মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০১:২৮ পূর্বাহ্ন

 ইসলামে দারিদ্র্য বিমোচনের কৌশল

-আবূ মুশফিক ফাহিম


(২য় কিস্তি)

ইসলামে দারিদ্র্য বিমোচনের ইতিবাচক কৌশলসমূহ*

দারিদ্র্য বিমোচনে কতিপয় কর্মকৌশল নির্ধারণ করা যরূরী। যার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন করা সম্ভব। ইসলামে এ ব্যাপারে অনেকগুলো ইতিবাচক পদক্ষেপ রয়েছে। যেমন,

১- কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাকরণ: ইসলামী অর্থব্যবস্থায় মানুষের কর্মসংস্থানের অধিকারের কেবল স্বীকৃতিই দেয়া হয়নি বরং এর নিশ্চিতকরণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এজন্যই ইসলাম ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের উন্নয়ন ও নিরাপত্তার জন্য ব্যক্তি পর্যায়ে কর্মসংস্থানের উপর জোর দিয়েছে। আল-কুরআনে মানুষকে যমীনের আবাদ ও শাসনকার্য পরিচালনার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।[১] ইসলামে নিজ হাতের কাজকে সর্বোত্তম ‘হালাল রিযিক’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এজন্য দেখা যায় যে, আল্লাহর নবী দাঊদ (আলাইহিস সালাম) নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন’।[২] রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ছাহাবীগণ নিজেদের কাজ নিজেরাই করতেন।[৩] কারো পক্ষে এক বোঝা লাকড়ি সংগ্রহ করে পিঠে বহন করে নেয়া উত্তম, কারো কাছে সাওয়াল করার চেয়ে।[৪] হাদীছে এসেছে, আবূ হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন,

لأَنْ يَغْدُوَ أَحَدُكُمْ فَيَحْطِبَ عَلَى ظَهْرِهِ فَيَتَصَدَّقَ بِهِ وَيَسْتَغْنِىَ بِهِ مِنَ النَّاسِ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَسْأَلَ رَجُلًا أَعْطَاهُ أَوْ مَنَعَهُ ذَلِكَ فَإِنَّ الْيَدَ الْعُلْيَا أَفْضَلُ مِنَ الْيَدِ السُّفْلَى وَابْدَأْ بِمَنْ تَعُوْلُ

‘তোমাদের যে কেউ ভোর বেলা বের হয়ে কাঠের বোঝা পিঠে বহন করে এনে তা থেকে সে ছাদাক্বাহ করে ও লোকের কাছে সাহায্য চাওয়া থেকে মুক্ত থাকে, সে ঐ ব্যক্তি থেকে অনেক ভাল, যে কারো কাছে সাওয়াল করে, যে তাকে দিতেও পারে, নাও পারে। উপরের হাত নিচের হাত হতে উত্তম। যাদের লালন-পালনের দায়িত্ব তোমার উপর রয়েছে তাদের দিয়ে (ছাদাক্বাহ) শুরু কর’।[৫] আবূ বাকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) নিজে ব্যবসা করে পরিবার পরিচালনা করতেন।[৬]

সম্মানজনক জীবিকা উপার্জনের জন্য ইসলাম গঠনমূলক কার্যক্রমের নীতি পেশ করেছে। শ্রমবিমুখ অলস জীবনকে ইসলাম অত্যন্ত ঘৃণা করে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) শ্রমজীবী ও পেশাজীবী মানুষদের আল্লাহর বন্ধুত্বের মর্যাদায় অভিষিক্ত করে পেশা গ্রহণের ক্ষেত্রে হীনমন্যতার অবসান ঘটিয়েছেন, যা দারিদ্র্য বিমোচনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে।[৭] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘নিশ্চয় আমি মানুষকে কঠোর কষ্ট ও শ্রমের মধ্যে সৃষ্টি করেছি’ (সূরাহ আল-বালাদ : ৪)। অতএব কঠোর শ্রম-সাধনা ও কর্ম প্রচেষ্টা কোন ব্যক্তি ও জাতির ভাগ্যোন্নয়নে সিংহভাগ অবদান রাখে। পক্ষান্তরে অলসতা ও পরমুখাপেক্ষিতা দারিদ্র্যের প্রবৃদ্ধি ঘটায়। সুতরাং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাকরণে ব্যক্তি ও সমাজের সদস্যদের পেশাগত দক্ষতা অর্জন ও উপার্জনে ভূমিকা রাখার কোন বিকল্প নেই। রাষ্ট্র সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে জনগণের মৌলিক চাহিদাসমূহ পূরণ নিশ্চিত করবে।[৮] ইসলাম প্রত্যেক সক্ষম নাগরিকের উপর তার নিজের ও তার উপর নির্ভরশীলদের জীবিকা অর্জন করার জন্য কাজ করাকে ফরয করে দিয়েছে (সূরা আল-মুলক : ১৫)। সম্পদ পুঞ্জিভূত করে রাখা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম হওয়ার কারণে সম্পদ অলস পড়ে থাকবে না বরং প্রতিনিয়ত ব্যবহৃত হবে। সম্পদশালীরা বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজতে থাকবে। ফলশ্রুতিতে অনেক কর্মসংস্থান ও সম্পদ সৃষ্টি হবে এবং এভাবে অভাব দূরীভূত হয়ে দারিদ্র্য বিমোচন হবে। দারিদ্র্য বিমোচনে ইতিবাচক দিক হিসাবে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে ইসলামের উৎসাহ, অনুপ্রেরণা ও দিক-নির্দেশনা রয়েছে। যার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয়ভাবে বেকারদের দ্রুত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে, তাহলে দারিদ্র্য বিমোচন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে কতিপয় উপায় ও কৌশল নির্ধারণ করা যরূরী। যেমন, হালাল উপায়ে ব্যবসা পরিচালনা করার দ্বার উন্মোচন[৯], নদ-নদী প্রকল্প/মাছ চাষ করার সুযোগ সৃষ্টি, ডেইরি ফার্মের মাধ্যমে পশুপালন কর্মসূচী, বৃক্ষরোপণ ইত্যাদি। তবে এক্ষেত্রে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে বেকারদের ব্যাপকহারে কসর্মসংস্থানের ব্যবস্থা দ্রুত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।

২- জাতীয় উৎপাদন ও আয় বৃদ্ধি করা: এটি দারিদ্র্য বিমোচনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক দিক। জাতীয় উৎপাদন ও আয়ের তিনটি ধারণা রয়েছে। ক. মোট জাতীয় উৎপাদন, খ. মোট দেশজ উৎপাদন এবং গ. নিট জাতীয় উৎপাদন। উক্ত তিনটি ধারণা যখন বৃদ্ধি করা হবে, তখন দেশের সামগ্রিক জাতীয় আয় ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাবে। যা দারিদ্র্য দূরীকরণে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকে। এব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো- ব্যক্তি, সমাজ, গোষ্ঠী কিংবা কোন রাষ্ট্রকে স্বেচ্ছাধীনভাবে আয় করার যেমন সুযোগ নেই, তেমনি ইচ্ছামত ভোগ ও ব্যয়েরও কোন সুযোগ নেই। ইসলামে জাতীয় উৎপাদন, দেশজ উৎপাদন, সম্পদ উপার্জন, ব্যবহার ও বণ্টনের ক্ষেত্রে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা বর্ণিত হয়েছে।[১০] ইসলামে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ধোঁকাবাজি ও প্রতারণার কোনই সুযোগ নেই।[১১] এজন্যই তো পণ্যের দোষ-ত্রুটি স্পষ্ট ও পরিপূর্ণভাবে বর্ণনা করতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।[১২] অন্যদিকে মজুদদারীও সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।[১৩]

৩- সুষম বণ্টন ব্যবস্থা: দারিদ্র্য বিমোচনের এটি আরেকটি দিক। ইসলামী বণ্টন নীতিমালা অসমবণ্টন নয় বরং ইনছাফপূর্ণ ও সুবিচার বা সুষম বণ্টন নীতিমালাই হলো ইসলামের মৌলিক নীতিমালা। ইসলামে রয়েছে যথার্থ মুক্তবাজার অর্থনীতি। যা সম্পূর্ণরূপে তাক্বওয়া, সততা, মানবিকতাবোধ ও নৈতিকতার বেড়াজালে পরিবেষ্টিত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

اَہُمۡ یَقۡسِمُوۡنَ رَحۡمَتَ رَبِّکَ ؕ نَحۡنُ قَسَمۡنَا بَیۡنَہُمۡ  مَّعِیۡشَتَہُمۡ فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا وَ رَفَعۡنَا بَعۡضَہُمۡ فَوۡقَ بَعۡضٍ دَرَجٰتٍ لِّیَتَّخِذَ بَعۡضُہُمۡ بَعۡضًاسُخۡرِیًّا ؕ وَ رَحۡمَتُ رَبِّکَ خَیۡرٌ  مِّمَّا یَجۡمَعُوۡنَ

‘তারা কি তোমার প্রতিপালকের করুণা বণ্টন করে? আমিই তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করি, পার্থিব জীবনে এবং একজনকে অপরের উপর মর্যাদায় উন্নত করি যাতে একে অপরের দ্বারা কাজ করিয়ে নিতে পারে এবং তারা যা জমা করে তা হতে তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ উৎকৃষ্টতর’ (সূরা আয-যুখরুফ : ৩২)। ইসলামের অর্থনীতির কারও কাছেই সম্পদ পুঞ্জীভূত হবার সুযোগ নেই। অর্থাৎ কোন না কোন পদ্ধতিতে একের হাত থেকে অন্যের হাতে বিভক্ত হবেই। ন্যায়ভিত্তিক সম্পদ বণ্টন না হলেই সামাজিক অসমতার সৃষ্টি হয়।[১৪] একটি দেশের জনপ্রতি বার্ষিক আয় বিপুল পরিমাণ হলেও সে দেশে দারিদ্র্যাবস্থা বিরাজমান থাকতে পারে। এ জন্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যে উপাদান যে কাজ করে তার ভিত্তিতে উৎপাদনের উপকরণসমূহের মধ্যে অর্জিত আয় সুষ্ঠুভাবে বণ্টন করা যরূরী। এতে আয়ের ব্যবহারিক বিতরণের প্রশ্ন এসে যায়। পাশ্চাত্যের প্রচলিত অর্থনীতিতে এ ধরনের বণ্টন হয় বিচারের নিয়মনীতি ছাড়াই চাহিদা ও সরবরাহের বাজার সূত্রের মাধ্যমে। কিন্তু উপকরণের মূল্য সংক্রান্ত ইসলামী নীতির ভিত্তি হচ্ছে ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতা।[১৫] এক্ষেত্রে আমল বিল মা‘রূফ ও নাহী আনিল মুনকার অন্যতম একটি মূলনীতি। এরই আলোকে প্রত্যেকেই যা হালাল তা অর্জনের জন্য যেমন সচেষ্ট হবে তেমনি যা হারাম তা বর্জনের জন্য সর্বাত্মক প্রয়াস চালাবে।[১৬] সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে ইসলামী মীরাছ বা উত্তরাধিকারীদের মধ্যে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির বাঁটোয়ারা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি।[১৭]

ইসলামী অর্থনীতি মানবস¤পদ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক স¤পদের বৈধ ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন ও আয় বৃদ্ধি করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে চায়। অপরদিকে অপচয় রোধ, সুষম বণ্টন ও আবর্তন নিশ্চিত করে দারিদ্র্যবিমোচন ও অর্থনৈতিক সাম্য স্থাপন করতে চায়।[১৮] এছাড়া সম্পদ বণ্টন এবং ব্যয়ের ক্ষেত্রে নি¤œলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখা যরূরী। ১. মানুষের অধিকারে যেসব সম্পদ আছে সবকিছু আল্লাহ প্রদত্ত। ২. পরকালীন সফলতাকে সামনে রেখে ব্যয় করা। ৩. যেহেতু সম্পদ আল্লাহ প্রদত্ত তাই এসবের ব্যয় আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী হতে হবে। ৪. আয়ের উৎস হারাম হতে পারবে না এবং হারাম কাজে অর্থ ব্যয়ও হতে পারবে না। ৫. মজুদদারী নিষিদ্ধ। ৬. অপব্যয় না করা। ৭. ইসলামী রাষ্ট্র দুর্বল ও অসহায় লোকদের অভিভাবক হিসাবে কাজ করবে।[১৯]

ইসলামের দৃষ্টিতে উৎপাদনের ৩টি উপাদান রয়েছে। ১. পুঁজি, ২. ভূমি ও ৩. শ্রম।[২০] ১. পুঁজি (ঈধঢ়রঃধষ) অর্থাৎ উৎপাদনের ঐ উপকরণ বা উপাদান, যাকে ব্যয় অথবা রূপান্তর করা ব্যতিরেকে উৎপাদন কার্যে ব্যবহার করা সম্ভবপর নয়। তাই একে ভাড়ায় খাটানো যায় না। যেমন- নগদ টাকা, খাদ্যদ্রব্য ইত্যাদি। ২. ভূমি (খধহফ) অর্থাৎ উৎপাদনের যে উপকরণকে কোন রকমের রূপান্তর না করেই খাটানো যায়, তাই একে ভাড়া হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন-জমি, বাসগৃহ, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি। ৩. শ্রম (খধনড়ঁৎ) অর্থাৎ মানুষের শারীরিক ও মানবিক উভয় প্রকারের মেহনত। সুতরাং ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা প্রণয়ন কার্যও এরই অন্তর্ভুক্ত।[২১]

উপর্যুক্ত উৎপাদকগণ বা উপাদানের মিলিত শ্রমের ফলে যে সম্পদের সৃষ্টি হয় তা প্রথমত তাদের সকলের মধ্যে এরূপভাবে বণ্টন করে দেয়া হয় যে, প্রথম অংশ মুনাফা হিসাবে পুঁজির প্রাপ্য সূদ হিসাবে নয়। দ্বিতীয় অংশ ভূমির জন্য ভাড়া বাবদ, আর তৃতীয় অংশ শ্রমকে মজুরী হিসাবে দেয়া হয়। অতএব দারিদ্র্য বিমোচনের ইসলামের উপর্যুক্ত ব্যবস্থাপনা অনুসারে যদি প্রত্যেকটি মানুষ ধন উপার্জন, ধনবণ্টন এবং ধনব্যয় নীতি মেনে চলে, তাহলে যেকোন সমাজ বা রাষ্ট্রে সুবিচার ও সুষম অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা হবে এবং দারিদ্র্যমুক্ত হবে ইনশাআল্লাহ।

৪- যাকাত: ইসলামী জীবন দর্শনে দারিদ্র্য বিমোচনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক দিক হলো যাকাত। এটি একটি ফরয ‘ইবাদত। সমাজের দরিদ্র, সহায়-সম্বলহীন মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য যাকাতের বিধান প্রবর্তিত হয়েছে। যাকাত মুসলিমদের ব্যবহারিক জীবনে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যের মূলোৎপাটন করে এক অভেদ্য সমাজ গঠনের শিক্ষা দেয়। যাকাত মানবতা প্রতিষ্ঠার এক কার্যকর পদক্ষেপ। রাসূল (ﷺ) এর রাষ্ট্র ব্যবস্থায় রাজস্ব আয়ের অন্যতম মাধ্যম ছিল যাকাত।[২২] দারিদ্র্য বিমোচনের স্থায়ী সমাধানে যাকাতের রয়েছে অপরিসীম ভূমিকা। সুষম অর্থনীতি প্রতিষ্ঠায় যাকাতের কোন জুড়ি নেই। বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে যাকাত একটি মাইলফলক। পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে যাকাত ভিত্তিক অর্থনীতি একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। যাকাত ভিত্তিক অর্থব্যবস্থা দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ের জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করে। ফলে বৈষম্যহীন সুষম সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়। শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ) (৬৬১-৭২৮ হি./১২৬৩-১৩২৮ খ্রি.) বলেন, نَفْسُ الْمُتَصَدِّقِ تَزْكُوْ وَمَالُهُ يَزْكُوْ يَطْهُرُ وَيَزِيْدُ فِيْ الْمَعْنَى ‘দানকারী ব্যক্তির অন্তর পবিত্র হয়। আর তার মাল বিপদমুক্ত ও পবিত্র হয় এবং প্রকৃতার্থে তার মালও বৃদ্ধি পায়’।[২৩]  মাওলানা আকরাম খাঁ বলেন, ‘জাকাত ইসলামী অর্থনীতির মূল ভিত্তি। জাকাত সমাজ ব্যবস্থাকে পরিচ্ছন্ন ও কলুষমুক্ত করে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে সার্বিকভাবে বিশুদ্ধ, পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রাখার অন্যতম শর্ত হিসাবে অশ্লীলতা, নগ্নতামুক্ত করার জন্য সালাত প্রতিষ্ঠা করা, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি অনুগত থাকার সাথে অপিরহার্য ব্যবস্থা থাকার নামই জাকাত’।[২৪] ইসলামী অর্থনীতিতে যাকাতের গুরুত্ব এতই বেশি যে, কেউ যদি তা দিতে অস্বীকার করে তাহলে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধও ঘোষণা করা যাবে বা তাকে শাস্তির সম্মুখীন করা যাবে।[২৫] এমনকি সে কাফির হিসাবে পরিগণিত হবে।[২৬] তাছাড়া যাকাত পরিত্যাগকারীর স্থান জাহান্নাম।[২৭] তাই যাকাত প্রদানে কোন ধরনের কূটকৌশলও করা যাবে না।[২৮]

যাকাত প্রদানের ৮টি খাত মূলত দারিদ্র্য বিমোচনের প্রধান হাতিয়ার। যাকাত যদি পরিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে বণ্টন হয়, তাহলে সমাজ হতে দারিদ্র্যতা বিদায় নিবে। তাছাড়া দারিদ্রতা নির্মূল এবং সমাজ ও রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রেও যাকাতের ভূমিকা অনন্য। আল্লাহ তা‘আলা যাকাত বণ্টনের জন্য নির্দিষ্ট খাত নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যা সঠিক ভাবে আদায় হলে সমাজ থেকে দারিদ্রতা এবং সূদ নির্মূল করা সম্ভব।[২৯] যাকাতের অর্থ বণ্টনের ৮টি খাতের মধ্যে ছয়টি খাতই দারিদ্র্যের সাথে সম্পৃক্ত।[৩০] ইসলামের যাকাত ও অন্যান্য ধর্মের দান-ছাদাক্বার মাঝে যেমন পার্থক্য আছে, তেমনি যাকাত ও রাষ্ট্রীয় ট্যাক্সের মাঝেও পার্থক্য আছে।[৩১] শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যাকাত দু’টি লক্ষ্যে নিবেদিত- আত্মশৃংখলা ও সামাজিক দারিদ্র্য নিরসন’। বিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও সমাজ বিজ্ঞানী ড. হাম্মুদাহ আব্দালাতি বলেন, ‘যাকাত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দুঃখ-কষ্ট নিবারণ করে। এটি অভাবীদের জন্য স্বস্তি ও ভাগ্যোন্নয়নের শ্রেষ্ঠ উপায়’।[৩২] যাকাতের অর্থ নিম্নোক্ত খাতে ব্যয় করলে দারিদ্র্য বিমোচনের পথ উন্মুক্ত হবে। যেমন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ, চিকিৎসা/স্বাস্থ্যনীতি জোরদারকরণ, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা জোরদার করা, বস্ত্রশিল্প/পোশাকশিল্পের অগ্রসরতা, ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা জোরদার করা, ইসলামী গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির উদ্ভাবন, দুঃস্থ ও অভাবগ্রস্তদের সহযোগিতা প্রদান করা, মসজিদ ভিত্তিক কার্যক্রম গ্রহণ, যাকাত কল্যাণ ট্রাস্ট ও উপায়-উপকরণ সরবরাহ, অর্থনীতিতে দক্ষতা ও ন্যায়পরায়ণতা অর্জনে জাকাত, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও পুণর্বাসন, মুনাফাবিহীন কর্জে হাসানা, ব্যবসায়ে পুঁজি সরবরাহ, যাকাত অর্থনৈতিক কর্মকা-ে গতিশীলতা ও স্থিতিশীলতা আনয়ন করে, গ্রামীণ বিত্তহীন-ভূমিহীনদের জন্য কর্মসূচী, বেকার সমস্যার সমাধানে যাকাত, কর্মসংস্থান ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে যাকাত, পল্লীর জনগোষ্ঠীর আর্থিক উন্নয়নে যাকাত, অর্থনৈতিক মজুতদারী দূরীকরণ যাকাত, শিল্পকারখানা স্থাপন ইত্যাদি।

অতএব একথা সর্বজনবিদিত যে, দারিদ্র্য বিমোচনে ইসলামের ইতিবাচক কৌশল হিসাবে যেগুলো আলোচনা করা হলো, সেগুলো যথাযথ ও পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে প্রতিপালিত হলে রাষ্ট্রকে দারিদ্র্যের হিং¯্র আক্রমণ থেকে রক্ষা করা যাবে। সুতরাং দারিদ্র্য দূরীকরণে যাকাত ভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করার বিকল্প কোন পথ নেই।

ইসলামে দারিদ্র্য বিমোচনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

কোন কিছু বাস্তবায়নের জন্য যেমন বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপের প্রয়োজন হয়, তেমনি কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করাও বাঞ্ছনীয়। তাই দারিদ্র্যের মত অভিশাপ থেকে পরিত্রাণের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের সাথে সাথে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যরূরী। সমাজে বিত্তবান ও বিত্তহীন, ধনী ও দরিদ্র এ দু’শ্রেণীর উদ্ভব হওয়ার পিছনে কারণ হচ্ছে সম্পদ কতিপয় হাতে কেন্দ্রীভূত হওয়া। ইসলামী অর্থনীতিতে এমন কতকগুলো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার বিধান রয়েছে যার ফলে সম্পদ কেন্দ্রীভূত বন্ধ হয় এবং সম্পদের ইনছাফপূর্ণ বণ্টন সম্ভব হয়।[৩৩] এক্ষেত্রে উন্নয়নশীল অর্থনীতির সমস্যাগুলো নিরসন করার কোন বিকল্প নেই। একটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে চারটি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। বাধাগুলো হচ্ছে অবকাঠামোগত দুর্বলতা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ঘাটতি, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং আন্তর্জাতিক বাজার ও অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা কমে যাওয়া।[৩৪] এছাড়া মালিকানা নিয়ন্ত্রণ[৩৫], ধনবণ্টনে বৈষম্য দূরীকরণ[৩৬], সঞ্চয় ও ভোগের সমন্বয় সাধন[৩৭], সুদ, ঘুষ ও জুয়া প্রথার উচ্ছেদ[৩৮] করা দরকার। সাথে সাথে দুর্নীতি ও আত্মসাৎ প্রথার উচ্ছেদ সাধন[৩৯], মাদকাসক্তির নিয়ন্ত্রণ[৪০], পরনির্ভরশীলতা নীতি বর্জন[৪১], হারাম পণ্যের ব্যবসা, দালালী বা প্রতারণা, ওজনে কমবেশি করা, পণ্যের দোষ গোপন করা ইত্যাদি বিষয়গুলো যদি কঠোরভাবে প্রতিরোধ করা যায়, তাহলে দারিদ্র্য বিমোচন করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।

উপসংহার

ব্যক্তি, সমাজ, দেশ ও জাতির কল্যাণ-অকল্যাণে দারিদ্র্য বিমোচনের অবদান অপরিসীম। একটি দেশের জাতীয় উন্নয়ন নির্ভর করে সে দেশের শান্তি, শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর। দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতার দ্বার উন্মোচিত হয়। ফলে সকল সামাজিক বৈষম্য দূরীভূত হয়ে এক অনুপম বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। আর সেটা কেবল ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ যাকাতের মাধ্যমেই সম্ভব। মূলত যাকাত ব্যবস্থাই শ্রেণীহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা ও জাতীয় উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। প্রকৃতপক্ষে যাকাত, ছাদাক্বাহ বা দান, উপঢৌকন, আপ্যায়ন ইত্যাদি এ সকলের মাধ্যমে সম্প্রীতি, ঐক্যবোধ পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা এবং কল্যাণ কামনার বুনিয়াদের সকল বৈষম্য দূর হয়ে সাম্য-মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্বভিত্তিক কল্যাণময় সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই ইসলামে সামাজিক বৈষম্য দূর করে সাম্য-মৈত্রীর সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যাকাত বিধান এক বিষ্ময়কর ব্যবস্থার নাম। এভাবেই জাতীয় উন্নয়ন ও পরিকল্পনায় দারিদ্র্য বিমোচনের প্রভাবটা প্রশংসনীয়। সুতরাং দারিদ্রতার কষাঘাতকে রুখে দিতে একটি কার্যকর কৌশল ও নিয়ামক শক্তি হিসাবে যাকাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কেননা দারিদ্র্য বিমোচনে ইসলামী নীতির মূল ভিত্তি হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার উপর বিশ্বাস ও সামাজিক ন্যায় বিচারের ইসলামী ধারণা। দারিদ্র্য বিমোচন সম্পর্কে ইসলামে রয়েছে যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত দিক নির্দেশনা। আর সেই দিক-নির্দেশনা অনুসরণের মাধ্যমেই দারিদ্র্যমুক্ত হবে দেশ, দুঃখ-পীড়িত মানুষের ঘুচবে অভাবের তাড়না।

* শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আল-ইসলামিয়্যাহ, খড়খড়ি, রাজশাহী।

তথ্যসূত্র :
[১]. ‘আব্দুর রহমান ইবনু নাসির ইবনু ‘আব্দিল্লাহ আস-সা‘আদী, তাইসীরুল কারীমির রহমান ফী তাফসীরী কালামিল মান্নান (বৈরূত: মুওয়াস্সাসাতুর রিসালাহ, ১ম সংস্করণ, ১৪২০ হি./২০০০ খ্রি.), পৃ. ৩৮৪।
[২]. মুহাম্মাদ ইবনু ইসমা‘ঈল আবূ ‘আব্দিল্লাহ আল-বুখারী আল-জু‘ফী, ছহীহুল বুখারী, ২য় খণ্ড (বৈরূত : দারু ইবনি কাছীর, ৩য় সংস্করণ, ১৪০৭ হি./১৯৮৭ খ্রি.), পৃ. ৭৩০, হা/১৯৬৬।
[৩]. আহমাদ ইবনু শু‘আইব আবূ ‘আব্দির রহমান আন-নাসাঈ, সুনানুন নাসাঈ আল-কুবরা, ১ম খণ্ড (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যাহ, ১ম সংস্করণ, ১৪১১ হি./১৯৯১ খ্রি.), পৃ.৫২২, হাদীছ নং-১৬৮২।
[৪]. ছহীহুল বুখারী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৭৩০, হাদীছ নং-১৯৬৮।
[৫]. মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ আবুল হুসাইন আন-নাইসাপুরী সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড (বৈরূত : দারু ইহয়িাইত তুরাসিল ‘আরাবী, তা.বি.), পৃ. ৭২১, হাদীছ নং-১০৪২ ‘যাকাত’ অধ্যায়-১২, অনুচ্ছেদ-৩৪।
[৬]. আহমাদ ইবনুল হুসাইন ইবনু ‘আলী ইবনু মূসা আবূ বাকর আল-বাইহাকী, সুনানুল বাইহাকী আল-কুবরা, ৬ষ্ঠ ণ্ড (মক্কাতুল মুকাররমা : মাকতাবাতু দারিল বায, ১৪১৪ হি./১৯৯৪ খ্রি.), পৃ. ৩৫৩, হাদীছ নং-১২৭৮৫।
[৭]. মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম, “দারিদ্র্য বিমোচন : ইসলামী প্রেক্ষিত”, দারিদ্র্য বিমোচনে ইসলাম, পৃ. ২৯-৩০।
[৮]. মুহাম্মাদ ইবনু ইসমা‘ঈল আবু ‘আব্দিল্লাহ আল-বুখারী আল-জু‘ফী, আল-আদাবুল মুফরাদ (বৈরূত : দারুল বাশাইরিল ইসলামিয়্যাহ, ৩য় সংস্করণ, ১৪০৯ হি./১৯৮৯ খ্রি.), পৃ. ৫২, হাদীছ নং-১১২; আহমাদ ইবনু ‘আলী ইবনুল মুছান্না আবূ ই‘আলা আল-মূসীলী আত-তামীমী, মুসনাদু আবী ই‘আলা, ৫ম ণ্ড (দামিস্ক : দারুল মামূন লিত তুরাছ, ১ম সংস্করণ, ১৪০৪ হি./১৯৮৪ খ্রি.), পৃ. ৯২, হাদীছ নং-২৬৯৯।
[৯]. ছহীহুল বুখারী, ৩য় ণ্ড, পৃ. ১২৭২, হাদীছ নং-৩২৬৬।
[১০]. সূরা আন-নিসা : ২৯; সূরা আত-তাওবাহ : ৩৪; সূরা আল-বাকারাহ : ২৭৫; সূরা আল-হাশর : ৭; সূরা আল-জারিয়াহ : ১৯; সুলাইমান ইবনুল আশ‘আস আবূ দাঊদ আস-সিজিস্তানী সুনানু আবী দাঊদ, ২য় ণ্ড (বৈরূত : দারুল ফিকর, তা.বি.), পৃ. ২৭৪, হাদীছ নং-৩৩৭৬।
[১১]. ছহীহ মুসলিম, ১ম ণ্ড, পৃ. ৯৯, হাদীছ নং-১০২।
[১২]. প্রাগুক্ত, ৩য় ণ্ড, পৃ. ১১৬৪, হাদীছ নং-১৫৩২।
[১৩]. প্রাগুক্ত, ২য় ণ্ড, পৃ. ১২২৭, হাদীছ নং-১৬০৫; মুহাম্মাদ ইবনু হিব্বান ইবনু আহমাদ, ছহীহ ইবনু হিব্বান, ১১শ ণ্ড ( বৈরূত : মুওয়াস্সাসাতুর রিসালাহ, ২য় সংস্করণ, ১৪১৪ হি./১৯৯৩ খ্রি.), পৃ. ৩০৮, হাদীছ নং-৪৯৩৬।
[১৪] শাহ মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম, “শ্রেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ হযরত মুহাম্মদ (সা)”, দারিদ্র্য বিমোচনে ইসলাম, পৃ. ১২৩।
[১৫] মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম, “দারিদ্র্য বিমোচন : ইসলামী প্রেক্ষিত”, দারিদ্র্য বিমোচনে ইসলাম, পৃ. ৩২-৩৩।
[১৬] শাহ মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান, ইসলামী অর্থনীতি (নির্বাচিত প্রবন্ধ), পৃ. ৩৮-৩৯।
[১৭]. প্রাগুক্ত, পৃ. ৪০।
[১৮]. সূরা আল-বাকারাহ : ৩; সূরা আল-বাকারাহ : ১৬৮; সূরা বানী ইসরাঈল : ২৭; সূরা আন-নূর ৩৩; সূরা আয-যারিয়াত : ১৯; সূরা আত-তাওবাহ : ৬০; সূরা আল-বাকারাহ : ১৭৭।
[১৯]. মোঃ জিল্লুর রহমান পাটোয়ারী, “ইসলামী অর্থনীতিতে সম্পদ উপার্জন, বণ্টন ও ব্যয়নীতি”, দৈনিক সংগ্রাম, ঢাকা, ৭ই মার্চ ২০১০।
[২০]. মুফতী মুহাম্মাদ শফী, ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পদ বণ্টন (ঢাকা : আধুনিক প্রকাশনী, ২য় সংস্করণ ১৯৯৮), পৃ. ১১।
[২১]. তদেব।
[২২]­. সীরাত বিশ্বকোষ, ৫ম ণ্ড, পৃ. ১৩৫-১৩৭।
[২৩]. তাক্বীউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস ‘আব্দুল হালীম ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ঊল ফাতাওয়া, ২৫তম ণ্ড (মদীনা : মাজমাঊল মালিক ফাহাদ, ১৪১৬ হি./১৯৯৫ খ্রি.), পৃ. ৮।
[২৪]. Muhammad Akram Khan, An Introduction To Islamic Economics (Islamabad : International Institute of Islamic Thought, 1994), p-81.
[২৫]. ‘আব্দুল্লাহ ইবনু আহমাদ ইবনু কুদামা আল-মাকদিসী, আল-মুগনী, ২য় ণ্ড (বৈরূত : দারুল ফিকর, ১ম সংস্করণ ১৪০৫ হি.), পৃ. ৪৩৩।
[২৬]. মুহাম্মাদ ইবনু ছালিহ আল-‘উছাইমীন, মাজমূ‘ঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, ১৮তম ণ্ড (দারুল ওয়াতান, ১৪১৩ হি.), পৃ. ১৪।
[২৭]. সুলাইমান ইবনু আহমাদ ইবনু আইয়ূব আবুল কাসিম আত-ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুছ ছাগীর, ২য় ণ্ড (বৈরূত : আল-মাকতাবুল ইসলামী, ১ম সংস্করণ ১৪০৫ হি./১৯৮৫ খ্রি.), পৃ. ১৪৫, হাদীছ নং-৯৩৫।
[২৮]. ছহীহুল বুখারী, ৬ষ্ঠ ণ্ড, পৃ. ২৫৫১, হাদীছ নং-৬৫৫৬; আহমাদ ইবনু হাজার আল-‘আসকালানী, ফাৎহুল বারী শারহু ছহীহিল বুখারী, ৩য় ণ্ড (বৈরূত : দারুল মা‘আরিফ, ১৩৭৯ হি.), পৃ. ৩১৪; আবুল ‘আলা মুহাম্মাদ ‘আব্দির রহমান ইবনু ‘আব্দির রহীম আল-মুবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াযী বিশারহি জামিঈত তিরমিযী, ৩য় ণ্ড (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যাহ, তা.বি.),  পৃ. ২০৪।
[২৯]. আবুত তাইয়িব মুহাম্মাদ ছিদ্দীক খান ইবনু হাসান ভূপালী, আর-রওযাতুন নাদিইয়াহ, ১ম ণ্ড (রিয়াদ : দারু ইবনিল কাইয়িম, ১ম সংস্করণ ১৪২৩ হি./২০০৩ খ্রি.), পৃ. ৪৮; আবু মুছ‘আব মুহাম্মাদ সাবহী ইবনু হাসান খাল্লাক, আল-আদিল্লাতুল রাযিইয়াহ লি মাতানিদ দুরারিল বাহিইয়াহ ফিল মাসাইলিল ফিকহিইয়াহ (বৈরূত : দারুল ফিকর, তা.বি.), পৃ. ৯২।
[৩০]. মুহাম্মদ লোকমান হাকীম, দারিদ্র্য বিমোচনে যাকাতের ভূমিকা (ঢাকা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ২০১২ খ্রি.), পৃ. ১৩১।
[৩১]­. যাকাত ও রাষ্ট্রীয় করের মধ্যে পার্থক্য: ক. যাকাত শুধু মুসলিমদের উপর ফরয ইবাদত এবং ঈমানের সাথে সম্পৃৃক্ত। তাই ব্যক্তিকে তার নিজের সঞ্চিত সম্পদের হিসাব নিজে কষেই তার যথার্থ যাকাত আদায় করতে হয়, সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে এর ব্যবস্থা করুক বা না করুক। পক্ষান্তরে করের ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা হয়ে থাকে এবং এটা ঈমানের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়ও নয়। মুসলিম, অমুসলিম সকল নাগরিকেরই কর আদায় করতে হয়।
খ. কর হচ্ছে বাধ্যতামূলকভাবে সরকারকে প্রদত্ত নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ, যার জন্য করদাতা প্রত্যক্ষ উপকার আশা করতে পারে। সরকারও করের অর্থ দরিদ্র-অভাবী জনসাধারণের মধ্যে ব্যয়ের জন্য বাধ্য থাকেন না। পক্ষান্তরে যাকাতের অর্থ অবশ্যই আল-কুরআনে নির্দেশিত লোকদের মধ্যে বিলি-বণ্টন করতে হয়।
গ. যাকাতের অর্থ রাষ্ট্রীয় সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ব্যয় করা যাবে না। কিন্তু করের অর্থ যে কোন কাজে ব্যয়ের ক্ষমতা ও পূর্ণ স্বাধীনতা সরকারের রয়েছে। কর বা ট্যাক্সের অর্থ দ্বারা দেশের সকল নাগরিকই সুবিধা ভোগ করতে পারবে। কিন্তু যাকাতের অর্থ দ্বারা শুধু যাকাত গ্রহীতাই সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
ঘ. যাকাত শুধু বিত্তশালী মুসলিমদের জন্যই বাধ্যতামূলক। কিন্তু কর বিশেষত পরোক্ষ কর সর্বসাধারণের উপর আরোপিত হয়ে থাকে। অধিকন্তু প্রত্যক্ষ করেরও বিরাট অংশ জনসাধারণকে দিতে হয়।
ঙ. যাকাত ধার্য করা হয় মূল অস্থাবর সম্পদের উপর। এতে আয় ও মূলধনের কোন পার্থক্য করা হয় না বরং সম্পদ ঘরে জমা থাকলেও যাকাত দিতে হয়। পক্ষান্তরে কর ধার্য করা হয় আয়ের উপর। আয় বাড়লে করের পরিমাণ বাড়ে।
চ. যাকাতের মধ্যে করের সকল উত্তম গুণাবলী বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও যাকাতের হার স্থির ও অপরিবর্তনীয়। কিন্তু করের হার স্থির নয়। যে কোন সময়ে সরকারের ইচ্ছানুযায়ী করের হার ও করযোগ্য বস্তু বা সামগ্রীর পরিবর্তন হতে পারে।
ছ. উৎপাদনশীল জমির (স্থাবর সম্পত্তি) কর বাধ্যতামূলক, দিতেই হবে (ফসল হোক বা না হোক)। পক্ষান্তরে ফসল উৎপাদিত হলেই শুধু যাকাত দিতে হবে; অন্যথা নয়। মূলত ফসলের যাকাতকে ‘উশর বলা হয়। কর জমির উপর ধার্য করা হয়। আর ফসলের যাকাত ‘উশর ফসলের উপর ধার্য করা হয়।
-দ্র. : মোহাম্মদ আবদুল লতিফ, “দারিদ্র্য বিমোচনে যাকাত : প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ”, দারিদ্র্য বিমোচনে ইসলাম, পৃ. ১৭০-১৭১।
[৩২] মো: আবুল কাসেম ভূঁইয়া, “সামাজিক নিরাপত্তায় যাকাত”, ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা, ঢাকা, অক্টোবর-ডিসেম্বর, ২০০৬ খ্রি., পৃ. ৩১।
[৩৩]. মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম, “দারিদ্র্য বিমোচন : ইসলামী প্রেক্ষিত”, দারিদ্র্য বিমোচনে ইসলাম, পৃ. ৩৪-৩৫।
[৩৪]­. https:/ww/w.prothomalo.com/business/analysis/অর্থনৈতিক-প্রবৃদ্ধি-অর্জনে-চার-বড়-বাধা।
[৩৫]. মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম, “দারিদ্র্য বিমোচন : ইসলামী প্রেক্ষিত”, দারিদ্র্য বিমোচনে ইসলাম, পৃ. ৩৫।
[৩৬]. এক্ষেত্রে সাম্য স্থাপনের জন্য ইসলামী মীরাছ বা উত্তরাধিকারীদের মধ্যে মৃতের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বাটোয়ারা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায়। শাহ মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান, ইসলামী অর্থনীতি (নির্বাচিত প্রবন্ধ), পৃ. ১৬৩-১৬৪।
[৩৭]. সঞ্চয় ও ভোগের মধ্যে সমন্বয় সাধন অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অন্যতম পূর্ব শর্ত। মানুষ যা আয় করে তার কিছু অংশ ভোগ করে এবং কিছু অংশ সঞ্চয় করে। ভোগ বর্তমান দ্রব্য ও সেবার চাহিদা বাড়িয়ে দেয় এবং সঞ্চয় পুঁজি গঠনে সাহায্য করে, যা পরবর্তীতে দ্রব্য ও সেবা উৎপাদনের ইন্ধন যোগায়। সুতরাং এ দু’য়ের মাঝে যে কোন ধরনের বৈষম্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে দারুণ বাঁধার সৃষ্টি করে। -Irfan-ul-Haque, Economic Doctrines of Islam, The international Institute of Islamic thought, Academic dissertain, No.3, p-200.
[৩৮]. সূদের ফলেই দারিদ্র্যের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এজন্য ইসলামের দিক-নির্দেশনার সাথে সাথে আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ সূদকে নিষিদ্ধের কথা বলেছেন। তারা সূদকে নিষিদ্ধের কিছু কারণও উল্লেখ করেছেন। যথা: (ক) সূদ সমাজ শোষনের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম (খ) সূদের কারণেই সমাজে ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান ক্রমেই বেড়ে যায় (গ) সূদ মানুষকে স্বার্থপর ও কৃপণ করে (ঘ) সূদ শ্রমবিমুখতা ও অলসতা সৃষ্টি করে (ঙ) সূদের কারণেই ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পায় (চ) সূদের পরোক্ষ ফল হিসাবে একচেটিয়া কারবারের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পায় (ছ) সূদের ফলে মুষ্টিমেয় লোকের মধ্যে পুঁজি সীমাবদ্ধ থাকে (জ) সূদ দীর্ঘমেয়াদী ও স্বল্প লাভজনক ক্ষেত্রে বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করে (ঝ) সূদ বৈদেশিক ঋণের বোঝা বাড়ায় (ঞ) সূদের বিদ্যমানতার ফলেই জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতা ক্রমশ: হ্রাস পেতে থাকে (ট) সূদভিত্তিক ঋণে তৈরি প্রতিষ্ঠান কোন ক্ষতির সম্মুখীন হলে সম্পূর্ণ পর্যদুস্ত হয় (ঠ) সূদভিত্তিক ব্যাংকিং ও ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দেউলিয়াত্বের বোঝা সমগ্র জাতির ঘাড়ে চাপে ইত্যাদি। দ্র.: ড. মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, “ইসলামী অর্থনীতির মূলনীতি: একটি পর্যালোচনা”, ইসলামিক স্টাডিজ রিসার্চ জার্নাল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জুলাই ২০১০, ভলিউম ৪, পৃ. ২৯-৩০.
[৩৯]. সূরা আলি ‘ইমরান : ১৬১; ছহীহ মুসলিম, পৃ. ৬০৭, হাদীছ নং-১৮৩৩, ‘ইমারত’ অধ্যায়-৩৩, অনুচ্ছেদ-৭; ‘আব্দুল ইবনুল যুবাইর আবূ বাকর আল-হুমাইদী, মুসনাদুল হুমাইদী, ২য় ণ্ড (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যাহ,তা.বি.), পৃ. ৩৯৬, হাদীছ নং-৮৯৪; মিশকাতুল মাসাবীহ, ১ম ণ্ড, পৃ. ৪০০, হা/১৭৮০, ‘যাকাত’ অধ্যায়; ইমাম আবূ ‘আওয়ানাহ ইয়া‘কূব ইবনু ইসহাক আল-আসফারাইনী, মুসনাদু আবী ‘আওয়ানাহ, ৪র্থ ণ্ড (বৈরূত : দারুল মা‘আরিফাহ, তা.বি.), পৃ. ১২০, হাদীছ নং-৬২৪৬; ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ইবনু মাখলাদ ইবনু রাওয়াহা, মুসনাদু ইসহাক ইবনি রাওয়াহা, ২য় ণ্ড (মদীনাতুল মুনাওয়ারা : মাকতাবুল ঈমান, ১ম সংস্করণ ১৪১২ হি./১৯৯১ খ্রি.), পৃ. ৩৩৪, হাদীছ নং-৮৬০।     
[৪০]. মোঃ মোশাররাফ হোসাইন, “মাদকাসক্তি : বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে এর প্রভাব”, ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা, ৪৯ বর্ষ ৪র্থ সংখ্যা, এপ্রিল-জুন ২০১০), পৃ. ১১৬।
[৪১] মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম, আল-কুরআনে রাষ্ট্র ও সরকার (ঢাকা : খায়রুন প্রকাশনী, ১৯৯৫ খ্রি.), পৃ. ৩১৬।




দ্বীনি শিক্ষার গুরুত্ব - আব্দুল গাফফার মাদানী
ইসলামী তাবলীগ বনাম ইলিয়াসী তাবলীগ (৩য় কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
সুন্নাতের আলো বিদ‘আতের অন্ধকার - অনুবাদ : হাফীযুর রহমান বিন দিলজার হোসাইন
বিদ‘আত পরিচিতি (৬ষ্ঠ কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
আধুনিক যুগে দাওয়াতী কাজের পদ্ধতি (৩য় কিস্তি) - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
ইখলাছই পরকালের জীবনতরী (৪র্থ কিস্তি) - আব্দুল গাফফার মাদানী
বিদ‘আত পরিচিতি - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
জীবন ব্যবস্থা হিসাবে আল-কুরআনের মূল্যায়ন - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
বিদ‘আত পরিচিতি (২৫ তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ইসলামী পুনর্জাগরণের মূলনীতি (৩য় কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
আধুনিক যুগে দাওয়াতী কাজের পদ্ধতি (২য় কিস্তি) - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
রজব মাসের বিধানসমূহ - অনুবাদ : ইউনুস বিন আহসান

ফেসবুক পেজ