মসজিদ: ইসলামী সমাজের প্রাণকেন্দ্র
- ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান*
(১২তম কিস্তি)
খ. মসজিদের পবিত্রতা রক্ষার্থে করণীয়
মসজিদের পবিত্রতা রক্ষার্থে যেমন কিছু বর্জনীয় আছে, যা পূর্বে আলোচিত হয়েছে; তেমনি কিছু করণীয়ও রয়েছে। যার মাধ্যমে মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা করা সম্ভব হয়। নিম্নে তা দু’টি স্তরে বিভক্ত করে আলোকপাত করা হলো:
১- সাধারণভাবে যা করা বৈধ
মসজিদের এমন কতক কাজ আছে, যে সম্বন্ধে ধারণা হওয়া স্বাভাবিক যে, তা মসজিদে করা হয়তো বৈধ নয়। অথচ ইসলামী শরী‘আতের দৃষ্টিতে মসজিদে তা করা বৈধ। যেমন,
দ্বীনি কথা-বার্তা, বৈধ আলোচনা, প্রয়োজনীয় সাংসারিক কথা
শরী‘আত মানুষের জন্য সহজতা আরোপ করে থাকে কঠোরতা নয়। মানুষের বৈষয়িক জীবনের বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষ বিভিন্ন কাজের সাথে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত রাখে। মসজিদ যেহেতু সকল ধরনের মুসলিমদের জমায়েত স্থান, সেহেতু সেখানে দৈনিক পাঁচবার মানুষের সমাগম হয়ে থাকে। এমতাবস্থায় সেখানে মানুষ দাওয়াতী কাজের স্বার্থে বিভিন্ন দ্বীনি কথা-বার্তা, বৈধ আলোচনা এবং প্রয়োজনীয় সাংসারিক কথাবার্তাও বলাও বৈধ। সিমাক ইবনু হারব (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি জাবির ইবনু সামুরাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে বললাম,
أَكُنْتَ تُجَالِسُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ نَعَمْ كَثِيْرًا كَانَ لَا يَقُوْمُ مِنْ مُصَلَّاهُ الَّذِىْ يُصَلِّى فِيْهِ الصُّبْحَ أَوِ الْغَدَاةَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ فَإِذَا طَلَعَتِ الشَّمْسُ قَامَ وَكَانُوْا يَتَحَدَّثُوْنَ فَيَأْخُذُوْنَ فِىْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ فَيَضْحَكُوْنَ وَيَتَبَسَّمُ.
‘আপনি কি রাসূল (ﷺ)-এর সাথে বসে ছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, অনেক বার। নবী (ﷺ) ফজরের ছালাত পড়ে সূর্য না ওঠা পর্যন্ত মুছাল্লা থেকে উঠতেন না। সূর্য উঠে গেলে তিনি উঠে যেতেন। ঐ অবসরে লোকেরা আপোসে কথা বলত। বলতে বলতে তারা ইসলাম-পূর্ব জাহেলিয়াতের কথা শুরু করে দিত। এতে তারা হাসত এবং তিনিও মুচকি হাসতেন’।[১]
খাওয়া-পান করা
প্রয়োজনে মসজিদে খানা-পিনার ব্যবস্থা করা যায। ‘আব্দুল্লাহ ইবনু হারিস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,
كُنَّا نَأْكُلُ عَلَى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فِى الْمَسْجِدِ الْخُبْزَ وَاللَّحْمَ
‘আমরা রাসূল (ﷺ)-এর আমলে মসজিদের ভিতর রুটি-গোশত খেতাম’।[২] অতএব যে জিনিস খাওয়া হারাম, তা মসজিদে খাওয়া তথা সকল স্থানেই খাওয়া হারাম। মসজিদের সম্মান রক্ষার্থে সে সব হারাম জিনিস সঙ্গে নিয়ে বা পকেটে রেখে মসজিদে যাওয়া বা ছালাত পড়াও বৈধ নয়। যেমন গুল, জর্দা, বিড়ি, সিগারেট, তামাক প্রভৃতি খাওয়া বৈধ নয়, বিধায় তা মসজিদে খাওয়া বা নিয়ে যাওয়া অবৈধ।[৩]
শয়ন করা
ইসলামী শরী‘আতের অনুমোদিত বিষয় হলো মসজিদে ঘুমানো বৈধ। একদা আব্বাদ ইবনু তামীমের চাচা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) দেখলেন, أَنَّهُ رَأَى رَسُوْلَ اللهِ ﷺ مُسْتَلْقِيًا فِى الْمَسْجِدِ، وَاضِعًا إِحْدَى رِجْلَيْهِ عَلَى الأُخْرَى ‘আল্লাহর রাসূল (ﷺ) মসজিদে এক পা অপর পায়ের উপর রেখে চিৎ হয়ে শয়ন করে আছেন’। সাঈদ ইবনু মুসাইয়িব (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘উমার এবং উছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)ও এরূপ করতেন।[৪]
নাফি‘ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আব্দুল্লাহ ইবুন মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, أَنَّهُ كَانَ يَنَامُ وَهْوَ شَابٌّ أَعْزَبُ لَا أَهْلَ لَهُ فِىْ مَسْجِدِ النَّبِىِّ ﷺ ‘নিশ্চয় তিনি মসজিদে ঘুমাতেন। আর তিনি ছিলেন অবিবাহিত যুবক। তার কোন পরিবার ছিল না’।[৫] তবে ঘরে জায়গা থাকতে মসজিদকে অভ্যাসগতভাবে শয়নাগার ও বিশ্রামাগার বানানো উচিত নয়। কারণ, ইবনু ‘আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, কেউ যেন মসজিদকে শয়নাগার ও বিশ্রামাগার বানিয়ে না নেয়।
ওযূ করা
মসজিদে ওযূ করা যায়। উলামায়ে কিরাম মসজিদে ওযূ করার বিষয়টি আবিষ্কার করেছেন এবং তার পক্ষে নিম্নের হাদীছটি দলীল হিসাব উল্লেখ করেছন। যেমন জনৈক ব্যক্তি নবী (ﷺ)-এর ছাহাবীদের নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন যে, أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ تَوَضَّأَ فِى الْمَسْجِدِ ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মসজিদে ওযূ করেন’।[৬]
অমুসলিমরা মসজিদে প্রবেশ করতে পারে। সুমামাহ ইবনু উসালকে ইসলাম গ্রহণের পূর্বে মসজিদে নববীতে বেঁধে রাখা হয়েছিল।[৭] এছাড়া যুদ্ধেরও অস্ত্র মসজিদে একত্রিত করে রাখা যাবে।[৮]
২- মসজিদ পরিচালকদের করণীয়
ক- ইমাম
ইমাম (إمام) শব্দটি আরবী। إمامة শব্দমূল থেকে নির্গত। এর অর্থ নেতা, প্রধান, ছালাতের ইমাম, অগ্রণী, দিকনির্দেশক, আদর্শ, নমুনা ইত্যাদি। এ ছাড়া ইমাম শব্দটি খলীফা, সেনাপতি, সংশোধনকারী এবং শৃঙ্খলা রক্ষাকারী অর্থেও ব্যবহৃত হয়।[৯] সাধারণত ইমাম বলা হয় তাকে, যাকে অনুসরণ করা হয়, কর্মের মাধ্যমে যিনি সবার আগে থাকেন। যেমন, ‘যিনি মুসল্লীদের মধ্যে সবার আগে থাকেন, ছালাতের ক্রিয়াগুলোতে যাকে পুরোপুরি অনুসরণ করা হয় অথবা কল্যাণকর কাজে মানুষ যার অনুসরণ করে, তাঁকে ইমাম বলা হয়’।[১০]
অতএব ‘ইমাম’ শব্দটির অর্থের ব্যাপকতার কারণে এর ব্যবহারে বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে কয়েকটি ব্যবহারিত অর্থ তুলে ধরা হল: ১- পথ প্রদর্শক, ২- সোনপতি, ৩- ইসলামী রাষ্ট্রের খলীফা, ৪- শী‘আদের ইসনা আশারিয়্যা উপকূল ইমাম উপাধিকে আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এবং তাঁর বংশধরদের মধ্য হতে প্রথম এগারজনের জন্য নির্দিষ্ট বলে মনে করে থাকে। ৫- তাফসীর, হাদীছ, ফিক্হ, তাসাউফ, ইসলামী দর্শন, অভিধান ইত্যাদি বিষয়ের যে কোন বিষয়ের বিশেষজ্ঞকেও ‘ইমাম’ নামে আখ্যায়িত করা হয়। তবে আমাদের সমাজে ছালাতে নেতৃত্বদানকারীকেই আমরা সাধারণত ‘ইমাম’ বলে জানি। এটি তার একটি সরল অর্থ। ইসলামী শরী‘আতে বা ইসলামী ইতিহাসে শব্দটি ব্যাপক ও সামগ্রীক কর্মকাণ্ডের পরিভাষার নাম।[১১]
ইমামতের শর্তাবলি
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনার পর একজন মানুষের ওপর যে ফরজ কাজটি বর্তায়, তা হলো ছালাত আদায় করা। ধনী-গরিব নির্বিশেষে প্রাপ্তব্য সব মানুষের উপর প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরজ। যেকোনো ‘ইবাদতের তুলনায় ছালাতের গুরুত্ব আল্লাহর কাছে সর্বাধিক। তাই এই ছালাতকে সুন্দর ও সাবলীলভাবে আদায় করতে জামা‘আতের সঙ্গে পড়াকে আল্লাহ আবশ্যক করেছেন। মূলত ইমামের ইমামত শুদ্ধ হওয়ার জন্য প্রধানত ছয়টি শর্ত রয়েছে।
১. মুসলিম হওয়া।
২. প্রাপ্তবয় হওয়া।
৩. সুস্থ-স্বাভাবিক হওয়া
৪. কিরাআত সহীহ-শুদ্ধ হওয়া।
৪. পুরুষ হওয়া।
৫. শারীরিক বিভিন্ন ওজর-অসুবিধা থেকে মুক্ত হওয়া।[১২]
উপরিউক্ত ছয়টি বিষয় ইমামতি সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত। যার মধ্যে উল্লেখিত শর্তগুলো বিদ্যমান থাকবে, তিনি ইমাম হতে পারবেন। এছাড়া ইমামতির প্রকৃত হক্বদারের ব্যাপারে শরী‘আতে সুস্পষ্ট নস বর্ণিত হয়েছে। যেমন, আবূ মাস‘উদ আনসার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন,
«يَؤُمُّ
الْقَوْمَ أَقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ اللهِ فَإِنْ كَانُوْا فِى الْقِرَاءَةِ سَوَاءً
فَأَعْلَمُهُمْ بِالسُّنَّةِ فَإِنْ كَانُوا فِى السُّنَّةِ سَوَاءً
فَأَقْدَمُهُمْ هِجْرَةً فَإِنْ كَانُوْا فِى الْهِجْرَةِ سَوَاءً فَأَقْدَمُهُمْ
سِلْمًا وَلَا يَؤُمَّنَّ الرَّجُلُ الرَّجُلَ فِىْ سُلْطَانِهِ وَلَا يَقْعُدْ
فِىْ بَيْتِهِ عَلَى تَكْرِمَتِهِ إِلَّا بِإِذْنِهِ».
‘সেই ব্যক্তিই লোকদের ইমামতি করবেন, যিনি আল্লাহর কিতাব পাঠে সবচেয়ে অভিজ্ঞ। কুরআনপাঠে যদি সকলেই সমান হন, তবে যিনি তাদের মধ্যে সুন্নাহ সম্পর্কে সর্বাপেক্ষা অভিজ্ঞ। তাতেও যদি সকলেই এক রকম হন, তবে যিনি আগে হিজরত করেছেন। তাতেও যদি সকলে সমান হন, তবে যিনি আগে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির অধিকারভুক্ত স্থানে ইমামতি করবে না এবং অনুমতি ছাড়া কারও ঘরে তার বিশেষ আসনে বসবে না’।[১৩]
ইমামের দায়িত্ব ও কর্তব্য
ইসলামের দৃষ্টিতে ইমামতি কোন পেশা নয়; বরং এটা হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত এক মহান দায়িত্ব। ইমামের কাজের প্রতি গুরুত্বারোপ করে নবীজী ইমাম ও মুআজ্জিনের জন্য এই বলে দু‘আ করেছেন,
اَلإِمَامُ ضَامِنٌ وَالْمُؤذِّنُ مُؤْتَمَنُ اللَّهُمَّ أَرْشِدِ الْأَيْمَةَ وَاغْفِرْ لِلْمُؤذِّنِيْنَ
‘ইমাম হচ্ছেন জিম্মাদার আর মুআজ্জিন হচ্ছেন আমানতদার। হে আল্লাহ! আপনি ইমামদের সঠিক পথ দেখান আর মুআজ্জিনদের ক্ষমা করে দিন’।[১৪] উক্ত হাদীছের ‘আল-ইমামু জামিনূন’ তথা ইমাম জিম্মাদার। ইমাম হচ্ছেন মুসল্লীদের দায়িত্বশীল। এই দায়িত্বশীলের যে সকল করণীয় রয়েছে তা আলোচনা হওয়া জরুরী। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো:
ক- ব্যক্তিগত দায়িত্ব ও কর্তব্য
ইমাম হচ্ছেন ধর্মীয় নেতা। একজন নেতাকে তার নিজস্ব বলয়ে যথার্থ যোগ্যতার প্রমাণ রাখা জরুরী। ইমামের ব্যক্তিগত দায়িত্ব ও কর্তব্যের কতিপয় কিছু ধারণা উল্লেখ করা হলো:
১. ছালাতের মাসআলা-মাসায়ালা পর্যাপ্ত জ্ঞানার্জন। এ ক্ষেত্রে হাদীছ ও ফিকহের কিতাবসমূহের ‘ছালাত অধ্যায়’ রপ্ত করে রাখা যরূরী। ছালাত-বিষয়ক জ্ঞানের প্রবাহ ধরে রাখতে মাঝেমধ্যে এসব অধ্যায় অধ্যয়ন আবশ্যক। এ ছাড়া বিশেষভাবে রচিত ছালাত-বিষয়ক গ্রন্থগুলোও সংগ্রহে রাখা প্রয়োজন।
২. ছালাতের হুকুম-আহকাম ও মাসায়ালা বিষয়ক জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি ইসলামের সামগ্রিক জীবনাচার, পথ-পদ্ধতি ও বিধিবিধান সম্পর্কে পর্যাপ্ত অধ্যয়ন করা। কেননা একজন ইমামের দায়িত্ব কেবল ইমামতিতেই শেষ হয়ে যায় না; বরং তাঁকে মুখোমুখি হতে হয় নানা প্রশ্নের, যার শরী‘আতসিদ্ধ উপযুক্ত সমাধান বের করা অতীব জরুরী।
৩. আমল-আখলাকে দৃঢ়তা আনতে প্রতিদিনই তাফসীরসহ কুরআন তিলাওয়াত, রিয়াযুছ ছালিহীনসহ অন্যান্য হাদীসগ্রন্থ থেকে দুয়েকটি হাদীছ অধ্যয়ন করা।
৪. ব্যক্তিত্বগঠন-বিষয়ক বইপত্র সংগ্রহ করে অধ্যয়ন করা ইমামদের জন্য জরুরী বলে মনে করি।
৫. জীবনে সফলতা অর্জন কীভাবে সম্ভব, এ বিষয়ে গবেষণাধর্মী ও উৎসাহব্যঞ্জক বইপত্র অধ্যয়ন করা প্রয়োজন।
৬. সময় নিয়ন্ত্রণের কৌশল বিষয়ক বিভিন্ন গ্রন্থ অধ্যয়ন করা আবশ্যক। কেননা একজন ইমামের প্রতিটি মুহূর্ত সৃজনশীল ও গঠনমূলক কাজে ব্যয় হতে হবে। শুধু জীবিকানির্বাহ নয়; বরং ইসলাম, সমাজ, দেশ ও জাতির জন্য তাঁকে উল্লেখযোগ্য কিছু করে যেতে হবে, যা কঠিনভাবে সময় নিয়ন্ত্রণ ছাড়া সম্ভবপর নয়। অবশ্য এ বিষয়ে অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে, তবে পথ ও পদ্ধতি জানা না থাকায় চেষ্টা সত্ত্বেও বার্থ হচ্ছেন। তাই এ বিষয়ে সহায়ক গ্রন্থসমূহ অধ্যয়ন আবশ্যক।
৭. পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন বিষয়ক সহায়ক গ্রন্থ অধ্যয়ন ইমামের জন্য যরূরী। কেননা অপরিকল্পিত জীবন ব্যর্থ হতে বাধ্য। পরিকল্পনা সফল মানুষের আচ্ছাদন। তাই বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে এবং সহায়ক গ্রন্থ, প্রশিক্ষণ-কোর্স ইত্যাদির মাধ্যমে নিজেকে সফল পরিকল্পনাকারী হিসাবে ছেড়ে তুলতে হবে।
৮. বক্তৃতা কখনো কখনো জাদুর কাজ করে। হাদীছে এসেছে, ‘কিছু বক্তব্য জাদুর মতো হৃদয়ে রেখাপাত করে’।[১৫] একজন ইমামকে বক্তৃতায় যোগ্য হওয়া যরূরী। কেননা বক্তৃতার মাধ্যমে শ্রোতাকে প্রভাবিত করা সম্ভব হয়।
৯. ব্যক্তিগত, পারিবারিক, মসজিদভিত্তিক ও সামাজিক দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা। নিজের ছেলে-মেয়ের ব্যাপারে অযত্নবান থেকে সারাক্ষণ সামাজিক ও দাওয়াতি কার্যক্রমে নিজেকে নিবিষ্ট রাখা যেমন উচিত নয়, তেমনি নিজের পরিবার ও সন্তানকে ঘিরেই সকল দৌড়ঝাপ সম্পন্ন করাও অনুচিত। ইমামকে বরং এ ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করে সর্বক্ষেত্রে সমান সফলতার ছাপ রাখতে হবে।
১০. সামাজিক ক্ষেত্রে ইমামের ভূমিকা অনস্বীকার্য। নানাবিধ সামাজিক সমস্যা প্রায়ই ইমামের সামনে নিয়ে আসা হয়। তাই সমাজ ও সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে একজন ইমামের যথেষ্ট জ্ঞান থাকা যরূরী।[১৬]
খ. সামাজিক দায়িত্ব
প্রতিটি মসজিদে নিষ্ঠাবান ও উৎসাহী মুছল্লীদের সমন্বয়ে একটি কল্যাণকমিটি গঠন করা আবশ্যক। ইমামের নেতৃত্বে এ কমিটির কাজ হবে এলাকায় বসবাসরত দুঃস্থ, অভাবগ্রস্ত, অসুস্থ ব্যক্তিদের খোঁজখবর নেয়া এবং তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া। মসজিদের তহবিলে জমা হওয়া অর্থ শুধুই ইমাম, মুআজ্জিন ও খাদিমের বেতন এবং মসজিদের উন্নয়নকাজে ব্যয় হতে হবে, তেমন কোনো কথা নেই; বরং মসজিদে অর্থদানকারীদের যদি জানা থাকে যে, তাদের দানকৃত টাকা মসজিদের প্রয়োজন মিটিয়ে অন্যান্য কল্যাণমূলক কাজেও ব্যয় করা হয়, তাহলে কল্যাণমূলক যেকোন কাজে এ অর্থ ব্যয় করা যেতে পারে। সামাজিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় ইমাম ছাহেবের নিম্নোক্ত করণীয়গুলো অনুসরণ করা যরূরী।
১. মসজিদকে কেন্দ্র করে সামাজিক কাজের জন্য ইমাম ছাহেবের নেতৃত্বে মহল্লাভিত্তিক ইসলামী সমাজকল্যাণ সংঘ গড়ে তোলা। যার সদস্য হবেন এলাকার মুছল্লীগণ। তবে নিয়মিত মুছল্লীরাই এ কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
২. মুছল্লীদের স্বেচ্ছায় দান ও এককালীন অনুদানই এর একমাত্র আয়ের উৎস। আমানতদার ক্যাশিয়ারের মাধ্যমে যথাযথ কাগজপত্রে লিখিত আকারে বার্ষিক হিসাব নিরীক্ষণের মাধ্যমে এর সর্বোচ্চ সংরক্ষণের প্রচেষ্টা করতে হবে।
৩. ঈদ, দুর্যোগ ও শীতকালে মহল্লার ধনী মুছল্লীদের উৎসাহিত করে দারিদ্র্য মুছল্লীদের পাশে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা করা।
৪. ইমাম ছাহেবের নেতৃত্বে কুরবানীদাতাদের নিকট থেকে গোশত সংগ্রহ করে মহল্লায় যারা কুরবানী দিতে পারে না, তাদের মাঝে গোশত বিতরণ করা।
৫. কর্জে হাসানার প্রতি উৎসাহিত করে ‘কর্জে হাসানাহ ফান্ড’ গঠন করতে হবে।
৬. মকতব চালুকরণ। মসজিদ কেন্দ্রিক সকল শিশুর মকতবে যাওয়া নিশ্চিত করা। বয়স্কদের কুরআন শিক্ষাসহ যরূরী মাসআলা-মাসায়েল শেখানোর ব্যবস্থা করা। পর্দাসহ মহিলাদের জন্য সাপ্তাহিক কিংবা মাসিক তা‘লীম-তারবিয়াতের ব্যবস্থা করা।
৭. বিয়েশাদি মসজিদে করতে উৎসাহিত করা। অবশ্য ওয়ালিমার আয়োজন মসজিদের বাইরে হওয়া চাই।
৮. সামাজিক বিচার-আচার মসজিদ প্রাধানে করার ব্যবস্থা করা। ঝগড়া ও দ্বন্দ্ব নিরসনে উদ্যোগ নেয়া।
৯. মানুষকে মসজিদমুখী করতে উৎসাহিত করা। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে টার্গেট করে ইসলামের দিকে নিয়ে আসা।
১০. মসজিদভিত্তিক পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করে ইসলামী জ্ঞানচর্চার ব্যবস্থা করা।
১১. মাসিক, পাক্ষিক কিংবা সাপ্তাহিক তাফসীরুল কুরআন মাহফিল, দারসুল হাদীছ বা ইছলাহী মজলিসের আয়োজন করা।[১৭]
খ- মুআযযিন
আযান ইসলামের অন্যতম নিদর্শন। মুসলিমরা আযান শোনার পর ছালাতের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। আর যিনি আযানের দায়িত্ব পালন করেন, শরী‘আতের পরিভাষায় তাঁকে মুআযযিন বলা হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে মুআযযিনের মর্যাদা অতুলনীয়। একজন মুআযযিন হবেন সমাজের জ্ঞানী, সৎ, খোদাভীরু ব্যক্তি এবং এমন আলিম, যিনি সুন্নাহ সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন।
মুআযযিনের দায়িত্ব ও কর্তব্য
আযান দেয়া উৎকৃষ্ট ধর্মীয় পেশা। দ্বীনের সুমহান খিদমত হওয়ায় এটাকে খিদমতের মানসিকতা নিয়েই গ্রহণ করা উচিত। কারণ একজন মুআযযিনকে আমানতের সঙ্গে সব দায়িত্ব পালন করতে হয়। তবে মুআযযিনরা শুধু আযানের যিম্মাদারি পালন করেই ক্ষান্ত নয়। বরং, এগুলো ছাড়া তাদের আরো কতিপয় দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। যেমন,
১. নির্ধারিত সময়ে আযান দেয়া।
২. এলাকার মানুষের পেছনে দ্বীনি মেহনত করা।
৩. তাদের সঙ্গে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা।
৪. ছালাতের দাওয়াত দেয়া।
৫. মাঝেমধ্যে সম্ভব হলে মুছল্লীদের নিয়ে দাওয়াতী কাজে বের হওয়া।
৬. মসজিদে বাচ্চাদের সাবাহি মকতব চালু করা।
৭. বড়দের জন্য বয়স শিক্ষা চালু করা।
৮. নিজের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় এমন কাজ না করা।
৯. অযথা চারের দোকান ইত্যাদিতে বসে আড্ডা না দেয়া।[১৮]
উক্ত কাজগুলো করলে মানুষ মসজিদের কাছে ভিড়বে ও সম্মান করবে। ইমাম ও মুআযযিনদেরকে কথার গুরুত্ব দেবে। মসজিদের যেকোন প্রয়োজনে সাড়া দেবে। ব্যক্তিগতভাবে কেউ অসুবিধায় পড়লে মুছল্লীরা বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবে। সর্বোপরি একটি সুন্দর ও আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ব্যাপক সহায়কের ভূমিকা পালন করবে।
গ. খাদিম
মসজিদের খিদমত ও সংরক্ষণ অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ‘ইবাদত। মসজিদকে ভালোবাসা, মসজিদে বেশি সময় অবস্থান করা, মসজিদ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, মসজিদের উন্নতিসাধন, মসজিদের আদব রক্ষা ইত্যাদি মসজিদের হক ও মসজিদ আবাদ রাখার শর্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, لَمَسۡجِدٌ اُسِّسَ عَلَی التَّقۡوٰی مِنۡ اَوَّلِ یَوۡمٍ اَحَقُّ اَنۡ تَقُوۡمَ فِیۡہِ ‘প্রথম দিন থেকেই মসজিদের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে তাকওয়ার ওপর’।[১৯] ইসলামের শর্ত মেনে যে মসজিদ নির্মিত হয়, স্থান সংকুলান না হওয়া, ভগ্নদশা, জরাজীর্ণ অবস্থা ইত্যাদি গুরুতর সমস্যা ছাড়া তা ভেঙ্গে ফেলা যায়। তবে পুরানো মসজিদ সংস্কার করতে অসুবিধা নেই।[২০] মসজিদ নির্মাণ ও সংরক্ষণ অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ‘ইবাদত। এটা সৌভাগ্যের বিষয়। এ প্রসঙ্গে জাবির ইবনু ‘আব্দিল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, مَنْ بَنَى مَسْجِدًا لِلهِ كَمَفْحَصِ قَطَاةٍ أَوْ أَصْغَرَ بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتًا فِى الْجَنَّةِ ‘যে ব্যক্তি কোন মসজিদ তৈরি করবে হোক-না তা ‘কাতাত’ বা পাখির বাসার সমান অথবা তার চেয়েও ছোট, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করবেন’।[২১] উক্ত আলোচনায় মসজিদে খেদমত করা, তা নির্মাণে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার মর্যাদা স্পষ্ট হয়েছে।
মসজিদের খিদমত তথা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং মসজিদ আবর্জনামুক্ত করা অনেক ছাওয়াবের কাজ। মসজিদের একজন খাদিমার প্রতি রাসূল (ﷺ)-এর ভালোবাসা ছিল অতুলনীয়। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, একজন হাবশি নারী রাসূল (ﷺ)-এর মসজিদের খাদিমা ছিলেন। তিনি মসজিদের সেবা করতেন, আবর্জনা ও ধুলোবালি পরিষ্কার করতেন। একবার কয়েক দিন তাঁকে দেখা যায়নি। রাসূল জিজ্ঞেস করলেন, ‘মহিলা কোথায়?’ আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, ‘মহিলা মারা গেছেন এবং আমরা তাঁকে দাফন করে এসেছি’। রাসূল (ﷺ) বললেন, 'তোমরা আমাকে তাঁর মৃত্যুসংবাদ দিলে না কেন?’ ছাহাবীরা উত্তর দিলেন, তখন গভীর রাত, তাই আপনাকে কষ্ট দেয়া আমাদের পসন্দ হয়নি'। রাসূল (ﷺ) বললেন, ‘মহিলার কবর কোথায়?’ ছাহাবীরা তখন তাঁর কবর দেখালেন। তারপর রাসূল (ﷺ) এই নারীর কবরে জানাজা আদায় করেন’।[২২]
উক্ত হাদীছ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, রাসূল (ﷺ) মসজিদের খাদিমকে কতটা ভালোবাসতেন এবং এ সম্পর্কে কতটা গুরুত্ব দিতেন। তদ্রƒপ ছাহাবীরাও মসজিদের খিদমতকে নিজেদের জন্য অনেক সৌভাগ্যময় মনে করতেন।
মসজিদের খাদিমদের এমন মর্যাদা ও গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে প্রায়ই দেখা যায়, মসজিদ কমিটি বা দায়িত্বশীলরা তাদের সঙ্গে ভিন্ন আচরণ করেন। তাদের অধিকার আদায়ে অবহেলা করেন। এমনকি কার্যক্ষেত্রে তাদের সম্মানও ক্ষুণ্ন করা হয়ে থাকে। একজন সাধারণ মুসলিমকে অবমাননা- অবজ্ঞা করা জায়েয নয়, সেখানে মহান আল্লাহর ঘরের দায়িত্ব পালনের কারণে সমাজের বিশিষ্ট অবস্থানে থাকা মসজিদের খাদিমদের অপমান করা কীভাবে বৈধ হতে পারে? এক্ষণে মসজিদ পরিচালনা কমিটির কর্তব্য হলো, নিজেদেরকে সর্বোচ্চ শাসক হিসাবে বিবেচনা না করে মসজিদের খাদিম মনে করা। মসজিদের খাদিমদের সঙ্গে সহানুভূতি, ভালোবাসা ও দয়াদ্র আচরণ করা। তাঁদের আত্মসম্মানের প্রতি বিশেষ যত্ন নেয়া। এ ছাড়া বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী তাদের পার্থিব চাহিদা মেটাতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাওয়া।[২৩]
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
তথ্যসূত্র :
[১] ইমাম মুসলিম, আস-সাহীহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৬৩, হাদীছ নং-৬৭০।
[২] সুনানু ইবনি মাজাহ, ২য় খণ্ড, পৃ. ১০৯৭, হাদীছ নং-৩৩০০।
[৩] মুহাম্মাদ ইবনু ‘আব্দিল ‘আযীয ইবনি ‘আব্দিল্লাহ আল-মুসনাদ (জমাকারী), ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ, ২য় খণ্ড (রিয়াদ : দারুল ওয়াতান, ১ম সংস্করণ, ১৪১৩ হি.), পৃ. ১৫।
[৪] ছহীহুল বুখারী, হাদীছ নং-৪৭৫।
[৫] প্রাগুক্ত, হাদীছ নং-৪৪০।
[৬] ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৩৬৪, হাদীছ নং-২৩১৩৮।
[৭] ইমাম মুসলিম, আস-সাহীহ, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৩৮৬, হাদীছ নং-১৭৬৪।
[৮] ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ২৪৭, হাদীছ নং-২৬১৪৪।
[৯] আল-মুনজিদ (বৈরূত : আল-মাকতাবাতুশ-শারকিয়াহ, ১৯৫২ খ্রি.), পৃ. ১৫; সম্পাদনা পরিষদ, সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ, ৪র্থ খণ্ড (ঢাকা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, তাবি), পৃ. ১৭২।
[১০] মুফতি এহতেশামুল হক কাসিমী, মসিজদ আদাব-আহকাম, পরিচালনা দায়িত্ব ও কর্তব্য (সিলেট : কালালন্তর প্রকাশনী, তাবি), পৃ. ৮৭।
[১১] আদর্শ বিনির্মাণে মসজিদের ইমামের ভূমিকা : বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট, পৃ. ১৬৯।
[১২] আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্ববহিয়্যাহ আল-কুয়েতিয়্যাহ, ৬ষ্ঠ খণ্ড (কুয়েত : ওয়াযারাতুল আওকাফ ওয়াশ শুয়ূনুল ইসলাময়্যিাহ, ২য় সংস্করণ, তাবি), পৃ. ২১৮-২১৯।
[১৩] ইমাম মুসলিম, আস-সাহীহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৬৫, হাদীছ নং-৬৭৩।
[১৪] ইমাম আবূ দাঊদ, আস-সুনান, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৯৮, হাদীছ নং-৫১৭।
[১৫] আল-মুসতাদরাক ‘আলাস সহীহাইন, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৭১০, হাদীছ নং-৬৫৬৮।
[১৬] মসিজদ আদাব-আহকাম, পরিচালনা দায়িত্ব ও কর্তব্য, পৃ. ৯৬-৯৭।
[১৭] প্রাগুক্ত, পৃ. ১০৬-১০৭।
[১৮] প্রাগুক্ত, পৃ. ১২২।
[১৯] সূরাহ আত-তাওবাহ : ১০৮।
[২০] সূরাহ আল-বাকারাহ : ১১৪।
[২১] সুনানু ইবনি মাজাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৪৪, হাদীছ নং-৭৩৮।
[২২] ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৪৪৪, হাদীছ নং-১৫৭১১।
[২৩] প্রাগুক্ত, পৃ. ১৩০-১৩২।
প্রসঙ্গসমূহ »:
মসজিদ