ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম) -এর আগমন সংশয় নিরসন
-হাসিবুর রহমান বুখারী*
(৭ম কিস্তি)
৫. তার আবির্ভাবের পূর্বে মানুষ সত্য-মিথ্যার ভেদাভেদ ভুলে যাবে। সে সময়ে সত্যবাদীকে মিথ্যাবাদী আর মিথ্যাবাদীকে সত্যাবাদী গণ্য করা হবে। দুর্নীতিবাজকে বিশ্বস্ত আর বিশ্বস্তকে দুর্নীতিবাজ মনে করা হবে। যেমন, আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
إِنَّ أَمَامَ الدَّجَّالِ سِنيْنَ خَدَّاعةً يُكَذَّبُ فِيْهَا الصَّادِقُ ويُصَدَّقُ فِيْهَا الْكاَذِبُ وَيُخَوَّنُ فِيْهَا الْأَمِيْنُ وَيُؤْتَمَنُ فِيْهَا الْخَائِنُ وَيَتَكَلَّمُ فِيْهَا الرُّوَيْبِضَةُ. قِيْلَ وَمَا الرُّوَيْبِضَةُ؟ قال الفُوَيْسِقُ يَتكلَّمُ فِيْ أمرِ العامَّةِ
‘দাজ্জালের আবির্ভাবের পূর্বের কয়েকটি বছর হবে প্রতারণার বছর। তখন সত্যবাদীকে মিথ্যাবাদী আর মিথ্যাবাদীকে সত্যবাদী গণ্য করা হবে। বিশ্বস্ত-আমানতদারকে বিশ্বাসঘাতক আর বিশ্বাসঘাতক ও দুর্নীতিবাজকে বিশ্বস্ত-আমানতদার মনে করা হবে। আর মানুষের মধ্যে হতে ‘রুওয়াইবিয’রা হবে বক্তা। জিজ্ঞেস করা হল, ‘রুওয়াইবিয’ কী জিনিস? উত্তরে তিনি বললেন, অপরাধপ্রবণ লোকেরা জনসাধারণের বিষয়াদি নিয়ে কথা বলবে’।[১]
৬. তার আবির্ভাবের পূর্বে ঈমান ও নিফাক্ব সম্পূর্ণরূপে বিভাজিত হয়ে যাবে। মুমিনরা ও মুনাফিক্বরা দু’টি দলে বিভক্ত হয়ে যাবে। যেমন, আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
.. حَتَّى يَصِيْرَ النَّاسُ إِلَى فُسْطَاطَيْنِ فُسْطَاطِ إِيْمَانٍ لَا نِفَاقَ فِيْهِ وَفُسْطَاطِ نِفَاقٍ لَا إِيْمَانَ فِيْهِ فَإِذَا كَانَ ذَاكُمْ فَانْتَظِرُوا الدَّجَّالَ مِنْ يَوْمِهِ أَوْ مِنْ غَدِهِ
‘...অবশেষে মানুষজন দু’টি শিবিরে বিভক্ত হয়ে যাবে। একটি হবে ঈমানদারদের শিবির, যেখানে কিঞ্চিৎ পরিমাণেও মুনাফিক্বী থাকবে না। আর একটি হবে মুনাফিক্বদের শিবির, যেখানে কিঞ্চিৎ পরিমাণেও ঈমান থাকবে না। যখন তোমাদের এরূপ পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যাবে, তখন সেই দিন অথবা তার পরের দিন থেকে দাজ্জালের আত্মপ্রকাশের অপেক্ষা করবে’।[২]
দাজ্জাল কোথায় থেকে আবির্ভূত হবে?
আজকের দিনে এটি-ই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। দাজ্জাল সম্পর্কে পৃথক গবেষণাগার ও স্বতন্ত্র ফ্যাকাল্টির (Faculty) দাবীদার জনৈক বক্তা দীর্ঘ গবেষণার পর বলেছেন যে, ‘আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) বলেছেন, দাজ্জাল শেষ যামানায় ‘জেরুজালেম’ থেকে আবির্ভূত হবে’। পক্ষান্তরে ছহীহ হাদীছের আলোকে স্পষ্ট প্রমাণিত যে, ‘দাজ্জাল ‘খুরাসানের’ একটি এলাকা থেকে আবির্ভূত হবে, যা বর্তমান ‘ইরানে’ অবস্থিত। শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘ছহীহ দলীলের ভিত্তিতে এটিই প্রমাণিত হয় যে, সর্বপ্রথম দাজ্জাল পূর্বদিক থেকে আবির্ভূত হবে। বিশেষ করে খুরাসানের অঞ্চল থেকে। আরো সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে খুরাসানের ইসফাহান নামক এলাকা থেকে। যা বর্তমানে ইরানের একটি অঞ্চল, তেহরান থেকে দক্ষিণে ৩৪০ কি.মি. দূরে অবস্থিত’।[৩]
আবূ বকর ছিদ্দীক্ব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
اَلدَّجَّالُ يَخْرُجُ مِنْ أَرْضٍ بِالْمَشْرِقِ يُقَالُ لَهَا خُرَاسَانُ يَتْبَعُهُ أَقْوَامٌ كَأَنَّ وُجُوْهَهُمْ الْمَجَانُّ الْمُطْرَقَةُ
‘প্রাচ্যের ‘খোরাসান’ অঞ্চল হতে দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। এমনসব জাতি তার অনুসরণ করবে, যাদের মুখাবয়ব হবে স্তরবিশিষ্ট ঢালের মত চ্যাপ্টা ও মাংসল’।[৪]
নাউওয়াস ইবনু ছাম‘আন (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, إِنَّهُ خَارِجٌ خَلَّةً بَيْنَ الشَّأْمِ وَالْعِرَاقِ فَعَاثَ يَمِيْنًا وَعَاثَ شِمَالًا يَا عِبَادَ اللهِ فَاثْبُتُوْا ‘সে ইরাক্ব ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী রাস্তা হতে আবির্ভূত হবে। সে ডানে-বামে দুর্যোগ সৃষ্টি করবে। সুতরাং হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা অটল থাকবে’।[৫]
উপরিউক্ত হাদীছে মূলত খুরাসানের ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, يَخْرُجُ الدَّجَّالُ مِنْ يَهُوْدِيَّةِ أَصْبَهَانَ مَعَهُ سَبْعُوْنَ أَلْفًا مِنَ الْيَهُوْدِ ‘দাজ্জাল আসবাহান বা ইসফাহানের 'ইয়াহুদিয়্যাহ’ নামক অঞ্চল থেকে বাহির হবে। আর তার সাথে থাকবে সত্তর হাজার ইয়াহুদী’। একই অর্থের হাদীছ আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতেও বর্ণিত হয়েছে।[৬]
খুরাসান শহরের-ই একটি অঞ্চলের নাম ইসফাহান। হাফিয ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সর্বপ্রথম দাজ্জাল ইসফাহানের ‘ইয়াহুদিয়্যাহ’ নামক মহল্লা থেকে আবির্ভূত হবে’।[৭] হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এই অঞ্চলটি ইয়াহুদী প্রধান হওয়ার কারণেই এটির ‘ইয়াহুদিয়্যাহ’ নামকরণ করা হয়েছে’।[৮]
শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘শায়খ মাশহূর হাসান সালমান বলেছেন, ‘অসংখ্য ছহীহ হাদীছ ও আছার থেকে প্রতীয়মাণ হয় যে, দাজ্জাল ‘খুরাসান এবং ‘ইসফাহান’ থেকে আবির্ভূত হবে এবং তার অবতরণ হবে ‘খুজ’ এবং ‘কিরমান'’ থেকে। আর এ সমস্ত অঞ্চলের সবগুলোই বর্তমানে ইরানে অবস্থিত। নির্দিষ্ট করে সে ‘কুছা’ গ্রামে অবতরণ করবে। বর্তমান সময়ে যেটি ‘ইবরাহীমের টিলা’ বা ‘ইবরাহীমের টিলা পাহাড়’ নামে পরিচিত। কারণ সেখানে একটি সমাধি রয়েছে, যা ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-এর বলে মনে করা হয়’।[৯]
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এত সুস্পষ্ট এবং নির্দিষ্টভাবে দাজ্জালের আবির্ভাবের স্থান উল্লেখ থাকার পরেও কেন মানুষ এ সম্পর্কে বিভ্রান্ত হবে? কেন মানুষ তাদের মনগড়া ব্যাখ্যার ফাঁদে পা দিবে? কেন মানুষ এ কথা বিশ্বাস করবে যে, দাজ্জাল জেরুজালেম থেকে আবির্ভূত হবে?
অতএব আমরা বুঝতে পারলাম যে, জনৈক বক্তার গবেষণায় ত্রুটি আছে। আর এখানেই মূল সমস্যা। আমরা আমাদের ভ্রান্ত মতাদর্শের কল্পিত ও রচিত কথাগুলোকেও অত্যন্ত কৌশলের সাথে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কথা বলে চালিয়ে দিচ্ছি। মা‘আযাল্লাহ্! অথচ এটি যে কত বড় ধ্বংসাত্মক ও জঘন্য অপরাধ আমরা তা অনুধাবনও করতে পারছি না। নিঃসন্দেহে মিথ্যা একটি হারাম ও সর্বদা ঘৃণিত কাজ। তবে তা যদি হয় অহীর নামে তাহলে তা আরো বেশি ঘৃণিত ও ক্ষতিকর। সাধারণভাবে মিথ্যা ব্যক্তি জীবনে বা মানব সমাজের জন্য অসংখ্য ক্ষতি সাধন করে। আর অহীর নামে মিথ্যা মানব সমাজের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক উভয় জীবনে-ই স্থায়ী ধ্বংস ও ক্ষতি সাধন করে। মানুষ তখন ধর্মের নামে মানবীয় বুদ্ধি প্রসূত বিভিন্ন কর্মে লিপ্ত হয়ে জাগতিক ও পারলৌকিক ধ্বংসের মধ্যে নিপতিত হয়। মুগীরাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
إِنَّ كَذِبًا عَلَيَّ لَيْسَ كَكَذِبٍ عَلَى أَحَدٍ مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنْ النَّارِ
‘আমার নামে মিথ্যা বলা অন্য কারোর নামে মিথ্যা বলার মত নয়। যে ব্যক্তি আমার নামে মিথ্যা বলে তার ঠিকানা অবশ্যই জাহান্নামে হবে’।[১০]
সুধী পাঠক! পূর্ববর্তী ধর্মগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করলে আমরা বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে দেখতে পাই যে, মূলত মানবীয় জ্ঞান প্রসূত কথাকে অহীর নামে চালানোই ধর্মের বিকৃতি ও বিলুপ্তির অন্যতম কারণ। সাধারণভাবে ঐ সকল ধর্মের মূর্খ প-িতগণ ধর্মের কল্যাণেই এ সকল কথা অহীর নামে চালিয়ে ছিলেন। তারা মনে করতেন যে, তাদের এ সকল কথা, ব্যাখ্যা, মতামত অহীর নামে চালালে মানুষের মধ্যে ‘ধার্মিকতা’, ‘ভক্তি’ ইত্যাদি বাড়বে এবং আল্লাহ খুশি হবেন। আর এভাবেই তারা তাদের ধর্মকে বিকৃত ও ধর্মাবলম্বীদেরকে বিভ্রান্ত করেছেন। কিন্তু হায়! তারা বুঝেননি যে, মানুষ যদি মানবীয় প্রজ্ঞায় এ সকল বিষয় বুঝতে পারত তাহলে অহীর প্রয়োজন হতো না।
অহীর নামে মিথ্যা প্রচারের দু’টি অবস্থা। প্রথমতঃ নিজে অহীর নামে মিথ্যা বলা। দ্বিতীয়তঃ অন্যের বলা মিথ্যা গ্রহণ ও প্রচার করা। অথচ ইসলামী শরী‘আতে উপরিউক্ত দু’টি পদ্ধতির উপরেই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। একদিকে আল্লাহর নামে মিথ্যা বা অনুমান নির্ভর কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। অপরদিকে কারো প্রচারিত কোন তথ্য বিচার-বিবেচনা ও যাচাই-বাছাই ছাড়া গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। কুরআনুল কারীম অসংখ্যবার আল্লাহর নামে মিথ্যা বলতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। অনুরূপভাবে না-জেনে, আন্দাজে, ধারণা বা অনুমানের উপর নির্ভর করে আল্লাহর নামে কিছু বলতেও কঠিনভাবে নিষেধ করেছে। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নামে মিথ্যা বলার অর্থ আল্লাহর নামেই মিথ্যা বলা। কারণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আল্লাহর পক্ষ থেকেই কথা বলেন। কুরআনের মত হাদীছও কিন্তু আল্লাহর অহী। কুরআন ও হাদীছ, উভয় প্রকারের অহীই একমাত্র রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মাধ্যমেই বিশ্ববাসী পেয়েছে। কাজেই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নামে কোন প্রকারের মিথ্যা, বানোয়াট, আন্দাজ বা অনুমান নির্ভর কথা বলার অর্থই আল্লাহর নামে মিথ্যা বলা। কুরআনুল কারীমে এ বিষয়ে বারংবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেমন,
১. আল্লাহ তা‘আলা এ সম্পর্কে একাধিকবার বলেছেন, وَ مَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنِ افۡتَرٰی عَلَی اللّٰہِ کَذِبًا ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে বা বলে তার চেয়ে অধিক বড় যালিম আর কে?’ (সূরা আল-আন‘আম : ২১, ৯৩, ১১৬, ১৪৪; সূরা আল-আ‘রাফ : ৩৭; সূরা ইউনুস : ১৭; সূরা হূদ : ১৮; সূরা আল-কাহ্ফ : ১৫; সূরা আল-আনকাবূত : ৬৮; সূরা আছ-ছাফ্ফ : ৭)।
২. অন্যত্র বলা হয়েছে, وَیۡلَکُمۡ لَا تَفۡتَرُوۡا عَلَی اللّٰہِ کَذِبًا فَیُسۡحِتَکُمۡ بِعَذَابٍ ۚ وَ قَدۡ خَابَ مَنِ افۡتَرٰی ‘দুর্ভোগ তোমাদের! তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করো না, করলে তিনি তোমাদেরকে শাস্তি দ্বারা সমূলে ধ্বংস করবেন; আর যে মিথ্যা উদ্ভাবন করবে সে অবশ্যই ব্যর্থ হবে’ (সূরা তো¡-হা : ৬১)।
এভাবে কুরআনে অহীর জ্ঞানকে ভেজাল ও মিথ্যা থেকে রক্ষার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ, তাঁর প্রিয় রাসূল (ﷺ), তাঁর দ্বীন, তাঁর বিধান ইত্যাদির কোন বিষয়ে মিথ্যা, বানোয়াট, আন্দাজ বা অনুমান নির্ভর কথা বলা কঠিনভাবে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন নিজের জন্য আল্লাহ বা তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর নামে মিথ্যা বলা নিষিদ্ধ, তেমনি অন্যের কোন অনির্ভরযোগ্য, মিথ্যা বা অনুমান নির্ভর বর্ণনা বা বক্তব্য গ্রহণ করাও নিষিদ্ধ। যে কোন সংবাদ বা বক্তব্য গ্রহণের পূর্বে মুসলিম উম্মহকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন,
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنۡ جَآءَکُمۡ فَاسِقٌۢ بِنَبَاٍ فَتَبَیَّنُوۡۤا اَنۡ تُصِیۡبُوۡا قَوۡمًۢا بِجَہَالَۃٍ فَتُصۡبِحُوۡا عَلٰی مَا فَعَلۡتُمۡ نٰدِمِیۡنَ
‘হে বিশ্বাসীগণ! যদি কোন পাপাচারী তোমাদের নিকট কোন বার্তা আনয়ন করে, তাহলে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোন সম্প্রদায়কে আঘাত না কর এবং পরে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও’ (সূরা আল-হুজুরাত : ৬)। এ নির্দেশের আলোকে, কেউ কোন সাক্ষ্য বা তথ্য প্রদান করলে তা গ্রহণের পূর্বে সে ব্যক্তির ব্যক্তিগত সততা ও তথ্য প্রদানে তার নির্ভুলতা যাচাই-বাছাই করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অপরিহার্য। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সম্পর্কে কোন বার্তা বা বাণী গ্রহণের ক্ষেত্রে জাগতিক সকল বিষয়ের চেয়েও বেশি সতর্কতা ও পরীক্ষা করা প্রয়োজন। কারণ জাগতিক বিষয়ে ভুল তথ্য বা সাক্ষ্যের উপর নির্ভর করলে মানুষের সম্পদ, সম্ভ্রম বা জীবনের ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাদীছ বা অহীর বিষয়ে অসতর্কতার পরিণতি ঈমানের ক্ষতি ও আখিরাতের অনন্ত জীবনের সর্বনাশা। এজন্য মুসলিম উম্মাহর উচিত সর্বদা সকল তথ্য, হাদীছ ও বর্ণনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে-ই গ্রহণ করা। ইচ্ছাকৃত অথবা অনিচ্ছাকৃত সকল প্রকারের বিকৃতি, ত্রুটি-বিচ্যুতি বা মিথ্যা থেকে তাঁর বাণীকে রক্ষা করার জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর উম্মাতকে তাঁর হাদীছ বা বাণী হুবহু বিশুদ্ধরূপে মুখস্থ করে তা প্রচার করতে নির্দেশ দিয়েছেন। যাইদ ইবনু ছাবিত (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ আলোকোজ্জ্বল করুন সে ব্যক্তির চেহারা, যে আমার কোন কথা শুনল, অতঃপর তা পূর্ণরূপে কন্ঠস্থ করল এবং সংরক্ষণ করল, অতঃপর যে তা শুনেনি তার কাছে তা পৌঁছে দিল। একই অর্থের আরো অনেক হাদীছ অন্যান্য ছাহাবী থেকেও বর্ণিত ও সংকলিত হয়েছে।[১১] অপরদিকে কোনো মানবীয় কথা যেন তাঁর নামে প্রচারিত হতে না পারে সে জন্য তিনি মানব সমাজকে তাঁর নামে মিথ্যা বা অতিরিক্ত কথা বলতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। যেমন,
১. আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, لَا تَكْذِبُوْا عَلَىَّ فَإِنَّهُ مَنْ كَذَبَ عَلَىَّ فَلْيَلِجِ النَّارَ ‘তোমরা আমার নামে মিথ্যা বলবে না। কেননা যে ব্যক্তি আমার নামে মিথ্যা বলবে তাকে জাহান্নামে যেতে হবে’।[১২]
২. আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, مَنْ كَذَبَ عَلَىَّ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ ‘যে ব্যক্তি আমার নামে মিথ্যা বলবে তার আবাসস্থল হবে জাহান্নাম’।[১৩]
৩. সালামাহ ইবনুল আক্ওয়া‘ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,مَنْ يَقُلْ عَلَىَّ مَا لَمْ أَقُلْ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ ‘যে ব্যক্তি আমার উপর এমন কথা আরোপ করে যা আমি বলিনি, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয়’।[১৪]
৪. বিশুদ্ধ মুখস্থ ও নির্ভুলতা সম্পর্কে পরিপূর্ণ নিশ্চিত না হয়ে কোন হাদীছ বর্ণনা করতে তিনি নিষেধ করেছেন। আবূ ক্বাতাদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মিম্বারের উপরে দাঁড়িয়ে বলেন,
إِيَّاكُمْ وَكَثْرَةَ الْحَدِيْثِ عَنِّيْ فَمَنْ قَالَ عَلَىَّ فَلْيَقُلْ حَقًّا أَوْ صِدْقًا وَمَنْ تَقَوَّلَ عَلَىَّ مَا لَمْ أَقُلْ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ
‘তোমারা আমার থেকে অধিক হাদীছ বর্ণনা করার ব্যাপারে সাবধান হও। কেউ আমার সম্পর্কে বলতে চাইলে সে যেন হক্ব কথা বা সত্য কথাই বলে। যে ব্যক্তি আমার নামে এমন কথা বলে যা আমি বলিনি, তার বাসস্থান হবে জাহান্নামে’।[১৫]
এভাবেই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উম্মতকে তাঁর নামে মিথ্যা বলার বিষয়ে সতর্ক করেছেন এবং প্রায় ১০০ জন ছাহাবী এ অর্থে হাদীছ বর্ণনা করেছেন। আর কোন হাদীছ এত বেশি সংখ্যক ছাহাবী থেকে বর্ণিত হয়নি।[১৬] সুতরাং আমরা বিভিন্ন হাদীছে দেখতে পাচ্ছি যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর উম্মাতকে তাঁর হাদীছ হুবহু ও নির্ভুলভাবে মুখস্থ রাখতে ও এরূপ মুখস্থ হাদীছ প্রচার করতে নির্দেশ দিয়েছেন। অপরদিকে পরিপূর্ণ মুখস্থ না থাকলে বা সামান্য দ্বিধা থাকলে সে হাদীছ বর্ণনা করতে নিষেধ করেছেন। কারণ ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, তিনি যা বলেননি সে কথা তাঁর নামে বলা নিষিদ্ধ ও কঠিনতম পাপ। ভুলক্রমেও যাতে তাঁর হাদীছের মধ্যে হেরফের না হয় এজন্য তিনি পরিপূর্ণ মুখস্থ ছাড়া হাদীছ বলতে নিষেধ করেছেন। স্বয়ং ছাহাবীগণও এ বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক থাকতেন। যেমন নিজের পক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নামে মিথ্যা বলা নিষিদ্ধ, তেমনি অন্যের বানোনো মিথ্যা গ্রহণ করাও নিষিদ্ধ। মুসলিম উম্মাহর ভিতরে মিথ্যাবাদী হাদীছ বর্ণনাকারীর উদ্ভব হবে বলে তিনি উম্মাতকে পূর্বেই সতর্ক করেছেন। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
سَيَكُوْنُ فِيْ آخِرِ أُمَّتِيْ أُنَاسٌ يُحَدِّثُوْنَكُمْ مَا لَمْ تَسْمَعُوْا أَنْتُمْ وَلَا آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ.
‘শেষ যুগে আমার উম্মাতের মধ্যে এমন কিছু লোকের আবির্ভাব ঘটবে যারা তোমাদের এমন এমন হাদীছ শোনাবে যা তোমরা কিংবা তোমাদের পূর্বপুরুষরা কেউ কখনো শোননি। অতএব তোমরা তাদের সংসর্গ থেকে সাবধান থাকবে এবং তাদেরও তোমাদের থেকে দূরে রাখবে’।[১৭] আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন,
إِنَّ الشَّيْطَانَ لَيَتَمَثَّلُ فِيْ صُوْرَةِ الرَّجُلِ فَيَأْتِي الْقَوْمَ فَيُحَدِّثُهُمْ بِالْحَدِيْثِ مِنَ الْكَذِبِ فَيَتَفَرَّقُوْنَ فَيَقُوْلُ الرَّجُلُ مِنْهُمْ سَمِعْتُ رَجُلًا أَعْرِفُ وَجْهَهُ وَلَا أَدْرِيْ مَا اسْمُهُ يُحَدِّثُ
‘শয়তান মানুষের আকৃতিতে লোকেদের মাঝে আসে এবং মিথ্যা হাদীছ বর্ণনা করে। অতঃপর লোকেরা সেখান থেকে সমাবেশ ভেঙ্গে পৃথক হয়ে চলে যায়। অতঃপর তারা সে সকল মিথ্যা হাদীছ বর্ণনা করে বলে, আমি এক ব্যক্তিকে হাদীছটি বলতে শুনেছি যার চেহারা আমি চিনি তবে তার নাম জানি না’।[১৮]
উপরোল্লিখিত আয়াত ও হাদীছের আলোকে আমরা অতি সহজেই বুঝতে পারি যে, হাদীছের নামে মিথ্যা বলা বা মানুষের কথাকে হাদীছ বলে চালানো জঘন্যতম পাপ। এ বিষয়ে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে কোনোরূপ সংশয় বা দ্বিধা নেয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ছাহাবীগণ অনিচ্ছাকৃত বা অসাবধানতামূলক ভুলের ভয়ে হাদীছ বলা থেকে বিরত থাকতেন। অনিচ্ছাকৃত ভুলকেও তারা ভয়ানক পাপ মনে করে সতর্কতার সাথে পরিহার করতেন। এছাড়া অন্যের বানোনো মিথ্যা হাদীছ বর্ণনা করাকেও তাঁরা মিথ্যা হাদীছ বানানোর মত অপরাধ বলে মনে করতেন। এ প্রসঙ্গে ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এ সকল হাদীছ থেকে জানা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নামে মিথ্যা বলা কঠিনতম হারাম, ভয়ঙ্করতম কাবীরাহ গুনাহ এবং জঘন্যতম ও ধ্বংসাত্মক অপরাধ। এ বিষয়ে মুসলিম উম্মাহ একমত। তবে অধিকাংশ আলিমের মতে এ অপরাধের কারণে কাউকে কাফির বলা যাবে না। যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নামে কোনো মিথ্যা বলবে সে যদি তার এ মিথ্যা বলাকে হালাল মনে না করে তাহলে তাকে কাফির বলা যাবে না। সে পাপী মুসলিম। আর যদি সে এ কঠিনতম পাপকে হালাল মনে করে তাহলে সে কাফির বলে গণ্য হবে। আবূ মুহাম্মাদ আল-জুআইনী ও অন্যান্য কতিপয় ইমাম এ অপরাধকে কুফুরী বলে গণ্য করেছেন। জুআইনী বলতেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাপূর্বক রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর নামে মিথ্যা বলবে সে কাফির বলে গণ্য হবে এবং তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করতে হবে। এ সকল হাদীছ থেকে আরো জানা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নামে যে কোনো মিথ্যাই সমভাবে হারাম, তা যে বিষয়েই হোক। শরী‘আতের বিধি-বিধান, ফযীলত, নেককাজে উৎসাহ প্রদান, পাপের ভীতি বা অন্য যে কোন বিষয়ে তাঁর নামে কোনো মিথ্যা বলা কঠিনতম হারাম ও ভয়ঙ্করতম কাবীরাহ গুনাহ। এ বিষয়ে মুসলিম উম্মাহর ঐকমত্য রয়েছে। যাঁরা মতামত প্রকাশ করতে পারেন এবং যাঁদের মতামত গ্রহণ করা যায় তাঁদের সকলেই এ বিষয়ে একমত’।[১৯]
আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর উপর মিথ্যা আরোপ করার মত ভয়াবহ গুনাহ ও জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম কারণ থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!!
* মুর্শিদাবাদ, ভারত।
তথ্যসূত্র :
[১]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩২৯৮; সনদ হাসান, সিলসিলা ছহীহাহ, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৫০৯; ছহীহুল মুসনাদ, হা/২৭; ছহীহু দালায়িলিন নবুওয়্যাহ, হা/৫৬৮; ফাৎহুল বারী, ১৩তম খণ্ড, পৃ. ৯১; আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৮৭; মুসনাদে আবী ই‘আলা, হা/৩৭১৫; ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/৩২৫৮।
[২]. আবূ দাঊদ, হা/৪২৪২; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৯৭৪; ছহীহুল জামে‘, হা/৪১৯৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬১৬৮; মিশকাত, হা/৫৩৩০।
[৩]. ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৮৮০৬।
[৪]. তিরমিযী, হা/২২৩৭ ‘কলহ-বিপর্যয়’ অধ্যায়, ‘দাজ্জাল কোথায় থেকে আবির্ভূত হবে’? অনুচ্ছেদ; ইবনু মাজাহ, হা/৪০৭২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২, ৩৩; সনদ হাসান ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১৫৯১।
[৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৯৩৭; তিরমিযী, হা/২২৪০; ইবনু মাজাহ, হা/৪০৭৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৬২৯।
[৬]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৩৪৪, ২৪৪৬৭, সনদ হাসান; ছহীহ মুসলিম, হা/২৯৪৪; ফাৎহুল বারী, ১৩তম খণ্ড, পৃ. ৩৪০।
[৭]. আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ, পৃ. ৫৯।
[৮]. ফাৎহুল বারী, ১৩তম খণ্ড, পৃ. ৯২, ৩৪০।
[৯]. বুলদানুল খিলাফাতিশ শারক্বিয়্যাহ, পৃ. ৯৪-৯৫; মু‘জামুল বুলদান, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৩৩; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১২৯১৬৪।
[১০]. ছহীহ বুখারী, হা/১২৯১; ছহীহ মুসলিম, হা/৯৩৩।
[১১]. আবূ দাঊদ, হা/৩৬৬০; তিরমিযী, হা/২৬৫৬-২৬৫৮; ইবনু মাজাহ, হা/২৩০-২৩২, ২৩৬, ৩০৫৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৩৫০, ১৬৭৫৪, ২১৫৯০; মিশকাত, হা/২২৩; সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামে‘, হা/৬৭৬৫-৬৭৬৬; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৯২।
[১২]. ছহীহ বুখারী, হা/১০৬; ছহীহ মুসলিম, হা/২; তিরমিযী, হা/২৬৬০।
[১৩]. ছহীহ বুখারী, হা/১০৭, ১১০, ৩৪৬১, ৬১৯৭; ছহীহ মুসলিম, হা/৩০০৪।
[১৪]. ছহীহ বুখারী, হা/১০৯।
[১৫]. ইবনু মাজাহ, হা/৩৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২০৩২, ২২৫৩৮; সনদ হাসান, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১৭৫৩; ছহীহুল জামে‘, হা/২৬৮৪।
[১৬]. ইমাম নববী, শারহু ছহীহ মুসলিম, ১ম খণ্ড, পৃ. ৬৮; ইবনুল জাওযী, আল-মাউযূ‘আত, পৃ. ২৮-৫৬।
[১৭]. ছহীহ মুসলিম, হা/৬-৭ ‘ভূমিকা’; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮২৬৭, ৮৫৯৬; ছহীহুল জামে‘, হা/৩৬৬৭।
[১৮]. ছহীহ মুসলিম, হা/৭, ‘ভূমিকা’ দ্র.।
[১৯]. ইমাম নববী, শারহুল মুসলিম, ১ম খণ্ড, পৃ. ৬৯।
প্রসঙ্গসমূহ »:
আক্বীদা বা বিশ্বাস