মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৭:৫৯ পূর্বাহ্ন
সালাম প্রদানের গুরুত্ব ও মর্যাদা
মুহাম্মাদ আরিফ হুসাইন

(শেষ কিস্তি)

সালাম প্রদানের নীতিমালা

সালাম দেয়ার কিছু নীতিমালা রয়েছে, যেগুলো ছহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। যেমন-

০১, সালামের ব্যাপক প্রচার-প্রসার করা : সালামের ব্যাপক প্রচার-প্রসার করা ইসলামের নির্দেশনা। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনাতে উপস্থিত হয়ে প্রথমে সালামের প্রচার-প্রসারের নির্দেশ প্রদান করেছিলেন। আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন হিজরত করে মদীনায় আগমন করলেন, তখন বললেন,

أَيُّهَا النَّاسُ أَفْشُوا السَّلَامَ وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ وَصِلُوا الْأَرْحَامَ وَصَلُّوْا بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ بِسَلَامٍ

‘হে লোক সকল! তোমরা সালাম প্রদান কর, (দরিদ্রকে) খাদ্য দান কর, আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা কর এবং রাতে (তাহাজ্জুদ) ছালাত আদায় কর, লোকজন যখন ঘুমিয়ে থাকে। তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ কর’।[১] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, اعْبُدُوا الرَّحْمَنَ وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ وَأَفْشُوا السَّلَامَ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ بِسَلَامٍ ‘তোমরা রহমানের ইবাদত কর, (দরিদ্রকে) খাদ্য প্রদান কর এবং সালাম প্রদান কর, তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ কর’।[২] রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেন,

لَا تَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوْا وَلَا تُؤْمِنُوْا حَتَّى تَحَابُّوْا أَوَ لَا أَدُلُّكُمْ عَلَى شَيْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوْهُ تَحَابَبْتُمْ؟ أَفْشُوْا السَّلَامَ بَيْنَكُمْ

‘তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ তোমরা ঈমান আনয়ন না করবে। আর তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ তোমরা পরস্পরকে ভাল না বাসবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি কথা বলে দিব না, যা করলে তোমাদের পারস্পরিক ভালবাসা বৃদ্ধি পাবে? তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের প্রচলন কর’।[৩]

০২. কৃপণতা পরিহার করা : সালাম না দেয়া কৃপণতার লক্ষণ। কৃপণতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সালাম প্রদান করতে হবে। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, أَبْخَلُ النَّاسِ الَّذِي يَبْخَلُ بِالسَّلَامِ وَإِنَّ أَعْجَزَ النَّاسِ مَنْ عَجَزَ بِالدُّعَاءِ ‘যে ব্যক্তি সালাম দিতে কার্পণ্য করে, সে সবচাইতে বড় কৃপণ। যে ব্যক্তি দু‘আ করার ব্যাপারে অক্ষম, সে সবচেয়ে বড় অক্ষম’।[৪]

০৩. পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম প্রদান করা : আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করল, ইসলামের কোন্ কাজ উত্তম? তিনি বললেন, تُطْعِمُ الطَّعَامَ وَتَقْرَأُ السَّلَامَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ ‘তুমি খানা খাওয়াবে এবং যাকে চেন এবং যাকে চেন না সবাইকে সালাম প্রদান করবে’।[৫]

০৪. মুসলিমের হক্ব আদায় করা : এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের ছয়টি হক্ব রয়েছে। তার মধ্যে সালাম প্রদান অন্যতম। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

لِلْمُؤْمِنِ عَلَى الْمُؤْمِنِ سِتُّ خِصَالٍ يَعُوْدُهُ إِذَا مَرِضَ وَيَشْهَدُهُ إِذَا مَاتَ وَيُجِيْبُهُ إِذَا دَعَاهُ وَيُسَلِّمُ عَلَيْهِ إِذَا لَقِيَهُ وَيُشَمِّتُهُ إِذَا عَطَسَ وَيَنْصَحُ لَهُ إِذَا غَابَ أَوْ شَهِدَ

‘এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের ছয়টি হক্ব রয়েছে। যখন সে রোগে আক্রান্ত হয়, তখন তাকে দেখতে যাবে। সে মৃত্যুবরণ করলে তার জানাযায় উপস্থিত হবে। যখন সে দাওয়াত করবে, তখন তা গ্রহণ করবে। যখন তার সাথে সাক্ষাৎ হবে তাকে সালাম প্রদান করবে। যখন সে হাঁচি দিবে, তখন তার জওয়াব দিবে এবং উপস্থিত বা অনুপস্থিত উভয় অবস্থায় তার জন্য কল্যাণ কামনা করবে’।[৬]

০৫. সালামের হক্ব আদায় করা : ছোট বড়কে, আরোহী পদচারীকে, পদচারী উপবিষ্টকে এবং অল্প সংখ্যক অধিক সংখ্যককে সালাম দিবে, এটাই সালামের হক্ব। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, يُسَلِّمُ الرَّاكِبُ عَلَى الْمَاشِيْ وَالْمَاشِيْ عَلَى الْقَاعِدِ وَالْقَلِيْلُ عَلَى الْكَثِيْرِ ‘আরোহী ব্যক্তি পায়ে হেঁটে চলাচলকারীকে, পায়ে হেঁটে চলাচলকারী ব্যক্তি উপবিষ্ট ব্যক্তিকে এবং কমসংখ্যক অধিকসংখ্যককে সালাম প্রদান করবে’।[৭] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, يُسَلِّمُ الصَّغِيْرُ عَلَى الْكَبِيْرِ وَالْمَارُّ عَلَى الْقَاعِدِ وَالْقَلِيْلُ عَلَى الْكَثِيْرِ ‘ছোটরা বড়দেরকে, অতিক্রমকারী উপবিষ্টকে এবং কম সংখ্যক অধিক সংখ্যককে সালাম প্রদান করবে’।[৮]

০৬. অন্যের মাধ্যমে (অনুপস্থিত ব্যক্তিকে) সালাম পৌঁছানো : আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, একদা নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেন,

يَا عَائِشَةُ هَذَا جِبْرِيْلُ يَقْرَأُ عَلَيْكِ السَّلَامَ‏ فَقَالَتْ وَعَلَيْهِ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ‏.‏ تَرَى مَا لَا أَرَى‏ تُرِيْدُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

‘হে আয়েশা! এই যে জিব্‌রীল (আলাইহিস সালাম)! তোমাকে সালাম দিচ্ছেন। তখন তিনি বললেন, তাঁর প্রতি সালাম, আল্লাহর রহমত এবং বরকত বর্ষিত হোক’।[৯]

০৭. ছোট বাচ্চাদেরকে সালাম দেয়া : আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, أَنَّهُ مَرَّ عَلَى صِبْيَانٍ فَسَلَّمَ عَلَيْهِمْ وَقَالَ كَانَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَفْعَلُهُ ‘তিনি একদিন বাচ্চাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। অতঃপর তিনি তাদের সালাম দিলেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাচ্চাদের সালাম দিতেন’।[১০]

০৮. বৈঠক ত্যাগ করার সময় সালাম দেয়া : আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

إِذَا انْتَهَى أَحَدُكُمْ إِلَىْ الْمَجْلِسِ فَلْيُسَلِّمْ فَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَقُوْمَ فَلْيُسَلِّمْ فَلَيْسَتِ الأُولَى بِأَحَقَّ مِنَ الْآخِرَةِ

‘তোমাদের কেউ মজলিসে উপস্থিত হলে যেন সালাম দেয় এবং মজলিস হতে বিদায়ের সময়ও যেন সালাম দেয়। প্রথম সালাম শেষের সালাম থেকে অধিক গুরুত্ব বহন করে না’।[১১]

০৯. সালাম প্রদানের ক্ষেত্রে অন্যকে কষ্ট না দেয়া : সালাম প্রদানের ক্ষেত্রে অন্যকে কষ্ট না দেয়া ইসলামের বিধান। যেমন- কোন ব্যক্তি যদি ঘুমিয়ে থাকে, তখন সেখানে এমনভাবে সালাম দেয়া, যাতে জাগ্রত লোকজন শুনতে পায় এবং ঘুমন্ত ব্যক্তির ঘুমের কোন ক্ষতি না হয়। হাদীছে এসেছে,
মিক্বদাদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রচুর খাদ্য সংকটে আমার ও আমার দু’সাথীর দৃষ্টিশক্তি ও শ্রুতিশক্তি কমে যায়। অতঃপর আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ছাহাবীদের নিকটে নিজেদের উত্থাপন করতে লাগলাম। কিন্তু তাঁদের কেউ আমাদের কথা শুনলেন না। সবশেষে আমরা নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আগমন করলে তিনি আমাদের সাথে নিয়ে তার পরিবারের নিকটে গেলেন। সেখানে তিনটি বকরী ছিল। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা দুধ দোহন করবে। এ দুধ আমরা বণ্টন করে পান করবো। তিনি বলেন, এরপর থেকে আমরা দুধ দোহন করতাম। আমাদের সবাই যার যার অংশ পান করত। আর আমরা নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য তার অংশ উঠিয়ে রাখতাম। মিক্বদাদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, فَيَجِىءُ مِنَ اللَّيْلِ فَيُسَلِّمُ تَسْلِيْمًا لَا يُوْقِظُ نَائِمًا وَيُسْمِعُ الْيَقْظَانَ ‘তিনি রাত্রে এসে এমনভাবে সালাম দিতেন, যাতে নিদ্রারত লোক উঠে না যায় এবং জাগ্রত লোক শুনতে পায়’।[১২]

সালামের উত্তর দেয়ার ক্ষেত্রে নীতিমালা

সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব : আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

خَمْسٌ تَجِبُ لِلْمُسْلِمِ عَلَى أَخِيْهِ رَدُّ السَّلَامِ وَتَشْمِيْتُ الْعَاطِسِ وَإِجَابَةُ الدَّعْوَةِ وَعِيَادَةُ الْمَرِيْضِ وَاتِّبَاعُ الْجَنَائِزِ

‘পাঁচটি ব্যাপারে মুসলিমের জন্য তার ভাইয়ের সম্পর্ক ওয়াজিব। ১. সালামের উত্তর দেয়া ২. হাঁচিদাতাকে (তার ‘আলহামদুলিল্লাহ‌’ বলার উত্তরে) (يَرْحَمُكَ اللهُ) ইয়ারহামুকুল্লাহ বলে দু‘আ করা ৩. দাওয়াত কবূল করা ৪. অসুস্থকে দেখতে যাওয়া এবং ৫. জানাযায় অংশগ্রহণ করা’।[১৩]

সালামের উত্তর সালাম প্রদানকারীর চেয়ে উত্তম বাক্যে বা তার মতই দিতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ اِذَا حُیِّیۡتُمۡ بِتَحِیَّۃٍ فَحَیُّوۡا بِاَحۡسَنَ مِنۡہَاۤ اَوۡ رُدُّوۡہَا ‘আর যখন তোমরা সালাম ও অভিবাদন প্রাপ্ত হও, তখন তোমরাও তা হতে শ্রেষ্ঠতর সালাম কর অথবা ওভাবেই জবাব দিয়ে দাও’ (সূরা আন-নিসা : ৮৬)। তবে সালামের উত্তর স্বশব্দে প্রদান করাটা জরুরী। মোল্লা আলী ক্বারী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেেছন, ‘সালাম প্রদানকারী সালামের উত্তর না শুনা পর্যন্ত সেটা উত্তর হিসাবে গণ্য হবে না। তবে বধিরের ক্ষেত্রে ইশারা করা যাবে।[১৪] আর ছালাতরত অবস্থায় সালামের উত্তর ইশারা দিয়ে প্রদান করতে হবে।[১৫]

সালাম দেয়ার ক্ষেত্রে অপসন্দণীয় ও নিষিদ্ধ দিকসমূহ

সালাম দেয়ার কিছু অপছন্দনীয় ও নিষিদ্ধ দিক রয়েছে যা ছহীহ হাদীছ দ্বারা সাব্যস্ত। যেমন-

০১, ইহুদী, খ্রিষ্টানদেরকে সালাম না দেয়া : রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, لَا تَبْدَؤُوْا الْيَهُوْدَ وَلَا النَّصَارَى بِالسَّلَامِ ‘তোমরা ইহুদী-খ্রিষ্টানদেরকে আগে সালাম প্রদান করবে না।[১৬] তবে যদি ইহুদীরা কোন মুসলিমকে السَّامُ عَلَيْك অর্থাৎ তোমার উপর মৃত্যু হোক বলে, তাহলে উত্তরে বলতে হবে وَعَلَيْك অর্থাৎ তোমার উপরর’ অথবা বলতে হবে (وَعَلَيْكُمْ)।[১৭]

০২. সালাম দেয়ার সময় (عَلَيْكَ السَّلاَمُ) ‘আলাইকাস সালাম’ না বলা : আবূ জুরাই জাবের ইবনু সুলাইম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মদীনায় আসলাম। অতঃপর দেখলাম এক ব্যক্তির মতামত নিয়ে মানুষ বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করে। মানুষেরা তার কথা অনুসারেই কাজ করে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ লোকটি কে? তারা বলল, তিনি আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি দু’ বার বললাম, ‘আলাইকাস সালাম’ (عَلَيْكَ السَّلَامُ) হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তিনি বললেন, ‘আলাইকাস সালাম’ বলবে না, ‘আলাইকাস সালাম’ হল মৃতের অভিবাদন। তুমি বল (السَّلَامُ عَلَيْكَ) ‘আসসালামু আলাইকা’।[১৮]

০৩. ইশারা-ইঙ্গিতে সালাম না দেয়া : ‘আমর ইবনু শু‘আইব তাঁর পিতার মাধ্যমে তার দাদা হতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَشَبَّهَ بِغَيْرِنَا لَا تَشَبَّهُوْا بِالْيَهُوْدِ وَلَا بِالنَّصَارَى فَإِنَّ تَسْلِيْمَ الْيَهُوْدِ الْإِشَارَةُ بِالْأَصَابِعِ وَتَسْلِيْمَ النَّصَارَى الْإِشَارَةُ بِالْأَكُفِّ

‘যে ব্যক্তি আমাদের ছাড়া অন্য কোন জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়। তোমরা ইহুদী এবং খ্রিষ্টানদের সাদৃশ্য গ্রহণ কর না। কেননা ইহুদীদের সালামের ধরন হল আঙ্গুলের ইশারায় আর খ্রিষ্টানদের সালামের ধরণ হল হাতের তালুর ইশারায়।[১৯] তবে দূরে থাকার কারণে বা অন্য কোন প্রয়োজনের তাকীদে হাত উঠিয়ে ইশারা ইঙ্গিতে সালাম দেয়া যাবে, কিন্তু সালাম মুখে স¦শব্দে উচ্চারণ করতে হবে।[২০]

০৪. ইস্তিঞ্জারত অবস্থায় সালাম না দেয়া : মুহাজির ইবনু কুনফুয (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনি একবার নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলেন, তখন তিনি পেশাব করছিলেন। তিনি তাঁকে সালাম করলেন কিন্তু নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সালামের উত্তর দিলেন না, যতক্ষণ না ওযূ করলেন। অতঃপর তিনি তার নিকট ওযর পেশ করলেন এবং বললেন, ওযূ ব্যতীত আমি আল্লাহর স্মরণ করতে অপসন্দ করেছি।[২১] নাসাঈর বর্ণনায় আছে, ‘যখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওযূ করলেন, তখন তার সালামের উত্তর দিলেন’।[২২]

উপসংহার

পরিশেষে বলা যায় যে, সালাম বিনিময়ের প্রচলন এ জন্যই যে, সালামের মাধ্যমে পরস্পরের প্রতি দয়া-মায়া, আন্তরিকতা, ভালবাসা, মমত্ববোধ, দায়িত্ববোধ ও সহমর্মিতার ভাব বৃদ্ধি পায়। আর এসব গুণ যখন একজন মানুষের অন্তরে জাগ্রত হয়, তখন মানবমনের ভেতর লুকিয়ে থাকা অহঙ্কার, বড়ত্ব, হিংসা-বিদ্বেষ, অন্যের প্রতি মন্দ ধারণা পোষণ ইত্যাদি দূরীভূত হয় এবং তার ইমান মযবুত হয়, অন্তর নরম হয়। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি পায়। মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধ সুদৃঢ় হয়। রাসুলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নত প্রতিষ্ঠিত হয়। আল্লাহ বান্দার প্রতিও সদয় হন। ফলে তার প্রতি মহান আল্লাহ তা‘আলার রহমত ও বরকত বর্ষিত হয়। ইহকালীন জীবনকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে তথা শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালিত করার নিমিত্তে মুহাম্মদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিশেষ সুন্নাহ সালামের ব্যাপক প্রচলনের কোন বিকল্প নেই। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে বেশি বেশি সালামের প্রচার-প্রসার করার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!!

* শিক্ষক, মাদরাসা দারুল হাদীছ সালাফিয়্যাহ, পাঁচরুখী, নারায়ণগঞ্জ।

[১]. তিরমিযী, হা/২৪৮৫; ইবনু মাজাহ, হা/১৩৩৪, ৩২৫১; দারেমী, হা/১৪৬০, ২৬৩২; মুসতাদরাক হাকিম, হা/৪২৮৩, সনদ ছহীহ।
[২]. তিরমিযী, হা/১৮৫৫; ইবনু মাজাহ, হা/৩৬৯৪, ১৩৩৪, সনদ ছহীহ।
[৩]. ছহীহ মুসলিম, হা/৫৪।
[৪]. আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/১০৪২, সনদ ছহীহ।
[৫]. ছহীহ বুখারী, হা/১২; ছহীহ মুসলিম, হা/৩৯।
[৬]. তিরমিযী, হা/২৭৩৭; নাসাঈ, হা/১৯৩৮, সনদ ছহীহ।
[৭]. ছহীহ বুখারী, হা/৬২৩২; ছহীহ মুসলিম, হা/২১৬০।
[৮]. ছহীহ বুখারী, হা/৬২৩১।
[৯]. ছহীহ বুখারী, হা/৩২১৭, ৬২৪৯; ছহীহ মুসলিম, হা/২৪৪৭; আবূ দাঊদ, হা/৫২৩২; তিরমিযী, হা/৩৮৮১।
[১০]. ছহীহ বুখারী, হা/৬২৪৭; ছহীহ মুসলিম, হা/২১৬৮।
[১১]. মুসনাদে আহমাদ, হা/৭১৪২; আবূ দাঊদ, হা/৫২০৮, সনদ ছহীহ।
[১২]. ছহীহ মুসলিম, হা/২০৫৫।
[১৩]. ছহীহ মুসলিম, হা/২১৬২; আবূ দাঊদ, হা/৫০৩০।
[১৪]. বদরুদ্দীন আল-‘আইনী, ‘উমদাতুল ক্বারী শারহু ছহীহিল বুখারী, ১২তম খ-, পৃ. ১৩৪।
[১৫]. আবূ দাঊদ, হা/৯৪৩; তিরমিযী, হা/৩৬৮, সনদ ছহীহ।
[১৬]. ছহীহ মুসলিম, হা/২১৬৭।
[১৭]. ছহীহ বুখারী, হা/৬২৫৮; ছহীহ মুসলিম, হা/২১৬৩।
[১৮]. আবূ দাঊদ, হা/৪০৮৪।
[১৯]. তিরমিযী, হা/২৬৯৫; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২১৯৪। ইমাম তিরমিযী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, হাদীছটির সনদ দুর্বল। তবে মুহাদ্দিছগণ ‘শাহিদ’ সুত্রে হাদীছটি সনদ ছহীহ বলেছেন।
[২০]. ইবনু হাজার আসক্বালানী, ফাৎহুল বারী, ১১তম খণ্ড, পৃ. ১৪।
[২১]. আবূ দাঊদ, হা/১৭, সনদ ছহীহ।
[২২]. নাসাঈ, হা/৩৮, সনদ ছহীহ।





আল-উরওয়াতুল উছক্বা - অনুবাদ : ইউনুস বিন আহসান
বিদ‘আত পরিচিতি (৮ম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
মুসলিম বিভক্তির কারণ ও প্রতিকার - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
সূদ-ঘুষ ও অবৈধ ব্যবসা (৫ম কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
বিদ‘আত পরিচিতি (৩১তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ইসলামী জামা‘আতের মূল স্তম্ভ (৬ষ্ঠ কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন
পরবর্তীদের তুলনায় সালাফদের ইলমী শ্রেষ্ঠত্ব (৬ষ্ঠ কিস্তি) - অনুবাদ : আযহার বিন আব্দুল মান্নান
ইসলামী তাবলীগ বনাম ইলিয়াসী তাবলীগ (৩য় কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
যিলহজ্জ মাসের আমল ও তার ফযীলত - মুহাম্মাদ জাহিদুল ইসলাম
ছালাতে একাগ্রতা অর্জনের ৩৩ উপায় (৮ম কিস্তি) - আব্দুল হাকীম বিন আব্দুল হাফীজ
ইসলামী জামা‘আতের মূল স্তম্ভ (৩য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন
সূদ-ঘুষ ও অবৈধ ব্যবসা (শেষ কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর

ফেসবুক পেজ