বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৮ অপরাহ্ন

আত্মহত্যাকারীর শারঈ বিধান

-ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর*


আত্মহত্যা করা ইসলামের দৃষ্টিতে ঘৃণ্য অপরাধ। যা কাবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। কোন মুসলিম ব্যক্তির জন্য আত্মহত্যা করা বৈধ নয়। পরিস্থিতি যতই খারাপ হোক না কেন আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়া হারাম। বরং কঠিন বিপদে তাকে ধৈর্যধারণ করতে হবে। সাথে সাথে মহান আল্লাহর নিকট বিপদ থেকে মুক্তির জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। কিন্তু অধৈর্য হয়ে আত্মহত্যা করা যাবে না। ইসলামে আত্মহত্যা করাকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।

যে যেভাবে আত্মহত্যা করবে জাহান্নামে তাকে সে ভাবেই শাস্তি দেয়া হবে

আত্মহত্যা করা নিন্দনীয় স্বভাব। যা কোন মুসলিমের জন্য বৈধ নয়। পৃথিবীতে যে ব্যক্তি যে বস্তুর দ্বারা আত্মহত্যা করবে, ক্বিয়ামতের দিন তাকে ঐ বস্তুর দ্বারা আত্মহত্যা করানো হবে। এমর্মে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ ثَابِتِ بْنِ الضَّحَّاكِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ مَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ بِحَدِيْدَةٍ عُذِّبَ بِهِ فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ.

ছাবিত ইবনু যাহ্হাক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লৌহাস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করবে। জাহান্নামে তার হাতে লৌহাস্ত্র থাকবে সর্বক্ষণ সে তা দ্বারা নিজের পেটে ঢুকাতে থাকবে’।[১]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ ﷺ الَّذِيْ يَخْنُقُ نَفْسَهُ يَخْنُقُهَا فِي النَّارِ وَالَّذِيْ يَطْعُنُهَا يَطْعُنُهَا فِي النَّارِ.

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শ্বাসরুদ্ধ করে আত্মহত্যা করবে সে জাহান্নামে সর্বক্ষণ এভাবে আত্মহত্যা করবে। আর যে ব্যক্তি অস্ত্রের আঘাতে আত্মহত্যা করবে সে জাহান্নামে সর্বক্ষণ এভাবে আত্মহত্যা করবে’।[২]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ مَنْ تَرَدَّى مِنْ جَبَلٍ فَقَتَلَ نَفْسَهُ فَهُوَ فِي نَارِ جَهَنَّمَ يَتَرَدَّى فِيْهِ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيْهَا أَبَدًا وَمَنْ تَحَسَّى سُمًّا فَقَتَلَ نَفْسَهُ فَسُمُّهُ فِيْ يَدِهِ يَتَحَسَّاهُ فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيْهَا أَبَدًا وَمَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ بِحَدِيْدَةٍ فَحَدِيْدَتُهُ فِيْ يَدِهِ يَجَأُ بِهَا فِيْ بَطْنِهِ فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيْهَا أَبَدًا.

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পাহাড় হতে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামের আগুনে লাফিয়ে পড়ে সর্বক্ষণ আত্মহত্যা করতে থাকবে এবং সেটাই হবে তার চিরন্তন বাসস্থান। যে ব্যক্তি বিষ পান করে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ তার হাতে থাকবে, জাহান্নামে সে সর্বক্ষণ বিষ পান করে আত্মহত্যা করতে থাকবে এবং জাহান্নাম হবে তার চিরস্থায়ী বাসস্থান। যে ব্যক্তি লৌহাস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করবে, তার হাতে সেই লৌহাস্ত্রই থাকবে এবং জাহান্নামে সর্বক্ষণ নিজের পেটে সেটি ঢুকাতে থাকবে’।[৩]

عَنْ ثَابِتَ بْنَ الضَّحَّاكِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ قَالَ مَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ بِشَيْءٍ فِي الدُّنْيَا عُذِّبَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ لَعَنَ مُؤْمِنًا فَهُوَ كَقَتْلِهِ وَمَنْ قَذَفَ مُؤْمِنًا بِكُفْرٍ فَهُوَ كَقَتْلِهِ.

ছাবিত ইবনু যাহহাক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি যে বস্তু দ্বারা পৃথিবীতে আত্মহত্যা করবে, ক্বিয়ামতের দিনও তাকে তা দ্বারা শাস্তি দেয়া হবে। কেউ যদি কোন মুমিন ব্যক্তির প্রতি অভিশাপ করে তাহলে সে তাকে হত্যা করার মত পাপ করল। কেউ যদি কোন মুমিন ব্যক্তির প্রতি অপবাদ দেয়; তাহলে সে তাকে হত্যা করার মত পাপ করল’।[৪] অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, ‘যে ব্যক্তি কোন বস্তু দ্বারা নিজেকে যব্হ করবে, ক্বিয়ামত দিবসে উক্ত জিনিস দ্বারা তাকে যব্হ করা হবে’।[৫]

মানুষ যেভাবে দুনিয়াতে আত্মহত্যা করবে তাকে জাহান্নামে ঐভাবেই আত্মহত্যা করানো হবে। তার শাস্তিই হবে আত্মহত্যা করা। বিষপান বা বিষাক্ত মদ পান বা কোন তরল পদার্থের মাধ্যমে আত্মহত্যা করলে তাকে সেভাবেই শাস্তি দেয়া হবে। আর কোন আগ্নেয়াস্ত্র বা ধারালো কোন জিনিস দিয়ে আত্মহত্যা করলে তাকেও সেভাবেই আত্মহত্যা করতে বলা হবে। আত্মহত্যাকরীর শাস্তিও হবে জাহান্নামে ঐভাবেই আত্মহত্যা করা।

আত্মহত্যাকারীর জন্য জান্নাত হারাম

আত্মহত্যা করা কোন মুসলিমের জন্য শোভনীয় নয়। কোন প্রকৃত ঈমানদার এরূপ নোংরা কাজ করতে পারে না। এরূপ ব্যক্তি মহা সুখের জান্নাত থেকে বঞ্চিত হবে। এমর্মে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ جُنْدَبِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عن النَّبِيِّ ﷺ قَالَ بِرَجُلٍ بِهِ جِرَاحٌ فَقَتَلَ نَفْسَهُ فَقَالَ اللهُ بَدَرَنِيْ عَبْدِيْ بِنَفْسِهِ حَرَّمْتُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ.

জুনদুব ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের মধ্যে এক ব্যক্তি আঘাতের ব্যথা দুঃসহ্য বোধ করায় আত্মহত্যা করে। আল্লাহ তা‘আলা তার সম্পর্কে বলেন, আমার বান্দা আমার নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই নিজের জীবনের ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করলাম’।[৬]

حَدَّثَنَا شَيْبَانُ قَالَ سَمِعْتُ الْحَسَنَ يَقُوْلُ إِنَّ رَجُلًا مِمَّنْ كَانَ قَبْلَكُمْ خَرَجَتْ بِهِ قَرْحَةٌ فَلَمَّا آذَتْهُ انْتَزَعَ سَهْمًا مِنْ كِنَانَتِهِ فَنَكَأَهَا فَلَمْ يَرْقَإِ الدَّمُ حَتَّى مَاتَ قَالَ رَبُّكُمْ قَدْ حَرَّمْتُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ.

শায়বান ঢ় বলেন, আমি হাসান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে বলতে শুনেছি, ‘পূর্বের যুগের এক ব্যক্তির ফোঁড়া হয়েছিল। ফোঁড়ার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে তার তূণ থেকে একটি তীর বের করল। আর তা দিয়ে আঘাত করে ফোঁড়াটি চিরে ফেলল। তখন তার রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় সে মারা গেল। তোমাদের প্রতিপালক বলেন, আমি তার উপর জান্নাত হারাম করে দিয়েছি।[৭]

যারা আত্মহত্যা করবে তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। তারা জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ পাবে না। যে কোন কষ্ট স্বীকার করা ভালো তবে আত্মহত্যা করা ভালো নয়।

আত্মহত্যাকারীর শেষ ঠিকানা জাহান্নাম

আত্মহত্যাকারীর জন্য মহান প্রভু জান্নাত হারাম ঘোষণা করেছেন। আর তাদের ঠিকানা নির্ধারণ করেছেন জাহান্নাম। তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদেরকে জাহান্নামে অনুরূপ শাস্তি ভোগ করতে হবে। কোন অবস্থাতেই নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া উচিত নয়। আল্লাহর দেয়া ফায়ছালায় সবর করা উচিত। তাদের শেষ পরিণামের বিবরণ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَاۡکُلُوۡۤا اَمۡوَالَکُمۡ بَیۡنَکُمۡ بِالۡبَاطِلِ اِلَّاۤ اَنۡ تَکُوۡنَ تِجَارَۃً عَنۡ تَرَاضٍ مِّنۡکُمۡ ۟ وَ لَا تَقۡتُلُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ کَانَ بِکُمۡ رَحِیۡمًا- وَ مَنۡ یَّفۡعَلۡ ذٰلِکَ عُدۡوَانًا وَّ ظُلۡمًا فَسَوۡفَ نُصۡلِیۡہِ نَارًا ؕ وَ کَانَ ذٰلِکَ عَلَی اللّٰہِ  یَسِیۡرًا.

‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অন্যায়ভাবে একে অন্যের সম্পদ ভোগ করো না। তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসায় বৈধ। আর তোমরা আত্মহত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে আত্মহত্যা করবে আমি তাকে অচিরেই জাহান্নামে নিক্ষেপ করব’ (সূরা আন-নিসা : ৪/২৯-৩০)।

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِىِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ الْتَقَى هُوَ وَالْمُشْرِكُوْنَ فَاقْتَتَلُوْا فَلَمَّا مَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِلَى عَسْكَرِهِ وَمَالَ الْآخَرُوْنَ إِلَى عَسْكَرِهِمْ وَفِىْ أَصْحَابِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ رَجُلٌ لَا يَدَعُ لَهُمْ شَاذَّةً وَلَا فَاذَّةً إِلَّا اتَّبَعَهَا يَضْرِبُهَا بِسَيْفِهِ فَقَالَ مَا أَجْزَأَ مِنَّا الْيَوْمَ أَحَدٌ كَمَا أَجْزَأَ فُلَانٌ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَمَا إِنَّهُ مِنْ أَهْلِ النَّارِ فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ أَنَا صَاحِبُهُ قَالَ فَخَرَجَ مَعَهُ كُلَّمَا وَقَفَ وَقَفَ مَعَهُ وَإِذَا أَسْرَعَ أَسْرَعَ مَعَهُ قَالَ فَجُرِحَ الرَّجُلُ جُرْحًا شَدِيْدًا فَاسْتَعْجَلَ الْمَوْتَ فَوَضَعَ نَصْلَ سَيْفِهِ بِالْأَرْضِ وَذُبَابَهُ بَيْنَ ثَدْيَيْهِ ثُمَّ تَحَامَلَ عَلَى سَيْفِهِ فَقَتَلَ نَفْسَهُ فَخَرَجَ الرَّجُلُ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فَقَالَ أَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُوْلُ اللهِ قَالَ وَمَا ذَاكَ قَالَ الرَّجُلُ الَّذِىْ ذَكَرْتَ آنِفًا أَنَّهُ مِنْ أَهْلِ النَّارِ فَأَعْظَمَ النَّاسُ ذَلِكَ فَقُلْتُ أَنَا لَكُمْ بِهِ فَخَرَجْتُ فِىْ طَلَبِهِ ثُمَّ جُرِحَ جُرْحًا شَدِيْدًا فَاسْتَعْجَلَ الْمَوْتَ فَوَضَعَ نَصْلَ سَيْفِهِ فِى الْأَرْضِ وَذُبَابَهُ بَيْنَ ثَدْيَيْهِ ثُمَّ تَحَامَلَ عَلَيْهِ فَقَتَلَ نَفْسَهُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ عِنْدَ ذَلِكَ إِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ الْجَنَّةِ فِيْمَا يَبْدُو لِلنَّاسِ وَهْوَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ النَّارِ فِيْمَا يَبْدُوْ لِلنَّاسِ وَهْوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ.

সাহল বিন সা‘দ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কর্তৃক বর্ণিত। একবার আল্লাহর রাসূল (ﷺ) ও মুশ্রিকদের মধ্যে মুকাবিলা হয় এবং উভয়পক্ষ ভীষণ যুদ্ধে লিপ্ত হয়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজ সৈন্যদলের নিকট ফিরে এলেন, মুশ্‌রিকরাও ‍নিজ সৈন্যদলে ফিরে গেল। সেই যুদ্ধে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর সঙ্গীদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি ছিল, যে কোন মুশরিককে একাকী দেখলেই তার পশ্চাতে ছুটত এবং তাকে তলোয়ার দিয়ে আক্রমণ করত। বর্ণনাকারী (সাহল ইব্‌নু সা‘দ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আজ আমাদের কেউ অমুকের মত যুদ্ধ করতে পারেনি। তা শুনে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বললেন, সে তো জাহান্নামের অধিবাসী হবে। একজন ছাহাবী বলে উঠলেন, আমি তার সঙ্গী হব। অতঃপর তিনি তার সঙ্গে বেরিয়ে পড়লেন, সে দাঁড়ালে তিনিও দাঁড়াতেন এবং সে শীঘ্র চললে তিনিও দ্রুত চলতেন। তিনি বললেন, এক সময় সে মারাত্মকভাবে আহত হল এবং সে দ্রুত মৃত্যু কামনা করতে লাগল। এক সময় তলোয়ারের বাঁট মাটিতে রাখল এবং এর তীক্ষè দিক বুকে চেপে ধরে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করল। অনুসরণকারী ব্যক্তিটি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর নিকট আসলেন এবং বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহ‌র রাসূল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, কী ব্যাপার? তিনি বললেন, যে ব্যক্তিটি সম্পর্কে আপনি কিছুক্ষণ আগেই বলেছিলেন যে, সে জাহান্নামী হবে, তা শুনে ছাহাবীগণ বিষয়টিকে অস্বাভাবিক মনে করলেন। আমি তাদের বললাম যে, আমি ব্যক্তিটির সম্পর্কে খবর তোমাদের জানাব। অতঃপর আমি তার পিছু পিছু বের হলাম। এক সময় লোকটি মারাত্মকভাবে আহত হয় এবং সে শীঘ্র মৃত্যু কামনা করতে থাকে। অতঃপর তার তলোয়ারের বাট মাটিতে রেখে এর তীক্ষèধার বুকে চেপে ধরল এবং তার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তখন বললেন, ‘মানুষের বাহ্যিক বিচারে অনেক সময় কোন ব্যক্তি জান্নাতবাসীর মত ‘আমল করতে থাকে, আসলে সে জাহান্নামী হয় এবং তেমনি মানুষের বাহ্যিক বিচারে কোন ব্যক্তি জাহান্নামীর মত ‘আমল করলেও প্রকৃতপক্ষে সে জান্নাতী হয়।’[৮]

সুধী পাঠক! মানুষের জীবন-মৃত্যু আল্লাহ প্রদত্ত চূড়ান্ত বিধি-বিধানের অন্তর্ভুক্ত। তিনি প্রত্যেক মানুষের জীবন-মৃত্যুর দিনক্ষণ নির্ধারণ করেন। এই জীবন-মৃত্যুর মাঝে তিনি মানুষকে বিভিন্ন বিপদ-আপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। কোন বান্দা সর্বোত্তম আমল করে তা তিনি দেখতে চান। এই সুন্দর জীবন কেউ নিজে নিজে ধ্বংস করে দেয়ার অধিকার রাখে না। যিনিই জীবন দান করেছেন তাঁর নির্দেশেই মৃত্যু হবে। নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে। বর্তমান সময়ে উন্নত দেশগুলোতে আত্মহত্যার সংখ্যা তুলনা মূলকভাবে বেশি। কারণ তাদের নিকট পর্যাপ্ত অর্থ সম্পদ রয়েছে কিন্তু শান্তি নেই। টাকা পয়সা দিয়ে শান্তি কিনে পাওয়া যায় না। তারা প্রবৃত্তির অনুসরণে ব্যস্ত থাকে। মন যা চাই সেভাবেই জীবন যাপন করে থাকে। দ্বীন-ধর্মের ধার ধারে না। ইসলামের বিধি বিধানকে তোয়াক্কা করে না। বরং তা সব সময় অবজ্ঞা করে চলে। অবাধ ও বিকৃত যৌনাচারে লিপ্ত থাকে। যার দরূন পারিবারিক বন্ধন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। সারাদিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে বাড়ী ফেরে পরিবারের নিকট শান্তি পায় না। যার নির্মম পরিণতি হিসাবে আত্মহত্যার পথ বেছে নেই। কেউ অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে চরমভাবে ব্যর্থ হয়। কোন উপায় না পেয়ে অবশেষে আত্মহত্যা করে। এ সবগুলোই ইসলাম থেকে দূরে সরে যাওয়ারই ফল। অথচ আত্মহত্যাকারী জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ থেকে মাহরূম। পরিশেষে তাকে ভয়ঙ্কর জাহান্নামে জ্বলতে হবে। তাই পরকালে চিরস্থায়ী সুখ-শান্তি পেতে হলে আত্মহত্যার মত নোংরা পথ বর্জন করতে হবে।


* পরিচালক, ইয়াসিন আলী সালাফী মাদরাসা, রাজশাহী।

[১]. ছহীহ বুখারী, হা/১৩৬২; ছহীহ মুসলিম, হা/৩১৩; তিরমিযী, হা/২০৪৩।

[২]. ছহীহ বুখারী, হা/১৩৬৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৬১৬; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৫৩৬২; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৩৪২১; মিশকাত, হা/৩৪৫৪।

[৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৭৭৮; ছহীহ মুসলিম, হা/৩১৩; তিরমিযী, হা/২০৪৪; নাসাঈ, হা/১৯৬৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৪৪১; দারেমী, হা/২৩৬২; মুসনাদে আবু আওয়ানাহ, হা/১২৩; ছহীহুল জামে‘, হা/৬৪৫৯; মিশকাত, হা/৩৪৫৩।

[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/৬০৪৭; ছহীহ মুসলিম, হা/৩১৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৪৩৮; ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/১৩৩৭; ছহীহুল জামে‘, হা/৫৪০৪; মিশকাত, হা/৩৪১০।

[৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/৩১৮; ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/১৩২৭।

[৬]. ছহীহ বুখারী, হা/১৩৬৪; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৪৫৬।

[৭]. ছহীহ মুসলিম, হা/৩২১; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৫৯৮৯; মুসনাদে আবু আওয়ানাহ, হা/১৩৫; ছহীহুল জামে‘, হা/২০৮২; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৪৫৬।

[৮]. ছহীহ বুখারী, হা/২৮৯৮; ছহীহ মুসলিম, হা/৩২০; আল-মুসনাদুল জামে‘, হা/৫১৩৬; ছহীহ আত-তারগীব, হা/২৪৫৯।




প্রসঙ্গসমূহ »: বিধি-বিধান পাপ
আল্লাহ তা‘আলাকে কি স্বপ্নযোগে দেখা সম্ভব? - হাসিবুর রহমান বুখারী
আধুনিক যুগে দাওয়াতী কাজের পদ্ধতি (২য় কিস্তি) - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
বিদ‘আত পরিচিতি (২৭তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
রামাযানের শেষ দশকের গুরুত্ব ও করণীয় - মাইনুল ইসলাম মঈন
জঙ্গিবাদ বনাম ইসলাম (২য় কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
কুরআনী প্রবাদ সংকলন : তাৎপর্য ও শিক্ষা (শেষ কিস্তি) - প্রফেসর ড. লোকমান হোসেন
ছালাতে একাগ্রতা অর্জনের ৩৩টি উপায় (শেষ কিস্তি) - আব্দুল হাকীম বিন আব্দুল হাফীজ
ইসলামে পর্দার বিধান (২য় কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ছয়টি মূলনীতির ব্যাখ্যা (৪র্থ কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির
বিদ‘আত পরিচিতি (২৫ তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ছালাতে একাগ্রতা অর্জনের ৩৩ উপায় - আব্দুল হাকীম বিন আব্দুল হাফীজ
সর্বশ্রেষ্ঠ আমল - হাফেয আবূ তাহের বিন মজিবুর রহমান

ফেসবুক পেজ