বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৪ অপরাহ্ন

বিদ‘আত পরিচিতি

-ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান*


 (২৫ তম কিস্তি)

১৩- বিদ‘আত আল্লাহর যিকির হতে বিরত রাখে

মুসলিম জীবনে যিকিরের ভূমিকা কল্পনাতীত। যাবতীয় বিপদাপদ, কষ্ট-মুছিবত, ষড়যন্ত্র-সংঘাত, দুঃখ-হতাশা, রোগ-ব্যাধি সহ সকল ক্ষেত্রে যিকিরের প্রভাবে মুমিনের জীবন নিশ্চিদ্র নিরাপত্তায় অতিবাহিত হয়ে থাকে। তবে সকল ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণই ঈমানদার ব্যক্তির প্রধান অস্ত্র। ফলে মুমিনের জীবন হয় নির্ঝঞ্ঝাট, নিরাপদ ও শান্তিপ্রিয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَاذۡکُرُوۡنِیۡۤ اَذۡکُرۡکُمۡ ‘অতএব তোমরা আমাকেই স্মরণ কর, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৫২)। অন্যত্র তিনি বলেন, وَ اذۡکُرُوا اللّٰہَ  کَثِیۡرًا  لَّعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ ‘আল্লাহকে অধিক স্মরণ করবে যাতে তোমরা সফলকাম হও’ (সূরা আল-জুমু‘আহ : ১০)। তিনি আরো বলেন,

یٰۤاَیُّہَاالَّذِیۡنَ  اٰمَنُوا اذۡکُرُوا اللّٰہَ  ذِکۡرًا کَثِیۡرًا-وَّ سَبِّحُوۡہُ  بُکۡرَۃً  وَّ  اَصِیۡلًا

‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা কর’ (সূরা আল-আহযাব : ৪১-৪২)। অন্যত্র তিনি বলেন,

وَ اذۡکُرۡ رَّبَّکَ فِیۡ نَفۡسِکَ تَضَرُّعًا وَّ  خِیۡفَۃً وَّ دُوۡنَ الۡجَہۡرِ مِنَ الۡقَوۡلِ بِالۡغُدُوِّ وَ الۡاٰصَالِ  وَ لَا  تَکُنۡ  مِّنَ  الۡغٰفِلِیۡنَ

‘আপনার প্রতিপালককে মনে মনে বিনয়-নম্র ও ভয়-ভীতি সহকারে অনুচ্চস্বরে সকাল ও সন্ধ্যায় স্মরণ করুন, আর (হে নবী (ﷺ)!) আপনি এই ব্যাপারে গাফিল ও উদাসীন হবেন না’ (সূরা আল-আ‘রাফ : ২০৫)।

পরিতাপের বিষয় হল- আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক নিরাপত্তা লাভের মহামূল্যবান মাধ্যম যিকিরের ব্যাপারেও বিদ‘আতীরা নানাবিধ বিদ‘আতী আমল চালু করেছে। ফলে বিদ‘আতী মোল্লারা যেমন নিজেরা ছহীহ যিকির থেকে দূরে থাকে, তেমনি তাদের অনুসারীদেরকে দূরে রাখে। আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় কিতাবে ও রাসূল মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর হাদীছে আমাদের অনেক যিকির ও দু‘আ শিক্ষা দিয়েছেন। কিছু দু‘আ বা যিকির নির্ধারিত আছে। যেমন ফরয ছালাতের পর যিকির, সকাল-সন্ধ্যার তাসবীহ, ঘুমানোর সময় ও ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পরের যিকির ইত্যাদি। আবার কিছু যিকির বা দু‘আ এমন আছে যার কোন নির্ধারিত সময় বা স্থান নেই। বিদ‘আতীরা এ সমস্ত যিকির থেকে দূরে থাকে; তাদের বিদ‘আত নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে ও বিদ‘আতের ফিতনায় পতিত হওযার কারণে অথবা শরী‘আত সম্মত যিকিরকে বিদ‘আতী যিকির দ্বারা পরিবর্তন করার মাধ্যমে। মূলত তারা বিদ‘আতের কারণে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর শরী‘আত থেকে অর্থাৎ বৈধ যিকির থেকে বিমুখ হয়ে গিয়েছে’।[১]

মূলত বিদ‘আতীরা দু‘আর ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি বা সীমালঙ্ঘন করে থাকে। আর দু‘আতে বাড়াবাড়ি করার অর্থ হল এ ক্ষেত্রে শরী‘আতের সীমা অতিক্রম করা। মৌলিকভাবে মানুষ জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে ইচ্ছামত দু‘আ করে থাকে। যা সীমালঙ্ঘনের শামিল। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, اُدۡعُوۡا رَبَّکُمۡ  تَضَرُّعًا  وَّ خُفۡیَۃً ؕ اِنَّہٗ لَا یُحِبُّ الۡمُعۡتَدِیۡنَ ‘তোমরা বিনিতভাবে ও গোপনে তোমাদের রবকে ডাক, নিশ্চয় তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পসন্দ করেন না’ (আল-আ‘রাফ, ৭/৫৫)। দু‘আর ক্ষেত্রে যেসকল সীমালঙ্ঘন করা হয়ে থাকে তা নিম্নে উল্লেখ করা হল- যেমন,

ক. অর্থগত সীমালঙ্ঘন  (الاعتداءُ في المعاني) : এ প্রকার সীমালঙ্ঘন কখনো কখনো হারাম পর্যায়ে পৌঁছে যায় আবার কখনো অপসন্দনীয়ের কাতারে গিয়ে দাঁড়ায়। যেমন শরী‘আতে নিষিদ্ধ বিষয়ে সজ্ঞানে দু‘আ করা। উদাহরণস্বরূপ : হে আল্লাহ! অমুক মৃতকে জীবিত করুন, হে আল্লাহ! আমি যেন আপনাকে স্বপ্নে দেখি অথবা আখিরাতে নবীগণের স্থান ও দুনিয়াতে তাঁদের মু‘জিযা দেখার আবেদন করা ইত্যাদি। অনুরূপভাবে মদ সহ বিভিন্ন হারাম বিষয়ের দু‘আ করা, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার দু‘আ করা ইত্যাদি। দুনিয়াবী শান-সৈকত, অহংকার, জৌলুস সহ বিভিন্ন প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণার্থে অধিক সন্তান, সম্পদ, সুস্থতা, দীর্ঘ হায়াত ইত্যাদির জন্য প্রার্থনা করা ইদ্যাদি।[২]

খ. শব্দগত সীমালঙ্ঘন (الاعتداء في ألفاظ الدُّعاء) : দু‘আর ক্ষেত্রে শব্দগত সীমালঙ্ঘন ব্যাপক মারাত্মক। এর ভয়াবহতাও অনেক বেশি। এটি কয়েক প্রকার হতে পারে। ১- শিরক মিশ্রিত দু‘আ করা : অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে আহ্বান করা। যেমন হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আপনি আমাকে আপনার নিকটবর্তী করে নিন অথবা হে আলী! হে জীলানী! ইত্যাদি। অথচ এটা কুফরী বাক্য তা স্পষ্ট (আল-ফাতির, ৩৫/১৪)। ২- আল্লাহর নামসমূহকে তাছগীর বা সংক্ষিপ্তভাবে বলা। যেমন يا رُبَيْبِي (ইয়া রুবাইবী), يا حُنَيِّن (ইয়া হুনাইয়িন), يا رحيِّم (ইয়া রুহাইয়িম) ইত্যাদি। ৩- আল্লাহর ছিফাতসমূহের দু‘আ করা। যেমন يا كلام الله اغفر لي وارحمني وأغثني، أو أعني ‘হে আল্লাহর কালাম! আমাকে ক্ষমা কর, আমাকে রহম কর, আমাকে সাহায্য কর এবং আমাকে সুস্থ কর’; অথবা হে আল্লাহর জ্ঞান! হে আল্লাহর কুদরত! হে আল্লাহর ইযযত! হে আল্লাহর মহানত্ব! ইত্যাদি। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘মুসলিমদের  ঐকমত্যে আল্লাহর গুণাবলী ও তাঁর কালামের দু‘আ করা কুফরী’।[৩] ৪- শরী‘আত পরিপন্থী বিভিন্ন নামে আল্লাহর কাছে দু‘আ করা। যেমন হে সুবহান! হে বুরহান! হে গুফরান! হে সুলতান! হে কুরআনের রব! ইত্যাদি। এছাড়া আরো কিছু সীমালঙ্ঘনের প্রকৃতি রয়েছে। বিস্তারিত জানতে হলে টীকায় দ্রষ্টব্য বইয়ের পৃষ্ঠাগুলো পড়ুন।[৪]

গ. ধরণ ও পদ্ধতিগত সীমালঙ্ঘন (الاعتداء في الهيئة والأداء) : দু‘আ করার সুন্নাত পরিপন্থী যেসকল ধরণ ও পদ্ধতি রয়েছে সেগুলোর ভিত্তিতে দু‘আ করা। যেমন দু‘আর মধ্যে বিনয়-নম্র ও অসহায়ত্ব না থাকা। ইবনুল ক্বাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘দু‘আর ক্ষেত্রে এটা সবচেয়ে বড় সীমালঙ্ঘন’।[৫] এক্ষেত্রে দু‘আ করার সময় উচ্চৈঃস্বরে আওয়াজ করা, দু‘আকে মজা ও রসিকতার মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করা, তন্দ্রা, অপবিত্র ও উলঙ্গ অবস্থায় দু‘আ করা, গানের সুর কিংবা উৎফুল্ল অবস্থায় দু‘আ করা ইত্যাদি সীমালঙ্ঘনের শামিল।[৬]

ঘ. স্থানগত সীমালঙ্ঘন  (الاعتداء في الدعاء المكاني) : অর্থাৎ দু‘আ করার জন্য শারঈ দলীল ব্যতীত কোন স্থানকে নির্দিষ্ট করা। সুতরাং কোন ব্যক্তি যদি দু‘আ করার ক্ষেত্রে এবং ছালাতের সুন্নাত আদায়ের ক্ষেত্রে কোন স্থানকে নির্দিষ্ট করে যে ব্যাপারে আল-কুরআন ও সুন্নাহয় কোন দলীল বর্ণিত হয়নি, তাহলে তা বিদ‘আত হিসাবে গৃহীত হবে এবং তা দু‘আর ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘনের অন্তর্ভুক্ত হবে। শরী‘আত বিরোধী কিছু স্থান, যেখানে মানুষ দু‘আ করে থাকে সেরূপ কিছু স্থান হল, যেমন : ১- কবর, মাযার ও খানকা ২- কবর ও মাযার কেন্দ্রিক মসজিদ, ৩- গীর্জা বা যে স্থানে ছবি-মূর্তি-প্রতিকৃতি রয়েছে, ৪- নবী করীম (ﷺ) ও অন্যান্য নবীর স্মৃতি বিজড়িত বিভিন্ন স্থান যেমন গারে হিরা, গারে ছাওর, নবী (ﷺ)-এর জন্মের স্থান ও উঠের স্থানকে বরকত মনে করে সেখানে গিয়ে দু‘আ করা। অথবা তূর পাহাড়, যেখানে মূসা (আলাইহিস সালাম) আল্লাহ তা‘আলার সাথে কথা বলেছিলেন; সেখানে দু‘আ করা, সফর করা ইত্যাদি সীমালঙ্ঘনের অন্তর্ভুক্ত।[৭]

ঙ. সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সীমালঙ্ঘন (الاعتداء في الدعاء الزماني) : অর্থাৎ দু‘আ করার জন্য শারঈ দলীল ব্যতীত কোন সময়কে নির্দিষ্ট করা হল দু‘আর ক্ষেত্রে সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সীমালঙ্ঘন। কেননা প্রত্যেক সময়ে দু‘আ কবুল হয় মর্মে শরী‘আতে বর্ণিত হয়েছে। তবে শরী‘আত যে সময়ে দু‘আ করতে নিষেধ করেছে সেগুলো ব্যতীত। যেমন বছরের প্রথম ও শেষ দিন রাত্রিতে দু‘আ করা, অর্ধ শা‘বান তথা শবেবরাতের রাত্রে দু‘আ করা, সফর মাসের শেষ চারদিন দু‘আ করা, রামাযানের শেষ তারাবীহর শেষ রাক‘আতের তেলাওয়াতের পর কুরআনে বর্ণিত দু‘আসমূহ পাঠ কর, আরাফার স্থান ব্যতীত আরাফার দিন সন্ধ্যার সময় মসজিদে একত্রিত হওয়া এবং আরাফার মাঠে যে দু‘আ করা হয় সেই দু‘আ পাঠ করা ইত্যাদি।[৮]

১৪- বিদ‘আতীরা সত্যকে গোপন করে

শরী‘আতের কোন বিষয়ের ব্যাপারে সত্য জানার পরেও বিদ‘আতীরা তা গোপন করে এবং তাদের অনুগামীদেরকে সত্য গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখে। মাযহাবী গোঁড়ামির কারণে সত্য গ্রহণের নে‘মত তাদের ভাগ্যে জোটে না। ফলে সত্য গোপন করার কারণে তারা যেমন মহা অপরাধী, তেমনি তাদের অনুসরণকারীরাও তাদেরকে অন্ধভাবে অনুসরণ করার কারণে সমানভাবে অপরাধী। এটি মুসলিম সমাজে বিদ‘আতের অন্যতম কুপ্রভাব। উক্ত কুপ্রভাবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতিষ্ঠিত সুন্নাহকে তারা বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে, অবজ্ঞা ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, হেয় প্রতিপন্ন করে, অপমান-অপদস্ত করে। ফলে সুন্নাতের সুউচ্চ প্রাসাদকে ভুলূণ্ঠিত করে বিদ‘আতী চেতনা ও বিদ‘আতী আমলের চোরাবালুতে নিক্ষিপ্ত হয়। এ ধরনের বিদ‘আতী কিংবা শরী‘আত গোপনকারী প্রত্যেক গোমরাহী ব্যক্তিদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলা অভিশাপ করেছেন এবং অন্য অভিশাপকারীরাও অভিশাপ করে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

اِنَّ الَّذِیۡنَ یَکۡتُمُوۡنَ مَاۤ اَنۡزَلۡنَا مِنَ الۡبَیِّنٰتِ وَ الۡہُدٰی مِنۡۢ بَعۡدِ مَا بَیَّنّٰہُ لِلنَّاسِ فِی الۡکِتٰبِ  ۙ  اُولٰٓئِکَ یَلۡعَنُہُمُ اللّٰہُ  وَ  یَلۡعَنُہُمُ  اللّٰعِنُوۡنَ 

‘নিশ্চয় যারা আমার অবতীর্ণ কোন দলীল এবং হেদায়াতকে লোকদের জন্য আমরা কিতাবের মধ্যে বর্ণনা করার পরেও গোপন করে, আল্লাহ তাদেরকে অভিশাপ করেন আর অভিশাপকারীরাও তাদের প্রতি অভিশাপ করে থাকে’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৫৯)। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ বলেন,

أَحْبَارُ الْيَهُوْدِ وَرُهْبَانُ النَّصَارَى الَّذِيْنَ كَتَمُوْا أَمْرَ مُحَمَّدٍ ﷺ وَقَدْ كَتَمَ الْيَهُوْدُ أَمْرَ الرَّجْمِ

‘ইহুদী ও খ্রিস্টানদের নেতৃবৃন্দ (তাওরাতে বর্ণিত) মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর বিষয়টি গোপন করেছিল। আর ইহুদীরা রজমের শাস্তির বিষয়টি গোপন করেছিল’। আবার কেউ কেউ বলেন, الْمُرَادُ كُلُّ مَنْ كَتَمَ الْحَقَّ فَهِيَ عَامَّةٌ فِيْ كُلِّ مَنْ كَتَمَ عِلْمًا مِنْ دِيْنِ اللهِ يُحْتَاجُ إِلَى بَثِّهِ ‘এর অর্থ হল প্রত্যেক ঐ ব্যক্তি যে সত্যকে গোপন করে। (এ আয়াতটি) যারা নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থের প্রয়োজনে আল্লাহর দ্বীনের কোন ইলমকে গোপন করে তাদের সকলের জন্য ‘আম’।[৯] আশ্চর্যের বিষয় হল- বিদ‘আতীরাও সত্য অবগত হওয়ার পরেও সত্যকে তারা গোপন করে থাকে। এটা তাদের একটা বৈশিষ্ট্যও বটে। অথচ এ প্রসঙ্গে হাদীছে কঠিন হুঁশিয়ারী বর্ণিত হয়েছে। যেমন,

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ «مَنْ سُئِلَ عَنْ عِلْمٍ فَكَتَمَهُ أَلْجَمَهُ اللهُ بِلِجَامٍ مِنْ نَارٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ».


আবূ হুয়ায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি জানা ইল্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হওয়ার পরেও তা গোপন করল, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তাকে আগুনের লাগাম পরিয়ে দিবেন।[১০] অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

حَفِظْتُ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ وِعَاءَيْنِ فَأَمَّا أَحَدُهُمَا فَبَثَثْتُهُ وَأَمَّا الآخَرُ فَلَوْ بَثَثْتُهُ قُطِعَ هَذَا الْبُلْعُوْمُ .

‘আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ) থেকে দু’পাত্র ‘ইলম আয়ত্ত করে রেখেছিলাম। তার একটি পাত্র আমি বিতরণ করে দিয়েছি। আর অপরটি এমন যে, প্রকাশ করলে আমার কণ্ঠনালী কেটে দেয়া হবে’।[১১] হুমরান (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

فَلَمَّا تَوَضَّأَ عُثْمَانُ قَالَ وَاللهِ لَأُحَدِّثَنَّكُمْ حَدِيْثًا وَاللهِ لَوْلَا آيَةٌ فِىْ كِتَابِ اللهِ مَا حَدَّثْتُكُمُوْهُ إِنِّىْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ «لَا يَتَوَضَّأُ رَجُلٌ فَيُحْسِنُ وُضُوْءَهُ ثُمَّ يُصَلِّى الصَّلَاةَ إِلَّا غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الصَّلَاةِ الَّتِىْ تَلِيهَا». قَالَ عُرْوَةُ الآيَةُ (اِنَّ الَّذِیۡنَ یَکۡتُمُوۡنَ مَاۤ اَنۡزَلۡنَا مِنَ الۡبَیِّنٰتِ وَ الۡہُدٰی) إِلَى قَوْلِهِ (اللّٰعِنُوۡنَ).


‘উছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ওযূ শেষে বললেন যে, আল্লাহর কসম! আমি তোমাদেরকে একটি হাদীছ শুনাব। আল্লাহর কসম! যদি আল্লাহর কিতাবের মধ্যে একটি আয়াত না থাকত, তাহলে আমি তোমাদেরকে কখনই হাদীছটি শুনাতাম না। আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি যে, কোন ব্যক্তি যখন ওযূ করে এবং উত্তমরূপে ওযূ করে অর্থাৎ ভালভাবে ওযূর স্থানগুলো ভিজায় তারপর ছালাত আদায় করে তখন তার এ ছালাত ও পিছনের ছালাতের মধ্যবর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। ‘উরওয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আয়াতটি হল,

اِنَّ الَّذِیۡنَ یَکۡتُمُوۡنَ مَاۤ اَنۡزَلۡنَا مِنَ الۡبَیِّنٰتِ وَ الۡہُدٰی مِنۡۢ بَعۡدِ مَا بَیَّنّٰہُ لِلنَّاسِ فِی الۡکِتٰبِ  ۙ  اُولٰٓئِکَ یَلۡعَنُہُمُ اللّٰہُ  وَ  یَلۡعَنُہُمُ  اللّٰعِنُوۡنَ.

‘নিশ্চয় যারা আমার অবতীর্ণ কোন দলীল এবং হেদায়াতকে লোকদের জন্য আমরা কিতাবের মধ্যে বর্ণনা করার পরেও গোপন করে, আল্লাহ তাদেরকে অভিশাপ করেন আর অভিশাপকারীরাও তাদের প্রতি অভিশাপ করে থাকে’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৫৯)।[১২] আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

إِنَّ النَّاسَ يَقُوْلُوْنَ أَكْثَرَ أَبُوْ هُرَيْرَةَ وَلَوْلَا آيَتَانِ فِىْ كِتَابِ اللهِ مَا حَدَّثْتُ حَدِيْثًا ثُمَّ يَتْلُو (اِنَّ الَّذِیۡنَ یَکۡتُمُوۡنَ مَاۤ اَنۡزَلۡنَا مِنَ الۡبَیِّنٰتِ) إِلَى قَوْلِهِ (الرَّحِیۡمُ) إِنَّ إِخْوَانَنَا مِنَ الْمُهَاجِرِيْنَ كَانَ يَشْغَلُهُمُ الصَّفْقُ بِالْأَسْوَاقِ وِإِنَّ إِخْوَانَنَا مِنَ الْأَنْصَارِ كَانَ يَشْغَلُهُمُ الْعَمَلُ فِىْ أَمْوَالِهِمْ وَإِنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ كَانَ يَلْزَمُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ بِشِبَعِ بَطْنِهِ وَيَحْضُرُ مَا لَا يَحْضُرُوْنَ وَيَحْفَظُ مَا لَا يَحْفَظُوْنَ .

‘লোকেরা বলে, আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) অধিক হাদীছ বর্ণনা করে। (জেনে রাখ!) কিতাবে দু’টি আয়াত যদি না থাকত, তবে আমি একটি হাদীছও পেশ করতাম না। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করলেন,

اِنَّ الَّذِیۡنَ یَکۡتُمُوۡنَ مَاۤ اَنۡزَلۡنَا مِنَ الۡبَیِّنٰتِ وَ الۡہُدٰی مِنۡۢ بَعۡدِ مَا بَیَّنّٰہُ لِلنَّاسِ فِی الۡکِتٰبِ  ۙ  اُولٰٓئِکَ یَلۡعَنُہُمُ اللّٰہُ  وَ  یَلۡعَنُہُمُ  اللّٰعِنُوۡنَ- اِلَّا الَّذِیۡنَ تَابُوۡا وَ اَصۡلَحُوۡا وَ بَیَّنُوۡا فَاُولٰٓئِکَ اَتُوۡبُ عَلَیۡہِمۡ ۚ وَ اَنَا التَّوَّابُ الرَّحِیۡمُ.

‘নিশ্চয় যারা আমার অবতীর্ণ কোন দলীল এবং হেদায়াতকে লোকদের জন্য আমরা কিতাবের মধ্যে বর্ণনা করার পরেও গোপন করে, আল্লাহ তাদেরকে অভিশাপ করেন আর অভিশাপকারীরাও তাদের প্রতি অভিশাপ করে থাকে; কিন্তু যারা তাওবাহ করে, সংশোধন করে এবং প্রকাশ করে দেয় যে, আমি তাদের (ক্ষমার) জন্য ফিরে আসি, আর আমি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৫৯-১৬০)। (মূলত) আমার মুহাজির ভাইয়েরা বাজারে কেনাবেচায় এবং আমার আনছার ভাইয়েরা জমা-জমির কাজে মশগুল থাকত। আর আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) (অভুক্ত থেকে) তুষ্ট থেকে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর সঙ্গে লেগে থাকত। তাই তারা যখন উপস্থিত থাকত না, তখন সে উপস্থিত থাকত এবং তারা যা আয়ত্ত করত না সে তা আয়ত্ত রাখত’।[১৩] ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় এই হাদীছটি উল্লেখ করে বলেন যে, ‘সত্য ইলমের দিকে দাওয়াত দেয়া আলেমগণের উপর ওয়াজিব’।[১৪]

সুধী পাঠক! শরী‘আত গোপন করা কাবীরা গুনাহ এবং অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্ট ইহুদী-খ্রিস্টানদের স্বভাব। ছাহাবীগণ এই পাপ থেকে মুক্তির জন্য তারা যা জানতেন তা সবই বর্ণনা করেছেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল- বিদ‘আতীরা তাদের বিদ‘আতী আমলকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ছহীহ সুন্নাহ সম্পর্কে সুস্পষ্টরূপে অবগত হওয়া সত্ত্বেও তারা তা বর্ণনা না করে গোপন করে থাকে এবং বিদ‘আতের পক্ষাবলম্বন করে। সাথে সাথে তাদের অনুগামীদেরকে সেই বিদ‘আতের দিকে আহ্বান করে থাকে। যার পরিণাম তারা আল্লাহ তা‘আলা, ফেরেশতামণ্ডলী  ও মানবজাতির পক্ষ থেকে লা‘নতপ্রাপ্ত এবং জাহান্নামে আগুনের লাগামের অধিকারী হবে। অতএব হে মুসলিম! শরী‘আত গোপনকারী অভিশপ্ত ও জাহান্নামের কীট বিদ‘আতীদের থেকে সাবধান।

১৫- বিদ‘আতীরা সুন্নাহকে ঘৃণা করে থাকে

বিদ‘আতীদের নিকট সুন্নাতি আমল ঘৃণিত আমল। কেননা যখন বিদ‘আতী কাল্পনিক কোন আমল করে তখন ইসলামের শত্রুদের নিকট ইসলাম উপহাসের বস্তু হয়ে দাঁড়ায়। অথচ ইসলাম বিদ‘আত হতে মুক্ত।[১৫] মূলত বিদ‘আতীরা সুন্নাহর প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে। বিদ‘আতীরা যখন তাদের কোন বিদ‘আতী আমলের বিপক্ষে ছহীহ হাদীছ শ্রবণ করে, তখন সে ঐ ছহীহ হাদীছ ও আমলের উপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে ওঠে। অন্তরে ঘৃণার জন্ম হয়। বাক্বীয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

قَالَ لِي الْأَوْزَاعِيُّ يَا أَبَا مُحَمْدٍ مَا تَقُوْلُ فِيْ قَوْمٍ يُبْغِضُوْنَ حَدِيْثَ نَبِيِّهِمْ؟ قَالَ قُلْتُ قَوْمٍ سُوْءٍ  قَالَ لَيْسَ مِنْ صَاحِبِ بِدْعَةٍ تُحَدِّثَهُ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ بِخِلَافِ بِدْعَتِهِ إِلَّا أَبْغَضَ الْحَدِيْثَ

‘আমাকে ইমাম আওযাঈ (মৃ. ১৫৭ হি.) বলেছেন, হে মুহাম্মাদ! ঐ লোকদের সম্পর্কে তোমার কী অভিমত, যারা তাদের নবীর হাদীছের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে? আমি বললাম, তারা খুব খারাপ লোক। তিনি বললেন, তুমি কোন বিদ‘আতীর কাছে তার বিদ‘আতের বিরোধী রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কোন হাদীছ পেশ করলে নিশ্চিত সে ঐ হাদীছের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে’।[১৬]

সুন্নাহর প্রতি বিদ‘আতীদের বিদ্বেষ পোষণের কারণে সালাফগণ বিদ‘আতীদেরকে ঘৃণা করতেন। যেমন, বিদ‘আতীদের নিন্দা করে খলীফাতুল মুসলিমীন ও আমীরুল মুমিনীন উমার ফারূক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন,

إِيَّاكُمْ وَأَصْحَابَ الرَّأْىِ فَإِنَّهُمْ أَعْدَاءُ السُّنَنِ أَعْيَتْهُمُ الأَحَادِيْثُ أَنْ يَحْفَظُوْهَا فَقَالُوْا بِالرَّأْىِ فَضَلُّوْا وَأَضَلُّوْا

‘তোমরা আছহাবে রায় তথা যারা দ্বীনি বিষয়ে নিজের খেয়াল-খুশি মত সিদ্ধান দেয়, তাদের থেকে সাবধান থেকো। তারা সুন্নাহর শত্রু, তারা হাদীছ মুখস্থ করে বুকে ধারণ করতে অক্ষম। তাই নিজস্ব মতানুযায়ী কথা বলে। ফলে নিজেরাও পথভ্রষ্ট হয় অন্যকেও পথভ্রষ্ট করে’।[১৭]

সালাফগণ বিদ‘আতীদের এতই ঘৃণা করতেন যে, তাঁরা তাদের নিকট থেকে কোন ধরনের অনুগ্রহ গ্রহণ করতেন না। প্রখ্যাত তাবেঈ বিদ্বান আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (মৃ. ১৮১ হি.) (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

اَللَّهُمَ لَا تَجْعَلْ لِصَاحِبِ بِدْعَةٍ عِنْديِ يَدًا فَيُحِبُّهُ قَلْبِيْ

‘হে আল্লাহ! আমার প্রতি যেন কোন বিদ‘আতীর অনুগ্রহ না থাকে, যার ফলে আমার অন্তরে তার প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হবে’।[১৮]

বিদ‘আতীদেরকে সালাফগণ তাদের মজলিস থেকে বের করে দিতেন। যা তাদের প্রতি ঘৃণারই বহিঃপ্রকাশ। হাফেয ইবনু হাজার আল-আসক্বালানী (৭৭৩-৮৫২ হি./১৩৭২-১৪৪৯ খ্রি.) (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

وَأَخْرَجَ الْبَيْهَقِيُّ بِسَنَدٍ جَيِّدٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ وَهْبٍ قَالَ كُنَّا عِنْدَ مَالِكٍ فَدَخَلَ رَجُلٌ فَقَالَ يَا أَبَا عَبْدِ اللهِ الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى كَيْفَ اسْتَوَى فَأَطْرَقَ مَالِكٌ فَأَخَذَتْهُ الرُّحَضَاءُ ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهُ فَقَالَ الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى كَمَا وَصَفَ بِهِ نَفْسَهُ وَلَا يُقَالُ كَيْفَ وَكَيْفَ عَنْهُ مَرْفُوْعٌ وَمَا أَرَاكَ إِلَّا صَاحِبَ بِدْعَةٍ أَخْرِجُوْهُ

ইমাম বায়হাক্বী (রাহিমাহুল্লাহ) ছহীহ সনাদে আব্দুল্লাহ ইবনু ওয়াহহাব (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমরা ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ)-এর কাছে ছিলাম, এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি তাঁর কাছে প্রবেশ করে বলল, হে আবূ আব্দুল্লাহ! (আল্লাহ তা‘আলার বাণী) রহমান আরশের উপর ‘ইসতিওয়া’ করেছেন। তিনি কিভাবে ‘ইসতিওয়া’ করেছেন? তখন ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) প্রশ্নের ভয়াবহতায় মাথা নিচু করে ফেললেন। আর তাঁর শরীর থেকে ঘাম ঝরতে লাগল। অতঃপর তিনি মাথা উঠিয়ে বললেন, আল্লাহ আরশের উপর ‘ইসতিওয়া’ করেছেন যেমন তিনি নিজের ব্যাপারে বলেছেন। এখন এ কথা বলা যাবে না যে, তাঁর ‘ইসতিওয়াহ’ কিভাবে হয়েছে? বা আল্লাহর ব্যাপারে এরূপ প্রশ্ন করা যাবে না যে, কীভাবে তাঁর থেকে কাজটি সম্পন্ন হয়েছে? আর আমার মনে হচ্ছে, তুমি বিদ‘আতী, তোমরা তাকে বের করে দাও’।[১৯]

বিদ‘আতীরা সুন্নাতপন্থী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের সাথে শত্রুতা পোষণ করে। এ প্রসঙ্গে ইমাম শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ) (১১৭৩-১২৫০ হি./১৭৫৯-১৮৩৪ খ্রি.) বলেন,

وَأما الْعَدَاوَة بَبن المتبع والمبتدع فَأمرهَا أوضح من الشمس فَإِن المتبع يعادي المبتدع لبدعته والمبتدع يعادي المتبع لاتباعه... وقد تبلغ عداوات أهل البدع لغيرهم من أهل الاتباع فوق عداوتهم لليهود والنصاري

‘সুন্নাতের অনুসারী এবং বিদ‘আতীর মধ্যকার শত্রুতা সূর্যের চেয়েও বেশি স্পষ্ট। কেননা সুন্নাতের অনুসারী বিদ‘আতীর সাথে বিদ্বেষ পোষণ করে তার বিদ‘আতের কারণে, আর বিদ‘আতী সুন্নাতের অনুসারীর সাথে বিদ্বেষ পোষণ করে তার সুন্নাতের অনুসরণ এবং সঠিক পথে থাকার কারণে’। একটু পরে তিনি আরো বলেন, ‘বিদ‘আতীরা ইহুদী-নাছারার সাথে যে শত্রুতা পোষণ করে, কখনও কখনও তার চেয়েও বেশি শত্রুতা পোষণ করে সুন্নাতের অনুসারীর সাথে’।[২০] আহমাদ ইবনু সিনান (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

لَيْسَ فِي الدُّنْيَا مُبْتَدِعٌ إِلَا وَهُوَ يُبْغِضُ أَهْلَ الْحَدِيثِ وَإِذَا ابْتَدَعَ الرَّجُلُ بِدْعَةً نُزِعَتْ حَلَاوَةُ الْحَدِيثِ مِنْ قَلْبِهِ

‘দুনিয়াতে সকল বিদ‘আতীই আহলেহাদীছদেরকে শত্রুতা পোষণ করে। আর যখন কোন ব্যক্তি বিদ‘আত করে তখন তার অন্তর থেকে হাদীছের স্বাধ তুলে নেয়া হয়’।[২১]

(ইনশাআল্লাহ চলবে)

* শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আল-ইসলামিয়্যাহ, খড়খড়ি, রাজশাহী।

তথ্যসূত্র :
[১]. ড. ছালেহ আস-সুহাইমী, তানবীহ উলিল আবছার ইলা কামাল উদ্দীন ওমা ফিল বিদ‘ঈ মিন আখত্বার, পৃ. ১৮৯।
[২]. আল-ই‘তিদায়ু ফিদ দু‘আয়ি, পৃ. ৫২-৬১।
[৩]. শায়খুল ইমসলাম ইমাম আহমাদ ইবনু তাইমিয়্যাহ, আর-রাদ্দু আলাল বিকরী (তালখীছু কিতাবিল ইস্তিগাছা) (মদীনা : মাকতাবাতুল গুরাবা আলা-আছরিয়্যাহ, ১ম সংস্করণ, ১৪১৭ হি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ১৮১ ।
[৪]. আল-ই‘তিদায়ু ফিদ দু‘আয়ি, পৃ. ৬২-৭৮।
[৫]. ইবনুল ক্বাইয়িম আল-জাওযিয়্যাহ, বাদাইয়ুল ফাওয়াইদ (মক্কা : মাকতাবাতু নাযযার মুছত্বফাতুল বাযযার, ১ম সংস্করণ, ১৪১৬ হি./১৯৯৬ খ্রি.), ৩য় খণ্ড, পৃ. ৫২৪।
[৬]. আল-ই‘তিদায়ু ফিদ দু‘আয়ি, পৃ. ৭৯-৯০।
[৭]. আল-ই‘তিদায়ু ফিদ দু‘আয়ি, পৃ. ৯১-৯৮।
[৮]. আল-ই‘তিদায়ু ফিদ দু‘আয়ি, পৃ. ৯৯-১০৪।
[৯]. আবূ বকর মুহাম্মাদ শামসুদ্দীন আল-কুরতুবী, আল-জামিঊ লি আহকামিল কুরআন (কায়রো : দারুল কুতুবিল মিছরিয়্যাহ, ২য় সংস্করণ, ১৩৮৪ হি./১৯৬৪ খ্রি.), ২য় খণ্ড, পৃ. ১৮৪।
[১০]. আবূ দাঊদ, হা/৩৬৫৮; ইবনু মাজাহ, হা/২৬৬; আহমাদ, হা/৭৫৬১, সনদ ছহীহ।
[১১]. ছহীহ বুখারী, হা/১২০; মিশকাত, হা/২৭১।
[১২]. ছহীহ মুসলিম, হা/২২৭।
[১৩]. ছহীহ বুখারী, হা/১১৮।
[১৪]. আল-জামিঊ লি আহকামিল কুরআন, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৮৫।
[১৫]. নূরুস সুন্নাতি ওয়া যুলূমাতিল বিদ‘আতি, পৃ. ১৫২-১৫৩।
[১৬]. লালকাঈ, শারহু উছূলি ই‘তিকাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৩০, আছার নং-৭৩২।
[১৭]. দারাকুতনী, হা/৪৩২৫; ইবনুল ক্বাইয়িম, ইলামুল মুওয়াকক্বিঈন, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৫; লালকাঈ, শারহু উছূলি ই‘তিকাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ১২৩, আছার নং-২০১, সনদ ছহীহ।
[১৮]. লালকাঈ, শারহু উছূলি ই‘তিকাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৩৯-১৪০, আছার নং-২৭৫; আল-ওয়াজীযু ফী আক্বীদাসি সালাফিছ ছালিহ, পৃ. ১৪৮।
[১৯]. আহমাদ ইবনু আলী ইবনু হাজার আল-আসক্বালানী, ফাৎহুল বারী শারহু ছহীহিল বুখারী (বৈরূত : দারুল মা‘আরিফাহ, ১৩৭৯ হি.), ১৩শ খণ্ড, পৃ. ৪০৬-৪০৭।
[২০]. মুহাম্মাদ ইবনু আলী আশ-শাওকানী, ক্বাত্বরুল অলি ‘আলা হাদীছিল অলি (প্রকাশ স্থান, সংস্থা বিহীন, ১ম সংস্করণ, ১৪৩৫ হি./২০১৪ খ্রি.), পৃ. ১৫৪।
[২১]. আবূ ইসমাঈল আব্দুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আলী আল-আনছারী আল-হারাভী, যাম্মুল কালামি ওয়া আহলিহি (মদীনাতুল মুনাওয়ারাহ : মাকতাবাতুল ঊলূমি ওয়াল হিকাম, ১ম সংস্করণ, ১৪১৮ হি./১৯৯৮ খ্রি.), ২য় খণ্ড, পৃ. ৭২, আছার নং-২২৯।




ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় যুবসমাজ (৫ম কিস্তি) - ড. মেসবাহুল ইসলাম
কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে আলো ও অন্ধকার (৩য় কিস্তি) - অনুবাদ : হাফীযুর রহমান বিন দিলজার হোসাইন
শরী‘আত অনুসরণের মূলনীতি (৪র্থ কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
ইসলামে বিবাহের গুরুত্ব (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আবূ সাঈদ
ফাযায়েলে কুরআন (শেষ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
ছালাতের সঠিক সময় ও বিভ্রান্তি নিরসন (৫ম কিস্তি) - মাইনুল ইসলাম মঈন
ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমন সংশয় নিরসন (২য় কিস্তি) - হাসিবুর রহমান বুখারী
আল-কুরআন সম্পর্কে অমুসলিম মনীষীদের মূল্যায়ন - রাফিউল ইসলাম
ইসলামী পুনর্জাগরণের মূলনীতি (২য় কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
ছয়টি মূলনীতির ব্যাখ্যা (৪র্থ কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির
মাদক : সুশীল সমাজ ধ্বংসের অন্যতম হাতিয়ার - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
সালাফী মানহাজ অনুসরণের মর্যাদা - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান

ফেসবুক পেজ