শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২৩ পূর্বাহ্ন
 সদাচরণের প্রতিদান ও দুশ্চরিত্রের পরিণাম
ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর*

 
সদাচরণ মানুষের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি গুণ। যাকে আল্লাহ তা‘আলা সদাচরণের গুণে গুণান্বিত করেছেন তার জীবন ধন্য। সদাচারী ব্যক্তিরা সবার নিকটই প্রিয়। পক্ষান্তরে দুশ্চরিত্র অতিশয় জঘন্য স্বভাব। দুশ্চরিত্রবান ব্যক্তিকে সকলেই ঘৃণা করে। তার সাথে কেউ সখ্যতা গড়তে চয় না। এরূপ ব্যক্তি রবের ভালোবাসা থেকেও বঞ্চিত হয়। এমন বদমেজাজী মানুষ ইহকালে লাঞ্ছিত ও পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত। উত্তম চরিত্র প্রশংসনীয় স্বভাব। আর দুশ্চরিত্র নিন্দনীয় স্বভাব। তাছাড়া দুশ্চরিত্রের স্বভাব তার হৃদয়েও কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। খারাপ স্বভাব মানুষকে প্রশান্তি দেয় না। ভালো জিনিস মানুষকে প্রশান্তি দেয়। এমর্মে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে-
عَنِ النَّوَّاسِ بْنِ سَمْعَانَ الأَنْصَارِىِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَأَلْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ عَنِ الْبِرِّ وَالإِثْمِ فَقَالَ الْبِرُّ حُسْنُ الْخُلُقِ وَالإِثْمُ مَا حَاكَ فِىْ صَدْرِكَ وَكَرِهْتَ أَنْ يَطَّلِعَ عَلَيْهِ النَّاسُ.

নাওয়াস ইবনু সাম‘আন আল-আনছারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘একদা আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে নেকী ও পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, ‘নেকী হল উত্তম চরিত্র আর পাপ হল যে কাজ তোমার অন্তরে সংশয় সৃষ্টি করে এবং ঐ কাজটি তুমি জনসমাজে প্রকাশ হওয়া অপছন্দ করো’।[১]

সদাচরণের গুরুত্ব

ইসলামের দৃষ্টিতে সদাচরণের গুরত্ব অত্যাধিক। সদাচরণকে অন্য কিছুর সাথে তুলনা করা মুশকিল। উত্তম চরিত্র বান্দার প্রতি আল্লাহর বিশেষ এক দান। যার মধ্যে উত্তম আচরণ রয়েছে, তার মধ্যে মানবীয় গুণাবলীর সবই রয়েছে। সদাচরণের প্রশংসা করে মহান আল্লাহ বলেন,

فَبِمَا رَحۡمَۃٍ مِّنَ اللّٰہِ لِنۡتَ لَہُمۡ ۚ وَ لَوۡ کُنۡتَ فَظًّا غَلِیۡظَ الۡقَلۡبِ لَانۡفَضُّوۡا مِنۡ حَوۡلِکَ ۪ فَاعۡفُ عَنۡہُمۡ وَ اسۡتَغۡفِرۡ لَہُمۡ وَ شَاوِرۡہُمۡ فِی الۡاَمۡرِ ۚ فَاِذَا عَزَمۡتَ فَتَوَکَّلۡ عَلَی اللّٰہِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ یُحِبُّ الۡمُتَوَکِّلِیۡنَ.

‘অতএব আল্লাহর অনুগ্রহ এই যে, আপনি তাদের প্রতি কোমল চিত্ত হয়েছিলেন, আপনি যদি কর্কশভাষী কঠোর হৃদয়ের হতেন, তবে নিশ্চয় তারা আপনার সঙ্গ হতে সরে যেত। অতএব আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন ও তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং কার্য সম্বন্ধে তাদের সাথে পরামর্শ করুন। অনন্ত যখন আপনি দৃঢ় সংকল্প করবেন, তখন আল্লাহর প্রতি ভরসা করুন এবং নিশ্চয় আল্লাহ নির্ভরশীলগণকে ভালোবাসেন’ (সূরা আলে ইমরান, ৩/১৫৯)।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। আল্লাহ তাঁর মধ্যে মানবীয় সকল গুণের সমাহার ঘটিয়েছিলেন। এসব মহৎ গুণের কারণেই মানুষ মুগ্ধ হয়ে তাঁর কাছে ছুটে আসত। যে একবার তাঁর সংস্পর্শে আসত, সে আর ফিরে যেত না। আল্লাহ তাঁকে বিশ্ব বাসীর জন্য অনুসরণীয় আদর্শ হিসাবে গড়ে তুলেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, لَقَدۡ کَانَ لَکُمۡ  فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰہِ  اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ ‘তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মধ্যে সর্বোত্তম আদর্শ রয়েছে’ (সূরা আল-আহযাব, ৩৩/২১)। উত্তম চরিত্রের গুরুত্ব একাধিক হাদীছেও বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ رَجُلٍ مِنْ مُزَيْنَةَ قَالَ قَالُوا يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ مَا خَيْرُ مَا أُعْطِيَ الْإِنْسَانُ؟ قَالَ الْخُلُقُ الْحَسَنُ.

মুযাইনা গোত্রের এক ব্যক্তি বলেন, একদা ছাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! সর্বোত্তম জিনিস কোনটি, যা মানব জাতিকে দেয়া হয়েছে? তিনি বললেন, উত্তম চরিত্র’।[২] অপর হাদীছে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ عَبْدِ اللهِ  بْنِ عَمْرٍو رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ مِنْ خِيَارِكُمْ أَحْسَنَكُمْ أَخْلاَقًا.

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই সর্বপেক্ষা উত্তম, যে চরিত্রের দিক দিয়ে উত্তম’।[৩]

চরিত্রের দিক দিয়ে উত্তম ব্যক্তিরাই দুনিয়ায় সবচেয়ে ভালো মানুষ। মানব জাতিকে আল্লাহ তা‘আলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে জিনিস দিয়েছেন, তাহল উত্তম চরিত্র। মানুষের জীবন সুন্দর করার জন্য এ মহৎ গুণ তিনি দিয়েছেন। উত্তম চরিত্রের চেয়ে মূল্যবান জিনিস দ্বিতীয়টি আর নেই। সদাচরণের জন্য তিনি যা বান্দাকে দেন অন্য কোনো কারনে তা দেন না।

عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ إِنَّ اللهَ تَعَالَى رَفِيْقٌ يُحِبُّ الرِّفْقَ وَيُعْطِيْ عَلَى الرِّفْقِ مَا لَا يُعْطِيْ عَلَى الْعُنْفِ وَمَا لَا يُعْطِي عَلَى مَا سِوَاهُ.

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘আল্লাহ কোমল, তিনি কোমলতাকে ভালোবাসেন। আর তিনি কোমলতার প্রতি যত অনুগ্রহ করেন, কঠোরতা এবং অন্য কোনো আচরণের প্রতি তত অনুগ্রহ করেন না’।[৪]

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِيْنَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا.

আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘যাদের চরিত্র উত্তম তারাই পূর্ণ মুমিন’।[৫]

কোমল স্বভাবের মানুষকে আল্লাহ ভালোবাসেন। তিনি কোমল স্বভাবের মানুষের প্রতি অধিক অনুগ্রহ করেন। তাদের প্রতি যে পরিমাণ অনুগ্রহ করেন তা অন্য আচরণের মানুষের প্রতি করেন না। উত্তম চরিত্র মানুষের ঈমানকে পরিপূর্ণ করে দেয়। উত্তম আচরণের মুসলিমরাই পর্ণূাঙ্গ মুমিন হিসাবে স্বীকৃত। আর লজ্জাশীলতা মানুষের চরিত্রকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে ।

عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ مِمَّا أَدْرَكَ النَّاسُ مِنْ كَلاَمِ النُّبُوَّةِ الأُوْلَى إِذَا لَمْ تَسْتَحِى فَاصْنَعْ مَا شِئْتَ.

ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘পূর্ববর্তী নবীগণ হতে লোকেরা যা পেয়েছে এবং আজও যা বিদ্যমান তাহল যখন তোমার লজ্জা থাকবে না, তখন তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে’।[৬]

লজ্জাশীলতা সৎ চরিত্রের উল্লোখযোগ্য উপাদান। লজ্জাশীল ব্যক্তিরা সাধারণত সৎ চরিত্রবান হয়ে থাকে। প্রত্যেক নবী ও রাসূলগণের কথায় যে উপদেশ পাওয়া গেছে তা হচ্ছে, লজ্জাশীলতা অবলম্বন। কেননা যখন মানুষের ভিতর থেকে লজ্জা বিদায় নেয়, তখন তার দ্বারা কোনো কাজ করতে বাধে না। যতই জঘন্য কাজ হোক না কেন তা তার কাছে কিছুই মনে হবে না। তাই সদাচারী হতে হলে লজ্জাশীল হওয়ার গুরুত্ব অনেক বেশি।

সদাচরণের প্রতিদান

সদাচরণের প্রতিদান অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। সদাচরণের মাধ্যমে যা অর্জিত হয় অন্য কোনো মাধ্যমে তা অর্জিত হয় না। সদারচণের অনেক ফযীলতের কথা কুরআন ও সুন্নাহতে বর্ণিত হয়েছে। তা হতে দু’একটি তুলে ধরা হল-

وَ لَا تَسۡتَوِی الۡحَسَنَۃُ  وَ لَا السَّیِّئَۃُ ؕ اِدۡفَعۡ  بِالَّتِیۡ  ہِیَ  اَحۡسَنُ فَاِذَا الَّذِیۡ بَیۡنَکَ وَ بَیۡنَہٗ  عَدَاوَۃٌ کَاَنَّہٗ  وَلِیٌّ حَمِیۡمٌ.

‘ভালো এবং মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দ প্রতিহত করো উৎকৃষ্ট দ্বারা; ফলে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো’ (সূরা ফুছছিলাত, ৪১/৩৪)। একটি হাদীছে বর্ণিত হয়েছে- রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

أَحْبِبْ حَبِيْبَكَ هَوْنًا مَّا عَسَى أَنْ يَّكُوْنَ بَغِيْضَكَ يَوْمًا مَّا وَأَبْغِضْ بَغِيْضَكَ هَوْنًا مَّا عَسَى أَنْ يَّكُوْنَ حَبِيْبَكَ يَوْمًا مَّا.

‘তোমরা বন্ধুর ভালোবাসায় আতিশয্য দেখাবে না, কারণ একদিন হয়ত সে তোমার শত্রুতে পরিণত হতে পারে। আবার তোমরা শত্রুকে শত্রুতার ক্ষেত্রে আতিশয্য প্রদর্শন করবে না, কারণ একদিন হয়ত সে তোমার বন্ধুতে পরিণত হবে’।[৭]

ভালো আর মন্দ কখনো এক সমান নয়। ইসলামে মন্দের জবাব ভালো দ্বারা দেয়া হয়েছে। সৎভাবে মন্দের জবাব দিলে এক সময় ঘোর শত্রুও ঘনিষ্ট বন্ধুতে পরিণত হবে। কেননা সে পরক্ষণে দুর্ব্যবহারের জন্য অনুতপ্ত হবে। এক সময় তার সাথে সুন্দর আচরণ করা শুরু করবে। অন্তত তার সাথে আর খারাপ আচরণ করবে না। এমর্মে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ اَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِمَنْ يَحْرُمُ عَلَى النَّارِ وَبِمَنْ تَحْرُمُ النَّارُ عَلَيْهِ عَلَى كُلِّ هَيِّنٍ لَيِّنٍ قَرِيْبٍ سَهْلٍ.

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে এমন লোকের সংবাদ দিব না? যার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে যায়; আর আগুনও তাকে স্পর্শ করতে পারবে না। এমন প্রত্যেক ব্যক্তি যার মেজায নরম, স্বভাব কোমল, মানুষের নিকটতম (মিশুক) এবং আচরণ সহজ সরল’।[৮] অপর বর্ণনায় রয়েছে-

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سُئِلَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ عَنْ أَكْثَرِ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ الْجَنَّةَ فَقَالَ تَقْوَى اللهِ وَحُسْنُ الْخُلُقِ وَسُئِلَ عَنْ أَكْثَرِ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ النَّارَ فَقَالَ الْفَمُ وَالْفَرْجُ.

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে জিজ্ঞাসা করা হল, কোন জিনিস মানুষকে সবচেয়ে বেশি জান্নাতে প্রবেশ করাবে? তিনি বলেন, তা হচ্ছে- আল্লাহভীতি ও উত্তম চরিত্র। আর জিজ্ঞাসা করা হল, মানুষকে কোন জিনিস সবচেয়ে বেশি জাহান্নামে প্রবেশ করাবে? তিনি বললেন, তা হচ্ছে- মুখ বা জিহ্বা ও অপরটি লজ্জাস্থান’।[৯]

عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَتْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ إِنَّ الْمُؤْمِنَ لَيُدْرِكُ بِحُسْنِ خُلُقِهِ دَرَجَةَ الصَّائِمِ الْقَائِمِ.

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, ‘ঈমানদার ব্যক্তিরা তাদের উত্তম চরিত্র দ্বারা নফল ছিয়াম পালনকারী ও রাতে ইবাদতকারীর মর্যাদা লাভ করবে’।[১০]

উত্তম চরিত্রের ব্যক্তিদের জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে যায়। তাদেরকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করতে পারে না। উত্তম আচরণের মাধ্যমে তারা দিনে নফল ছিয়াম পালনকারী ও রাতে নফল ছালাত আদায়কারীর ফযীলত পেয়ে থাকে। যে সব গুণের কারণে মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে, তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পরহেযগারিতা ও সদাচরণ। সদাচারী ব্যক্তিদের দুনিয়া ও আখেরাত উভয়ই কল্যাণের।

যার মধ্যে সদাচরণ নেই তার মধ্যে কল্যাণ নেই

কোমল স্বভাবের মানুষের মধ্যে কল্যাণ রয়েছে। যে সকল ব্যক্তির মধ্যে কোমলতা নেই তার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। কঠোর স্বভাবের মানুষের মধ্যে কোনো রকমের কল্যাণ থাকে না। এমর্মে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ عَلَيْكِ بِالرِّفْقِ وَإِيَّاكِ وَالْعُنْفَ وَالْفُحْشَ إِنَّ الرِّفْقَ لَا يَكُوْنُ فِيْ شَيْءٍ إِلَّا زَانَهُ وَلَا يُنْزَعُ مِنْ شَيْء إِلَّا شَانَهُ.

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘কোমলতা নিজের জন্য বাধ্যতামূলক করে নাও এবং কঠোরতা ও নির্লজ্জতা হতে নিজেকে বাঁচাও। কারণ যাতে নম্রতা ও কোমলতা থাকে তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয়। আর যাতে কোমলতা থাকে না, তা দোষণীয় হয়ে পড়ে’।[১১]

عَنْ جَرِيْرٍ عَنِ النَّبِىِّ ﷺ قَالَ مَنْ يُحْرَمُ الرِّفْقَ يُحْرَمُ الْخَيْرَ.

জারীর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেন, ‘যাকে কোমলতা ও নম্রতা হতে বঞ্চিত করা হয়, তাকে যাবতীয় কল্যাণ হতে বঞ্চিত করা হয়’।[১২] অপর এক বর্ণনায় রয়েছে-

عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ النَّبِيُّ ﷺ مَنْ أُعْطِيَ حَظَّهُ مِنَ الرِّفْقِ أُعْطِي حَظَّهُ مِنْ خَيْرِ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَمَنْ حُرِمَ حَظَّهُ مِنَ الرِّفْقِ حُرِمَ حَظَّهُ مِنْ خَيْرِ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ.

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘যাকে নম্রতার কিছু অংশ প্রদান করা হয়েছে তাকে দুনিয়া ও আখেরাতের বিরাট কল্যাণের অংশ দেয়া হয়েছে। আর যাকে সেই কোমলতা হতে বঞ্চিত করা হয়েছে তাকে উক্ত ইহকাল ও পরকালের বিরাট কল্যাণ হতে বঞ্চিত করা হয়েছে’।[১৩]

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কোমলতাকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করতে বলেছেন। কেননা তা সৌন্দর্য বর্ধন করে। আর কঠোরতা ও নির্লজ্জতা থেকে নিজেকে হেফাযতে রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা তা দোষণীয় স্বভাব। যার মধ্যে কোমলতা রয়েছে তার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের বিরাট কল্যাণ রয়েছে। যার মধ্যে কোমল স্বভাব নেই সে উভয় জগতে অনেক কল্যাণ থেকে বঞ্চিত।

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ الْمُؤْمِنُ غِرٌّ كَرِيْمٌ وَالْفَاجِرُ خِبٌّ لَئِيْمٌ.

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘ঈমানদার মানুষ সরল ও ভদ্র হয়। পক্ষান্তরে পাপী মানুষ ধূর্ত ও হীন চরিত্রের হয়’।[১৪]

عَنْ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَيْسَ الْمُؤْمِنُ بِالطَّعَّانِ وَلَا بِاللَّعَّانِ وَلَا الْفَاحِشِ وَلَا الْبَذِيْءِ.

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘মুমিন ব্যক্তি ভর্ৎসনাকারী, অভিসম্পাৎকারী, অশ্লীল গালমন্দকারী ও নির্লজ্জ হতে পারে না’।[১৫]

মুমিন ব্যক্তি সহজ-সরল ও নম্র-ভদ্র প্রকৃতির হয়। আর পাপী ব্যক্তি ধূর্ত ও অসৎ চরিত্রের হয়ে থাকে। প্রকৃত মুসলিম অশালীন ভাষী ও নির্লজ্জ স্বভাবের হয় না। ভালো মানুষের মধ্যে ভালো গুণ থাকে। আর বদ মানুষের মধ্যে খারাপ স্বভাবে ভরপুর হয়। তাই উত্তম স্বভাবের অধিকারী হয়ে প্রকৃত মুসলিম হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। 

দুশ্চরিত্রের ব্যক্তি আল্লাহর নিকট ঘৃণিত

দুশ্চরিত্রবান ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়। তাকে মানুষও ভালোবাসে না। সবাই তাকে ঘৃণার চোখে দেখে।

عَنْ أَبِىْ الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ ﷺ قَالَ إِنَّ أَثْقَلَ شَىْءٍ يُوْضَعُ فِىْ مِيْزَانِ الْمُؤْمِنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ خُلُقٌ حَسَنٌ وَإِنَّ اللهَ يَبْغَضُ الْفَاحِشَ الْبَذِىءَ.

আবূ দারদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন মুমিনের পাল্লায় সর্বাপেক্ষা ভারী যে জিনিসটি রাখা হবে, তাহল উত্তম চরিত্র। আর আল্লাহ তা‘আলা অশ্লীলভাষী দুশ্চরিত্রকে ঘৃণা করেন’।[১৬]

عَنْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ إِنَّ مِنْ أَحَبِّكُمْ إِلَىَّ وَأَقْرَبِكُمْ مِنِّى مَجْلِسًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَحَاسِنَكُمْ أَخْلاَقًا وَإِنَّ أَبْغَضَكُمْ إِلَىَّ وَأَبْعَدَكُمْ مِنِّى مَجْلِسًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ الثَّرْثَارُونَ وَالْمُتَشَدِّقُونَ وَالْمُتَفَيْهِقُونَ قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ قَدْ عَلِمْنَا الثَّرْثَارُونَ وَالْمُتَشَدِّقُونَ فَمَا الْمُتَفَيْهِقُونَ قَالَ الْمُتَكَبِّرُونَ.

জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে আমার প্রিয়তম এবং ক্বিয়ামতের দিন অবস্থানে আমার নিকটতম ব্যক্তির কিছু সেই লোক হবে, যারা তোমাদের মধ্যে চরিত্রে শ্রেষ্ঠতম। আর তোমাদের নিকট ঘৃণ্যতম এবং ক্বিয়ামতের দিন অবস্থানে আমার নিকট থেকে দূরতম হবে তারা; যারা অনর্থক অত্যাধিক আবোল-তাবোল বলে ও বাজে বকে এমন বাচাল ও বখাটে লোক; যারা অলস্যভাবে বা কায়দা করে টেনেটেনে কথা বলে। আর অনুরূপ অহংকারীরাও’।[১৭]

عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ شَرَّ النَّاسِ عِنْدَ اللهِ مَنْزِلَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ تَرَكَهُ النَّاسُ اتِّقَاءَ شَرِّهِ وفي رواية إتِّقَاءَ فَحْشِهِ.

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট মর্যাদায় সেই ব্যক্তিই মন্দ বলে সাব্যস্ত হবে, যার অনিষ্টের ভয়ে লোকেরা তাকে ত্যাগ করেছে’। অন্য বর্ণনায় আছে, ‘যার অশ্লীলতার ভয়ে লোকেরা তাকে পরিত্যাগ করেছে’।[১৮]

উত্তম চরিত্র হাশরের মাঠে দাড়ি পাল্লায় ওযনে সবচেয়ে ভারী হবে। ঠিক দুশ্চরিত্র এর বিপরীত। অসদাচরণের মানুষকে আল্লাহ তা‘আলা ঘৃণা করেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদেরকে ঘৃণা করেন। সবচেয়ে খারাপ মানুষ তারাই যার অনিষ্ট হতে বাঁচার জন্য অন্যরা তার থেকে দূরে সরে যায়। মানুষের সাথে মিশুক ব্যক্তিদেরকে ইসলামে মূল্যায়ন করা হয়েছে। মিশুক ও সদাচারী ব্যক্তিদের থেকে দূরে সরে যায় না।

দুশ্চরিত্রবান ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না

উত্তম চরিত্রের ফলাফল যেমন খুব ভালো ঠিক তেমনি দুশ্চরিত্রের ফলাফল খুব খারাপ। বদমেজাজী মানুষের ফলাফল হাদীছে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ حَارِثَةَ ابْنِ وَهْبٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ الْجَوَّاظُ وَلَا الْجَعْظَرِيُّ.

হারেছ ইবনু ওয়াহাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘দুশ্চরিত্র-মন্দ স্বভাব ও কঠোর রুক্ষ স্বভাবের মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।[১৯] রাবী বলেন, হাদীছে উল্লেখিত الْجَوَّاظُ শব্দের অর্থ হচ্ছে- দুশ্চরিত্র ও মন্দ স্বভাব। আর الْجَعْظَرِيُّ শব্দের অর্থ হচ্ছে- কঠোর ও রুক্ষ ভাষা ব্যবহারকারী।

দুশ্চরিত্র, মন্দ স্বভাব, কঠোর হৃদয় ও রুক্ষ মেজাজের মানুষ জান্নাতে যাবে না। এরূপ নোংরা স্বভাবের মানুষের জন্য জান্নাত উপযুক্ত স্থান নয়। এদের জন্য জাহান্নামই উপযুক্ত জায়গা। তারা দুনিয়ায় মানুষকে বিভিন্নভাবে কষ্ট দিয়েছে। যার পরিণাম তাদেরকে আখেরাতে ভোগ করতে হবে। তারা মানুষকে যে পরিমাণ কষ্ট দিয়েছে, তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি যন্ত্রণা তাদেরকে সইতে হবে।

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ الْحَيَاءُ مِنَ الإِيمَانِ وَالإِيمَانُ فِى الْجَنَّةِ وَالْبَذَاءُ مِنَ الْجَفَاءِ وَالْجَفَاءُ فِى النَّارِ.

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘লজ্জা হচ্ছে ঈমান। আর ঈমান হচ্ছে জান্নাত লাভের মাধ্যম। আর অশ্লীলতা হচ্ছে অবাধ্যতা। আর অবধ্যতার পরিণামই হচ্ছে জাহান্নাম’।[২০]

عَنْ حَارِثَةَ بْنَ وَهْبٍ الْخُزَاعِىِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ يَقُوْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ الْجَنَّةِ كُلُّ ضَعِيْفٍ مُتَضَعَّفٍ لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللهِ  لأَبَرَّهُ أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ النَّارِ كُلُّ جَوَّاظٍ زَنِيْمٍ مُتَكَبِّرٍ.

হারেছা ইবনু ওহাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতী লোকের কথা বলব না? তারা হল সরলতার দরুণ দুর্বল, যাদেরকে লোকেরা হীন, তুচ্ছ ও দুর্বল মনে করে। আল্লাহ তাদেরকে এত ভালোবাসেন যে, তারা কোনো বিষয়ে কসম করলে তাদেরকে সত্যে পরিণত করেন। তারপর নবী করীম (ﷺ) বললেন, আমি তোমাদেরকে কি জাহান্নামীদের কথা বলব না? তারা হল, যারা অনর্থক কথা নিয়ে বিবাদ করে, আর যারা বদমেজাজী অহংকারী’।[২১] অপর এক বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ النَّارِ كُلُّ عُتُلٍّ جَوَّاظٍ مُسْتَكْبِر ‘আমি তোমাদেরকে জাহান্নামীদের সম্পর্কে অবহিত করব না কি? (তারা হল) প্রত্যেক রূঢ় স্বভাব, কঠিন হৃদয় ও দাম্ভিক (অহংকারী) ব্যক্তি’।[২২]

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বিভিন্নভাবে দুশ্চরিত্রবান ব্যক্তিদের ফলাফল তুলে ধরেছেন। তিনি অনেকভাবেই বুঝিয়েছেন যে, বদ স্বভাবের মানুষের শেষ পরিণতি জাহান্নাম। রূঢ় স্বভাব, কঠিন হৃদয়, কর্কশভাষী, দাম্ভিক ও আত্ম অহমিকায় লিপ্ত ব্যক্তিরা জাহান্নামের ইন্ধনে পরিণত হবে। তাই আমাদের এরূপ নোংরা স্বভাব বর্জন করা উচিত।

সুধী পাঠক! পশু-পাখি সহজেই পশু-পাখি, তরুলতা সহজেই তরুলতা; কিন্তু মানুষ সহজেই মানুষ নয়। অনেক সাধনার পরে তাকে মানুষ হতে হয়। আর এই সাধনার প্রথম পদক্ষেপ হল চরিত্র গঠন। সৎচরিত্রবান ব্যক্তিরাই প্রকৃত মানুষ। তাদের দ্বারাই সমাজ, দেশ ও জাতির কল্যাণ সাধিত হয়। তারা অন্যের কল্যাণে নিজেদেরকে সর্বদা নিয়োজিত রাখেন। নিজের সুখের চেয়ে অন্যের সুখকে বড় করে দেখেন। আর দুশ্চরিত্র ব্যক্তিরা প্রকৃতার্থে মানুষ নয়। বরং তারা কখনো কখনো মানুষরূপী পশুতে পরিণত হয়। তারা অনেক সময় পশুত্বকেও হার মানায়। তাদের থেকে প্রত্যেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে। তাদের ক্ষতিকর প্রভাব সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের এ নোংরা স্বভাবের কারণে সমাজ, দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়। তারা সমাজের জন্য এক রকম বোঝা। তাদের ক্ষতি থেকে আপনজনও বাঁচতে পারে না। তার নিকটের ব্যক্তিরা তাদেরকে হৃদয় থেকে ঘৃণা করে। বিধায় এরূপ নোংরা স্বভাব পরিহার করা উচিত। যাদের মধ্যে এমন জঘন্য আচরণ রয়েছে তাদের এগুলো বর্জন করে তদস্থলে উত্তম আচরণ গ্রহণ করা উচিত। কোনো বিষয়ে সৎ নিয়তে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিলে, কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে আল্লাহ সাহায্য করেন। সকল অবস্থায় আল্লাহকে ভয় করা উচিত। ভালো মানুষের সাথে চলাফেরা করতে হবে। কখনো কোনো অন্যায় হয়ে গেলে তৎক্ষণাত ভালো কাজে নিজেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এমর্মে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ أَبِىْ ذَرٍّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ لِىْ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ اتَّقِ اللهَ حَيْثُمَا كُنْتَ وَأَتْبِعِ السَّيِّئَةَ الْحَسَنَةَ تَمْحُهَا وَخَالِقِ النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَنٍ.

আবূ যার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে বললেন, ‘তুমি যেখানে থাকবে আল্লাহকে ভয় করবে। কোনো কারণে মন্দ কাজ হয়ে গেলে তার পর পরই ভালো কাজ করবে। ভালো কাজ পাপসমূকে মুছে ফেলবে। আর সদাচরণের মাধ্যমে মানুষের সাথে মিলে মিশে থাকবে’।[২৩]


* পরিচালক, ইয়াসিন আলী সালাফী কমপ্লেক্স, রাজশাহী।

[১]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৫৩; তিরমিযী, হা/২৩৮৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৬৬৮; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৩৯৭; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৬৮৮৮৭; মিশকাত, হা/৫০৭৩।

[২]. মুসতাদরাক হাকেম, হা/৮২০৬; আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/২৯১; ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/৩৬৭; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/১৪৩৫; মিশকাত, হা/৫০৭৮, সনদ ছহীহ।

[৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৫৫৯; ছহীহ মুসলিম, হা/২৩২১; মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা, হা/২৫৮২৬; ছহীহ আত-তারগীব, হা/২৬৪০; মিশকাত, হা/৫০৭৫।

[৪]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৯৩; আবূ দাঊদ, হা/৪৮০৭; ইবনু মাজাহ, হা/৩৬৮৮; আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/৪৭২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯০২; দারেমী, হা/২৮৪৯; মিশকাত, হা/৫০৬৮।

[৫]. আবূ দাঊদ, হা/৪৬৮২; তিরমিযী, হা/১১৬২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৮২৯; দারেমী, হা/২৭৯২; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১; মিশকাত, হা/৫১০১, সনদ ছহীহ।

[৬]. ছহীহ বুখারী, হা/৬১২০; ইবনু মাজাহ, হা/৪১৮৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১৩১; ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/২৩১১; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৭৭৩৩; মিশকাত, হা/৫০৭২।

[৭]. তিরমিযী, হা/১৯৯৭; আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/১৩২১; সনদ ছহীহ।

[৮]. তিরমিযী, হা/২৪৮৮; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৪৭০; ত্বাবারাণী, মু‘জামুল কাবীর, হা/১০৫৬২; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৯৩৫; মিশকাত, হা/৫০৮৪, সনদ ছহীহ।

[৯]. তিরমিযী, হা/২০০৪; ইবনু মাজাহ, হা/৪২৪৬; আদাবুল মুফরাদ, হা/২৯৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯০৮৫; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৪৭৬; মিশকাত, হা/৪৮৩২, সনদ হাসান।

[১০]. আবূ দাঊদ, হা/৪৭৯৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৬৩৯; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৭৯৯৭; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৪৮০; মিশকাত, হা/৫০৮২, সনদ ছহীহ।

[১১]. ছহীহ বুখারী, হা/৬০৩০; ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৯৪; আদাবুল মুফরাদ, হা/৪৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৯৮২; ছহীহ আত-তারগীব, হা/২৬৬৫; মিশকাত, হা/৫০৬৮।

[১২]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৯২; আবূ দাঊদ, হা/৪৮০৯; ইবনু মাজাহ, হা/৩৬৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯২৭২; ইবনু হিব্বান, হা/৫৪৮; মিশকাত, হা/৫০৬৯।

[১৩]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫২৯৮; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/৪৫৩০; মিশকাত, হা/৫০৭৬, সনদ ছহীহ।

[১৪]. আবূ দাঊদ, হা/৪৭৯০; তিরমিযী, হা/১৯৬৪; আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/৪১৮; ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/১৬৬; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৭৭৬৪; মিশকাত, হা/৫০৮৫, সনদ হাসান।

[১৫]. তিরমিযী, হা/১৯৭৭; আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/৩১২; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/১৯২; মুসতাদরাকে হাকেম, হা/৩০; ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/১৮১৪; মিশকাত, হা/৩৬, সনদ ছহীহ।

[১৬]. তিরমিযী, হা/২০০২; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৫৬৯৩; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৮০০২; ছহীহ আত-তারগীব, হা/২৬৪১; মিশকাত, হা/৫০৮১, সনদ ছহীহ।

[১৭]. তিরমিযী, হা/২০১৮; রিয়াযুছ ছালেহীন, হা/৬৩৬; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তাহরীব, হা/২৬৬২-২৬৬৩; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৭৯১, সনদ ছহীহ।

[১৮]. ছহীহ বুখারী, হা/৬০৩২; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৩৭; মুসনাদে আবী ইয়ালা, হা/৪৮৩২; ছহীহুল জামে‘, হা/৭৯৩১; মিশকাত, হা/৪৮২৯।

[১৯]. আবূ দাঊদ, হা/৪৮০১; মুসনাদে আবী ইয়ালা, হা/১৪৭৬; মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা, হা/২৫৮৩১; ছহীহ আত-তারগীব, হা/২৯০২; মিশকাত, হা/৫০৮০, সনদ ছহীহ।

[২০]. তিরমিযী, হা/২০০৯; ইবনু মাজাহ, হা/৪১৮৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৫১৯; আদাবুল মুফরাদ, হা/১৩১৪; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৬০৮; মিশকাত, হা/৫০৭৭, সনদ ছহীহ

[২১]. ছহীহ বুখারী, হা/৬০৭১; ছহীহ মুসলিম, হা/২৮৫৩; মিশকাত, হা/৫১০৬।

[২২]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৯১৮; ইবনু মাজাহ, হা/৪১১৬; ছহীহ মুসলিম, হা/২৮৫৩;  মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৭৫২; মিশকাত, হা/৫১০৬।

[২৩]. তিরমিযী, হা/১৯৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৪৪১; দারেমী, হা/২৭৯১; ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/২৯৬; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩১৬০; মিশকাত, হা/৫০৮৩, সনদ হাসান।




প্রসঙ্গসমূহ »: পাপ আত্মশুদ্ধি
মাহে রামাযানে শিশু-কিশোর প্রতিপালন - আব্দুর রশীদ
যাদের জন্য জান্নাত ওয়াজিব (শেষ কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
দুর্নীতি হ্রাসে শিক্ষার ভূমিকা - মোঃ শফিকুল ইসলাম
সদাচরণের প্রতিদান ও দুশ্চরিত্রের পরিণাম - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ইসলামে রোগ ও আরোগ্য (২য় কিস্তি) - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (১৮তম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
কুরআনী প্রবাদ সংকলন : তাৎপর্য ও শিক্ষা (শেষ কিস্তি) - প্রফেসর ড. লোকমান হোসেন
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (১৫তম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
ফাযায়েলে কুরআন (৪র্থ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
মসজিদ : ইসলামী সমাজের প্রাণকেন্দ্র - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ইসলামী পুনর্জাগরণের প্রতিবন্ধকতা ও তার সমাধান (৫ম কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আত সম্পর্কে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের অবস্থান (২য় কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির

ফেসবুক পেজ