বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৩ অপরাহ্ন

ইসলামী শরী‘আতে খাওয়ার আদব

-আবূ মাহদী মামুন বিন আব্দুল্লাহ*


ভূমিকা

আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতিকে শুধু তাঁর ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন (সূরা আয যারিয়াত, ৫১/৫৬)।  সুন্দরভাবে ইবাদত পালন করতে সুস্থতা একটি অশেষ নে‘মত। মানুষের সুন্দর জীবনযাপনে সুস্থ শরীর খুবই যরূরী। আর সুস্থ শরীর নিয়ে জীবন কাটাতে খাওয়ার বিকল্প নেই। খাবার মানুষের দেহ-মন সুস্থ ও সতেজ রাখার প্রধান উপকরণ। খাওয়ার অভাবে মানুষের শরীর ভেঙ্গে যায় এবং দুর্বল ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে। ইবাদতে মন বসে না এবং কোন কাজে স্বতঃস্ফূর্ততা থাকে না। তাই খাবার খাওয়া মানুষের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খাওয়ার ক্ষেত্রে ইসলামী শরী‘আত অনুস্বরণ করা যরুরী। কেননা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) মানবজীবনের সকল কিছুর নীতিমালা দিয়েছেন। আজকের নিবন্ধে ‘ইসলামী শরী‘আতে খাওয়ার আদব’ শিরোনামে আলোচনা করা হল।

ইসলামী শরী‘আতে খাওয়ার আদব

১. খাওয়ার পূর্বে বিসমিল্লাহ বলা

বিসমিল্লাহ বলে খাবার খাওয়া সুন্নাত। প্রিয় নবী (ﷺ) খাওয়ার পূর্বে বিসমিল্লাহ বলতেন এবং তাঁর ছাহাবীদেরকেও নির্দেশনা দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

إِذَا أكَلَ أحَدُكُمْ فَلْيَذْكُرِ اسْمَ اللهِ تَعَالَى ، فإنْ نَسِيَ أنْ يَذْكُرَ اسْمَ اللهِ تَعَالَى فيْ أَوَّلِهِ ، فَلْيَقُلْ: بِسْمِ اللهِ أوَّلَهُ وَآخِرَهُ.

‘তোমাদের কেউ যখন খাবার খায়, তখন সে যেন বিসমিল্লাহ বলে (আল্লাহর নাম নেয়)। আর সে যদি শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায়, তাহলে যেন بِسْمِ اللهِ أوَّلَهُ وَآخِرَهُ বলে’।[১] কেননা কেউ যদি বিসমিল্লাহ না বলে খানা শুরু করে, শয়তান তার খানায় অংশগ্রহণ করে।  রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,  إِنَّ الشَّيْطَانَ لَيَسْتَحِلُّ الطَّعَامَ الَّذِي لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللهِ عَلَيْهِ  ‘অবশ্যই শয়তান (মুসলিমের) খাবার খেতে সক্ষম হয়; যদি খাওয়ার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ না বলে’।[২]

২. ডান হাতে খাবার খাওয়া

সুন্দর ও সুস্থ শরীর নিয়ে জীবনযাপন করতে খাবার খাওয়া খুবই প্রয়োজন। খাওয়া ছাড়া মানুষের বেঁচে থাকা বড়ই কঠিন। তাই খাওয়া টা যেন অবশ্যই ডান হাতে হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

لَا يَأْكُلَنَّ أَحَدٌ مِنْكُمْ بِشِمَالِهِ وَلَا يَشْرَبَنَّ بِهَا فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْكُلُ بِشِمَالِهِ وَيَشْرَبُ بِهَا ‏"‏ ‏.‏ قَالَ وَكَانَ نَافِعٌ يَزِيدُ فِيْهَا ‏"‏ وَلَا يَأْخُذُ بِهَا وَلَا يُعْطِي بِهَا. ‏

‘তোমাদের মধ্যে কেউ যেন তার বাম হাত দ্বারা না খায় এবং পান না করে। কারণ শয়তান তার বাম হাত দিয়ে পানাহার করে থাকে’। বর্ণনাকারী বলেন, নাফে‘ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) দু’টি কথা আরো বেশী বলতেন, ‘কেউ যেন বাম হাত দ্বারা কিছু গ্রহণ না করে এবং অনুরূপভাবে তা দ্বারা কিছু প্রদানও না করে’।[৩]

ওমর বিন আবী সালামাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি শৈশবকালে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে খাবার সময় আমার হাত পাত্রের যেখানে-সেখানে পড়লে তিনি আমাকে বললেন,يَا غُلَامُ سَمِّ اللهَ وَكُلْ بِيَمِيْنِكَ وَكُلْ مِمَّا يَلِيْكَ ‘হে ছেলে! বিসমিল্লাহ বল, তোমার ডান হাত দিয়ে খাও এবং নিজের সামনে থেকে খাও’।[৪]

হাদীছে এসেছে, একদা এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট বাম হাত দিয়ে কিছু খাচ্ছিল। তিনি তা লক্ষ্য করে তাকে বললেন,كُلْ بِيَمِيْنِكَ، قَالَ: لَا أَسْتَطِيعُ، قَالَ: لَا اسْتَطَعْتَ، مَا مَنَعَهُ إِلَّا الْكِبْرُ ‘তুমি ডান হাত দিয়ে খাও। সে বলল, আমি পারি না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তুমি যেন না পার। অহংকারই তাকে (আদেশ পালনে) বিরত রেখেছে। রাবী সালামাহ বলেন, فَمَا رَفَعَهَا إِلَى فِيْهِ ‘সুতরাং (এই বদ দু‘আর ফলে) সে আর তার হাতকে মুখ পর্যন্ত উঠাতে পারেনি’।[৫] তবে যার ডান হাত নেই অথবা ডান হাত ব্যবহার করার ক্ষমতা নেই, সে বাম হাত ব্যবহার করবে।

৩. পাত্রের মাঝখান থেকে না খাওয়া

খাওয়ার সময় অবশ্যই নিজের সামনে ডান দিক থেকে শুরু করতে হবে। খাওয়ার সময় কখনো মাঝখান থেকে খাওয়া উচিত নয়; কারণ এতে বরকত বিনষ্ট হয় এবং সুন্নাতের খিলাফও বটে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,اَلْبَرَكَةُ تَنْزِلُ وَسَطَ الطعَامِ فَكُلُوْا مِنْ حَافَتَيْهِ وَلَا تَأكُلُوْا مِنْ وَسَطِهِ ‘বরকত খাবারের মধ্যখানে অবতীর্ণ হয়; কাজেই তোমরা তার পাশ থেকে খাও; তার মাঝখান থেকে খেয়ো না’।[৬]

৪. তিন আঙ্গুলে খাবার খাওয়া

খাবার অবশ্যই তিন আঙ্গুলে খাওয়া উচিত। কেননা এটা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাত। কা‘ব বিন মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,

كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَأْكُلُ بِثَلَاثِ أَصَابِعَ وَيَلْعَقُ يَدَهُ قَبْلَ أَنْ يَمْسَحَهَا

‘রাসুলুল্লাহ (ﷺ) তিন আঙ্গুলে খাবার খাইতেন এবং হাত মুছে ফেলার পূর্বে তা চেটে খেতেন’।[৭]

৫. গরম খাবার ঠান্ডা হলে খাওয়া

বেশী গরম খাবার খেলে জিভ বা মুখে কষ্ট হয়, খাবারের আসল স্বাদ জিভে অনুভব করতে পারা যায় না, বেশী গরম গিলে ফেললে পেটেরও কোন ক্ষতি হতে পারে। আর তখন  ঐ খাবারের কোন বরকত পাবেন না। নবী করীম (ﷺ) বলেন, إِنَّهُ أَعْظَمُ لِلْبَرَكَةِ ‘(খাবারের বেশী গরমভাব দূর করে খেলে) তাতে বরকত বেশী হয়’।[৮] আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘ভাপ না চলে যাওয়া পর্যন্ত কোন খাবার খাওয়া উচিত নয়’।[৯]

৬. পড়ে যাওয়া খাবার  উঠিয়ে পরিস্কার করে খাওয়া

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পড়ে যাওয়া খাবার তুলে নিয়ে পরিস্কার করে খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা ঐ পতিত খাবারে বরকত থাকতে পারে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

إِذَا سَقَطَتْ لُقْمَةُ أَحَدِكُمْ فَلْيُمِطْ عَنْهَا الْأَذَى وَلْيَأْكُلْهَا وَلَا يَدَعْهَا لِلشَّيْطَانِ وَأَمَرَنَا أَنْ نَسْلُتَ الْقَصْعَةَ، قَالَ: فَإِنَّكُمْ لَا تَدْرُوْنَ فِيْ أَيِّ طَعَامِكُمُ الْبَرَكَةُ.

‘তোমাদের কারো খাবারের লোকমা হাত থেকে পড়ে গেলে তার ময়লা দূর করে সে যেন তা খায়। আর শয়তানের জন্য তা ছেড়ে না দেয়। তিনি আমাদেরকে প্লেট চেঁটে খাওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই তোমরা জান না যে, তোমাদের কোন খাবারে বরকত আছে’।[১০]

৭. একাকী না খেয়ে জামা‘আতবদ্ধভাবে খাওয়া

খাওয়ার সময় একাকী না খেয়ে পরিবারের সবাই বা মেহমানদের বা অন্যদের সাথে একত্রিত হয়ে খাওয়ার মধ্যে তৃপ্তি ও বরকত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একাকী খাওয়ার চেয়ে জামা‘আতবদ্ধ খাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। হাদীছে এসেছে, ওয়াহশী ইবনু হারব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাঁর পিতা হতে তিনি তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেছেন যে, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমরা খানাপিনা করি কিন্তু আমরা পরিতৃপ্ত হই না। তিনি বললেন, সম্ভবতঃ তোমরা পৃথক পৃথকভাবে খানা খাও। তাঁরা বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর তিনি বললেন,فَاجْتَمِعُوْا عَلَى طَعَامِكُمْ وَاذْكُرُوا اسْمَ اللهِ يُبَارِكْ لَكُمْ فِيْهِ ‘তোমরা খাওয়ার সময় একসাথে খাবে এবং আল্লাহর নাম নিবে, তাহলে তোমাদের খানার মধ্যে বরকত আসবে।[১১] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,  إِنَّ أَحَبَّ الطَّعَامِ إِلَى اللهِ مَا كَثُرَتْ عَلَيْهِ الْأَيْدِي ‘আল্লাহর নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় খাবার হল সেই খাবার, যার উপর অনেক হাত পড়ে’।[১২] তবে একাকী খাওয়াও বৈধ। মহান আল্লাহ বলেন,

لَیۡسَ عَلَیۡکُمۡ جُنَاحٌ  اَنۡ  تَاۡکُلُوۡا جَمِیۡعًا اَوۡ اَشۡتَاتًا.

‘তোমরা একত্রে আহার কর অথবা পৃথক পৃথকভাবে আহার কর তাতে তোমাদের জন্য কোন অপরাধ নেই’ (সূরা আন-নূর, ২৪/৬১)।

৮. হেলান দিয়ে না খাওয়া

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কখনো হেলান দিয়ে খাবার খাননি এবং ছাহাবীদেরকেও এভাবে খেতে নিষেধ করেছেন। হেলান দিয়ে খাওয়া সুন্নাতের খেলাফ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,لَا آكُلُ مُتَّكِئًا ‘আমি হেলান দিয়ে খাই না’।[১৩] তিনি হেলান দিয়ে খেতে নিষেধও করেছেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,لَا تَأْكُلْ مُتَّكِئًا ‘হেলান দিয়ে খেও না’।[১৪] অনুরূপভাবে উপুড় হয়ে শুয়ে খাওয়াও নিষেধ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,وَأَنْ يَأْكُلَ الرَّجُلُ وَهُوَ مُنْبَطِحٌ عَلَى بَطْنِهِ ‘কোন ব্যক্তি যেন উপুুড় হয়ে পেটের উপর ভর করে না খায়’।[১৫]

৯. খাওয়ার আগে ও পরে উভয় হাত ধৌত করা

খাওয়ার পূর্বে ও পরে দু’হাত ভালভাবে ধৌত করা উচিত।  কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) খাবার পরে কুলি করেছেন এবং হাত ধুয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, مَنْ نَامَ وَفِيْ يَدِهِ غَمَرٌ وَلَمْ يَغْسِلْهُ فَأَصَابَهُ شَيْءٌ، فَلَا يَلُوْمَنَّ إِلَّا نَفْسَهُ ‘যে ব্যক্তি হাতে গোশতের গন্ধ ও চর্বি না ধুয়ে তা নিয়েই ঘুমায়, অতঃপর কোন বিপদ ঘটে, তাহলে সে যেন নিজেকে ছাড়া আর কাউকে দোষারোপ না করে’।[১৬] এখানে বিপদ বলতে, হাত না ধুয়ে ঘুমানোর ফলে চর্বির গন্ধে তেলাপোকা, ইঁদুর বা অন্য কোন প্রাণী হাত বা আঙ্গুল কামড়াতে পারে। তাছাড়া এতে কোন রোগ-ব্যাধি হওয়ারও সম্ভাবনা থাকতে পারে।

১০. খাওয়ার শেষে আঙ্গুল ও প্লেট চেটে খাওয়া

খাওয়ার শেষে আঙ্গুল ও প্লেট চেটে খাওয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাত। তাই সকলের এই সুন্নাতকে পালন করা উচিত। নবী কারীম (ﷺ) বলেছেন,إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَلَا يَمْسَحْ يَدَهُ حَتَّى يَلْعَقَهَا أَوْ يُلْعِقَهَا ‘যখন তোমাদের কেউ খাবার খায় তখন সে যেন তার আঙ্গুল চেটে খাওয়ার আগে তা না মুছে বা না ধৌত করে’।[১৭] জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘নবী করীম (ﷺ) আঙ্গুল ও প্লেটকে চেটে খেতে আদেশ করেছেন এবং বলেছেন,إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَلَا يَمْسَحْ أَصَابِعَهُ حَتَّى يَلْعَقَهَا فَإِنَّهُ لَا يَدْرِيْ فِيْ أَيِّ طَعَامِهِ كَانَتِ الْبَرَكَةُ ‘যখন তোমাদের কেউ খাবার খাবে আঙ্গুল চেঁটে না খেয়ে হাত মুছবে না। কেননা সে জানে না যে, কোন খাবারে বরকত আছে’।[১৮] খাওয়ার শেষে আঙ্গুল চেটে খাওয়া উত্তম। কেননা শেষের খাবারেও বরকত নিহিত আছে।

১১. খাবারের দোষ বর্ণনা না করা

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কখনো খাবারের দোষ বর্ণনা করতেন না। ইচ্ছা হলে খেতেন, না হলে খেতেন না। আমাদেরও এমনটা করা উচিত, কারণ তাতে রাঁধুনি কষ্ট পায়। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,

مَا عَابَ رَسُوْلُ اللهِ ম طَعَامًا قَطُّ كَانَ إِذَا اشْتَهَى شَيْئًا أَكَلَهُ وَإِنْ كَرِهَهُ تَرَكَهُ.

‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কখনও খাবারের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করতেন না। তাঁর ইচ্ছা হলে খেতেন ; আর ইচ্ছা না হলে খেতেন না’।[১৯]

১২. পরিবেশনকারীর সবার শেষে খাওয়া

যে ব্যক্তি খাবার পরিবেশন করবে তার জন্য উচিত হল, সে সবার শেষে খাবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এমনটা নিজে করেছেন ও ছাহাবীদেরকেও করতে বলেছেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,إِنَّ سَاقِيَ الْقَوْمِ آخِرُهُمْ شُرْبًا  ‘যে লোকদেরকে পানি পান করায়, সে যেন সবার শেষে পান করে’।[২০]

১৩. খাওয়ার শেষে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে দু‘আ বলা

খাওয়ার শেষে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর একটি অন্যতম সুন্নাত। যে এমনটা করবে, তার জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সওয়াবের ঘোষণা দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি খাওয়ার শেষে বলবে,اَلْحَمْدُ لِلهِ الَّذِيْ أطْعَمَنِيْ هَذَا وَرَزَقنِيْهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّيْ وَلَا قُوَّةٍ  ‘(সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাকে এ খাবার খাওয়ালেন এবং আমাকে রিযিক দিলেন আমার কোনরূপ চেষ্টা ও শক্তি ছাড়াই) তার পিছনের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে’।[২১]

১৪. খাওয়ার শেষে কুলি করা 

খাওয়ার শেষে কুলি করা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নাত। যাতে খাদ্যের অবশিষ্টাংশ মুখ থেকে বের হয়ে যায়। হাদীছে এসেছে, সুয়াইদ ইবনু নু‘মান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি (সুয়াইদ) খায়বার যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সঙ্গে গিয়েছিলেন। তাঁরা যখন খায়বারের নিকটবর্তী ছাহবা নামক স্থানে পৌঁছলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আছরের ছালাত আদায় করলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) খাদ্যসামগ্রী তলব করলেন। কিন্তু ছাতু ব্যতীত কিছুই পাওয়া গেল না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আদেশ দিলেন, অতঃপর তা সিক্ত করা হল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তা খেলেন এবং আমরাও খেলাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মাগরিবের ছালাতের জন্য দাঁড়ালেন এবং শুধু কুলি করলেন, আমরাও কুলি করলাম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছালাত আদায় করলেন অথচ তিনি ওযূ করলেন না।[২২]

১৫. দস্তরখানা উঠানোর সময় দু’আ পাঠ করা

খাবার শেষে দস্তরখানা ও থালা বাসন উঠানোর সময় নিম্নোক্ত দু’আ পাঠ করতে হয়। আবূ উমামা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দস্তরখানা তুলে দিলে বলতেন,

اَلْحَمْدُ لِلهِ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُّبَارَكًا فِيْهِ غَيْرَ مَكْفِىٍّ وَّلَا مُوَدَّعٍ وَّلَا مُسْتَغْنًى عَنْهُ رَبَّنَا.

‘হে আল্লাহ! সমস্ত প্রশংসা তোমার, অধিক অধিক প্রশংসা, যা পবিত্র ও বরকতময়। হে প্রভু! তোমার অনুগ্রহ হতে মুখ ফিরানো যায় না, আর এর অন্বেষণ ত্যাগ করা যায় না এবং এর প্রয়োজন হতে মুক্ত থাকা যায় না’।[২৩]

পরিশেষে বলা যায় যে, উপরিউক্ত আদবগুলো মেনে আমাদের খাওয়া উচিত। তাহলে আমাদের খাওয়াটা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাতী পদ্ধতিতে হবে। আর জান্নাতে যাওয়ার পথকে সহজ করতে পারব। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামী আদব বা শিষ্টাচার মেনে চলার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!



* অধ্যয়নরত, আক্বীদা ও দাওয়াহ বিভাগ, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব।

[১]. তিরমিযী, হা/১৮৫৮; আবূ দাঊদ, হা/৩৭৬৭, সনদ ছহীহ; মিশকাত, হা/৪২০২।

[২]. ছহীহ মুসলিম, হা/২০১৭; আবূ দাঊদ, হা/৩৭৬৬।

[৩]. ছহীহ মুসলিম, হা/২০২০।

[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৩৭৬।

[৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/২০২১।

[৬]. আবূ দাঊদ, হা/৩৭৭৩; তিরমিযী, হা/১৮০৫; ইবনু মাজাহ, হা/৩২৭৭; সনদ ছহীহ, মিশকাত, হা/৪২১১।

[৭]. ছহীহ মুসলিম, হা/৫১২৫।

[৮]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৪১৮; মুসতাদরাক হাকিম, হা/৭১২৪; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৫২০৭, সনদ ছহীহ; মিশকাত, হা/৪২৪১।

[৯]. বায়হাক্বী, হা/১৯৭৮।

[১০]. ছহীহ মুসলিম, হা/২০৩৪।

[১১]. আবূ দাঊদ, হা/৩৭৬৪, সনদ হাসান।

[১২]. মুসনাদ আবী ই‘য়ালা, হা/২০৪৫, সনদ হাসান লিগয়রিহী; ছহীহুল জামে‘, হা/১৭১।

[১৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৩৯৮।

[১৪]. ইবনু আসাকির, তারীখু দিমাস্ক, ১৩তম খণ্ড, পৃ. ৩৯১, সনদ ছহীহ; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৩১২২।

[১৫]. আবূ দাঊদ, হা/৩৭৭৪, সনদ ছহীহ; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২৩৯৪।

[১৬]. আবূ দাঊদ, হা/৩৮৫২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৫৫৯, সনদ ছহীহ।

[১৭]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৪৫৬।

[১৮]. ছহীহ মুসলিম, হা/২০৩৩।

[১৯]. ছহীহ মুসলিম, হা/২০৬৪; আবূ দাঊদ, হা/৩৭৬৩; তিরমিযী, হা/২০৩১; ইবনু মাজাহ, হা/৩২৫৯।

[২০]. ছহীহ মুসলিম, হা/৬৮১।

[২১]. তিরমিযী, হা/৩৪৫৮; ইবনু মাজাহ, হা/৩২৮৫; মিশকাত, হা/৪৩৪৩।

[২২]. ছহীহ বুখারী হা/২০৯, ৪১৯৫; মিশকাত, হা/৩০৯।

[২৩]. ছহীহ বুখারী হা/৫৪৫৮।




প্রসঙ্গসমূহ »: বিধি-বিধান
কুরবানীর মাসায়েল - আল-ইখলাছ ডেস্ক
প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আত সম্পর্কে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের অবস্থান (শেষ কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির
ইসলামী জামা‘আতের মূল স্তম্ভ (৭ম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন
আধুনিক যুগে দাওয়াতী কাজের পদ্ধতি (৩য় কিস্তি) - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আত সম্পর্কে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের অবস্থান (৩য় কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির
সূদ-ঘুষ ও অবৈধ ব্যবসা (৭ম কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ইসলামী জামা‘আতের মূল স্তম্ভ (৫ম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন
ইসলামী তাবলীগ বনাম ইলিয়াসী তাবলীগ (শেষ কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
কুরবানীর মাসায়েল - আল-ইখলাছ ডেস্ক
ইসলামী জামা‘আতের মূল স্তম্ভ (১২তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন
রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎকারী - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ছালাতের সঠিক সময় ও বিভ্রান্তি নিরসন (৩য় কিস্তি) - মাইনুল ইসলাম মঈন

ফেসবুক পেজ