সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ১০:১৩ পূর্বাহ্ন

দলাদলির কুপ্রভাব : উত্তরণের উপায়

-শায়খ মতীউর রহমান মাদানী*


(শেষ কিস্তি)

পঞ্চম বিষয় : ফিতনার স্থান হতে পালানোর প্রচেষ্টা করা।

সকল মুসলিমের উচিত ফিতনার স্থান হতে দূরে থাকা। কেননা সেখানে অবস্থান করলে সেও ফিতনায় আক্রান্ত হবে। হয়তো বা সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে নতুবা সে কারো ক্ষতি করবে। বাঁচার ইচ্ছা থাকলেও বাঁচা সম্ভব হবে না। হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ سَتَكُوْنُ فِتَنٌ الْقَاعِدُ فِيْهَا خَيْرٌ مِنَ الْقَائِمِ وَالْقَائِمُ فِيْهَا خَيْرٌ مِنَ الْمَاشِىْ وَالْمَاشِى فِيْهَا خَيْرٌ مِنَ السَّاعِى وَمَنْ يُشْرِفْ لَهَا تَسْتَشْرِفْهُ وَمَنْ وَجَدَ مَلْجَأً أَوْ مَعَاذًا فَلْيَعُذْ بِهِ

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, অচিরেই এমন ফিতনা দেখা দিবে, যখন বসা ব্যক্তি দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি অপেক্ষা উত্তম হবে। আর দাঁড়ান ব্যক্তি চলমান ব্যক্তি অপেক্ষা উত্তম হবে। চলমান ব্যক্তি দ্রুতগামী অপেক্ষা উত্তম হবে। এমনকি যে ব্যক্তি উক্ত ফিতনার দিকে চোখ তুলে তাকাবে ফিতনা তাকে নিজের দিকে টেনে নিবে। সুতরাং যে ব্যক্তি তা হতে আশ্রয়স্থল পাবে সে যেন সেখানে আশ্রয় নেয়।[১] অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে,

عَنْ أَبِىْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِىِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ  يُوْشِكُ أَنْ يَكُوْنَ خَيْرَ مَالِ الْمُسْلِمِ غَنَمٌ يَتْبَعُ بِهَا شَعَفَ الْجِبَالِ وَمَوَاقِعَ الْقَطْرِ يَفِرُّ بِدِيْنِهِ مِنَ الْفِتَنِ

আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, এমন একটি যুগ অতি নিকটবর্তী, যখন মুসলিমদের সর্বোত্তম সম্পদ হবে বকরী, যা নিয়ে সে পর্বতশৃঙ্গে ও বৃষ্টিময় স্থানসমূহে আশ্রয় গ্রহণ করবে। (এমনকি) ফিতনা হতে বাঁচার জন্য সে স্বীয় দ্বীন নিয়ে পলায়ন করবে।[২]

সুধী পাঠক! নিম্নের আয়াত দু’টি মনোযোগ সহকারে পাঠ করুন! মহান আল্লাহ বলেন,

وَ لَوۡ شَآءَ رَبُّکَ لَجَعَلَ النَّاسَ اُمَّۃً وَّاحِدَۃً  وَّ لَا  یَزَالُوۡنَ  مُخۡتَلِفِیۡنَ - اِلَّا مَنۡ رَّحِمَ رَبُّکَ ؕ وَ لِذٰلِکَ خَلَقَہُمۡ ؕ وَ تَمَّتۡ کَلِمَۃُ رَبِّکَ لَاَمۡلَـَٔنَّ  جَہَنَّمَ  مِنَ الۡجِنَّۃِ  وَ النَّاسِ  اَجۡمَعِیۡنَ

‘এবং যদি আপনার প্রতিপালক ইচ্ছা করতেন, তবে তিনি সকল মানুষকে একই মতাবলম্বী করে দিতেন, আর তারা সর্বদা মতভেদ করতে থাকবে। কিন্তু তারা ব্যতীত যার প্রতি আপনার প্রতিপালক অনুগ্রহ করবেন, আর এজন্যই তিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং আপনার প্রতিপালকের এই বাণীও পূর্ণ হবে, আমি জাহান্নামকে পূর্ণ করব জিন ও মানুষ দ্বারা’ (সূরা হূদ : ১১৮-১১৯)।

উক্ত আয়াত থেকে বুঝা গেল যে, ইখতিলাফ বেশিরভাগ মানুষ করবে। দ্বন্দ্ব, লড়াই, ঝামেলা, ভেজাল অধিকাংশ লোক পসন্দ করবে। তবে ব্যতিক্রম হল- যাদের উপর আল্লাহর বিশেষ রহমত হবে তারা আপোসে মতবিরোধ করবে না, ফাটল ধরাবে না, ভাঙ্গন সৃষ্টি করবে না, বিভক্ত হবে না। সর্বদা বিভক্তিকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবে।

ষষ্ঠ বিষয় : মুসলিমকে হত্যা করার পরিণাম।

মুসলিমকে হত্যা করার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। মহান আল্লাহ বলেন,

وَ مَنۡ یَّقۡتُلۡ مُؤۡمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُہٗ جَہَنَّمُ خٰلِدًا فِیۡہَا وَ غَضِبَ اللّٰہُ عَلَیۡہِ وَ لَعَنَہٗ وَ اَعَدَّ  لَہٗ عَذَابًا عَظِیۡمًا

‘আর যে কেউ স্বেচ্ছায় কোন মুমিনকে হত্যা করবে তার শাস্তি হবে জাহান্নাম, সেখানে সে সদা অবস্থান করবে এবং আল্লাহ তার প্রতি ক্রদ্ধ হোন ও তাকে অভিশাপ করেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন’ (সূরা আন-নিসা : ৯৩)।

এ আয়াতের সাথে অন্যান্য আয়াত যদি সমন্বয় করি, তাহলে দেখা যাবে যে, যদি কারো ইসলাম ভঙ্গ না হয়, তাহলে চিরকাল তাকে জাহান্নামে থাকতে হবে না। শুধু বড় শিরকের অপরাধে কেউ চিরকাল জাহান্নামে থাকবে। এছাড়া মুসলিমকে হালাল মনে করে তাকে হত্যা করা ঈমান ভঙ্গের কারণ। যেমন জঙ্গীরা করে থাকে। তারা মুসলিম দেশে বোমাবাজি করছে, মুসলিমদের ব্যাপারে ফৎওয়াবাজী করছে যে, এরা কাফের। অতএব যখন এই চরমপন্থী জঙ্গীরা মুসলিমের রক্ত হালাল মনে করে হত্যা করল, তখন সে ঈমান ভঙ্গ করল। আর এ জন্য তাকে চিরকাল জাহান্নামে থাকতে হবে। আর যদি হালাল মনে না করে রাগের বশবর্তী হয়ে কাউকে হত্যা করে, তাহলে সে চিরকাল থাকবে না বরং দীর্ঘকাল থাকবে। এর অন্য একটি অর্থ হল- যে মুসলিমকে খুন করবে, তার প্রকৃত শাস্তি হল চিরকাল জাহান্নামে থাকা। কিন্তু ঈমান, তাওহীদ থাকার কারণে, ঈমান ভঙ্গ না করার কারণে এবং বড় কাফির হয়নি এজন্য আল্লাহ তা‘আলা তার উপর দয়া করে তার এই শাস্তিকে চিরকাল থেকে দীর্ঘকালে রূপান্তরিত করবেন। যদিও তার অপরাধের কারণে সে চিরকাল জাহান্নামে থাকার যোগ্য। হাদীছে এসেছে,

عَنِ الْحَسَنِ قَالَ خَرَجْتُ بِسِلَاحِىْ لَيَالِىَ الْفِتْنَةِ فَاسْتَقْبَلَنِىْ أَبُوْ بَكْرَةَ فَقَالَ أَيْنَ تُرِيْدُ قُلْتُ أُرِيْدُ نُصْرَةَ ابْنِ عَمِّ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِذَا تَوَاجَهَ الْمُسْلِمَانِ بِسَيْفَيْهِمَا فَكِلَاهُمَا مِنْ أَهْلِ النَّارِ قِيْلَ فَهَذَا الْقَاتِلُ فَمَا بَالُ الْمَقْتُوْلِ قَالَ إِنَّهُ أَرَادَ قَتْلَ صَاحِبِهِ

হাসান (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ফিতনার রাতে (ছিফফীনের যুদ্ধে) আমি অস্ত্র নিয়ে বের হলাম। তখন আবূ বাকরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আমার সামনে পড়লেন। তিনি বললেন, কোথায় যাচ্ছ? আমি বললাম, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর চাচাতো ভাইকে সাহায্য করতে যাচ্ছি। তখন তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যদি দু’জন মুসলিম তলোয়ার নিয়ে পরস্পর সংঘর্ষের মুখোমুখি হয়, তাহলে উভয়েই জাহান্নামী বলে গণ্য হবে। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল- হত্যাকারী তো জাহান্নামী। কিন্তু নিহত ব্যক্তির অপরাধ কী? তিনি বললেন, সেও তার বিপক্ষকে হত্যা করার সংকল্প করেছিল।[৩] অন্য হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ لَزَوَالُ الدُّنْيَا أَهْوَنُ عَلَى اللهِ مِنْ قَتْلِ رَجُلٍ مُسْلِمٍ

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, কোন মুসলিমকে হত্যা করার চেয়ে এ পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়া আল্লাহর নিকট অতীব নগণ্য।[৪] অমুসলিমদেরকে খুন করলেও জাহান্নামে যেতে হবে। হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ قَتَلَ مُعَاهِدًا لَمْ يَرَحْ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ وَإِنَّ رِيْحَهَا تُوْجَدُ مِنْ مَسِيْرَةِ أَرْبَعِيْنَ خَرِيْفًا

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দেয়া ব্যক্তিকে হত্যা করবে, সে জান্নাতের সুগন্ধি পর্যন্ত পাবে না। যদিও তার সুগন্ধি চল্লিশ বছরের দূরত্ব থেকে পাওয়া যায়।[৫]

সপ্তম বিষয় : যেমন কর্ম তেমন ফল।

আরবীতে একটি প্রবাদ আছে, الحزاء من جنس العمل ‘যেমন কাজ করবেন, তেমনই ফল পাবেন’। আমের গাছ লাগিয়ে লিচুর আশা করা যাবে না। সুতরাং সকল মুসলিম ভাইকে বলব, যারা আক্বীদা ও মানহাজের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তির শিকার, ইসলামের তাবলীগ ও আমলের ক্ষেত্রে তথা ইবাদত-বন্দেগীর ক্ষেত্রে বিদ‘আতভিত্তিক আমলে লিপ্ত আছেন, আপনারা একটু অধ্যয়ন করুন। অতঃপর সংশোধন হয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসুন এবং বিদ‘আতী আমল থেকে তওবা করে সুন্নাহর দিকে অগ্রগামী হোন। মহান আল্লাহ বলেন,

وَلَا تَحْسَبَنَّ اللَّهَ غَافِلًا عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُوْنَ إِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمْ لِيَوْمٍ تَشْخَصُ فِيْهِ الْأَبْصَارُ

‘তুমি কখনো মনে কর না যে, যালিমরা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ গাফিল, তবে তিনি সেদিন পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দেন যেদিন তাদের চক্ষু হবে স্থির’ (সূরা ইবরাহীম : ৪২)।  হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدٍ عَنْ أَبِيْهِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ أَقْبَلَ ذَاتَ يَوْمٍ مِنَ الْعَالِيَةِ حَتَّى إِذَا مَرَّ بِمَسْجِدِ بَنِىْ مُعَاوِيَةَ دَخَلَ فَرَكَعَ فِيْهِ رَكْعَتَيْنِ وَصَلَّيْنَا مَعَهُ وَدَعَا رَبَّهُ طَوِيْلًا ثُمَّ انْصَرَفَ إِلَيْنَا فَقَالَ ﷺ سَأَلْتُ رَبِّىْ ثَلَاثًا فَأَعْطَانِىْ ثِنْتَيْنِ وَمَنَعَنِىْ وَاحِدَةً سَأَلْتُ رَبِّىْ أَنْ لَا يُهْلِكَ أُمَّتِىْ بِالسَّنَةِ فَأَعْطَانِيْهَا وَسَأَلْتُهُ أَنْ لَا يُهْلِكَ أُمَّتِىْ بِالْغَرَقِ فَأَعْطَانِيْهَا وَسَأَلْتُهُ أَنْ لَا يَجْعَلَ بَأْسَهُمْ بَيْنَهُمْ فَمَنَعَنِيْهَا

‘আমির ইবনু সা‘দ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাঁর পিতা ইবনু আবী ওয়াক্কাছ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একদিন আওয়ালী থেকে আসছিলেন। এমনকি যখন তিনি মু‘আবিয়া গোত্রের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন, তখন তিনি মসজিদে প্রবেশ করে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করলেন। আর আমরাও তার সাথে ছালাত আদায় করলাম। তিনি সেখানে তাঁর রবের নিকট লম্বা দু‘আ করলেন। অতঃপর তিনি আমাদের দিকে মুখ ফিরালেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, আমি আমার রবের নিকট তিনটি বিষয়ে চেয়েছি, তন্মধ্যে দু’টি আমাকে দিয়েছেন আর একটি দেননি। আমি আমার রবের কাছে চাইলাম যে, আমার উম্মতকে যেন তিনি দূর্ভিক্ষ দিয়ে ধ্বংস না করেন, আল্লাহ আমাকে এটি দিয়ে দিলেন। আর আমি আমার রবের কাছে (দ্বিতীয়) দু‘আ করলাম যে, আমার উম্মতকে তিনি যেন পানিতে ঢুবিয়ে ধ্বংস না করেন, আল্লাহ আমাকে এটিও দিয়ে দিলেন। আর (তৃতীয়) দু‘আ করলাম যে, হে আল্লাহ! মুসলিমরা যেন আপোসে লড়াই না করে। এটাতে আল্লাহ বাধা দিলেন।[৬] অন্য বর্ণনায় এসেছে,

عَنْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِىَّ ﷺ يَقُوْلُ إِنَّ الشَّيْطَانَ قَدْ أَيِسَ أَنْ يَعْبُدَهُ الْمُصَلُّوْنَ فِىْ جَزِيْرَةِ الْعَرَبِ وَلَكِنْ فِى التَّحْرِيْشِ بَيْنَهُمْ

জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম (ﷺ) -কে বলতে শুনেছি, আরব উপদ্বীপে মুছল্লীরা প্রতিমা পূজা করবে এ ব্যাপারে শয়তান নিরাশ হয়ে গেছে। তবে আপোসে লড়াই করতে থাকবে।[৭]

উক্ত হাদীছ থেকে বুঝা যায় যে, ছহীহ আক্বীদার মানুষেরা কখনো পীর পূজা, মাযার পূজা কিংবা কোন শিরক-বিদ‘আত করবে না। এ ব্যাপারে শয়তান নিরাশ হয়ে গেছে। কিন্তু আপোসে লড়াই, কোন্দল, দ্বন্দ্ব, ফাটল, ভাঙ্গন ইত্যাদি চলবেই। একসাথে দাওয়াতী কাজ করতে পারছে না, দেখা-সাক্ষাতে সৌজন্যবোধ নেই, একে অপরের গীবত-তোহমতে ব্যস্ত। অথচ আক্বীদা এক, ক্বিবলা এক, দলীল এক, ছালাত এক, আমল এক সবকিছু এক। এভাবে শয়তানকে সুযোগ করে দিচ্ছে।

অষ্টম বিষয় : চরমপন্থা বা খারেজীদের চিহ্ন বিদ্যমান।

খারেজী দুই স্তরের। এক. যাদের মধ্যে খারেজীদের সবগুলো লক্ষণ আছে। দুই. যাদের মধ্যে খারেজীদের বেশ কিছু লক্ষণ আছে। যাদের মধ্যে যতটুকু লক্ষণ আছে তারা ততটুকু খারেজী। যদিও উভয় দলই পথভ্রষ্ট। দলীয় কোন্দল, গোঁড়ামি যারা করে তাদের মধ্যে খারেজীদের দু’টি লক্ষণ রয়েছে। যেমন,

প্রথম লক্ষণ : খারেজীদের প্রথম ব্যক্তি যুল খুওয়াইছিরাহ আল-ইয়ামানী সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,

إِنَّ مِنْ ضِئْضِئِ هَذَا قَوْمًا يَقْرَءُوْنَ الْقُرْآنَ لَا يُجَاوِزُ حَنَاجِرَهُمْ يَمْرُقُونَ مِنَ الْإِسْلَامِ مُرُوْقَ السَّهْمِ مِنَ الرَّمِيَّةِ يَقْتُلُوْنَ أَهْلَ الْإِسْلَامِ وَيَدَعُوْنَ أَهْلَ الْأَوْثَانِ لَئِنْ أَدْرَكْتُهُمْ لَأَقْتُلَنَّهُمْ قَتْلَ عَادٍ

‘নিশ্চয় এই ব্যক্তির পরবর্তী বংশধরের মধ্যে এমন এক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটবে, যারা কুরআন পড়বে; কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন হতে এমনভাবে বের হবে যেমন শিকার হতে তীর বের হয়ে যায়। তারা ইসলামের অনুসারীদেরকে হত্যা করবে এবং মূর্তিপূজারীদেরকে ছেড়ে দিবে। যদি আমি তাদেরকে পাই, তাহলে অবশ্যই তাদের সকলকে ‘আদ জাতির ন্যায় হত্যা করব’।[৮]

উক্ত হাদীছে বুঝা যায় যে, মুসলিমদের হত্যা করা খারেজীদের লক্ষণ। এমনকি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলাও তাদের লক্ষণ। এমনকি বিদ‘আতী বেরীলভীদের মসজিদ ভাঙ্গাও খারেজীদের লক্ষণ। ইসলামে এর কোন স্থান নেই। অনুরূপভাবে অমুসলিমদের উপাসনালয়, গির্জা, মন্দির, প্যাগোডা ভাঙ্গাও ইসলামে কোন অনুমতি নেই, বরং হারাম। সুতরাং খারেজীরা হল মুসলিম জাতির জন্য ক্যান্সার। তারা নামে মুসলিম কিন্তু কাজে মুসলিম নয়। আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর যুগে এমন ফিতনা হয়েছিল যে, মরুভূমি, রাস্তা-ঘাটে অপরিচিত কোন কাফেলাকে দেখলে তারা জিজ্ঞেস করত, তোমরা কারা? যদি তারা বলত, আমরা মুসিলম, তাহলে তারা সকলকেই হত্যা করত। অনুরূপভাবে বর্তমানেও জঙ্গীরা যদি জানে যে, মুসলিমরা ফাসাদকে তাদের মত জিহাদ বলে না, তাহলে তাদের ব্যাপারে খারেজীদের ফৎওয়া হল- বিশেষ করে ছহীহ আক্বীদার আলেমের উপর; তারা মুনাফিক। সুতরাং মুনাফিককে হত্যা করতে হবে। এটা খারেজীদের লক্ষণ।

দ্বিতীয় লক্ষণ : আবু সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন,

يَخْرُجُ نَاسٌ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ وَيَقْرَءُوْنَ الْقُرْآنَ لَا يُجَاوِزُ تَرَاقِيَهُمْ يَمْرُقُوْنَ مِنَ الدِّيْنِ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ ثُمَّ لَا يَعُوْدُوْنَ فِيْهِ حَتَّى يَعُوْدَ السَّهْمُ إِلَى فُوْقِهِ قِيْلَ مَا سِيْمَاهُمْ  قَالَ سِيْمَاهُمُ التَّحْلِيْقُ أَوْ قَالَ التَّسْبِيْدُ 

‘পূর্ব এলাকা থেকে একদল লোক বের হবে। তারা কুরআন পড়বে কিন্তু এ পাঠ তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে, যেভাবে ধনুক থেকে তীর বেরিয়ে যায়। তারা আর ফিরে আসবে না, যে পর্যন্ত তীর ধনুকের ছিলায় ফিরে না আসে। বলা হল তাদের চিহ্ন কী? তিনি বললেন, তাদের চিহ্ন হল মাথা মুণ্ডন। অন্য বর্ণনায় এসেছে, আত-তাসবীদ অর্থাৎ মাথাতে মোটেও চুল না রাখা’।[৯]

উল্লেখ্য, খারেজীদের একটি ফৎওয়া হল- ফরয গোসলের সময় যদি কারো একটি চুলে পানি না পৌঁছে, তাহলে গোসল সঠিক হয় না। সুতরাং তার ওযূও হবে না। আর ওযূ ছাড়া ছালাত কবুল হবে না। তাহলে সে কাফের হয়ে গেল। তাই কাফের হওয়ার ভয়ে তারা মাথায় কোন চুলই রাখত না। এরা ছিল প্রাথমিক যুগের আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) -এর যুগের খারেজী। অনুরূপভাবে তাবলীগ জামা‘আতের লোকেরা চিল্লায় গেলে মাথা মুণ্ডন করে থাকে। এ ব্যাপারে তারা একটি জাল হাদীছের অনুসরণ করে থাকে। যেমন, ‘ফরয গোসলের সময় যদি একটি চুল শুকনা থেকে যায়, তাহলে সে জাহান্নামী হবে। আর এই ভয়ে আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) মাথা ন্যাড়া করে রাখতেন’। অথচ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বড় বড় চুল ছিল। সুতরাং মাথায় চুল না থাকা খারেজীদের লক্ষণ।

নবম বিষয় : কোন মুসলিম কখনো দুশমনকে হাসার সুযোগ দিবে না।

বিদ‘আতী, ছহীহ আক্বীদার মানুষ, আলেমগণ, বিভিন্ন দলের কর্মী এমনকি গোটা মুসলিম উম্মাহর জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষণীয় বিষয় হল- কখনো দুশমনকে হাসার সুযোগ করে দিবে না। এটা ভাল কাজ নয়। উদাহরণস্বরূপ যদি কোন ছেলে ও মা, পিতা ও পুত্র, ছেলের বউ ও শাশুড়ি ঝগড়া করে আর পাশের লোকেরা যদি জানতে পারে, আর যদি তারা বিদ্বেষী হয়, তাহলে তারা হাসবে। মূলত বিজাতীরা আমাদের দুশমন। পক্ষান্তরে বিদ‘আতীরাও আমাদের দ্বীনি ভাই। সুতরাং বিদ‘আতীদের লড়াইকে নিয়ে হাসাহাসি করা নিন্দনীয়, বর্জনীয়, আপত্তিকর এবং না জায়েয। অতএব মুসলিমের অন্যতম দায়িত্ব হল- সে যেন কোন কারণে কাফেরকে হাসার সুযোগ সৃষ্টি না করে দেয়। উল্লেখ্য, আশ্চর্য বিষয় হল- ইহুদীদের ধারণা যে, ঈসা (আলাইহিস সালাম) জারজ সন্তান। এতবড় ভ্রান্ত আক্বীদা থাকা সত্ত্বেও ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে ইহুদী-খ্রিষ্টান সবাই এক। এতবড় আক্বীদা ও ধর্মীয় দ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও তারা মিলে যেতে পেরেছে। আর একশ্রেণীর মুসলিমরা সামান্য কারণে কাফেরদেরকে হাসার সুযোগ করে দিচ্ছে। বড়ই লজ্জার বিষয়।

দুশমনকে হাসার সুযোগ করে দেয়া নিষেধের ব্যাপারে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেছেন। হাদীছেও বর্ণিত হয়েছে।

যখন মূসা (আলাইহিস সালাম) তাওরাত নেয়ার জন্য ৪০ দিন তূর পাহাড়ে গেলেন। এ সময় হারূন (আলাইহিস সালাম)-কে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করে গেলেন। তাঁর অনেক নিষেধ করার পরেও বানী ইসরাঈল জাতি বাছুর পূজা শুরু করল। অতঃপর ৪০ দিন পরে তাওরাত নিয়ে মূসা (আলাইহিস সালাম) যখন ফিরে আসলেন, তখন তিনি তার জাতিকে বাছুর পূজা করতে দেখলেন। এটা দেখে তিনি হারূন (আলাইহিস সালাম)-এর উপর খুব রাগান্বিত হলেন। তখন তিনি বললেন,

وَ لَمَّا رَجَعَ مُوۡسٰۤی اِلٰی قَوۡمِہٖ غَضۡبَانَ اَسِفًا  قَالَ بِئۡسَمَا خَلَفۡتُمُوۡنِیۡ  مِنۡۢ بَعۡدِیۡ اَعَجِلۡتُمۡ اَمۡرَ رَبِّکُمۡ  وَ اَلۡقَی الۡاَلۡوَاحَ وَ اَخَذَ بِرَاۡسِ اَخِیۡہِ یَجُرُّہٗۤ اِلَیۡہِ  قَالَ ابۡنَ اُمَّ  اِنَّ  الۡقَوۡمَ اسۡتَضۡعَفُوۡنِیۡ  وَ کَادُوۡا یَقۡتُلُوۡنَنِیۡ  فَلَا تُشۡمِتۡ بِیَ الۡاَعۡدَآءَ وَ لَا تَجۡعَلۡنِیۡ مَعَ  الۡقَوۡمِ  الظّٰلِمِیۡنَ

‘আর যখন মূসা (আলাইহিস সালাম) রাগান্বিত ও মনঃক্ষুণ্ণ অবস্থায় নিজ জাতির নিকট ফিরে এসে বললেন, আমার চলে যাওয়ার পর তোমরা খুব খারাপভাবে আমার প্রতিনিধিত্ব করেছ, তোমরা তোমাদের প্রভুর নির্দেশের পূর্বেই কেন তাড়াহুড়া করতে গেলে? অতঃপর তিনি ফলকগুলো ফেলে দিলেন এবং স্বীয় ভাইয়ের মস্তক (চুল) ধরে নিজের দিকে টানতে লাগলেন, উনি (ভাই হারূন) বললেন, হে আমার মাতার পুত্র! এই লোকগুলো আমাকে দুর্বল করে ফেলেছিল এবং আমাকে মেরে ফেলতে উদ্যত হয়েছিল, অতএব তুমি আমাকে শত্রুর সমক্ষে হাস্যকরে পরিণত কর না, আর এই যালিম লোকদের মধ্যে আমাকে গণ্য কর না’ (সূরা আল-আ‘রাফ : ১৫০)।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আল্লাহর নিকট দুশমন হাসা থেকে পানাহ চাইতেন। হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِىِّ ﷺ كَانَ يَتَعَوَّذُ مِنْ سُوْءِ الْقَضَاءِ وَمِنْ دَرَكِ الشَّقَاءِ وَمِنْ شَمَاتَةِ الأَعْدَاءِ وَمِنْ جَهْدِ الْبَلَاءِ

আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) দুর্ভাগ্য থেকে, হতভাগা থেকে, দুশমন হাসা থেকে এবং বালা-মুছীবতের কষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন।[১০]

দশম বিষয় : মুসলিমদেরকে যেকোন ধরনের ফিতনা ও কলহ থেকে সাবধান থাকা।

মুসলিমদের সাথে পারস্পরিক এমন কিছু করা যাবে না এবং এমন কিছুতে অংশ নেয়া যাবে না, যার মাধ্যমে মুসলিমদের মাঝে দ্বন্দ্ব-বিবাদ-কলহ বৃদ্ধি পায়। তবে এটা ঠিক নয় যে, কলহ বিবাদের ভয়ে তাওহীদ বা সুন্নাহ ছেড়ে দিবেন। বরং এগুলো ঠিক রেখে সতর্ক থাকতে হবে।

একজন মুসলিমের সেন্টার পয়েন্ট হল- তাওহীদ, সুন্নাহ, শিরকমুক্ত হওয়া, বিদ‘আতমুক্ত হওয়া এবং কুরআন-সুন্নাহর দলীল। এই সেন্টার পয়েন্টে থেকে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এ বিষয়ে পরস্পর সহজ হতে হবে কঠিন হওয়া যাবে না। মানুষকে সুসংবাদ দিতে হবে ঘৃণা ছড়ানো যাবে না। অতএব শিরক-বিদ‘আতের সাথে সমঝোতা করে বা আঁতাত করে কোন ঐক্য নয়। যেমনটা বর্তমানে ইসলামিক রাজনৈতিক দলের অনুসারীদের ধারণা হল- বৃহত্তর স্বার্থের জন্য শিরক-বিদ‘আতের সাথে সমঝোতা করা যাবে। অথচ তাদের বৃহত্তর স্বার্থ হল ক্ষমতা হাতে নেয়া। এক্ষেত্রে মাযার পূজারীদের সাথেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা করতে হয়। এজন্য পাকিস্তানের নায়েবে আমীর খান আব্দুল গাফফার নিজেই কবরের উপর চাদর চরাচ্ছে। সুতরাং শিরক ও কুফ্রির সাথে সমঝোতার ইসলাম যদি কেউ পালন করে, তাহলে কখনো সে সফলতার মুখ দেখবে না।

তাবলীগী ভাইদের অবস্থাও অনুরূপ। দিল্লীতে তাবলীগীদের প্রধান কার্যালয় নিযামুদ্দীন জামে মসজিদের পাশেই নিযামুদ্দীন আউলিয়ার মাযার অবস্থিত। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সেই মাযারে মুসলিম, হিন্দু, শিখ, খ্রিষ্টানরা সকলেই সিজদা করছে। সেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই মাযার পূজায় লিপ্ত। অথচ বিগত ৬০ থেকে ৭০ বছরে তারা এই শিরকের বিরুদ্ধে, পীর পূজা ও মাযার পূজার বিরুদ্ধে একটু টুঁ শব্দও পর্যন্ত করেনি। বরং পীরতন্ত্র ও ছূফীবাদকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য একটা মডার্ন রূপ হিসাবে ইলিয়াসী তাবলীগীকে দাঁড় করিয়েছে। এর উদ্দেশ্য হল দু’টি। যথা : ১. সারা বিশ্বে ছূফীবাদের প্রচার করা এবং ২. সারা বিশ্বের মুসলিমকে হানাফী বানিয়ে দেয়া। এজন্য যারা সেখানে যায় তাদেরকে স্লো পয়জন ভাইরাস দিয়ে আক্বীদায় বিষ ঢুকিয়ে দেয়। আরবদের মধ্যে যারাই এই তাবলীগে গেছে, তাদের আক্বীদাই ভ্রান্ত হয়ে গেছে। কিছু আহলেহাদীছ উদ্ভ্রান্ত হয়ে সেখানে ঢুকেছে। ফলে তাদের আক্বীদা একেবারে শেষ হয়ে গেছে। সেখানে তারা বিদ‘আতীদের মত ছালাত আদায় করছে, পীর-মুরীদী ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে। অতএব সর্বদা মুসলিমদের মাঝে ফিতনাকে এড়িয়ে চলতে হবে। ইসলামী শরী‘আত এই সমস্ত ফিতনা থেকে সতর্ক করেছে। হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِيْ بَكْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ يُحَدِّثُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّهَا سَتَكُوْنُ فِتَنٌ أَلَا ثُمَّ تَكُوْنُ فِتْنَةٌ الْقَاعِدُ فِيْهَا خَيْرٌ مِنَ الْمَاشِىْ فِيْهَا وَالْمَاشِى فِيْهَا خَيْرٌ مِنَ السَّاعِى إِلَيْهَا أَلَا فَإِذَا نَزَلَتْ أَوْ وَقَعَتْ فَمَنْ كَانَ لَهُ إِبِلٌ فَلْيَلْحَقْ بِإِبِلِهِ وَمَنْ كَانَتْ لَهُ غَنَمٌ فَلْيَلْحَقْ بِغَنَمِهِ وَمَنْ كَانَتْ لَهُ أَرْضٌ فَلْيَلْحَقْ بِأَرْضِهِ قَالَ فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَرَأَيْتَ مَنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ إِبِلٌ وَلَا غَنَمٌ وَلَا أَرْضٌ قَالَ يَعْمِدُ إِلَى سَيْفِهِ فَيَدُقُّ عَلَى حَدِّهِ بِحَجَرٍ ثُمَّ لْيَنْجُ إِنِ اسْتَطَاعَ النَّجَاءَ اللَّهُمَّ هَلْ بَلَّغْتُ اللَّهُمَّ هَلْ بَلَّغْتُ اللَّهُمَّ هَلْ بَلَّغْتُ قَالَ فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَرَأَيْتَ إِنْ أُكْرِهْتُ حَتَّى يُنْطَلَقَ بِى إِلَى أَحَدِ الصَّفَّيْنِ أَوْ إِحْدَى الْفِئَتَيْنِ فَضَرَبَنِى رَجُلٌ بِسَيْفِهِ أَوْ يَجِىءُ سَهْمٌ فَيَقْتُلُنِى قَالَ يَبُوْءُ بِإِثْمِهِ وَإِثْمِكَ وَيَكُوْنُ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ

আবূ বাকরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, অচিরেই বিভিন্ন ধরনের ফিতনা দেখা দিবে। জেনে রাখ, অতঃপর এমন এক ফিতনা এসে পড়বে সে সময় বসে থাকা ব্যক্তি চলমান ব্যক্তি অপেক্ষা উত্তম হবে এবং চলমান ব্যক্তি উক্ত ফিতনার দিকে দ্রুতগামী ব্যক্তি অপেক্ষা উত্তম হবে। সাবধান! যখন সেই ফিতনা সংঘটিত হবে, তখন যার কাছে উট আছে সে যেন তার উট নিয়ে থাকে। আর যার বকরী আছে সে যেন তার বকরী নিয়ে থাকে। আর যার ভূসস্পত্তি আছে সে যেন উক্ত ভূমি নিয়ে থাকে। এই সময় জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! যদি কারও উট, বকরী বা ভূসস্পত্তি না থাকে, তখন সে কী করবে? তিনি বললেন, তখন সে যেন নিজের তলোয়ারের প্রতি লক্ষ্য করে এবং এর ধারের পার্শ্ব দিয়ে পাথরে আঘাত করে করে তা ভেঙ্গে ফেলে। অতঃপর সম্ভব হলে উক্ত ফিতনার স্থান হতে পালিয়ে আত্মরক্ষা করবে। হে আল্লাহ! আমি কি আপনার হুকুমসমূহ পৌঁছিয়ে দিয়েছি? এই কথাটি তিনি তিনবার বললেন, এই সময় এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! যদি কোন ব্যক্তি জোরপূর্বক আমাকে নিয়ে দুই দলের কোন এক কাতারে দাঁড় করিয়ে দেয় অতঃপর কোন ব্যক্তি তলোয়ারের আঘাতে আমাকে হত্যা করে অথবা একটি তীর এসে আমাকে বিঁধে এবং এতে আমার মৃত্যু ঘটে, তখন আপনার কী অভিমত? তিনি বললেন, সে তার নিজের এবং তোমার পাপ বহন করবে এবং জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।[১১]

পরিশেষে বলব, আল্লাহ রব্বুল আলামীন যেন আমাদেরকে হক্ব বুঝার এবং সকল ফিতনা থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক্ব দান করেন। পাঠক সমাজের প্রতি আহ্বান হল- দিনের পর দিন ফিতনা বেড়েই চলেছে। তাই ফিতনাকে বাড়ার সুযোগ দিবেন না বরং স্ব স্ব স্থান থেকে ফিতনাকে কমানোর চেষ্টা করবেন। এছাড়া সকল ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য সবসময় দু‘আও করতে হবে এবং প্রচেষ্টাও করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সকল গুনাহ-খাতা মাফ করুন এবং সমস্ত প্রকার দ্বন্দ্ব-কলহ ও ফিতনা থেকে মুসিলম জাতিকে বেঁচে থাকার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!!

* দাঈ, দাম্মাম ইসলামিক সেন্টার, সঊদী আরব।

তথ্যসূত্র :
[১]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৬০১; ছহীহ মুসলিম, হা/২৮৮৬; মিশকাত, হা/৫৩৮৪।
[২]. ছহীহ বুখারী, হা/১৯; মিশকাত, হা/৫৩৮৬।
[৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৭০৮৩, ৩১; আবু দাঊদ, হা/৪২৬৮; মিশকাত, হা/৩৫৩৮।
[৪]. তিরমিযী, হা/১৩৯৫; নাসাঈ, হা/৩৯৮৭; মিশকাত, হা/৩৪৬২, সনদ ছহীহ।
[৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৩১৬৬; মিশকাত, হা/৩৪৫২।
[৬]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৮৯০।
[৭]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৮১২; মিশকাত, হা/৭২।
[৮]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৬১০; ছহীহ মুসলিম, হা/১০৬৪; মিশকাত, হা/৫৮৯৪।
[৯]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৫৬২।
[১০]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৬১৬; ছহীহ মুসলিম, হা/২৭০৭।
[১১]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৮৮৭; মিশকাত, হা/৫৩৮৫।




প্রসঙ্গসমূহ »: সংগঠন সমাজ-সংস্কার
শবেবরাত - আল-ইখলাছ ডেস্ক
ইখলাছই পরকালের জীবনতরী (শেষ কিস্তি) - আব্দুল গাফফার মাদানী
ফিলিস্তীন, হে মুসলিম! - শায়খ মতিউর রহমান মাদানী
ছয়টি মূলনীতির ব্যাখ্যা (৩য় কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির
ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমন সংশয় নিরসন (৯ম কিস্তি) - হাসিবুর রহমান বুখারী
বিদ‘আত পরিচিতি (১৮তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
পরবর্তীদের তুলনায় সালাফদের ইলমী শ্রেষ্ঠত্ব (৩য় কিস্তি) - অনুবাদ : আযহার বিন আব্দুল মান্নান
ইসলামে বিবাহের গুরুত্ব (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আবূ সাঈদ
ছালাতে একাগ্রতা অর্জনের ৩৩ উপায় (৩য় কিস্তি) - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
ছালাতে একাগ্রতা অর্জনের ৩৩ উপায় (৭ম কিস্তি) - আব্দুল হাকীম বিন আব্দুল হাফীজ
ইসলামে রোগ ও আরোগ্য (৪র্থ কিস্তি) - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
দ্বীনি শিক্ষার গুরুত্ব - আব্দুল গাফফার মাদানী

ফেসবুক পেজ