মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৭:৫৩ অপরাহ্ন

ইসলামে রোগ ও আরোগ্য

-মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী*


(২য় কিস্তি)

সুস্থতা একটি বিশেষ নে‘মত

ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, نِعْمَتَانِ مَغْبُوْنٌ فِيْهِمَا كَثِيْرٌ مِنَ النَّاسِ الصِّحَّةُ وَالْفَرَاغُ ‘এমন দু’টি নে‘মত আছে, যে দু’টোতে অধিকাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তা হচ্ছে, সুস্থতা আর অবসর’।[১]

দুনিয়াতে মহান আল্লাহ যত নে‘মত দিয়েছেন তার মাঝে সুস্থতা একটি বড় নে‘মত। গোপন-প্রকাশ্য নে‘মতের মাঝে কোন অসুখ নেই, গায়ে কোন ব্যথা নেই এবং দুঃশ্চিন্তাও নেই এমন সুখী মানুষ দুনিয়াতে খুব কমই পাওয়া যায়। তারপরও যারা এমন আছেন তাদের চেয়ে সুখে-শান্তিতে কেউ নেই। সুস্থতা সত্যিই কত বড় নে‘মত আমাদের একটি অঙ্গ অসুস্থ হলেই বুঝতে পারি। কারো একটি আঙ্গুল কেটে গেলে বুঝা যায় ছোট্ট ঐ আঙ্গুলের কত প্রয়োজন। কারো মাথা ব্যথা হলে সে মনে মনে বলে মানুষের অসুখের মাঝে সবচেয়ে খারাপ অসুখ মাথাব্যথা। পেট ব্যথা হলেও একই বুলি আমরা শুনি। দাঁত ব্যথা নিয়ে একদিন ডাক্তার বাড়ি গিয়ে দেখবেন, অনেক মানুষ দাঁতের চিকিৎসার জন্য ডাক্তারখানায় এসেছে। সবাই গালে হাত দিয়ে উহ! আহ! শব্দ করছে। আপনি অপেক্ষায় আছেন কখন আপনার সিরিয়াল। তখন হয়তো বসে বসে ভাবছেন সত্যিই গুণীজন ঠিকই বলেন, ‘দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝা যায় না’। আসলে মহান আল্লাহ আমাদের জীবনের সবকিছু একটা সময়ের ছকে বেঁধে দিয়েছেন। শিক্ষা, সামাজিকতা, চাকুরী, বিবাহ সব ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট সময় আছে। এর আগে পিছে করা মানেই ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া। ক্ষতির মুখোমুখী হলেই কেবল আমরা নে‘মতের গুরুত্ব বুঝতে পারি। যেমন মানুষের মৃত্যুর সময় আফসোস করবে কেন আমি দান করলাম না বা ভালো সঙ্গী নির্বাচন করলাম না। আবার মৃত্যুর পর যখন বিভীষিকাময় লেলিহান শিখা সেই জাহান্নামের মুখোমুখী হবে, তখনও একইভাবে আফসোস করবে কেন আমি আল্লাহর দেয়া বিধানকে মূল্যায়ন করলাম না। তখন তারা ফেরত যেতে চাইবে কিন্তু তাদের আর ফেরত যাওয়ার কোন সুযোগ থাকবে না। মহান আল্লাহ বলেন,

وَ لَوۡ تَرٰۤی  اِذۡ  وُقِفُوۡا عَلَی النَّارِ فَقَالُوۡا یٰلَیۡتَنَا نُرَدُّ  وَ لَا  نُکَذِّبَ بِاٰیٰتِ رَبِّنَا وَ نَکُوۡنَ  مِنَ  الۡمُؤۡمِنِیۡنَ- بَلۡ بَدَا لَہُمۡ مَّا کَانُوۡا یُخۡفُوۡنَ مِنۡ  قَبۡلُ ؕ وَ لَوۡ رُدُّوۡا لَعَادُوۡا لِمَا نُہُوۡا عَنۡہُ وَ اِنَّہُمۡ  لَکٰذِبُوۡنَ

‘আপনি যদি দেখতে পেতেন যখন তাদেরকে আগুনের উপর দাঁড় করানো হবে তখন তারা বলবে, হায়! যদি আমাদেরকে ফেরত পাঠানো হত, আর আমরা আমাদের রবের আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ না করতাম এবং আমরা মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। বরং আগে তারা যা গোপন করত তা এখন তাদের কাছে প্রকাশ হয়ে গিয়েছে। আর তাদের আবার দুনিয়ায় ফেরত পাঠানো হলেও তাদেরকে যা করতে নিষেধ করা হয়েছিল আবার তারা তাই করত এবং অবশ্যই তারা মিথ্যাবাদী’ (সূরা আল-আন‘আম : ২৭-২৮)।

সুস্থতা মাথার মহামূল্যবান মুকুটের ন্যায়, যার মূল্য প্রকৃত হক্বদারই বুঝে। অর্থাৎ যিনি রোগে কাতরাচ্ছেন, তিনিই জানেন সুস্থতা কত মূল্যবান নে‘মত। কোন মানুষ অসুস্থ হলে সে আর জীবনের সত্যিকারের স্বাদ পায় না। অসুস্থ ব্যক্তি তার কাক্সিক্ষত সাফল্যেও পৌঁছতে পারে না; অনেককে দেখেছি বয়স কম হলেও অসুখের যন্ত্রণায় অসহ্য হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত কামনা করে। আব্দুল্লাহ ইবনু মিহছান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

مَنْ أَصْبَحَ مِنْكُمْ آمِنًا فِىْ سِرْبِهِ مُعَافًى فِىْ جَسَدِهِ عِنْدَهُ قُوْتُ يَوْمِهِ فَكَأَنَّمَا حِيْزَتْ لَهُ الدُّنْيَا

‘তোমাদের মাঝে যে ব্যক্তি সুস্থদেহে দিনাতিপাত করে, পরিবার-পরিজনসহ নিরাপদে সকালে উপনীত হয় এবং তার নিকট যদি সারাদিনের খোরাকী থাকে, তাহলে তার জন্য যেন গোটা দুনিয়াই একত্র করা হল’।[২]

আব্দুল্লাহ ইবনু খুবাইব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তার চাচা থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, لَا بَأْسَ بِالْغِنَى لِمَنِ اتَّقَى وَالصِّحَّةُ لِمَنِ اتَّقَى خَيْرٌ مِنَ الْغِنَى وَطِيْبُ النَّفْسِ مِنَ النِّعَمِ ‘আল্লাহভীরু লোকদের ধন-সম্পদের মালিক হওয়াতে কোন দোষ নেই। আর আল্লাহভীরু লোকদের জন্য ধন-সম্পদ থেকে সুস্থতা অধিক উত্তম। মনের প্রফুল্লতাও নে‘মতরাজির অন্তর্ভুক্ত’।[৩]

মূলত যারা মুমিন তারা সুস্থতাকে মূল্যায়ন করে এবং সুস্থ থাকা অবস্থায় বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করে। কারণ হাদীছে অসুস্থতা আসার পূর্বেই সুস্থতাকে মূল্যায়ন করতে বলা হয়েছে। হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَمْرِو بْنِ مَيْمُوْنٍ الْأَوْدِيِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لِرَجُلٍ وَهُوَ يَعِظُهُ اِغْتَنِمْ خَمْسًا قَبْلَ خَمْسٍ شَبَابَكَ قَبْلَ هَرَمِكَ وَصِحَّتَكَ قَبْلَ سَقَمِكَ وَغِنَاكَ قَبْلَ فَقْرِكَ وَفَرَاغَكَ قَبْلَ شُغْلِكَ وَحَيَاتَكَ قَبْلَ مَوْتِكَ

‘আমর ইবনু মায়মূন আল-আওদী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনৈক ব্যক্তিকে নছীহতস্বরূপ বললেন, পাঁচটি জিনিস আসার পূর্বে পাঁচটি কাজ করাকে গণিমত মনে কর। (১) তোমার বার্ধক্যের পূর্বে যৌবনকে। (২) রোগাক্রান্ত হওয়ার পূর্বে সুস্থতাকে। (৩) দরিদ্রতার পূর্বে অভাবমুক্ত থাকাকে। (৪) ব্যস্ততার পূর্বে অবসর সময়কে এবং (৫) মৃত্যুর পূর্বে জীবনকে।[৪] সুতরাং সময় আসার পূর্বেই ইবাদতে মনোযোগ দিয়ে সময় পার করুন। একদিন আসবে ইবাদত করতে মন চাইবে কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার জন্য আর হয়ে উঠবে না। এমনকি ক্বিয়ামত দিবসেও মানুষ ইবাদতের জন্য পৃথিবীতে আসার আবেদন করবে। তাই সেদিন আসার পূর্বেই অন্তত শুকরিয়া আদায় করুন। মহান আল্লাহ বলেন,

وَ اشۡکُرُوۡا نِعۡمَتَ اللّٰہِ  اِنۡ  کُنۡتُمۡ  اِیَّاہُ تَعۡبُدُوۡنَ

‘তোমরা যদি একমাত্র আমারই ইবাদত করে থাক, তাহলে আল্লাহর নে‘মতের শুকরিয়া আদায় কর’ (সূরা আন-নাহল : ১১৪)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,

حَتّٰۤی  اِذَا جَآءَ   اَحَدَہُمُ  الۡمَوۡتُ قَالَ رَبِّ  ارۡجِعُوۡنِ- لَعَلِّیۡۤ  اَعۡمَلُ صَالِحًا فِیۡمَا تَرَکۡتُ کَلَّا ؕ اِنَّہَا  کَلِمَۃٌ  ہُوَ قَآئِلُہَا ؕ وَ مِنۡ وَّرَآئِہِمۡ بَرۡزَخٌ   اِلٰی  یَوۡمِ  یُبۡعَثُوۡنَ

‘অবশেষে যখন তাদের কারো মৃত্যু আসে, সে বলে, হে আমার রব! আমাকে আবার ফেরত পাঠান- যাতে আমি সৎকাজ করতে পারি যা আমি আগে করিনি। (জবাবে বলা হবে) না, এটা হওয়ার নয়। এটা তো একটি কথার কথা, যা সে বলবেই। তাদের সামনে পর্দা থাকবে পুনরুত্থানের দিন পর্যন্ত’ (সূরা আল-মুমিনূন : ৯৯-১০০)।

সুস্থতা সবচেয়ে বড় নে‘মত বলার পরও আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাকীই থেকে গেছে। তাহল ক্বিয়ামতের দিন মানুষকে তার শারীরিক সুস্থতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ أَوَّلَ مَا يُسْأَلُ الْعَبْدُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنَ النَّعِيْمِ أَنْ يُّقَالَ لَهُ أَلَمْ نُصِحَّ جِسْمَكَ؟ وَنَرْوِكَ مِنَ الْمَاءِ الْبَارِدِ؟

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন নে‘মত সম্পর্কে বান্দাকে সর্বপ্রথম যে প্রশ্ন করা হবে তাহল, তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, আমরা কি তোমাকে সুস্বাস্থ্য দান করিনি? আমরা কি তোমাকে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে পরিতৃপ্ত করিনি?[৫]

সুধী পাঠক! সুস্থতা তাহলে স্বাভাবিক কোন ঘটনা নয়; সুস্থতা দেন একমাত্র আল্লাহ এবং এ বিষয়ে তিনি ক্বিয়ামতের দিন জিজ্ঞেসও করবেন। ইবনুল ক্বাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সুস্থতা মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় নে‘মত, বড় দান এবং প্রাপ্য। শুধু তাই-ই নয়, মানুষের প্রাপ্তির মাঝে সবচেয়ে বড় পাওয়া হল তার শারীরিক সুস্থতা। সুতরাং এই বড় পাওয়াকে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা থেকে রক্ষা করে ভালো রাখা প্রত্যেক সুস্থ মানুষের দায়িত্ব’।[৬]

عَنِ الْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ عَلِّمْنِيْ شَيْئًا أَسْأَلُهُ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ قَالَ سَلِ اللهَ العَافِيَةَ فَمَكَثْتُ أَيَّامًا ثُمَّ جِئْتُ فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ عَلِّمْنِيْ شَيْئًا أَسْأَلُهُ اللهَ فَقَالَ لِيْ يَا عَبَّاسُ يَا عَمَّ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ سَلِ اللهَ العَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ

আব্বাস ইবনু আব্দুল মুত্তালিব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললাম, আপনি আমাকে এমন বিষয়ে বলুন, যা আমি আল্লাহর কাছে চাইব। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আপনি আল্লাহর কাছে সুস্থতা কামনা করুন। কিছুদিন যাওয়ার পর আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি আল্লাহর কাছে চইব এমন কিছু শিখিয়ে দিন। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আপনি আল্লাহর কাছে সুস্থতা কামনা করুন। আমি তৃতীয়বার একই কথা বললাম, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবারও একইভাবে বললেন, আপনি আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখেরাতে সুস্থতা চান।[৭] অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে,

عَنْ أَبِىْ ذَرٍّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ  قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يُصْبِحُ عَلٰى  كُلِّ سُلَامَى مِنْ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ فَكُلُّ تَسْبِيْحَةٍ صَدَقَةٌ وَّكُلُّ تَحْمِيْدَةٍ صَدَقَةٌ وَّكُلُّ تَهْلِيْلَةٍ صَدَقَةٌ وَّكُلُّ تَكْبِيْرَةٍ صَدَقَةٌ وَّأَمْرٌ بِالْمَعْرُوْفِ صَدَقَةٌ وَّنَهْيٌ عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةٌ وَّيُجْزِئُ مِنْ ذَلِكَ رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا مِنَ الضُّحَى

আবূ যার গিফারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সকাল হওয়া মাত্রই তোমাদের প্রত্যেকের প্রত্যেক জোড়ের জন্যই একটি ছাদাক্বাহ করা আবশ্যক হয়। তবে তোমাদের প্রত্যেক তাসবীহই (সুবহানাল্লাহ) ছাদাক্বাহ, প্রত্যেক তাহমীদই (আলহামদুলিল্লাহ) ছাদাক্বাহ, প্রত্যেক তাহলীলই (লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ) ছাদাক্বাহ, প্রত্যেক তাকবীরই (আল্লাহু আকবার) ছাদাক্বাহ এবং সৎ কাজের আদেশ ছাদাক্বাহ এবং অসৎ কাজে নিষেধও ছাদাক্বাহ। অবশ্য দ্বিপ্রহরের সময়ে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করা এ সমস্তের পরিবর্তে যথেষ্ট।[৮]

সুধী পাঠক! একটু চিন্তা করুন যে, এ হাদীছের বাস্তবায়ন আমরা সত্যিই কতটুকু করে থাকি। আমরা কি পেরেছি আমাদের হাত, পা, চোখ, দাঁত কিংবা শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রতিটি গীরার যথাযথ শুকরিয়া আদায় করতে? আমরা কি টাকা-পয়সা অর্থ-সম্পদ এমনকি পুরো দুনিয়ার বিনিময়েও কি একটি চোখ নিয়ে আসতে পারব? বিষয়টি ভেবে দেখার প্রয়োজন নয় কি?

রোগী দেখতে যাওয়া ও সেবা করার ফযীলত

মদীনা থাকাকালীন হাজীদের সেবার অংশ হিসাবে যখন কিং ফাহাদ হাসপাতালে গিয়ে থাকতাম, তখন ব্যতিক্রম একটি দৃশ্য খেয়াল করতাম। প্রতিদিন বিকালে কিছু আরাবী লোক হাসপাতালে রোগী দেখতে আসতেন। আসতেই পারেন, অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্তু তারা ভিন্ন ভিন্ন এসে অনেক রোগীর কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে প্রাণ খুলে দু‘আ করতেন আর বর্তমান অবস্থার কথা জিজ্ঞেস করতেন, ভালো কথা বলে আশার বাণী শুনিয়ে আরেক রোগীর কাছে গিয়ে একইভাবে পূর্বের রোগীর মত জিজ্ঞেস করতেন, পরে আরেক রোগী। একান্ত প্রয়োজন অনুভব করে রোগীর হাতে সবার অজান্তে কিছু অর্থ দিয়ে যেতেন। এভাবে সন্ধ্যার পূর্বেই তারা চলে যেতেন। মাঝে মাঝেই যখন এমন দেখলাম, তখন জানার আগ্রহ হল- এরা কারা বা কেন আসে? উত্তর খুবই সোজা- রোগী দেখা বা তাদের সেবা করার যে ফযীলত তা বাড়ীতে বসে তাসবীহ পাঠ করে কিংবা নফল ছালাত আদায় করে পাওয়া যায় না। তাই তারা স্রেফ রোগী দেখতেই আসতেন যদিও রোগীর মাঝে তাদের কোন আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। এমনকি এর ধারাবাহিকতা বর্তমান সময়ের না; বরং তা এসেছে সোনালী যুগ রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগ থেকেই। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে যেতেন এবং তাঁর সাথে ছাহাবীরাও যেতেন। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলেন আবূ বকর ও ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)। অন্য হাদীছে দেখি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে প্রায় সময় থাকতেন আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু)। একদা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সা‘দ ইবনু উবাদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে দেখতে গেলে তার সাথে আব্দুর রহমান ইবনু আউফ, সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাছ এবং আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) ছিলেন, যারা রোগীর সেবার উদ্দেশ্যেই সেখানে গিয়েছিলেন।[৯]

হাদীছে রোগীর সেবা করাকে মুসলিমদের হক্ব হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কোন ব্যক্তির রোগীকে দেখতে যাওয়া মানে রোগীর প্রতি করুনা নয়; বরং রোগী বেডে শুয়ে শুয়ে পড়শী মুসলিম ভাইয়ের সেবা পাওয়ার হক্বদার। যদি এমন না হয় আর আপনার খোঁজ না নেয়ার কারণে কোন অসুস্থ ব্যক্তি বিপদে পড়ে, তাহলে ক্বিয়ামতের দিন হয়তো আপনাকে এর জন্য খেসারত দিতে হবে। যেমনটি হাদীছে বর্ণিত হয়েছে,

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ حَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ سِتٌّ قِيْلَ مَا هُنَّ يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ إِذَا لَقِيْتَهُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ وَإِذَا دَعَاكَ فَأَجِبْهُ وَإِذَا اسْتَنْصَحَكَ فَانْصَحْ لَهُ وَإِذَا عَطَسَ فَحَمِدَ اللهَ فَسَمِّتْهُ وَإِذَا مَرِضَ فَعُدْهُ وَإِذَا مَاتَ فَاتَّبِعْهُ.

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘মুসলিমের প্রতি মুসলিমের হক ছয়টি। প্রশ্ন করা হল- হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! সেগুলো কী? তিনি বললেন, ১. কারো সাথে তোমার দেখা হলে তাকে সালাম করবে ২. তোমাকে দাওয়াত করলে তা তুমি কবুল করবে ৩. সে তোমার নিকট ভালো উপদেশ চাইলে, তুমি তাকে ভালো উপদেশ দেবে ৪. সে হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বললে, তার জন্য তুমি ইয়ারহামুকাল্লাহ বলে দু‘আ করবে ৫. সে পীড়িত হলে তার সেবা-শুশ্রুষা করবে এবং ৬. সে মৃত্যুবরণ করলে তার জানাযার সাথে যাবে।[১০]

হাদীছে মুসলিমের হকের ব্যাপারে ৪টি, ৫টি আবার ৬টি বলা হলেও ‘রোগীর সেবা’ কথাটি আছেই। রোগী দেখতে যাওয়ার ব্যাপারে ইসলাম যেমন উৎসাহ দিয়েছে, তেমনি মুসলিম ব্যক্তিদের সেবার ব্যাপারে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। কারণ বিষয়টি পরস্পরের সাথে জড়িত। একজন ব্যক্তি আরেকজনের সেবায় এগিয়ে না আসলে সমাজ একদিন বিকল হয়ে যেতে পারে। হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, فُكُّوا الْعَانِىَ يَعْنِى الْأَسِيْرَ وَأَطْعِمُوا الْجَائِعَ وَعُوْدُوا الْمَرِيْضَ ‘তোমরা বন্দী আযাদ কর, ক্ষুধার্তকে আহার্য দাও এবং রোগীর সেবা-শুশ্রƒষা কর’।[১১]

عَنِ الْبَرَاءِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ أَمَرَنَا النَّبِىُّ ﷺ بِسَبْعٍ وَنَهَانَا عَنْ سَبْعٍ أَمَرَنَا بِاتِّبَاعِ الْجَنَائِزِ وَعِيَادَةِ الْمَرِيْضِ وَإِجَابَةِ الدَّاعِىْ وَنَصْرِ الْمَظْلُوْمِ وَإِبْرَارِ الْقَسَمِ وَرَدِّ السَّلَامِ وَتَشْمِيْتِ الْعَاطِسِ. وَنَهَانَا عَنْ آنِيَةِ الْفِضَّةِ وَخَاتَمِ الذَّهَبِ وَالْحَرِيْرِ وَالدِّيْبَاجِ وَالْقَسِّىِّ وَالْإِسْتَبْرَقِ

বারা’ ইবনু ‘আযিব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাতটি বিষয়ে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন এবং সাতটি বিষয়ে আমাদের নিষেধ করেছেন। তিনি আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন- ১. জানাযার অনুগমন করতে ২. রুগ্ন ব্যক্তির খোঁজ-খবর নিতে ৩. দা‘ওয়াত দাতার দা‘ওয়াত গ্রহণ করতে ৪. মাযলূম বা অত্যাচারীকে সাহায্য করতে ৫. কসম হতে দায়মুক্ত করতে ৬. সালামের জবাব দিতে এবং ৭. হাঁচিদাতাকে (ইয়ারহামুকাল্লাহু বলে) সন্তুষ্ট করতে। আর তিনি নিষেধ করেছেন- ১. রৌপ্যের পাত্র ২. স্বর্ণের আংটি ৩. রেশম ৪. দীবাজ ৫. কাস্সী বা রেশম ৬. তসর বা নকশা জাতীয় রেশম ব্যবহার করতে।[১২]

রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রোগী দেখতে যেতেন

কোন ব্যক্তি অসুস্থ হলে তার আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী বা বন্ধু-বান্ধব দেখতে যায়। আমরা যাওয়াটাই স্বাভাবিক মনে করি। কিন্তু খেয়াল করলে বুঝবেন যে, কে কাকে এবং কোন্ পজিশনের ব্যক্তিরা রোগী দেখতে যায়। সাধারণত পদাধিকার বড় কোন ব্যক্তি অসুস্থ হলে তাদেরকে সে মানের লোকেরাই দেখতে যায়। কিন্তু ছোট পদের কোন মুসলিম অসুস্থ হলে খুব কম মানুষই তাদের দেখতে যায়, পরিচর্যার জন্য এগিয়ে যায় বা তাদের সমস্যার সমাধান করে থাকে। কিন্তু অসুস্থ ব্যক্তি কোন সময় ছোট-বড় বিচার করে দেখা হয় না। এমনকি অমুসলিম হলেও পরিচিতি থাকলে তাদের সেবার জন্য এগিয়ে আসা উচিত। ইসলামের শিক্ষা এ ব্যাপারে নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছে। যেমন,

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا يَقُوْلُ مَرِضْتُ مَرَضًا فَأَتَانِى النَّبِىُّ ﷺ يَعُوْدُنِىْ وَأَبُوْ بَكْرٍ وَهُمَا مَاشِيَانِ فَوَجَدَانِىْ أُغْمِىَ عَلَىَّ فَتَوَضَّأَ النَّبِىُّ ﷺ ثُمَّ صَبَّ وَضُوْءَهُ عَلَىَّ فَأَفَقْتُ فَإِذَا النَّبِىُّ ﷺ فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ كَيْفَ أَصْنَعُ فِىْ مَالِىْ كَيْفَ أَقْضِىْ فِىْ مَالِىْ فَلَمْ يُجِبْنِىْ بِشَىْءٍ حَتَّى نَزَلَتْ آيَةُ الْمِيْرَاثِ 

জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি ভীষণভাবে পীড়িত হয়ে গেলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) পায়ে হেঁটে আমার খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য আমার নিকট আসলেন। তাঁরা আমাকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পেলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওযূ করলেন। তারপর তিনি তাঁর অবশিষ্ট পানি আমার শরীরের উপর ছিটিয়ে দিলেন। ফলে আমি জ্ঞান ফিরার পর দেখলাম রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপস্থিত। আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার সম্পদের ব্যাপারে আমি কী করব? আমার সম্পদ সম্পর্কে কীভাবে আমি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব? তিনি তখন আমাকে কোন জবাব দিলেন না। শেষে মীরাছ বা সম্পদ বণ্টন নীতিমালা সংক্রান্ত আয়াত নাযিল হল।[১৩]

সুধী পাঠক! উক্ত হাদীছে দুনিয়ার মুসলিমদের জন্য কল্যাণকর ফায়ছালা পাওয়া গেল যে, মৃত্যুর পর তাদের সম্পদ কীভাবে বণ্টন হবে তার উত্তর। অথচ এর পূর্বে কোন নীতিমালাই ছিল না; বরং ছোট সন্তান রেখে পিতা মারা গেলে চাচারা ইয়াতীম সন্তানদের না দিয়ে তারা নিজে ভাগাভাগি করে নিত। অথবা নামমাত্র তাদের কিছু দিয়ে পুরোটাই তারা ভক্ষণ করত। অসুস্থ রোগীকে দেখতে গিয়েই রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করার ফলেই সূরা আন-নিসার ১১ ও ১২ আয়াত এবং সর্বশেষ ১৭৬নং আয়াত নাযিল হয়।[১৪]

তাছাড়াও ফযীলতের বিষয়ে খেয়াল করা উচিত। সাধারণত মুসলিমরা যে ইবাদতগুলো করে থাকেন, তার মাঝে দুনিয়াতেই জান্নাতী ফল আহরণ করার বিষয় পাওয়া যায় না। এর সাথে সাথে ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলাকে সেবা করার মত মর্যাদা পাওয়া যাবে। হাদীছে এসেছে,

عَنْ ثَوْبَانَ مَوْلَى رَسُوْلِ اللهِ ﷺ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ قَالَ مَنْ عَادَ مَرِيْضًا لَمْ يَزَلْ فِىْ خُرْفَةِ الْجَنَّةِ قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ وَمَا خُرْفَةُ الْجَنَّةِ قَالَ جَنَاهَا

রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুক্ত গোলাম ছাওবান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, কোন মুসলিম তার কোন অসুস্থ মুসলিম ভাইকে দেখতে গেলে সে যতক্ষণ সেখানে থাকে ততক্ষণ যেন জান্নাতের ফল আহরণ করতে থাকে। ছাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, ‘খুরফাহ’ মানে কী? রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, জান্নাতের ফল-ফলাদি সংগ্রহ করা।[১৫]

অমুসলিম রোগীকে দেখতে যাওয়া

রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অমুসলিম প্রতিবেশী অসুস্থ হলে তাকেও দেখতে যেতেন। একদা তিনি পায়ে হেঁটে এক অসুস্থ ইহুদীকে দেখতে গিয়েছিলেন। হাদীছে এসেছে, আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত,

أَنَّ غُلَامًا مِنَ الْيَهُوْدِ كَانَ مَرِضَ فَأَتَاهُ النَّبِىُّ ﷺ يَعُوْدُهُ فَقَعَدَ عِنْدَ رَأْسِهِ فَقَالَ لَهُ أَسْلِمْ. فَنَظَرَ إِلَى أَبِيْهِ وَهُوَ عِنْدَ رَأْسِهِ فَقَالَ لَهُ أَبُوْهُ أَطِعْ أَبَا الْقَاسِمِ فَأَسْلَمَ فَقَامَ النَّبِىُّ ﷺ وَهُوَ يَقُوْلُ الْحَمْدُ لِلهِ الَّذِىْ أَنْقَذَهُ بِىْ مِنَ النَّارِ

‘এক ইহুদী যুবক অসুস্থ হলে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে দেখতে যান। তিনি তার মাথার কাছে বসে বললেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ কর। সে তার পিতার দিকে তাকালো। সেও তার মাথার কাছেই বসা ছিল। তার পিতা তাকে বলল, আবুল ক্বাসিমের কথা মেনে নাও। সে ইসলাম গ্রহণ করল। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখান থেকে উঠে আসার সময় বললেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি তাকে আমার মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিলেন’।[১৬]

উক্ত হাদীছে অসুস্থকে দেখতে যাওয়ার বড় একটি উপকার পাওয়া গেল। মুমূর্ষু ব্যক্তিকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন, যার মাধ্যমে ইসলাম গ্রহণ করে মৃত্যুবরণ করল। এছাড়া রোগীর সেবার মধ্যে উপকার তো রয়েছেই।

(ইনশাআল্লাহ চলবে)


*এম.ফিল গবেষক, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

তথ্যসূত্র :
[১]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৪১২; মিশকাত, হা/৫১৫৫।
[২]. তিরমিযী, হা/২৩৪৬; মিশকাত, হা/৫১৯১; সনদ হাসান, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২৩১৮।
[৩]. ইবনু মাজাহ, হা/২১৪১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩২৭৬; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১৭৬।
[৪]. তিরমিযী, হা/২৫০৩; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/১০২৪৮; মুসতাদরাকু ‘আলাছ ছহীহাইন, হা/৭৮৪৬; মিশকাত, হা/৫১৭৪; সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামে‘, হা/১০৭৭।
[৫]. তিরমিযী, হা/৩৩৫৮; মিশকাত, হা/৫১৯৬, সনদ ছহীহ।
[৬]. যাদুল মা‘আদ, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ১৯৫।
[৭]. তিরমিযী, হা/৩৫১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৮৩, সনদ ছহীহ।
[৮]. ছহীহ মুসলিম, হা/৭২০; মিশকাত, হা/১৩১১।
[৯]. ছহীহ বুখারী, হা/১৩০৪।
[১০]. ছহীহ মুসলিম, হা/২১৬২; মিশকাত, হা/১৫২৫।
[১১]. ছহীহ বুখারী, হা/৩০৪৬।
[১২]. ছহীহ বুখারী, হা/১২৩৯।
[১৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৬৫১।
[১৪]. ইবনু কাছীর, তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ২য় খণ্ড, পৃ. ২২৬।
[১৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৬৮; তিরমিযী, হা/৯৬৭; মিশকাত, হা/১৫২৭।
[১৬]. আবূ দাঊদ, হা/৩০৯৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৩৯৯, সনদ ছহীহ।




প্রসঙ্গসমূহ »: চিকিৎসা
দু‘আ ও যিকর : আল্লাহর অনুগ্রহ ও প্রশান্তি লাভের মাধ্যম - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
ইসলামী জামা‘আতের মূল স্তম্ভ (১২তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন
সালাম প্রদানের গুরুত্ব ও মর্যাদা (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আরিফ হুসাইন
বিদ‘আত পরিচিতি (১৭তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (১১তম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
আশূরায়ে মুহাররম - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
মাযহাবী গোঁড়ামি ও তার কুপ্রভাব (২য় কিস্তি) - অনুবাদ : রিদওয়ান ওবাইদ
পরবর্তীদের তুলনায় সালাফদের ইলমী শ্রেষ্ঠত্ব (৬ষ্ঠ কিস্তি) - অনুবাদ : আযহার বিন আব্দুল মান্নান
ইসলামী পুনর্জাগরণের প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণের উপায় (৮ম কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
ছালাতে একাগ্রতা অর্জনের ৩৩ উপায় - আব্দুল হাকীম বিন আব্দুল হাফীজ
ইসলামে পর্দার বিধান (শেষ কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
যিলহজ্জ মাসের আমল ও তার ফযীলত - মুহাম্মাদ জাহিদুল ইসলাম

ফেসবুক পেজ