ইসলামী তাবলীগ বনাম ইলিয়াসী তাবলীগ
-ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
(শেষ কিস্তি)
(দশ) তাদের নিকট জাল, যঈফ ও ত্রুটিপূর্ণ হাদীছও গ্রহণযোগ্য।
তারা যঈফ ও জাল হাদীছকে আমলযোগ্য মনে করে। যার কারণে ফাযায়েলে আমাল কিতাবের অধিকাংশ বর্ণনায় জাল, যঈফ ও বানোয়াট। উক্ত কিতাবের এক স্থানে মাওলানা যাকারিয়া বলেন, মুহাদ্দিছগণ ফাযায়েল সংক্রান্ত হাদীছ গ্রহণের ক্ষেত্রে উদারতা দেখান। তাই তাদের মতে সনদগত দুর্বলতা এ ক্ষেত্রে ধর্তব্য নয়। এছাড়া ছূফীদের ঘটনাবলী ইতিহাস বিষয়ক। আর ইতিহাসের মান হাদীছের তুলনায় অনেক কম।[১]
পর্যালোচনা : হাদীছের ব্যাপারে তাদের আক্বীদা অত্যন্ত দুঃখজনক। যার কারণে ‘তাবলীগী নিছাব’ এবং ‘মুন্তাখাব হাদীস’ বইয়ে হাযার হাযার জাল, যঈফ ও অস্বীকৃত বর্ণনায় ভর্তি। অনুরূপ কথিত ছূফীদের নামে হাযার হাযার উদ্ভট ও মিথ্যা কাহিনীতে পরিপূর্ণ। অথচ শরী‘আতে যঈফ ও জাল হাদীছ গ্রহণযোগ্য নয়।
এ দিকে তারা মোটেও ভ্রƒক্ষেপ করে না। সত্য হোক বা মিথ্যা হোক তাবলীগী নিছাব বা ফাযায়েলে আমলে যা আছে, তারই তাবলীগ করে বেড়ায়। অথচ তারা তার পরিণাম সম্পর্কে জানে না।
عَنْ سَلَمَةَ بْنِ الْأَكْوَعِ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِىَّ ৎ يَقُوْلُ مَنْ يَّقُلْ عَلَىَّ مَا لَمْ أَقُلْ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ
সালামা ইবনুল আকওয়া (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রাসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলতেন, ‘কেউ যদি আমার সম্পর্কে এমন কথা বলে, যা আমি বলিনি তাহলে সে যেন তার স্থান জাহান্নামে তৈরি করে নেয়’।[২]
عَنْ عَلِىٍّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَتَكْذِبُوْا عَلَىَّ فَإِنَّهُ مَنْ يَكْذِبْ عَلَىَّ يَلِجِ النَّارَ
আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন, ‘তোমরা আমার প্রতি মিথ্যারোপ করো না। কেননা যে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’।[৩]
عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ৎ قَالَ إِنَّ الَّذِىْ يَكْذِبُ عَلَىَّ يُبْنَى لَهُ بَيْتٌ فِى الْنَّارِ
ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে, তার জন্য জাহান্নামে ঘর তৈরী করা হবে’।[৪]
ড. ওমর ইবনু হাসান ওছমান ফালাতাহ বলেন,
وَهُوَ إِجْمَاعٌ ضِمْنِىٌّ آخَرُ عَلَى تَحْرِيْمِ الْعَمَلِ بِالْمَوْضُوْعِ
‘জাল হাদীছের প্রতি আমল করা ইজমার আওতাধীন বিষয় সমূহের মধ্যে এক বিশেষ হারাম’।[৫] মুহাদ্দিছ যায়েদ বিন আসলাম বলেন,
مَنْ عَمِلَ بِخَبَرٍ صَحَّ أَنَّهُ كِذْبٌ فَهُوَ مِنْ خَدَمِ الشَّيْطَانِ
‘কোন বর্ণনা মিথ্যা প্রমাণিত হওয়া পরেও যে তার উপর আমল করবে, সে শয়তানের খাদেম’।[৬]
জাল-যঈফ বর্ণনা ও মিথ্যা কাহিনীর নমুনা
জনগণকে ছালাতের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য ‘ফাযায়েলে আমলের’ মধ্যে এমন কিছু তথ্য ও কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, আজগুবি ও অবাস্তব। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করা হল:
এক ওয়াক্ত ছালাত ছুটে গেলে এক হুকবা বা দুই কোটি অষ্টাশি লক্ষ বছর জাহান্নামে শাস্তি দেওয়া হবে। যেনম-
قَالَ النَّبِىُّ ﷺ مَنَ تَرَكَ صَلاَةً حَتىَّ مَضَى وَقْتُهَا ثُمَّ قَضَى عُذِّبَ فِى النَّارِ حُقْبًا وَالْحُقْبُ ثَمَانُوْنَ سَنَةً كُلُّ سَنَةٍ ثَلاَثمائة وَسِتُّوْنَ يَوْمًا كُلُّ يَوْمٍ اَلْفُ سَنَةٍ مِمَّا تَعُدُّوْنَ
(১) নবী (ﷺ) বলেন, যদি কোন ব্যক্তি এক ওয়াক্ত ছালাত ছেড়ে দেয় আর ইতিমধ্যে ঐ ছালাতের ওয়াক্ত পার হয়ে যায় অতঃপর ছালাত আদায় করে নেয়, তবুও তাকে এক হুকবা জাহান্নামে শাস্তি দেওয়া হবে। এক হুকবা হল, ৮০ বছর। আর প্রত্যেক বছর ৩৬০ তিন। আর প্রত্যেক দিন এক হাযার বছরের সমান, যেভাবে তোমরা গণনা কর। উল্লেখ্য, উক্ত হিসাব অনুযায়ী সর্বমোট দুই কোটি অষ্টাশি লক্ষ বছর হয়।[৭]
পর্যালোচনা : বর্ণনাটি মিথ্যা ও বানোয়াট। উক্ত বক্তব্য তাবলীগ জামা‘আতের অনুসরণীয় গ্রন্থ ফাযায়েলে আমল-এর ফাযায়েলে নামায অংশে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে কোন প্রমাণ পেশ করা হয়নি। বরং বলা হয়েছে, كَذَا فِىْ مَجَالِسِ الْأَبْرَارِ قُلْتُ لَمْ أَجِدْهُ فِيْمَا عِنْدِىْ مِنْ كُتُبِ الْحَدِيْثِ ‘এভাবেই ‘মাজালিসুল আবরারে’ উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আমার নিকটে হাদীছের যে সমস্ত গ্রন্থ রয়েছে, তার মধ্যে আমি এটা পাইনি’।[৮] লেখক নিজেই যেহেতু স্বীকার করেছেন, সেহেতু আর মন্তব্যের প্রয়োজন নেই। তবে দুঃখজনক হল, স্পষ্ট হওয়ার পর কেন তা রাসূল (ﷺ)-এর নামে বর্ণনা করা হল? এটা নিঃসন্দেহে তাঁর নামে মিথ্যাচারের শামিল।
জ্ঞাতব্য : ছহীহ হাদীছের দৃষ্টিকোণ থেকেও উক্ত দাবী সঠিক নয়। কারণ রাসূল (ﷺ) বলেন, ঘুম বা ভুলের কারণে যার ছালাত ছুটে যাবে, তার কাফ্ফারা হল যখন স্মরণ হবে তখন তা পড়ে নেয়া’।[৯] এছাড়া রাসূল (ﷺ) এবং ছাহাবায়ে কেরাম খন্দকের যুদ্ধের দিন সূর্য ডুবার পর আছরের ছালাত আদায় করেন। অতঃপর মাগরিবের ছালাত আদায় করেন।[১০] তাছাড়া ফজর ছালাতও একদিন তাঁরা সূর্যের তাপ বাড়ার পরে পড়েছেন।[১১] তাহলে তাঁদের শাস্তি কত বছর হবে? (নাঊযুবিল্লাহ)।
(২) ‘যে ব্যক্তি ফরয ছালাত সমূহের যথাযথ হেফাযত করবে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে পাঁচ দিক থেকে সম্মানিত করবেন। যেমন- (ক) সংসারের অভাব-অনটন দূর করবেন (খ) কবরের আযাব মাফ করবেন (গ) বিচারের দিন ডান হাতে আমলনামা দিবেন (ঘ) পুলছিরাতের উপর দিয়ে দ্রুত গতিতে পার হয়ে যাবে (ঙ) বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ছালাতের ব্যাপারে অলসতা করবে তাকে পনের প্রকারের শাস্তি প্রদান করা হবে। তার মধ্যে পৃথিবীতে পাঁচ প্রকার, মৃত্যুর সময় তিন প্রকার, তিন প্রকার কবরে, কবর হতে উঠার পর তিন প্রকার। পৃথিবীতে পাঁচ প্রকার হল- (ক) তার জীবনে কোন কল্যাণ আসে না (খ) তার চেহারা হতে জ্যোতি দূর করা হয় (গ) তার সৎ আমলের কোন প্রতিদান দেওয়া হয় না (ঘ) তার দু‘আ কবুল হয় না (ঙ) সৎ ব্যক্তিদের দু‘আর মাঝে তার কোন অংশ থাকে না।
মৃত্যুর সময়ের তিন প্রকার শাস্তি হল- (ক) সে লাঞ্ছনার সাথে মৃত্যুবরণ করে (খ) ক্ষুধার্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে (গ) এমন তৃষ্ণার্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করে যে, সমুদ্র পরিমাণ পানি পান করলেও তার পিপাসা দূর হবে না। কবরে তিন প্রকার শাস্তি হল- (ক) তার জন্য কবর এমন সংকীর্ণ হবে যে, তার বুকের একদিকের হাড় অপরদিকে ঢুকে যাবে (খ) কবরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হবে (গ) এমন একটি সাপ তার কবরে রাখা হবে যার চক্ষুগুলো আগুনের এবং নখগুলো লোহার। সাপটি এত বড় যে, একদিনের পথ চলার পর শেষ পর্যন্ত পৌঁছা যাবে। এর হুংকার বজ্রের মত। সাপটি বলবে, আমার প্রভু তোমার জন্য আমাকে নির্ধারণ করেছেন, যেন ফজরের ছালাত ত্যাগ করার কারণে সূর্যোদয় পর্যন্ত তোমাকে দংশন করতে পারি, যোহরের ছালাত না পড়ার কারণে যেন আছর পর্যন্ত এবং আছরের ছালাত না পড়ার কারণে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দংশন করতে পারি। অনুরূপ মাগরিবের ছালাত না পড়ার কারণে এশা পর্যন্ত এবং এশার ছালাত নষ্ট করার কারণে সকাল পর্যন্ত দংশন করতে পারি। এই সাপ একবার দংশন করলে সত্তর হাত মাটির নীচে মুর্দা ঢুকে যাবে। এভাবে ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার শাস্তি হতে থাকবে।
কবর হতে উঠার পর তাকে তিন প্রকারের শাস্তি দেওয়া হবে। (ক) কঠিনভাবে তার হিসাব নেওয়া হবে (খ) আল্লাহ তার উপর রাগান্বিত থাকবেন (গ) তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। পনের নম্বরটি পাওয়া যায় না। তবে অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তার মুখমণ্ডলে তিনটি লাইন লেখা থাকবে : (ক) আল্লাহর হক বিনষ্টকারী (খ) ওহে আল্লাহর অভিশাপে অভিশপ্ত (গ) দুনিয়াতে যেমন আল্লাহর হক বিনষ্ট করেছ তেমনি আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়েছে’।[১২]
পর্যালোচনা : পুরো বর্ণনাটি মিথ্যা ও বাতিল। কারণ এর কোন সনদ নেই, বর্ণনাকারীও নেই।[১৩] ফাযায়েলে আমলের মধ্যেই বর্ণনাটির পর্যালোচনায় এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘এই হাদীছ মিথ্যা’।[১৪]
(৩) জামা‘আতের সাথে এক ওয়াক্ত ছালাত আদায় করলে তিন কোটি পঁয়ত্রিশ লক্ষ চুয়ান্ন হাযার চারশ‘ বত্রিশ গুণ নেকী হবে।[১৫]
পর্যালোচনা : হাদীছে বলা হয়েছে যে, জামা‘আতে ছালাত আদায় করলে একাকী পড়ার চেয়ে ২৫ গুণ বা ২৭ গুণ বেশী ছওয়াব পাওয়া যাবে।[১৬] অন্য হাদীছে রয়েছে, পঁচিশটি ছালাতের নেকী হবে।[১৭] উক্ত দুই হাদীছের ফযীলতের উদ্ভট ব্যাখ্যা দিয়ে কোটি কোটি বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
(৪) সাঈদ ইবনু মুসাইয়িব (রাহিমাহুল্লাহ) পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত এশা ও ফজরের ছালাত একই ওযূ দ্বারা পড়েছেন।[১৮] চল্লিশ জন তাবেঈ সম্পর্কে অসংখ্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তারা এশা ও ফজর একই ওযূতে পড়তেন।[১৯] ইমাম আবু হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ) ত্রিশ বছর কিংবা চল্লিশ বছর কিংবা পঞ্চাশ বছর এশা ও ফজর ছালাত একই ওযূতে পড়েছেন।[২০] তাঁর সম্পর্কে আরো বলা হয়েছে, ওযূর পানি ঝরার সময় তিনি বুঝতে পারতেন এর সাথে কোন্ পাপ ঝরে যাচ্ছে।[২১]
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (কুষ্টিয়া)-এর অধীন ফাযিল স্নাতক প্রথম বর্ষের আল-আক্বাঈদ বইয়ে আবু হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ)-এর গুণাবলী সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘তিনি একাধারে ৩০ বছর রোযা রেখেছেন এবং ৪০ বছর যাবত রাতে ঘুমাননি। ইবাদত বন্দিগীতে রজনী কাটায়ে গিয়েছেন। প্রতি রামাযানে ৬১ বার কুরআন মাজীদ খতম করতেন। অনেক সময় এক রাক‘য়াতেই কুরআন মাজীদ এক খতম দিতেন। তিনি ৫৫ বার হজ্জ করেছেন। জীবনের শেষ হজ্জের সময় কা‘বা শরীফে দু’রাক‘য়াত নামায এভাবে পড়েন যে, প্রথম রাক‘য়াতে এক পা ওঠায়ে প্রথম অর্ধাংশ কুরআন মাজীদ পাঠ করেন। তারপর দ্বিতীয় রাক‘য়াতে অপর পা ওঠায়ে বাকি অর্ধাংশ কুরআন মাজীদ পাঠ করেন। যে স্থানে তাঁর ইন্তিকাল হয়েছে, সেখানে এক হাজার বার কুরআন মাজীদ খতম করেছেন। তিনি ৯৯ বার আল্লাহ তা‘য়ালাকে স্বপ্নে দেখেছেন’।[২২]
ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ) রামাযান মাসে ছালাতের মধ্যে পবিত্র কুরআন ৬০ বার খতম করতেন।[২৩] ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ) দৈনিক ৩০০ রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন। ৮০ বছর বয়সে তিনি দৈনিক ১৫০ রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন।[২৪] সাঈদ ইবনু যুবাইর (রাহিমাহুল্লাহ) এক রাক‘আতে পুরা কুরআন খতম করতেন।[২৫] আবু আত্তার সুলামী (রাহিমাহুল্লাহ) চল্লিশ বছর পর্যন্ত সারা রাত ক্রন্দন করে কাটাতেন এবং দিনে সর্বদা ছিয়াম পালন করতেন।[২৬] বাকী ইবনু মুখাল্লাদ (রাহিমাহুল্লাহ) দৈনিক তাহাজ্জুদ ও বিতর ছালাতের তের রাক‘আতে কুরআন খতম করতেন।[২৭]
মুহাম্মাদ ইবনু সালামা ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (রাহিমাহুল্লাহ) -এর ছাত্র ছিলেন । তিনি ১০৩ বছর বয়সে মারা যান। ঐ বয়সে তিনি প্রতিদিন ২০০ রাক‘আত করে ছালাত আদায় করতেন। দীর্ঘ চল্লিশ বছর তার একটানা তাকবীরে তাহরীমা ছুটেনি। মায়ের মৃত্যুর কারণে মাত্র একবার ছুটে গিয়েছিল। জামা‘আতে না পড়ার জন্য তিনি ঐ ছালাত ২৫ বার পড়েন।[২৮] ওমর ইবনু আব্দুল আযীয (রাহিমাহুল্লাহ) সারা রাত্রি ইবাদতে মশগুল থাকতেন। এমনকি খেলাফতের দায়িত্ব পাওয়ার পর তার ফরয গোসলের প্রয়োজন হয়নি।[২৯] জনৈক বুযুর্গ ব্যক্তির পায়ে ফোঁড়া হয়েছিল। ডাক্তারগণ পরামর্শ দিলেন, পা না কাটা হলে জীবনের হুমকি রয়েছে। তখন তার মা বললেন, যখন ছালাতে দাঁড়াবে, তখন কেটে নিতে হবে। অতঃপর তিনি যখন ছালাতে দাঁড়ালেন তখন তারা তার পা কেটে ফেললে তিনি মোটেও টের পেলেন না।[৩০]
উল্লেখ্য যে, আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) সম্পর্কে এধরনের একটি কাহিনী প্রচার করা হয় যে, যুদ্ধে তার পায়ে তীর বিদ্ধ হয়েছিল। সেই তীর বের করা যাচ্ছিল না। অবশেষে তিনি ছালাতে দাঁড়ালে তার পা থেকে তীর বের করা হল, অথচ তিনি টের পেলেন না। এই কাহিনীও মিথ্যা।
পর্যালোচনা : সুধী পাঠক! উক্ত কাহিনীগুলো মুসলিম বিশ্বের বরেণ্য মনীষীদের সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রশ্ন হল, তারা কি আদৌ এভাবে তাদের ইবাদতী জীবন অতিবাহিত করেছেন? তাদের দ্বারা কি এ ধরনের বাড়াবাড়ি সম্ভব? এগুলো মূলত তাদের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক মিথ্যাচার। এভাবে তাদেরকে অপমান করা হচ্ছে।
(৫) ছাবেত আল-বুনানী (রাহিমাহুল্লাহ) আল্লাহর সামনে অধিক ক্রন্দন করতেন আর বলতেন, হে আল্লাহ কবরে যদি কাউকে ছালাত আদায় করার অনুমতি দান করে থাকেন, তাহলে আমাকে অনুমতি দিন। আবু সিনান বলেন, আল্লাহর কসম! ছাবেতকে যারা দাফন করেছেন তাদের মধ্যে আমিও ছিলাম। দাফনের সময় কবরের একটি ইট পড়ে গেল। আমি দেখতে পেলাম তিনি দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করছেন। তার কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হলে বলেন, আব্বা ৫০ বছর যাবৎ রাত্রি জাগরণ করেছেন এবং উক্ত দু‘আ করেছেন।[৩১]
(৬) একজন স্ত্রীলোককে দাফন করা হল। তার ভাই দাফনের কাজে শরীক ছিল। এ সময় তার টাকার থলি কবরের মাঝে পড়ে যায়। পরে বুঝতে পেরে চুপে চুপে কবর খুলে বের করার চেষ্টা করে। যখন সে কবর খুলল তখন কবরটি আগুনে পরিপূর্ণ ছিল। সে কাঁদতে কাঁদতে মায়ের নিকট আসল এবং ঘটনা বর্ণনা করল। তখন তার মা উত্তরে বলল, সে ছালাতে অলসতা করত এবং ছালাত ক্বাযা করত।[৩২]
পর্যালোচনা : কবর জীবন মানুষের দুনিয়া ও আখেরাতের মধ্যবর্তী জীবন। এই জীবন মানুষের বাস্তব জীবনের বিপরীত। দুনিয়ার কোন মানুষ বারযাখী জীবন সম্পর্কে খবর রাখে না। কবরের শান্তি বা শাস্তি কোনকিছু কেউ টের পায় না। সেখানকার অবস্থা দেখা তো দূরের কথা, মানুষ ও জিনের পক্ষে কানে শুনাও সম্ভব নয়।[৩৩]
(৭) শায়খ আব্দুল ওয়াহিদ (রাহিমাহুল্লাহ) ছিলেন বিখ্যাত বুযুর্গের একজন। তিনি বলেন, আমার একবার খুব ঘুমের চাপ হল। ফলে রাত্রের নিয়মিত তাসবীহগুলো পড়তে ছুটে গেল। তখন স্বপ্নে আমি সবুজ রেশমী পোশাক পরিহিতা এক অপূর্ব সুন্দরী যুবতীকে দেখলাম। তার পায়ের জুতাগুলো পর্যন্ত তাসবীহ পাঠ করছে। সে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলছে, তুমি আমাকে পাওয়ার চেষ্টা কর, আমি তোমাকে পাওয়ার চেষ্টা করছি। অতঃপর সে কয়েকটি প্রেমমূলক কবিতা পাঠ করল। এই স্বপ্ন দেখে আমি প্রতিজ্ঞা করলাম, রাত্রে আর কখনো ঘুমাব না। অতঃপর তিনি দীর্ঘ চল্লিশ বছর পর্যন্ত এশার ওযূ দিয়ে ফজরের ছালাত আদায় করেন।[৩৪]
(৮) জনৈক বুযুর্গ বলেন, এক রাত্রিতে গভীর ঘুমের কারণে আমি জেগে থাকতে পারলাম না। ঘুমিয়ে পড়লাম। স্বপ্নে এক অপূর্ব সুন্দরী মেয়েকে দেখলাম। এমন মেয়ে আমি কখনো জীবনে দেখিনি। তার দেহ থেকে তীব্র সুগন্ধি ছড়াচ্ছে। এমন সুগন্ধি আমি কখনো অনুভব করিনি। সে আমাকে একটি কাগজের টুকরা দিল। তাতে কবিতার তিনটি চরণ লেখা ছিল। যেমন- তুমি নিদ্রার স্বাদে বিভোর হয়ে জান্নাতের বালাখানা সমূহ ভুলে গেছ, যেখানে তোমাকে চির জীবন থাকতে হবে, যেখানে কখনো মৃত্যু আসবে না। তুমি ঘুম হতে উঠ, কুরআন তেলাওয়াত কর, তাহাজ্জুদ ছালাতে কুরআন তেলাওয়াত করা ঘুম হতে অনেক উত্তম। তিনি বলেন, এই ঘটনার পর হতে আমার কখনো ঘুম আসে না। কবিতাগুলো স্মরণ হয় আর ঘুম দূরিভূত হয়ে যায়।[৩৫]
(৯) উম্মু কুলসুমের স্বামী আবদুর রহমান অসুস্থ ছিলেন। একবার তিনি এমন অচেতন অবস্থায় পড়লেন যে, সকলেই তাকে মৃত বলে নিশ্চত করল। উম্মু কুলসুম তাড়াতাড়ি নামাযে দাঁড়ালেন। নামায শেষ করা মাত্রই আবদুর রহমান জ্ঞান লাভ করলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আমার অবস্থা কি মৃত্যু অনুরূপ হয়েছিল? লোকজন বলল, জী হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, আমি দেখলাম, দু’জন ফেরেশতা এসে বললেন, চল আল্লাহর দরবারে তোমার ফায়সালা হবে। এই বলে তারা আমাকে নিয়ে যেতে উদ্যত হল। ইত্যবসরে তৃতীয় এক ফেরেশতা এসে তাদেরকে বাধা প্রদান করে বললেন, তোমরা চলে যাও। ইনি এমন এক ব্যক্তি যিনি মাতৃগর্ভেই সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। তাঁর সন্তান-সন্তুতিগণ আরও কিছুদিন তাঁর কাছ থেকে অনুগ্রহ লাভের সুযোগ পাবে। তারপর তিনি আরো এক মাস জীবিত ছিলেন।[৩৬]
পর্যালোচনা : কী চমৎকার রোমাঞ্চকর উপন্যাস! সুন্দরী মেয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্মের নামে মানুষকে ধোঁকা দেয়ার কী সুন্দর অভিনব কৌশল! আল্লাহর ভয় ও ইসলামী বিধানের আনুগত্যের কোনই প্রয়োজন নেই। শুধু সুন্দরী নর্তকীকে পাওয়ার জন্যই সে ইবাদত করবে। এটা কি কোন ইসলামী সভ্যতা?
সুধী পাঠক! ফাযায়েলে আমলে এ ধরনের অসংখ্য মিথ্যা কাহিনী রয়েছে। এই মিথ্যা ফযীলতের ধোঁকা দিয়ে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে প্রতারণার জালে আবদ্ধ করা হচ্ছে। যে সমস্ত ভাইয়েরা ফাযায়েলে আমল পড়েন ও আমল করেন তারা কি একটিবার চিন্তা করবেন? আমরা সরলপ্রাণ মুমিন ভাইদেরকে উক্ত মরণ ফাঁদ থেকে বের হয়ে প্রমাণসহ ছহীহ দলীলের অনুসরণ করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুসলিম উম্মাহকে উক্ত মিথ্যা ও কাল্পনিক ধর্ম থেকে রক্ষা করুন-আমীন!!
সুধী পাঠক! কতিপয় মিথ্যা বর্ণনা ও উদ্ভট কাহিনী উপরে উল্লেখ করা হল। তবে এধরনের ঈমান বিধ্বংসী আরো অসংখ্য বানোয়াট বর্ণনা ও গালগল্প ফাযায়েলের কিতাবে আছে। আমরা সেগুলো ‘তাবলীগের স্বরূপ’ নামে স্বতন্ত্র গ্রন্থে উল্লেখ করেছি, যা ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে আল-হামদুলিল্লাহ।
তথ্যসূত্র :
[১]. ফাযায়েলে আমল, ফাযায়েলে নামায অংশ (বাংলা), পৃ. ১৯০; (উর্দূ), পৃ. ৮৮।
[২]. ছহীহ বুখারী, হা/১০৯, পৃ. ২১, ‘ইলম’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৮।
[৩]. ছহীহ বুখারী, হা/১০৬, পৃ. ২১; ছহীহ মুসলিম, মুক্বাদ্দামাহ দ্র., পৃ. ৭, অনুচ্ছেদ-২।
[৪]. আহমাদ বিন হাম্বল, আল-মুসনাদ (কায়রো : দারুল মা‘আরিফ, ১৯৮৫/১৩৭৭), ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৩৩৩, হা/৪৭৪২, ৫৭৯৮ ও ৬৩০৭, (২য় খণ্ড, পৃ. ২২ ও ১০৩); সনদ ছহীহ, ইমাম শাফেঈ, আর-রিসালাহ, তাহক্বীক্ব : আহমাদ মুহাম্মাদ শাকের, নং ১০৯২, পৃ. ৩৯৬।
[৫]. ডঃ ওমর ইবনু হাসান ওছমান ফালাতাহ, আল-ওয়ায‘উ ফিল হাদীছ (দিমাষ্ক: মাকতাবাতুল গাযালী, ১৯৮১/১৪০১), ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৩২।
[৬]. মুহাম্মাদ তাহের পাট্টানী, তাযকিরাতুল মাওযূ‘আত, পৃ. ৭; আল-ওয়ায‘উ ফিল হাদীছ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৩৩।
[৭]. ফাযায়েলে আমল (উর্দূ), পৃ. ৩৯; বাংলা, পৃ. ১১৬।
[৮]. ফাযায়েলে আমল (উর্দূ), পৃ. ৩৯; বাংলা, পৃ. ১১৬।
[৯]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৯৭, ১ম খণ্ড, পৃ. ৮৪, (ইফাবা হা/৫৭০, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৫), ‘ছালাতের ওয়াক্ত সমূহ’ অধ্যায়, ‘যে ব্যক্তি ছালাত ভুল করে’ অনুচ্ছেদ-৩৭; ছহীহ মুসলিম, হা/৬৮০, ৬৮৪, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৩৮, (ইফাবা হা/১৪৩১ ও ১৪৩৬), ‘মসজিদ সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫৬; মিশকাত, হা/৬০৩, পৃ. ৬১ এবং হা/৬৮৪, পৃ. ৬৬-৬৭; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/৬৩৩, ২য় খণ্ড, পৃ. ২০৮।
[১০]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৯৬ ও ৫৯৮, ১ম খণ্ড, পৃ. ৮৪, (ইফাবা হা/৫৬৯, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৫), ‘ছালাতের সময়’ অধ্যায়, ‘ওয়াক্ত পার হয়ে যাওয়ার পর রাসূল ফ জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করেছেন’ অনুচ্ছেদ-৩৬; ছহীহ মুসলিম, হা/৬৩১, ১ম খণ্ড, পৃ. ২২৭, (ইফাবা হা/১৩০৩), ‘মসজিদ সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৭।
[১১]. ছহীহ মুসলিম, হা/৬৮০, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৩৮, (ইফাবা হা/১৪৩১), ‘মসজিদ সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫৬; মিশকাত, হা/৬৮৪, পৃ. ৬৬-৬৭; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/৬৩৩, ২য় খণ্ড, পৃ. ২০৮।
[১২]. ফাযায়েলে আমল, ফাযায়েলে নামায অংশ (উর্দূ), পৃ. ৩১-৩৩; (বাংলা), পৃ. ১০৪-১০৬; ইবনু হাজার হায়ছামী, আল-যাওয়াজির আন ইক্বতিরাফিল কাবাইর, (বৈরূত : ১৯৯৯), পৃ. ২৬৪।
[১৩]. আরশীফ মুলতাক্বা আহলিল হাদীছ, ৪১তম খণ্ড, পৃ. ১১৬।
[১৪]. ফাযায়েলে আমল, (উর্দূ) পৃ. ৩৪; বাংলা, পৃ. ১০৬।
[১৫]. ফাযায়েলে আমল, পৃ. ১২৫; (উর্দূ), ফাযায়েলে নামায অংশ, পৃ. ৪৫।
[১৬]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৭৭, (ইফাবা হা/৪৬৩, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৫৯), ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘বাজারের মসজিদে ছালাত’ অনুচ্ছে এবং হা/৬৪৫, ‘আযান, অধ্যায়, ‘জামা‘আতে ছালাতের ফযীলত’ অনুচ্ছেদ; মিশকাত, হা/১০৫২, পৃ. ৯৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/৯৮৫, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৪৪।
[১৭]. আবু দাঊদ, হা/৫৬০, ১ম খণ্ড, পৃ. ৮৩।
[১৮]. ফাযায়েলে আমল (বাংলা), পৃ. ১৬০; (উর্দূ), পৃ. ৬৮।
[১৯]. ফাযায়েলে আমল (বাংলা), পৃ. ১৬০, (উর্দূ), পৃ. ৬৮।
[২০]. ফাযায়েলে আমল (বাংলা), পৃ. ১৬০, (ঊর্দূ), পৃ. ৬৮।
[২১]. ফাযায়েলে আমল (বাংলা), পৃ. ৭৮।
[২২]. রচনা ও সম্পাদনা : মাওলানা মুহাম্মদ আবু ইউসুফ খান, আল-আকাইদ আল-ইসলামিয়্যাহ (ঢাকা : আল-বারাকা লাইব্রেরী, ৩৪, নর্থব্রুক হল রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০), পৃ. ৪৫।
[২৩]. ফাযায়েলে আমল (বাংলা), পৃ. ১৬১, (উর্দূ), পৃ. ৬৮।
[২৪]. ফাযায়েলে আমল (বাংলা), পৃ. ১৬১, ১৫৮, (উর্দূ), পৃ. ৬৬ ও ৬৮।
[২৫]. ফাযায়েলে আমল (বাংলা), পৃ. ১৫৮, (উর্দূ), পৃ. ৬৬।
[২৬]. ফাযায়েলে আমল (বাংলা), পৃ. ১৬১, (উর্দূ), পৃ. ৬৮।
[২৭]. ফাযায়েলে আমল (বাংলা), পৃ. ১৬০, (উর্দূ), পৃ. ৬৭।
[২৮]. ফাযায়েলে আমল (বাংলা), পৃ. ১২৫-১২৬, (উর্দূ), পৃ. ৪৬।
[২৯]. ফাযায়েলে আমল (বাংলা), পৃ. ১৫৭, (উর্দূ), পৃ. ৬৫-৬৬।
[৩০]. ফাযায়েলে আমল (বাংলা), পৃ. ১৫৬, (উর্দূ), পৃ. ৬৫।
[৩১]. ফাযায়েলে আমল, পৃ. ১৫৯, (উর্দূ), পৃ. ৬৭।
[৩২]. ফাযায়েলে আমল, পৃ. ১১৮।
[৩৩]. ছহীহ বুখারী. হা/১৩৩৮, (ইফাবা হা/১২৫৭, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪০২), ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৬৬ ও ১৩৭৪; মিশকাত, হা/১২৬ ও ১৩১।
[৩৪]. ফাযায়েলে আমল, পৃ. ১৫২, (উর্দূ), পৃ. ৬২।
[৩৫]. ফাযায়েলে আমল, পৃ. ১৫৩, (উর্দূ), পৃ. ৬৩।
[৩৬]. ফাযায়েলে নামায, পৃ. ৫৫।
প্রসঙ্গসমূহ »:
দাওয়াত