সূদ-ঘুষ ও অবৈধ ব্যবসা
-ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর*
(৯ম কিস্তি)
(জ) মজুদদারী করা
মজুদদারী ইসলামের দৃষ্টিতে এক ঘৃণ্য প্রথা। এই প্রথা ইসলাম সমর্থন করে না। কেননা এর মাধ্যমে সমাজে এক কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়। যার ফলে দ্রব্যমূলের দাম বৃদ্ধি পায়। যা মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। এসব দিক বিবেচনা করেই এরূপ মজুদদারী প্রথা শরী‘আত অনুমোদন করেনি।
عَنْ مَعْمَرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا يَحْتَكِرُ إِلَّا خَاطِئٌ
মা‘মার ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, ‘খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত (মজুদদারী) কেবল (সমাজ বিরোধী) পাপী লোকেরাই করে থাকে’।[১]
গুদামজাত বা মজুদদারী করা কোন ভালো মানুষের কাজ নয়। মজুদদারদের মূল্য লক্ষ্যই থাকে বেশি দামে বিক্রি করা। যার ফলে অনেক সময় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট (চক্র) মাল গুদামজাত করে। এক পর্যায়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। যখন বাজারে ঐ দ্রব্যের চাহিদা বেড়ে যায়, তখন উক্ত সিন্ডিকেট খুব ধীর গতিতে মাল বের করা শুরু করে। ব্যাপক চাহিদায় কম যোগান দিয়ে অধিক মূল্যে মাল বিক্রয় করতে থাকে। কোন সৎ ব্যবসায়ী এরূপ দ্রব্য নিয়ে বাজারে আসলে উক্ত চক্র সৎ ব্যবসায়ীর সম্পূর্ণ মাল কিনে ফেলে এবং তাদের জঘন্য চিন্তা বাস্তবায়ন করে। এরূপ চক্রের উদ্দেশ্য হল অল্প দামে কিনে অনেক বেশি দামে বিক্রি করা। তাই তাদের হীন করিকল্পনা বাস্তবায়নে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করতে কসুর করে না। এরূপ মজুদদারদেরকে ইসলাম অসৎ ও দুর্নীতিবাজ হিসাবে চিত্রিত করেছে। কোন সৎ লোক বা সৎ ব্যবসায়ী মজুদদার হয় না। বরং নির্বোধ পাপী লোকরাই খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করে থকে।
(ঝ) দালালী করা
ক্রয়-বিক্রয়ে দালালী করা ইসলামের দৃষ্টিতে চরম অন্যায়। সামাজিক দৃষ্টিতেও এটি একটি নিন্দনীয় স্বভাব। একজন রুচিশীল মানুষের পক্ষে দালালী করা সম্ভব নয়। কুরুচিপূর্ণ মানসিকতার লোকের পক্ষেই এরূপ গর্হিত কাজ করা সম্ভব। এরূপ কর্ম শরী‘আতসম্মত নয়।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنِ النَّجْشِ
ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘দালালী (ক্রয় করার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও বিক্রেতার জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি করার জন্য ক্রেতা আকৃষ্ট করে বা ক্রেতাকে ধোঁকা দিয়ে মূল্য বৃদ্ধি) করতে নিষেধ করেছেন’।[২] ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, শহরের লোক গ্রাম্য লোকের (ক্রয়-বিক্রয়ে) হয়ে যেন প্রতারণামূলক দালালী না করে।[৩]
ক্রেতা ঠকানোর উদ্দেশ্যেই ব্যবসায় দালালী করা হয়। বিক্রেতার পক্ষ নিয়ে ক্রয়ের ভান করে দাম বৃদ্ধি করায় থাকে মূল লক্ষ্য। বিনিময়ে বিক্রেতার নিকট থেকে সে কিছু কথিত হাদিয়া গ্রহণ করে। পশু ও জমি ব্যবসার ক্ষেত্রে এরূপ দালালী বেশী দেখা যায়। এরূপ দালালীপূর্ণ ব্যবসাও ইসলাম বর্হিভূত কাজ। কোন মুসলিমের দালালী পেশায় নিয়োজিত হওয়া শোভনীয় নয়। দালালী করা, প্রকারন্তরে ধোঁকা বা প্রতারণার শামিল। যার শেষ পরিণাম খুবই মর্মান্তিক। তাই এরূপ গর্হিত কর্ম প্রত্যেকের পরিহার করা প্রয়োজন।
(ঞ) জমি কট বা বন্ধক নেয়া-দেয়া
যায়েদকে ১ লক্ষ টাকা দিয়ে খালেদ, যায়েদের ৫০ শতক জমি নিল। যতদিন যায়েদ, খালেদের দেয়া ১ লক্ষ টাকা ফেরত না দিবে, ততদিন খালেদ, যায়েদের ৫০ শতক জমি ভোগ করবে। যখন যায়েদ খালেদকে উক্ত ১ লক্ষ টাকা ফেরত দিয়ে দিবে, তখন খালেদ যায়েদের জমিও ফেরত দিয়ে দিবে। এই প্রক্রিয়াকে বাংলাদেশে কট বা বন্ধক পদ্ধতি বলা হয়। ইসলামী শরী‘আতে এরূপ লেনদেনের বিধান পর্যালোচনা দরকার। না জানার কারণে, অনেকে এমন পাপের পথে পা বাড়িয়ে থাকি।
উক্ত পদ্ধতিতে জমি কট বা বন্ধক লেনদেন ইসলামী শরী‘আতে সিদ্ধ নয়। একি একটি অবৈধ লেনদেন প্রক্রিয়া। এরূপ লেনদেনের মধ্যে সূদের ছোবল রয়েছে। বিধায় এরূপ লেনদেন ইসলামে বৈধ নয়। বিভিন্ন কারণে এরূপ লেনদেন অবৈধ।
প্রথমত : পাওনাদারের নিকট থেকে অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করা বৈধ নয়। তার থেকে এক বোঝা খড়, এক গাটরি যব বা এক বোঝা ঘাস উপঢৌকন বা হাদিয়া স্বরূপ গ্রহণ করা সূদ।[৪] যা আমরা অত্র বইয়ে ‘পাওনা দারের নিকট হাদিয়া গ্রহণ করা সূদ’ পয়েন্টে বিস্তারিত উল্লেখ করেছি। আর বন্ধক পদ্ধতিতে পাওনাদারের জমি সে অতিরিক্ত ভোগ করছে।
দ্বিতীয়ত : ঋণ লেনদেনে সূদ হয়।[৫] আবার বাকীতে লেনদেনে সূদ হয়।[৬] আর জমি বন্ধক নেয়ার পদ্ধিতে উক্ত দু’ সমস্যায় বিদ্যমান। এর মাধ্যমে ঋণ লেনদেন করা হয় এবং তা বছরের পর বছর বাকী থাকে।
তৃতীয়ত : এটাকে যদি ব্যবসা ধরা হয়, তবুও তা শরী‘আত সম্মত নয়। কেননা ব্যবসায় লাভ-লোকসানের ঝুঁকি থাকে। আর লোকসানের ঝুঁকি গ্রহণ না করা পর্যন্ত মুনাফা/লাভ গ্রহণ করা হালাল নয়।[৭] বন্ধক পদ্ধতিতে দাতা-গ্রহীতা কারোই লোকসানের কোন ঝুঁকি থাকে না। শর্ত পূরণ সাপেক্ষে জমি ও টাকা দু’টিই পরিপূর্ণরূপে উভয়েই ফেরত পাবে।
চতুর্থত : সূদী কারবার এর যেসকল বিষয় সূদের কাছাকাছি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তা অবৈধ।[৮] সূদের সাথে মিলে যাওয়ার ভয় থাকলে তা পরিহার করতে ইসলামে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর বন্ধক পদ্ধতি বিভিন্নভাবে সূদের সাথে মিল রয়েছে। তর্কের খাতিরে সরাসরি সূদ না বললেও তা সূদের নিকটবর্তী এতে কোন সন্দেহ নেই। যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
পঞ্চমত : কোন বিষয়ে অযাচিত শর্তারোপ করা ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ নয়। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘লোকদের কী হল যে, তারা আল্লাহর বিধান বহির্ভূত শর্তারোপ করে। আল্লাহর বিধানে যে শর্তের উল্লেখ নেই, তা বাতিল বলে গণ্য। একশ’ শর্ত করলেও না। আল্লাহর ফায়ছালাই সঠিক, আল্লাহর শর্তই সুদৃঢ়’।[৯] সার্বিক বিশ্লেষণেই জমির কট বা বন্ধক পদ্ধতি শরী‘আতের দৃষ্টিতে বৈধ নয়।
যমীন ‘ইজারা’ নামে আমাদের দেশে যে পদ্ধতিটি প্রচলিত আছে, যেমন একশ’ টাকার বিনিময়ে কেউ এক গ-া যমীন কারো নিকট ইজারা দিল, কিছুদিন পর দাতাকে এ একশ’ টাকা ফেরত দিয়ে জমিটি খালাস করল। এই পদ্ধতি জায়েয নয়। ইহা সম্পূর্ণ সূদী কারবার। আবার কোথাও কোথাও বাৎসরিক দু’চারি টাকা ক্ষয় বাদ দেয়ারও প্রথা প্রচলিত আছে। এতেও সূদ হতে বাঁচা যাবে না। কেননা দু’চারি টাকায় কেউ এক গ-া যমীন এক বৎসরের জন্য ভাড়া দেয় না বা পায় না। এর জায়েয পদ্ধতি হল এই যে, এক নির্দিষ্ট পরিমাণ যমীন এক নির্দিষ্ট ও মুনাসিব পরিমাণ টাকার পরিবর্তে এক নির্দিষ্ট পরিমাণ সময় ভোগ করতে দিবে। এ সময়ের মধ্যে টাকা শোধবাদ হয়ে যাবে এবং মেয়াদ অন্তে বিনা টাকায় যমীন ফেরত পাবে।[১০]
ইবাদত কবূলের জন্য হালাল রুযীর তাৎপর্য
ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ উপার্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যার উপরে নির্ভর করে তার সারা জীবনের কর্ম। প্রতিটি মুসলিমকে হালাল উপার্জনের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তার সকল কর্ম পরিচালিত হবে বৈধ পন্থায়। কেননা অবৈধ পন্থায় উপার্জিত সম্পদ বিচারের মাঠে তার জন্য ক্ষতির কারণ হবে।
(ক) হালাল রুযীর গুরুত্ব
একজন মুসলিমের দু‘আ-দরূদ, ইবাদত-বন্দেগী কবুল হওয়ার জন্য হালাল রুযী উপার্জন করা অত্যাবশ্যক। হালাল রুযী ইবাদত কবুলের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। উক্ত শর্ত পূরণ করা ব্যতীত তার ইবাদত-বন্দেগী বিফলে যাবে। বৈধ পন্থায় উপার্জন না করলে স্বীয় আমল হবে তলাবিহীন ঝুড়ির ন্যায়। তলা ছিদ্র বালতিতে পানি দিয়ে সারারাতেও ভর্তি করা সম্ভব নয়। বৈধ রুযী ভক্ষণ করার তাকীদ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ کُلُوۡا مِمَّا فِی الۡاَرۡضِ حَلٰلًا طَیِّبًا وَّ لَا تَتَّبِعُوۡا خُطُوٰتِ الشَّیۡطٰنِ اِنَّہٗ لَکُمۡ عَدُوٌّ مُّبِیۡنٌ
‘হে মানবগণ! পৃথিবীর মধ্যে যা বৈধ-পবিত্র, তা হতে ভক্ষণ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৬৮)। অপর আয়াতে বলা হয়েছে-
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُلُوۡا مِنۡ طَیِّبٰتِ مَا رَزَقۡنٰکُمۡ وَ اشۡکُرُوۡا لِلّٰہِ اِنۡ کُنۡتُمۡ اِیَّاہُ تَعۡبُدُوۡنَ
‘হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যা জীবিকা স্বরূপ দান করেছি তা হতে পবিত্র বস্তুসমূহ ভক্ষণ কর এবং আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর যদি তোমরা তারই ইবাদত করে থাকো’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৭২)।
উক্ত আয়াতদ্বয়ে সকল মুমিন এমনকি প্রতিটি মানুষকে বৈধ রুযী গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত হালাল উপার্জনের মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত প্রশান্তি। যা মানবকুলের জন্য কল্যাণকর। অতীতের নবী-রাসূলগণকেও একই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল-
یٰۤاَیُّہَا الرُّسُلُ کُلُوۡا مِنَ الطَّیِّبٰتِ وَ اعۡمَلُوۡا صَالِحًا اِنِّیۡ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ عَلِیۡمٌ
‘হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার কর ও সৎকর্ম কর; তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আমি অবগত’ (সূরা আল-মুুমিনূন : ৫১)। পূর্ববর্তী সকল নবী-রাসূলকে আল্লাহ পবিত্র বস্তু হতে আহার করতে নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা পাক-পবিত্র বস্তু ভক্ষণেই রয়েছে মানব জাতির ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির নিশ্চয়তা। বৈধ উপার্জনের ফযীলত বর্ণনা করে হাদীছে বলা হয়েছে-
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَصَدَّقَ بِعَدْلِ تَمْرَةٍ مِنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ وَلَا يَقْبَلُ اللهُ إِلَّا الطَّيِّبَ وَإِنَّ اللهَ يَتَقَبَّلُهَا بِيَمِيْنِهِ ثُمَّ يُرَبِّيهَا لِصَاحِبِهِ كَمَا يُرَبِّى أَحَدُكُمْ فَلُوَّهُ حَتَّى تَكُوْنَ مِثْلَ الْجَبَلِ
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন হতে একটি খেজুর পরিমাণ ছাদাক্বাহ করবে, (আল্লাহ তা কবুল করবেন) এবং আল্লাহ কেবল পবিত্র মাল কবুল করেন আর আল্লাহ তাঁর ডান হাতে গ্রহণ করেন। এরপর আল্লাহ দাতার কল্যাণার্থে তা প্রতিপালন করেন যেমন তোমাদের কেউ অশ্ব শাবক প্রতিপালন করে থাকে, অবশেষে সেই ছাদাক্বাহ পাহাড় সমপরিমাণ হয়ে যায়’।[১১]
হালাল উপার্জন ব্যতীত কোন ব্যক্তির ইবাদত কবুল হয় না। বৈধ উপার্জন হতে কেউ ব্যয় করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। কেউ বৈধ জিনিস দান করলে মহান আল্লাহ তা ডান হাতে গ্রহণ করেন। এরপর ঐ দান প্রতিপালন করতে থাকেন, ঘোড়ার বাচ্চা প্রতিপালনের ন্যায়। এমনকি ঐ সামান্য দানকে মহান প্রভু বিশাল পাহাড়ার সমান করে দেন। আর বৈধ উপার্জনের বরকতেই এরূপ হয়ে থাকে।
(খ) হালাল রুযী ব্যতীত ইবাদত কবূল হয় না
হালাল রুযী ভক্ষণ না করলে কারো ইবাদত-বন্দেগী কবুল হয় না। দু‘আ বা ইবাদত-বন্দেগী কবুলের জন্য পূর্বশর্ত হল বৈধ রুযী। মহান আল্লাহ পূত-পবিত্র সত্তা। বিধায় তিনি পবিত্র জিনিসই গ্রহণ করেন। অপবিত্র কদর্যপূর্ণ জিনিস তিনি গ্রহণ করেন না। তাছাড়া চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, আত্মসাৎ, ঠকবাজি, প্রতারণা, ধোঁকাবাজি, সূদ-ঘুষ, জালিয়াতি প্রভৃতি পন্থায় উপার্জিত সম্পদ কবুল করা তাঁর মহান মর্যাদার খেলাফ। কেননা ইসলামের দৃষ্টিতে এ সকল কর্ম অবৈধ হিসাবে সাব্যস্ত। যার দরুন তিনি তা কবুল করেন না। কোন মুসলিমের এরূপ কর্মে জড়িত হওয়া বৈধ নয়। এরূপ কর্ম তার ইবাদত কবুলের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا وَأَنَّ اللهَ أَمَرَ المؤْمنيْنَ بِمَا أمرَ بِهِ المرسَليْنَ ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيْلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ وَغُذِّيَ بِالْحَرَامِ فَأَنَّىْ يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ؟
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ছাড়া গ্রহণ করেন না। (এবং সর্বক্ষেত্রে পাক-পবিত্রতার আদেশই তিনি করেছেন সেই সম্পর্কে) আল্লাহ রাসূলগণকে যে আদেশ করছেন, মুমিনগণকেও সেই আদেশই করেছেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উল্লেখ করলেন, এক ব্যক্তি দূর-দূরান্তের সফর করছে। তার মাথার চুল এলোমেলো, শরীরে ধূলা-বালি। এমতাবস্থায় ঐ ব্যক্তি উভয় হস্ত আসমানের দিকে উঠিয়ে কাতরস্বরে হে প্রভু! হে প্রভু! বলে ডাকছে। কিন্তু তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম, তার জীবিকা নির্বাহ হারাম, কিভাবে তার দু‘আ কবুল হবে’।[১২] অত্র হাদীছে কয়েকটি বিষয় ফুটে উঠেছে। যেমন,
প্রথমতঃ মহান আল্লাহ পূত-পবিত্র বিধায় তিনি পবিত্র জিনিস ব্যতীত কিছুই কবুল করেন না।
দ্বিতীয়তঃ নবী-রাসূলগণকে আল্লাহ যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, অনুরূপই নির্দেশ মুমিনদেরকেও দিয়েছেন। আর তাঁদের প্রতি নির্দেশ ছিল পবিত্র খাবার ভক্ষণ করার ও বিশুদ্ধ আমল করার। একই নির্দেশ মুমিনদেরকেও করা হয়েছে।
তৃতীয়তঃ মুসাফির ব্যক্তির কাতরস্বরে প্রভুর নিকট প্রাথনা করার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। কেননা মুসাফির ব্যক্তির প্রার্থনা কবুল করা হয়। তার প্রার্থনা আল্লাহ ফেরত দেন না।[১৩]
চতুর্থতঃ কোন মুসাফিরও যদি হারাম খাদ্য খেয়ে, হারাম পানীয় পান করে, হারাম পোশাক পরে বা অবৈধ পন্থায় জীবিকা উপার্জন করে, তাহলে তা কবুল হবে না। কিভাবে আল্লাহ তা‘আলা ঐ মুসাফিরের প্রার্থনা কবুল করবেন? কারণ তিনি তো হালাল ব্যতীত কোন কিছুই কবুল করেন না। অপর একটি হাদীছে বর্ণিত হয়েছে-
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا تُقْبَلُ صَلَاةٌ بِغَيْرِ طُهُوْرٍ وَلَا صَدَقَةٌ مِنْ غُلُوْلٍ
ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘পাক-পবিত্রতা ব্যতীত ছালাত কবুল হয় না। আর হারাম ধন-সম্পদের দান-খয়রাত কবুল হয় না’।[১৪]
অত্র হাদীছে পরিষ্কারভাবেই বলা হয়েছে যে, পরিপূর্ণভাবে পবিত্রতা অর্জন ব্যতীত কারো ছালাত কবুল হবে না। অনুরূপ অবৈধ পন্থায় উপার্জিত সম্পদের দান-ছাদাক্বাহ গ্রহণ করা হয় না। কেননা পবিত্র ও অপবিত্র জিনস সমান নয়। বৈধ-অবৈধ জিনিসের ব্যবধান আগুন-পানির ন্যায়। বৈধ-অবৈধ বিপরীত মেরুর দু’টি জিনিস এক স্থানে অবস্থান করতে পারে না। যেমন কুরআন মাজীদে এরশাদ হচ্ছে-
قُلۡ لَّا یَسۡتَوِی الۡخَبِیۡثُ وَ الطَّیِّبُ وَ لَوۡ اَعۡجَبَکَ کَثۡرَۃُ الۡخَبِیۡثِ فَاتَّقُوا اللّٰہَ یٰۤاُولِی الۡاَلۡبَابِ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
‘(হে নবী!) আপনি বলুন! পবিত্র-অপবিত্র সমান নয়, যদিও অপবিত্রের অধিক্য আপনাকে বিস্মিত করে। অতএব আল্লাহকে ভয় কর। হে জ্ঞানী মহল’ (সূরা আল-মায়েদা : ১০০)। পবিত্র আর অপবিত্র জিনিস কখনো সমপর্যায়ের নয়। যদিও অপবিত্র বস্তুর প্রচার-প্রসারে মানুষ প্রলুব্ধ হবে। অপবিত্র জিনিস সমাজে এমনভাবে বিস্তার লাভ করবে, যা মানুষকে ভুল পথে নিয়ে যেতে উৎসাহ যোগাবে। যার ফলে সে অন্যায় পথে পা বাড়াতে বাধ্য হবে। পবিত্র জিনিসের মর্যাদা ও অবস্থান সুউচ্চ আসনে। আর অপবিত্র জিনিসের অবস্থান নিম্নতম পর্যায়ে। যা অন্য আয়াতে বিঘোষিত হয়েছে-
وَ یَجۡعَلَ الۡخَبِیۡثَ بَعۡضَہٗ عَلٰی بَعۡضٍ فَیَرۡکُمَہٗ جَمِیۡعًا فَیَجۡعَلَہٗ فِیۡ جَہَنَّمَ
‘তিনি মলিনতাপূর্ণ জিনিসিকে স্তরে স্তরে সাজিয়ে নরকে নিক্ষেপ করবেন’ (সূরা আল-আনফাল : ৩৭)। মহান আল্লাহ মলিনতাপূর্ণ জিনিসকে সুসজ্জিত করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। অপবিত্র জিনিসের জন্য জান্নাত উপযোগী নয়। বরং অবৈধ জিনিসের জন্য জাহান্নামই উপযুক্ত জায়গা।
عَنْ أَبِيْ بَكْرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ جَسَدٌ غُذِّيَ بالحرَامِ
আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে দেহ হারাম দ্বারা প্রতিপালিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।[১৫] অপর একটি হাদীছে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ لَحْمٌ نبَتَ منَ السُّحْتِ وَكُلُّ لَحْمٍ نبَتَ مِنَ السُّحْتِ كَانَتِ النَّارُ أَوْلَى بِهِ
জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে দেহের গোশত হারাম মালে গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হারাম মালে গঠিত দেহের জন্য জাহান্নামই সমীচীন’।[১৬]
হারাম খাদ্যের মাধ্যমে গঠিত দেহ জান্নাতের উপযুক্ত নয়। তা জাহান্নামের জন্যই উপযুক্ত। তাহলে হারাম খাদ্য খেয়ে ইবাদত-বন্দেগী কিভাবে কবুল হবে? তার শরীর তো জান্নাতের উপযোগীই নয়। আর ইবাদত-বন্দেগী কবুল হলে তার জান্নাতে যাওয়ায় স্বাভাবিক। এতেও বুঝা যায় অবৈধ রুযী ভোগকারী ব্যক্তির আমল কবুলযোগ্য নয়। হারাম জিনিস বর্জন করার বিষয়ে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কঠিন হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন। মানুষ স্বীয় উদরপূর্ণ করার জন্য উপার্জনে হালাল-হারামের সীমারেখা পর্যন্ত ভুলে যায়। অথচ এই উদরেরই সবার আগে পচন ধরবে।
عَنْ جُنْدُبٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ أَوَّلَ مَا يُنْتِنُ مِنْ الْإِنْسَانِ بَطْنُهُ فَمَنْ اسْتَطَاعَ أَنْ لَا يَأْكُلَ إِلَّا طَيِّبًا فَلْيَفْعَلْ وَمَنْ اسْتَطَاعَ أَنْ لَا يُحَالَ بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجَنَّةِ بِمِلْءِ كَفِّهِ مِنْ دَمٍ أَهْرَاقَهُ فَلْيَفْعَلْ
জুনদুব বিন আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘(মরণের পর) মানুষের যে অংশটি সবার আগে পচে দুর্গন্ধময় হবে তা হল তার পেট। সুতরাং যে ব্যক্তি সক্ষম যে, সে কেবল হালাল ছাড়া অন্য কিছু (হারাম) ভক্ষণ করবে না, সে যেন তা-ই করে। আর যে যে ব্যক্তি সক্ষম যে, সে আঁজলা পরিমাণ খুন বহিয়ে তার ও জান্নাতের মাঝে কোন অন্তরায় সৃষ্টি করবে না, সেও যেন তা-ই করে।[১৭]
অত্র হাদীছে হালাল খাদ্য গ্রহণের জোর তাকীদ দেয়া হয়েছে। আর যে কোন মূল্যে হারাম জিনিস বর্জন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেননা হারাম উপার্জন মানুষকে ধ্বংসের দোর গোড়ায় পৌঁছে দেয়। হারাম খাবার স্বীয় পেটে গেলে তা হবে বিপদের এক বড় কারণ। ইসলামে হালাল-হারাম সুস্পষ্ট। বিধায় বৈধ জিনিস গ্রহণ করতে হবে। আর অবৈধ জিনিস বর্জন করতে হবে। সাথে সাথে সন্দেযুক্ত জিনিসও পরিহার করতে হবে। সন্দেহ মানুষকে অন্যায়ের দিকে নিয়ে যায়।
عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْحَلَالُ بَيِّنٌ وَالْحَرَامُ بَيِّنٌ وَبَيْنَهُمَا مُشْتَبِهَاتٌ لَا يَعْلَمُهُنَّ كَثِيْرٌ مِنَ النَّاسِ فَمَنِ اتَّقَى الشُّبْهَاتِ استبرَأَ لدِيْنهِ وعِرْضِهِ ومَنْ وقَعَ فِي الشبُّهَاتِ وَقَعَ فِي الْحَرَامِ كَالرَّاعِيْ يَرْعَى حَوْلَ الْحِمَى يُوْشِكُ أَنْ يَرْتَعَ فِيْهِ أَلَا وَإِنَّ لِكُلِّ مَلِكٍ حِمًى أَلَا وَإِنَّ حِمَى اللهِ مَحَارِمُهُ أَلَا وَإِنَّ فِي الْجَسَدِ مُضْغَةً إِذَا صَلَحَتْ صَلَحَ الْجَسَدُ كُلُّهُ وَإِذَا فَسَدَتْ فَسَدَ الْجَسَدُ كُله أَلا وَهِيَ الْقَلْبُ
নু‘মান ইবনু বাশীর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘হালাল এবং হারাম সুুস্পষ্ট, আর ঊভয়ের মধ্যে অনেক সন্দেহজনক বিষয় বা বস্তু আছে। যেগুলো (হালালের অন্তর্ভুক্ত, না-কি হারামের অন্তর্ভুক্ত,) সে সম্পর্কে অনেকেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এরূপ ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি সন্দেহের বস্তুকে পরিহার করে চলবে, তার দ্বীন এবং আবরু-ইজ্জত, মান-সম্মান পাক-পবিত্র থাকবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি সন্দেহের কাজে লিপ্ত হবে, সে অচিরেই হারামেও লিপ্ত হয়ে পড়বে। (ফলে তার দ্বীন এবং মান-সম্মান কলুষিত হবে।) যেমন যেই রাখাল তার পশুপালকে নিষিদ্ধ এলাকার সীমার ধারে চরাবে, খুব সম্ভব তার পশু নিষিদ্ধ এলাকার ভিতরেও মুখ ঢুকিয়ে দিবে। তোমরা স্মরণ রেখো প্রত্যেক বাদশাই নিজ পশুপালের চারণভূমি (নিষিদ্ধ এলাকা) বানিয়ে রাখেন। তদ্রƒপ (সকল বাদশাহর বাদশাহ) আল্লাহ তা‘আলার চারণভূমি তাঁর হারাম বস্তুসমূহকে নির্ধারিত করে রেখেছেন। ‘মনে রেখো মানুষের দেহের ভিতরে একটি গোশতের টুকরা রয়েছে, যা সঠিক থাকলে সমস্ত দেহই সঠিক থাকে। আর সেই অংশের বিকৃতি ঘটলে সম্পূর্ণ দেহেরই বিকৃতি ঘটে। সেই গোশতের টুকরাটি হল অন্তর’।[১৮]
ইসলামের দৃষ্টিতে হালাল ও হারাম সুস্পষ্ট। আর হালাল-হারামের মাঝে কিছু জিনিস রয়েছে যেগুলো সন্দেহ যুক্ত। বিধায় হারাম বর্জনের পাশাপাশি সন্দেহপূর্ণ উপার্জনও বর্জন করা আবশ্যক। কেননা সন্দেহপূর্ণ উপার্জন করা হারামে পতিত হওয়ার শামিল। শেষ যামানায় এমন একটা সময় আসবে যখন মানুষ হালাল-হারাম বিবেচনা করবে না। যে কোন পন্থায় উপার্জন করতে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ لَا يُبَالِي الْمَرْءُ مَا أَخَذَ مِنْهُ أَمِنَ الْحَلَالِ أَمْ مِنَ الْحَرَامِ
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘মানুষের সম্মুখে এমন এক যুগ আসবে যে, কেউ পরওয়া করবে না কী উপায়ে মাল লাভ করল; হারাম না হালাল উপায়ে’।[১৯]
যারা সূদ ও ঘুষসহ অবৈধ উপার্জনের সাথে জড়িত তাদের নতুন করে চিন্তা-ভাবনা শুরু করা প্রয়োজন। উপার্জন যদি অবৈধ পন্থায় হয়, তাহলে কী হবে সারা জীবনের আমল? কী হবে তার ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ, যাকাত, দান-ছাদাক্বাহ ও তাছবীহ-তাহলীল? মরণের পর কী জবাব দিব স্বীয় প্রভুর নিকট? নিজে অবৈধ উপার্জন দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করছে। আবার পুরো পরিবারটিকেও অবৈধ উপার্জিত খাবার ভক্ষণ করে পাপের অথৈ সাগরে ভাসিয়ে দিচ্ছে। হারাম খাদ্যেরও কিছু প্রভাব রয়েছে। যা ধীরে ধীরে অন্তরকে বিকল করে দেয়। পাপ করতে করতে অন্তরে মরিচা পড়ে। তখন পাপকে কোন অপরাধ বলে মনে হবে না। সপরিবারে অবৈধ রুযী ভক্ষণ করার ফলে তাদের ঈমানী চেতনা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে অন্যায় কর্ম ও পাপের কাজে যুক্ত হতে অন্তর বাধা দেয় না। বিধায় ভবিষ্যত প্রজন্মের দিকে লক্ষ্য করে হলেও হারাম উপার্জন পরিহার করা যরূরী।
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
* শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, ডাঙ্গীপাড়া, রাজশাহী।
তথ্যসূত্র :
[১]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৬০৫; আবূ দাঊদ, হা/৩৪৪৭; তিরমিযী, হা/১২৬৭; ইবনু মাজাহ, হা/২১৫৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৭৯৬; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৪৯৩৬; দারেমী, হা/২৫৪৩।
[২]. ছহীহ বুখারী, হা/২১৪২; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫১৬; নাসাঈ, হা/৪৫০৫; ইবনু মাজাহ, হা/২১৩৭; মুয়াত্তা মালেক, হা/২৫২১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৮৭০; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৪৯৬৮।
[৩]. ছহীহ বুখারী, হা/২২৭৪; আবূ দাঊদ, হা/৩৪৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৪৮২।
[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৮১৪; বায়হাক্বী শু‘আাবুল ঈমান, হা/৫৫৩৩; মিশকাত, হা/২৮৩৩।
[৫]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৮৬৬; মুসনাদে আবু আওয়ানাহ, হা/৫৪২১; আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/৪৩৬; কানযুল উম্মাল, হা/৯৮২০, সনদ ছহীহ।
[৬]. ছহীহ মুসলিম, হা/৪১৭৩; তিরমিযী, হা/১২৪১; নাসাঈ, হা/৪৫৮১; ইবনু মাজাহ, হা/২২৫৭; আহমাদ, হা/২১৭৯১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২২৮২; মিশকাত, হা/২৮২৪।
[৭]. ইবনু মাজাহ, হা/২১৮৮; আবুদাউদ, হা/৩৫০৪; তিরমিযী, হা/১২৩৪; নাসাঈ, হা/৪৬১১; আহমাদ, হা/৬৫৯১; দারেমী, হা/২৫৬০; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৪৩২১; মিশকাত, হা/২৮৭০, সনদ হাসান ছহীহ।
[৮]. ইবনু মাজাহ, হা/২২৭৬; আহমাদ, হা/৩৫০; মিশকাত, হা/২৮৩০, সনদ ছহীহ।
[৯]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৫৬; ছহীহ মুসলিম, হা/৩৮৫০; আবুদাউদ, হা/৩৯২৯; তিরমিযী, হা/২১২৪; নাসাঈ, হা/৪৬৫৫; ইবনু মাজাহ, হা/২৫২১; মুয়াত্তা মালেক, হা/২৮৯৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৩৭৮; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৪২৭২; মিশকাত, হা/২৮৭৭।
[১০]. বাংলা মিশকাত (ঢাকা : এমদাদিয়া পুস্তকালয়), ৬/৯০ পৃ.।
[১১]. ছহীহ বুখারী, হা/১৪১০; ছহীহ মুসলিম, হা/১০১৪; মুয়াত্তা মালেক, হা/৩৬৫১; আহমাদ, হা/৮৩৬৩; ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ, হা/২৪২৬; মিশকাত, হা/১৮৮৮।
[১২]. ছহীহ মুসলিম, হা/১০১৫; তিরমিযী, হা/২৯৮৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৩৩০; দারেমী, হা/২৭১৭; ছহীহ আত-তারগীব, হা/১৭১৭; মিশকাত, হা/২৭৬০।
[১৩]. আবূ দাঊদ, হা/১৫৩৬; তিরমিযী, হা/১৯০৫; ইবনু মাজাহ, হা/৩৮৬২; মিশকাত, হা/২২৫০, সনদ হাসান ।
[১৪]. ছহীহ মুসলিম, হা/২২৪; আবূ দাঊদ, হা/৫৯; তিরমিযী, হা/১; নাসাঈ, হা/১৩৯; ইবনু মাজাহ, হা/২৭২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫১২৩; দারেমী, হা/৬৮৬; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৩৩৬৬; ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ, হা/১০; মিশকাত, হা/৩০১।
[১৫]. মুসনাদে আবী বাকার, হা/৫১; আল-মুসনাদুল জামে‘, হা/৭১১০; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২৬০৯; ছহীহ আত-তারগীব, হা/১৭৩০; মিশকাত, হা/২৭৮৭, সনদ হাসান।
[১৬]. তিরমিযী, হা/৬১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৪৮১; দারেমী, হা/২৭৭৬ মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭১৬৩; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৫৫৬৭; ছহীহ আত-তারগীব, হা/১৭২৯; বায়হাক্বী শু‘আবুল ঈমান, হা/৫৩৭৮; মিশকাত, হা/২৭৭২, সনদ ছহীহ ।
[১৭]. ছহীহ বুখারী, হা/৭১৫২; শু‘আাবুল ঈমান, হা/৫৩৭০; ছহীহ আত-তারগীব, হা/২৪৪৪; আল-মুসনাদুল জামে‘, হা/৩২০৯; মিশকাত, হা/৫৩২৭।
[১৮]. ছহীহ বুখারী, হা/৫২; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৯৯; ইবনু মাজাহ, হা/৩৯৮৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৩৯৮; দারেমী, হা/২৫৩১; মিশকাত, হা/২৭৬২।
[১৯]. ছহীহ বুখারী, হা/২০৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৬১৮; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৬৭২৬; দারেমী, হা/২৫৩৬; মিশকাত, হা/২৭৬১।