মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৫:৪৪ অপরাহ্ন

মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ

-আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম*


(৮ম কিস্তি)

‘আল-কুরআন’ হল আল্লাহর কথা

আল-কুরআন মহান আল্লাহর কথা। এটা মহান রবের পক্ষ থেকে স্পষ্ট কিতাব। এটা হেদায়াত, ছিরাতে মুস্তাক্বীম। এটা মহান রবের পক্ষ থেকে জিবরীল আমীনের মাধ্যমে নবীর অন্তরে আরবী ভাষায় প্রেরিত। এটা অবতীর্ণ, সৃষ্ট নয়। তাঁর নিকট হতে এসেছে, তাঁর নিকটেই ফিরে যাবে। এ কুরআনে রয়েছে বিধান সম্বলিত অনেক সূরা, আয়াত। রয়েছে অসংখ্য অক্ষর, বাক্য। যা পাঠ করলে প্রত্যেক হরফ বা অক্ষরে দশ নেকি হয়। এটা মুখে পাঠ করা হয়। আর তা অন্তরে রক্ষিত থাকে। এটা মাছহাফ আকারে লিপিবদ্ধ। যাতে মুহকাম, মুতাশাবিহাত, নাসিখ, মানসূখ, খাছ, আম, নির্দেশ এবং নিষেধ রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,لَّا یَاۡتِیۡہِ  الۡبَاطِلُ مِنۡۢ بَیۡنِ یَدَیۡہِ وَ لَا مِنۡ خَلۡفِہٖ ؕ تَنۡزِیۡلٌ مِّنۡ حَکِیۡمٍ حَمِیۡدٍ ‘কোন মিথ্যা এতে অনুপ্রবেশ করবে না-অগ্র হতেও নয়, পশ্চাত হতেও নয়। এটা প্রজ্ঞাবান, প্রশংসনীয় আল্লাহর নিকট হতে অবতীর্ণ’ (সূরা হা-মীম-আসসাজদাহ : ৪২)। মহান আল্লাহ বলেন,

قُلۡ لَّئِنِ اجۡتَمَعَتِ الۡاِنۡسُ وَ الۡجِنُّ عَلٰۤی اَنۡ یَّاۡتُوۡا بِمِثۡلِ ہٰذَا الۡقُرۡاٰنِ لَا یَاۡتُوۡنَ بِمِثۡلِہٖ وَ لَوۡ کَانَ بَعۡضُہُمۡ لِبَعۡضٍ  ظَہِیۡرًا

‘বলুন, যদি মানুষ ও জিন সমবেত হয় এই কুরআনের অনুরূপ কুরআন আনয়নের জন্য যদিও তারা পরস্পরকে সাহায্য করে, (তবুও) তারা এর অনুরূপ কুরআন আনয়ন করতে পারবে না’ (সূরা বানী ইসরাঈল : ৮৮)।

সালাফগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে,أن القرآن كلام الله  ‘কুরআন আল্লাহর কথা’।[১] সালাফে ছালেহীনের বিশ্বাস এটাই। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) ইফকের ঘটনায় বলেন,

وَأَنَا حِيْنَئِذٍ أَعْلَمُ أَنِّىْ بَرِيْئَةٌ وَأَنَّ اللهَ يُبَرِّئُنِىْ ، وَلَكِنْ واللهِ مَا كُنْتُ أَظُنُّ أَنَّ اللهَ يُنْزِلُ فِىْ شَأْنِىْ وَحْيًا يُتْلَى ، وَلَشَأْنِىْ فِىْ نَفْسِىْ كَانَ أَحْقَرَ مِنْ أَنْ يَتَكَلَّمَ اللهُ فِىَّ بِأَمْرٍ يُتْلَى ، وَأَنْزَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ ( إِنَّ الَّذِينَ جَاءُوا بِالإِفْكِ ) الْعَشْرَ الآيَاتِ كُلَّهَا 

‘আমি তখন জানি, আমি নির্দোষ পবিত্র এবং আল্লাহ আমাকে নির্দোষ বলে প্রমাণ করবেন। আল্লাহর শপথ! কিন্তু আমার মর্যাদা আমার কাছে এমন যোগ্য ছিল না যে, এ ব্যাপারে অহী অবতীর্ণ করবেন যা তেলাওয়াত করা হবে। আমার মর্যাদা আমার কাছে এর চেয়ে তুচ্ছ ছিল যে, আল্লাহ আমার সম্পর্কে এমন কোন কালাম করবেন যা তেলাওয়াত করা হবে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ নাযিল করলেন, ‘যারা এমন জঘন্য অপবাদ এনেছে...পুরো দশটি আয়াত’ (সূরা আন-নূর : ১১-২০)।[২]  আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন,

إِذَا تَكَلَّمَ اللهُ بِالْوَحْىِ سَمِعَ أَهْلُ السَّمَوَاتِ شَيْئًا، فَإِذَا فُزِّعَ عَنْ قُلُوْبِهِمْ وَسَكَنَ الصَّوْتُ عَرَفُوْا أَنَّهُ الْحَقُّ وَنَادَوْا مَاذَا قَالَ رَبُّكُمْ قَالُوا الْحَقَّ

‘আল্লাহ যখন অহীর মাধ্যমে কথা বলেন, তখন আসমানের অধিবাসীরা কিছু শুনতে পায়। তাদের অন্তর থেকে যখন ভয় দূর করে দেয়া হয় আর শব্দ স্তিমিত হয়ে যায়, তখন তারা বুঝতে পারে যে, যা ঘটেছে তা অবশ্যই একটা বাস্তব সত্য। তারা পরস্পরকে জিজ্ঞেস করতে থাকে তোমাদের প্রতিপালক কী বলেছেন? তারা বলে, সত্য বলেছেন’।[৩]

মহান আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা বলার পরিণাম

প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর ব্যাপারে সত্য কথা বলা ফরয এবং মিথ্যা বলা হারাম। কেননা মহান আল্লাহ সৃষ্টির নিকট হতে স্রষ্টার ব্যাপারে সত্য বলার অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, اَلَمۡ یُؤۡخَذۡ عَلَیۡہِمۡ مِّیۡثَاقُ الۡکِتٰبِ اَنۡ لَّا یَقُوۡلُوۡا عَلَی اللّٰہِ  اِلَّا الۡحَقَّ ‘তাদের নিকট থেকে কিতাবে কি অঙ্গীকার নেয়া হয়নি যে, আল্লাহর প্রতি সত্য ছাড়া কিছু বলবে না?’ (সূরা আল-আ‘রাফ : ১৬৯)। অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, 

قُلۡ  اِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّیَ الۡفَوَاحِشَ مَا ظَہَرَ  مِنۡہَا وَ  مَا بَطَنَ وَ الۡاِثۡمَ وَ الۡبَغۡیَ بِغَیۡرِ الۡحَقِّ وَ اَنۡ تُشۡرِکُوۡا بِاللّٰہِ مَا لَمۡ یُنَزِّلۡ بِہٖ سُلۡطٰنًا وَّ اَنۡ تَقُوۡلُوۡا عَلَی  اللّٰہِ  مَا لَا  تَعۡلَمُوۡنَ

‘আপনি বলে দিন আমার পালনকর্তা কেবল অশ্লীল বিষয়সমূহ হারাম করেছেন যা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য এবং হারাম করেছেন গোনাহ, অন্যায়-অত্যাচার আল্লাহর সাথে এমন বস্তুকে অংশীদার করা, তিনি যার কোন দলীল অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর প্রতি এমন কথা আরোপ করা, যা তোমরা জান না’ (সূরা আল-আ‘রাফ : ৩৩)।

আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা বলাকে মহান আল্লাহ হারাম করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন,وَ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ تَرَی الَّذِیۡنَ کَذَبُوۡا عَلَی اللّٰہِ وُجُوۡہُہُمۡ  مُّسۡوَدَّۃٌ ؕ اَلَیۡسَ فِیۡ  جَہَنَّمَ مَثۡوًی  لِّلۡمُتَکَبِّرِیۡنَ ‘যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে, ক্বিয়ামতের দিন আপনি তাদের মুখ কাল দেখবেন। অহংকারীদের আবাসস্থল জাহান্নামে নয় কি?’ (সূরা আয-যুমার : ৬০)।

আল্লাহর চেয়ে বেশি সত্যবাদী আর কেউ নেই (সূরা আন-নিসা : ১২২)। সত্যতা ও ইনসাফের দিক দিয়ে আল্লাহর কথা পূর্ণাঙ্গ, তাঁর কালেমাসমূহ পরিবর্তন করার কেউ নেই (সূরা আল-আন‘আম : ১১৫)। অথচ একটি দল আল্লাহর কথা বলাকে অপব্যাখ্যা ও অস্বীকার করে এবং আল্লাহর কথাকে সৃষ্ট বলে। মাতুরীদীরা তাদের মধ্যে অন্যতম।

মাতুরীদীরা নিজেদেরকে ইমাম আবূ হানীফার অনুসারী বলে দাবী করে। অথচ তারা ইমাম আবূ হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ)-এরও বিরোধিতা করে। ইমাম আবূ হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, মূসা (আলাইহিস সালাম) আল্লাহর কথা শ্রবণ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা যেমনটা বলেছেন। (আল্লাহ তা‘আলা বলেন) وَ کَلَّمَ اللّٰہُ مُوۡسٰی تَکۡلِیۡمًا ‘আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর সাথে সরাসরি কথা বলেছেন’ (সূরা আন-নিসা : ১৬৪)।[৪] বিপরীত আক্বীদা পোষণ করার পরও মাতুরীদীরা কিভাবে নিজেদেরকে ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত’ বা ইমাম আবূ হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ)-এর অনুসারী বলে দাবী করে। আবূ আব্দুল্লাহ শামসুদ্দীন আফগানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,

بل ظهر أنهم أهل بدعة وأنهم يصرحون بالقول بخلق القران وأنهم في هذا موافقون للجهمية الأولى والمعتزلة مع قولهم ببدعة أخرى وهي القول بالكلام النفس

‘এটা স্পষ্ট যে, নিশ্চয় তারা বিদ‘আতী। নিশ্চয় তারা ‘কুরআন সৃষ্ট’ কথার মাধ্যমে তা স্পষ্ট করে বলেছে। বিদ‘আতী এই কথার দ্বারা তারা জাহমিয়া ও মু‘তাযিলাদের অনুরূপ’। আর সেই কথা হল কালামুন নাফসী অর্থাৎ ‘আল্লাহর কথা আল্লাহ সত্তার সাথে প্রতিষ্ঠিত’।[৫]

অতএব, যারা মহান আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যারোপ করে, তারা কাফির। মুসলিমদের মধ্যে কোন মতভেদ নেই এ ব্যাপারে যে, যে ব্যক্তি কুরআনের কোন সূরা অথবা কোন আয়াত অথবা কোন বাক্য অথবা কোন অক্ষর অস্বীকার করে, তাহলে মুসলিমদের ঐকমত্যে সে কাফির’।[৬]

ইমাম আবূ হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ) ‘আল-ফিকহুল আকবার’-এ বলেছেন, ‘মহান আল্লাহর ছিফাত সৃষ্ট বা নতুন নয়। কেউ যদি বলে, তা সৃষ্ট বা নতুন বা সেগুলোর ব্যাপারে নীরব থাকে অথবা সন্দেহ করে, তাহলে সে আল্লাহর ব্যাপারে কাফির। কুরআন মহান আল্লাহর কথা, মাছহাফে লিপিবদ্ধ, অন্তরে সংরক্ষিত, মুখে পঠিত, নবী করীম (ﷺ)-এর উপর অবতীর্ণ। কুরআন সৃষ্ট নয়। মহান আল্লাহ কুরআনে মূসা, অন্যান্য নবী-রাসূল, ফেরাঊন এবং ইবলীসের যে ঘটনাগুলো উল্লেখ করেছেন, সবগুলোই মহান আল্লাহর কথা। আল্লাহর কথা সৃষ্ট নয়’।[৭]

সালাফগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে,أن القرآن كلام الله غير مخلوق، ومن قال هو مخلوق فهو كافر بالله ‘কুরআন আল্লাহর কথা, সৃষ্ট নয়। যে ব্যক্তি বলবে তা সৃষ্ট, তাহলে সে আল্লাহর প্রতি অস্বীকারকারী’।[৮]

আব্দুর রহমান ইবনু মাহদী (রাহিমাহুল্লাহ)-কে বলা হল যে, জাহমিয়্যারা বলে, কুরআন সৃষ্ট। তিনি বললেন, তারা আল্লাহর আরশে উঠাকে এবং মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর সাথে আল্লাহর কথাকে অস্বীকার করে। তারা ‘কুরআন আল্লাহর কথা’ এ বিশ্বাসকেও অস্বীকার করে। আমি মনে করি, তাদের তওবা করতে হবে। আর যদি তওবা না করে, তাহলে তাদের গর্দানে প্রহার করতে হবে’।[৯]

ওয়াকী‘ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, القرآن كلام الله ليس بمخلوق، فمن زعم أنه مخلوق فقد كفر بالله العظيم ‘কুরআন আল্লাহর কথা সৃষ্ট নয়। যে বলবে কুরআন সৃষ্ট, সে মহান আল্লাহকে অস্বীকার করল’।[১০] ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বলবে কুরআন সৃষ্ট, সে মহান আল্লাহকে অস্বীকার করল’।[১১]

ইমাম ইউসুফ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, فاتفق رأيه ورأيي على أن من قال : القرآن مخلوق فهو كافر ‘আমার এবং ইমাম আবূ হানীফার রায় হল, যে ব্যক্তি বলবে কুরআন সৃষ্ট, সে কাফির’।[১২]

মূসা ইবনু রবী‘আ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি জা‘ফর ইবনু মুহাম্মাদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে কুরআন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি বলেছেন, كلام الله ‘(তা হল) আল্লাহর কথা। আমি তাঁকে বললাম, তা কি সৃষ্ট। তিনি বললেন, না। আমি তাঁকে বললাম, ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কী? যে ধারণা করে, কুরআন সৃষ্ট। তিনি বললেন, يقتل ‘তাকে হত্যা করা হবে’।[১৩]

মালিক ইবনু আনাস (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, من يقول القرآن مخلوق هو عندي كافر فأقتلوه ‘যে বলবে কুরআন সৃষ্ট, সে আমার নিকট কাফির। অতএব, তোমরা তাকে হত্যা কর’।[১৪]

ইমাম বায়হাক্বী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের পূর্ববর্তী ফক্বীহ এবং আলেমগণ বিশ্বাস করতেন যে, কুরআন আল্লাহর কথা, সৃষ্ট নয়। ছাহাবী এবং তাবেঈগণ-এর সময় থেকে এর বিপরীত অন্য কোন বিশ্বাস আমাদের নিকট প্রমাণিত নয়। সর্বপ্রথম ‘জা‘দ ইবনু দিরহাম’ জামা‘আতের বিরোধিতা করেন। অর্থাৎ তিনি বলেন, কুরআন সৃষ্ট। ইরাক্বের আমীর খলীদ ইবনু আব্দুল্লাহ আল-ক্বাসরী তার মতকে প্রত্যাখান করেন এবং এ বিদ‘আতী কথা বলার কারণে তাকে কুরবানী (হত্যা) করেন।[১৫] তিনি ঈদুল আযহার দিন লোকদের উদ্দেশ্যে খুত্ববা দিয়ে বললেন,

أَيُّهَا النَّاسُ ضَحُّوْا، تَقَبَّلَ اللهُ ضَحَايَاكُمْ، فَإِنِّيْ مُضَحٍّ بِالْجَعْدِ بْنِ دِرْهَمٍ، إِنَّهُ زَعَمَ أَنَّ اللهَ لَمْ يَتَّخِذْ إِبْرَاهِيْمَ خَلِيْلًا، وَلَمْ يُكَلِّمْ مُوْسَى تَكْلِيْمًا

‘হে লোকসকল! তোমরা কুরবানী কর, মহান আল্লাহ তোমাদের কুরবানী কবুল করুন। আমি জা‘দ ইবনু দিরহামের কুরবানীকারী। সে ধারণা করে যে, মহান আল্লাহ ইবরাহীমকে খলীল হিসাবে গ্রহণ করেননি এবং মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর সাথে কথা বলেননি’। অতঃপর তিনি বক্তব্য শেষ করলেন এবং তাকে কুরবানী (হত্যা) করলেন।[১৬]

জা‘দ ইবনু দিরহামের নিকট হতে ‘জাহম ইবনু ছাফওয়ান’ এ বিদ‘আতী কথা গ্রহণ করেন এবং খুরাসানের আমীর ‘সালম ইবনু আহওযা’ জাহম ইবনু ছাফওয়ানকেও হত্যা করেন।[১৭] এই হল তাবেঈ আলেমগণের ফাতাওয়া এবং ফায়সালা। মহান আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তÍষ্ট হোন-আমীন!!

অতএব আলোচনায় প্রমাণিত হল যে, আল্লাহর কথা স্বীকৃত বিষয়। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদা মতে, আল্লাহর কথা সৃষ্ট নয়। বরং এটা তাঁর যাতী গুণ। যারা আল্লাহর এ গুণকে অস্বীকার করবে, তারা স্পষ্ট কাফির। মহান আল্লাহ আমাদেরকে মাতুরীদীদের ভ্রান্ত আক্বীদা থেকে হেফাযত করুন-আমীন!!

 (ইনশাআল্লাহ চলবে)

* শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আল-ইসলামিয়্যাহ, খড়খড়ি, রাজশাহী।

তথ্যসূত্র :
[১]. আব্দুল করীম আশ-শাহরাসতানী, আল-মিলাল ওয়ান নাহল, ১ম খণ্ড (মুওয়াসসাসাতুল হালাবী, তা.বি.), পৃ. ১০৬।
[২]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৫৪৫; আবূ দাঊদ, হা/৪৭৩৫।
[৩]. ছহীহ বুখারী, ‘তাওহীদ’ অধ্যায়, ৯ম খণ্ড, পৃ. ১৪১; আবূ দাঊদ, হা/৪৭৩৮।
[৪]. মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুর রহমান আল-খুমাইস, উছূলুদ দ্বীন ইনদা ইমাম আবী হানীফা (সঊদী আরব : দারুল ছামীঈ, তাবি), ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৩০-৩৩১।
[৫]. আদা’ঊ মাতুরীদীয়াতি লিল আক্বীদাতিত সালাফিয়্যা আল-মাতুরীদীয়্যা- আল-মাতুরীদীয়া ওয়া মাওক্বিফুহুম মিন তাওহীদিল আসমা’ই ওয়াছ ছিফাত, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৬৬।
[৬]. ইবনু কুদামাহ আল-মাক্বদেসী, লুম‘আতুল ই‘তিক্বাদ (সঊদী আরব : ওযারাতুশ শুয়ূনিল ইসলামিয়্যাহ ওয়াল আওক্বাফ ওয়াত দাওয়াত ওয়াল ইরশাদ, ১৪২০ হি.), পৃ. ২১।
[৭]. القَوْل فِي الْقُرْآن : وَصِفَاته فِي الْأَزَل غير محدثة وَلَا مخلوقة وَمن قَالَ إِنَّهَا مخلوقة أَو محدثة اَوْ وقف اَوْ شكّ فيهمَا فَهُوَ كَافِر بِاللَّه تَعَالَى واالقرآن كَلَام الله تَعَالَى فِي الْمَصَاحِف مَكْتُوب وَفِي الْقُلُوب مَحْفُوظ وعَلى الألسن مقروء وعَلى النَّبِي عَلَيْهِ الصَّلَاة وَالسَّلَام منزل ولفظنا بِالْقُرْآنِ مَخْلُوق وكتابتنا لَهُ مخلوقة وقراءتنا لَهُ مخلوقة وَالْقُرْآن غير مَخْلُوق. وَمَا ذكره الله تَعَالَى فِي الْقُرْآن حِكَايَة عَن مُوسَى وَغَيره من الْأَنْبِيَاء عَلَيْهِم السَّلَام وَعَن فِرْعَوْن وابليس فَإِن ذَلِك كُله كَلَام الله تَعَالَى إِخْبَارًا عَنْهُم وَكَلَام الله تَعَالَى غير مَخْلُوق وَكَلَام مُوسَى وَغَيره من المخلوقين وَالْقُرْآن كَلَام الله تَعَالَى فَهُوَ قديم لَا كَلَامهم وَسمع مُوسَى عَلَيْهِ السَّلَام كَلَام الله تَعَالَى كَمَا فِي قَوْله تَعَالَى {وكلم الله مُوسَى تكليما} দ্র. আল-ফিক্বহুল আকবার, পৃ. ২০।
[৮]. আব্দুল করীম আশ-শাহরাসতানী, আল-মিলাল ওয়ান নাহল, ১ম খণ্ড (মুওয়াসসাসাতুল হালাবী, তা.বি.), পৃ. ১০৬।
[৯]. নু‘মান ইবনু মাহমূদ ইবনু আব্দিল্লাহ, জালাউল ‘আইনাইন ফী মুহাকামাতিল আহমাদাইন (মাত্ববা‘আতুল মাদানী, ১৪০১ হি.), পৃ. ৩৭৫।
[১০]. প্রাগুক্ত।
[১১]. প্রাগুক্ত।
[১২]. প্রাগুক্ত।
[১৩]. প্রাগুক্ত।  
[১৪]. প্রাগুক্ত।
[১৫]. আবূ সাহল মুহাম্মাদ ইবনু আব্দির রহমান, মাওসূ‘আতু মাওয়াক্বিফুস সালাফ ফিল আক্বীদাতি ওয়াল মানহাজি ওয়াত তারবিয়াতি, ৭ম খণ্ড (মিশর : আল-মাকতাবাতুল ইসলামিয়্যাহ, তা.বি.), পৃ. ২২।
[১৬]. ইবনু আবিল ইয আল-হানাফী, শারহুল আক্বীদা আত-ত্বাহাবী, তাহক্বীক্ব : আহমাদ শাকির (ওযারাতুশ শুয়ূনিল ইসলামিয়্যা ওয়াল আওক্বাফ ওয়াদ দাওয়াত ওয়াল ইরশাদ, ১৪১৮ হি.), পৃ. ২৭৩।
[১৭]. প্রাগুক্ত।




প্রসঙ্গসমূহ »: ঈমান-আক্বীদা
প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আত সম্পর্কে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের অবস্থান - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির
ঈদে মীলাদুন্নবী : একটি পর্যালোচনা - আল-ইখলাছ ডেস্ক
ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ১১ রাক‘আতের নির্দেশ দিয়েছিলেন - ব্রাদার রাহুল হোসেন (রুহুল আমিন)
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (১০ম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
সালাফী মানহাজের মূলনীতিসমূহ (২য় কিস্তি) - আব্দুল গাফফার মাদানী
সুন্নাতের আলো বিদ‘আতের অন্ধকার (৩য় কিস্তি) - অনুবাদ : হাফীযুর রহমান বিন দিলজার হোসাইন
ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা (৪র্থ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আযীযুর রহমান
বিদ‘আত পরিচিতি (১২তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ইসলামী ভ্রাতৃত্বের গুরুত্ব ও মূল্যায়ন - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন
ইখলাছই পরকালের জীবনতরী (২য় কিস্তি) - আব্দুল গাফফার মাদানী
ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমন সংশয় নিরসন (১৪তম কিস্তি) - হাসিবুর রহমান বুখারী
শিক্ষাদানে নববী পদ্ধতি ও কৌশল - হাসিবুর রহমান বুখারী

ফেসবুক পেজ