রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২৮ পূর্বাহ্ন

ইখলাছই পরকালের জীবনতরী

-আব্দুল গাফফার মাদানী*


 (৫ম কিস্তি) 

ইখলাছ অর্জনের উপায়

১. আল্লাহর যথাযথ সম্মান প্রদর্শন

আল্লাহর মহত্ত্ব, পূর্ণতা ও মহিমা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করার মাধ্যমে ইখলাছ অর্জন করা যায়। তিনি হলেন মহিয়ান, সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাবান, দৃষ্টি শক্তি খেয়ানতের এবং অন্তরে যা আছে সে সম্পর্কে সর্বজ্ঞাতা। তাঁরই হাতে উপকার-অপকার, তিনি একক তাঁর কোন শরীক নেই। তিনি যা চান তাই হয় আর যা চান না তা হয় না। আমরা যা প্রত্যক্ষ করি তা আল্লাহর পক্ষ থেকে দয়া, অনুগ্রহ ও ইহসান মাত্র। বান্দার অস্তিত্ব আল্লাহর পক্ষ থেকে এক মহান দান, যা সে নিজে তার কাছে চায়নি বা সে আল্লাহ ছাড়া এমনিতেই অস্তিত্ব পায়নি। বরং তার একজন মহান স্রষ্টা আছেন। প্রত্যেকটি নে‘আমত, কল্যাণ, বদান্যতা এবং অনুগ্রহ সব কিছু তাঁর পক্ষ থেকে। তাই আল্লাহ বলেন,

وَ اِنۡ تَعُدُّوۡا نِعۡمَتَ اللّٰہِ لَا تُحۡصُوۡہَا ؕ اِنَّ الۡاِنۡسَانَ  لَظَلُوۡمٌ  کَفَّارٌ

‘তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। মানুষ অবশ্য অতি মাত্রায় যালিম, অকৃতজ্ঞ’ (সূরা ইবরাহীম: ৩৪)। অতএব তাঁর হক্ব আমাদের প্রতি মহান। বান্দা তাঁর সে হক্ব পূরণ করতে খুবই দুর্বল ও অপারগ। সে তাঁর নে‘মতের  কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করবে অধিক পরিমাণে। অন্যথা আল্লাহ তা‘আল অকৃতজ্ঞদের জন্য শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

لَئِنۡ شَکَرۡتُمۡ لَاَزِیۡدَنَّکُمۡ  وَ لَئِنۡ کَفَرۡتُمۡ  اِنَّ عَذَابِیۡ لَشَدِیۡدٌ

‘তোমরা কৃতজ্ঞ হলে তোমাদেরকে অবশ্যই অধিকহারে প্রদান করা হবে আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমার শাস্তি হবে কঠোর’ (ইবরাহীম ৭)। আর বেশি বেশি শুকর আদায় করলে ঈমান শক্তিশালী হয় এবং বান্দার ইখলাছ ও মনোযোগ তার সৃষ্টিকর্তার প্রতি বৃদ্ধি হতে থাকে।

২. ইখলাছের জ্ঞানার্জন

ইখলাছ অর্জনের অন্যতম উপায় হল- তার বাস্তব জ্ঞান অর্জন করা এবং সেই বিষয়গুলো অবগত হওয়া। অতঃপর যেগুলোর মাধ্যমে তা দূর হয়ে যায় কিংবা তা পূর্ণতার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো বাধা হয়ে দাঁড়ায় সেগুলো থেকে বিরত থাকা।[১] এ কারণে আহলুল ইলম তথা জ্ঞানীরা নিয়ত সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছেন। ইয়াহইয়া ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, تَعَلَّمُوا النِّيَّةَ فَإِنَّهَا أَبْلَغُ مِنَ الْعَمَلِ ‘তোমরা নিয়তের জ্ঞানার্জন কর। কেননা তা আমলের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ’।[২] আব্দুর রহমান মাক্বদেসী (রাহিমাহুল্লাহ) (৫৯৭-৬৮৩ হি.) বলেন,

وَلَيْتَ شَعْرِىْ، كَيْفَ تَصْلُحُ نِيَّةُ مَنْ لَا يَعْرِفُ حَقِيْقَةَ النِّيَّةِ؟ أَوْ كَيْفَ يُخْلِصُ مَنْ صَحَّحَ النِيَّةَ إِذَا لَمْ يَعْرِفْ حَقِيْقَةَ الْإِخْلَاصِ؟ أَوْ كَيْفَ يُطَالِبُ الْمُخِلِصُ نَفْسَهُ بِالصِّدْقِ إِذَا لَمْ يَتَحَقَّقْ مَعْنَاهُ؟ فَالْوَظِيْفَةُ الْأُوْلَى عَلَى عَبْدٍ أَرَادَ طَاعَةَ اللهِ تَعَالَى أَنْ يَّعْلَمَ النِّيَّةَ أَوَّلًا لِتَحْصُلَ لَهُ الْمعْرِفَةُ، ثُمَّ يَصِحِّحُهَا بِالْعَمَلِ بَعْدَ فَهْمِ حَقِيْقَةِ الصِّدْقِ وَالْإِخْلَاصِ الَّذَيْنَ هُمَا وَسِيْلَتَانِ لِلْعَبْدِ إِلَى النَّجَاةِ

‘হায় আফসোস! যে ব্যক্তি নিয়তের বাস্তব পরিচয়-ই জানে না তার নিয়ত কিভাবে পরিশুদ্ব হবে? অথবা যার নিয়ত শুদ্ধ রয়েছে; কিন্তু ইখলাছ কী জিনিস তা জানে না, সে কিভাবে মুখলিছ হতে পারে? কিংবা মুখলিছ ব্যক্তি কিভাবে নিজেকে সত্যবাদী মনে করতে পারে; অথচ (তার নিকট) সততার অর্থই সুস্পষ্ট নয়? সুতরাং আল্লাহর আনুগত্যকামী প্রত্যেক বান্দার প্রধান কর্তব্য হল- প্রথমে নিয়ত সম্পর্কে ভালোভাবে জ্ঞানার্জন করা। অতঃপর বান্দার নাজাতের অন্যতম মাধ্যম সততা ও ইখলাছের যথাযথ পরিচয় বুঝে আমলের মাধ্যমে নিয়তকে পরিশুদ্ধ করা’।[৩]

৩. ইখলাছপূর্ণ ইবাদতের ছওয়াব এবং ইখলাছবিহীন আমলের শাস্তির কথা স্মরণ করা

বান্দার উচিত কুরআন-সুন্নাহতে বর্ণিত ইখলাছের বিভিন্ন ফযীলতের কথা স্মরণ করা। এতে তার ইখলাছ বৃদ্ধি পাবে। যেমন- ইছলাছ আমল কবুলের অন্যতম শর্ত এবং জান্নাত লাভের একমাত্র অবলম্বন। অন্যদিকে শয়তানের ষড়যন্ত্র ও কুমন্ত্রণা থেকে নিরাপদের মাধ্যম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

قَالَ رَبِّ بِمَاۤ  اَغۡوَیۡتَنِیۡ لَاُزَیِّنَنَّ  لَہُمۡ فِی الۡاَرۡضِ  وَ لَاُغۡوِیَنَّہُمۡ  اَجۡمَعِیۡنَ- اِلَّا عِبَادَکَ  مِنۡہُمُ  الۡمُخۡلَصِیۡنَ

‘সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি যে আমাকে বিপদগামী করলেন তার জন্য আমি পৃথিবীতে মানুষের নিকট পাপকর্মকে অবশ্যই শোভনীয় করে তুলব এবং আমি তাদের সকলকেই বিপদগামী করব। তবে তাদের মধ্যে আপনার নির্বাচিত বান্দাগণ ব্যতীত’ (সূরা আল-হিজর: ৩৯-৪০)। অন্যত্র তিনি বলেন,

اِنَّکُمۡ  لَذَآئِقُوا  الۡعَذَابِ  الۡاَلِیۡمِ- وَ مَا تُجۡزَوۡنَ  اِلَّا مَا کُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ- اِلَّا عِبَادَ  اللّٰہِ  الۡمُخۡلَصِیۡنَ- اُولٰٓئِکَ لَہُمۡ  رِزۡقٌ  مَّعۡلُوۡمٌ- فَوَاکِہُ ۚ وَ  ہُمۡ  مُّکۡرَمُوۡنَ - فِیۡ   جَنّٰتِ  النَّعِیۡمِ - عَلٰی  سُرُرٍ  مُّتَقٰبِلِیۡنَ

‘তোমরা অবশ্যই মর্মান্তিক শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করবে এবং তোমরা যা করতে তারই প্রতিফল পাবে। তবে তারা নয়, যারা আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা। তাদের জন্য আছে নির্ধারিত রিযিক্ব। ফলমূল আর তারা হবে সম্মানিত। সুখ-কাননে। তারা সেখানে মুখোমুখি হয়ে আসনে বসে থাকবে’ (সূরা আছ-ছাফ্ফাত: ৩৮-৪৪)। রাসূল (ﷺ) বলেন,

إِنَّ اللهَ لَا يَقْبَلُ مِنَ الْعَمَلِ إِلَّا مَا كَانَ لَهُ خَالِصًا وَابْتُغِيَ بِهِ وَجْهُهُ

‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা কোন আমল কবুল করেন না একমাত্র তাঁর একনিষ্ঠ ও সন্তুষ্টির নিয়ত ব্যতীত’।[৪]

সাথে সাথে ইখলাছ শূন্যতার শাস্তির কথা চিন্তা করতে হবে। যে কারণে বান্দার আমল বরবাদ হয়ে যায়, জাহান্নামে প্রবেশের কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং ইহকাল ও পরকালের আযাবের মাধ্যম হয়ে থাকে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

مَنۡ کَانَ یُرِیۡدُ الۡحَیٰوۃَ  الدُّنۡیَا وَ زِیۡنَتَہَا نُوَفِّ اِلَیۡہِمۡ اَعۡمَالَہُمۡ فِیۡہَا وَ ہُمۡ  فِیۡہَا  لَا  یُبۡخَسُوۡنَ- اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ لَیۡسَ لَہُمۡ فِی الۡاٰخِرَۃِ  اِلَّا النَّارُ ۫ۖ وَ  حَبِطَ مَا صَنَعُوۡا  فِیۡہَا وَ  بٰطِلٌ  مَّا  کَانُوۡا  یَعۡمَلُوۡنَ

‘যারা পার্থিব জীবন ও তার শোভা কামনা করে, দুনিয়াতে আমি তাদের কর্মের পূর্ণফল দান করি এবং সেথায় তাদেরকে কম দেয়া হবে না। তাদের জন্য আখেরাতে আগুন ব্যতীত অন্য কিছুই নেই এবং তারা যা করে আখেরাতে তা নিষ্ফল হবে এবং তাদের আমল নিরর্থক হয়ে যাবে’ (সূরা হূদ: ১৫-১৬)।

৪. নফসের পর্যবেক্ষণ ও সাধনা

কোন আমল করার পূর্বে আত্নাপর্যালোচনা খুবই যরূরী। নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে যে, এ আমলের উদ্দেশ্য কি? যদি সেক্ষেত্রে নিয়ত পরিশুদ্ধ থাকে, তাহলে অগ্রসর হবে। আর বিশুদ্ধ না থাকলে তা পরিশুদ্ধ করে ঐ আমলের দিকে এগিয়ে যাবে। আর এটিই হচ্ছে সালাফদের নীতি। তাই হাসান বাছরী (রাহিমাহুল্লাহ) (২১-১১০ হি.) বলেন,

كانَ الرَّجُلُ إذا هَمَّ بِصَدَقَةٍ تَثَبَّتَ، فَإنْ كانَ لِلَّهِ أمْضى، وإنْ خالَطَهُ شَيْءٌ مِنَ الرِّياءِ أمْسَكَ

‘যখন কোন ব্যক্তি ছাদাক্বার ইচ্ছা পোষণ করতেন, তখন তার নিয়ত স্থির করতেন। যদি তা শুধু আল্লাহর জন্যই হত; তখন তা বাস্তবায়ন করতেন। পক্ষান্তরে ঐ আমলে লৌকিকতার কোন সংমিশ্রণ থাকলে তা থেকে বিরত থাকতেন’।[৫] তবে রিয়ার আশঙ্কায় কোন কাজ পুরোপুরি ছেড়ে দেয়া যাবে না। বরং প্রত্যেকটি কাজ ইখলাছের সাথে বাস্তবায়ন করাই মুখ্য উদ্দেশ্য। একদা নাফে‘ ইবনু জুবাইরকে বলা হল, ‘আপনি কি জানাযায় শরীক হবেন না? তিনি বললেন, আমার নিয়তটা স্থির করতে দাও! এরপর তিনি তা সম্পাদন করলেন’।[৬]

৫. আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা

বান্দা তার প্রয়োজন আল্লাহর নিকট প্রকাশ করবে এবং বেশি বোশ দু‘আ করবে, যেন তিনি তাকে ইখলাছ অর্জনে তাওফীক্ব দান করেন। কেননা তিনিই তো অন্তর পরিবর্তনকারী, এ জন্য তাঁর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা ইখলাছ অর্জনের একমাত্র উপায়। এ কারণে আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি প্রত্যহ

اِیَّاکَ نَعۡبُدُ وَ اِیَّاکَ نَسۡتَعِیۡنُ

বারংবার বলতে ফরয করে দিয়েছেন।

ইখলাছ বাস্তবায়ন এবং শিরক থেকে মুক্তিলাভের জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনার ভূমিকা অপরিসীম। এ প্রসঙ্গে ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-এর দু‘আ উল্লেখযোগ্য। তিনি দু‘আ করতেন, وَّ اجۡنُبۡنِیۡ وَ بَنِیَّ  اَنۡ نَّعۡبُدَ  الۡاَصۡنَامَ  ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে মূর্তিপূজা থেকে দূরে রাখুন’ (সূরা ইবরাহীম: ৩৫)।

আবূ মূসা আশ‘আরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের সম্মুখে ভাষণ দিলেন। অতঃপর তিনি বলেন, হে মানব সকল! তোমরা শিরককে ভয় কর। কেননা নিশ্চয় তা পিপীলিকার পথ চলার চেয়েও সূক্ষ্ম। অতঃপর জনৈক ব্যক্তি তাকে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! যেহেতু তা পিপীলিকার পথ চলার চেয়েও সূক্ষ্ম, সেহেতু আমরা কিভাবে তা থেকে বেঁচে থাকব? রাসূল (ﷺ) বললেন, তোমরা এই দু‘আটি পড়বে,

اَللَّهُمَّ إِنَّا نَعُوْذُ بِكَ مِنْ أَنْ نُشْرِكَ بِكَ شَيْئًا نَعْلَمُهُ وَنَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لَا نَعْلَمُ

‘হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে এমন শিরক থেকে পানাহ চায়, যেটা আমরা জানি এবং ঐ শিরক থেকে আমরা ক্ষমা প্রার্থনা করি যা আমরা জানি না’।[৭]

৬. বেশি বেশি সৎ কাজ করা

শয়তানের কামনা হল- বান্দারা যাতে পুরোপুরি আমল করা থেকে বিরত থাকে কিংবা আমল করলেও যেন সেটা সঠিক পদ্ধতি অনুপাতে না করতে পারে। কিন্তু শয়তান যখন বুঝতে পারে যে, তার কুমন্ত্রণা কোন কাজে আসছে না, বান্দা তার আনুগত্য করছে না, বরং তার ইখলাছ ও ইবাদত বৃদ্ধি পাচ্ছে; তখন সে তার শয়তানী কাজ থেকে বিরত থাকে, যেন বান্দা ইবাদত বেশী না করে। ইবরাহীম তামীমী বলেন,

إِنَّ الشَّيْطَانَ لَيَدَعُو الْعَبْدَ إِلَى الْبَابِ مِنَ الْإِثْمِ فَلَا يُطِعْهُ وَلِيُحْدِثْ عِنْدَ ذَالِكَ خَيْرًا- فَإِذَا رَاهُ كَذَالِكَ تَرَكَهُ

‘নিশ্চয় শয়তান বান্দাকে পাপের দিকে আহ্বান করে। বান্দার উচিত হল তার অনুসরণ না করা এবং তখন ভালো কিছু করা। যখন শয়তান বান্দাকে এরূপ করতে দেখে, তখন সে তাকে ছেড়ে দেয় তথা কুমন্ত্রনা দেয় না’।[৮]

ফুযাইল ইবনু গাযওয়ান (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত আছে, একদা তাকে বলা হল, অমুক ব্যক্তি আপনার বদনাম করছে। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! ঐ ব্যক্তির প্রতি আমার ক্রোধ, যে তাকে আদেশ করেছে। তাকে বলা হল, কে তাকে আদেশ করেছে? উত্তরে তিনি বলেন, শয়তান। অতঃপর তিনি তার জন্য দু‘আ করলেন, হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা কর’।[৯]

৭. আত্মপ্রশংসা ত্যাগ করা ও সৃষ্টির প্রতি মূল্যায়ন করা

বান্দার ভিতরে শয়তানের প্রবেশের সবচেয়ে বড় প্রবেশদ্বার হচ্ছে সে তাকে তার আমলগুলো দেখিয়ে আত্মপ্রশংসা করতে উদ্বুদ্ধ করে। আর আমল দ্বারা আত্ম প্রশংসাবোধ করা অন্তর দ্বারা শিরক করার শামিল[১০] এবং সেটা নিজ আমলকে বড় মনে করার একটি উৎস। এ কারণে আত্মপ্রশংসাকারীর আমল আল্লাহর উপর খোঁটা দানকারীর মত। তাইতো সে আল্লাহর নে‘আমতের কথা ভুলে যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, 

یَمُنُّوۡنَ عَلَیۡکَ اَنۡ  اَسۡلَمُوۡا ؕ قُلۡ  لَّا تَمُنُّوۡا عَلَیَّ  اِسۡلَامَکُمۡ ۚ بَلِ اللّٰہُ یَمُنُّ عَلَیۡکُمۡ  اَنۡ ہَدٰىکُمۡ  لِلۡاِیۡمَانِ  اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ 

‘তারা আত্মসমর্পণ করে আপনাকে ধন্য করেছে মনে কর। বল, তোমাদের আত্মসমর্পণ আমাকে ধন্য করেছে মনে করিও না; বরং আল্লাহই ঈমানের দিকে পরিচালিত করে তোমাদেরকে ধন্য করেছেন, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’ (হুজুরাত ১৭)।

এটি আমল বিধ্বংসী কাজ। ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) (৬৩১-৬৭৬ হি.) বলেন, জেনে রাখ! যে ব্যক্তি তার আমল নিয়ে আশ্চর্যবোধ করবে তার আমল ধ্বংস হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে যে গর্ববোধ করবে তার আমল ধ্বংস হয়ে যাবে।[১১]

অতএব আমাদের উচিত হবে সর্বদা আমাদের প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত অনুগ্রহগুলো স্মরণ করা এবং একমাত্র তাঁর প্রতি ভরসা করা। কেননা কেউ চাইলে তোমার ক্ষতি করতে পারে না যদি তিনি না চান। হাদীছে বর্ণিত হয়েছে,

وَاعْلَمْ أَنَّ الأُمَّةَ لَوْ اجْتَمَعَتْ عَلَى أَنْ يَنْفَعُوْكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَنْفَعُوْكَ إِلَّا بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللهُ لَكَ وَلَوْ اجْتَمَعُوْا عَلَى أَنْ يَضُرُّوْكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَضُرُّوْكَ إِلَّا بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللهُ عَلَيْكَ رُفِعَتِ الْأَقْلاَمُ وَجَفَّتْ الصُّحُفُ 

‘জেনে রাখ! যদি জাতির সকলে মিলে তোমার কোন বিষয়ে উপকার করার জন্য একত্রিত হয়, তাহলে তারা তোমার কোন কিছুই উপকার করতে পারবে না, তা ব্যতীত যা  আল্লাহ তোমার ভাগ্যে লিপিবদ্ধ করেছেন। আর যদি তারা সকলে তোমার কোন বিষয়ে ক্ষতি করার জন্য একত্রিত হয়, তাহলে তারা তোমার কোন কিছুই ক্ষতি করতে পারবে না, তবে তা ব্যতীত যা আল্লাহ তোমার ভাগ্য লিপিবদ্ধ করেছেন। কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে এবং পৃষ্ঠা শুকিয়ে গেছে’।[১২]

ইবনুল ক্বাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ) (৬৯১-৭৫১ হি.) বলেন, ‘একই অন্তরে ইখলাছ এবং  মানুষের প্রশংসার মুহাব্বাত একত্রিত হতে পারে না। যেমন আগুন ও পানি, সাপ ও মাছ একত্রিত হতে পারে না। যখন তোমার আত্মা ইখলাছের দিকে ধাবিত হবে, তখন তুমি সর্বপ্রথম কামনা-বাসনার প্রতি অগ্রসর হও এবং তাকে নিরাশার ছুরি দ্বারা যবেহ কর। যখন তুমি এগুলো করতে সক্ষম হবে, তখন তোমার জন্য ইখলাছ করা সহজ হবে’। মূলত লোক দেখানো কাজে ক্ষতি ছাড়া কোন উপকার নেই। তাই রাসূল (ﷺ) বলেন,

مَنْ سَمَّعَ سَمَّعَ اللهُ بِهِ وَمَنْ يُرَائِي يُرَائِي اللهُ بِهِ 

‘যে ব্যক্তি লোক শুনানোর উদ্দেশ্যে ইবাদত করে আল্লাহ এর বিনিময়ে তার লোক শুনানোর উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ইবাদত করবে আল্লাহ এর বিনিময়ে তার লোক দেখানোর উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দিবেন’।[১৩]

খাত্ত্বাবী (রাহিমাহুল্লাহ) এই হাদীছের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইখলাছ ছাড়া কোন আমল করে এবং সে তা দ্বারা মানুষকে শুনানো ও দেখানোর আশা পোষণ করে, তাহলে তাকে তা-ই প্রদান করা হয়’। ইবনু হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) (৭৭৩-৮৫২ হিঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার আমলের মাধ্যমে মানুষের নিকট মান-সম্মান কামনা করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে না, আল্লাহ তা‘আলা তাকে সম্মান কামনা করা ব্যক্তিদের নিকট আলোচনার পাত্র বানিয়ে দেন। আর পরকালে তাদের জন্য কোন ছওয়াব নেই’।[১৪]

৮. শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের সাহচর্য গ্রহণ করা

ইখলাছ বিনষ্টকারী একটি মাধ্যম হল ইখলাছহীন ব্যক্তিদের সাথী হিসাবে গ্রহণ করা। কেননা বন্ধু বা সাথী ব্যক্তির আখলাক্বকে সুন্দর বা নষ্ট করতে বড় ভূমিকা পালন করে। মানুষ সৃষ্টিগতভাবে অনুসরণ ও সাদৃশ্য গ্রহণে আকৃষ্ট। বরং মানুষ নিজের অজান্তে-ই অন্য মানুষের স্বভাব অনুসরণ করে।[১৫]

যে ব্যক্তি মুখলিছদের সাথে চলাফেরা করে সে ব্যক্তির মধ্যে ইখলাছ আন্দোলিত হয়। আর যে ব্যক্তি আহলুর রিয়া ও সুখ্যাতিকামী ব্যক্তির সাথে উঠা-বসা করে সে তার প্রভাবে প্রভাবিত হয়। তাই রাসূল (ﷺ) বলেন, اَلْمَرْءُ عَلَى دِيْنِ خَلِيْلِهِ فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلْ ‘মানুষ তার বন্ধুর চরিত্র অনুসরণ করে, সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকেই যেন লক্ষ্য রাখে যে, সে কাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করছে।[১৬]

একজন সঙ্গী তার অপর সঙ্গীর চরিত্রের আদলে গড়ে উঠে। যদি সাথী সত্যবাদী এবং মুখলিছ হয়, তাহলে তার বুন্ধুও সে গুণে গুণান্বিত হবে। আর যদি সে লৌকিকতাপন্থী হয়, তাহলে তার বন্ধুও তেমন-ই হবে। এ কারণে রাসূল (ﷺ) বলেন,

مَثَلُ الجَلِيْسِ الصَّالِحِ وَالسَّوْءِ كَحَامِلِ المِسْكِ وَنَافِخِ الكِيْرِ فَحَامِلُ المِسْكِ إِمَّا أَنْ يُحْذِيَكَ وَإِمَّا أَنْ تَبْتَاعَ مِنْهُ وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيْحًا طَيِّبَةً وَنَافِخُ الكِيرِ إِمَّا أَنْ يُحْرِقَ ثِيَابَكَ وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ رِيْحًا خَبِيْثَةً

‘সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর দৃষ্টান্ত হল, কস্তুরীওয়ালা ও হাপরওয়ালার ন্যায়। কস্তুরীওয়ালা হয়ত তোমাকে কিছু দান করবে অথবা তুমি তার নিকট হতে কিছু খরিদ করবে কিংবা তার নিকট হতে তুমি সুগন্ধি পাবে। আর হাপরওয়ালা হয়ত তোমার কাপড় পুড়িয়ে দিবে কিংবা তুমি তার নিকট হতে দুর্গন্ধ পাবে’।[১৭]

সুধী পাঠক! উক্ত হাদীছে যে সঙ্গীর মাধ্যমে ইহকাল এবং পরকালের উপকার সাধিত হয় তার সাহচর্য গ্রহণে উৎসাহিত করা হয়েছে। পক্ষান্তরে যে সঙ্গীর মাধ্যমে উভয়কালের ক্ষতি সাধন হয়ে থাকে তার থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।[১৮]

৯. মুখলিছদের অনুসরণ করা

ইখলাছ অর্জনের অধিকতর সহজ উপায় হচ্ছে, মুখলিছদের অনুসরণ করা এবং তাদের পন্থা অবলম্বন করা। উত্তম আদর্শ হলো ব্যক্তির জন্য জীবন্ত উপমা, যা অন্তরে জাগ্রত করে মূল্যবোধ ও ভালবাসা। আর এর মাধ্যমে জীবনের পরিপূর্ণতায় পৌঁছা সম্ভব।

এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা নবীগণের আদর্শ অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

لَقَدۡ کَانَ لَکُمۡ  فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰہِ  اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ  لِّمَنۡ کَانَ یَرۡجُوا اللّٰہَ وَ الۡیَوۡمَ  الۡاٰخِرَ  وَ ذَکَرَ  اللّٰہَ  کَثِیۡرًا

‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখেরাতকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ’ (সূরা আল-আহযাব: ২১)। অন্যত্র তিনি বলেন, اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ ہَدَی اللّٰہُ  فَبِہُدٰىہُمُ اقۡتَدِہۡ ‘তাদেরকেই আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেছেন। সুতরাং তুমি তাদের পথের অনুসরণ কর’ (সূরা আল-আন‘আম: ৯০)। মহান আল্লাহ বলেন,

قَدۡ کَانَتۡ لَکُمۡ  اُسۡوَۃٌ  حَسَنَۃٌ  فِیۡۤ اِبۡرٰہِیۡمَ وَ الَّذِیۡنَ مَعَہٗ

‘তোমাদের জন্য ইবরাহীম ও  তার অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ’ (সূরা আল-মুমতাহেনা: ৪)। এ সম্পর্কে রাসূল (ﷺ) বলেন,

فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ الْمَهْدِيِّيْنَ عَضُّوْا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ

‘তোমাদের উপর আবশ্যক হচ্ছে আমার সুন্নাত ও হেদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদার সুন্নাত অনুসরণ করা। তা তোমরা মাড়ির দাঁত দিয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধর’।[১৯]

মুখলিছ ব্যক্তিদের মাধ্যমে ইখলাছের জ্ঞানার্জনের পথ হচ্ছে, তাদের জীবন বৃত্তান্ত অধ্যয়ন করা এবং তাদের জীবন চরিতের প্রতি দৃষ্টি রাখা। ইমাম আবু হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ) (৮০-১৫০ হি.) বলেন, ওলামাদের জীবন বৃত্তান্ত বর্ণনা করা এবং তাদের সাথে উঠাবসা করা আমার নিকট অনেক ফিক্বহ চর্চা করার চেয়েও অধিক প্রিয়, কেননা তা জাতির (আলেমদের) আদব ও চরিত্র।[২০]

অতএব রাসূল (ﷺ)-এর ছাহাবীগণ এবং তাদের অনুসারীদের জীবন চরিত্রে ইখলাছের নমুনা সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে, যা জ্ঞানকে বৃদ্ধি করে এবং ঈমানকে দৃঢ় করে।

১০. ইখলাছকে মুখ্য উদ্দেশ্য হিসেবে নির্ধারণ

ইখলাছের ফযীলতের দিকে লক্ষ্য করে অনেকে মুখলিছ হতে উৎসাহী হয়। কিন্তু মুখলিছের সংখ্য নিতান্তই নগণ্য। কারণ হল- তাদের সে উৎসাহটা মূলত ইখলাছকে টার্গেট করে নয়; বরং লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে হয়। তাই যদি কেউ প্রকৃতপক্ষে মুখলিছ হতে চায়, তাহলে সে যেন সর্বদা তার প্রত্যেক কাজে ইখলাছকে মুখ্য উদ্দেশ্য হিসেবে নির্ধারণ করে নেয়। কেননা প্রকৃত মুখলিছ ব্যক্তি কখনো মানুষের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশা করে না। তার প্রত্যেকটি কাজ হবে পরকালকে সামনে রেখে, দুনিয়ার স্বার্থে বা মানুষের প্রশংসার আশায় নয়।

শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) (৬৬১-৭২৮ হি./১২৬৩-১৩২৮ খ্রি.) বলেন,

قَالَ الفضيل بن عِيَاض فِي قَوْله " لِیَبۡلُوَکُمۡ  اَیُّکُمۡ  اَحۡسَنُ عَمَلًا " قَالَ أخلصه وأصوبه قيل يَا أَبَا عَلِيٍّ مَا أَخْلَصَهُ وَأَصْوَبَهُ فَقَالَ إِنَّ الْعَمَلَ إِذَا كَانَ خَالِصًا وَلَمْ يَكُنْ صَوَابًا لَمْ يُقْبَلْ وَإِذَا كَانَ صَوَابًا وَلَمْ يَكُنْ خَالِصًا لَمْ يُقْبَلْ حَتَّى يَكُوْنَ خَالِصًا صَوَابًا وَالخْاَلِصُ أَنْ يَّكُوْنَ لِلهِ وَالصَّوَابُ أَنْ يَّكُوْنَ عَلَى الْسُّنَّةِ

ফুযাইল ইবনু ইয়ায (রাহিমাহুল্লাহ)-কে لِیَبۡلُوَکُمۡ  اَیُّکُمۡ  اَحۡسَنُ عَمَلًا (যেন আল্লাহ তা‘আলা পরীক্ষা করতে পারেন যে, তোমাদের মাঝে কে অতি উত্তম আমল করে) আয়াতের ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘অধিক ইখলাছপূর্ণ ও অধিক শুদ্ধ আমল’। পুনরায় তাকে জিজ্ঞেস করা হল- হে আবু আলী! , ‘অধিক ইখলাছপূর্ণ ও অধিক শুদ্ধ আমল’ দ্বারা কি উদ্দেশ্য?  তিনি বলেন, ‘আমল যখন ইখলাছপূর্ণ হয়, কিন্ত বিশুদ্ধ হয় না; তখন সে আমল গ্রহণযোগ্য হয় না। আর যখন আমল বিশুদ্ধ হয়, কিন্তু ইখলাছপূর্ণ হয় না; তখনও তা কবুল হয় না যতক্ষণ না ঐ আমল ইখলাছপূর্ণ ও বিশুদ্ধ উভয় গুণে গুণান্বিত না হয়। ইখলাছপূর্ণ হওয়া বলতে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সম্পাদন করা বুঝায়। আর বিশুদ্ধ বলতে সুন্নাহ অনুযায়ী হওয়া বুঝায়’।[২১]

وَقَدْ رَوَى اِبْنُ شَاهِينَ عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ قَالَ لَا يُقْبَلُ قَوْلٌ وَعَمَلٌ إلَّا بِنِيَّةِ وَلَا يُقْبَلُ قَوْلٌ وَعَمَلٌ وَنِيَّةٌ إلَّا بِمُوَافَقَةِ السُّنَّةِ

‘ইবনু শাহীন (রাহিমাহুল্লাহ) সাঈদ ইবনু জুবাইর (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আল্লাহর নিকট বিশুদ্ধ নিয়ত ব্যতীত কোন কথা ও আমল গ্রহণীয় হয় না। আর কোন কথা, আমল ও নিয়ত কবুল হয় না সুন্নাহ মোতাবেক না হওয়া পর্যন্ত’।[২২] অতএব মানব জীবনের প্রত্যেকটি কর্ম একমাত্র আল্লাহর জন্য হওয়া একান্ত কর্তব্য। কেননা যে কর্ম আল্লাহর জন্য হয় না তা অনোপকারী ও অস্থায়ী। আর যে কর্ম আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়, তা উপকারী ও চিরস্থায়ী।[২৩]

(ইনশাআল্লাহ চলবে)


* শিক্ষক, দারুল হুদা ইসলামী কমপ্লেক্স, বাঘা, রাজশাহী।

তথ্যসূত্র:
[১]. ইখলাছ ওয়াশ শিরকুল আছগার, পৃ. ১৪।
[২]. হিলয়াতুল আওলিয়া, ৩য় খণ্ড,, পৃ. ৭০।
[৩]. মুখতাছার মিনহাজুল কাসেদীন, পৃ. ৩৬০।
[৪]. নাসাঈ হা/৩১৪০, সনদ ছহীহ।
[৫]. মুহাম্মাদ ইবনু জারীর আবু জা‘ফর আত-ত্বাবারী, জামেঊল বায়ান ফী তা’বীলি কুরআন (বৈরূত : মুওয়াসসাসাতুর রিসালাহ, ১ম সংস্করণ, ১৪২০ হি./২০০০ খ্রি.), ৩য় খণ্ড, পৃ. ৭০।
[৬]. জামিঊল বায়ান ফী তা’বীলি কুরআন, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৭০।
[৭]. মুসনাদে আহমাদ হা/১৯৬২২, সনদ হাসান।
[৮]. আবু হামিদ মুহাম্মাদ ইবনু মুহাম্মাদ আল-গাযযালী, ইহইয়া উলূমুদ্দীন (বৈরূত : দারুল মা‘আরিফা, তাবি), ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩১৫।
[৯]. ইহইয়া উলূমুদ্দীন, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৪।
[১০]. তাক্বীউদ্দীন আবুল আব্বাস আহমাদ ইবনু আব্দুল হালীম ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া (দারুল ওয়াফা, ৩য় সংস্করণ ১৪২৬ হি./২০০৫ খ্রি.), ১০ম খণ্ড, পৃ. ২৭৭।
[১১]. শরহে আরবাঈন নববী দ্র.।
[১২].  তিরমিযী হা/২৫১৬, সনদ ছহীহ।
[১৩]. ছহীহ বুখারী হা/৬৪৯৯।
[১৪]. আহমাদ ইবনু আলী ইবনু হাজার আল-আসক্বালানী, ফাৎহুল বারী শারহু ছহীহিল বুখারী ( বৈরূত : দারুল মা‘আরিফাহ, ১৩৭৯ হি.), ১১শ  খণ্ড, পৃ. ৩৪৪।
[১৫]. আবুল আলা মুহাম্মাদ আব্দুর রহমান মুবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াযী শারহু জামেঈত তিরযিমী (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়া, তাবি), ৯ম খণ্ড, পৃ. ৪৯।
[১৬]. মুসনাদে আহমাদ হা/৮৩৯৮; মিশকাত হা/৫০১৯; বায়হাক্বী-শু‘আবুল ঈমান হা/৯৪৩৬ ও ৯৪৩৮, সনদ হাসান।
[১৭]. ছহীহ বুখারী হা/৫৫৩৪।
[১৮]. ফাৎহুল বারী ৪/৩৮০ পৃঃ।
[১৯]. ইবনু মাজাহ হা/৪২; মিশকাত হা/১৬৫, সনদ ছহীহ।
[২০]. জামেঊল বায়ানিল ‘ইলমি ওয়া ফাযলিহি, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫০৯।
[২১]. ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ইসতিক্বামাহ (মদীনাতুল মুনাওয়ারা : জামে‘আতুল ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু সাঊদ, ১ম সংস্করণ, ১৪০৩ হি.) ২য় খণ্ড, পৃ. ৩০৮-৩০৯।
[২২]. মাজমূঊল ফাতাওয়া, ২২শ খণ্ড, পৃ. ১৭৭; আল-ইসতিক্বামাহ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩০৯।
[২৩]. জামিঊল মাসায়েল, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ১০৯।




প্রসঙ্গসমূহ »: তারবিয়াত
সুন্নাতের আলো বিদ‘আতের অন্ধকার (৪র্থ কিস্তি) - অনুবাদ : হাফীযুর রহমান বিন দিলজার হোসাইন
মাযহাবী গোঁড়ামি ও তার কুপ্রভাব (শেষ কিস্তি) - অনুবাদ : রিদওয়ান ওবাইদ
রামাযানে দাওয়াতী কাজের গুরুত্ব ও প্রভাব - অধ্যাপক মো. আকবার হোসেন
আল-কুরআন তেলাওয়াতের আদব - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
যাকাত বণ্টনে সমস্যা ও সমাধান - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আত সম্পর্কে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের অবস্থান (৫ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির
ইসলামে পর্দার বিধান (২য় কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ইসলামে বিবাহের গুরুত্ব (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আবূ সাঈদ
ইসরাঈলি বর্বরতায় রক্তাক্ত মানবতা - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
পরবর্তীদের তুলনায় সালাফদের ইলমের শ্রেষ্ঠত্ব (২য় কিস্তি) - অনুবাদ : আযহার বিন আব্দুল মান্নান
দু‘আ ও যিকর : আল্লাহর অনুগ্রহ ও প্রশান্তি লাভের মাধ্যম (৩য় কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আত সম্পর্কে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের অবস্থান (৭ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির

ফেসবুক পেজ