বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৯ অপরাহ্ন

বিদ‘আত পরিচিতি

-ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান*


(৩০তম কিস্তি)

খ. আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) (মৃ. ৩২ হি./৬৫৩ খ্রি.)

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ ইবনু গাফিল আবূ আব্দুর রহমান আল-হুযালী আল-মাক্কী আল-মুহাজিরী আল-বাদরী। তিনি ছিলেন উম্মতের ফক্বীহ। ইসলাম গ্রহণকারীর প্রথম সারীদের অন্যতম তিনি ছিলেন। তিনি আবিসিনিয়া ও মদীনায় উভয় স্থানে হিজরত করেছিলেন। তিনি রাসূল (ﷺ)-এর অনেক ঘনিষ্ট ছিলেন। আবু মূসা আশ‘আরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

قَدِمْتُ أَنَا وَأَخِيْ مِنَ الْيَمَنِ فَمَكَثْنَا حِيْنًا مَا نَرَى إِلَّا أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ مَسْعُوْدٍ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ بَيْتِ النَّبِيِّ ﷺ لِمَا نُرَى مِنْ دُخُوْلِهِ وَدُخُوْلِ أُمِّهِ عَلَى النَّبِيِّ ﷺ

‘আমি ও আমার ভাই ইয়ামান হতে আগমন করলাম এবং বেশ কিছুদিন মদিনায় অবস্থান করলাম। আমরা এটাই মনে করতাম যে, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) নবী করীম (ﷺ)-এর পরিবারেরই একজন সদস্য। কেননা আমরা তাকে এবং তার মাতাকে প্রায়ই নবী করীম (ﷺ)-এর গৃহে যাতায়াত করতে দেখতাম।[১]

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) আচার-আচরণে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সবচেয়ে কাছের ছিলেন। হাদীছে এসেছে, আব্দুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

أَتَيْنَا عَلَى حُذَيْفَةَ فَقُلْنَا حَدِّثْنَا مَنْ أَقْرَبُ النَّاسِ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ هَدْيًا وَدَلَّا فَنَأْخُذَ عَنْهُ وَنَسْمَعَ مِنْهُ قَالَ كَانَ أَقْرَبَ النَّاسِ هَدْيًا وَدَلَّا وَسَمْتًا بِرَسُوْلِ اللهِ ﷺ ابْنُ مَسْعُوْدٍ حَتَّى يَتَوَارَى مِنَّا فِىْ بَيْتِهِ وَلَقَدْ عَلِمَ الْمَحْفُوْظُوْنَ مِنْ أَصْحَابِ مُحَمَّدٍ أَنَّ ابْنَ أُمِّ عَبْدٍ هُوَ مِنْ أَقْرَبِهِمْ إِلَى اللهِ زُلْفَى

‘আমরা হুযাইফা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর কাছে এসে বললাম, আপনি আমাদেরকে এরূপ এক ব্যক্তির সন্ধান দিন, যিনি আচার-আচরণে অপরদের চেয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বেশি কাছের, যাতে আমরা তাঁর নিকট দ্বীন শিখতে পারি ও হাদীছ শুনতে পারি। হুযাইফা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আচার-আচরণ ও চাল-চলনে ব্যক্তিদের মাঝে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর অনেক নিকটবর্তী হলেন ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)। তিনি আমাদের মাঝ হতে অন্তরাল হয়ে তাঁর ঘরে অবস্থান করতেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বিশ্বস্ত ছাহাবীগণ ভালভাবে অবগত আছেন যে, ইবনু উম্মু আব্‌দ (আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ) তাদের প্রত্যেকের তুলনায় আল্লাহ‌ তা‘আলার বেশি নৈকট্যলাভকারী’।[২]

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) কুরআনের ব্যাপারে অধিক জ্ঞানী ছিলেন। ছহীহ বুখারীতে একটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে যে, মাসরূক (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন,

وَاللهِ الَّذِىْ لَا إِلَهَ غَيْرُهُ مَا أُنْزِلَتْ سُوْرَةٌ مِنْ كِتَابِ اللهِ إِلَّا أَنَا أَعْلَمُ أَيْنَ أُنْزِلَتْ وَلَا أُنْزِلَتْ آيَةٌ مِنْ كِتَابِ اللهِ إِلَّا أَنَا أَعْلَمُ فِيْمَ أُنْزِلَتْ، وَلَوْ أَعْلَمُ أَحَدًا أَعْلَمَ مِنِّىْ بِكِتَابِ اللهِ تُبَلِّغُهُ الْإِبِلُ لَرَكِبْتُ إِلَيْهِ

‘আল্লাহর কসম! যিনি ছাড়া সত্য কোন ইলাহ নেই, আল্লাহর কিতাবের অবতীর্ণ প্রতিটি সূরা সম্পর্কেই আমি জানি যে, তা কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং প্রতিটি আয়াত সম্পর্কেই আমি জানি যে, তা কোন্ ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। আমি যদি জানতাম যে, কোন ব্যক্তি আল্লাহ‌র কিতাব সম্পর্কে আমার চেয়ে অধিক জ্ঞাত এবং সেখানে উট পৌঁছতে পারে, তাহলে সওয়ার হয়ে সেখানে পৌঁছে যেতাম’।[৩] আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, ‘আবূ বাক্‌র ও উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) তাকে সুসংবাদ দেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

مَنْ أَحَبَّ أَنْ يَقْرَأَ الْقُرْآنَ غَضًّا كَمَا أُنْزِلَ فَلْيَقْرَأْهُ عَلَى قِرَاءَةِ ابْنِ أُمِّ عَبْدٍ

‘যে ব্যক্তি কুরআন মাজীদ উত্তমরূপে তিলাওয়াত করতে চায়, যেভাবে তা নাযিল হয়েছে, সে যেন ইবনু উম্মে আবদ-এর পাঠ মোতাবেক তিলাওয়াত করে’।[৪] উল্লেখ্য, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর উপনাম হলো ইবনু উম্মে আবদ।

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মিম্বারে থাকা অবস্থায় আমাকে বললেন,

إِقْرَأْ عَلَيَّ قُلْتُ أَقْرَأُ عَلَيْكَ وَعَلَيْكَ أُنْزِلَ؟ قَالَ إِنِّي أُحِبُّ أَنْ أَسْمَعَهُ مِنْ غَيْرِيْ فَقَرَأْتُ سُوْرَةَ النِّسَاءِ حَتَّى أَتَيْتُ إِلَى هَذِهِ الْآيَةِ " فَکَیۡفَ اِذَا جِئۡنَا مِنۡ کُلِّ اُمَّۃٍۭ بِشَہِیۡدٍ وَّ جِئۡنَا بِکَ عَلٰی ہٰۤؤُلَآءِ شَہِیۡدًا" قَالَ حَسْبُكَ الْآنَ فَالْتَفَتُّ إِلَيْهِ فَإِذَا عَيْنَاهُ تَذْرِفَانِ

‘তুমি আমার সামনে কুরআন পড়। আমি বললাম, আপনার সামনে আমি কুরআন পড়ব! অথচ এটা আপনার উপরই নাযিল হয়েছে? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন,  আমি তা অন্যের মুখে শুনতে ভালবাসী। সুতরাং আমি সূরা ‘নিসা’ পড়তে আরম্ভ করলাম। যখন আমি এই আয়াত পর্যন্ত পৌঁছলাম, فَکَیۡفَ اِذَا جِئۡنَا مِنۡ کُلِّ اُمَّۃٍۭ بِشَہِیۡدٍ وَّ جِئۡنَا بِکَ عَلٰی ہٰۤؤُلَآءِ شَہِیۡدًا ‘তবে কেমন হবে, যখন আমি প্রত্যেক উম্মতের বিরুদ্ধে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং আপনাকে এদের বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব’ (সূরা আন-নিসা : ৪১), তখন তিনি বললেন, এবার বন্ধ কর। এ সময় আমি তাঁর দিকে তাকালাম; দেখি তাঁর দুই চক্ষু হতে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে’।[৫] তিনি ৩২ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।

১- বিদ‘আতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান

ছাহাবায়ে কেরাম বিদ‘আতের বিরুদ্ধে আপোসহীন ছিলেন। তন্মধ্যে বিরোধিতার দিক থেকে আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) ছিলেন সকলের শীর্ষে। যেমন,

১- আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন,

من أحب أن يكرم دينه فليعتزل مخالطة السلطان ومجالسة أصحاب الأهواء، فإن مجالستهم ألصق من الجرب

‘যে ব্যক্তি তার দ্বীনকে সম্মান করতে ভালোবাসে সে যেন শাসকের সাথে মেলামেশা করা থেকে বিরত থাকে এবং প্রবৃত্তি পূজারী তথা বিদ‘আতীদের মজলিশে না সবে। কেননা, তাদের সাথে বসা চুলকানির চেয়েও খারাপ’।[৬]

২- তিনি বলেন,

يا أيها الناس إن الله بعث محمدا بالحق، وأنزل عليه الفرقان وفرض عليه الفرائض وأمره أن يعلم أمته، فبلغهم رسالته ونصح لأمته، وعلمهم ما لم يكونوا يعلمون، وبين لهم ما يجهلون، فاتبعوه ولا تبتدعوا، فقد كفيتم، كل محدثة بدعة وكل بدعة ضلالة

‘হে মানুষ সকল! নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে সত্য সহ প্রেরণ করেছেন। তাঁর উপর ফুরক্বান তথা সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী (কিতাব) নাযিল করেছেন। তাঁর উপর অনেক কিছু ফরয করেছেন। তাঁর নির্দেশ তিনি তাঁর উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি তাঁর রিসালাত পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁর উম্মতকে নছিহত প্রদান করেছেন। তাঁর উম্মতেরা যেসকল বিষয় জানত না অজ্ঞ ছিল সে বিষয়ে তাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। অতএব তোমরা তাঁর অনুসরণ কর, বিদ‘আতের অনুসরণ কর না। তোমাদের জন্য এটাই যথেষ্ট। (কেননা) প্রত্যেক নতুন সৃষ্টি বিদ‘আত আর প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্ট’।[৭]

৩- তিনি বলেন, اقْتِصَادٌ فِيْ سَنَةٍ خَيْرٌ مِنِ اجْتِهَادٍ فِيْ بِدْعَةٍ ‘বিদ‘আতের ব্যাপারে পরিশ্রমের চেয়ে সুন্নাতের ব্যাপারে পরিশ্রশ করা উত্তম’।[৮]

৪- তিনি আরো বলেন, إيَّاكُمْ وَالتَّبَدُّعَ , وَإِيَّاكُمْ وَالتَّنَطُّعَ , وَإِيَّاكُمْ وَالتَّعَمُّقَ , وَعَلَيْكُمْ بِالدِّينِ الْعَتِيقِ ‘তোমরা বিদ‘আত থেকে সাবধান থাক, অহংকারী হওয়া থেকে সাবধান থাক, খুব গভীরে যাওয়া থেকে সাবধান থাক এবং প্রাচীন দ্বীনকে মেনে চল’।[৯]

৫- তিনি বলেন, إنَّا نَقْتَدِي وَلَا نَبْتَدِي , وَنَتَّبِعُ وَلَا نَبْتَدِعُ , وَلَنْ نَضِلَّ مَا تَمَسَّكْنَا بِالْأَثَرِ নিশ্চয় আমরা আমাদের আনুগত্য করি আমাদের বিদ‘আত করি না। আমরা অনুসরণ করি আমরা বিদ‘আত করি না। আমরা কখনো পথভ্রষ্ট হব না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা আছারের অনুসরণ করব’।[১০]

৬- তিনি বলেন, يا أيها الناس إنكم ستحدثون ويحدث لكم فإذا رأيتم محدثا فعليكم بالأمر الأول ‘হে মানুষ সকল! খুব শীঘ্রই তোমরা নতুন কিছু বর্ণনা করবে এবং তোমাদের জন্য নতুন কিছু বর্ণনা করা হবে। সুতরাং যখন তোমরা নতুন কিছু দেখবে তখন তোমরা প্রথম বিষয়টি (সুন্নাহ) গ্রহণ করবে’।[১১]

২- রাফেযী (শী‘আদের) বিরুদ্ধে অবস্থান

১- ক্বাতাদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন,

من كان منكم متأسيا فليتأس بأصحاب محمد ﷺ، فانهم كانوا أبر هذه الأمة قلوبا، وأعمقها علما، وأقلها تكلفا، وأقومها هديا، وأحسنها حالا، قوما اختارهم الله لصحبة نبيه ﷺ ، وإقامة دينه، فاعرفوا لهم فضلهم واتبعوهم في آثارهم، فانهم كانوا على الهدى المستقيم

‘তোমাদের মধ্যে যে কেউ একজনের অনুসারী, সে যেন মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর ছাহাবীদের অনুসরণ করুক। কেননা তারা এই জাতির মধ্যে অন্তরের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ধার্মিক, গভীর জ্ঞানের অধিকারী, সবচেয়ে কম অনুপ্রবেশকারী, হেদায়াতের উপর সর্বাধিক অবিচল ছিলেন, সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। তারা এমন ছিলেন যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবী (ﷺ)-এর সাহচর্যের জন্য এবং তাঁর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করুন বেছে নিয়েছিলেন। অতএব তাদের মর্যাদা সম্পর্কে জান এবং তাদের আছারের অনুসরণ কর। কেননা তারা সকলেই সুদৃঢ় হেদায়াতের উপর ছিলেন’।[১২]

৩- জাহমিয়্যাদের বিরুদ্ধে অবস্থান

১. আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, الْقُرْآنُ كَلَامُ اللهِ فَمَنْ رَدِّ مِنْهُ شَيْئًا فَإِنَّمَا يَرُدُّ عَلَى اللهِ ‘কুরআন আল্লাহর কালাম। সুতরাং যে ব্যক্তি তার থেকে কোন কিছুকে প্রত্যাখ্যান করল, সে যেন আল্লাহকেই প্রত্যাখ্যান করল’।[১৩]

২- তিনি আলো বলেন, إِنَّ أَحْسَنَ الْكَلَامِ كَلَامُ اللهِ ‘নিশ্চয় সর্বোত্তম কালাম হল আল্লাহর কালাম তথা কুরআন’।[১৪]

৩- ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) কুরআনুল কারীমের মাছহাফ চুম্বন করে বলতেন, كَلَامُ رَبِّي كَلَامُ رَبِّي ‘আমার রবের কালাম আমার রবের কালাম’।[১৫]

৩- তিনি আরো বলেন, مَنْ كَانَ يُحِبُّ أَنْ يَعْلَمَ أَنَّهُ يُحِبُّ اللهَ فَلْيَعْرِضْ نَفْسَهُ عَلَى الْقُرْآنِ فَإِنْ أَحَبَّ الْقُرْآنَ فَهُوَ يُحِبُّ اللهَ فَإِنَّمَا الْقُرْآنُ كَلَامُ اللهِ ‘যে ব্যক্তি জানতে চায় যে, সে আল্লাহকে ভালোবাসে, তাহলে সে যেন নিজেকে কুরআনের কাছে পেশ করে (অর্থাৎ কুরআন অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে)। নিশ্চয় যে কুরআনকে ভালোবাসে, সে আল্লাহ তা‘আলাকেই ভালোবাসে। কারণ, কুরআন আল্লাহ তা‘আলার বাণী’।[১৬]

৪- তিনি আরো বলেন, ارحم من في الأرض يرحمك من في السماء ‘পৃথিবীবাসীর উপর তুমি রহম কর, তাহলে আসমানে যিনি রয়েছে তিনি তোমার উপর রহম করবেন’।[১৭] উল্লেখ্য, জাহমিয়্যাহরা আল্লাহর আরশে সম্মুন্নত থাকাকে অস্বীকার করে থাকে। আর আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর উক্ত বক্তব্যে আল্লাহর আসমানে থাকার বিষয়টি সাব্যস্ত হয়। কেননা আরশ তো আসমানের উপরেই।

৪- ক্বাদারিয়্যাদের বিরুদ্ধে তার অবস্থান

১- আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ য বলেন, ما كان كفر بعد نبوة إلا كان معها التكذيب بالقدر ‘নবুওয়তের পরে কোন কুফরী নেই। তবে তাক্বদীরকে অস্বীকার করা ব্যতীত’।[১৮]

২- তিনি বলেন, أربع قد فرغ منهم: الخلق، والخُلق، والرزق، والأجل ‘চারটি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যথা: সৃষ্টি, নৈতিকতা, ভরণপোষণ এবং জীবনকাল’।[১৯]

৩- ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, إذا قدر الله عز وجل لنفس أن تموت بأرض؛ هيئت له إليها الحاجة. ‘আল্লাহ তা‘আলা যদি কোন ব্যক্তির মৃত্যু কোন যমীনে নির্দিষ্ট করেন, তাহলে সেখানে তার প্রয়োজন সৃষ্টি করে দেন’।[২০]

(ইনশাআল্লাহ চলবে)

*শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আল-ইসলামিয়্যাহ, খড়খড়ি, রাজশাহী।

তথ্যসূত্র :
[১]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৭৬৩; ছহীহ মুসলিম, হা/২৪৬০; মিশকাত, হা/৬১৮৯।
[২]. তিরমিযী, হা/৩৮০৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৩৫৬, সনদ ছহীহ।
[৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৫০০২; ছহীহ মুসলিম, হা/২৪৬৩।
[৪]. ইবনু মাজাহ, হা/১৩৮, সনদ ছহীহ।
[৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৫৮২; ছহীহ মুসলিম, হা/৮০০; মিশকাত, হা/২১৯৫।
[৬]. মুহাম্মাদ ইবনু ওয়াযাহ আল-কুরতুবী, আল-বিদা‘ঊ ওয়ান নাহিউ আনহা (কায়রো: দারুছ ছফা, ১ম সংস্করণ, ১৪১১ হি./১৯৯০ খ্রি.), পৃ. ৫৬-৫৭।
[৭]. শায়খুল ইসলাম আবূ ইসমাঈল আব্দুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ আল-আনছারী আল-হারূবী, যাম্মুল কালামি ওয়া আহলুহু (আল-মাদানীতুল মুনাউওয়ারাহ: মাকতাবাতুল ‘ঊলূম ওয়াল হিকাম, ১৪১৮ হি./১৯৯৮ খ্রি.), ২য় খণ্ড, পৃ. ৭৮।
[৮]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/১০৪৮৮; আবূ ‘আব্দিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনু নাছর ইবনুল হাজ্জাজ আল-মারওয়াযী, আস-সুন্নাহ (বৈরূত: মুওয়াসসাসতুল কুতুব আছ-ছাক্বাফিয়্যাহ, ১ম সংস্করণ, ১৪০৮ হি.), পৃ. ৩০ আছার নং-৮৯।
[৯]. আল-ইমামু মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল্লাহ ওয়াহহাব, উছূলুল ঈমান (সঊদী আরব : ওয়াযারাতুশ শুয়ূনিল ইসলামিয়্যাহ ওয়াল আওক্বাফ ওয়াদ দাওয়াতি ওয়াল ইরশাদ, ৫ম সংস্করণ, ১৪২০ হি.), পৃ. ২১০, আছার নং-১২৪।
[১০]. মুহাম্মাদ ইবনু খালীফা ইবনু আলী আত-তামীমী, মু‘তাক্বিদু আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ ফী তাওহীদি আসমাই ওয়াল হুসনা (রিয়াদ: আযওয়াউল বায়ান, ১ম সংস্করণ, ১৪১৯ হি./১৯৯৯ খ্রি.), পৃ. ৫১।
[১১]. যাম্মুল কালামি ওয়া আহলুহু, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২০২।
[১২]. আবুল কাসিম ইসমাঈল ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু ফযল আত-তামীমী আল-ইস্পাহানী, আল-হুজ্জাতু বায়নাল মুহাজ্জাহ ওয়া শারহু আক্বীদাতি আহলিস সুন্নাহ (রিয়াদ: দারুল রাইয়াহ, ১৪১৯ হি./১৯৯৯ খ্রি.), ২য় খণ্ড, পৃ. ৫১৯, আছার নং-৪১৯।
[১৩]. হাফিয ইবনু আহমাদ ইবনু আলী আল-হুকমী, মা‘আরিজুল কবুল বিশারহি সালমিল উছূল ইলা ‘ইলমিল উছূল (আদ-দাম্মাম: দারু ইবনিল ক্বাইয়িম, ১ম সংস্করণ, ১৪১০ হি./১৯৯০ খ্রি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ২৬০।
[১৪]. মা‘আরিজুল কবুল বিশারহি সালমিল উছূল ইলা ‘ইলমিল উছূল, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৬০।
[১৫]. মা‘আরিজুল কবুল বিশারহি সালমিল উছূল ইলা ‘ইলমিল উছূল, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৬০।
[১৬]. আব্দুল্লাহ ইবনু আহমাদ ইবনু হাম্বাল, আস-সুন্নাহ (আদ-দাম্মাম; দারু ইবনিল ক্বাইয়িম, ১ম সংস্করণ, ১৪০৬ হি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ১৪৮, আছার নং-১২৫; মা‘আরিজুল কবুল বিশারহি সালমিল উছূল ইলা ‘ইলমিল উছূল, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৬১।
[১৭]. আব্দুল্লাহ ইবনু আহমাদ ইবনু কুদামাহ আল-মাক্বদেসী, ইছবাতু ছিফাতুল ঊল্যূ (আল-কুয়েত: আদ-দারুস সালাফিয়্যাহ, ১ম সংস্করণ, ১৪০৬ হি.), পৃ. ৫২; আবূ ‘আব্দিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইবসু উছমান আয-যাহ্বী, আল-ঊলুউয়ু লিল ‘আলিয়্যিল কাবীর (আর-রিয়ায: মাকতাবাতু আযওয়াইস সালাফ, ১ম সংস্করণ, ১৯৯৫ খ্রি.), পৃ. ১৯, আছার নং-২৯।
[১৮]. আল-আজুর্রী, আশ-শারী‘আত, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৮০।
[১৯]. ইবনু বাত্তাহ, আল-ইবানাহ (রিয়াদ: দারুল রায়াহ, ২য় সংস্করণ, ১৪১৫ হি./১৯৯৪ খ্রি.), ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ১৫০।
[২০]. আল-ইবানাহ, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ২৭১।




ইখলাছই পরকালের জীবনতরী (৪র্থ কিস্তি) - আব্দুল গাফফার মাদানী
শরী‘আত অনুসরণের মূলনীতি - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
সালাফী মানহাজের মূলনীতিসমূহ (২য় কিস্তি) - আব্দুল গাফফার মাদানী
ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমন সংশয় নিরসন (ত্রয়োদশ কিস্তি) - হাসিবুর রহমান বুখারী
প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আত সম্পর্কে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের অবস্থান (শেষ কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির
মসজিদ: ইসলামী সমাজের প্রাণকেন্দ্র (৬ষ্ঠ কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ছালাতে একাগ্রতা অর্জনের ৩৩ উপায় (৯ম কিস্তি) - আব্দুল হাকীম বিন আব্দুল হাফীজ
আশূরায়ে মুহাররম - আল-ইখলাছ ডেস্ক
ইসলামী পুনর্জাগরণের প্রতিবন্ধকতা ও তার সমাধান (৫ম কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
বিদ‘আত পরিচিতি (৯ম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ছালাতের সঠিক সময় ও বিভ্রান্তি নিরসন (২য় কিস্তি) - মাইনুল ইসলাম মঈন
জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ (২য় কিস্তি) - অনুবাদ : মুহাম্মদ ইমরান বিন ইদরিস

ফেসবুক পেজ