বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৬ অপরাহ্ন

মুসলিম বিভক্তির কারণ ও প্রতিকার

-ড. মুযাফফর বিন মুহসিন


(২য় কিস্তি)

(১ম কিস্তির পর)

উক্ত বিশুদ্ধ আক্বীদায় মতানৈক্য সৃষ্টি করেছে জাল ও যঈফ হাদীছ এবং কুরআন-সুন্নাহর কল্পিত অর্থ ও অপব্যাখ্যা। যেমন- ‘যত কল্লা তত আল্লাহ’, ‘কলব আল্লাহর ঘর’, ‘মুমিনের হৃদয় আল্লাহর আরশ’, ‘আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান’, ‘তিনি নিরাকার, তাঁর কোন আকার নেই’ ইত্যাদি।[১]

কুরআন-হাদীছে তাঁর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিষয়ে যা বলা হয়েছে, তার সবই কুদরতী। অথচ উক্ত দাবীগুলো সবই চরম বিভ্রান্তিকর ও কুরআন-সুন্নাহর প্রকাশ্য বিরোধী। এই মিথ্যা হাদীছগুলো সমাজে প্রচলিত না থাকলে আল্লাহ সম্পর্কে সকল মানুষ একই আক্বীদা পোষণ করত।[২] স্বয়ং আল্লাহ সম্পর্কে যদি পরস্পরের আক্বীদা এরূপ সাংঘর্ষিক হয়, তাহলে মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে কিভাবে?

অনুরূপ রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে ছহীহ আক্বীদা হল, তিনি মুসলিম উম্মাহর জন্য একমাত্র অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব, আমাদের মতই তিনি মাটির মানুষ ছিলেন, তিনি মারা গেছেন। পার্থক্য কেবল তিনি ছিলেন নবী-রাসূলগণের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল, তাঁর কাছে অহি আসত।[৩]

উক্ত ছহীহ আক্বীদায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে জাল বা মিথ্যা হাদীছ সমূহ। যেমন- তিনি নূরের তৈরী। ‘আল্লাহ সর্বপ্রথম মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নূর সৃষ্টি করেছেন’, তাঁর নূর থেকেই সবকিছু তৈরি হয়েছে।[৪] তিনি মরেননি, বরং স্থানান্তরিত হয়েছেন মাত্র। কবর থেকে মানুষের আবেদন, নিবেদন সবকিছুই শুনেন ও পূরণ করেন ইত্যাদি।[৫] আক্বীদাগত প্রায় সকল বিষয়েই এরূপ মতভেদ রয়েছে।

দৈনন্দিন আমল সমূহের দিকে যদি আমরা দৃষ্টি দেই, তাহলে সেখানেও দেখতে পাব নানা মতপার্থক্য ও বিতর্ক। একই আমল বিভিন্ন রকম হওয়ার কারণে সকলে এক সঙ্গে পালন করতে পারে না। বান্দার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হল ‘ছালাত’, যা মুসলিম সমাজকে রাতে-দিনে পাঁচবার একত্রিত হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সময়ে একই স্থানে একত্রিত হয়ে তারা ছালাত আদায় করতে পারে না। ছালাতের বিধি-বিধানগুলোও একই নিয়মে পালন করা যায় না। এ জন্য পৃথক মসজিদ তৈরি হয়েছে, সমাজ ভেঙ্গে চুরমার হয়েছে, মুসলিম উম্মাহর আন্তরিক বন্ধনে স্থায়ী ফাটল ধরেছে। এর পিছনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে যঈফ ও জাল হাদীছ এবং অপব্যাখ্যা।

আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদেরকে নির্দিষ্ট সময়ে ছালাত আদায়ের তাকীদ দিয়ে বলেন, ‘নিশ্চয়ই নির্দিষ্ট সময়ে মুমিনদের উপর ছালাত ফরয করা হয়েছে’ (সূরা আন-নিসা : ১০৩)। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও আউওয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায়ের জন্য বেশী বেশী তাকীদ দিয়েছেন এবং সর্বোত্তম আমল বলেছেন।[৬] কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কুরআন-সুন্নাহর ভুল ব্যাখ্যা করে, যঈফ ও জাল হাদীছের আশ্রয় নিয়ে এবং দলীয় গোঁড়ামী প্রদর্শন করে স্থায়ীভাবে সর্বদা বিলম্বিত ওয়াক্তে ছালাত আদায় করছে। এটা প্রহসন ছাড়া কিছুই নয়।[৭]

এরপর ছালাত আদায়ের ক্ষেত্রে কেউ হাত বাঁধছে বুকের উপরে, আবার কেউ বাঁধছে নাভির নীচে। কেউ ইমামের পিছনে সূরা ফাতেহা পড়ছে, কেউ পড়ছে না। কেউ জোরে আমীন বলছে, আর কেউ আস্তে বলছে। কেউ রাফ‘উল ইয়াদায়েন করছে, কেউ করছে না। এভাবে ছালাতের প্রায় প্রত্যেকটি মাসআলায় রয়েছে ভিন্নতা। এই ভিন্নতার কারণও যঈফ ও জাল হাদীছ। যেমন- বুকের উপর হাত বাঁধা ও ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা সম্পর্কে ছহীহ বুখারী সহ অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে ছহীহ সূত্রে অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।[৮]

পক্ষান্তরে নাভির নীচে হাত বাঁধা সম্পর্কে যে কয়েকটি বর্ণনা এসেছে তার সবই মুহাদ্দিছগণের নিকটে যঈফ অথবা ভিত্তিহীন।[৯] ইমামের পিছনে সূরা ফাতেহা পড়া সম্পর্কে প্রায় সকল হাদীছ গ্রন্থেই ছহীহ সনদে অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।[১০] অপরদিকে ইমামের পিছনে সূরা ফাতেহা না পড়ার পক্ষে যে বর্ণনাগুলো এসেছে তার কোনটা যঈফ, কোনটা জাল। এছাড়া যা কিছু পেশ করা হয় তা কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বিকৃত ব্যাখ্যা, যার সাথে শরী‘আতের কোন সম্পর্ক নেই।[১১]

ছালাতে জোরে আমীন বলার পক্ষে ছহীহ বুখারী ও মুসলিম সহ অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে অনেক ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।[১২]
ইমাম বুখারী, আবু যুর‘আহ, তিরমিযী (রাহিমাহুমুল্লাহ) আস্তে আমীন বলা সংক্রান্ত হাদীছকে যঈফ বলেছেন।[১৩] ইমাম দারাকুৎনীও কঠোর ভাষায় যঈফ বলেছেন।[১৪]

ছালাতে রাফ’উল ইয়াদায়েন করা সম্পর্কে উম্মতের সেরা ব্যক্তিত্ব চার খলীফাসহ প্রায় ২৫ জন ছাহাবী থেকে সকল হাদীছ গ্রন্থে অনেক ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।[১৫] অন্য একটি গণনা মতে রাফ‘উল ইয়াদাইনের হাদীছের রাবী সংখ্যা ‘আশারায়ে মুবাশশারাহ’ সহ প্রায় ৫০ জন ছাহাবী।[১৬] আর সর্বমোট হাদীছ ও আছারের সংখ্যা প্রায় ৪০০ শত।[১৭] ইমাম সুয়ূত্বী এবং শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) রাফ‘উল ইয়াদায়েনের হাদীছকে ‘মুতাওয়াতির’ পর্যায়ের বলে মন্তব্য করেছেন।[১৮]

অন্যদিকে এই শত শত হাদীছের বিপরীতে তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া অন্য স্থানে রাফ‘উল ইয়াদায়েন না করার পক্ষে যে কয়েকটি হাদীছ পেশ করা হয়, তার কোনটা যঈফ আবার কোনটা জাল। এর মধ্যে প্রসিদ্ধ হল আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর নামে বর্ণিত হাদীছ।[১৯]
উক্ত হাদীছকে ইমাম শাফেঈ, আহমাদ, আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক, ইয়াহইয়া ইবনু আদম, ইমাম বুখারী, আবুদাঊদ, দারাকুৎনী, হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী সহ প্রায় সকল মুহাদ্দিছ যঈফ সাব্যস্ত করেছেন।[২০] ইমাম আবুদাঊদ উক্ত হাদীছ উল্লে­খ করে বলেন, ‘উক্ত হাদীছ লম্বা হাদীছের সংক্ষিপ্ত রূপ। এই শব্দে বর্ণিত হাদীছটি ছহীহ নয়।[২১] বিশেষ করে মুহাম্মাদ ইবনু জাবের সূত্রে বর্ণিত হাদীছটিকে ইবনুল জাওযী (রাহিমাহুল্লাহ) তার জাল হাদীছের গ্রন্থ ‘কিতাবুল মাওযূ‘আত’-এর মধ্যে উল্লে­খ করেছেন।[২২] ইবনু হিব্বান উক্ত হাদীছকে সবচেয়ে দুর্বল ও বাতিল বলে গণ্য করেছেন।[২৩] অতএব ছালাতে রাফ‘উল ইয়াদায়ন করতেই হবে। এই সুন্নাতকে কোনভাবে প্রত্যাখ্যান করা যাবে না।

এভাবে শুধু আক্বীদা ও ছালাত নয়, বরং প্রায় সর্বক্ষেত্রেই যঈফ ও জাল হাদীছ সমাজকে বিভক্ত করে রেখেছে। মানুষ যদি সচেতন হত তাহলে যঈফ ও জাল হাদীছ বর্জন করে কেবল ছহীহ হাদীছের উপর আমল করত। ফলে ঐক্যবদ্ধ মুসলিম সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হত।

(৪) ফিক্বহী মাসআলা ও উছূলগত মতপার্থক্য

মুসলিম ঐক্য বিনষ্ট করার ক্ষেত্রে ন্যক্কারজনক ভূমিকা পালন করেছে মস্তিষ্কপ্রসূত ফিক্বহী মাসআলা ও দলীয় উছূল বা মূলনীতি। নতুন নতুন গজিয়ে উঠা ফের্কাগুলো নিজ নিজ দলের পক্ষে যেমন যঈফ ও জাল হাদীছ ভিত্তিক ফিক্বহী গ্রন্থ রচনা করেছে, তেমনি নিজস্ব মতকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বিতর্কিত উছূল বা মূলনীতি তৈরি করেছে, যা মুসলিম সমাজকে ক্যান্সারে আক্রান্ত করেছে। যেমন ফিক্বহী গ্রন্থ সম্পর্কে হানাফী বিদ্বানগণই বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। আল্লামা মারজানী হানাফী বলেন,

وَقَوْلُ الْفُقَهَاءِ يَحْتَمِلُ الْخَطَاءَ فِىْ أَصْلِهِ وَغَالِبُهُ خَالٍ عَنِ الْإِسْنَادِ … فَإِنَّهُ يَحْتَمِلُ أَنْ يَكُوْنَ مَوْضُوْعًا قَدِ افْتَرَى عَلَيْهِ غَيْرَهُ

‘ফক্বীহদের বক্তব্যে ভুল হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থেকে গেছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল, সেগুলো সনদ বিহীন। .. নিঃসন্দেহে তা জাল হওয়ারই প্রমাণ বহন করে, যা অন্যের উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে’।[২৪] আব্দুল হাই লাক্ষৌভী হানাফী (রাহিমাহুল্লাহ) ফিক্বহ গ্রন্থ সম্পর্কে বলেন,

فَكَمْ مِنْ كِتَابٍ مُعْتَمَدٍ اِعْتَمَدَ عَلَيْهِ أَجِلَّةُ الْفُقَهَاءِ مَمْلُوْءٌ مِنَ الْأَحَادِيْثِ الْمَوْضُوْعَةِ وَلاَ سِيَّمَا الْفَتَاوَى فَقَدْ وَضَّحَ لَنَا بِتَوْسِيْعِ النَّظْرِ أَنَّ أَصْحَابَهَا وَإِنْ كَانُوْا مِنَ الْكَامِلِيْنَ لَكِنَّهُمْ فِىْ نَقْلِ الْأَخْبَارِ مِنَ الْمُتَسَاهِلِيْنَ

‘অনেক বিশ্বস্ত কিতাব, যার উপর অনেক বড় বড় ফক্বীহ নির্ভরশীল, সেগুলো জাল হাদীছ সমূহে পরিপূর্ণ। বিশেষ করে ফৎওয়ার কিতাবসমূহ। গভীর দৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের নিকট স্পষ্ট হয়েছে যে, ঐ সকল গ্রন্থ প্রণয়নকারীগণ যদিও পূর্ণ ইলমের অধিকারী, কিন্তু হাদীছ সংকলনের ক্ষেত্রে তারা ছিলেন শিথিলতা প্রদর্শনকারী’।[২৫] অন্যত্র তিনি আরো পরিষ্কারভাবে সকলকে সাবধান করে দিয়ে বলেন,

أَلاَتَرَى إِلَى صَاحِبِ الْهِدَايَةِ مِنْ أَجِلَّةِ الْحَنَفِيَّةِ وَالرَّافِعِىِّ شَارِحِ الْوَجِيْزِ مِنْ أَجِلَّةِ الشَّافِعِيَّةِ مَعَ كَوْنِهِمَا مِمَّنْ يُشَارُ إِلَيْهَا بِالْأنَامِلِ وَيَعْتَمِدُ عَلَيْهِ الْأمَاجِدُ وَالْأَمَاثِلُ قَدْ ذَكَرَا فِىْ تَصَانِيْفِهِمَا مَالَمْ يُوْجَدْ لَهُ أَثَرٌ عِنْدَ خَبِيْرٍ بِالْحَدِيْثِ

‘(হে পাঠক!) তুমি কি হেদায়া রচনাকারীকে দেখ না, যিনি শীর্ষস্থানীয় হানাফীদের অন্যতম? এছাড়া ‘আল-ওয়াজীয’-এর ভাষ্যকার রাফেঈকে দেখ না, যিনি শাফেঈদের শীর্ষস্থানীয়? এই দু’জন ঐ সকল প্রধান ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত, যাদের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করা হয় এবং যাদের উপর শ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম ব্যক্তিগণ নির্ভর করে থাকেন। অথচ উক্ত কিতাবদ্বয়ে তারা এমন অনেক বর্ণনা উল্লেখ করেছেন, মুহাদ্দিছগণের নিকট যেগুলোর কোন চিহ্ন পর্যন্ত পাওয়া যায় না’।[২৬]

অনুরূপ শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী (রাহিমাহুল্লাহ) পরবর্তীকালে রচিত ফিক্বহী মূলনীতি সমূহের বিরুদ্ধে বলেন,

وَأَمْثَالُ ذَلِكَ أُصُوْلٌ مُخَرَّجَةٌ عَلَى كَلَامِ الْأَئِمَّةِ وَإِنَّهَا لَاتَصِحُّ بِهَا رِوَايَةٌ عَنْ أَبِىْ حَنِيْفَةَ وَصَاحِبَيْهِ

‘অনুরূপ অন্যান্য মূলনীতিও, যেগুলো ইমামগণের বক্তব্যের উপরে ভিত্তি করে নির্গত হয়েছে, সেগুলো আবু হানীফা ও তাঁর দুই শিষ্য (আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ)-এর বলে বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত নয়’।[২৭] শায়খ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করেন,

إنَّ جَمَاهِيْرَ الْعُلَمَاءِ يُخَالِفُوْنَ تِلْكَ الْقَوَاعِدَ وَيُقَدِّمُوْنَ الْحَدِيْثَ الصَّحِيْحَ اِتِّبَاعًا لِلْكِتَابِ وَالسُّنَّةِ

‘নিশ্চয়ই অধিকাংশ বিদ্বান এ সমস্ত মূলনীতিসমূহের বিরুদ্ধাচরণ করে থাকেন এবং শুধু কিতাব ও সুন্নাতের অনুসরণের জন্যই ছহীহ হাদীছকে এ সমস্ত মূলনীতির উপর অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন’।[২৮]

উল্লেখ্য, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীছ যখনই দলীয় ফৎওয়ার বিরোধী প্রমাণিত হয়েছে, তখনই তারা হাদীছকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য উদ্ভট মূলনীতি রচনা করেছে। এরপরও কোন অজুহাত ছাড়াই বহু হাদীছকে তারা মাযহাবী গোঁড়ামি প্রদর্শন করে প্রত্যাখ্যান করেছে। ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) এমন ৬৮টি হাদীছ উল্লেখ করেছেন, যেগুলো তাদের রচিত মূলনীতি সমূহের আওতায় পড়ে না। অথচ সেগুলোর উপরে তার কখনই আমল করে না। শুধু কি তাই! তিনি ইবনু হাযম-এর উদ্ধৃতি পেশ করে বলেন, لَوْ تَتَّبِعُهَا الْمُتَتَبِّعُ لَرُبَّمَا بَلَغَتِ الْأُلُوْفُ ‘যদি কোন অনুসন্ধিৎসু এরূপ অনুসন্ধান পরিচালনা করেন, তবে এর সংখ্যা হাযারে পৌঁছে যাবে’।[২৯] ‘ইন্না-লিল্লাহি…!

(চলবে ইনশাআল্লাহ)


তথ্যসূত্র :
[১]. তাফসীরে হাক্কী, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৫০; কাশফুল খাফা, হা/১৮৮৫; ইমাম ছাগানী, আল-মাওযূ‘আত, হা/৭০, ২য় খণ্ড, পৃ. ৫০।
[২]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মুখতাছার আছ-ছাওয়ায়েকুল মুরসালাহ, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৫৩-১৭৪ ও ১৭৪-১৮৮, ২য় খণ্ড, পৃ. ১২৬-১৫২।
[৩]. সূরা আল-কাহ্ফ : ১১০; সূরা আয-যুমার : ৩০-৩১; সূরা আলে ইমরান : ১৪৪; ছহীহ বুখারী, হা/১০১০, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৩৭, ‘পানি প্রার্থনার ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩; মিশকাত, হা/১৫০৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১৪২৩, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৪৯।
[৪]. আব্দুল হাই লাক্ষৌভী হানাফী, আল-আছারুল মারফূ‘আহ ফিল আখবারিল মাওযূ‘আহ (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, তা.বি.), পৃ. ৪৩; কাশফুল খাফা, হা/৮২৭, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৬৫।
[৫]. ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূউল ফাতাওয়া, ১৮তম খণ্ড, পৃ. ৩৬৬-৩৬৭; আল-আহাদীছুয যঈফাহ ওয়াল বাতিলাহ, পৃ. ৫১; সিলসিলা যঈফাহ, হা/২০১, ২০২, ২০৩, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৬০-৩৭১; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৪৫৮ ও ১৩৩-এর আলোচনা দ্র.। উল্লেখ্য যে, মানুষ মারা গেলে বারযাখী জীবনের বাসিন্দা হয়ে যায়, যা দুনিয়াবী জীবন থেকে সম্পূর্ণ পৃথক এবং মানুষের জ্ঞানের বাইরে। অথচ এটা নিয়েই তুমুল মতানৈক্য।
[৬]. ছহীহ বুখারী, হা/৫২৭, ‘ছালাতের ওয়াক্ত সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫; আবু দাঊদ, হা/৪২৬, পৃ. ৬১; তিরমিযী, হা/১৭০, পৃ. ৪২; মিশকাত হা/৬০৭, পৃ. ৬১, মিশকাত, হা/৬০৭-এর টীকা; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/৫৫৯, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৭৯।
[৭]. নায়লুল আওত্বার, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৩; যঈফ তিরমিযী, হা/১৭২, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪২-৪৩; ইরওয়াউল গালীল, হা/৬৫৯; মিশকাত, হা/৬০৬, পৃ. ৬১।
[৮]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৪০, ১ম খণ্ড, পৃ. ১০২; আবু দাঊদ, হা/৭৫৯ – عَنْ طَاوُسَ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَضَعُ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى يَدِهِ الْيُسْرَى ثُمَّ يَشُدُّ بِهِمَا عَلَى صَدْرِهِ وَهُوَ فِى الصَّلَاةِ (سنده صحيح) উল্লে­খ্য যে, উপমহাদেশের ছাপা আবুদাঊদে উক্ত হাদীছটি নেই। ইমাম আবুদাঊদ নাভির নীচে হাত বাঁধা সংক্রান্ত সমস্ত বর্ণনাকে যঈফ বলার পর বুকের উপর হাত বাঁধা সংক্রান্ত উক্ত ছহীহ হাদীছটি উল্লে­খ করেছেন। কিন্তু একটি হাদীছও রাখা হয়নি। এটা রহস্যাবৃত; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২০১৭, সনদ ছহীহ, ছহীহ আবু দাঊদ, হা/৯৫৬; ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ, হা/৪৭৯।
[৯]. আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নাবী, পৃ. ৮৮; মির‘আতুল মাফাতীহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৫৭-৫৫৮; তুহফাতুল আহওয়াযী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৭৯; যঈফ আবু দাঊদ, হা/৭৫৬-৫৮।
[১০]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৫৬, ১ম খণ্ড, পৃ. ১০৪; মিশকাত, হা/৮২২, পৃ. ৭৮; ছহীহ মুসলিম, হা/৯০০-৯০৭, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৬৯-৭০; মিশকাত, হা/৮২৩; ইমাম বুখারী, জুযউল ক্বিরাআত, ছহীহ ইবনু হিব্বান, সনদ ছহীহ, তুহফাতুল আহওয়াযী, হা/৩১০।
[১১]. ফাৎহুল বারী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৬৮৩; তাযকিরাতুল মাওযূ‘আত, পৃ. ৯৩; সিলসিলা যঈফাহ, হা/৫৬৯।
[১২]. ছহীহ বুখারী, তা‘লীক্ব, ১ম খণ্ড, পৃ. ১০৭, হা/৭৮০ ও ৭৮২; ছহীহ মুসলিম, হা/৯২০, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৭৬; ফাৎহুল বারী, হা/৭৮০-৮১, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৫৭; মুওয়াত্ত্বা মালেক, হা/৪৪; ছহীহ আবুদাঊদ, হা/৯৩২-৩৩, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৩৪-৩৫; ছহীহ তিরমিযী, হা/২৪৮-৪৯, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৭ ও ৫৮; দারেমী, মিশকাত, হা/৮৪৫, সনদ ছহীহ; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৪৬৪, ১ম খণ্ড, পৃ. ৭৫৩; দারাকুৎনী, হা/১২৫৩-৫৫, ৫৭, ৫৯।
[১৩]. যঈফ তিরমিযী, হা/২৫০, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৮; যঈফ ইবনু মাজাহ, হা/৮৫৩; যঈফ আবু দাঊদ, হা/৯৩৪, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৩৫।
[১৪]. كَذَا قَالَ شُعْبَةُ وَأَخْفَى بِهَا صَوْتَهُ وَيُقَالُ إِنَّهُ وَهِمَ فِيهِ لأَنَّ سُفْيَانَ الثَّوْرِىَّ وَمُحَمَّدَ بْنَ سَلَمَةَ بْنِ كُهَيْلٍ وَغَيْرَهُمَا رَوَوْهُ عَنْ سَلَمَةَ فَقَالُوا وَرَفَعَ صَوْتَهُ بِآمِينَ وَهُوَ الصَّوَابُ. -দারাকুৎনী, হা/১২৫৬, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩২৮-২৯-এর ভাষ্য; রওযাতুন নাদিয়াহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৭১-৭২; নায়লুল আওত্বার, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৭৫।
[১৫]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, ছহীহ বুখারী, হা/৭৩৫, ৭৩৬, ৭৩৭, ৭৩৮, ৭৩৯, ১ম খণ্ড, পৃ. ১০২; ছহীহ মুসলিম, হা/৮৬১, ৮৬২, ৮৬৩, ৮৬৪, ৮৬৫, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৬৮; মিশকাত, হা/৭৯৪; ছহীহ মুসলিম, হা/৩৯১, ১/২৯৩ পৃঃ। সর্বমোট হিসাব : বুখারী, হা/৭৩৫, ৭৩৬, ৭৩৭, ৭৩৮, ৭৩৯= ৫টি; ছহীহ মুসলিম হা/৮৮৭, ৮৮৮, ৮৮৯, ৮৯০, ৮৯১= ৫টি; আবু দাঊদ, হা/৭২১, ৭২২, ৭২৩, ৭২৫, ৭২৬, ৭২৮, ৭২৯, ৭৩০, ৭৪১, ৭৪২, ৭৪৩, ৭৪৪, ৭৪৫, ৭৪৬, ৭৪৭, ৭৬১= ১৬টি; নাসাঈ, হা/৮৭৬, ৮৭৭, ৮৭৮, ৮৭৯, ৮৮০, ৮৮১, ৮৮৯, ১০২৪, ১০২৫, ১০২৫৫, ১০৫৬, ১০৫৭, ১০৫৯= ১৩টি; ইবনু মাজাহ, হা/৮৫৮, ৮৫৯, ৮৬০, ৮৬১, ৮৬২, ৮৬৩, ৮৬৮= ১১টি; তিরমিযী, হা/২৫৫। শুধু ‘কুতুবে সিত্তাহ্র’ মধ্যেই প্রায় ৫১টি হাদীছ এসেছে।
[১৬]. ফাৎহুল বারী, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৮০; ফিক্বহুস সুন্নাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ১০৭।
[১৭]. আল্লামা মাজদুদ্দীন ফিরোযাবাদী, সিফরুস সা‘আদাত, পৃ. ১৫।
[১৮]. তুহফাতুল আহওয়াযী, ২য় খণ্ড, পৃ. ১০০ ও ১০৬; ছিফাতু ছালাতিন নবী, পৃ. ১২৮।
[১৯]. তাযকিরাতুল মাওযূ‘আত, পৃ. ৮৬-৮৭; আল-মাওযূ‘আতুল কুবরা, পৃ. ৮১; সিলসিলা যঈফাহ, হা/৫৬৮; নায়লুল আওত্বার, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৮১; ফিক্বহুস সুন্নাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ১০৮।
[২০]. ফাৎহুল বারী, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৭৭-৮২, হা/৭৩৫-৭৩৮-এর আলোচনা দ্র.; নায়লুল আওত্বার, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৭৮-১৭৯; শায়খ ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী, মির‘আতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাছাবীহ (বেনারস : জামি‘আ সালাফিয়া, ১৯৭৪/১৩৯৪), ৩য় খণ্ড, পৃ. ৮২; ফিক্বহুস সুন্নাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ১০৮ فَهُوَ مَذْهَبٌ غَيْرُ قَوِىٍّ لِأَنَّ هَذَا قَدْ طَعَنَ فِيْهِ كَثِيْرٌ مِنْ أَئِمَّةِ الْحَدِيْثِ
[২১]. هَذَا حَدِيْثٌ مُخْتَصَرٌ مِّنْ حَدِيْثِ طَوِيْلٍ وَلَيْسَ هُوَ بَصَحِيْحٍ عَلَى هَذَا اللَّفْظِ -যঈফ আবু দাঊদ, হা/৭৪৮; উল্লেখ্য, উপমহাদেশের ছাপা আবুদাঊদে ও মিশকাতে উক্ত বাড়তি অংশটুকু নেই। কৌশলে উক্ত অংশ উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
[২২]. নায়লুল আওত্বার, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৮২।
[২৩]. ফিক্বহুস সুন্নাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ১০৮।
[২৪]. নাযেরাতুল হক্ব-এর বরাতে আল-ইরশাদ, পৃ. ১৪৬; হাক্বীক্বাতুল ফিক্বহ, পৃ. ১৪৬।
[২৫]. আব্দুল হাই লাক্ষৌভী, জামে‘ ছাগীর-এর ভূমিকা নাফে‘ কাবীর, পৃ. ১৩; ছিফাতু ছালাতিন নবী, পৃ. ৩৭।
[২৬]. আব্দুল হাই লাক্ষৌভী, আজওয়াবে ফাযেলাহ-এর বরাতে আল-ইরশাদ, পৃ. ১৫৭; হাক্বীক্বাতুল ফিক্বহ, পৃ. ১৫১।
[২৭]. হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৮৭।
[২৮]. আল-হাদীছু হুজ্জিয়াহ, পৃ. ৪১।
[২৯]. আল-হাদীছু হুজ্জিয়াহ, পৃ. ৪৫-৫০।




ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমন : সংশয় নিরসন (৩য় কিস্তি) - হাসিবুর রহমান বুখারী
ইয়ামানের কুখ্যাত জঙ্গীগোষ্ঠী হুতী শী‘আদের মুখোশ উন্মোচন - শায়খ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী
বিদ‘আত পরিচিতি (৬ষ্ঠ কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
বিদ‘আত পরিচিতি (৯ম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আযীযুর রহমান
ইসলামী পুনর্জাগরণের মূলনীতি (৬ষ্ঠ কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
ইসলামে রোগ ও আরোগ্য (২য় কিস্তি) - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
বিদ‘আত পরিচিত (২১তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
জীবন ব্যবস্থা হিসাবে আল-কুরআনের মূল্যায়ন - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ইসলামে দারিদ্র্য বিমোচনের কৌশল (২য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
হজ্জ ও ওমরাহ সম্পর্কে প্রচলিত বিদ‘আতসমূহ (শেষ কিস্তি) - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
বিদ‘আত পরিচিতি (৩০তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান

ফেসবুক পেজ