বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২০ অপরাহ্ন

ছালাতে একাগ্রতা অর্জনের ৩৩ উপায়

-মূল : মুহাম্মাদ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ
-অনুবাদক : আব্দুল হাকীম বিন আব্দুল হাফীজ*


(৮ম কিস্তি)

১৫. ছালাতে সালাফে ছালেহীনদের অবস্থা কেমন ছিল তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা।
সালফে ছালেহীনদের ছালাত নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করার দ্বারা ছালাতে মনোযোগ বৃদ্ধি পায় এবং তাদের অনুসরণের দিকে মুছল্লীকে ধাবিত ও আকৃষ্ট করে। সুতরাং তাদের কাউকে যদি ছালাত আদায় করতে দেখতে এবং সে যখন ছালাতে দ-ায়মান হয়ে মেহরাবে দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করতে গিয়ে তার প্রতিপালকের সাথে কথা বলতে আরম্ভ করত, তখন তার অন্তরে এ অনুভূতি জাগ্রত হত যে, এটি এমন জায়গা যেখানে মানুষ আল্লাহর সামনে দ-ায়মান হয়, তার অন্তর উন্মোচিত হওয়ার উপক্রম হয় এবং বিবেক-বুদ্ধি হ্রাস হয়ে যায়।[১] মুজাহিদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

كَانَ إِذَا قَامَ أَحَدُهُمْ يُصَلِّي يَهَابُ الرَّحْمَنَ أَنْ يَشُدَّ بَصَرَهُ إِلَى شَيْءٍ أَوْ يَلْتَفِتَ أَوْ يُقَلِّبَ الْحَصَى أَوْ يَعْبَثَ بِشَيْءٍ أَوْ يُحَدِّثَ نَفْسَهُ مِنْ شَأْنِ الدُّنْيَا إِلَّا نَاسِيًا مَا دَامَ فِي صَلَاتِهِ

‘সালাফদের কেউ যখন ছালাতে দ-ায়মান হতেন, তখন আল্লাহকে এতটাই ভয় করতেন যে, ছালাতরত অবস্থায় কোন কিছুর দিকে দৃষ্টিপাত করতেন না, অথবা এদিকে ওদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেন না, অথবা পাথর সরাতেন না, অথবা কোন অনর্থক কাজ করতেন না, অথবা দুনিয়াবী কোন চিন্তা-ভাবনা মনের মাঝে আনতেন না। তবে ভুলবশতঃ উপরিউক্ত কোন কিছু সংঘটিত হলে তা ভিন্নকথা এ ক্ষেত্রে ছালাত হয়ে যাবে’।[২]

আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) যখন ছালাতে দ-ায়মান হতেন, তিনি একাগ্রতা ও বিনয়াবনতার কারণে কাঠের ন্যায় হয়ে যেতেন। একদা তিনি সিজদারত অবস্থায় ছিলেন, তখন একটি কামানের গোলা (এক ধরনের অস্ত্র) এসে তার কাপড়ের এক পার্শ্ব ছিঁড়ে নিয়ে যায় কিন্তু তিনি ছালাতরত অবস্থাতেই থাকলেন। তার মাথা সিজদা থেকে উঠালেন না।[৩]

মাসলামাহ ইবনু বাশ্শার (রাহিমাহুল্লাহ) মসজিদে ছালাত আদায় করছিলেন, তখন মসজিদের কিছু অংশ ভেঙ্গে কতিপয় মুছল্লিদের উপর পড়ল। তখন মুছল্লীগণ ছালাত ছেড়ে চলে গেল কিন্তু তিনি ছালাতেই অটল থাকলেন, কোন কিছুই অনুভব করলেন না অর্থাৎ, ছালাত ছাড়লেন না।[৪]

সালাফদের সম্পর্কে আমাদের নিকট আরও সংবাদ পৌঁছেছে যে, তারা যখন ছালাতে দ-ায়মান হতেন, তখন পড়ে থাকা কাপড়ের ন্যায় হয়ে যেতেন অর্থাৎ, কোন ধরনের নড়া-চড়া করতেন না। তাদের কেউ যখন ছালাত শেষ করতেন, তখন মহান আল্লাহ তা‘আলার সামনে দ-ায়মান হওয়ার কারণে তাদের মুখম-লের অবস্থা পরিবর্তন হয়ে যেত।[৫]

অনুরূপভাবে তাদের কেউ কেউ এমন ছিল যে, যখন ছালাতে দ-ায়মান হতেন, তখন তাদের ডানে ও বামে কে ছালাতে দ-ায়মান হয়েছে, তাকে তারা চিনতে পারতেন না। আবার তাদের কেউ যখন ছালাতের জন্য ওযূ করতেন, তখন তার চেহারা হলুদ হয়ে যেত। তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হল, আমরা দেখলাম যে, আপনি যখন ছালাতের জন্য ওযূ করলেন, তখন আপনার অবস্থা পরিবর্তন হয়ে গেল। এর কারণ কী? তখন তিনি বললেন, নিশ্চয় আমি জানি এখন আমি কার সামনে দ-ায়মান হব (তাই আমার চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেছে)।[৬] আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) যখন ছালাতে দ-ায়মান হতেন, তখন তার চেহারায় কম্পন শুরু হয়ে যেত এবং তার রং পবিবর্তিত হয়ে বিবর্ণ হয়ে যেত। তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হল, আপনার কী হয়েছে? উত্তরে তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ, আমানত আদায়ের সময় এসে গেছে, যে আমানতকে আল্লাহ তা‘আলা আসমানসমূহ, যমীন ও পাহাড়কে গ্রহণের জন্য উপস্থাপন করলে তারা তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং গ্রহণ করতে ভয় করে আর আমি তা গ্রহণ করেছি।[৭]

সাঈদ আত্-তানূখী (রাহিমাহুল্লাহ) ছালাতে দ-ায়মান হতেন, তখন তার চোখের পানি গাল, চেহারা গড়িয়ে দাড়ি পর্যন্ত পৌঁছত। কোন কোন তাবেঈ সম্পর্কে আমাদের নিকট আরও সংবাদ পৌঁছেছে যে, নিশ্চয় তিনি যখন ছালাতে দ-ায়মান হতেন, তখন তার চেহারা পরিবর্তন হয়ে যেত, তিনি বলতেন, তোমরা কি জান, আমি কার সামনে দ-ায়মান হব এবং কার সাথে নীরবে কথাবার্তায় লিপ্ত হব। তোমাদের মাঝে কে আছে যার অন্তরে আল্লাহ তা‘আলার জন্য এরূপ ভয়-ভীতি রয়েছে?[৮]

জনগণ ‘আমির ইবনু আব্দুল ক্বায়েসকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি ছালাতে মনে-মনে কথা বলেন? তখন তিনি বললেন, ছালাতের চেয়ে আমার নিকট আর কোন জিনিস অধিক প্রিয় রয়েছে যাতে আমি কথা বলব! তারা বলল, আমরা ছালাতে নিজেরা মনে মনে কথা বলি। তখন তিনি বললেন, তোমরা কি ছালাতে জান্নাতের হুর বা অনুরূপ কোন বিষয়ে কথা বল? তারা বলল, না। বরং আমরা আমাদের পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ নিয়ে কথা বলি। তখন তিনি বললেন, ছালাতে দুনিয়াবী বিষয়ে মনে মনে কথাবার্তা বলা অপেক্ষা আমার শরীরে তীরের আঘাত বেশি পরিমাণে হানা অধিক প্রিয়।[৯] সা‘দ ইবনু মু‘আয (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,

فِيْ ثَلَاثِ خِصَالٍ لَوْ كُنْت فِيْ سَائِرِ أَحْوَالِي أَكُوْنُ فِيْهِنَّ كُنْت أَنَا أَنَا إذَا كُنْتَ فِي الصَّلَاةِ لَا أُحَدِّثُ نَفْسِيْ بِغَيْرِ مَا أَنَا فِيْهِ وَإِذَا سَمِعْت مِنْ رَسُوْلِ اللهِ حَدِيْثًا لَا يَقَعُ فِيْ قَلْبِيْ رَيْبٌ أَنَّهُ الْحَقُّ وَإِذَا كُنْتُ فِيْ جَنَازَةٍ لَمْ أُحَدِّثْ نَفْسِيْ بِغَيْرِ مَا تَقُوْلُ وَيُقَالُ لَهَا

‘আমার মাঝে এমন তিনটি অভ্যাস (চরিত্র) রয়েছে, যদি আমার মাঝে সেগুলো সর্বাবস্থায় বিদ্যমান থাকত আর আমি আমার সকল অবস্থায় এ রকম থাকতে পারতাম, তাহলে আমি আমার মত হয়ে যেতাম। সেগুলো হল: যখন আমি ছালাতরত অবস্থায় থাকি, তখন আমি ছালাত ব্যতীত আর কোন বিষয়ে চিন্তা করি না। যখন আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে কোন হাদীছ শুনি, তখন আমার অন্তরে হাদীছটি সত্য হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকে না। আর আমি যখন কোন জানাযায় উপস্থিত হই, তখন জানাযায় কী বলে এবং জানাযা সম্পর্কে কী বলা হয় তা ব্যতীত আর কোন বিষয়ে কথা বলি না’।[১০] হাতিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

أَقُومُ بِالْأَمْرِ وَأَمْشِيْ بِالْخَشْيَةِ وَأَدْخُلُ بِالنِّيَّةَ وَأُكَبِّرُ بِالْعَظَمَةِ وَأَقْرَأُ بِالتَّرْتِيْلِ وَالتَّفْكِيْرِ وَأَرْكَعُ بِالْخُشُوْعِ وَأَسْجُدُ بِالتَّوَاضُعِ وَأَجْلِسُ لِلتَّشَهُّدِ بِالتَّمَامِ وَأُسَلِّمُ بِالنِّيَّةِ وَأُخْتِمُهَا بِالْإِخْلَاصِ لِلهِ عَزَّ وَجَلَّ وَأَرْجِعُ عَلَى نَفْسِيْ بِالْخَوْفِ أَخَافُ أَنْ لَا يَقْبَلَ مِنِّيْ وَأَحْفَظُهُ بِالْجُهْدِ إِلَى الْمَوْتِ

‘আমি ছালাতে আল্লাহর নির্দেশ পালন করার জন্য দ-ায়মান হই, আল্লাহর ভয় মনে নিয়ে চলাচল করি, নিয়তসহ ছালাতে প্রবেশ করি, বড়ত্ব ও মহত্ত্ব সহকারে তাকবীর বলি, তারতীল ও তাফকীর (চিন্তাভাবনা) সহকারে কুরআন তিলাওয়াত করি, বিনয় ও একাগ্রতার সাথে রুকূ‘ করি, ন¤্রতার সাথে সিজদা করি, পূর্ণতার সাথে তাশাহহুদ পড়ার জন্য বসি, নিয়ত সহকারে সালাম ফিরাই এবং মহান আল্লাহ তা‘আলার জন্য একনিষ্ঠতার সাথে ছালাত সমাপ্ত করি। আর ছালাত থেকে মনে এ ভীতি নিয়ে ফিরে যাই যে, যদি আমার ছালাত আমার থেকে কবুল করা না হয় আর আমি আমার মৃত্যু পর্যন্ত ছালাতকে যথাযথভাবে হিফাযত করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করি’।[১১]

আবূ বকর আছ্-ছাবগী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি দু’জন ইমামকে পেয়েছি কিন্তু তাদের থেকে হাদীছ শ্রবণের সৌভাগ্য আমার হয়নি। তারা হচ্ছেন, আবূ হাতিম আর রাযী (রাহিমাহুল্লাহ) এবং মুহাম্মাদ ইবনু নাছর আল-মারওয়াযী (রাহিমাহুল্লাহ) । তন্মধ্যে ইবনু নাছর; তার চেয়ে সুন্দর ও উত্তমরূপে ছালাত সম্পাদনকারী আমি অন্য কাউকে দেখিনি। তার সম্পর্কে আমার নিকট এ সংবাদ পৌঁছেছে যে, একটি ভীমরুল এসে তার কপালে কামড় দিল ফলে তার মুখম-ল থেকে বিরতিহীনভাবে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকল কিন্তু তিনি একটুও নড়াচড়া করলেন না।[১২]

মুহাম্মাদ ইবনু ইয়া‘কূব আল্-আখরাম ঢ় বলেন, আমি মুহাম্মাদ ইবনু নাছ্র এর চেয়ে উত্তমরূপে ছালাত আদায়কারী অন্য কাউকে দেখিনি। একটি মৌমাছি এসে তার কানের উপর পড়ত তথা বসত কিন্তু তিনি নিজের থেকে তা তাড়িয়ে দিতেন না। আমরা তাকে উত্তমরূপে ছালাত আদায় করতে দেখে এবং ছালাতে তার একাগ্রতা, বিনয়ী ও আল্লাহকে ভয় করা দেখে খুবই আশ্চর্যান্বিত হতাম। তিনি ছালাতে তার থুতনীকে তার বুক বরাবর করতেন যেন তিনি একটি খাড়া কাঠের ন্যায় হয়ে যেতেন।[১৩]

শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) যখন ছালাত শুরু করতেন, তখন আল্লাহ্র ভয়ে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সমূহে কম্পন শুরু হয়ে যেত, এমনকি তিনি ডানে ও বামে ঝুঁকে পড়তেন।[১৪]

সালাফে সালেহীন কিভাবে ছালাত আদায় করেছেন আর আমরা বর্তমান সময়ে কিভাবে ছালাত আদায় করি; এদু’টির মাঝে তুলনা করলে আমরা আমাদের ছালাতের অবস্থা এবং তাদের ছালাতের সাথে আমাদের ছালাতের পার্থক্য বুঝতে পারব। আমাদের কেউ ছালাতে ঘড়ির দিকে তাকায়, কেউ কাপড়ের ভাঁজ ঠিক করে, কেউ তার নাক খোঁচাখোঁচি করে, কেউ ব্যবসা-বাণিজ্যের হিসাব-নিকাশ করে, আবার কেউ টাকাও গণনা করে, আবার তাদের কেউ-কেউ জায়নামাযের কারুকার্য দেখতে ব্যস্ত থাকে, কেউ মসজিদের দেয়াল এবং ছাদ দেখে অথবা তার দু’পাশে কে ছালাতে দ-ায়মান হল তা দেখার জন্য তাকায়।

সুতরাং লক্ষ্যণীয় বিষয় হল যে, যারা এভাবে অমনোযোগী হয়ে ছালাত আদায় করছে তাদের কেউ যদি দুনিয়ার কোন বড় ক্ষমতাশীল ব্যক্তির সামনে দ-ায়মান হত, তাহলে কি সে ব্যক্তি এ ধরনের কাজ করার সাহস পেত?

১৬. ছালাতে একাগ্রতা আনা ও বিনয়ী হওয়ার বৈশিষ্ট্য ও গুণাগুণ সম্পর্কে অবগত হওয়া।
নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর বাণী,

مَا مِنِ امْرِئٍ مُسْلِمٍ تَحْضُرُهُ صَلَاةٌ مَكْتُوْبَةٌ فَيُحْسِنُ وُضُوْءَهَا وَخُشُوْعَهَا وَرُكُوْعَهَا إِلَّا كَانَتْ كَفَّارَةً لِمَا قَبْلَهَا مِنَ الذُّنُوْبِ مَا لَمْ يُؤْتِ كَبِيْرَةً وَذَلِكَ الدَّهْرَ كُلَّهُ

‘কোন মুসলিমের যখন কোন ফরয ছালাতের ওয়াক্ত হয় আর সে উত্তমরূপে ওযূ করে, ছালাতের নিয়ম ও রুকূ‘কে উত্তমরূপে আদায় করে, তাহলে যতক্ষণ সে কোন কাবীরা গুনাহে লিপ্ত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার এ ছালাত তার পেছনের সকল গুনাহের জন্য কাফ্ফারা হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আর এ অবস্থা সর্বযুগেই বিদ্যমান’।[১৫] ছালাতের প্রতিদান তথা ছওয়াব নির্ধারিত হয় মুছল্লীর একাগ্রতা ও বিনয়ী অনুযায়ী। যেমন নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

إِنَّ الْعَبْدَ لَيُصَلِّي الصَّلَاةَ مَا يُكْتَبُ لَهُ مِنْهَا إِلَّا عُشْرُهَا تُسْعُهَا ثُمُنُهَا سُبُعُهَا سُدُسُهَا خُمُسُهَا رُبُعُهَا ثُلُثُهَا نِصْفُهَا

‘নিশ্চয় একজন বান্দা যখন ছালাত আদায় করে, তখন সে তার ছালাতের পূর্ণ ছওয়াব পায় না বরং সে এক দশমাংশ, এক নবমাংশ, এক অষ্টমাংশ, এক সপ্তমাংশ, এক ষষ্ঠাংশ, এক পঞ্চমাংশ, এক চতুর্থাংশ, এক তৃতীয়াংশ, এমনকি অর্ধেক পর্যন্ত ছওয়াব কম পায়’।[১৬] মুছল্লীর জন্য ছালাতের ততটুকু ছওয়াব ধার্য হবে, যতটুকু মুছল্লী ছালাত থেকে বুঝতে পারবে। যেমন ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, لَيْسَ لَكَ مِنْ صَلَاتِكَ إلَّا مَا عَقَلْتَ مِنْهَا ‘তোমার ছালাত থেকে তোমার জন্য ততটুকুই ধার্য হবে যতটুকু বুঝতে পারবে’।[১৭] যখন কেউ পরিপূর্ণ একাগ্রতা ও বিনয়ের সাথে ছালাত আদায় করে নিশ্চয় তখন তার পাপ-পঙ্কিলতা মিটে যায় তথা দূর হয়ে যায়। যেমন নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا قَامَ يُصَلِّي أُتِيَ بِذُنُوْبِهِ فَجُعِلَتْ عَلَى رَأْسِهِ وَعَاتِقَيْهِ فَكُلَّمَا رَكَعَ وَسَجَدَ تَسَاقَطَتْ عَنْهُ

‘নিশ্চয় একজন বান্দা যখন ছালাতে দ-ায়মান হয়, তখন পাপসমূহকে তার সামনে উপস্থিত করা হয় এবং পাপসমূহ তার মাথা ও কাঁধদ্বয়ের উপর রাখা হয়। অতঃপর বান্দা যখন রুকূ‘ ও সিজদা করে তখন তার পাপসমূহ ঝরে যায়’।[১৮]

মানাভী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, উপরিউক্ত উক্তিটি দ্বারা উদ্দেশ্য হল- বান্দা যখন ছালাতের কোন একটি রুকন পরিপূর্ণ করে, তখন তার পাপের একটি রুকন ঝরে পড়ে যায়; এমনকি বান্দা যখন ছালাত শেষ করে, তখন তার সম্পূর্ণ পাপরাশি ঝরে পড়ে যায়। আর এটা এমন ছালাতে যে ছালাতে মুছল্লী ছালাতের শর্তসমূহ, রুকনসমূহ পূর্ণভাবে বিনয় ও একাগ্রতার সাথে সম্পাদন করে। যেমনটি প্রতীয়মান হয় হাদীছে ‘আব্দ ও ক্বিয়াম’ শব্দ উল্লেখ হওয়ার দ্বারা। কেননা এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, একজন মুছল্লী ছালাতে একজন অপদস্ত, অপমানিত ও বাধ্যগত বান্দা হিসাবে যার সামনে দাঁড়িয়েছে তিনি হচ্ছেন সকল বাদশাহর বাদশাহ।[১৯]

বিনয় ও একাগ্রতার সাথে ছালাত আদায়কারী যখন ছালাত আদায় শেষ করেন, তখন তিনি নিজের মনে প্রশান্তি ও স্বস্তির তৃপ্তি লাভ করেন এবং তিনি যেন তার উপর থেকে অনেক বোঝা সরিয়ে ফেলেছেন এরকম অনুভূতি অনুভব করেন। ফলে মুছল্লী তার মনে ও কাজে উৎসাহ, উদ্দমতা ও প্রফুল্লতা ফিরে পান। এমনকি মুছল্লী এ আশা করতে থাকেন যে, যদি সে ছালাত থেকে বের না হত! কেননা ছালাত তার চোখের শীতলতা, আত্মার স্বাচ্ছন্দতা, অন্তরের বাগান এবং দুনিয়ায় সুখ-আরামের স্থান। ছালাতের বাইরে যতক্ষণ সময় সে থাকে, ততক্ষণ যেন সে বন্দী ও সংকীর্ণতার মধ্যে থাকে। যখন সে ছালাতে প্রবেশ করে, তখন সে সুখ-স্বাচ্ছন্দবোধ করে। তাই সে ছালাত থেকে দূরে সরে থাকতে চায় না। এজন্য আল্লাহ্র প্রিয় বান্দাগণ বলেন, আমরা ছালাত আদায় করি এবং আমাদের ছালাতের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভ করি। যেমন তাদের ইমাম, তাদের অনুকরণীয় ব্যক্তি, তাদের নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, হে বিলাল! আমাকে ছালাতের মাধ্যমে শান্তি দাও। কিন্তু তিনি এ কথা বলেননি যে, ছালাত থেকে আমাকে শান্তি দাও।

নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, جُعِلَتْ قُرَّةُ عَيْنِي فِي الصَّلَاةِ ‘ছালাতের মাধ্যমে আমার চোখের প্রশান্তি নির্ধারণ করা হয়েছে’। সুতরাং ছালাতের মাধ্যমে যার চোখের প্রশান্তি ও শীতলতা লাভ হয় তার চোখ কিভাবে ছালাত ব্যতীত প্রশান্তি লাভ করতে সক্ষম হয় এবং ছালাত ব্যতীত ধৈর্যধারণ করতে সক্ষম হয়?[২০]

১৭. ছালাতের বিভিন্ন স্থানে ও সময়ে অধিক পরিমাণে দু‘আ পাঠ করা; বিশেষ করে সিজদারত অবস্থায়।
কোন সন্দেহ নেই যে, আল্লাহ তা‘আলার সাথে কথোপকথন, তাঁর নিকটে বিনয়ী হওয়া, তাঁর নিকটে চাওয়া, প্রার্থনা করা এবং তাঁর নিকটে কাকুতি-মিনতি করার দ্বারা মহান প্রতিপালকের সাথে বান্দার সম্পর্ক খুবই সুদৃঢ় হয়। তাই ছালাতে মুছল্লির বিনয় ও একাগ্রতা বেড়ে যায়। দু‘আ হল ইবাদত আর বান্দা মহান আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করার জন্য আদিষ্ট হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, اُدۡعُوۡا رَبَّکُمۡ تَضَرُّعًا وَّ خُفۡیَۃً ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে মিনতি ও চুপিসারে ডাক’ (সূরা আল-আ‘রাফ : ৫৫)। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, مَنْ لَمْ يَسْأَلِ اللهَ يَغْضَبْ عَلَيْهِ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্র নিকটে চায় না আল্লাহ তা‘আলা তার উপর রাগান্বিত হন’।[২১]

নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকেও ছালাতের নির্দিষ্ট কিছু স্থানে দু‘আ করার বিষয়টি সাব্যস্ত রয়েছে। যেমন সিজদা অবস্থায়, দু’সিজদার মধ্যবর্তী সময়, তাশাহ্হুদের পর। আর এগুলোর মাঝে সর্বোত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান হল সিজদা। যেমন নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, أَقْرَبُ مَا يَكُونُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهِ وَهُوَ سَاجِدٌ فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ ‘একজন বান্দা সবচেয়ে বেশী তার প্রতিপালকের নিকটবর্তী হয় সিজদা অবস্থায়। সুতরাং তোমরা সিজদায় অধিক পরিমাণে দু‘আ পড়’।[২২] তিনি আরও বলেন, أَمَّا السُّجُودُ فَاجْتَهِدُوا فِى الدُّعَاءِ فَقَمِنٌ أَنْ يُسْتَجَابَ لَكُمْ ‘সিজদা অবস্থায় তোমরা অধিক পরিমাণে দু‘আ পড়। কেননা সিজদা অবস্থায় অধিক পরিমাণে দু‘আ কবুল করা হয়’।[২৩]

নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সিজদায় যে সকল দু‘আ পড়তেন তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল[২৪]:

اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِىْ ذَنْبِىْ كُلَّهُ دِقَّهُ وَجِلَّهُ وَأَوَّلَهُ وَآخِرَهُ وَعَلَانِيَتَهُ وَسِرَّهُ

‘হে আল্লাহ! আপনি আমার পাপরাশি, চাই তা ছোট হোক বা বড় হোক, প্রথমের হোক বা শেষের হোক, প্রকাশ্য হোক বা গোপন হোক; তা ক্ষমা করুন’।[২৫] অনুরূপভাবে তিনি পড়তেন, اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِىْ مَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য পাপসমূহ ক্ষমা করুন’।[২৬] নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাশাহ্হুদের পর যে সকল দু‘আ পড়তেন সেগুলো থেকে আমরা যেগুলো জেনেছি তন্মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হল- নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর বানী,

إِذَا تَشَهَّدَ أَحَدُكُمْ فَلْيَسْتَعِذْ بِاللهِ مِنْ أَرْبَعٍ يَقُولُ اللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ

‘তোমাদের কেউ যখন তাশাহ্হুদ শেষ করবে, তখন সে যেন চারটি জিনিস থেকে আল্লাহ্র নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করে। যথা: জাহান্নামের শাস্তি, ক্ববরের শাস্তি, জীবিত ও মৃত অবস্থার ফিতনা এবং দাজ্জালের ফিতনা থেকে’। তিনি আরও বলতেন,

اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا عَمِلْتُ وَمِنْ شَرِّ مَا لَمْ أَعْمَلْ

‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকটে যে সকল কাজ করেছি এবং যে সকল কাজ আমি করিনি তার অনিষ্ঠতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি’। তিনি আরও পড়তেন, اَللّٰهُمَّ حَاسِبْنِىْ حِسَاباً يَسِيْرًا ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার হিসাবকে অতি সহজ করে দিন’। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) -কে শিক্ষা দিয়েছেন যে, তিনি যেন বলেন,

اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ ظَلَمْتُ نَفْسِىْ ظُلْمًا كَثِيْرًا وَلَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلَّا أَنْتَ فَاغْفِرْ لِىْ مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِىْ إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ

‘হে আল্লাহ! আমি আমার উপর অসংখ্য অন্যায় করেছি এবং আপনি ব্যতীত পাপ ক্ষমা করার কেউ নেই। সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। ক্ষমা একমাত্র আপনার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। আমার প্রতি রহম করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু’।[২৭] নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে তাশাহ্হুদে বলতে শুনলেন,

اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَسْأَلُكَ يَا اللهُ الْأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِىْ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ أَنْ تَغْفِرَ لِىْ ذُنُوْبِىْ إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ

‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করছি, হে আল্লাহ! হে একক চিরন্তন, অমুখাপেক্ষী! যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাকেও জন্ম দেয়া হয়নি, তাঁর সমকক্ষও কেউ নেই, আপনি আমার পাপরাশি ক্ষমা করে দিন। আপনি ক্ষমাশীল এবং দয়ালু’। এটা শুনে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, قَدْ غُفِرَ لَهُ قَدْ غُفِرَ لَهُ ‘তাকে ক্ষমা করা হল, তাকে ক্ষমা করা হল’। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অপর এক ব্যক্তিকে তাশাহ্হুদে বলতে শুনলেন,

اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدَ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ وَحْدَكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ الْمَنَّانُ يا بَدِيْعُ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالإِكْرَامِ يَا حَىُّ يَا قَيُّوْمُ إِنِّىْ أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ النَّارِ

‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করছি, কেননা সমস্ত প্রশংসা আপনার, আপনি ব্যতীত আর কোন সত্য মা‘বূদ নেই, আপনি একক সত্তা, আপনার শরীক নেই, আপনি অনুগ্রহকারী! হে আসমানসমূহ ও যমীনের উদ্ভাবন কারী! হে মহাশক্তি ও মহা সম্মানের অধিকারী! হে চিরঞ্জীব! হে চিরস্থায়ী,! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাই’।

এটা শুনে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ছাহাবীদেরকে বললেন, তোমরা কি জান লোকটি কী দু‘আ পড়েছে? ছাহাবীগণ বললেন, আল্লাহ ও তার রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভালো জানেন। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,

وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ لَقَدْ سَألَ اللهَ بِاسْمِهِ الْأَعْظَمُ الَّذِيْ إِذَا دُعِيَ بِهِ أَجَابَ وَإِذَا سُئِلَ بِهِ أَعْطَى

‘সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, লোকটি মহান আল্লাহ্র ইসমে আ‘যম তথা মহান নাম দ্বারা আল্লাহ্র নিকটে চেয়েছে, যার দ্বারা আল্লাহ্র নিকটে ডাকা হলে তিনি সাড়া দেন। আর তা দ্বারা আল্লাহ্র নিকটে চাওয়া হলে তিনি প্রদান করেন’। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাশাহ্হুদ এবং সালামের শেষে বলতেন,

اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِىْ مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ وَمَا أَسْرَفْتُ وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّىْ أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ

‘হে আল্লাহ! আমি যে সকল পাপ ইতিপূর্বে করেছি এবং যা পরে করব, আপনি সব ক্ষমা করে দিন। সেই পাপরাশি ক্ষমা করে দিন, যা আমি গোপনে করেছি, আর যা প্রকাশ্যে করেছি। ক্ষমা করুন আমার সীমালঙ্ঘনজনিত পাপ সমূহ এবং সেই সব পাপ, যে পাপ সম্বন্ধে আপনি আমার অপেক্ষা অধিক জানেন। আপনি যা চান, তা আগে করুন এবং আপনি যা চান তা পিছনে করুন। আপনি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোন সত্য মা‘বূদ নেই’।[২৮]

উপরিউক্ত দু‘আসমূহ মুখস্থ করার ফলে একজন মুছল্লী যে ইমামের পেছনে দু‘আ না পড়ে চুপ করে বসে থাকে তার সমাধান। কেননা তারা তাশাহ্হুদ শেষে কী পড়বে তা জানে না।

১৮. ছালাতের পর পঠিতব্য দু‘আসমূহ পড়া।
ছালাতের পর পঠিতব্য দু‘আসমূহ পড়ার দ্বারা মুছল্লির অন্তরে ছালাতে বিনয় ও একাগ্রতা সৃষ্টিতে প্রভাব বিস্তার করে এবং ছালাতের বরকত ও প্রকৃত উপকার লাভে সাহায্য করে। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, একটি সম্পাদিত ইবাদতের কার্যকারিতা সংরক্ষণ করার অন্যতম উপায় হল- তার সাথে আরেকটি ইবাদত সম্পাদন করা। ছালাতের পর পঠিতব্য যিকিরসমূহের মধ্যে চিন্তা-ভাবনা করার দ্বারা বিষয়টি আরও ভালভাবে বোধগম্য হবে। কেননা মুছল্লী ক্ষমা প্রার্থনার দ্বারা শুরু করবে। অতঃপর সে ছালাত শেষে ছালাতে তার যে সব দুর্বলতা, অমনোযোগিতা ও খুশূ‘-একাগ্রতাহীনতা প্রকাশ পেয়েছে এবং ছালাতের রুকন ও একাগ্রতায় যে ত্রুটি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ স্বরূপ তিনবার ইস্তিগফার পড়া তথা ক্ষমা প্রার্থনা করা। অনুরূপভাবে নফল ছালাত বেশী বেশী পড়া। কেননা এর দ্বারা ফরয ছালাতের ত্রুটি বিমোচিত হয়।

[ইনশাআল্লাহ চলবে]

* অধ্যয়নরত, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব।

তথ্যসূত্র :

[১]. ইবনু রজব, আল-খুশূ‘ ফিছ ছালাত, পৃ. ২২।
[২]. তা‘যীমু ক্বাদরিছ ছালাত, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৮৮।
[৩]. আব্দুল আযীয সালমান, ছালাহুল ইয়াক্বযান লি ত্বারদিশ শায়ত্বান, পৃ. ২০৯।
[৪]. প্রাগুক্ত।
[৫]. প্রাগুক্ত।
[৬]. প্রাগুক্ত।
[৭]. প্রাগুক্ত।
[৮]. প্রাগুক্ত।
[৯]. মাজমূঊল ফাতাওয়া, ২২ তম খণ্ড, পৃ. ৬০৫;।
[১০]. ইবনু তাইমিয়্যাহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া, ২২তম খণ্ড, পৃ. ৬০৫।
[১১]. আল-খুশূ‘ ফিছ ছালাহ, পৃ. ২৭-২৮।
[১২]. তা’যীমু ক্বাদরিছ ছালাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৮।
[১৩]. তা’যীমু ক্বাদরিছ ছালাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৮।
[১৪]. মারঈ আল-কারামী, আল-কাওয়াকিবুদ্ দুররিয়্যাহ ফী মানাক্বিবিল মুজতাহিদ ইবনু তায়মিয়্যাহ, দারুল গারব আল ইসলামী, পৃ. ৮৩।
[১৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/৪৩১।
[১৬]. মুসনাদে আহমাদ, ৪/৩২১; ছহীহুল জামে‘, হা/১৬২৬।
[১৭]. মাজমূঊল ফাতাওয়া, ৭ম খণ্ড, পৃ. ৩১, ১৫তম খ-, পৃ. ২৩৬, ২২ তম খণ্ড, পৃ. ৬, ২৫, ৬০৩, ৬১২ এবং ৩২ তম খণ্ড, পৃ. ২১৭।
[১৮]. বায়হাক্বী সুনানুল কুবরা, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১০।
[১৯]. বায়হাক্বী সুনানুল কুবরা, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১০।
[২০]. আল ওয়াবিলুছ ছায়্যিব, পৃ. ৩৭।
[২১]. তিরমিযী, ‘দাওয়াত’ অধ্যায়, ১/৪২৬; ছহীহ তিরমিযী, হা/২৬৮৬, সনদ হাসান।
[২২]. ছহীহ মুসলিম, হা/২১৫।
[২৩]. ছহীহ মুসলিম, হা/২০৭।
[২৪]. এখানে সিজদাতে কুরআনের আয়াত পড়া নিষেধ। দ্র. -অনুবাদক।
[২৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/২১৬।
[২৬]. মুজতবা আন-নাসাঈ, ২/৫৬৯; ছহীহ নাসাঈ, হা/১০৬৭।
[২৭]. ছহীহ বুখারী, হা/৮৩৪; ছহীহ মুসলিম, হা/৭০৪৪; মিশকাত, হা/৯৪২।
[২৮]. ছহীহ মুসলিম, হা/৭০৭৬; নাছিরুদ্দীন আলবানী, ছিফাতুছ ছালাহ, পৃ. ১৬৩।




ফাযায়েলে কুরআন (২য় কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
পরনিন্দা চর্চা ও তার পরিণাম - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
তওবার গুরুত্ব ও ফযীলত (শেষ কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (২৩তম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
মূর্তিপূজার ইতিহাস - অধ্যাপক মো. আকবার হোসেন
ক্বিয়ামতের ভয়াবহতা - সাজ্জাদ সালাদীন
ইসলামে পর্দার বিধান (শেষ কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
মাযহাবী গোঁড়ামি ও তার কুপ্রভাব (৪র্থ কিস্তি) - অনুবাদ : রিদওয়ান ওবাইদ
বাংলাদেশে সমকামিতার গতি-প্রকৃতি : ভয়াবহতা, শাস্তি ও পরিত্রাণের উপায় অনুসন্ধান - ড. মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ
ইসলামে পর্দার বিধান (২য় কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
বিদ‘আত পরিচিত (২১তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
আল-উরওয়াতুল উছক্বা - অনুবাদ : ইউনুস বিন আহসান

ফেসবুক পেজ