ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমন সংশয় নিরসন
-হাসিবুর রহমান বুখারী*
(৩য় কিস্তি)
ইমাম মাহদী ও আমাদের করণীয়
আক্বীদার অন্যান্য বিষয়ের ন্যায় ক্বিয়ামাতের আলামত সংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের দায়িত্ব কুরআন ও হাদীছের বক্তব্যগুলো সরল অর্থে বিশ্বাস করা। এ বিষয়ে কুরআন ও ছহীহ হাদীছে যা কিছু বলা হয়েছে সবই সত্য। এগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও আবির্ভাবের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই জানেন। এর সঠিক ব্যাখ্যা উদ্ঘাটনের নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করার দায়িত্ব আমাদের দেয়া হয়নি। আমাদের দায়িত্ব সাধ্যানুযায়ী ইহকাল ও পরকালে কাজে লাগার মত বিষয়ে জ্ঞানচর্চা ও গবেষণা করা। মানুষের প্রায়োগিক জীবনের সমস্যার সমাধান দেয়ার জন্য কুরআন-হাদীছ নিয়ে গবেষণা করা, যে সকল বিষয়ের গবেষণা-অনুসন্ধান মানুষকে একটি নিশ্চিত ফলাফল লাভের পথে নিয়ে যাবে। কিন্তু অদৃশ্যের বিষয় নিয়ে গবেষণার নামে অকারণে তর্ক-বিতর্ক মোটেও কাম্য নয়।
শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘এমন প্রত্যেক ব্যক্তি যে, ক্বিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময়কে নির্দিষ্ট করে বর্ণনা করে, সে বড় মিথ্যুক ও বিশৃঙ্খলাকারী। ক্বিয়ামত ঐ সময় যার সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
یَسۡـَٔلُوۡنَکَ عَنِ السَّاعَۃِ اَیَّانَ مُرۡسٰہَا ؕ قُلۡ اِنَّمَا عِلۡمُہَا عِنۡدَ رَبِّیۡ ۚ لَا یُجَلِّیۡہَا لِوَقۡتِہَاۤ اِلَّا ہُوَ ؕۘؔ ثَقُلَتۡ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ لَا تَاۡتِیۡکُمۡ اِلَّا بَغۡتَۃً ؕ یَسۡـَٔلُوۡنَکَ کَاَنَّکَ حَفِیٌّ عَنۡہَا ؕ قُلۡ اِنَّمَا عِلۡمُہَا عِنۡدَ اللّٰہِ وَ لٰکِنَّ اَکۡثَرَ النَّاسِ لَا یَعۡلَمُوۡنَ
‘তারা আপনাকে ক্বিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে বলে, ‘তা কখন সংঘটিত হবে?’ (হে নবী!) আপনি বলুন, এ বিষয়ের জ্ঞান শুধু আমার প্রতিপালকের নিকটেই রয়েছে। কেবল তিনিই নির্ধারিত সময়ে তা প্রকাশ করবেন। তা হবে আকাশম-লী ও পৃথিবীতে একটি ভয়ংকর ঘটনা। আকস্মিকভাবেই তা তোমাদের নিকট আসবে। আপনি এ বিষয়ে সবিশেষ অবহিত মনে করেই তারা আপনাকে প্রশ্ন করে। আপনি বলুন, ‘এ সম্পর্কীয় জ্ঞান আমার প্রতিপালকের নিকটেই আছে। কিন্তু অধিকাংশ লোকই তা জানে না’ (সূরা আল-আ‘রাফ : ১৮৭; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৮৩৯৮)।
উপরিউক্ত আয়াত থেকে একথা দিবালোকের ন্যায় প্রতীয়মান হয় যে, ক্বিয়ামত আকস্মিকভাবেই সংঘটিত হবে। এ ব্যাপারে পূর্ব থেকে কারো কিছুই জানা নেই এবং সঠিক সময়ও কারোর পক্ষে জানা সম্ভবও নয়। নির্ধারিত সময়টি যখন উপস্থিত হয়ে যাবে, ঠিক তখনই আল্লাহ তা‘আলা তা প্রকাশ করবেন। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্বিয়ামতের আকস্মিক আগমন সম্পর্কে বলেছেন,
وَلَتَقُوْمَنَّ السَّاعَةُ وَقَدْ نَشَرَ الرَّجُلَانِ ثَوْبَهُمَا بَيْنَهُمَا فَلَا يَتَبَايَعَانِهِ وَلَا يَطْوِيَانِهِ وَلَتَقُوْمَنَّ السَّاعَةُ وَقَدِ انْصَرَفَ الرَّجُلُ بِلَبَنِ لِقْحَتِهِ فَلَا يَطْعَمُهُ وَلَتَقُوْمَنَّ السَّاعَةُ وَهْوَ يُلِيْطُ حَوْضَهُ فَلَا يَسْقِىْ فِيْهِ وَلَتَقُوْمَنَّ السَّاعَةُ وَقَدْ رَفَعَ أُكْلَتَهُ إِلَى فِيْهِ فَلَا يَطْعَمُهَا
‘নিশ্চয় ক্বিয়ামত এমতাবস্থায় সংঘটিত হবে যে, দু’জন ব্যক্তি ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য পরস্পরের সামনে কাপড় ছড়িয়ে রাখবে। কিন্তু তারা ক্রয়-বিক্রয়ের সময়ও পাবে না। এমনকি তা ভাঁজ করারও সময় পাবে না। অবশ্যই ক্বিয়ামত এমতাবস্থায় সংঘটিত হবে যে, কোন ব্যক্তি তার উষ্ট্রীর দুধ দোহন করে রওনা হবে কিন্তু তা পান করার সুযোগ পাবে না। অবশ্যই ক্বিয়ামত এমতাবস্থায় সংঘটিত হবে যে, কোন ব্যক্তি (তার পশুকে পানি পান করানোর জন্য) চৌবাচ্চা তৈরি করবে কিন্তু সে এ থেকে পানি পান করানোর সময়ও পাবে না। নিশ্চয় ক্বিয়ামত এমতাবস্থায় সংঘটিত হবে যে, কোন ব্যক্তি তার মুখ পর্যন্ত লোকমা উঠাবে, কিন্তু সে তা খাওয়ার সময়ও সুযোগ পাবে না’।[১]
অতএব ইমাম মাহদীর আগমন নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত উৎসাহী হওয়া ও মাতামাতি করা কাম্য নয়। আমাদের করণীয় হল- ইমাম মাহদী সম্পর্কে যতটুকু তথ্য নির্ভরযোগ্য সূত্রে বিদ্যমান, ততটুকুই বিশ্বাস করা। অতঃপর শরী‘আত কোন্ পরিস্থিতিতে আমাদের উপর কী বিধান আরোপ করেছে, সেগুলো জেনে আমল করা এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যত পরিস্থিতি ও পরকালের জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করা। এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
بَادِرُوْا بِالأَعْمَالِ سِتًّا طُلُوْعَ الشَّمْسِ مِنْ مَغْرِبِهَا أَوِ الدُّخَانَ أَوِ الدَّجَّالَ أَوِ الدَّابَّةَ أَوْ خَاصَّةَ أَحَدِكُمْ أَوْ أَمْرَ الْعَامَّةِ
‘ছয়টি ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পূর্বেই তোমরা নেক আমলে অগ্রসর হও এবং দ্রুততা অবলম্বন কর। তাহল- (১) পশ্চিমাকাশ হতে সূর্যোদয় হওয়া, (২) ধোঁয়া উত্থিত হওয়া, (৩) দাজ্জালের আবির্ভাব, (৪) দাব্বাতুল আরয বা অদ্ভুত জন্তুর আত্মপ্রকাশ, (৫) কারো ব্যক্তিগত মৃত্যু (৬) সর্বজনীন বিপদ বা ক্বিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বে’।[২] অন্যত্র তিনি বলেন,
إِنْ قَامَتِ السَّاعَةُ وَفِيْ يَدِ أَحَدِكُمْ فَسِيْلَةٌ فَإِنِ اسْتَطَاعَ أَنْ لَا تَقُوْمَ حَتَّى يَغْرِسَهَا فَلْيَغْرِسْهَا
‘যদি ক্বিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়, আর তোমাদের কারো হাতে একটি বৃক্ষের অঙ্কুরোদগম থাকে, ক্বিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বে যদি সে অঙ্কুরটি রোপণ করতে সক্ষম হয়, তবে সে যেন তা রোপণ করে দেয়’।[৩]
উক্ত হাদীছদ্বয়ের মধ্যে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সৎকর্ম দ্রুত সম্পাদনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। নেক আমলের সুযোগ যখন যতটুকু পাওয়া যাবে, ততটুকুই করে ফেল। ভবিষ্যতে কী হবে, সে চিন্তায় সময় নষ্ট করো না। বরং ভবিষ্যৎ সুখময় করার উদ্দেশ্যে সময়কে কল্যাণকর কাজে ব্যয় কর। ইমাম মাহদী ও দাজ্জালের আগমন অতি নিকটবর্তী বলে ঘর-সংসার ত্যাগ করে বৈরাগী হয়ে যাওয়ার মধ্যে কোনো বুদ্ধিমত্তা নেয়। আবূ ক্বাতাদা আহমাদ ইবনু হাসান আল-মু‘আল্লিম বলেন, ‘প্রত্যেক মুসলিমের জন্য যরূরী হল, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ভবিষ্যদ্বাণী সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে পূর্ণ বিশ্বাস রাখা ও প্রতীক্ষায় থাকা। কল্যাণকর ভবিতব্য বিষয়ে সুসংবাদ গ্রহণ করা, অন্যথা ফিতনা ও বিশৃঙ্খলার বিষয়ে ভয় করা। পাশাপাশি দাওয়াত ও তাবলীগ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া।[৪]
আবূ নু‘আইম ইস্পাহানী (রাহিমাহুল্লাহ) সুফিয়ান আছ-ছাওরি (রাহিমাহুল্লাহ)-এর একটি উদ্ধৃতি নকল করে বলেন, ‘হাফস ইবন গিয়াস (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি সুফিয়ান আছ-ছাওরীকে বললাম,
يا أبا عبد الله إن الناس قد أكثروا في المهدي فما تقول فيه. قال إن مر على بابك فلا تكن منه في شيء حتى يجتمع الناس عليه
‘হে আবূ ‘আব্দিল্লাহ! মানুষ মাহদীর ব্যাপারে খুব বেশি আলোচনা করছে, এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন’? তিনি বললেন, ‘তিনি যদি তোমার দরজার সামনে দিয়েও অতিক্রম করে, তবুও তুমি এ বিষয়ে কিছুই করবে না, যতক্ষণ না সবাই তাঁর ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হয়’।[৫]
আব্দুর রাযযাক ইবনু হাসান দিমাশক্বী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘মাহদী সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ভবিষ্যদ্বাণী ‘আল্লাহ তাঁকে এক রাতে খলীফার উপযুক্ত করে দিবেন’।[৬] এ থেকে বুঝা যায়, মাহদী নিজেই জানবেন না যে, তিনিই প্রতীক্ষিত মাহদী, যতক্ষণ না আল্লাহ তাঁকে প্রকাশ করার ইচ্ছা করবেন। এটার সমর্থন পাওয়া যায় রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঘটনা থেকে। তিনি আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ মাখলূক্ব হওয়া সত্ত্বেও হিরা গুহায় জিবরীল (আলাইহিস সালাম) এসে ‘ইক্বরা বিসমি রাব্বিকা’ বলার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি যে রাসূল হবেন তা তিনি নিজেই জানতেন না। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ই যখন জিবরীল (আলাইহিস সালাম)-এর অহী নিয়ে আসার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত জানতেন না যে তিনি রাসূল, সেক্ষেত্রে মাহদী তো স্বাভাবিকভাবেই জানবেন না যে, তিনিই প্রতিশ্রুত মাহদি, যতক্ষণ না আল্লাহ তাঁকে মাহদী হিসাবে প্রকাশ করার ইচ্ছা করবেন। সুতরাং যে-ই দাবি করবে যে, সে প্রতিশ্রুত মাহদী এবং নিজের জন্য বায়‘আত তলব করবে অথবা বায়‘আত অর্জনের জন্য যুদ্ধ করবে, সে-ই হাদীছের সুস্পষ্ট নির্দেশনার বিরোধী প্রমাণিত হবে।[৭]
‘মারকাযুদ দিরাসাত ওয়াল বুহূছিল ইসলামিয়্যা’ একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘আলিমগণ এ বিষয়ে একমত যে, যখন ইমাম মাহদী আবির্ভূত হবেন, তখন তাঁর বিষয়ে কেউ মতানৈক্য করবে না। উম্মতের কারো কাছে তাঁর বিষয়টি অস্পষ্ট মনে হবে না, বরং দ্বিপ্রহরের সূর্যের ন্যায় সুস্পষ্ট হবে। তাঁকে প্রমাণ করার জন্য কোন আহ্বায়ক বা পরিচয়দাতার প্রয়োজন হবে না। যেমনিভাবে শেষ যামানায় ঈসা (আলাইহিস সালাম) অবতরণ করলে সবাই তাঁকে চিনবে, তেমনিভাবে তাঁকেও সবাই চিনবে এবং আল্লাহ তাঁর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করবেন, যদিও কাফেররা তা অপসন্দ করে। যে ব্যক্তি এসব বিষয় বেশি বেশি উত্থাপন করে এবং এ বিষয়ে শারঈ ভিত্তি ছাড়াই বারবার গবেষণায় লিপ্ত হয়, সে তিন ব্যক্তির একজন হবে, চতুর্থ হওয়ার সুযোগ নেই।
১. হয় তার দ্বীনদারী কম এবং তার ভিত্তিই হল বিদ‘আত, আর সে সুন্নাতের অনুসরণ থেকে বিমুখ। যদি তার মধ্যে দ্বীনদারী থাকত, তাহলে তার জন্য অতটুকু জানাই যথেষ্ট ছিল, যতটুকু জানা ছাহাবায়ে কিরাম এবং সালাফে ছালিহীনের জন্য যথেষ্ট হয়েছে। সে এমন বিষয় জানার জন্য অহেতুক কষ্ট করত না, যে বিষয়টি জানতে এবং তা নিয়ে গবেষণা ও অনুসন্ধান করতে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), ছাহাবায়ে কিরাম এবং সালাফে ছালিহীন উদ্বুদ্ধ করেননি। সুতরাং যে ব্যক্তি শুধু এসব বিষয়ের চক্করে ঘুরে বেড়ায়, অথচ তার ভিত্তি হল ‘বলা হয়’ বা ‘কথিত আছে’ জাতীয় অনির্ভরযোগ্য কিছু সূত্র, কুরআন-সুন্নাহর অনুসরণে তার কোন অংশ নেই। হ্যাঁ সাগরে আঙ্গুল প্রবেশ করিয়ে যে পরিমাণ পানি সংগ্রহ করা যায়, কুরআন-সুন্নাহর ততটুকু অনুসরণ তার মধ্যে থাকলেও থাকতে পারে?
২. অথবা তার কিছুটা দ্বীনদারী আছে, তবে সে মুসলিমদের বর্তমান কঠিনতম সংকটময় পরিস্থিতি সংশোধনের ব্যাপারে হতাশ হয়ে পড়েছে। অতএব এখন সে মাহদীর আত্মপ্রকাশের দাবি করা এবং উম্মতের মুক্তির জন্য তাঁর ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করা ব্যতীত এই সংকট থেকে উত্তরণের অন্য কোন পথ খুঁজে পাচ্ছে না। ফলে সে শী‘আ-রাফেজী এবং ছূফীবাদীদের মত ভ্রষ্ট পথ গ্রহণ করেছে।
৩. অথবা সে সুযোগসন্ধানী-স্বার্থান্বেষী, স্বীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যই সে এমন করছে।[৮]
ইমাম মাহদী সম্পর্কে সালাফে ছালিহীন উপরিউক্ত কথাগুলো বলেছেন তাদের জন্য, যারা দুর্বল ও মুর্খ প্রকৃতির লোক, যারা বিষয়গুলো নিয়ে মাত্রাধিক বাড়াবাড়ি করে এবং নির্ভরযোগ্য শারঈ দলীল দ্বারা প্রমাণিত হওয়া না হওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয় না।
তাদের দায়িত্ব হল, এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে তাড়াহুড়া করে নিজ থেকে কিছু না করা, বরং বিজ্ঞ উলামায়ে কিরামের সঙ্গে পরামর্শ করে ধীরস্থিরতার সাথে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। অন্যথা পথভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে ইমাম মাহদী সম্পর্কে আমরা যা অবগত হলাম তার সংক্ষিপ্তসার হল- আখেরী যামানায় এই উম্মতের মধ্যে একজন সৎ লোক আগমন করবেন। মাক্বামে ইবরাহীম এবং রুকনে ইয়ামানীর মধ্যবর্তী স্থানে মুসলিমগণ তাঁর হাতে বায়‘আত করবে। তাঁকে হত্যা করার জন্য সিরিয়া থেকে একদল সৈন্য প্রেরণ করা হবে। সৈন্যদলটি যখন মক্কার পথে ‘বায়দা’ নামক স্থানে পৌঁছবে তখন ভূমিধ্বসে সকল সৈন্য ধ্বংস হয়ে যাবে। আল্লাহ তা‘আলা ইমাম মাহদীকে এভাবে তাঁর শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করবেন। তিনি মুসলিমদের খলীফা হয়ে শরী‘আতের মাধ্যমে বিচার-ফায়সালা করবেন। তাঁর যামানায় মুসলিমদের মাঝে চরম সুখ-শান্তি বিরাজ করবে। অতঃপর তিনি দামেস্কের মসজিদে ফজরের ছালাতের সময় ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর সাথে সাক্ষাৎ করবেন। প্রথমে তিনি ঈসা (আলাইহিস সালাম)-কে ছালাতের ইমামতি করার অনুরোধ জানাবেন। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করলে স্বয়ং ইমাম মাহদী ইমামতি করবেন। ঈসা ইবনু মারইয়াম (আলাইহিস সালাম) ইমাম মাহদীর পিছনে মুক্তাদী হিসাবে ছালাত আদায় করবেন। অতঃপর তিনি ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর সাথে যোগ দিয়ে দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বের হবেন এবং দাজ্জাল হত্যার কাজে ঈসা (আলাইহিস সালাম)-কে সহায়তা করবেন। অতঃপর তিনি সাত বছর মতান্তরে নয় বছর পৃথিবীতে বসবাস করে মৃত্যুবরণ করবেন।
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
*মুর্শিদাবাদ, ভারত।
তথ্যসূত্র :
[১]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৫০৬,৭১২১; ছহীহ মুসলিম, হা/২৯৫৪।
[২]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৯৪৭; ইবনু মাজাহ,হা/৪০৫৬।
[৩]. আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/৩৭১; সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামে‘, হা/১৪২৪; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৯।
[৪]. আল-ফিতান ওয়াল আহদাছ, পৃ. ৬।
[৫]. হিলয়াতুল আউলিয়া, ৭ম খণ্ড. পৃ. ৩১।
[৬]. ইবনু মাজাহ, হা/৪০৮৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৪৬; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২৩৭১।
[৭]. হিলয়াতুল বাশার, পৃ. ৮০৯।
[৮]. লাম ইউকাল্লিফিল্লাহু বিমা’রিফাতি শাখছিল মাহদী ক্ববলা খুরূজিহি, পৃ. ৩।
প্রসঙ্গসমূহ »:
বিবিধ