বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১:২৭ পূর্বাহ্ন

ইসলামে পর্দার বিধান

-ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর*


(২য় কিস্তি) 

সাধারণত নারীরা স্বামীর অকৃতজ্ঞ

সাধারণত মহিলারা স্বামীর অকৃতজ্ঞ হয়ে থাকে। স্বামীর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে চায় না। অল্পতেই স্বামীকে দোষারোপ করতে থাকে। যাকে তাদের জীবনে ক্ষতির বড় কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

‘কোন এক সময়ে সূর্য গ্রহণের ছালাতের পর ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমরা আপনাকে দেখলাম আপনি এই স্থান হতে কিছু সামনে গেলেন। অতঃপর আবার পিছনে আসলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ‘আমি জান্নাত দেখলাম। আমি সেখান হতে একটি ফলের গোছা নেয়ার ইচ্ছা করছিলাম। আমি যদি একটি গোছা নিতাম, তাহলে তোমরা পৃথিবী বিদ্যমান থাকা পর্যন্ত খেতে। তারপর আমি জাহান্নাম দেখলাম। আজকের মত আশ্চর্য দৃশ্য আর কখন দেখিনি।

وَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ قَالُوْا بِمَ يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ بِكُفْرِهِنَّ قِيْلَ يَكْفُرْنَ بِاللهِ قَالَ يَكْفُرْنَ الْعَشِيْرَ وَيَكْفُرْنَ الْإِحْسَانَ لَوْ أَحْسَنْتَ إِلَى إِحْدَاهُنَّ الدَّهْرَ كُلَّهُ ثُمَّ رَأَتْ مِنْكَ شَيْئًا قَالَتْ مَا رَأَيْتُ مِنْكَ خَيْرًا قَطُّ

‘সেখানে দেখলাম অধিকাংশই নারী। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! এটা কেন? তিনি বললেন, ‘তাদের কুফরীর কারণে’। বলা হল, তারা কি আল্লাহর সাথে কুফুরী করে? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ‘না’, তারা স্বামীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না এবং অনুগ্রহের শুকরিয়া আদায় করে না। তুমি যদি সারা জীবন তাদের সাথে অনুগ্রহ কর, অতঃপর তোমার মধ্যে কোনো কিছু লক্ষ্য করে তারা বলে, আমি তোমার নিকট কখনও কল্যাণ পাইনি’।[১]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ مَا مِنْ رَجُلٍ يَدْعُو امْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهَا فَتَأْبَى عَلَيْهِ إِلاَّ كَانَ الَّذِي فِي السَّمَاءِ سَاخِطًا عَلَيْهَا حَتَّى يَرْضَى عَنْهَا

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘যখন স্বামী স্ত্রীকে (প্রয়োজনে) বিছানায় ডাকে আর স্ত্রী তা অমান্য করে। স্বামী তখন অসন্তুষ্ট অবস্থায় রাত অতিবাহিত করে। ফেরেশতাগণ ঐ স্ত্রীর উপর সকাল পর্যন্ত অভিশাপ করে’। অন্য বর্ণনায় রয়েছে ‘কোন ব্যক্তি যদি তার স্ত্রীকে বিছানায় ডাকে আর স্ত্রী তা অমান্য করে। তাহলে স্বামী স্ত্রীর প্রতি সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ ঐ স্ত্রীর প্রতি রাগানি¦ত থাকেন’।[২]

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي أَوْفَى رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ وَالَّذِيْ نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَا تُؤَدِّي الْمَرْأَةُ حَقَّ رَبِّهَا حَتَّى تُؤَدِّيَ حَقَّ زَوْجِهَا وَلَوْ سَأَلَهَا نَفْسَهَا وَهِيَ عَلَى قَتَبٍ لَمْ تَمْنَعْهُ نَفْسَهَا

আব্দুল্লাহ ইবনু আবী আওফা (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘স্ত্রী ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর হক্ব আদায় করতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার স্বামীর হক্ব আদায় না করবে। যদি স্বামী উটের গদির উপর থাকা অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সহবাসের ইচ্ছা প্রকাশ করে, তবুও স্ত্রীকে সম্মতি প্রকাশ করতে হবে’।[৩]

عَنْ عَبْدُ اللهِ بْنِ عَمْرٍو  رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَا يَنْظُرُ اللهُ إِلى إِمْرَأةٍ لَا تَشْكُرُ لِزوْجِهَا وَهِيَ لَا تَسْتَغْنيِْ عَنْهُ

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘আল্লাহ সে মহিলার দিকে করুণার দৃষ্টি দেন না, যে স্বামীর শুকরিয়া আদায় করে না। আর সে স্বামীকে নিজের জন্য পরিপূর্ণ (যথেষ্ট) মনে করে না’।[৪]

স্বামীর অনুগত হওয়া প্রতিটি স্ত্রীর কর্তব্য। স্বামীর সন্তুষ্টির উপর তার অনেক কিছুই নির্ভর করে। স্বামীকে সর্বদা সন্তুষ্ট রাখার জন্য সচেষ্ট থাকা উচিত। অন্যথা তার পরিণাম হবে খুবই ভয়াবহ। স্বামী যখন স্বীয় প্রয়োজনে কাছে ডাকবে তখনই সাড়া দেয়া তার কর্তব্য। স্বামীর হক্ব আদায় ব্যতীত সে আল্লাহর হক্ব আদায়ে সফল হবে না। তবে অবৈধ বিষয়ে স্বামীর আনুগত্য করা থেকে স্ত্রীকে বিরত থাকতে হবে। কেননা স্রষ্টার অবধ্যতায় সৃষ্টির আনুগত্য করা বৈধ নয়।

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ لَوْ كُنْتُ أُمِرَ أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لِأَحَدٍ لَاَمَرْتُ الْمَرْأَةَ أَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘আমি যদি কোন ব্যক্তিকে কারো জন্য সিজদা করতে বলতাম, তবে স্ত্রীকেই তার স্বামীকে সিজদা করার জন্য আদেশ করতাম’।[৫]

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ لَا يَحِلُّ لِلْمَرْأَةِ أَنْ تَصُوْمَ وَزَوْجُهَا شَاهِدٌ إِلَّا بِإِذْنِهِ وَلَا تَأْذَنَ فِيْ بَيْتِهِ إِلَّا بِإِذْنِهِ

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘কোন স্ত্রীর জন্য স্বামীর অনুমতিবিহীন নফল ছিয়াম পালন করা বৈধ নয় এবং স্বামীর অনুমতি বিহীন কোন ব্যক্তিকে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেয়াও বৈধ নয়’।[৬]

عَنِ الْحُصَيْنِ بْنِ مِحْصَنٍ أَنَّ عَمَّةً لَهُ أَتَتْ النَّبِيَّ ﷺ فِيْ حَاجَةٍ فَفَرَغَتْ مِنْ حَاجَتِهَا فَقَالَ لَهَا النَّبِيُّ ﷺ أَذَاتُ زَوْجٍ أَنْتِ قَالَتْ نَعَمْ قَالَ كَيْفَ أَنْتِ لَهُ قَالَتْ مَا آلُوهُ إِلَّا مَا عَجَزْتُ عَنْهُ قَالَ فَانْظُرِيْ أَيْنَ أَنْتِ مِنْهُ فَإِنَّمَا هُوَ جَنَّتُكِ وَنَارُكِ

হুছাইন ইবনু মিহছান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমার ফুফু আমার নিকট হাদীছ বর্ণনা করেন যে, কোন প্রয়োজনে আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে আসলাম। অতঃপর নবী (ﷺ) বললেন, ‘হে ওমুক মহিলা! তোমার স্বামী আছে কি? আমি বললাম, হ্যাঁ আছে। তিনি বললেন, তুমি তার জন্য কেমন? সে বলল, আমি তার আনুগত্য ও খিদমতে কমতি করি না। তবে আমি তার পক্ষ থেকে কমতি পাই। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তুমি অপেক্ষা কর, তুমি তার মাধ্যমে কোথায় যাবে? কেননা সে তোমার জান্নাত এবং জাহান্নাম’।[৭]

عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ لَا تُؤْذِيْ امْرَأَةٌ زَوْجَهَا فِي الدُّنْيَا إِلَّا قَالَتْ زَوْجَتُهُ مِنَ الْحُوْرِ الْعِيْنِ لَا تُؤْذِيْهِ قَاتَلَكِ اللهُ فَإِنَّمَا هُوَ عِنْدَكِ دَخِيْلٌ يُوْشِكُ أَنْ يُفَارِقَكِ إِلَيْنَا

মু‘আয ইবনু জাবাল (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন, ‘যখন কোন নারী তার স্বামীকে দুনিয়াতে কষ্ট দেয়, তখন জান্নাতের হূরদের মধ্যে যে তার স্ত্রী হবে সে বলে, হে (অভাগিনী)! তুমি তাকে কষ্ট দিও না। আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করুন। তিনি তোমার কাছে পরবাসী। অল্প দিনের মধ্যেই তিনি তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবেন’।[৮]

স্বামীর বিষয়ে কতটা সজাগ হওয়া দরকার তা হাদীছগুলোতে ফুঠে উঠেছে। স্বামীর বাড়ীতে থাকা অবস্থায় তার অনুমতি ব্যতীত স্ত্রীর নফল ছালাত বা নফল ছিয়াম পালন করাও বৈধ নয়। এগুলো তার অনুমতি সাপেক্ষে করতে হবে। তার অনুপস্থিতিতে বিষয়টি ভিন্ন। স্বামীর চাহিদার দিকে স্ত্রীকে কতটা খেয়াল রাখতে ইসলামে বলা হয়েছে তা সহজেই বুঝা যায়। স্বামীকে স্ত্রীর জন্য জান্নাতে অথবা জাহান্নামে যাওয়ার মাধ্যম হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। স্বামীর হৃদয়ে কথায় বা কর্মে কষ্ট দেয়া উচিত নয়।

বাহিরে সুগন্ধি ব্যবহারকারিণী ব্যভিচারিণী

একজন মুসলিম নারীর সাজগোজ স্বীয় স্বামীর জন্যই। স্বামীর নিকট ইচ্ছামত বৈধ প্রসাধনী ব্যবহার করবে। বিভিন্ন সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবে। তবে বাড়ীর বাহিরে বের হলে তাদের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা নিষেধ।

عَنِ أَبِيْ مُوْسَى رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ كُلُّ عَيْنٍ زَانِيَةٌ وَ إِنَّ الْمَرَأةَ إِذَا اسْتَعْطَرَتْ فَمَرَّتْ بِالْمَجْلِسِ فَهِيَ كَذَا وَكَذَا يَعْنِيْ زَانِيَةٌ

আবূ মূসা আশ‘আরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘প্রত্যেক দৃষ্টি ব্যভিচারী। আর যে নারী সুগন্ধি ব্যবহার করে মানুষের পাশ দিয়ে চলাচল করে, সে ব্যভিচারিণী মহিলার ন্যায়’।[৯]

عَنْ أَبِى مُوسَى رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ ﷺ قَالَ إِذَا اسْتَعْطَرَتِ الْمَرْأَةُ فَمَرَّتْ عَلَى الْقَوْمِ لِيَجِدُوْا رِيحَهَا فَهِىَ كَذَا وَكَذَا قَالَ قَوْلًا شَدِيْدًا

আবূ মূসা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘নারীরা যখন সুগন্ধি লাগিয়ে জনসমাজকে এর গন্ধ বিলানোর জন্য তাদের পাশ দিয়ে যাতায়াত করে, একথা বলে তিনি একটি কঠোর মন্তব্য করেন’।[১০]

মহিলারা সেন্ট বা সুগন্ধি ব্যবহার করে বাহিরে যেতে পারবে না। অন্য পুরুষ তাদের ব্যবহৃত সুগন্ধি অনুভব করলে তা হবে অপরাধ। এরূপ নারীকে ব্যভিচারিণীর সাথে তুলনা করা হয়েছে। অপর হাদীছে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ أَيُّمَا امْرَأَةٍ تَطَيَّبَتْ ثُمَّ خَرَجَتْ إِلَى الْمَسْجِدِ لَمْ تُقْبَلْ لَهَا صَلَاةٌ حَتَّى تَغْتَسِلَ

আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘যে মহিলা সেন্ট ব্যবহার করে মসজিদে যায়, সেই মহিলার গোসল না করা পর্যন্ত কোন ছালাত কবুল হবে না’।[১১]

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কর্তৃক বর্ণিত, একদা চাশতের সময় তিনি মসজিদ থেকে বের হলেন। দেখলেন, একটি মহিলা মসজিদে প্রবেশে উদ্যত। তার দেহ বা লেবাস থেকে উৎকৃষ্ট সুগন্ধির সুবাস ছড়াচ্ছিল। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) মহিলাটির উদ্দেশ্যে বললেন, আলাইকিস সালাম। মহিলাটি সালামের উত্তর দিল। তিনি তাকে প্রশ্ন করলেন, কোথায় যাবে তুমি? সে বলল, মসজিদে। বললেন, তুমি কী জন্য এমন সুগন্ধি মেখেছ? বলল, মসজিদের জন্য। বললেন, আল্লাহর কসম? বললেন, আল্লাহর কসম। পুনরায় বললেন, আল্লাহর কসম? তখন তিনি বললেন, তবে কেন! আমাকে আমার প্রিয়তম আবুল কাসেম (ﷺ) বলেছেন যে, ‘সেই মহিলার কোন ছালাত কবুল হয় না, যে তার স্বামী ছাড়া অন্য কারোর জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করে; যতক্ষণ না সে নাপাকীর গোসল করার মতো গোসল করে নেয়’। অতএব তুমি ফিরে যাও, গোসল করে সুগন্ধি ধুয়ে ফেল। তারপর ফিরে এসে ছালাত পড়’।[১২]

বাড়ীর বাইরে সাধারণভাবে নারীদের বের হতে হবে। কোন ধরনের সুগন্ধি এ সময় ব্যবহার করা যাবে না। এমনকি ছালাতের জন্য মসজিদে আসলেও তারা সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবে না। কেউ সুগন্ধি ব্যবহার করে বের হলে তা ধুয়ে ফেলতে হবে। অন্যথায় তারা পাপী হবে এবং ছালাত কবুল হবে না। বহুরূপী সেন্ট বা বডি স্প্রে ব্যবহারকারী নারীরা সাবধান হোন। আপনার ব্যবহৃত সামান্য সুগন্ধি যেন জাহান্নামের কারণ হয়ে না দাড়ায়।

নারী পুরুষদের জন্য ভয়ংকর ফিতনা

একজন নারী পুরুষের জন্য ভয়ংকর ফিতনা স্বরূপ। নারীকে ব্যবহার করে পুরুষকে পাপে জড়ানো খুব সহজ। পুরুষের ঈমান নষ্ট করা নারীদের মাধ্যমে যত সহজ অন্য কোন মাধ্যমে তত সহজ নয়। পৃথিবীর বহু বিপর্যয়ের সাথে নারীঘটিত কারণ জড়িত। তাই ইসলামী শরী‘আতে নারীদের বিষয়ে অত্যাধিক সাবধানতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ ﷺ قَالَ إِنَّ الدُّنْيَا حُلْوَةٌ خَضِرَةٌ وَإِنَّ اللهَ مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيْهَا فَيَنْظُرُ كَيْفَ تَعْمَلُوْنَ فَاتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاءَ فَإِنَّ أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِى إِسْرَائِيْلَ كَانَتْ فِى النِّسَاءِ

আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘... তোমরা দুনিয়া এবং নারীদের থেকে সাবধান থাক। কারণ নিশ্চয় বনী ইসরাঈলের প্রথম দুর্ঘটনা নারীদের মধ্যেই ঘটে’।[১৩] অপর বর্ণনায় রয়েছে-

عَنْ أًسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَا تَرَكْتُ بَعْدِيْ فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنَ النِّسَاءِ

উসামা ইবনু যায়েদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘আমি আমার পরে এমন কোন জটিল সমস্যা ত্যাগ করিনি, পুরুষদের জন্য বেশি ক্ষতিকারক হতে পারে নারীদের চেয়ে’।[১৪]

আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, একবার ঈদুল আযহা অথবা ঈদুল ফিতরের ছালাত আদায়ের জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ঈদগাহের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি মহিলাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেন, ‘হে মহিলা সমাজ! তোমরা ছাদাক্বাহ করতে থাক। কারণ আমি দেখছি জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে তোমরাই অধিক। তারা জিজ্ঞেস করলেন, কী কারণে, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! তিনি বললেন, তোমরা অধিক পরিমাণে অভিশাপ দিয়ে থাক আর স্বামীর অকৃতজ্ঞ হও। বুদ্ধি ও দ্বীনের ব্যাপারে ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও একজন সদাসতর্ক ব্যক্তির বুদ্ধি হরণে তোমাদের চেয়ে পারদর্শী আমি আর কাউকে দেখিনি। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমাদের দ্বীন ও বুদ্ধির ত্রুটি কোথায়? তিনি বললেন, একজন মহিলার সাক্ষ্য কি একজন পুরুষের সাক্ষ্যের অর্ধেক নয়? তারা উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, এ হচ্ছে তাদের বুদ্ধির ত্রুটি। আর ঋতু অবস্থায় তারা কি ছালাত ও ছিয়াম হতে বিরত থাকে না? তারা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, এ হচ্ছে তাদের দ্বীনের ত্রুটি’।[১৫]

হাদীছগুলোতে স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, নারীর চেয়ে ভয়ংকর ফিতনা পুরুষের জীবনে আর নেই। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বাণী কখনো মিথ্যা হতে পারে না। পুরুষের পরীক্ষার জন্য বা বিপদে ফেলার জন্য নারী সবচেয়ে বড় অস্ত্র। একজন বিজ্ঞ-সচেতন পুরুষকে নারী যত দ্রুত তার বশে আনতে পারে পৃথিবীতে তা আর কেউ পারে না। নারী পুরুষের জ্ঞান-বুদ্ধি বিকল করে ফেলতে পারে। তাকে ইচ্ছা মতো তার পিছনে পিছনে ঘুরাতে পারে। প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাকে সবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে। তার মোহিনী জালে যে কাউকে আটকে ফেলতে পারে। আল্লাহ যাকে হেফাযত করবেন তা ভিন্ন কথা। বিধায় তাদের থেকে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।

عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ إِيَّاكُمْ وَالدُّخُوْلَ عَلَى النِّسَاءِ فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ الأَنْصَارِ يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ أَفَرَأَيْتَ الْحَمْوَ قَالَ الْحَمْوُ الْمَوْتُ

উক্ববা ইবনু আমের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘তোমরা নারীদের নিকট যাওয়া থেকে সাবধান থাক। একজন ছাহাবী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! দেবর সম্পর্কে কী বলছেন? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ‘দেবর মরণ সমতুল্য’।[১৬]

প্রত্যেক বেগানা পুরুষকে নারীদের ব্যাপারে সাবধান থাকতে বলা হয়েছে। যেন তাদের মধ্যে কোন ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে। এমনকি দেবরকে ভাবির বিষয়ে সাবধান করে দেয়া হয়েছে। ভাসুরকেও ছোট ভাইয়ের বৌয়ের ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে। দেবর-ভাবীর মধ্যে হাস্য-রসের সম্পর্ক ইসলামে নিন্দনীয়। এরূপ অবস্থায় ভাবীকে অবশ্যই দেবর থেকে পর্দা করতে হবে। যথাসম্ভব সাবধানে তার সামনে চলাফেরা করতে হবে। অন্যথা যে কোন সময় বড় ধরনের বিপদ ঘটতে পারে।

(ইনশাআল্লাহ চলবে)


* পরিচালক, ইয়াসিন আলী সালাফী মাদরাসা, রাজশাহী।

তথ্যসূত্র :
[১]. ছহীহ বুখারী, হা/২৯, ১০৫২; ছহীহ মুসলিম, হা/৯০৭; নাসাঈ, হা/১৪৯৩; মুওয়াত্ত্বা মালেক, হা/৬৪০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৭১১; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/২৮৩২; মিশকাত, হা/১৪৮২।
[২]. ছহীহ বুখারী, হা/৩২৩৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৩৬; ছহীহুল জামে‘, হা/৭০৮০; বুলুগুল মারাম, হা/১০২১; ছহীহ আত-তারগীব, হা/১৯৪৭; মিশকাত, হা/৩২৪৬।
[৩]. ইবনু মাজাহ, হা/১৮৫৩; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৪১৭১; ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/৫০৮৪; মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক, হা/২০৫৯৬; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১২০৩; হাদীছ ছহীহ।
[৪]. মুসনাদে বাযযার, হা/২৩৪৯; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হা/৭৬৪৮; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২৮৯;, সনদ ছহীহ।
[৫]. তিরমিযী, হা/১১৫৯; ইবনু মাজাহ, হা/১৮৫৩, সনদ ছহীহ।
[৬]. ছহীহ বুখারী, হা/৫১৯৫; ছহীহ মুসলিম, হা/১০২৬; ।
[৭]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯০২৫; ত্বাবারাণী, মু‘জামুল কাবীর, হা/৪৪৮; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২৬১২ ও ১৯৩৪, সনদ ছহীহ।
[৮]. তিরমিযী, হা/১১৭৪; মিশকাত, হা/৩২৫৮, সনদ ছহীহ।
[৯]. আবূ দাঊদ, হা/৪১৭৩; তিরমিযী, হা/২৭৮৬; মিশকাত হা/১০৬৫, সনদ ছহীহ।
[১০]. আবূ দাঊদ, হা/৪১৭৩; ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ, হা/১৬৮১; ছহীহুল জামে‘, হা/২৭৮১, সনদ হাসান।
[১১]. ইবনু মাজাহ, হা/৪০০২; সনদ ছহীহ।
[১২]. আবূ দাঊদ, হা/৪১৭৪; নাসাঈ, হা/৫১২৭; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১০৩১, সনদ ছহীহ।
[১৩]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৪২; মিশকাত, হা/৩০৮৬।
[১৪]. ছহীহ বুখারী, হা/৫০৯৬; ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৪০; মিশকাত, হা/৩০৮৫।
[১৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৩০৪; ছহীহ মুসলিম, হা/৭৯; মিশকাত, হা/১৯।
[১৬]. ছহীহ বুখারী, হা/৫২৩২; ছহীহ মুসলিম, হা/৫৮০৩।




প্রসঙ্গসমূহ »: পর্দা-হিজাব বিধি-বিধান
ইসলামী জামা‘আতের মূল স্তম্ভ (৫ম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন
সূদ-ঘুষ ও অবৈধ ব্যবসা (৪র্থ কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
আধুনিক যুগে দাওয়াতী কাজের পদ্ধতি (শেষ কিস্তি) - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
ক্যারিয়ার : শিক্ষক নিবন্ধনের প্রস্তুতির ধরন ও বিষয়াবলী - ড. মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ
ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ১১ রাক‘আতের নির্দেশ দিয়েছিলেন (শেষ কিস্তি) - ব্রাদার রাহুল হোসেন (রুহুল আমিন)
ছালাতে একাগ্রতা অর্জনের ৩৩ উপায় (৩য় কিস্তি) - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
ফাযায়েলে কুরআন (২য় কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
তাওহীদ প্রতিষ্ঠার উপায় (৫ম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
যিলহজ্জ মাসের আমল ও তার ফযীলত - মুহাম্মাদ জাহিদুল ইসলাম
সূদ-ঘুষ ও অবৈধ ব্যবসা (শেষ কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ছালাতে একাগ্রতা অর্জনের ৩৩ উপায় (৬ষ্ঠ কিস্তি) - আব্দুল হাকীম বিন আব্দুল হাফীজ
ইসলামী জামা‘আতের মূল স্তম্ভ (১৩তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন

ফেসবুক পেজ