সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ১০:৫১ পূর্বাহ্ন

ইসলামী জামা‘আতের মূল স্তম্ভ

-ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন*


(৯ম কিস্তি)

দ্বিতীয় খলীফাহ্ আমীরুল মু’মিনীন ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বিভিন্ন প্রসঙ্গে বহুবার জনসম্মুখে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন এবং প্রয়োজনীয় বক্তব্য দিয়েছেন। একবার তিনি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মিন্বরে দাঁড়িয়ে বললেন, হে জনগণ! আপনারা আজকাল বিয়েতে স্ত্রীদেরকে অতিরিক্ত মোহরানা দিচ্ছেন! [১] . . . আমি যেন আর জানতে না পারি যে, কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে ৪০০ দিরহামের বেশি মোহরানা দিয়েছে (তাহলে অতিরিক্ত যা তা বাইতুল মাল তথা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা নিয়ে নিব)। এরপর মিন্বর থেকে নেমে পড়লেন। তখন একজন কুরাইশী মহিলা প্রতিবাদ করে বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন!  আপনি কি উপরিউক্ত কথা বলেছেন? উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, হ্যাঁ, বলেছি। মহিলা বললেন,

أمَا سَمِعتَ اللهَ يَقُول وَّ اٰتَیۡتُمۡ  اِحۡدہنَّ قِنۡطَارًا فَلا تَاۡخُذُوۡا مِنۡہ شَیۡئًا ؕ اَتَاۡخُذُوۡنَہٗ بُہۡتَانا و  اِثۡما مُّبِیۡنا

আপনি কি আল্লাহ্ তা‘আলা কী বলেছেন তা শুনেননি? তিনি বলেছেন, ‘তোমরা যদি স্ত্রীদের কাউকে অঢেল সম্পদও প্রদান কর তাহলে সেখান থেকে কিছুই ফেরত নিবে না। তোমরা কি তা মিথ্যাচার ও প্রকাশ্য গুনাহের মাধ্যমে নিতে চাও?’ (সূরা আন-নিসা : ২০)।

তখন ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও! লোকেরা ‘উমারের চাইতে অধিক বোধশক্তিসম্পন্ন। অতঃপর তিনি ফিরে আসলেন এবং মিন্বরে আরোহণ করলেন এবং বললেন,

فَقَالَ "أيُّهَا النَّاسُ! إِنِّيْ كُنْتُ نَهَيْتُكُم أَنْ تَزِيْدُوا النِّسَاءَ فِيْ صَدُقَاتِهنَّ عَلٰى أَرْبَعِمِائَةِ دِرهَمٍ، فَمَنْ شَاءَ أَنْ يُعْطِيَ مِنْ مَالِهِ مَا أحَبَّ"

‘হে জনগণ! আমি আপনাদের স্ত্রীদেরকে ৪০০ দিরহামের বেশি মোহরানা দিতে নিষেধ করেছিলাম, কিন্তু আপনাদের যার ইচ্ছা সে তার নিজ সম্পদ থেকে যত খুশি তা তাদেরকে দিতে পারেন!’।

ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন : إِسْنَادُهُ جَيِّدٌ قَوِيٌّ ‘এ বর্ণনার সনদ ভাল মযবুত’।[২] অন্য এক বর্ণনায় এসেছে যে, উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, اِمْرَأْةٌ أَصَابَتْ وَرَجُلٌ أَخْطَأَ ‘মহিলাটি সঠিক কথা বলেছে এবং পুরুষ (‘উমার) ভুল করেছে’।[৩]

একবার উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বাইতুল মাল থেকে বেশ কিছু কাপড় বণ্টন করলেন। তবে সে বণ্টিত কাপড়ে কারো পুরো জামা হচ্ছিল না। ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) সেই নিজের হিছ্ছার প্রাপ্ত কাপড়ে তৈরিকৃত পুরো জামা গায়ে দিয়ে জনসমাজে উপস্থিত হলে কেউ কেউ তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে বসলেন : ‘হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি আমাদেরকে যে পরিমাণ কাপড় দিয়েছেন তাতে তো আমাদের কারো পুরো জামা হয়নি, আপনার পুরো জামা হলো কীভাবে?’ তখন ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাঁর পুত্র আব্দুল্লাহ্ বিন ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর দিকে ইশারা করে বললেন, সে এর জবাব দিবে! আব্দুল্লাহ্ বিন ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) জবাব দিয়ে বললেন, আমি আমার নিজের কাপড়ের টুকরাটা আমার আব্বাকে দিয়ে দিয়েছি, সেই দু টুকরো মিলে আব্বার পুরো জামা হয়েছে। দৃষ্টি আকর্ষণকারীরা সন্তুষ্টচিত্তে চুপ হয়ে গেলেন। উল্লেখ্য, খলীফাতুল মুসলিমীন ও তাঁর পুত্র কেউই উপরিউক্ত প্রশ্নের কারণে ক্ষিপ্তও হননি ধমকও দেননি; বরং যথাযথ জবাব দিয়ে নিজেদের আমানতদারিতা হাতে কলমে বুঝিযে দিয়েছেন ও সংশয়ের বীজ উৎপাটিত করে ফেলেছেন।[৪]

মৃত্যু শয্যায় ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র আব্দুল্লাহ্ বিন ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-কে বললেন :

يَا عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ انْظُرْ مَا عَلَيَّ مِنْ الدَّيْنِ . . . انْطَلِقْ إِلَى عَائِشَةَ أُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ فقُلْ: يَقْرَأُ عَلَيْكِ عُمَرُ السَّلَامَ وَلَا تَقُلْ: أَمِيْرُ الْمُؤْمِنِيْنَ، فَإِنِّيْ لَسْتُ الْيَوْمَ لِلْمُؤْمِنِيْنَ أَمِيْرًا. . .، فَقَالُوْا أَوْصِ يَا أَمِيْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ اسْتَخْلِفْ قَالَ: مَا أَجِدُ أَحَدًا أَحَقَّ بِهَذَا الْأَمْرِ مِنْ هَؤُلَاءِ النَّفَرِ أَوْ الرَّهْطِ الَّذِيْنَ تُوُفِّيَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ عَنْهُمْ رَاضٍ، فَسَمَّى عَلِيًّا وَعُثْمَانَ وَالزُّبَيْرَ وَطَلْحَةَ وَسَعْدًا وَعَبْدَ الرَّحْمَنِ، وَقَالَ: يَشْهَدُكُمْ عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ وَلَيْسَ لَهُ مِنْ الْأَمْرِ شَيْءٌ

“হে আমার পুত্র ‘আবদুল্লাহ্ বিন ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)! খুঁজে দেখ আমার কত ধার-দেনা (ঋণ) আছে, তা সব ’উমারের পরিবারের সম্পদ থেকে পরিশোধ করে দাও! আর যদি তাতে শোধ না হয় তাহলে আমার গোত্রের (‘আদী’ গোত্র) কাছ থেকে তা সংগ্রহ কর, আর তাতেও যদি না হয় তাহলে আমার বংশ কুরাইশদের কাছ থেকে তা সংগ্রহ কর তবে এর বাইরে আর কারো কাছে চেয়ো না। আর তুমি উম্মুল মু’মিনীন আয়েশাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর কাছে যাও এবং তাঁকে বলো : ‘উমার আপনাকে সালাম দিয়েছে। আমাকে ‘আমীরুল মু’মিনীন’ হিসাবে উল্লেখ করো না, কেননা এখন আর আমি আমীরুল মু’মিনীন নই। আর তাঁকে বলো যে, ‘উমার তাঁর দুই সঙ্গীর (নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং আবূ বাকর)-এর পাশে কবরস্থ হতে চায়। তখন জনগণ বললো, হে আমীরুল মু’মিনীন! ওছিয়ত করে যান; খলীফাহ্ মনোনীত করে যান! তখন তিনি বললেন, আমি এ কাজের জন্য ঐ কয়জন যাঁদের উপর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সন্তুষ্ট অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন (জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত) তাঁদের ছাড়া আর কাউকেই যোগ্য মনে করছি না। অতঃপর তিনি ‘আলী, ’উছমান, যুবাইর, ত্বালহাহ্, সা‘আদ বিন আবী ওয়াক্কাছ ও আব্দুর রহমান বিন ’আউফ-এর নাম উল্লেখ করলেন। তারপর বললেন : একাজে তোমাদের সাথে আমার পুত্র আব্দুল্লাহ্ বিন ’উমার উপস্থিত থাকবে; কিন্তু খিলাফতের ব্যাপারে এবং কার্যকর কোন কিছুতে তার কোন অধিকার  নেই।[৫]

বহুবিদ্যার মহাজ্ঞানী ইমাম আবুল ফিদা ইবনু কাছীর (মৃ.৭৭৪ হি.) ও হাফেয শামসুদ্দীন যাহাবী (মৃ. ৭৪৮ হি./১৩৪৭ খ্রি.) উল্লেখ করেছেন,

" . . .وقد بَقي من المبشَّرين بالجنّة  سبعةٌ فرشّح منهم ستة ولم يذكرْ سعيدَ بن زيدٍ لكونِه من قبيلَته، خَشيةَ أن يراعي في الإمارة بسببِه، وأَوصَى مَن يَستخلفُ بعدَه بالناس خيرا على طَبقاتِهم و مَراتبِهِم".

(‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে আবূ লু’লুয়াহ্ মাজুসী (পারশিক অগ্নিপূজক) শহীদ করে।) জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্তদের মধ্যে সাতজন তখনো জীবিত ছিলেন। তাদের মধ্য থেকে তিনি (উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু)) ছয় জনের নাম প্রস্তাব করেন। কিন্তু সা’ঈদ বিন যাইদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) নিকটতম স্বগোত্রীয় (তদুপরি ভগ্নিপতি) হওয়ার কারণে তাঁর নাম তিনি (রাযিয়াল্লাহু আনহু) উক্ত সদস্যদের তালিকায় উল্লেখ করেননি; পরে যদি এ কারণে তাঁকে আমীর তথা খলীফাহ্ হিসাবে প্রাধান্য দেয়া হয়! অতঃপর তিনি (‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু)) পরবর্তীতে যিনি খলীফাহ্ হবেন তাঁকে জনগণের সাথে তাদের মর্যাদা ও স্তর অনুযায়ী ভাল আচরণ করার জন্য অছিয়ত করেন’।[৬]

হাফেয যাহাবী বলেন, وهكذا أخرجَ ابنَه من الأمر ‘ঠিক এভাবেই ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাঁর পুত্র আব্দুল্লাহ্ বিন ’উমরকেও প্রস্তাবকৃতদের তালিকা থেকে বাদ রাখেন’।[৭]

’আব্দুল্লাহ্ বিন ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেছেন, খলীফাহ্ ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে (মৃত্যুর পূর্বে) বলা হলো : আপনি খলীফাহ্ নিয়োগ করছেন না কেন? তখন তিনি বললেন : ‘যদি খলীফাহ্ নিয়োগ করে যাই, তাহলে যিনি আমার চেয়ে উত্তম সেই আবূ বাকর তা নিয়োগ করেছিলেন। আর যদি নিয়োগ না করে যাই, তাহলে যিনি আমার চেয়ে উত্তম সেই নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাউকে নিয়োগ করে যাননি। আমি (এ বিষয়ে) আগ্রহীও আবার আত্মরক্ষাকারীও। আমি চেয়েছি যে, এব্যাপারে আমার মুক্তির জন্য এমন কাজ করে যাবো যা যথাযোগ্য হবে, যা আমার পক্ষেও যাবে না আবার বিপক্ষেও যাবে না। যে বোঝা জীবিত বা মৃত কোন অবস্থাতেই আমাকে বহন করতে হবে না।[৮]

খলীফাহ্ নির্বাচন প্রসঙ্গে বিশেষ করে আবূ বাকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রশ্ন উত্থাপিত হলে ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) খুৎবাহ’য় দাঁড়িয়ে তার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে জনগণকে শান্তÍ ও নিশ্চিন্তÍ করেছেন, যার বিবরণ ছহীহ বুখারীতে রয়েছে।[৯]

তৃতীয় খলীফাহ্ ‘উছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) দায়িত্বপ্রাপ্তির সাথে সাথেই জনগণকে সামনে রেখে লম্বা ভাষণ দিয়েছেন।

حمِد اللهَ وأثنى عليه، ثم قال : "أيُّها الناسُ! اتَّقوا اللهَ فإنّ التَّقوى غُنم، و إن أكيسَ الناسِ من دانَ نَفسَه وعَمِل لِما بَعدَ المَوتِ ...

তিনি আল্লাহ তা‘আলার যথাযথ প্রশংসা ও গুণাগুণ বর্ণনা করেছেন অতঃপর বলেছেন, ‘হে জনগণ! আপনারা আল্লাহর তাক্ওয়া অবলম্বন (ভয় করুন), কেননা নিঃসন্দেহে তাক্ওয়া গনীমত (উত্তম সম্পদ), আর বুদ্ধিমান সেই যে নিজেকে শাসন করতে ও তার হিসাব নিতে জানে এবং মৃত্যুর পরের জন্য (আখেরাতের জন্য) আমল করে..’।[১০] ‘উছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর উপরিউক্ত ভাষণের শেষের দিকের কথা ছিল,

"الزَمُوا جَماعتَكم لا تَصيروا أحزابًا :  وَ اذۡکُرُوۡا نِعۡمَتَ اللّٰہِ عَلَیۡکُمۡ  اِذۡ  کُنۡتُمۡ اَعۡدَآءً فَاَلَّفَ بَیۡنَ قُلُوۡبِکُمۡ فَاَصۡبَحۡتُمۡ بِنِعۡمَتِہٖۤ اِخۡوَانًا

‘তোমরা তোমাদের জামা‘আতকে স্থায়ীভাবে আঁকড়ে ধর আর দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে যেয়ো না, যেমন আল্লাহ্’র কালাম : “তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহ’র নে‘য়ামতকে স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, আর আল্লাহ্ তোমাদের আত্মাসমূহের মধ্যে মিলন সৃষ্টি করে দিলেন, অতঃপর তোমরা তাঁর অনুগ্রহে পরস্পর ভাই-ভাই স্বরূপ হয়ে গেলে ...’ (সূরা আলে ‘ইমরান : ১০৩)।[১১]

খলীফাহ্ ‘উছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বিদ্রোহীদের হাতে শহীদ হওয়ার পূর্বে নিজেকে জনসম্মুখে উপস্থাপন করে তাঁর বিরুদ্ধে আরোপিত মিথ্যা অভিযোগ ও অপবাদসমূহের সুদীর্ঘ জওয়াব দিয়েছেন ও পরিস্থিতির বাস্তবতাভিত্তিক, সত্য ও শুদ্ধ ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন, যা বহু নির্ভরযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য গ্রন্থাদিতে লিপিবদ্ধ রয়েছে।[১২] ইমাম বুখারী, ইমাম তিরমিযী ও ইমাম নাসাঈ সহ অন্যান্য ইমামগণ উল্লেখ করেছেন যে, ‘উছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) নিজে জনগণের দিকে দৃষ্টিপাত করে বক্তব্য দিয়েছেন :[১৩]

أنَّ عُثمانَ  حَيثُ حُوصِرَ أَشرَفَ عَلَيهِمْ وقَالَ

চতুর্থ খলীফাহ্ ‘আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) দায়িত্ব লাভের পর ভাষণ দিয়েছেন, আল্লাহ্ তা‘আলার যথাযথ প্রশংসার পর বলেছেন,

خطبة عليٍّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ بعد تولِّيه الخلافة : حمِدَ اللهَ وأثنى عليه ثم قال : "إن اللهَ تعالى أنزلَ كتابًا هاديًا بيّن فيه الخيرُ والشرّ، فخُذوا بالخير و دَعُوا الشرّ .. ، المسلمُ مَن سلِم المسلمُون من لسانِه و يده، ..  بادروا أمر العامّة .. ، اتقوا اللهَ عبادَه في عبادِه و بلاده ، فإنكم مَسؤولون حتى عن البقاع والبَهائم 

‘নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা কিতাব অবতীর্ণ করেছেন হেদায়াতকারী হিসাবে, তাতে তিনি ভালমন্দ সব কিছুর বিবরণ দিয়েছেন, অতঃপর তোমরা যা ভাল তা গ্রহণ কর,  আর যা মন্দ তা বর্জন কর..., সত্যিকার মুসলিম সেই যার হাত ও জিহ্বা থেকে মুসলিমরা নিরাপদ থাকে। ... তোমরা জনগণের কল্যাণের ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ কর ..। তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর তাঁর বান্দাদের পস্পরের ক্ষেত্রে এবং তাদের আবাসভূমির ক্ষেত্রে, কেননা ক্বিয়ামতের দিন তোমাদেরকে এসব ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হবে; এমনকি ভূখণ্ড এবং জীব-জন্তুর ব্যাপারেও প্রশ্ন করা হবে . . .’।[১৪]

তিনি (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তার সন্তানদেরকে যে সুদীর্ঘ ওছিয়ত করেছিলেন তার থেকে দু’চারটি কথা নিম্নরূপ :

وقال عَليّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ في وصيته لأولاده : "أُوصيك يا حسنُ وجميع ولدي ومَن بلغه كتابي بتقوى الله والاعتصام بحبل الله جميعا وصلاح ذات البين؛ قال رسولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : "صلاحُ ذات البَين أفضل من عامّةِ الصلاةِ والصيام".  والتقدّم في كلّ خير وصِلة الرَّحم والتقدُّم في كلِّ العبادات عن غيرهم وبالخير بأصحاب النبي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، والأمر بالمعروف والنهي عن المُنكر، وعَدم التفرّق  والتَعاون على البرِّ والتقوى 

‘হে আমার পুত্র হাসান এবং আমার সকল সন্তানাদি এবং যার কাছে আমার এই লেখা পৌঁছাবে তারা! আমি তোমাদেরকে আল্লাহর তাক্ওয়া অবলম্বন, আল্লাহর রজ্জু শক্ত করে ধারণ এবং পরস্পর সমঝোতা স্থাপন ও সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য ওছিয়ত করছি। রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : “পরস্পর সমঝোতা করা সাধারণ (নফল) ছলাত ও ছিয়ামের চাইতে উত্তম”।[১৫] তোমাদেরকে আরো ওছিয়ত করছি - প্রত্যেক সৎ কাজে অগ্রগামী থাকার এবং রক্ত সম্পর্ক বজায় রাখার, প্রত্যেক ইবাদতে অপরের চাইতে অগ্রসর থাকার এবং নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ছাহবীগণের সাথে সদ্ব্যবহার করার, সৎ কাজের আদেশ দেয়ার এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করার, দ্বিধাবিভক্ত না হওয়ার এবং নেকী ও তাক্ওয়ার কাজে সহযোগিতা করার জন্য ...’।[১৬]

উল্লেখ্য, উপস্থাপনার নামে কারো মধ্যে কৃত্রিমতা, বুজর্গী জাহির, প্রদর্শনী, নিজের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ, দায়সারা ভাব, পাশ কাটানোর মানসিকতা, মিথ্যাচার, ধোঁকা-প্রতারণা ইত্যাদির কোনোটা থাকা উচিত নয়।

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

* সাবেক অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।

তথ্যসূত্র : 
[১]. আবুদাঊদ হা/২১০৬, সনদ ছহীহ।
[২]. তাফসীর ইবনু কাছীর, ২য় খণ্ড, পৃ. ২১৮।
[৩]. তাফসীর ইবনু কাছীর, ২য় খণ্ড, পৃ. ২১৯। উল্লেখ্য যে, প্রশ্নকারী মহিলার যে বর্ণনা এসেছে, তার সনদ নিয়ে কিছু সমালোচনা আছে-আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/১৭২৭-এর আলোচনা দ্র. ৬/৩৪৮ পৃ.
[৪]. মওসূ‘আতুল আখলাক্ব, পৃ. ৭৩। উল্লেখ্য, এই ঘটনার সূত্র নিয়েও কিছু কথা আছে।
[৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৭০০, ‘মানাকিব’ অধ্যায়, ‘উছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর ব্যাপারে ঐকমত্য ও বাই‘আতের কাহিনী’ অনুচ্ছেদ।
[৬]. ইবনু কাছীর, বিদায়াহ নিহায়াহ, ৭ম খণ্ড, পৃ. ১৪৭; আল-মুনতাকা মিন মিনহাজিল ই‘তিদাল, হাফেয আয-যাহাবী, সম্পাদনা ও টীকা : মুহিব্বুদ্দীন আল-খতীব, ইসলামী মন্ত্রণালয়, সঊদী আরব, ১৪১৮ হি., পৃ. ৩৮৬।
[৭]. আল-মুনতাকা, পৃ. ৩৮৬।
[৮]. ছহীহ বুখারী, হা/৭২১৮, ‘আল-আহকাম’ অধ্যায়, ‘স্থলাভিষিক্ত নিয়োগ’ অনুচ্ছেদ।
[৯]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৮৩০, ‘আল-হুদূদ’ অধ্যায়, ‘বিবাহিতা যেনা করে গর্ভবতী হলে তাকে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা’ অনুচ্ছেদ।
[১০]. ইবনু কাছীর, বিদায়াহ্ নিহায়াহ্, ৭ম খণ্ড, পৃ. ২৩১।
[১১]. বিদায়াহ্ নিহায়াহ্, ৭ম খণ্ড, পৃ. ২৩১।
[১২]. আল-বিদায়াহ ওয়ান্-নিহায়াহ, পৃ. ৭ম খণ্ড, পৃ. ১৮৭-১৮৮, ১৯২-১৯৪; বিস্তারিত : ইমাম আবূ বাকর ইবনুল ‘আরাবী, আল-‘আওয়াছিমু মিনাল ক্বাওয়াছিম, সম্পাদনা ও টীকা : মুহিব্বুদ্দীন আল-খতীব, ইসলামী মন্ত্রণালয়, রিয়াদ, ১৪১৮হি. পৃ. ৪২-১৪৭; ইমাম হাফেয আয্যাহাবী, আল-মুনত্বাকা মিন মিনহাজিল ই‘তিদাল, পৃ. ৩৮৯-৩৯৬।
[১৩]. দেখুন : ছহীহ বুখারী, ‘আল-ওছায়া’ অধ্যায়, হা/২৭৭৮; তিরমিযী, ‘মানাকিব’ অধ্যায়, হা/৩৬৯৯, ৩৭০৩; নাসাঈ, ‘ইহবাস’ অধ্যায়, হা/২৬৩৮।
[১৪]. বিদায়াহ্ নিহায়াহ্, ৭ম খণ্ড, পৃ. ২৪২-২৪৩।
[১৫]. দেখুন : আবূ দাঊদ, ‘আদব’ অধ্যায়, হা/৪৯১৯।
[১৬]. বিদায়াহ্ নিহায়াহ্, ৭ম খণ্ড, পৃ. ৩০৫।




আল-কুরআনুল কারীম : শৈল্পিক সৌন্দর্য বিশ্লেষণ - প্রফেসর এ কে এম শামসুল আলম
কুরবানীর মাসায়েল - আল-ইখলাছ ডেস্ক
রামাযানে দাওয়াতী কাজের গুরুত্ব ও প্রভাব - অধ্যাপক মো. আকবার হোসেন
ছালাতে একাগ্রতা অর্জনের ৩৩টি উপায় (শেষ কিস্তি) - আব্দুল হাকীম বিন আব্দুল হাফীজ
আশূরায়ে মুহাররম - ছাদীক মাহমূদ
দু‘আ ও যিকর : আল্লাহর অনুগ্রহ ও প্রশান্তি লাভের মাধ্যম (২য় কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
ছালাতের সঠিক সময় ও বিভ্রান্তি নিরসন - মাইনুল ইসলাম মঈন
ইসলামী ভ্রাতৃত্বের গুরুত্ব ও মূল্যায়ন - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন
তওবার গুরুত্ব ও ফযীলত (২য় কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
শরী‘আত অনুসরণের মূলনীতি (২য় কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
ইসলামী জামা‘আতের মূল স্তম্ভ (১০ম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন
মুসলিম বিভক্তির কারণ ও প্রতিকার (শেষ কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন

ফেসবুক পেজ