সালাফী মানহাজের মূলনীতিসমূহ
-আব্দুল গাফফার মাদানী*
(শেষ কিস্তি)
৯. প্রবৃত্তির অনুসারী ও বিদ‘আতীদের কিতাব থেকে জ্ঞান অর্জন না করা
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
وَ مَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنِ افۡتَرٰی عَلَی اللّٰہِ کَذِبًا اَوۡ کَذَّبَ بِاٰیٰتِہٖ ؕ اِنَّہٗ لَا یُفۡلِحُ الظّٰلِمُوۡنَ
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে বা তার আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে? নিশ্চয় যালিমরা সাফল্য লাভ করতে পারে না’ (সূরা আল-আন‘আম :২১)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,
قُلۡ اَرَءَیۡتُمۡ مَّاۤ اَنۡزَلَ اللّٰہُ لَکُمۡ مِّنۡ رِّزۡقٍ فَجَعَلۡتُمۡ مِّنۡہُ حَرَامًا وَّ حَلٰلًا ؕ قُلۡ آٰللّٰہُ اَذِنَ لَکُمۡ اَمۡ عَلَی اللّٰہِ تَفۡتَرُوۡنَ.
‘আপনি বলুন, আচ্ছা বলতো, আল্লাহ তোমাদের জন্য যা কিছু রিযিক পাঠিয়েছেন, অতঃপর তোমরা ওর কতক অংশ হারাম এবং কতক অংশ হালাল বানিয়ে নিলে; আপনি জিজ্ঞেস করুন, আল্লাহ কি তোমাদেরকে অনুমতি দিয়েছেন, না-কি তোমরা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করছো? (সূরা ইউনুস : ৫৯)।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُوْرِ، فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ ‘সাবধান! প্রতিটি নব আবিষ্কার সম্পর্কে! কারণ প্রতিটি নব আবিষ্কার হল বিদ‘আত এবং প্রতিটি বিদ‘আত হল ভ্রষ্টতা’।[১]
ইবনু কুদামা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সালাফগণ বিদ‘আতীদের সহচর্য থেকে এবং তাদের কথা শুনতে ও তাদের বই পুস্তক পড়তে নিষেধ করতেন’।[২]
ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘নিশ্চয় বিদ‘আতের দিকে আহ্বানকারীদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের পিছনে ছালাত পড়া যাবে না, তাদের থেকে ইলম গ্রহণ করা যাবে না এবং তাদের সাথে বিবাহ-শাদি দেয়া যাবে না’।[৩]
সুফিয়ান সাওরী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘কেউ যদি কোন বিদ‘আতীর নিকট কিছু শ্রবণ করে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার সেই শ্রবণে কোন উপকার দিবে না। আর যদি সে তার সাথে মুছাফাহা করে, তাহলে সে যেন ইসলামের বন্ধন একটা একটা করে খুলে ফেলল’।[৪]
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘তোমরা কোন বিদ‘আতীর থেকে কোন কিছু লিখতে নিজেকে হেফাজত করবে চাই তা কম হোক বা বেশি, বরং তোমাদের জন্য আবশ্যক হল আহলুল হাদীছদের অনুসরণ’।[৫]
১০. পূর্বপুরুষ অথবা নির্দিষ্ট কোন মাযহাবের গোঁড়ামি না করা
মহান আল্লাহ বলেন,
وَ اِذَا قِیۡلَ لَہُمۡ تَعَالَوۡا اِلٰی مَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰہُ وَ اِلَی الرَّسُوۡلِ قَالُوۡا حَسۡبُنَا مَا وَجَدۡنَا عَلَیۡہِ اٰبَآءَنَا ؕ اَوَ لَوۡ کَانَ اٰبَآؤُہُمۡ لَا یَعۡلَمُوۡنَ شَیۡئًا وَّ لَا یَہۡتَدُوۡنَ.
‘আর যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার দিকে ও রাসূলের দিকে আস’, তারা বলে, ‘আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদের যার উপর পেয়েছি তাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। যদিও তাদের পিতৃপুরুষরা কিছুই জানত না এবং হেদায়াতপ্রাপ্ত ছিল না তবুও?’ (সূরা আল-মায়েদা : ১০৪)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন, اِنَّا وَجَدۡنَاۤ اٰبَآءَنَا عَلٰۤی اُمَّۃٍ وَّ اِنَّا عَلٰۤی اٰثٰرِہِمۡ مُّقۡتَدُوۡنَ ‘নিশ্চয় আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে এক মতাদর্শের উপর পেয়েছি এবং নিশ্চয় আমরা তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করব’ (সূরা যুখরুফ : ২৩)।
عَنْ ابْنِ شِهَابٍ قَالَ أَخْبَرَنِيْ سَعِيْدُ بْنُ الْمُسَيَّبِ عَنْ أَبِيْهِ أَنَّهُ أَخْبَرَهُ أَنَّهُ لَمَّا حَضَرَتْ أَبَا طَالِبٍ الْوَفَاةُ جَاءَهُ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ فَوَجَدَ عِنْدَهُ أَبَا جَهْلِ بْنَ هِشَامٍ وَعَبْدَ اللهِ بْنَ أَبِي أُمَيَّةَ بْنِ الْمُغِيْرَةِ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لِأَبِيْ طَالِبٍ يَا عَمِّ قُلْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ كَلِمَةً أَشْهَدُ لَكَ بِهَا عِنْدَ اللهِ فَقَالَ أَبُوْ جَهْلٍ وَعَبْدُ اللهِ بْنُ أَبِيْ أُمَيَّةَ يَا أَبَا طَالِبٍ أَتَرْغَبُ عَنْ مِلَّةِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَلَمْ يَزَلْ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَعْرِضُهَا عَلَيْهِ وَيَعُودَانِ بِتِلْكَ الْمَقَالَةِ حَتَّى قَالَ أَبُوْ طَالِبٍ آخِرَ مَا كَلَّمَهُمْ هُوَ عَلَى مِلَّةِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ وَأَبَىْ أَنْ يَقُوْلَ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَمَا وَاللهِ لَأَسْتَغْفِرَنَّ لَكَ مَا لَمْ أُنْهَ عَنْكَ فَأَنْزَلَ اللهُ تَعَالَى فِيْهِ (مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ) الآيَةَ.
সাঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ তালিব এর মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) তার নিকট আসলেন। তিনি সেখানে আবূ জাহল ইবনু হিশাম ও আব্দুল্লাহ ইবনু আবূ উমাইয়্যা ইবনু মুগীরাকে উপস্থিত দেখতে পেলেন। (রাবী বলেন) আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আবূ তালিবকে লক্ষ্য করে বললেন, চাচাজান! ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহু’ কালিমা পাঠ করুন, তাহলে এর অসীলায় আমি আল্লাহর সমীপে আপনার জন্য সাক্ষ্য দিতে পারব। আবূ জাহল ও আব্দুল্লাহ ইবনু আবূ উমাইয়্যা বলে উঠল, ওহে আবূ তালিব! তুমি কি আব্দুল মুত্তালিবের ধর্ম হতে বিমুখ হবে? অতঃপর আল্লাহর রাসূল (ﷺ) তার নিকট কালিমাহ পেশ করতে থাকেন, আর তারা দু’জনও তাদের উক্তি পুনরাবৃত্তি করতে থাকে। অবশেষে আবূ তালিব তাদের সামনে শেষ কথাটি যা বলল, তা এই যে, সে আব্দুল মুত্তালিবের ধর্মের উপর অবিচল রয়েছে, সে ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহু’ বলতে অস্বীকার করল। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বললেন, আল্লাহর কসম! তবুও আমি আপনার জন্য ক্ষমা কামনা করতে থাকব, যতক্ষণ না আমাকে তা হতে নিষেধ করা হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা আয়াত নাযিল করেন, مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ ‘নবীর জন্য সঙ্গত নয়’ (সূরা আত-তওবা : ১১৩)।[৬]
বিশিষ্ট তাবেঈ মুজাহিদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ব্যতীত তাঁর পরে এমন কেউ নেই যে তার কথা গ্রহণ করা হয় পরিত্যাগ করা হয় না’।[৭]
ইমাম শাফিঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘কোন আলেমের জন্য জায়েয নয় কারো কথার কারণে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কথা পরিহার করা’।[৮]
সঊদী আরবের মুফতী শায়খ আব্দুল আযীয বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
وأنا الحمد لله لست بمتعصب ولكني احكم الكتاب والسنة وابني فتاواي علي ما قاله الله ورسوله، لا علي تقليد الحنابلة ولا غيرهم.
‘আল-হামদুলিল্লাহ আমি গোঁড়া নই। কিন্তু আমি কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী ফায়ছালা দেই। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর কথার উপর আমার ফৎওয়া সমূহের ভিত্তি নির্মাণ করি। হাম্বলী বা অন্যদের তাক্বলীদের উপরে নয়’।[৯]
ইয়ামানের প্রসিদ্ধ সালাফী আলেম শায়খ মুক্ববিল বিন হাদী আল-ওয়াদিঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, التقليد حرام لا يجوز لمسلم ان يقلد في دين الله ‘তাক্বলীদ হারাম। কোন মুসলিমের জন্য আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে কারো তাক্বলীদ করা জায়েয নয়’।[১০]
১১. ছাহাবীদের ভালোবাসা এবং তাদের ভালো দিক নিয়ে আলোচনা করা, সাথে সাথে তাদের মাঝে যা ঘটেছে সে বিষয়ে চুপ থাকা
মহান আল্লাহ বলেন, مُحَمَّدٌ رَّسُوۡلُ اللّٰہِ ؕ وَ الَّذِیۡنَ مَعَہٗۤ اَشِدَّآءُ عَلَی الۡکُفَّارِ رُحَمَآءُ بَیۡنَہُمۡ ‘মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল; আর তার সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, তাদের পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল’ (সূরা মুহাম্মাদ : ২৯)। মহান আল্লাহ অন্যত্রে বলেন,
لَقَدۡ رَضِیَ اللّٰہُ عَنِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اِذۡ یُبَایِعُوۡنَکَ تَحۡتَ الشَّجَرَۃِ فَعَلِمَ مَا فِیۡ قُلُوۡبِہِمۡ فَاَنۡزَلَ السَّکِیۡنَۃَ عَلَیۡہِمۡ وَ اَثَابَہُمۡ فَتۡحًا قَرِیۡبًا
‘অবশ্যই আল্লাহ মুমিনগণের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন, যখন তারা গাছের নিচে আপনার কাছে বাই‘আত গ্রহণ করেছিল, অতঃপর তাদের অন্তরে যা ছিল তা তিনি জেনে নিয়েছেন; ফলে তিনি তাদের উপর প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে আসন্ন বিজয়ে পুরস্কৃত করলেন’ (সূরা আল-ফাত্হ : ১৮)।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَا تَسُبُّوْا أَصْحَابِيْ لَا تَسُبُّوْا أَصْحَابِيْ فَوَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ لَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا أَدْرَكَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلَا نَصِيْفَهُ
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমরা আমার ছাহাবীগণকে গালি দিয়ো না বা কুৎসা করো না। তোমরা আমার ছাহাবীদের কুৎসা করবে না। সে সত্তার শপথ! যার হাতে আমার জীবন, তোমাদের মাঝে কেউ যদি উহুদ পর্বতের ন্যায় স্বর্ণ খরচ করে তবুও তাদের কারোর এক মুদ কিংবা অর্ধ মুদের সমতুল্য হবে না।[১১]
عَنِ الْبَرَاءَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ ﷺ أَوْ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ ﷺ الأَنْصَارُ لَا يُحِبُّهُمْ إِلَّا مُؤْمِنٌ وَلَا يُبْغِضُهُمْ إِلَّا مُنَافِقٌ فَمَنْ أَحَبَّهُمْ أَحَبَّهُ اللهُ وَمَنْ أَبْغَضَهُمْ أَبْغَضَهُ اللهُ
বারা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, মুমিন ছাড়া আনছারদেরকে কেউ ভালোবাসবে না এবং মুনাফিক্ব ছাড়া কেউ তাঁদের প্রতি ঘৃণা পোষণ করে না। যে ব্যক্তি তাঁদেরকে ভালোবাসবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ভালোবাসবেন। আর যে ব্যক্তি তাঁদের সাথে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ঘৃণা করবেন।[১২]
عَنْ ثَوْبَانَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ إِذَا ذُكِرَ أَصْحَابِيْ فَأَمْسِكُوْا
ছাওবান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যখন আমার ছাহাবীদের আলোচনা আসে, তখন (তাদের ব্যাপারে সমালোচনা করা থেকে) নিজেকে বিরত রাখো।[১৩]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ سَبَّ أَصْحَابِيْ فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ
ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যারা আমার ছাহাবীদেরকে মন্দ বলে, তাদের প্রতি আল্লাহর, ফেরেস্তাদের এবং জগদ্বাসীর অভিশাপ বর্ষিত হোক।[১৪]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مُغَفَّلٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ اللهَ اللهَ فِيْ أَصْحَابِيْ، لَا تَتَّخِذُوْهُمْ غَرَضًا بَعْدِيْ، فَمَنْ أَحَبَّهُمْ فَبِحُبِّيْ أَحَبَّهُمْ، وَمَنْ أَبْغَضَهُمْ فَبِبُغْضِيْ أَبْغَضَهُمْ، وَمَنْ آذَاهُمْ فَقَدْ آذَانِيْ، وَمَنْ آذَانِيْ فَقَدْ آذَى اللهَ وَمَنْ آذَى اللهَ فَيُوْشِكُ أَنْ يَأْخُذَهُ
আব্দুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, আমার ছাহাবীদের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আল্লাহকে ভয় কর। আমার পরবর্তীকালে তোমরা তাঁদের সমালোচনার নিশানায় পরিণত করো না। কারণ, যে তাঁদের ভালোবাসবে সে আমার মুহাব্বতেই তাঁদের ভালোবাসবে। আর যে তাঁদের অপসন্দ করবে সে আমাকে অপসন্দ করার ফলেই তাঁদের অপসন্দ করবে। আর যে তাঁদের কষ্ট দেবে সে আমাকেই কষ্ট দেবে। আর যে আমাকে কষ্ট দেবে সে যেন আল্লাহকেই কষ্ট দিল। আর যে আল্লাহকে কষ্ট দেবে অচিরেই আল্লাহ তাকে পাকড়াও করবেন।[১৫]
কতিপয় সালাফে ছালেহীনের অভিমত,
وَقَالَ بَعْضُ السَّلَفِ: بَيْنَمَا أَنَا عَلَى جَبَلٍ بِالشَّامِ إِذْ سَمِعْتُ هَاتِفًا يَقُوْلُ مَنْ أَبْغَضَ الصِّدِّيْقَ فَذَاكَ زِنْدِيْقٌ وَمَنْ أَبْغَضَ عُمَرَ فَإِلَى جَهَنَّمَ زُمَرًا وَمَنْ أَبْغَضَ عُثْمَانَ فَذَاكَ خَصْمُهُ الرَّحْمَنُ، وَمَنْ أَبْغَضَ عَلِيًا فَذَاكَ خَصْمُهُ النَّبِيُّ وَمَنْ أَبْغَضَ مُعَاوِيَهْ سَحَبَتْهُ الزَّبَانِيَهْ، إِلَى جَهَنَّمَ الْحَامِيَهْ، وَيُرْمَى بِهِ فِي الْهَاوِيَهْ
‘সালাফে ছলেহীনের একজন বলেন, যখন আমি শামের এক পাহাড়ে অবস্থান করছিলাম তখন এক (অদৃশ্য) ঘোষককে বলতে শুনলাম, (আবূ বকর) ছিদ্দীকের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী হল যিনদীক, ধর্মদ্রোহী। উমরের প্রতি বিদ্বেষীর ঠাঁই হল জাহান্নাম। উছমান বিদ্বেষীর প্রতিপক্ষ হলেন আল্লাহ। আলী বিদ্বেষীর প্রতিপক্ষ হলেন নবী (ﷺ)। আর যে মু‘আবিয়ার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে (জাহান্নামের) ফেরেশতারা তাকে হেঁচড়ে নিয়ে যাবে উত্তপ্ত জাহান্নামের দিকে এবং সে নিক্ষিপ্ত হবে উত্তপ্ত অগ্নি গহ্বরে’।[১৬]
قَالَ عَبْدُ اللهِ بْنِ الْمُبَارَكِ : أَنَا ابْنُ الْمُبَارَكِ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ مُسْلِمٍ عَنْ إِبْرَاهِيْمَ بْنِ مَيْسَرَةَ قَالَ مَا رَأَيْتُ عُمَرَ بْنَ عَبْدِ الْعَزِيْزِ ضَرَبَ إِنْسَانًا قَطُّ إِلَّا إِنْسَانًا شَتَمَ مُعَاوِيَةَ فَضَرَبَهُ أَسْوَاطً
‘আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ইবনু মুবারক, মুহাম্মাদ বিন মুসলিম থেকে; তিনি ইবরাহীম বিন মায়সারা থেকে বর্ণনা করে বলেন, ‘মু‘আবিয়ার সমালোচনাকারী এক ব্যক্তি ব্যতীত আমি উমর বিন আব্দুল আযীযকে কোন মানুষের গায়ে হাত উঠাতে দেখিনি। ঐ ব্যক্তিকে তিনি কয়েক ঘা চাবুক লাগিয়ে ছিলেন’।[১৭]
আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের অভিমত,
من أصول أهل السنة سلامة قلوبهم من بغض الصحابة ومن الغل والحقد عليهم، وكذلك ألسنتهم سليمة فلا يسبون ولا يتبرءون من أحد منهم بل يحبون أصحاب رسول الله ﷺ بقلوبهم ويثنون عليهم بألسنتهم ويدعون الله لهم كما وصف الله التابعين لأصحاب الرسول ﷺ من المهاجرين والأنصار فقال الله سبحانه- وَ الَّذِیۡنَ جَآءُوۡ مِنۡۢ بَعۡدِہِمۡ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَا اغۡفِرۡ لَنَا وَ لِاِخۡوَانِنَا الَّذِیۡنَ سَبَقُوۡنَا بِالۡاِیۡمَانِ وَ لَا تَجۡعَلۡ فِیۡ قُلُوۡبِنَا غِلًّا لِّلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا رَبَّنَاۤ اِنَّکَ رَءُوۡفٌ رَّحِیۡمٌ
‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আরো একটি মূলনীতি হল, তারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ছাহাবীদের প্রতি তাদের অন্তর ও জবান পবিত্র রাখে। অন্তর দিয়ে তাদেরকে ভালোবাসে, তাদের প্রতি কোন প্রকার ঘৃণা রাখে না এবং জবান দিয়ে তাদের সমালোচনা ও কুৎসা রটনা করে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর এই বাণীতে ছাহাবীদের গুণাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘এবং যারা এসব অগ্রবর্তী লোকদের পরে এসেছে, তারা বলে, হে আমাদের রব! আমাদেরকে এবং আমাদের সেই সব ভাইকে মাফ করে দাও, যারা আমাদের আগে ঈমান এনেছে। আর আমাদের মনে ঈমানদারদের জন্য কোন হিংসা-বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের রব! তুমি অত্যন্ত মেহেরবান ও দয়ালু’ (সূরা আল-হাশর : ১০)।[১৮]
প্রিয় পাঠক! কুরআন-হাদীছ ও ছাহাবায়ে কেরামের আছার এবং ফুক্বাহায়ে কেরামের অভিমত দিয়ে এতক্ষণের আলোচনায় আশা করি সকলের কাছে স্পষ্ট হয়েছে যে, নাজাতপ্রাপ্তদল কেবল তারাই, যারা সালাফী মানহাজের একনিষ্ঠ অনুসারী এবং আরও স্পষ্ট হয়েছে যে, সালাফী মানহাজের মূল ধারক-বাহক ছাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা করার ব্যাপারে ইসলাম কত কঠোর অবস্থান ঘোষণা করেছে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে সালাফী মানহাজ সঠিকভাবে জেনে-বুঝে শক্ত করে ধারণ করার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!
* শিক্ষক, দারুল হুদা ইসলামী কমপ্লেক্স, বাঘা, রাজশাহী।
তথ্যসূত্র :
[১]. আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৭।
[২]. আল-আদাব আশ-শারি‘আহ লি ইবনিল মুফলেহ, ১১তম খ-, পৃ. ২৩২।
[৩]. ইবনু তাইমিয়্যাহ, মাজমূউল ফাতাওয়া, ২৮তম খ-, পৃ. ২০৫।
[৪]. আল আমর বিল ইত্তেবা লিস সুয়িতি, পৃ. ১৯।
[৫]. সিয়ারু আলামুন নুবালা, ১১তম খ-, পৃ. ২৩২।
[৬]. ছহীহ বুখারী, হা/১৩৬০, ছহীহ মুসলিম, হা/২৪।
[৭]. ছহীহ বুখারী, অধ্যায়, ‘রাফ'উল ইয়াদাঈন’।
[৮]. কিতাবূল উম্ম, ১ম খ-, পৃ. ১৭৭।
[৯]. আল-ইক্বনা‘, পৃ. ৯২।
[১০]. তুহফাতুল মুজীব আলা আসইলাতিল হাযির ওয়াল গারীব, পৃ. ২০৫।
[১১]. ছহীহ মুসলিম, হা/৬৩৮১।
[১২]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৭৮৩, ছহীহ মুসলিম, হা/৭৫।
[১৩]. আল-মু’জামুল কাবীর লিত-ত্বাবরানী, হা/১৪২৭; আল-জামি‘উছ ছগীর, হা/৬১৩।
[১৪]. আল-জামি‘উছ ছগীর, হা/৮৭১৫; ত্বাবরানী ফিল কাবির, হা/১২৭০৯; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ১০ম খ-, পৃ. ২৪।
[১৫]. আল-জামি‘উস ছগীর, হা/১৪৩৬; তিরমিযী, হা/৩৮৬২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০৫৪৯।
[১৬]. আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ৮ম খ-, পৃ. ১৪৯।
[১৭]. প্রাগুক্ত, ৮ম খ-, পৃ. ১৪৮।
[১৮]. শারহুল আক্বীদাতিল ওয়াসিতিয়্যাহ, ১ম খ-, পৃ. ৬৮; আল আছারিল ওয়ারিদা, পৃ. ৫৭৯।
প্রসঙ্গসমূহ »:
সালাফে ছালেহীন