রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০২:০৭ অপরাহ্ন

কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে আলো ও অন্ধকার 

- মূল : ড. সাঈদ ইবনু আলী ইবনু ওয়াহাফ আল-ক্বাহত্বানী 
- অনুবাদ : হাফীযুর রহমান বিন দিলজার হোসাইন * 


(৩য় কিস্তি) 

সপ্তমতঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

اَوَ مَنۡ کَانَ مَیۡتًا فَاَحۡیَیۡنٰہُ وَ جَعَلۡنَا لَہٗ نُوۡرًا یَّمۡشِیۡ بِہٖ فِی النَّاسِ کَمَنۡ مَّثَلُہٗ فِی الظُّلُمٰتِ لَیۡسَ بِخَارِجٍ مِّنۡہَا ؕ کَذٰلِکَ زُیِّنَ لِلۡکٰفِرِیۡنَ مَا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ

‘এমন ব্যক্তি, যে ছিল প্রাণহীন, অতঃপর তাকে আমরা জীবন দান করি এবং তার জন্য আমরা এমন আলোকের ব্যবস্থা করে দিই, যার সাহায্যে সে জনগণের মধে চলাফিরা করতে থাকে, সে কি এমন কোন লোকের মত হতে পারে যে ডুবে আছে অন্ধকারে এবং তা হতে বের হওয়ার পথ পাচ্ছে না? এ রূপেই কাফিরদের জন্য তাদের কার্যকলাপ মনোমুগ্ধকর করে দেয়া হয়েছে’ (সূরা আল-আন‘আম, ৬/১২২)।

এ উদাহরণটি আল্লাহ তা‘আলা মুমিনের ক্ষেত্রে দিয়েছেন, যে হতবিহব্বল অবস্থায় গোমরাহীতে লিপ্ত ছিল। আল্লাহ তা‘আলা তার অন্তরকে ঈমানের মাধ্যমে জীবিত করেছেন। তাকে হেদায়াত নসীব করেছেন, তাকে  রাসূলের অনুসরণের তাওফীক্ব দিয়েছেন’।[১] সে তো ছিল ঈমান, হেদায়াত, ইলমবিহীন মৃত অন্তরের অধিকারী। আল্লাহর এককত্ব, তাঁর দ্বীনের বিধি-বিধান সম্পর্কে একেবারে অজ্ঞ। নাজাত পাওয়ার আমল ছেড়ে দিত। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাকে যে রূহ দিয়ে তৈরি করেছিলেন তা ব্যতীত অন্য একটি রূহের মাধ্যমে জীবন দান করেছেন। সেটা হল ইসলামের দিকে হেদায়াতপ্রাপ্ত রূহ। শরীক বিহীন একক আল্লাহ, তাঁর এককত্ব, তাঁর ভালোবাসা ও ইবাদত সম্পর্কে জ্ঞাত রূহ। তার জন্য ‘আলোর’ পথ নির্ধারণ করে দিয়েছেন, এর মাধ্যমে সে চলাফেরা করে। আলোটি হচ্ছে, আল-কুরআন ও ইসলাম। অজ্ঞতা, কুফর, শিরক, সংশয়, ভ্রষ্টতা সতবিমুখ, পাপে লিপ্ত ব্যক্তি কি উপরের উল্লেখিত আলোকিত ব্যক্তির সমপর্যায়ের? কখনো নয়, সে তো অন্ধকার হতে বের-ই হতে পারবে না। পথগুলো যেন তার কাছে সংশয়ে পরিপূর্ণ! অন্ধারাচ্ছন্ন হয়ে আছে। সকল প্রকার দুশ্চিন্তা, অশান্তি, কষ্ট তার নিকটে ভিড় জমিয়েছে। এ ব্যক্তি কখনো ঐ আলোকিত ব্যক্তির সমপর্যায়ের হতে পারে না। যেমনিভাবে দিন-রাত, আলো-অন্ধকার, জীবিত-মৃত সমপর্যায়ের নয়। এ আয়াতে যেন বলা হচ্ছে, যার বিন্দুমাত্র বিবেক-বুদ্ধি আছে, তার অবস্থা কিভাবে এমন হতে পারে? কিভাবে সে হতাশা-নিরাশার অন্ধকারের মাঝে অবস্থান করে? আল্লাহ তা‘আলা উত্তর দেন যে, ‘কাফিরদের জন্য তাদের কর্মগুলোকে সু-সজ্জিত করা হয়েছে।” শয়তান সদা-সর্বদা তাদের কর্মগুলোকে তাদের নিকটে সুন্দর করে উপস্থাপন করছে। তাদের অন্তরে সু-বিন্যস্ত করে গেঁথে দিচ্ছে। আর তারাও সেটাকে ভালো মনে করছে। এটাকেই সত্য মনে করছে, এ আক্বীদা-বিশ্বাস তাদের অন্তরে লালন করছে। এটা যেন তাদের সাথীতে পরিণত হয়েছে’।[২]

অষ্টমতঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, یُرِیۡدُوۡنَ  اَنۡ یُّطۡفِـُٔوۡا نُوۡرَ اللّٰہِ بِاَفۡوَاہِہِمۡ وَ یَاۡبَی اللّٰہُ  اِلَّاۤ  اَنۡ  یُّتِمَّ  نُوۡرَہٗ وَ لَوۡ  کَرِہَ  الۡکٰفِرُوۡنَ ‘আল্লাহর নূরকে নিজেদের মুখের ফুৎকার দ্বারা নির্বাপিত করে দিতে চায়, কিন্ত আল্লাহ স্বীয় নূরকে (দ্বীন ইসলাম) পূর্ণত্বে পৌঁছানো ব্যতীত নিরস্ত হবেন না, যদিও কাফিরেরা অপ্রীতিকরই মনে করে’ (সূরা আত-তওবাহ: ৯/৩২)।

আল্লাহ তা‘আলা পরিষ্কার ঘোষণা দিয়েছেন যে, ইয়াহুদী, নাছারা ও তাদের সঙ্গীসাথী মুশরিকরা আল্লাহর নূর-আলোকে ফুঁক দিয়ে নিভিয়ে দিতে চায়। আল্লাহর নূর-আলো হল- আল্লাহর দ্বীন, যা দিয়ে মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে প্রেরণ করা হয়েছে। আল্লাহ তাঁর দ্বীনকে নূর আলো বলে আখ্যা দিয়েছেন। কেননা বাতিল দ্বীন ও অজ্ঞতার অন্ধকার কাটিয়ে এর মাধ্যমে আলোকিত হওয়া যায়। দ্বীন হচ্ছে, সঠিক বিষয় জানা এবং সঠিক আমল করার নাম। এই নূর-আলোর মাঝেই আল্লাহর এককত্বের প্রমাণ রয়েছে। এটা এমন নূর-আলো, যাতে সবকিছু সবিস্তারে বলে দেয়া হয়েছে। এ সমস্ত ইয়াহুদী, নাছারা ও পথভ্রষ্ট মুশরিকরা আল্লাহর দ্বীনকে তাদের বাতিল মতবাদের মাধ্যমে, তাদের ঝগড়া-ফাসাদ ও মিথ্যা দাবীর মাধ্যমে নিঃশেষ করে দিতে চায়। তারা ঐ ব্যক্তির মত যে ফুঁক দিয়ে চন্দ্র-সূর্যের কিরণকে নিভিয়ে দিতে চায়! এটা কতই না হাস্যকর ব্যাপার। তারা কখনো তাদের উদ্দেশ্যে সফল হতে পারে না। আর তাদের বিবেক আবোল-তাবোল চিন্তা-ধারা ও কদার্যতা মুক্ত হতে পারে না’।[৩] অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ مَنۡ  اَظۡلَمُ مِمَّنِ افۡتَرٰی عَلَی اللّٰہِ الۡکَذِبَ وَ ہُوَ  یُدۡعٰۤی  اِلَی الۡاِسۡلَامِ ؕ وَ  اللّٰہُ  لَا  یَہۡدِی الۡقَوۡمَ  الظّٰلِمِیۡنَ- یُرِیۡدُوۡنَ  لِیُطۡفِـُٔوۡا  نُوۡرَ اللّٰہِ  بِاَفۡوَاہِہِمۡ وَ اللّٰہُ  مُتِمُّ  نُوۡرِہٖ  وَ لَوۡ  کَرِہَ  الۡکٰفِرُوۡنَ

‘যে ব্যক্তি ইসলামের দিকে আহুত হয়েও আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে তার অপেক্ষা অধিক যালিম আর কে হতে পারে? আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎ পথে পরিচালিত করেন না’। তারা আল্লাহর নূর ফুৎকারে নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহ তাঁর নূর পূর্ণরূপে উদ্ভাসিত করবেন, যদিও কাফিরেরা তা অপসন্দ করে’ (সূরা আছ-ছাফ: ৬১/৭-৮)।

নবমতঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, قُلۡ ہَلۡ یَسۡتَوِی الۡاَعۡمٰی وَ الۡبَصِیۡرُ ۬ۙ اَمۡ ہَلۡ تَسۡتَوِی الظُّلُمٰتُ وَ النُّوۡرُ ‘(হে নবী!) আপনি বলুন, ‘অন্ধ ও দৃষ্টিমান ব্যক্তি কি সমান হতে পারে? না-কি অন্ধকার ও আলো সমান হতে পারে?’ (সূরা আর-রা‘দ: ১৩/১৬)। ক্বাতাদাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, أما الأعمى والبصير فالكافر والمؤمن وأما الظلمات والنور فالهدى والضلالة  ‘অন্ধ এবং দৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তি হচ্ছে কাফির এবং মুমিন। আর অন্ধকারসমূহ এবং নূর-আলো হচ্ছে হেদায়াত ও ভ্রষ্টতা’।[৪]

দশমত: আল্লাহ তা‘আলা বলেন, کِتٰبٌ اَنۡزَلۡنٰہُ  اِلَیۡکَ لِتُخۡرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمٰتِ اِلَی النُّوۡرِ ‘এই কিতাব, যা আমরা আপনার প্রতি নাযিল করেছি, যাতে আপনি মানুষকে তাদের রবের অনুমতিক্রমে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আন’ (সূরা ইবরাহীম: ১৪/১)।

ক্বাতাদাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ  ‘যাতে আপনি মানুষদের অন্ধকার হতে আলোর পথে বের করে আনতে পারেন। অর্থাৎ পথভ্রষ্টতা হতে হেদায়াতের দিকে’।[৫] সা‘দী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

ليخرج الناس من ظلمات الجهل والكفر والأخلاق السيئة وأنواع المعاصي إلى نور العلم والإيمان والأخلاق الحسنة

‘যাতে তিনি মানুষদেরকে অজ্ঞতা, বর্বরতা, অসভ্যতা, কুফরী, মন্দ চরিত্র ও সকল প্রকার পাপকর্ম হতে বের করে জ্ঞান, ঈমান ও সৎ চরিত্রের পথে নিয়ে আসতে পারেন’।[৬]

কাদশ: আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ لَقَدۡ اَرۡسَلۡنَا مُوۡسٰی بِاٰیٰتِنَاۤ  اَنۡ  اَخۡرِجۡ  قَوۡمَکَ مِنَ الظُّلُمٰتِ  اِلَی النُّوۡرِ ۬ۙ وَ ذَکِّرۡہُمۡ بِاَیّٰىمِ اللّٰہِ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ  لِّکُلِّ  صَبَّارٍ  شَکُوۡرٍ

‘মূসাকে আমরা আমাদের নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছিলাম এবং বলেছিলাম, তোমার সম্প্রদায়কে অন্ধকার হতে আলোতে আনায়ন কর এবং তাদেরকে আল্লাহর দিনগুলো দ্বারা উপদেশ দাও, এতে তো নিদর্শন রয়েছে পরম ধৈর্যশীল ও পরম কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য’ (সূরা ইবরাহীম: ১৪/৫)। অর্থাৎ আপনি তাদেরকে পথভ্রষ্টতা থেকে হেদায়াতের পথে আহ্বান করুন’।[৭]

আল্লামা সা‘দী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, أي: ظلمات الجهل والكفر وفروعه، إلى نور العلم والإيمان وتوابعه ‘যাতে অসভ্যতা, অজ্ঞতা, কুফর ও এসবের শাখা-প্রশাখা হতে বের করে ইলম, ঈমান ও তার শাখা-প্রশাখার দিকে নিয়ে আসতে পারেন’।[৮]

দ্বাদশ: আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

اَللّٰہُ  نُوۡرُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ مَثَلُ نُوۡرِہٖ کَمِشۡکٰوۃٍ  فِیۡہَا مِصۡبَاحٌ ؕ اَلۡمِصۡبَاحُ فِیۡ زُجَاجَۃٍ ؕ اَلزُّجَاجَۃُ کَاَنَّہَا کَوۡکَبٌ دُرِّیٌّ یُّوۡقَدُ مِنۡ شَجَرَۃٍ مُّبٰرَکَۃٍ  زَیۡتُوۡنَۃٍ  لَّا شَرۡقِیَّۃٍ  وَّ لَا غَرۡبِیَّۃٍ ۙ یَّکَادُ زَیۡتُہَا یُضِیۡٓءُ وَ لَوۡ لَمۡ تَمۡسَسۡہُ نَارٌ ؕ نُوۡرٌ عَلٰی نُوۡرٍ ؕ یَہۡدِی اللّٰہُ  لِنُوۡرِہٖ مَنۡ یَّشَآءُ ؕ وَ یَضۡرِبُ اللّٰہُ الۡاَمۡثَالَ لِلنَّاسِ ؕ وَ اللّٰہُ  بِکُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمٌ

‘আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর জ্যোতি তাঁর জ্যোতির উপমা যেন একটি দীপাধার, যার মধ্যে আছে একটি প্রদীপ; প্রদীপটি একটি কাঁচের আবরণের মধ্যে স্থাপিত, কাঁচের আবরণটি উজ্জ্বল নক্ষত্র সদৃশ্য; এটা প্রজ্জ্বলিত করা হয় পুতঃপবিত্র যাইতূন বৃক্ষের তেল দ্বারা যা প্রাচ্যের নয়, প্রতিচ্যেরও নয়, আগুন ওকে স্পর্শ না করলেও যেন ওর তেল উজ্জ্বল আলো দিচ্ছে; জ্যোতির উপর জ্যোতি! আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথ নির্দেশ করেন তাঁর জ্যোতির দিকে; আল্লাহ মানুষের জন্য উপমা দিয়ে থাকেন এবং আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞ’ (সূরা আন-নূর: ২৪/৩৫)।

اَللّٰہُ  نُوۡرُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ‘আল্লাহ তা‘আলা আসমানসমূহ ও যমীনের নূর-আলো’। এ আয়াতের তাফসীরের ক্ষেত্রে কয়েকটি বক্তব্য রয়েছে। যথা:

১.   আল্লাহ তা‘আলা আসমান ও যমীনবাসীর হেদায়াতদানকারী।

২.  আল্লাহ তা‘আলা আসমানসমূহ ও যমীনের সব কিছু; চন্দ্র, সূর্য ও নক্ষত্ররাজি পরিচালনা করেন। তিনিই আসমানসমূহ ও যমীনকে আলোকিত করেন।

৩.  আল্লাহ-ই আসমানসমূহ ও যমীনের আলো-জ্যোতি।[৯]

৪.  ইবনুল ক্বাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, والحق أنه نور السموات والأرض بهذه الاعتبارات كلها ‘সঠিক কথা হচ্ছে, উল্লিখিত সকল দিক বিবেচনায় আল্লাহ আসমানসমূহ ও যমীনের নূর-আলো’।[১০]

অতএব বুঝা গেল আল্লাহ তা‘আলা আসমানসমূহ ও যমীনবাসীর হেদায়াতদাতা। তারা তাঁর নূর-আলোর সাহায্যেই সত্য, সঠিক পথের দিশা পায়। তাঁর হেদায়াতের মাধ্যমেই তারা ভ্রষ্টতা হতে মুক্তি পায়। তিনি-ই আসমানসমূহ ও যমীনের সকল কিছু। চন্দ্র, সূর্য ও নক্ষত্ররাজি তিনি পরিচালনা করেন। তিনি নিজেই নূর-আলো। নিজেকে তিনি নূর-আলো বলে সম্বোধন করেছেন। তিনি তাঁর কিতাব, তাঁর রাসূল, তাঁর দ্বীনকে নূর-আলো স্বরূপ বানিয়েছেন। এই নূর-আলোর মাধ্যমেই তিনি সৃষ্টিকুল হতে আড়াল হয়ে আছেন। তিনি তাঁর অলীদের আবাসকে নূর-আলোতে ভরপুর করে দেন, যা চমকাতে থাকে’।[১১]

আল্লামা আব্দুর রহমান ইবনু নাছির আস-সা‘দী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, اَللّٰہُ نُوۡرُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ‘আল্লাহ আসমানসমূহ ও যমীনের নূর-আলো’। উপলব্ধি ও বিশ্বাসগতভাবে। স্বয়ং আল্লাহ সত্ত্বাগতভাবেই নূর-আলো। তাঁর পর্দাও নূর-আলো। আল্লাহ যদি এ পর্দা উন্মোচন করেন, তাহলে সমস্ত সৃষ্টিজগত জ্বলে যাবে। তাঁর নূর-আলোর মাধ্যমেই আরশ, কুরসী, চন্দ্র, সূর্য আলোকিত হয়েছে। এ নূর-আলোর মাধ্যমেই জান্নাত আলোকিত হয়েছে। অনুরূপভাবে বিশ্বাসকেন্দ্রিক বিষয়াদিও আল্লাহর দিকে ফিরে যায়। তাঁর কিতাব, তাঁর শরী‘আত, তাঁর রাসূল ও মুমিন বান্দাদের, তাঁর প্রতি ঈমান ও দৃঢ় বিশ্বাস ও নূর-আলো। যদি তাঁর নূর- আলো না থাকত সবকিছু অন্ধকার ছেয়ে যেত। একারণেই যেখানে আলো থাকে না, সেখানে অন্ধকারে ছেয়ে যায়’।[১২]

নূর-আলো শব্দটিকে আল্লাহর সাথে দু’ভাবে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। (ক) ছিফাতকে মাওছূফের দিকে সম্পৃক্ত করে, (খ) মাওছূফকে ফায়েলের দিকে সম্পৃক্ত করে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী, وَ اَشۡرَقَتِ  الۡاَرۡضُ بِنُوۡرِ رَبِّہَا  ‘আর যমীন তার রবের নূরে আলোকিত হবে’ (সূরা যুমার: ৩৯/৬৯)। ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা যখন ফায়সালা করতে আসবেন তখন তাঁর নূর বা আলোর মাধ্যমে যমীন আলোকিত হয়ে যাবে’।[১৩]

(ইনশাআল্লাহ চলবে)

* নারায়ণপুর, নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর।

তথ্যসূত্র:
[১]. তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৬৩।
[২]. ইমাম ত্বাবারী, জামি‘ঊল বায়ান ‘আন তা’বীলি আইয়িল কুরআন (তাফসীরে ত্বাবারী), ১২শ খণ্ড, পৃ. ৮৮; ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৫৮; ইবনু কাছীর, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৬৩; সা‘দী, তাইসীরুল কারীমির রাহমান ফী তাফসীরিল কালামিল মান্নান, পৃ. ২৩৪।
[৩]. ইমাম ত্বাবারী, জামি‘ঊল বায়ান ‘আন তা’বীলি আইয়িল কুরআন (তাফসীরে ত্বাবারী), ১৪শ খণ্ড, পৃ. ২১৩-২১৪; ইমাম কুরতুবী, আল-জামি‘ লি আহকামিল কুরআন, ৮ম খণ্ড, পৃ. ৬১৪; ইবনু কাছীর, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৩৪; সা‘দী, তাইসীরুল কারীমির রাহমান ফী তাফসীরিল কালামিল মান্নান, পৃ. ২৯৫ এবং ৭৯৭।
[৪]. ইমাম ত্বাবারী, জামি‘ঊল বায়ান ‘আন তা’বীলি আইয়িল কুরআন (তাফসীরে ত্বাবারী), ১৬তম খণ্ড, পৃ. ৪০৭।
[৫]. ইমাম ত্বাবারী, জামি‘ঊল বায়ান ‘আন তা’বীলি আইয়িল কুরআন (তাফসীরে ত্বাবারী), ১৬শ খণ্ড, পৃ. ৫১২।
[৬]. তাইসীরুল কারীমির রাহমান ফী তাফসীরিল কালামিল মান্নান, পৃ. ৩৭৫।
[৭]. ইমাম ত্বাবারী, জামি‘ঊল বায়ান ‘আন তা’বীলি আইয়িল কুরআন (তাফসীরে ত্বাবারী), ১৬শ খণ্ড, পৃ. ৫১৮।
[৮]. তাইসীরুল কারীমির রাহমান ফী তাফসীরিল কালামিল মান্নান, পৃ. ৩১৬।
[৯]. ইবনু জারীর আত-ত্বাবারী, জামি‘ঊল বায়ান ‘আন তা’বীলি আইয়িল কুরআন (তাফসীরে ত্বাবারী), ১৬শ খণ্ড, পৃ. ৫১২; তাফসীরে বাগাবী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩৪৫; ইমাম কুরতুবী, আল-জামি‘ লি আহকামিল কুরআন, ১১শ খণ্ড, পৃ. ২৫৮; ইবনু কাছীর, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, ৩য় কণ্ড, পৃ. ২৮০; ইবনুল ক্বাইয়িম, ইজতেমাঊল জুয়ুশিল ইসলামিয়াহ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৪।
[১০]. ইবনুল ক্বাইয়িম, ইজতিমাঊল জুয়ুশিল ইসলামিয়াহ আলা গাযওয়াল মু‘ত্বালাহ ওয়াল জাহমিয়াহ, ২য় খণ্ড, পৃ. ১১।
[১১]. ইজতিমাঊল জুয়ুশিল ইসলামিয়াহ আলা গাযওয়াল মু‘ত্বালাহ ওয়াল জাহমিয়াহ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৪।
[১২]. তাইসীরুল কারীমির রাহমান ফী তাফসীরিল কালামিল মান্নান, পৃ. ৫১৭।
[১৩]. ইবনুল ক্বাইয়িম, ইজতেমাঊল জুয়ুশিল ইসলামিয়াহ আলা গাযওয়াল মু‘ত্বালাহ ওয়াল জাহমিয়াহ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৬।




প্রসঙ্গসমূহ »: কুরআনুল কারীম
দলাদলির কুপ্রভাব : উত্তরণের উপায় (শেষ কিস্তি) - শায়খ মতিউর রহমান মাদানী
বিদ‘আত পরিচিতি (২য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
রামাযানে দাওয়াতী কাজের গুরুত্ব ও প্রভাব - অধ্যাপক মো. আকবার হোসেন
ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমন : সংশয় নিরসন (৩য় কিস্তি) - হাসিবুর রহমান বুখারী
ইসলামে বিবাহের গুরুত্ব (৩য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আবূ সাঈদ
শরী‘আত অনুসরণের মূলনীতি (৫ম কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
ছালাতে একাগ্রতা অর্জনের ৩৩ উপায় (৭ম কিস্তি) - আব্দুল হাকীম বিন আব্দুল হাফীজ
সন্তানের মৃত্যুতে ধৈর্যধারণ এবং তার প্রতিদান - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ইসলামী জামা‘আতের মূল স্তম্ভ (১১তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন
আল-কুরআনের আলোকে দাওয়াতের মাধ্যম - আব্দুল গাফফার মাদানী
বিদ‘আত পরিচিতি (৫ম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
হেদায়াত লাভের অনন্য মাস রামাযান - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম

ফেসবুক পেজ