদ কোনটি? তিনি বললেন, مَنْ جَاهَدَ الْمُشْرِكِيْنَ بِمَالِهِ وَنَفْسِهِ ‘(সর্বোত্তম জিহাদ হল) যে ব্যক্তি জান ও মাল দিয়ে মুশরিকদের বিরূদ্ধে লড়াই করে।[৪] রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

اِنْتَدَبَ اللهُ لِمَنْ خَرَجَ فِيْ سَبِيْلِهِ لَا يُخْرِجُهُ إِلَّا إِيْمَانٌ بِيْ وَتَصْدِيْقٌ بِرُسُلِي أَنْ أَرْجِعَهُ بِمَا نَالَ مِنْ أَجْرٍ وَغَنِيْمَةٍ أَوْ أُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ

‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার পথের দায়িত্ব গ্রহণ করে, এই মুজাহিদ আমার ও আমার রাসূলের প্রতি ঈমান ও বিশ্বাসের সত্যতা স্বীকারের তাকীদেই স্বীয় ঘর থেকে আমার পথে বের হয়েছে, তাকে আমি অবশ্যই পরিপূর্ণ সাওয়াব দান করবো এবং গনীমতের মালসহ ঘরে ফিরিয়ে আনবো বা তাকে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করাব।[৫] রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ لَوْلَا أَنَّ رِجَالًا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ لَا تَطِيْبُ أَنْفُسُهُمْ أَنْ يَتَخَلَّفُوْا عَنِّيْ وَلَا أَجِدُ مَا أَحْمِلُهُمْ عَلَيْهِ مَا تَخَلَّفْتُ عَنْ سَرِيَّةٍ تَغْزُوْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ لَوَدِدْتُ أنْ أُقتَلَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ ثُمَّ أُحْيىَ ثُمَّ أُقتَلُ ثُمَّ أُحْيىَ ثمَُّ أُقتَلُ ثُمَّ أُحْيىَ ثُمَّ أُقْتَلُ

‘সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! যদি কিছুসংখ্যক মুমিন এমন না হত, যারা আমার সঙ্গে জিহাদে অংশ গ্রহণ করতে না পারা আদৌ পছন্দ করবে না, অথচ তাদের সকলকে আমি সওয়ারী জন্তুও সরবরাহ করতে পারছি না, এই অবস্থা না হলে আল্লাহর পথে যুদ্ধরত কোন ক্ষুদ্র সেনাদল হতেও আমি দূরে থাকতাম না। সেই মহান সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয় বস্তু হল, আমি আল্লাহর পথে নিহত হই অতঃপর জীবন লাভ করি। আবার নিহত হই, আবার জীবন লাভ করি এবং আবার নিহত হই, তারপরও পনুরায় জীবন লাভ করি। পরে আবার পুনরায় নিহত হই।[৬]

যায়েদ ইবনু খালেদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,مَنْ جَهَّزَ غَازِيًا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَقَدْ غَزَا وَمَنْ خَلَفَ غَازِيًا فِيْ أَهْلِهِ فَقَدْ غَزَا ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে কোন মুজাহিদকে যুদ্ধ সরঞ্জাম সরবরাহ করে তাকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে দেয়, সে নিজেই যেন জিহাদে অংশগ্রহণ করল। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্র পথের কোন মুজাহিদের অনুপস্থিতিতে তার পরিবার পরিজনকে উত্তমরূপে দেখাশোনা করে, সেও যেন নিজেই জিহাদে অংশগ্রহণ করল।[৭] আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

مَا مِنْ أَحَدٍ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ يُحِبُّ أَنْ يَرْجِعَ إِلَى الدُّنْيَا وَلَهُ مَا فِي الْأَرْضِ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا الشَّهِيْدُ يَتَمَنَّى أَنْ يَرْجِعَ إِلَى الدُّنْيَا فَيُقْتَلَ عَشْرَ مَرَّاتٍ لِمَا يَرَى مِنَ الْكَرَامَةِ

‘আল্লাহর রাস্তায় শহীদ ব্যতীত যে কোন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করার পর পুনরায় দুনিয়াতে ফিরে আসতে চাইবে না, যদিও পৃথিবীর যাবতীয় সম্পদ তাকে প্রদান করা হয়। শহীদগণ শাহাদত বরণের মর্যাদা দেখে আবার দুনিয়াতে ফিরে আসার আকাংখা করবে যাতে সে আরো দশ বার শহীদ হতে পারে।[৮]

মাসরূক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে এই আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়েছে, তোমরা তাদেরকে মৃত ধারণা করো না; বরং তারাও জীবিত। তারা তাদের প্রভুর নিকট হতে রিযক প্রাপ্ত হন’ (সূরা আলে-ইমরান : ১৬৯)। ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বললেন, আমরা এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনি বলেছেন,

أَرْوَاحُهُمْ فِيْ أَجْوَافِ طَيْرٍ خُضْرٍ لَهَا قَنَادِيْلُ مُعَلَّقَةٌ بِالْعَرْشِ تَسْرَحُ مِنَ الْجَنَّةِ حَيْثُ شَاءَتْ ثُمَّ تَأْوِيْ إِلَى تِلْكَ الْقَنَادِيْلِ فَاطَّلَعَ إِلَيْهِمْ رَبُّهُمُ اطِّلَاعَةً فَقَالَ هَلْ تَشْتَهُوْنَ شَيْئًا؟ قَالُوْا أَيَّ شَيْءٍ نَشْتَهِيْ وَنَحْنُ نَسْرَحُ مِنَ الْجَنَّةِ حَيْثُ شِئْنَا فَفَعَلَ ذَلِكَ بِهِمْ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ فَلَمَّا رَأَوْا أَنَّهُمْ لَنْ يُتْرَكُوْا مِنْ أَنْ يَسْأَلُوْا قَالُوْا يَا رَبُّ نُرِيْدُ أَنْ تُرَدَّ أَرْوَاحُنَا فِيْ أَجْسَادِنَا حَتَّى نُقْتَلَ فِيْ سَبِيْلِكَ مَرَّةً أُخْرَى فَلَمَّا رَأَى أَنْ لَيْسَ لَهُمْ حَاجَةٌ تُرِكُوْا

‘তাদের রূহসমূহ সবুজ বর্ণের পাখির পেটে অবস্থান করে এবং সেই পাখির জন্য আল্লাহ্র আরশের নিচে বাসা বা ছাউনি ঝুলন্ত অবস্থায় আছে। অতঃপর তারা জান্নাতে মনের ইচ্ছানুসারে উড়ে বেড়াবে। অতঃপর আবার ঐ সমস্ত ছাউনির দিকে ফিরে আসে। অতঃপর তাদের রব তাদের দিকে বিশেষ দৃষ্টি করত তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, তোমাদের কোন বস্তুর আকাঙ্খা আছে কি? উত্তরে তারা বলে, আমরা আর কি জিনিষেরই আকাঙ্খা করব? অথচ আমরা জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা সেখানে বিচরণ করছি। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে এভাবে তিনবার জিজ্ঞেস করেন, যখন তারা দেখে যে বার বার তাদেরকে একই কথা জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, তখন তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা চাচ্ছি যে আমাদের রূহগুলোকে পুনরায় আমাদের দেহের ভিতরে ফিরিয়ে দেয়া হোক, যেন আমরা পুনরায় আপনার রাস্তায় জিহাদ করে আবার শাহাদাত লাভ করতে পারি। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা যখন দেখেন যে, তাদের কোন জিনিসের আকাঙ্খা বা প্রয়োজন নেই, তখন তাদের সাথে এই প্রসঙ্গ ত্যাগ করেন’।[৯]

আবূ কাতাদাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছাহাবাদের মাঝে দাঁড়িয়ে খুৎবা দিলেন। তিনি বললেন,

أَنَّ الْجِهَادَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَالْإِيْمَانَ بِاللهِ أَفْضَلُ الْأَعْمَالِ فَقَامَ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَرَأَيْتَ إِنْ قُتِلْتُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ يُكَفَّرُ عَنِّيْ خَطَايَايَ؟ فَقَالَ لَهُ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَعَمْ إِنْ قُتِلْتَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَأَنْتَ صَابِرٌ مُحْتَسِبٌ مُقْبِلٌّ غَيْرُ مُدْبِرٍ ثُمَّ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَيْفَ قُلْتَ؟ فَقَالَ أَرَأَيْتَ إِنْ قُتِلْتُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ أَيُكَفَّرُ عَنِّيْ خَطَايَايَ؟ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَعَمْ وَأَنْتَ صَابِرٌ مُحْتَسِبٌ مُقْبِلٌ غَيْرُ مُدْبِرٍ إِلَّا الدَّيْنَ فَإِنَّ جِبْرِيْلَ قَالَ لِيْ ذَلِكَ

‘সবচেয়ে উত্তম আমল হল আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনায়ন করা। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনার অভিমত কি? যদি আমি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতে গিয়ে নিহত হই, তখন আমার সমস্ত গুণাহগুলো কি মাফ হয়ে যাবে? রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ। যদি তুমি আল্লাহর রাস্তায় এই অবস্থায় নিহত হও যে, তুমি একজন ধৈর্যধারণকারী, সাওয়াবের আকাক্সক্ষী, শত্রুর সম্মুক্ষে বুক ফুলিয়ে অগ্রগামী এবং যুদ্ধের ময়দান হতে পৃষ্ঠ প্রদর্শনকারী না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জিজ্ঞেস করেছিলে? লোকটি বলল, আপনি কি মনে করেন, যদি আমি আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তা হলে কি আমার সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যাবে? তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবার বললেন, হ্যাঁ। ঋণ ব্যতীত সমস্ত অপরাধই মাফ হয়ে যাবে। যদি তুমি একজন ধৈয্যধারণকারী, সাওয়াব অন্বেষণকারী, শত্রুর সম্মুক্ষে অগ্রগামী এবং রণক্ষেত্র হতে পলায়নকারী প্রমাণিত না হও। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) এই কথা আমাকে বলে গেছেন’।[১০] রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

يَضْحَكُ اللهُ تَعَالَى إِلَى رَجُلَيْنِ يَقْتُلُ أَحَدُهُمَا الْآخَرَ يَدْخُلَانِ الْجَنَّةَ يُقَاتِلُ هَذَا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَيُقْتَلُ ثُمَّ يَتُوْبُ اللهُ عَلَى الْقَاتِلِ فَيُسْتَشْهَدُ

‘দু’ ব্যক্তিকে দেখে আল্লাহ তা‘আলা হাসেন। যারা একজন অপর জনকে শহীদ করেও দু’জনই জান্নাতে প্রবেশ করে। দু’জনের মধ্যে একজন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে অতঃপর নিহত হয়। আর হত্যাকারীকে আল্লাহ তা‘আলা তওবার সুযোগ দান করেন, ফলে সে তওবা করে শহীদ হয়।[১১]

আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর ছাহাবীগণ মদীনা হতে রওনা হয়ে মুশরিকদের পূর্বেই ‘বদর’ নামক স্থানে পৌঁছে গেলেন। তারপর মুশরিকরা সেই স্থানে আসল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুসলিম মুজাহিদদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

قُوْمُوْا إِلَى جَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ قَالَ عُمَيْرُ بْنُ الْحُمَامِ بَخْ بَخْ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا يُحْمِلُكَ عَلَى قَوْلِكَ بَخْ بَخْ؟ قَالَ لَا وَاللهِ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَّا رَجَاءَ أَنْ أَكُوْنَ مِنْ أَهْلِهَا قَالَ فَإِنَّكَ مِنْ أَهْلِهَا قَالَ فَأَخْرَجَ تَمَرَاتٍ مِنْ قَرْنِهِ فَجَعَلَ يَأْكُلُ مِنْهُنَّ ثُمَّ قَالَ لَئِنْ أَنَا حَيِيْتُ حَتَّى آكُلَ تَمْرَاتِيْ إِنَّهَا الْحَيَاةُ طَوِيْلَةٌ قَالَ فَرَمَى بِمَا كَانَ مَعَهُ مِنَ التَّمْرِ ثُمَّ قَاتَلَهُمْ حَتَّى قُتِلَ

‘তোমরা এমন এক জান্নাতের রাস্তায় দ-ায়মান হয়ে যাও, যার প্রশস্ততা আসমান ও যমীনের ন্যায়। এমন সময় ‘উমায়ির ইবনু হুমাম আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে বললেন, বাহ! বাহ!। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে লক্ষ্য করে বললেন, তোমার বাহ! বাহ! বলার কারণ কি? তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এর দ্বারা আমার অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই; বরং আমি মাত্র এই আশায় বলেছি যে, আমিও যেন তার অধিবাসী হই। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, নিশ্চয়ই তুমি তার অধিকারী। বর্ণনাকারী আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, তখন ‘উমায়ির তার থলি হতে কিছু খেজুর বের করে খেতে লাগলেন। অতঃপর বলে উঠলেন, আমি যদি এই খেজুরগুলো খেয়ে শেষ করা পর্যন্ত বেঁচে থাকি, তবে তা হবে বড়ই দীর্ঘ জীবন। এই কথা বলেই তিনি অবশিষ্ট সমস্ত খেজুর ফেলে দিলেন এবং মুশরিকদের মোকাবেলায় ঝাঁপিয়ে পড়লেন, অবশেষে শহীদ হয়ে গেলেন।[১২] আবূ সাঈদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

مَنْ رَضِيَ بِاللهِ رَبًّا وَالْإِسْلَامِ دِيْنًا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُوْلًا وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ فَعَجِبَ لَهَا أَبُوْ سَعِيْدٍ فَقَالَ أَعِدْهَا عَلَيَّ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَأَعَادَهَا عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ وَأُخْرَى يَرْفَعُ اللهُ بِهَا الْعَبْدَ مِائَةَ دَرَجَةٍ فِيْ الْجَنَّةِ مَا بَيْنَ كُلِّ دَرَجَتَيْنِ كَمَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ قَالَ وَمَا هِيَ يَا رَسُوْلَ الله؟ قَالَ الْجِهَادُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ الْجِهَادُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ الْجِهَادُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ

‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে প্রতিপালক হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসাবে এবং মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে রাসূল হিসাবে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয়, তার জন্য জান্নাত অবধারিত। এই কথাগুলো শ্রবণ করে আবূ সাঈদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) অত্যধিক আনন্দিত হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! উপরিউক্ত কথাটি আমার সামনে পুনরাবৃত্তি করুন; রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুনরায় তা বললেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এছাড়া আরও একটি বস্তু আছে, যার দ্বারা আল্লাহ তাঁর বান্দাকে জান্নাতের মধ্যে একশ’ গুন উচ্চাসনের মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন। যার প্রতিটি স্তরের ব্যবধান আসমান ও যমীনের দুরত্বের সমান। আবূ সাঈদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! ঐ বস্তুটি কি? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ’।[১৩] আবু মূসা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

إِنَّ أَبْوَابَ الْجَنَّةِ تَحْتَ ظِلَالِ السُّيُوفِ فَقَامَ رَجُلٌ رَثُّ الْهَيْئَةِ فَقَالَ يَا أَبَا مُوْسَى أَنْتَ سَمِعْتَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ هَذَا؟ قَالَ نَعَمْ فَرَجَعَ إِلَى أَصْحَابِهِ فَقَالَ أَقْرَأُ عَلَيْكُمُ السَّلَامَ ثُمَّ كَسَرَ جَفْنَ سَيْفِهِ فَأَلْقَاهُ ثُمَّ مَشَى بِسَيْفِهِ إِلَى الْعَدُوِّ فَضَرَبَ بِهِ حَتَّى قُتِلَ

‘জান্নাতের দরজা সমূহ তলোয়ারের ছায়াতলে রয়েছে। এ কথা শুনে এক শ্রেণীর জীর্ণশীর্ণ প্রকৃতির লোক দাঁড়িয়ে বলল, হে আবূ মূসা! আপনি কি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছেন? আবূ মূসা বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর লোকটি তার সাথীদের নিকট এসে বলল, আমি তোমাদেরকে সালাম জানাচ্ছি। এ কথা বলে সে তলোয়ারের খাপ ভেঙ্গে ফেলল এবং তলোয়ার নিয়ে শত্রুদের দিকে অগ্রসর হল। উহা দ্বারা অনেক শত্রুক হত্যা করল এবং শেষে নিজেও শত্রুদের আঘাতে শহীদ হল’।[১৪]

ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ছাহাবীদেরকে বললেন, যখন তোমাদের ভাইয়েরা ওহুদের দিন শহীদ হয়ে গেছে, তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদের রূহসমূহকে এক একটি সবুজ রংয়ের পাখির মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। এই সমস্ত পাখিরা বেহেশতের ফল-ফলাদী ভক্ষণ করে এবং স্বর্ণের ছাউনি, যা আরশের নীচে ঝুলন্ত রয়েছে তাতে অবস্থান করে। অতঃপর সেই সমস্ত শহীদগণ যখন খানা পিনা এবং বিশ্রাম দ্বারা আনন্দ ও পরিতৃপ্তি উপভোগ করে, তখন তারা স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে বলে উঠে, এমন কে আছে, যে আমাদের ভাইদেরকে আমাদের পক্ষ হতে এই সংবাদ পৌঁছে দেবে যে, আমরা জান্নাতের মধ্যে জীবিত। যেন তারাও জান্নাত লাভ করতে অবহেলা না করে এবং জিহাদের সময় অলসতা ও অনীহা প্রকাশ না করে। তাদের এই আকাঙ্খা দেখে আল্লাহ তা‘আলা বললেন, আমিই তোমাদের পক্ষ থেকে তোমাদের অবস্থার সংবাদ তোমাদের দুনিয়ার ভাইদের কাছে পৌঁছে দেব। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করলেন, وَ لَا تَحۡسَبَنَّ الَّذِیۡنَ قُتِلُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ اَمۡوَاتًا بَلۡ اَحۡیَآءٌ عِنۡدَ رَبِّہِمۡ یُرۡزَقُوۡنَ ‘এবং যারা আল্লাহ্র রাস্তায় শহীদ হয়েছে তোমরা তাদেরকে মৃত ধারণা করো না; বরং তারা জীবিত’ (সূরা আলে ইমরান : ১৬৯) । আয়াতের শেষ পর্যন্ত।[১৫]

উতবা ইবনু আব্দ আস-সুলামী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, জিহাদে যে সমস্ত লোক মৃত্যুবরণ করে তারা তিন শ্রেনীর অন্তর্ভুক্ত।

১. খাঁটি মুমিন, যে স্বীয় জান-মাল দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে। শত্রুর সাথে যখন সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হয় তখন প্রাণপণে লড়াই করে। অবশেষে শহীদ হয়। এ জাতীয় শহীদের ব্যাপারে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এই শহীদ আল্লাহর পরীক্ষায় পুরোপুরি উত্তীর্ণ হয়েছে। সুতরাং এমন শহীদ আরশের নিচে আল্লাহর তাঁবুতে অবস্থান করবে। ঐ সমস্ত শহীদদের চেয়ে নবীগণের মর্যাদা কেবল নবুওতের মর্যাদা ব্যতীত কোন দিক দিয়ে বেশী হবে না।

২. যে মুমিন তার আমলকে ভাল ও মন্দের সাথে মিশ্রিত করে। অতঃপর নিজের জান-মাল দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে অংশগ্রহণ করে এবং যখন শত্রুর সম্মুখীন হয় তখন প্রাণপণে লড়াই করে। অবশেষে শহীদ হয়। এ জাতীয় শহীদ সম্পর্কে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এ ধরনের শাহাদত হল পবিত্রকারী, যা পাপরাশি মুছে দেয়। বস্তুত তলোয়ার হল পাপরাশি মোচনকারী। ফলে এ ধরনের শহীদ জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে।

৩. আর তৃতীয় প্রকার শহীদ হল মুনাফিক্ব, যে নিজের জান-মাল দিয়ে জিহাদে অংশগ্রহণ করে। অতঃপর যখন শত্রুর সম্মুখীন হয় তখন লড়াই করে নিহত হয়। মৃত্যুর পর এরূপ ব্যক্তির ঠিকানা হল জাহান্নাম। কেননা তলোয়ার মুনাফিক্বী মিটায় না।[১৬]

উপরিউক্ত আয়াত ও হাদীছগুলো জিহাদের সর্বোচ্চ স্তর ক্বিতালের নিদের্শ সম্বলিত দলীল এবং তা শর্ত সাপেক্ষে কাফির-মুশরিকদের সাথে সম্পৃক্ত। যার বিস্তারিত আলোচনা (জিহাদের শর্তাবলী) অধ্যায়ে আলোচনা করা হবে -ইনশাআল্লাহ।

(ইনশাআল্লাহ চলবে)

* পি-এইচ. ডি গবেষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

তথ্যসূত্র :
[১]. আবুল ফিদা ইসমাঈল ইবনু কাছীর, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, ২য় খ- (দারু ত্বায়্যেবা, ২য় সংস্করণ, ১৪২০ হি.), পৃ. ১২৭।
[২]. নাসাঈ, হা/৪৮৬২; ইবনু মাজাহ, হা/৯৫৪; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/১৭০২।
[৩]. আবূ দাঊদ, হা/২৫০৪; নাসাঈ, হা/৩০৯৬; দারেমী, হা/২৪৩১; মিশকাত, হা/৩৮২১।
[৪]. আবূ দাঊদ, হা/১৪৪৯।
[৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৭৬; মিশকাত, হা/৩৭৮৯।
[৬]. ছহীহ বুখারী, হা/২৭৯৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৭৬; মিশকাত, হা/৩৭৯০।
[৭]. ছহীহ বুখারী, হা/২৮৪৩; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৯৫; মিশকাত, হা/৩৭৯৭।
[৮]. ছহীহ বুখারী, হা/২৮১৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৭৭।
[৯]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৮৭; মিশকাত, হা/৩৮০৪।
[১০]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৮৫; মিশকাত, হা/৩৮০৫।
[১১]. ছহীহ বুখারী, হা/২৮২৬, ‘জিহাদ ও যুদ্ধকালীন আচার ব্যবহার’ অধ্যায়, ‘কোন কাফির যদি কোন মুসলিমকে হত্যা করে, অতঃপর ইসলাম গ্রহণ করতঃ দ্বীনের উপর অবিচল থেকে আল্লাহর পথে নিহত হয়’ অনুচ্ছেদ; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৯০।
[১২]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৯০১; মিশকাত, হা/৩৮১০।
[১৩]. ছহীহ মুসলিম, হা/৩৪; মিশকাত, হা/৩৮৫১।
[১৪]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৯০২; মিশকাত, হা/৩৮৫২।
[১৫]. আবূ দাঊদ, হা/২৫২০; মিশকাত, হা/৩৮৫৩; সনদ হাসান।
[১৬]. দারেমী, হা/২৪১১; মিশকাত, হা/৩৮৫৯; সনদ ছহীহ।




ইসলামী জামা‘আতের মূল স্তম্ভ (৪র্থ কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন
গোপন পাপ: ভয়াবহতা ও পরিত্রাণের উপায় অনুসন্ধান - ড. মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ
ইসলামী পুনর্জাগরণের প্রতিবন্ধকতা ও তার সমাধান (৩য় কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
বিদ‘আত পরিচিতি (৫ম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
তাক্বওয়া অর্জনে ছিয়াম - প্রফেসর ড. মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম
বিদ‘আত পরিচিতি (৬ষ্ঠ কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমন : সংশয় নিরসন (৩য় কিস্তি) - হাসিবুর রহমান বুখারী
কালো কলপ ব্যবহারের শারঈ বিধান - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
বিদ‘আত পরিচিতি (২৯তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ইসলামী পুনর্জাগরণের মূলনীতি (৬ষ্ঠ কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
রামাযানের স্বরূপ - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মহামারী থেকে বেঁচে থাকার দশটি উপদেশ - অনুবাদ : আযহার বিন আব্দুল মান্নান

ফেসবুক পেজ