মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ১২:১৪ অপরাহ্ন

সূদ-ঘুষ ও অবৈধ ব্যবসা

-ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর*


(৭ম কিস্তি)


ঘুষ ও তার ভয়াবহ পরিণাম

ইসলামের দৃষ্টিতে যেমন সূদপ্রথা হারাম, তেমনি ঘুষ আদান-প্রদানও হারাম। ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমেও সমাজে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে। ঘুষ যোগ্য ব্যক্তির স্বীয় অধিকার হরণের এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। সমাজে ব্যাপকহারে ঘুষ প্রথা বিস্তারের কারণে অনেক মানুষ স্ব স্ব অধিকার হতে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই এই পন্থায় উপার্জন ইসলামে হারাম হিসাবেই চিত্রিত করা হয়েছে। অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করা ইসলামের দৃষ্টিতে নিন্দনীয় কাজ। এ মর্মে মহান আল্লাহ কুরআন মাজীদে এরশাদ করেন-


لَا تَاۡکُلُوۡۤا اَمۡوَالَکُمۡ بَیۡنَکُمۡ بِالۡبَاطِلِ وَ تُدۡلُوۡا بِہَاۤ اِلَی الۡحُکَّامِ لِتَاۡکُلُوۡا فَرِیۡقًا مِّنۡ اَمۡوَالِ النَّاسِ بِالۡاِثۡمِ وَ اَنۡتُمۡ  تَعۡلَمُوۡنَ


‘আর তোমরা অন্যায়ভাবে পরস্পরের সম্পদ ভক্ষণ কর না এবং জানা সত্ত্বেও অসৎ উপায়ে মানুষের সম্পদ গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকের নিকট (ঘুষ দেয়ার জন্য) নিয়ে যেও না’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৮৮)।


প্রথমতঃ অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করা ইসলামে নিষিদ্ধ। দ্বিতীয়তঃ অসৎ উপায়ে কারো সম্পদ ভোগ করার জন্য কোন ধরণের কৌশল বা কুটচালও ইসলামে নিষেধ। কোন চক্রান্তের ফাঁদে ফেলে কেউ কারো সম্পদ ভোগ করতে পারবে না। এটাও এক প্রকার যুলুম। আর ঘুষের আদান-প্রদান অনুরূপই এক জঘন্য কর্ম হিসাবে চিহ্নিত। ইসলামে ঘুষ দাতা-গ্রহীতার নিন্দা করা হয়েছে। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَاشِيَ وَالْمُرْتَشِيْ ‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ঘুষ গ্রহণকারী ও ঘুষ প্রদানকারীর উপর অভিশাপ করেছেন’।[১] অত্র হাদীছে স্পষ্টই উল্লেখ করা হয়েছে, ঘুষ আদান-প্রদান অভিশাপের কারণ। যে ঘুষ প্রদান করবে, আর যে তা গ্রহণ করবে উভয়ের উপর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লা‘নত করেছেন। অভিশাপকৃত কর্ম বা অভিশপ্ত ব্যক্তির মধ্যে কোন কল্যাণ থাকতে পারে না। অপর হাদীছে বর্ণিত হয়েছে-


عَنْ بُرَيْدَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ اسْتَعْمَلْنَاهُ عَلَى عَمَلٍ فَرَزَقْنَاهُ رِزْقًا فَمَا أَخَذَ بَعْدَ ذَلِكَ فَهُوَ غُلُوْلٌ


বুরায়দা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘আমি যাকে ভাতা দিয়ে কোন কাজের দায়িত্ব প্রদান করেছি, সে যদি ভাতা ব্যতীত অন্য কিছু গ্রহণ করে তাহলে তা হবে খিয়ানত’।[২] অপর একটি হাদীছে বর্ণিত হয়েছ-


عَن بْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قال  الْهَدِيَّةُ إِلَى الْإِمَامِ غُلُوْلٌ


ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘রাষ্ট্রনেতাকে বা দয়িত্বশীলকে হাদিয়া দেয়া হল খেয়ানত (করা মাল) স্বরূপ’।[৩] অপর বর্ণনায় রয়েছে- هَدَايَا الْعُمَّالِ غُلُوْلٌ ‘নিয়োগকৃত কর্মকর্তা/কর্মচারীকে প্রদেয় হাদিয়া খেয়ানত (যা ঘুষ) স্বরূপ’।[৪] উল্লেখিত হাদীছগুলোতে মূলত ঘুষের দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।


বেতনভুক্ত কর্মকর্তা বা কর্মচারী স্বীয় বেতন ব্যতীত অন্য কিছু কারো কাছ থেকে গ্রহণ করলে তা হবে খিয়ানত। এরূপ ব্যক্তিদের বেতন বা ভাতা নির্ধারণ করা হয়েছে তাদের ঐ কাজ সঠিকভাবে সম্পাদন করার জন্য। অন্যের প্রয়োজনীয় সমস্যা সমাধানের জন্যই তাদের এই চাকুরী। তারা তাদের কাজের বিনিময়ে কোন ব্যক্তির কাছ থেকে কোন হাদিয়া বা উপঢৌকন নিতে পারবে না। কোন কাজের বিনিময়ে ভাতা ব্যতীত কিছু হাদিয়া গ্রহণ করাই ঘুষ বা উৎকোচ হিসাবে স্বীকৃত। আর যদি কোন কাজ আটকিয়ে রাখা বা লেন্দি করা হয়, কিছু বখশীশ পাওয়ার আশায় তাহলে আরো জঘন্য প্রকারে ঘুষ। কিংবা কোন ফাইল আটকে রাখা, কিছু তার কাছ থেকে নেয়ার মানসে, এটা নেহায়েত ঘুষ।


যা বর্তমানে দেশের প্রত্যেকটা অফিসে রমরমা চলছে। যে যত বেশী উৎকোচ দিচ্ছে, তার কাজ তত দ্রুত সমাধা হচ্ছে। আর যে ঘুষ প্রদানে ব্যর্থ হচ্ছে তাকে এই অফিস, ঐ অফিস ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হতে হচ্ছে। জুতার তলা ক্ষয় হয়ে ছিড়ে যাচ্ছে। অথচ বিনা পয়সায় অফিসের কাজ উদ্ধার হচ্ছে না। এটা কোন্ প্রকার বেহায়াপনা তা বিচার করার দায়িত্ব আপনাদের উপর ছেড়ে দিলাম! মাস গেলে ঠিকই মাইনে কড়ায়-গোণ্ডায় বুঝে নিচ্ছে। কিন্তু বিনা টাকায় জনগণের কোন কাজ করছে না। যা ইসলামের দৃষ্ঠিতে স্পষ্ট খিয়ানত। আর খিয়ানত জঘন্য পাপ। মা‘ক্বিল ইবনু ইয়াসার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তিনি (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, مَا مِنْ وَالٍ يَلِي رَعِيَّةً مِّنَ الْمُسْلِمِيْنَ فَيَمُوْتُ وَهُوَ غَاشٌّ لَهُمْ إِلَّا حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ ‘কোন ব্যক্তি মুসলিমদের দায়িত্ব গ্রহণ করে। অতঃপর খিয়ানত করা অবস্থায় মারা গেল। আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করেছেন’।[৫] এই হাদীছে ইঙ্গিত দেয় ঘুষের ফলাফল ও সূদের ফলাফল এক ও অভিন্ন তথা জাহান্নাম। অন্য একটি হাদীছে একটু ভিন্নভাবে এসেছে-


عَنْ أَبِي حُمَيْدٍ السَّاعِدِيِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَحِلُّ لِامْرِئٍ أَنْ يَأْخُذَ عَصَا أَخِيْهِ بِغَيْرِ طِيْبِ نَفْسٍ مِنْهُ


আবূ হুমাইদ সাঈদী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘কোন ব্যক্তি তার ভাইয়ের অন্তরকে ব্যথিত করে তার লাঠি (সামান্য বস্তু) গ্রহণ করাও বৈধ হবে না’।[৬]


সুধী পাঠক! কোন ব্যক্তি সানন্দে ঘুষ প্রদান করে না। কার্যসিদ্ধির জন্য ঘুষ দিলেও গ্রহীতাকে হৃদয় থেকে ঘৃণা করে। আড়ালে তার এরূপ হীন কর্মের সমালোচনা করে ও নিন্দা করে। তাকে অভিশাপ দিতে থাকে। বলা যায় এটাও এক প্রকারের নীরব যুলুম। যা উপরিউক্ত হাদীছের আলোকে হারামের অন্তর্ভুক্ত। প্রত্যেক ব্যক্তিকেই এমন নোংরা কাজ পরিহার করা উচিত।


ঘুষ সম্পর্কে আরো কতিপয় হাদীছ। যেমন, 


عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ  رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ شَفَعَ لِأَخِيْهِ بِشَفَاعَةٍ فَأَهْدَى لَهُ هَدِيَّةً عَلَيْهَا فَقَبِلَهَا فَقَدْ أَتَى بَابًا عَظِيْمًا مِنْ أَبْوَابِ الرِّبَا


আবূ উমামাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কারো জন্য সুপারিশ করল এবং সেই সুপারিশের প্রতিদান স্বরূপ তাকে কিছু উপহার দিল। যদি সে তা গ্রহণ করে তাহলে সে সূদের দরজাসমূহের একটি বড় দরজায় উপস্থিত হল’।[৭]


عَنْ أَبِىْ حُمَيْدٍ السَّاعِدِىِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ اسْتَعْمَلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلًا مِنَ الْأَسْدِ يُقَالُ لَهُ ابْنُ اللُّتْبِيَّةِ قَالَ عَمْرٌو وَابْنُ أَبِىْ عُمَرَ عَلَى الصَّدَقَةِ فَلَمَّا قَدِمَ قَالَ هَذَا لَكُمْ وَهَذَا لِىْ أُهْدِىَ لِىْ قَالَ فَقَامَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الْمِنْبَرِ فَحَمِدَ اللهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَقَالَ مَا بَالُ عَامِلٍ أَبْعَثُهُ فَيَقُوْلُ هَذَا لَكُمْ وَهَذَا أُهْدِىَ لِىْ أَفَلَا قَعَدَ فِىْ بَيْتِ أَبِيْهِ أَوْ فِىْ بَيْتِ أُمِّهِ حَتَّى يَنْظُرَ أَيُهْدَى إِلَيْهِ أَمْ لَا وَالَّذِىْ نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَا يَنَالُ أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنْهَا شَيْئًا إِلَّا جَاءَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَحْمِلُهُ عَلَى عُنُقِهِ بَعِيْرٌ لَهُ رُغَاءٌ أَوْ بَقَرَةٌ لَهَا خُوَارٌ أَوْ شَاةٌ تَيْعِرُ


আবূ হুূমাইদ আব্দুর রহমান ইবনু সা‘দ আস-সাঈদী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয্দ গোত্রের ইবনু লুতবিয়্যাহ নামক এক ব্যক্তিকে যাকাত আদায় করার কাজে কর্মচারী নিয়োগ করলেন। সে ব্যক্তি (আদায়কৃত মালসহ) ফিরে এসে বলল, এটা আপনাদের (বায়তুল মালের), আর এটা আমাকে উপহার স্বরূপ দেয়া হয়েছে। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বরে উঠে দ-ায়মান হয়ে আল্লাহর প্রশংসা ও স্তুতি বর্ণনা করে বললেন, অতঃপর বলি যে, আল্লাহ আমাকে যে সকল কর্মের অধিকারী করেছেন তার মধ্য হতে কোনও কর্মের তোমাদের কাউকে কর্মচারী নিয়োগ করলে সে ফিরে এসে বলে কি, না, এটা আপনাদের, আর এটা উপহার স্বরূপ আমাকে দেয়া হয়েছে। যদি সে সত্যবাদী হয়, তবে তার বাপ-মায়ের ঘরে বসে থেকে দেখে না কেন, তাকে কোন উপহার দেয়া হচ্ছে কি-না। আল্লাহর কসম; তোমাদের মধ্যে যে কেউ কোন জিনিস অনধিকার গ্রহণ করবে, সে ক্বিয়ামতের দিন তা নিজ ঘাড়ে বহন করা অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার সাথে সাক্ষাৎ করবে। অতএব আমি যেন অবশ্যই চিনতে না পারি যে, তোমাদের মধ্য হতে কেউ নিজ ঘাড়ে চিঁহি-রববিশিষ্ট উট অথবা হাম্বা-রববিশিষ্ট গাই, অথবা ম্যাঁ-ম্যাঁ রববিশিষ্ট ছাগল বহন করা অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করেছ’।[৮]


আব্দুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) সম্পর্কে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে খায়বারের ইয়াহুদীদের নিকট পাঠালেন, সেখানকার ফলসমূহ ও ফসলাদি অনুমান করে দেখে আসার জন্য। ইহুদীরা তাকে ঘুষ পেশ করল; যাতে তিনি তাদের ব্যাপারে একটু শিথিলতা প্রদর্শন করেন। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আমি তাঁর পক্ষ হতে প্রতিনিধি হয়ে এসেছি, যিনি দুনিয়ায় আমার কাছে সব থেকে বেশী প্রিয়তম এবং তোমরা আমার নিকট তোমাদের শত্রু বানর ও শুকর অপেক্ষাও ঘৃণিত। কিন্তু স্বীয় প্রিয়তমের প্রতি আমার ভালোবাসা এবং তোমাদের প্রতি আমার শত্রুতা আমাকে তোমাদের ব্যাপারে সুবিচার না করার উপর উদ্বুদ্ধ করতে পারবে না। এ কথা শুনে তারা বলল, এই সুবিচারের কারণেই আসমান ও যমীনের শৃঙ্খলা ও ব্যবস্থাপনা সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছে।[৯]


ঘুষ সূদেরই এক ভিন্ন রূপ। বিনা শ্রমে উপার্জনের আরেক মাধ্যম। কেননা তার শ্রমের মূল্যায়ন তো বেতন দিয়েই করা হয়। আর ঘুষ হল তার উপরী উপার্জন। যা ইসলামী শরী‘আতে স্পষ্ট হারাম। এ ধরনের আদান-প্রদানকে হাদীছে সূদ বলেও আখ্যায়িত করা হয়েছে। এরূপ কাজ বড় ধরনের অন্যায়। আর অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ ভোগ করার পরিণাম হল জাহান্নাম। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,إِنَّ رِجَالًا يَتَخَوَّضُوْنَ فِىْ مَالِ اللهِ بِغَيْرِ حَقٍّ فَلَهُمُ النَّارُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‘নিশ্চয় কিছু লোক আল্লাহর সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে। ক্বিয়ামতের দিন তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম’।[১০]


বিধায় প্রতিটি মুসলিমের ঈমানী দায়িত্ব হল, সকল প্রকার ঘুষ আদান-প্রদান করা থেকে বেঁচে থাকা। সূদী কারবার সর্বাবস্থায় পরিত্যায্য। অনুরূপ সকল ক্ষেত্রেই ঘুষের আদান-প্রদানও পরিত্যায্য। সূদ ও ঘুষকে একই পাখির দু’টি ডানা বলা যেতে পারে। ইসলামের দৃষ্টিতে উভয়ই অবৈধ। বিধায় সূদ-ঘুষ উভয়ই পরিহার করা সকল মুসলিমের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য।


কতিপয় হারাম (ব্যবসা) ক্রয়-বিক্রয়

সূদ হারাম কিন্তু ব্যবসা হালাল। তবে অনেক ব্যবসার সাথে সূদ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। অনেক সময় একজন ব্যবসায়ীর ইচ্ছা থাকলেও সূদ থেকে বাঁচার কোন পথ থাকে না। ফলে এক সময় প্রগতির স্রোতে হারিয় যায় এবং পুরোপুরি সূদখোরে পরিণতি হয়। হেরে যায় জীবন যুদ্ধে। আবার কতিপয় এমন ব্যবসা রয়েছে যেগুলো ইসলামের দৃষ্টিতে স্পষ্ট হারাম। কিন্তু মানুষ সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করে না। গণহারে সে সব ব্যবসায়ী কারবারে সম্পৃক্ত হয়। বিধায় এরূপ হারাম ব্যবসার সাথে আমাদের পরিচয় হওয়া একান্ত প্রয়োজন। অন্যথা সেগুলো থেকে বাঁচতে পারব না।


(ক) যে সকল ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করা হয়েছে

এমন কিছু জিনিস রয়েছে যেগুলোর ক্রয়-বিক্রয় ইসলামে নিষিদ্ধ। যে সবের ক্রয়-বিক্রয় এবং লভ্যাংশ ভোগ করাও নিষেধ। কোন মুসলিমের জন্য এরূপ ব্যবসায় যুক্ত হওয়া বৈধ নয়। বহু পূর্বেই রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় উম্মতকে এসব বিষয়ে সতর্ক করেছেন। প্রকৃতপক্ষে যে সব জিনিসে মানুষের অকল্যাণ বয়ে আনে সেগুলোই ইসলামে হারাম করা হয়েছে। কল্যাণকর কোন জিনিসের ব্যবসা ইসলামে হারাম করা হয়নি। বাহ্যিক দৃষ্টিতে মনে হতে পারে এরূপ ব্যবসা মানুষের জন্য মঙ্গলের। কিন্তু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে তাতেও মানুষের জন্য অমঙ্গল বা ক্ষতি রয়েছে। ইসলামে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের মঙ্গলের দিকে বিবেচনা করেই ব্যবসায়িক নীতিমালা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ মর্মে কয়েকটি হাদীছ পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হল-


عَن أَبِيْ حُجَيْفَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ ثَمَنِ الدَّمِ وَثَمَنِ الْكَلْبِ وَكَسْبِ الْبَغِيِّ وَلَعَنَ آكِلَ الرِّبَا وَمُوْكِلَهُ وَالْوَاشِمَةَ وَالْمُسْتَوْشِمَةَ وَالْمُصَوِّرَ


আবূ হুযায়ফা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রক্তের মূল্য, কুকুরের মূল্য, পতিতার উপার্জন ভক্ষণ করতে নিষেধ করেছেন। আর তিনি অভিশাপ করেছেন সূদদাতা ও গ্রহীতার প্রতি। আর যে ব্যক্তি দেহের কোন অংশে উলকী করে এবং যে উলকী করায় তার প্রতি। এতদ্ভিন্ন ছবি অংকনকারীর প্রতিও লা‘নত করেছেন।[১১] অপর হাদীছে বর্ণিত হয়েছে-


عَنْ أَبِىْ مَسْعُوْدٍ الأَنْصَارِىِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ ثَمَنِ الْكَلْبِ وَمَهْرِ الْبَغِىِّ وَحُلْوَانِ الْكَاهِنِ


আবূ মাসউদ আনছারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন, কুকুরের মূল্য, ব্যভিচারে বিনিময় এবং গণকের প্ররিশ্রম (গ্রহণ করতে)।[১২] অপর এক হাদীছে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন, ‘কুকুর বিক্রয়ের মূল্য হতে এবং বিড়াল বিক্রয়ের মূল্য হতে। কোন বর্ণনায় রয়েছে শিকারী কুকুর ব্যতীত’।[১৩] অন্যত্র রয়েছে-


عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ ثَمَنُ الْخَمْرِ حَرَامٌ وَمَهْرُ الْبَغِىِّ حَرَامٌ وَثَمَنُ الْكَلْبِ حَرَامٌ وَالْكُوْبَةُ حَرَامٌ وَالْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَكُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ


ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘মদের মূল্য হারাম, ব্যভিচারের উপার্জন হারাম, কুকুরের মূল্য হারাম ও তবলা বা বাদ্যযন্ত্র হারাম। আর মদ, জুয়া ও প্রত্যেক নেশা জাতীয় দ্রব্য হারাম’।[১৪]


عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ أَصْحَابَ الصُّوَرِ يُعَذَّبُوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُقَالُ لَهُمْ أَحْيُوْا مَا خَلَقْتُمْ


আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন ছবি অঙ্কনকারীদের (চিত্রকর) শাস্তি দেয়া হবে। তাদেরকে বলা হবে, তোমরা যা সৃষ্টি (যার ছবি এঁকেছ) করেছ তাতে জীবন সঞ্চার কর’।[১৫]


عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّهُ سَمِعَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ عَامَ الْفَتْحِ وَهُوَ بِمَكَّةَ إِنَّ اللهَ وَرَسُوْلَهُ حَرَّمَ بَيْعَ الْخَمْرِ وَالْمَيْتَةِ وَالْخِنْزِيْرِ وَالْأَصْنَامِ فَقِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَرَأَيْتَ شُحُوْمَ الْمَيْتَةِ فَإِنَّهَا يُطْلَى بِهَا السُّفُنُ وَيُدْهَنُ بِهَا الْجُلُوْدُ وَيَسْتَصْبِحُ بِهَا النَّاسُ فَقَالَ لَا هُوَ حَرَامٌ ثُمَّ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَ ذَلِكَ قَاتَلَ اللهُ الْيَهُوْدَ إِنَّ اللهَ لَمَّا حَرَّمَ شُحُوْمَهَا جَمَلُوْهُ ثُمَّ بَاعُوْهُ فَأَكَلُوْا ثَمَنَهُ


জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মক্কা বিজয়ের বছর মক্কায় অবস্থানকালে বলতে শুনেছেন, আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল হারাম করেছেন, মদ, মৃতপ্রাণী, শুকুর ও মূর্তি ক্রয়-বিক্রয়। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল- হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! মৃত জন্তুর চর্বি সম্পর্কে আপনি কী বলেন? তা দিয়ে তো নৌকায় প্রলেপ দেয়া হয় এবং চামড়া তৈলাক্ত করা হয়। আর লোকে তা প্রদীপ জ্বালিয়ে থাকে। তিনি বললেন, না, সেটিও হারাম। তারপর আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা ইহুদীদের ধ্বংস করুন। আল্লাহ যখন তাদের জন্য মৃত জিনিসের চর্বি হারাম করে দেন, তখন তারা তা সংগ্রহ করে, তা বিক্রি করে তার মূল্য ভক্ষণ করত’।[১৬]


عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا أَنَّهَا قَالَتْ لَمَّا أُنْزِلَتْ الْآيَاتُ الْأَوَاخِرُ مِنْ سُوْرَةِ الْبَقَرَةِ خَرَجَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَتَلَاهُنَّ فِي الْمَسْجِدِ فَحَرَّمَ التِّجَارَةَ فِي الْخَمْرِ


আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সূদ সম্পর্কে সূরা আল-বাক্বারাহ্র শেষ আয়াতগুলো যখন অবতীর্ণ হল, তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘর থেকে বের হলেন এবং মসজিদে লোকদের নিকট তা পড়ে শোনালেন। এরপর মদের ব্যবসা নিষিদ্ধ করে দিলেন।[১৭]


عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ وَعْلَةَ السَّبَإِىِّ  مِنْ أَهْلِ مِصْرَ أَنَّهُ سَأَلَ عَبْدَ اللهِ بْنَ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا عَمَّا يُعْصَرُ مِنَ الْعِنَبِ فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ শ إِنَّ رَجُلَا أَهْدَى لِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَاوِيَةَ خَمْرٍ فَقَالَ لَهُ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَلْ عَلِمْتَ أَنَّ اللهَ قَدْ حَرَّمَهَا قَالَ لَا فَسَارَّ إِنْسَانًا فَقَالَ لَهُ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَ سَارَرْتَهُ فَقَالَ أَمَرْتُهُ بِبَيْعِهَا فَقَالَ إِنَّ الَّذِى حَرَّمَ شُرْبَهَا حَرَّمَ بَيْعَهَا قَالَ فَفَتَحَ الْمَزَادَةَ حَتَّى ذَهَبَ مَا فِيْهَا


আব্দুর রহমান ইবনু ওয়ালাতা আস্ সাবাঈ মিছরী (রাহিমাহুল্লাহ) সূত্রে বর্ণিত যে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর নিকট আঙ্গুরের রস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এক মশক মদ উপহার স্বরূপ নিয়ে আসে। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, তুমি কি জান না যে, আল্লাহ সেটা হরাম করে দিয়েছেন? সে বলল, না। অতঃপর সে এক ব্যক্তির সাথে কানাকানি করল। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তাকে গোপনে কী বললে? সে বলল, আমি তাকে এটা বিক্রি করার পরামর্শ দিয়েছি। এরপর তিনি বললেন, যিনি (আল্লাহ) এটা পান করা হারাম করেছেন তিনি এর বিক্রিও হারাম করে দিয়েছেন। রাবী বলেন, এরপর সে মশকের মুখ খুলে দিল এবং তার মধ্যে যা কিছু ছিল সব ফেলে দিল।[১৮]


عَنْ أَبِىْ أُمَامَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا تَبِيْعُوا الْقَيْنَاتِ وَلَا تَشْتَرُوْهُنَّ وَلَا تُعَلِّمُوْهُنَّ وَلَا خَيْرَ فِىْ تِجَارَةٍ فِيْهِنَّ وَثَمَنُهُنَّ حَرَامٌ فِىْ مِثْلِ هَذَا أُنْزِلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ (وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّشۡتَرِیۡ لَہۡوَ الۡحَدِیۡثِ لِیُضِلَّ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ) إِلَى آخِرِ الْآيَةِ


আবূ উমামা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমরা গায়িকা (নর্তকী) ক্রয়-বিক্রয় কর না এবং তাদেরকে (গান) শিক্ষা দিয়ো না। গায়িকা-দাসী ব্যবসায় কোন মঙ্গল নেই এবং তার মূল্য হারাম’। আর অনুরূপ কারণে হারাম হয়েছে (কুরআন মাজীদের) এই আয়াত : ‘এক শ্রেণীর লোক আছে, যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশ্যে অন্ধভাবে অসার বাক্য ক্রয় করে (বেছে নেয়) এবং আল্লাহ প্রদর্শিত পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি (সূরা লুক্বমান : ৬)’।[১৯]


عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ عَسْبِ الْفَحْلِ


ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পশুকে পাল দেয়া (ষাঁড় বা পাঁঠা খাটানো) বাবদ বিনিময় নিতে নিষেধ করেছেন’ (গর্ভসঞ্চারের উদ্দেশ্যে যৌন মিলন ঘটানোর ব্যবস্থা বিক্রি করতে)।[২০]


عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ بَيْعِ فَضْلِ الْمَاءِ


জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উদ্বৃত্ত পানি বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন’।[২১]


عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ ابْتَعْتُ زَيْتًا فِى السُّوْقِ فَلَمَّا اسْتَوْجَبْتُهُ لِنَفْسِىْ لَقِيَنِىْ رَجُلٌ فَأَعْطَانِىْ بِهِ رِبْحًا حَسَنًا فَأَرَدْتُ أَنْ أَضْرِبَ عَلَى يَدِهِ فَأَخَذَ رَجُلٌ مِنْ خَلْفِىْ بِذِرَاعِىْ فَالْتَفَتُّ فَإِذَا زَيْدُ بْنُ ثَابِتٍ فَقَالَ لَا تَبِعْهُ حَيْثُ ابْتَعْتَهُ حَتَّى تَحُوْزَهُ إِلَى رَحْلِكَ فَإِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى أَنْ تُبَاعَ السِّلَعُ حَيْثُ تُبْتَاعُ حَتَّى يَحُوزَهَا التُّجَّارُ إِلَى رِحَالِهِمْ


ইবনু উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি বাজারে জয়তুনের তেল ক্রয় করলাম। ক্রয় পাকাপাকি হবার পর একজন লোক আমার কাছে এসে আমাকে তাতে একটা ভাল লাভ দিতে চাইল। আমিও তার হাতে হাত মেরে বিক্রয় পাকাপাকি করতে চাইলাম। হঠাৎ করে কোন লোক পেছন থেকে আমার হাত ধরে নিল। আমি পেছনে চেয়ে দেখলাম, তিনি যায়েদ বিন ছাবিত (রাযিয়াল্লাহু আনহু)। তিনি বললেন, যেখানে ক্রয় করবেন ঐ স্থানে বিক্রয় করবেন না, যতক্ষণ না আপনার স্থানে নিয়ে না যান। অবশ্য রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্রয় করার স্থানে পণ্য বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। যতক্ষণ না তা ক্রেতা তার ডেরায় বা স্থানে নিয়ে যায়।[২২]


عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا تُصَرُّوا الْإِبِلَ وَالْغَنَمَ فَمَنِ ابْتَاعَهَا بَعْدُ فَإِنَّهُ بِخَيْرِ النَّظَرَيْنِ بَعْدَ أَنْ يَحْتَلِبَهَا إِنْ شَاءَ أَمْسَكَ وَإِنْ شَاءَ رَدَّهَا وَصَاعَ تَمْرٍ


আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন যে, ‘তোমরা উটনী ও বকরীর দুধ (স্তনে/উলানে) আটকে রেখ না। যে ব্যক্তি এরূপ পশু ক্রয় করে, সে দুধ দোহনের পরে দু’টি অধিকারের যেটি তার পক্ষে ভাল মনে করবে তাই করতে পারবে। যদি সে ইচ্ছা করে তবে ক্রয়কৃত পশুটি রেখে দিবে। আর যদি ইচ্ছা করে তবে তা ফেরত দিবে এবং এর সাথে এক ছা‘ পরিমাণ খেজুর দিবে (দুধের মূল্য হিসাবে)।[২৩]


عَنْ حَكِيْمِ بْنِ حِزَامٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْبَيِّعَانِ بِالْخِيَارِ مَا لَمْ يَتَفَرَّقَا أَوْ قَالَ حَتَّى يَتَفَرَّقَا فَإِنْ صَدَقَا وَبَيَّنَا بُوْرِكَ لَهُمَا فِىْ بَيْعِهِمَا وَإِنْ كَتَمَا وَكَذَبَا مُحِقَتْ بَرَكَةُ بَيْعِهِمَا


হাকীম ইবনু হিযাম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত চুক্তি পাকা বা বাতিল করার অধিকার রয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা পৃথক (বিক্রয় স্থল হতে স্থানান্তরিত) না হবে। আর যদি তারা সত্য কথা বলে এবং (পণ্যদ্রব্যের প্রকৃতরূপ) খুলে বলে, (দোষ-ত্রুটি গোপন না রাখে) তাহলে তাদের কেনাবেচার মধ্যে বরকত দেয়া হয়। আর তারা যদি (দোষ-ত্রুটি) গোপন রাখে এবং মিথ্যা বলে, তাহলে তাদের দু’জনের কেনাবেচার বরকত রহিত (নষ্ট) করা হয়’।[২৪]


عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا كَانَ يَقُوْلُ نَهَى النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَبِيْعَ بَعْضُكُمْ عَلَى بَيْعِ بَعْضٍ وَلَا يَخْطُبَ الرَّجُلُ عَلَى خِطْبَةِ أَخِيْهِ حَتَّى يَتْرُكَ الْخَاطِبُ قَبْلَهُ أَوْ يَأْذَنَ لَهُ الْخَاطِبُ


ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন অপরের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয় না করে এবং তার মুসলিম ভাইয়ের বিবাহ প্রস্তাবের উপর নিজের বিবাহ প্রস্তাব না দেয়। যতক্ষণ না প্রথম প্রস্তাবকারী তার প্রস্তাব উঠিয়ে নিবে অথবা তাকে অনুমতি প্রদান করবে’।[২৫]


عَنْ أَبِىْ قَتَادَةَ الْأَنْصَارِىِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ  أَنَّهُ سَمِعَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ إِيَّاكُمْ وَكَثْرَةَ الْحَلِفِ فِى الْبَيْعِ فَإِنَّهُ يُنَفِّقُ ثُمَّ يَمْحَقُ


আবূ ক্বাতাদা আল-আনছারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন যে, ‘তোমরা কেনাবেচার সময় অধিক কসম খাওয়া থেকে দূরে থাক। কেননা তা বিক্রয় বৃদ্ধি করে; কিন্তু বরকত নষ্ট করে দেয়’।[২৬]


সুধী পাঠক! উপরের হাদীছগুলোর দিকে খেয়াল করলেই পরিষ্কারভাবে বুঝা যাবে ইসলামে কোন্ জাতীয় ব্যবসা হারাম। আরেকটা বিষয় পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে, যে সব জিনিস খাওয়া হারাম তার ব্যবসাও হারাম। এমনকি তার লভ্যাংশ ভোগ করাও হারাম। উল্লেখিত ব্যবসাগুলোতে মানুষের উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশী হবে। তাছাড়া এসব জিনিসের সাথে চরিত্র ধ্বংসের বহুবিধ কারণও রয়েছে। তাই সার্বিক বিশ্লেষণে ইসলামে এ সব ব্যবসাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির লক্ষ্যে এ সকল অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য বর্জন করা উচিত।


রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য করে বলেন,يَا مَعْشَرَ التُّجَّارِ إِنَّ الْبَيْعَ يَحْضُرُهُ الْحَلِفُ وَاللَّغْوُ فَشُوْبُوْهُ بِالصَّدَقَةِ ‘হে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়! ক্রয়-বিক্রয়কালে শপথ ও বেহুদা কথাবার্তা (কোন হাদীছে এসেছে মিথ্যা কথা) হয়ে যায়। তাই কিছু দান-খয়রাত করে তা ধুয়ে (পরিচ্ছন্ন করে) নিও’।[২৭] ব্যবসায়ীদের বেশী বেশী দান-ছাদাক্বাহ করা উচিত। কেননা ইচ্ছা-অনিচ্ছাই তারা বিভিন্ন ধরনের অপসন্দীয় কর্মে জড়িয়ে যায়। আর দান-ছাদাক্বার মাধ্যমে মানুষের পাপমোচন হয়। তাই রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে দান-ছাদাক্বাহ করার নছিহত করেছেন।


(চলবে ইনশাআল্লাহ)


* শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, ডাঙ্গীপাড়া, রাজশাহী।


তথ্যসূত্র :

[১]. আবূ দাঊদ, হা/৩৫৮০; তিরমিযী, হা/১৩৩৭; ইবনু মাজাহ, হা/২৩১৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৩২; ছহীহ আত-তারগীব, হা/২২১১; মিশকাত, হা/৩৭৫৩, সনদ ছহীহ ।  

[২]. আবূ দাঊদ, হা/২৯৪৩; ছহীহ আত-তারগীব, হা/৭৭৯; মিশকাত, হা/৩৭৪৮, সনদ ছহীহ ।  

[৩]. আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/৬৯০২; আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/১১৪৮৬; সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামে‘, হা/৭০৫৪।  

[৪]. বায়হাক্বী, সুনানুছ ছুগরা, হা/৩২৯৩; ইরওয়াউল গালীল, হা/২৬২২; সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামে‘, হা/৭০২১।  

[৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৭১৫১; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪২; মিশকাত, হা/৩৬৮৬।  

[৬]. ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৫৯৭৮; ছহীহ আত-তারগীব, হা/১৮৭১, সনদ ছহীহ ।  

[৭]. আবূ দাঊদ, হা/৩৫৪১; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৩৪৬৫; মিশকাত, হা/৩৭৫৭, সনদ হাসান।  

[৮]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৬৩৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৩২; মিশকাত, হা/১৭৭৯।  

[৯]. ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৫১৯৯, সনদ ছহীহ; যাদুল মা‘আদ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৮ পৃ.; ইবনু কাছীর, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৩৩।  

[১০]. ছহীহ বুখারী, হা/৩১১৮; বলুগুল মারাম, হা/১৪৯৩; মিশকাত, হা/৩৭৪৬।  

[১১]. ছহীহ বুখারী, হা/২০৮৬; নাসাঈ, হা/৫১০৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৬৪; মিশকাত, হা/২৭৬৫।  

[১২]. ছহীহ বুখারী, হা/২২৩৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৬৭; মিশকাত, হা/২৭৬৪।  

[১৩]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৬৯; মিশকাত, হা/২৭৬৮।  

[১৪]. দারাকুৎনী, হা/২৮৫১; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১৮০৬, সনদ ছহীহ।  

[১৫]. ছহীহ বুখারী, হা/২১০৫; ছহীহ মুসলিম, হা/২১০৭; মিশকাত, হা/৪৪৯২।  

[১৬]. ছহীহ বুখারী, হা/২২৩৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৮১; মিশকাত, হা/২৭৬৬।  

[১৭]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৫৪১; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৮০; আবূ দাঊদ, হা/৩৪৯০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৭৩৬।  

[১৮]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৭৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৯০।  

[১৯]. তিরমিযী, হা/১২৮২; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২৯২২; মিশকাত, হা/২৭৮০, সনদ হাসান।  

[২০]. ছহীহ বুখারী, হা/২২৮৪; আবূ দাঊদ, হা/৩৪২৯; তিরমিযী, হা/১২৭৩; নাসাঈ, হা/৪৬৭১; মিশকাত, হা/২৮৫৬।  

[২১]. ছহীহ মসলিম, হা/৪০৮৭; আবূ দাঊদ, হা/৩৪৮৭; নাসাঈ, হা/৪৬৬০; ইবনু মাজাহ, হা/২৪৭৭; মিশকাত, হা/২৮৫৮।  

[২২]. আবূ দাঊদ, হা/৩৪৯৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৭১২, সনদ হাসান।  

[২৩]. ছহীহ বুখারী, হা/২১৪৮; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫১৫; আবূ দাঊদ, হা/৩৪৪৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯২৯৯।  

[২৪]. ছহীহ বুখারী, হা/২০৭৯; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৩২; তিরমিযী, হা/১২৪৬; মিশকাত, হা/২৮০২।  

[২৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৫১৪২; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪১২।  

[২৬]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৬০৭; মিশকাত, হা/২৭৯৩।  

[২৭]. আবূ দাঊদ, হা/৩৩২৬; নাসাঈ, হা/৪৪৬৩; ইবনু মাজাহ, হা/২১৪৫; মিশকাত, হা/২৭৯৮, সনদ ছহীহ।





ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আযীযুর রহমান
মসজিদ: ইসলামী সমাজের প্রাণকেন্দ্র (২য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম) -এর আগমন সংশয় নিরসন (৬ষ্ঠ কিস্তি) - হাসিবুর রহমান বুখারী
কর্যে হাসানাহ প্রদানের গুরুত্ব ও ফযীলত - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আত সম্পর্কে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের অবস্থান (৪র্থ কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির
ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমন সংশয় নিরসন - হাসিবুর রহমান বুখারী
পরবর্তীদের তুলনায় সালাফদের জ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্ব - অনুবাদ : আযহার বিন আব্দুল মান্নান
ছয়টি মূলনীতির ব্যাখ্যা (৩য় কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (১৫তম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
সন্তানের মৃত্যুতে ধৈর্যধারণ এবং তার প্রতিদান - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আত সম্পর্কে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের অবস্থান (৫ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির
বিদ‘আত পরিচিতি (৭ম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান

ফেসবুক পেজ