বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৬ অপরাহ্ন

আল-কুরআন সম্পর্কে অমুসলিম মনীষীদের মূল্যায়ন

-রাফিউল ইসলাম*


ذٰلِکَ  الۡکِتٰبُ لَا رَیۡبَ ۚۖۛ فِیۡہِ


‘এটা ঐ গ্রন্থ, যার মধ্যে কোন সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ নেই’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২)। *

‘লেখকের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা, অপরিপক্ক উপস্থাপনা ও অনিচ্ছাকৃত সকল ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী’। মানব রচিত প্রতিটি গ্রন্থের ভূমিকায় লেখকের সন্দেহপূর্ণ এমন বাণী হুবহু অনুরূপ শব্দে উল্লিখিত না হলেও বাক্যের মর্মার্থ ঠিক এমনই। অথচ আল্লাহ তা‘আলা রচিত মহাগ্রন্থ আল-কুরআন এমন একটি কিতাব, যার শুরুতেই চ্যালেঞ্জ দিয়ে সকল সন্দেহ-সংশয়ের ঊর্ধ্বে উঠে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিয়েছে।

আল-কুরআন কাঠামোগতভাবে সংক্ষিপ্ত পরিসরে হলেও এর বক্তব্য ও বিষয়বস্তুর ব্যাপকতা সুগভীর। প্রতিটি শব্দ, বাক্য, বক্তব্য ও বিষয়বস্তু এতই ব্যাপক যে, এর শ্রেষ্ঠত্বের ভূয়সী প্রশংসায় বিশ্বের মনীষীগণ পঞ্চমুখ। সুদীর্ঘ ২৩ বছর যাবৎ সময়ের প্রয়োজনে খণ্ড-খণ্ড আকারে অবতীর্ণ এ গ্রন্থের প্রতিটি শব্দ ও বাক্য এতটাই তত্ত্ব ও তথ্যবহুল যে, অমুসলিম মনীষীরা বারংবার অকপটে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন আল-কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে। আর তাই তারা তাদের প্রয়োজনে বারংবার ফিরে এসেছে আল-কুরআনের দ্বারে। ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় তাদের নিজেদের প্রয়োজনেই তারা ফিরে এসেছে কুরআনের কাছে। কখনো সামাজিক বিষয়াবলী জানতে, কখনো রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান পেতে, কখনো আবার বিজ্ঞানের জ্ঞান আহরণে। তৎকালীন সাহিত্য-সমৃদ্ধ যুগকে যেমন তাক লাগিয়ে দিয়েছে এই কুরআনের প্রতিটি বাক্য তেমনই প্রতিটি যুগের চাহিদা মিটিয়ে বর্তমান বিজ্ঞানের যুগকেও করেছে চমৎকৃত। আর তাই পরিপূর্ণ এই আসমানী গ্রন্থের আলোচনায় মুখরিত হয়েছেন অমুসলিম মনীষীগণ। 

আল-কুরআন আল্লাহর বাণী

প্রথম থেকে উত্থাপিত প্রশ্ন হল, কুরআন কি আসলেই আল্লাহর বাণী, না-কি মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর বানানো গ্রন্থ? এই প্রশ্নের উত্তরে শুধু মুসলিমরা নয় বরং অমুসলিম মনীষীগণও অকপটে স্বীকার করেছেন। যেমন,

১. বিশিষ্ট বিজ্ঞানী Prof. Dr. Lawen Vagilieri একইরকম মন্তব্য করে বলেন, ‘কুরআন মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর মনঃপ্রসূত কথা নয়। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে তার প্রতি নাযিল করা প্রত্যাদেশ’।[১]

২. প্রফেসর এলভি ভিজিলিয়েনের কুরআন সম্পর্কে মন্তব্যও এটাই বুঝায় যে এটা আল্লাহর বাণী, তিনি বলেন, ‘কুরআন কখনো মুহাম্মাদের নিজ মনের রচনা নয়। গ্রন্থটি আল্লাহ কর্তৃক তার নিকট অবতীর্ণ হয়েছে। গ্রন্থটি গঠনগত পদ্ধতিতে নিখুঁত হওয়া ছাড়াও বক্তব্যের অনুকরণ বহির্ভূত বলে প্রমাণিত। কুরআনের উৎস থাকতে পারে কেবল তাঁরই মধ্যে যার জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত আরশ ও মাটিতে যা কিছু আছে সব কিছুর’।[২]

৩. অধ্যাপক ও সামুদ্রিক ভুতত্ত্ববিদ Professor Dorja Rao বলেন, ‘এটি চিন্তা করা কষ্টকর যে ১৪০০ বছর আগে এসব আধুনিক জ্ঞানের অস্তিত্ব কিভাবে সম্ভব। কিছু কিছু জ্ঞান হয়তো সরল বলে কাকতালীয়ভাবে মিলে যাওয়ার যুক্তি থাকতে পারে, কিন্তু আমাকে সেসবের ব্যাখ্যা দিন যা কুরআনে অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এটি অবশ্যই সাধারণ কোন মানবীয় জ্ঞান নয়’।[৩]

৪. ব্রিটিশ ভাষাবিদ এবং ইহুদি বংশোদ্ভূত প্রাচ্যবিদ Dr. Steingass বলেন, ‘কুরআন মানুষের চিন্তার ফসল নয়, বরং সর্বশক্তিমান আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি পবিত্র বাণী’।[৪]

সন্দেহ-সংশয় ও ভুল-ভ্রান্তিমুক্ত গ্রন্থ

আল-কুরআন শুধু মুসলিমদের নিকটে সন্দেহমুক্ত গ্রন্থ নয় বরং অমুসলিমদের নিকটে অনিবার্যভাবে এটি স্বীকার্য যে পৃথিবীর ইতিহাসে কুরআনই একমাত্র নির্ভুল গ্রন্থ।

Dr Gary Miller বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় বক্তৃতা দেয়ার পর একজন লোক আমার কাছে এসেছিলেন। আমি যা বলেছিলাম (কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে) তাতে তিনি খুব রেগে গিয়েছিলেন এবং দাবি করেছিলেন যে, ‘আমি আজ রাতে বাড়িতে যাচ্ছি এবং কুরআনের একটি ভুল খুঁজে পাব’। আমি বলেছিলাম, ‘অবশ্যই এবং অভিনন্দন আপনাকে। এটিই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ যা আপনি বলেছেন’। অবশ্যই, কুরআনের সত্যতা নিয়ে যারা সন্দেহ পোষণ করে তাদের জন্য এই পদ্ধতিটি মুসলিমদের গ্রহণ করা উচিত। কারণ কুরআন নিজেই একই রকম চ্যালেঞ্জ দেয় এবং অনিবার্যভাবে, এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সত্যতা প্রমাণিত হওয়ার পরে লোকেরা এটিকে (কুরআন) বিশ্বাস করবে। কারণ তারা এটির (কুরআনের) বিশুদ্ধতা ও নির্ভুলতাকে অস্বীকার করতে পারে না’।[৫]

একমাত্র অবিকৃত গ্রন্থ

পৃথিবীর একমাত্র অপরিবর্তিত ও অবিকৃত গ্রন্থ হল আল-কুরআন। কুরআন মাজীদ নাযিলের দেড় হাযার বছর পরেও এর একটি অক্ষর, হরফ কিংবা সাকিনেরও কোন পরিবর্তন হয়নি। আজ পর্যন্ত কেউ কুরআনকে পরিবর্তন করে দেয়ার ষড়যন্ত্রে সফল হতে পারেনি এবং ভবিষ্যতেও পারবে না।

১. বিখ্যাত খ্রিষ্টান ঐতিহাসিক বাডল বলেন, ‘কেবল কুরআনই এমন একটি গ্রন্থ, যাতে এক হাজার ৩০০ বছরের ব্যবধানেও কোন পরিবর্তন ঘটেনি। ইহুদি ও খ্রিষ্টান ধর্মের এমন কোন নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ নেই, যা আদৌ কোন দিক থেকে কুরআনের সমকক্ষ হতে পারে’।[৬]

২. কম্পিউটার ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের এই যুগকে সবচেয়ে বেশি চমৎকৃত করেছে এই আবিষ্কার। একদল গবেষকের বারংবার গণনায় এই যন্ত্রও স্বীকার করেছে যে, কুরআন মাজীদ নির্ভুল ও সন্দেহতীত একটি গ্রন্থ। ১৯৭৫ সালে ডা. রাশাদ খলীফার এই কম্পিউটার গবেষণায় ফলাফল তার ‘দিস ওয়ান্ডারফুল কুরআন’ গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে। বিজ্ঞানী ডা. রাশাদ খলীফা দেশী-বিদেশী একদল সহকর্মীর সহায়তায় এই কম্পিউটারের মাধ্যমে আল-কুরআন কতটা নির্ভুল, তা গবেষণা করে দেখেছেন। পরবর্তীতে আরো অনেক বিজ্ঞানী এ বিষয়ে আরো অনেক কাজ করেছেন। আল-কুরআনের পুরোটাই নির্ধারিত পদ্ধতির মাধ্যমে কম্পিউটারকে ‘ফিড’ করানো হয়। প্রতিটি গবেষণায় কম্পিউটারের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ‘পবিত্র কুরআন কতটা নির্ভুল’? বিজ্ঞানী ও গবেষকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরেও কম্পিউটার বহুবারই স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করেছে যে, ‘আল-কুরআনে সূরার সংখ্যা, আয়াতের সংখ্যা, এমনকি লফয বা শব্দের সংখ্যাও সেই গোড়া থেকেই যা ছিল, আজো তাই রয়েছে। এমনকি আল-কুরআনের একটি বর্ণ বা হরফও এদিক ওদিক হয় নেই’।[৭]

সর্বোৎকৃষ্ট সাহিত্য গ্রন্থ

ইসলামপূর্ব যুগ থেকে শুরু করে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আমলেও আরবরা ছিল একটি কাব্যরসিক বা সাহিত্যিক জাতি। তাদের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে কবি, কবিতা ও সাহিত্যের প্রভাব ছিল অপরিসীম। তাদের নিকট সাহিত্যিকদের স্থান ছিল সবার ওপরে। কবিতা ছিল জাহেলী আরববাসীর ভূষণ। সে যুগে সাহিত্যের চরম উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে। আর তাই তাদের সাহিত্যকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করা হয়েছে।

১. ব্রিটিশ প্রাচ্যবিদ ও অধ্যাপক De Lacy O'Leary কুরআনের সাহিত্যমানের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘কুরআন মানুষের অন্তর জয়ে পরম আকর্ষণীয় ও মনোরম মোহনীয় শক্তির অধিকারী’।[৮]

২. আল-কুরআনের ভাষা ও সাহিত্যশৈলী সম্পর্কে John Naish বলেন, ‘মূল কুরআনী ভাষার চিত্তাকর্ষক সৌন্দর্য ও স্বকীয় মাধুর্যতা আছে, যা এটির সংক্ষিপ্ত ও সমুচ্চ শব্দবুনন ও রচনাশৈলীতে ফুটে ওঠে। কুরআনে প্রায়ই ছন্দবদ্ধ বিশদ অর্থপূর্ণ আয়াতগুলো এত গূঢ় অর্থবোধক ও দীপ্তিমান যে, এটির শাব্দিক অনুবাদ করা খুব কঠিন একটি কাজ’।[৯]

৩. ফ্রান্সের ভাষাবিদ Edward Montet মনে করেন কুরআনের ভাষা ও সাহিত্যশৈলী অনিন্দ্য সুন্দর ও অতুলনীয়। মানবীয় কোন সাহিত্য কর্মের সাথে এর তুলনা হয় না। তিনি বলেন, ‘এই ধর্মীয় বইটির কুরআনী ভাষার সাথে পরিচিত সকলেই এর স্বকীয় সৌন্দর্যতার ব্যাপারে একমত পোষণ করেন। স্বভাষায় এটির আড়ম্বর বিন্যাস এতই উচ্চমানের যে কোন ইউরোপীয় ভাষার অনুবাদই এটির রাজকীয়তা বোঝাতে যথেষ্ট নয়’।[১০]

৪. বিশিষ্ট লেখক এ Margoliouth কুরআনের সাহিত্যিক মানের বিবরণ দিয়ে বলেন, ‘কুরআন বিশ্বের মহান ধর্মীয় গ্রন্থের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। যদিও সৃষ্টি জগতের সাহিত্য কর্মের মধ্যে এটি কনিষ্ঠদের অন্তর্ভুক্ত। তবুও এটি মানুষের উপর যে প্রভাব বিস্তার করেছে তা খুব কম সাহিত্য পেরেছে। এটি মানুষের চিন্তার একটি নতুন ধাপ এবং নতুন একটি চরিত্রের অনুধাবন ঘটিয়েছে’।[১১]

বিজ্ঞানময় কুরআন

ফরাসি চিকিৎসাবিদ Dr. Maurice Bucaille তার রচিত The Bible The Quran and Science বইটির মুখপত্রে লিখেন, ‘অন্যান্য ধর্মগ্রন্থগুলোকে বাদ দিয়ে কুরআন বিজ্ঞানের যে ক্ষেত্রগুলো প্রতিষ্ঠা করেছিল তা আমাকে প্রথম দিকে গভীর বিস্ময়ে পূর্ণ করেছিল’।[১২] কুরআনে বর্ণিত বিজ্ঞান সম্পর্কিত আয়াতগুলো সম্পর্কে তিনি একই বইয়ে আরও উল্লেখ করেছেন,  ‘কুরআনে এমন একটি বক্তব্য নেই যা আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে আপত্তিজনক বা সাংঘর্ষিক’।[১৩] কুরআনের বৈচিত্র ও ব্যাপকতা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘কুরআনকে বিজ্ঞানীদের জন্য বিজ্ঞানের একটি একাডেমী, অভিধানবেত্তাদের জন্য একটি অভিধান, ব্যাকরণবিদদের জন্য একটি ব্যাকরণের বই, কবিদের জন্য একটি ছন্দময় বই এবং আইনের এনসাইক্লোপিডিয়া হিসাবে গণ্য করা হবে’।[১৪]

চিরন্তন গ্রন্থ

অতীত যুগের সকল আসমানী গ্রন্থই ছিল নির্দিষ্ট কোন জাতি বা ভৌগোলিক সীমারেখা বেষ্টিত জনগোষ্ঠীর জন্য এবং নির্দিষ্ট সময়ের হেদায়াতের উৎস। কিন্তু কুরআন মাজীদ কোন নির্দিষ্ট জাতি, গোষ্ঠী, সম্প্রদায়, দেশ বা কালকে কেন্দ্র করে নাযিল হয়নি। বরং এটা সর্বকালের সমগ্র বিশ্বমানবতার জন্য হেদায়াতের বাণী নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছে। এটা চিরন্তন ও বিশ্বজনীন গ্রন্থ।

১. শিখ ধর্মের প্রবক্তা এবং প্রথম গুরু Gurū Nānak বলেন, ‘বেদ ও পুরাণের যুগ চলে গেছে, এখন দুনিয়াকে পরিচালিত করার জন্য কুরআনই একমাত্র গ্রন্থ’।[১৫] তার অন্য বর্ণনায় উল্লেখ আছে, ‘তৌরাত, জবুর, ইঞ্জিল তেরে পড়হ শুন দেখে বেদ। রহি কুরআন কেতাব কলি যুগমে পরওয়ার’। অর্থাৎ  ‘তৌরাত, যবুর, ইঞ্জীল ও বেদ পড়ে দেখেছি, কিন্তু এই কুরআনই একমাত্র গ্রন্থ, যা কলি যুগে মানবের মুক্তি দিতে একমাত্র সমর্থ’।[১৬]

২. ইসলামের সুমহান বাণী চারিদিকে ছড়িয়ে গিয়ে মুসলমানদের বা ইসলামের বিজয় ত্বরান্বিত হয়। যার মূল কারণ উল্লেখ করে ঐতিহাসিক Philip K. Hitti বলেন, ‘ইসলামের জয় অনেকাংশে একটি ভাষার জয়, আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে হয় যে, একটি কিতাবেরই জয়’।[১৭]

মানবতার সমাধানে আল-করআন

১. নির্দিষ্ট মূলনীতির উপর রচিত মানুষের সুখ-শান্তির সমাধান সম্বলিত একমাত্র গ্রন্থ হিসাবে কুরআনকে মূল্যায়ন করে ফরাসী রাষ্ট্রনায়ক Napoleon Bonaparte বলেন, ‘আমি আশা করি এমন একটি সময় বেশি দূরে নয় যখন আমি সকল দেশের বুদ্ধিজীবী এবং বিদ্বান ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে ঐকমত্য গড়ে তুলতে পারব এমন একটি একক শাসক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য, যা কেবল আল-কুরআনের মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। কারণ হল, কুরআনই একমাত্র গ্রন্থ যা সত্য এবং মানুষকে সুখ এবং শান্তির পথে পরিচালিত করে’।[১৮]

২. কুরআন মাজীদ নিছক কোন গল্প বা রম্য কাহিনী সম্বলিত কোন গ্রন্থ নয় বরং মানবতার সমাধান। বিখ্যাত জার্মান কবি, নাট্যকার, দার্শনিক ও রাজনীতিবিদ ঔohann Wolfgang Goethe বলেন, ‘তিনি একজন নবী, কবি নন এবং সেই কারণেই তাঁর কুরআনকে দেখা হয় ‘স্বর্গীয় আইন’ হিসাবে। মানুষের তৈরি কোন শিক্ষা বা বিনোদনমূলক গ্রন্থ হিসাবে নয়’।[১৯]

৩. ইন্ডিয়ার প্রখ্যাত কবি, লেখক, সমাজকর্মী ও রাজনীতিবিদ সরোজিনী নাইডু বলেন, ‘ন্যায়পরায়ণতা ইসলাম ধর্মের এক অপূর্ব আদর্শ। আমি কুরআন অধ্যায়ন করে এতে জীবনের প্রগতিশীল ব্যবস্থাই লক্ষ্য করেছি সর্বাধিক। সমগ্র বিশ্ব উপযোগী বাস্তব জীবনের ন্যায়নীতিই এতে লক্ষ্য করেছি বেশি’।[২০]

৪. ইসলামের উদ্দেশ্য ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি। আর লক্ষ্য হল, মানুষের সমাজে শান্তি, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। আর এই ইসলাম পরিচালিত হয় কুরআনের নীতিতে। David Urquhart বলেন, ‘বিশ্ব মানবমণ্ডলী নিজেরা পুরোপুরি অনুসন্ধান চালিয়ে দেখুক। পড়ুক তারা পবিত্র কুরআন। বুঝতে চেষ্টা করুক, তখন তারা সেই শান্তি পেতে পারে, সবাই যার অনুসন্ধান করছেন’।[২১]

৫. পাশ্চাত্য পণ্ডিত স্যার ডায়মন্ডবার্স বলেন, ‘কুরআনের বিধানাবলী শাহানশাহ থেকে শুরু করে কুটিরে বসবাসকারী পর্যন্ত সবার জন্যই সমান উপযোগী ও কল্যাণকর। বিশ্বের অন্য কোন ব্যবস্থায় এর বিকল্প খুঁজে পাওয়া একেবারেই অসম্ভব’।[২২]

৬. Edward Gibbon বলেন, ‘জীবনের প্রতিটি শাখায় কার্যকরী বিধান কুরআনে মওজুদ রয়েছে’।[২৩]

৭. Sarojini Naidu বলেন, ‘ন্যায়বিচারের বোধ ইসলামের সবচেয়ে বিস্ময়কর আদর্শগুলোর মধ্যে একটি। কারণ আমি কুরআনে পড়ার সাথে সাথে জীবনের সেই গতিশীল নীতিগুলো খুঁজে পাই, যা রহস্যময় নয় বরং সমগ্র বিশ্বের জন্য উপযুক্ত জীবনের দৈনন্দিন আচরণের জন্য ব্যবহারিক নীতিশাস্ত্র’।[২৪]

উপসংহার

অমুসলিম মনীষীদের এমন বাণী ও মন্তব্যে বুঝা যায় যে, কুরআন সাধারণ কোন গ্রন্থ নয়। এর প্রতিটি আয়াত মানুষের জীবনে অবশ্য পালনীয় বিষয়। তাই আমাদের উচিত কুরআনকে বুঝে তদনুযায়ী আমল করা। পরকালীন জীবনের পাশাপাশি ইহকালীন জীবনে সফলতা পেতে হলে কুরআনের শ্বাশ্বত বাণীকে আঁকড়ে ধরতেই হবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে বলেন, وَ اتَّبَعُوا النُّوۡرَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ مَعَهٗۤ ۙ اُولٰٓئِکَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ ‘এবং তার সাথে যে নূর নাযিল করা হয়েছে তা অনুসরণ করে তারাই সফলকাম’ (সূরা আল-আ‘রাফ : ১৫৭)।

* অনার্স ৩য় বর্ষ, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

তথ্যসূত্র :
[১]. Prof. Dr. Lawen vagilieri,  http:// nastiïosomacharsomuho.blogspot.com/2019/07/blog-post_270.html.
[২]. shorturl.at/hyCT0.
[৩]. It is Truth. Chapter 14-Deep Seas and Oceans- Professor Dorja Rao.
[৪]. Dr. Steingass, quoted in T.P. Hughes' Dictionary of Islam, pp. 526-527.
[৫]. Dr Gary Miller, The Amaying Quran, page no. 21.
[৬]. https://somewhereinblog.net/mobile/blog/badrulblog/6106.
[৭]. Rashad Khalifa: Quran: Visual Presentation Of The Miracle, 1982.
[৮]. De Lacy O'Leary- Arabic Thought and Its Place in History.
[৯]. John Naish M.A. (oxon) D.D. The wisdom of the Quran, Oxford 1937.
[১০]. Edward Montet, Traduction francaise du Coran, Pari 1929, Introduction, P-53.
[১১]. Introduction to J.M. Rodwell's The Koran, Nwe York: Everyman's Library, 1977, p. VII.
[১২]. The Bible The Quran and Science.
[১৩]. The Bible The Quran and Science.
[১৪]. The Quran and Modern Science, 1981. p. 18.
[১৫]. গুরু নানাক, শ্রী গুরু গ্রন্থসাহেব, পৃ. ১৮০।
[১৬]. গুরু নানাক, শ্রী গুরু গ্রন্থসাহেব, পৃ. ১৭৪।
[১৭]. History of The Arabs-By Philip K. Hitti page-91.
[১৮]. Nepolean Benaparte-Quoted in christion Cherfils BONAPARTEEL ISLAM PARIS-1914.
[১৯]. Johann Wolfgang Goethe, Noten und Abhandlungen yum Weststlichen Dvan,WAI,7,32; translator unknown.
[২০]. Sarojini Naidu, Ideals of Islam, vide Speeches & Writings (1918), p. 169.
[২১]. The spirit of the East, p. 19.
[২২]. https://www.bjilibrary.com/1014/3.
[২৩]. Edward Gibbon- The History of the Decline and Fall of the Roman Empire (1776-1789).
[২৪]. Lectures on "The Ideals of Islam;" see Speeches And Writings Of Sarojini Naidu, Madras, 1918, pp. 167-9.




প্রসঙ্গসমূহ »: কুরআনুল কারীম
বিদ‘আত পরিচিতি - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (৪র্থ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আযীযুর রহমান
সূদ-ঘুষ ও অবৈধ ব্যবসা (৪র্থ কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
বিদায় হজ্জের ভাষণ : তাৎপর্য ও মূল্যায়ন (শেষ কিস্তি) - অধ্যাপক মো. আকবার হোসেন
দ্বীনি শিক্ষার গুরুত্ব - আব্দুল গাফফার মাদানী
বিদ‘আত পরিচিতি (৩১তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
বিদ‘আত পরিচিতি (১১তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
মসজিদ : ইসলামী সমাজের প্রাণকেন্দ্র - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
মসজিদ: ইসলামী সমাজের প্রাণকেন্দ্র (৪র্থ কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ইসলামী উত্তরাধিকার আইন: উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ ধারা - ড. মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (৩য় কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম

ফেসবুক পেজ