বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০২:১৭ পূর্বাহ্ন

জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ

-মূল : ড. সাঈদ ইবনু আলী ইবনু ওয়াহহাফ আল-ক্বাহতানী
-অনুবাদ : মুহাম্মাদ ইমরান বিন ইদরীস*


(২য় কিস্তি)
[জুন ২০২৩ সংখ্যার পর]

৫ম আলোচ্য বিষয় : শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদের প্রকারসমুহ

শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদ কয়েক প্রকারের তার মধ্যে থেকে।

১. কাফের, মুনাফিক্ব ও ধর্মত্যাগীদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা।

২. যে সমস্ত সীমালঙ্ঘনকারী ইসলামী শাসন নীতি ও মুসলিম শাসকদের পরিবর্তন করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা। তবে তাদের বৈধ ব্যাখ্যা রয়েছে এবং তাদের পর্যাপ্ত ও শক্তিশালী ব্যক্তিবর্গ। তবে এক্ষেত্রে মূলনীতি হল,

وَ اِنۡ طَآئِفَتٰنِ مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اقۡتَتَلُوۡا فَاَصۡلِحُوۡا بَیۡنَہُمَا ۚ فَاِنۡۢ  بَغَتۡ اِحۡدٰىہُمَا عَلَی الۡاُخۡرٰی فَقَاتِلُوا الَّتِیۡ تَبۡغِیۡ  حَتّٰی تَفِیۡٓءَ  اِلٰۤی  اَمۡرِ اللّٰہِ ۚ فَاِنۡ فَآءَتۡ  فَاَصۡلِحُوۡا بَیۡنَہُمَا بِالۡعَدۡلِ وَ اَقۡسِطُوۡا ؕ اِنَّ اللّٰہَ یُحِبُّ الۡمُقۡسِطِیۡنَ  . اِنَّمَا الۡمُؤۡمِنُوۡنَ  اِخۡوَۃٌ  فَاَصۡلِحُوۡا بَیۡنَ اَخَوَیۡکُمۡ وَ اتَّقُوا اللّٰہَ  لَعَلَّکُمۡ تُرۡحَمُوۡنَ

‘মুমিনদের দুই দল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে; অতঃপর তাদের একদল অপর দলকে আক্রমণ করলে আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি তারা ফিরে আসে তাহলে তাদের মধ্যে ন্যায়ের সাথে ফায়সালা করবে এবং সুবিচার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদেরকে ভালোবাসেন। মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং তোমরা দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করে দাও এবং আল্লাহকে ভয় কর যাতে তোমরা অনুগ্রহ প্রাপ্ত হও’ (সূরা হুজরাত : ৯-১০)।

عَنْ عَرْفَجَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ إِنَّهُ سَيَكُوْنُ هَنَاتٌ وَهَنَاتٌ فَمَنْ أَرَادَ أَنْ يُّفَرِّقَ أَمْرَ هَذِهِ الْأُمَّةِ وَهِيَ جَمِيْعٌ فَاضْرِبُوْهُ بِالسَّيْفِ كَائِنًا مَنْ كانَ

‘আরফাজা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, অচিরেই বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খলা ও কলহ বিবাদের সৃষ্টি হবে। সুতরাং যে ব্যক্তি এই উম্মতের সকলের মাঝে ঐক্য ও সংহতির মধ্যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করতে চায়, তোমরা তলোয়ার দিয়ে তার গর্দান উড়িয়ে দেবে; সে যে কেউ হোক না কেন।[১] অন্য বর্ণনায় রয়েছ

عَنْ عَرْفَجَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ مَنْ أَتَاكُمْ وَأَمْرُكُمْ جَمِيْعٌ عَلَى رَجُلٍ وَاحِدٍ يُرِيْدُ أَنْ يَّشُقَّ عَصَاكُمْ أَوْ يُفَرِّقَ جَمَاعَتَكُمْ فَاقْتُلُوْهُ

‘আরফাজা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তি খলীফার বিরুদ্ধাচারণ করার এবং গোটা জামা‘আতের মধ্যে বিভক্ত সৃষ্টি করার সংকল্প নিয়ে তোমাদের নিকট আসে, অথচ তোমরা কোন একজন খলীফা বা শাসকের আনুগত্যে ঐক্যবদ্ধ রয়েছ। তবে তাকে হত্যা কর।[২]

৩. দ্বীন রক্ষা এবং জান, মাল ও পরিবারকে রক্ষা করতে শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা

ডাকাতদের সাথে জিহাদ করাও এর আওতাভুক্ত হবে।

عَنْ سَعِيْدِ بْنِ زَيْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَنْ قُتِلَ دُوْنَ مَالِهِ فَهُوَ شَهِيْدٌ وَمَنْ قُتِلَ دُوْنَ أَهْلِهِ فَهُوَ شَهِيْدٌ وَمَنْ قُتِلَ دُوْنَ دِيْنِهِ فَهُوَ شَهِيْدٌ وَمَنْ قُتِلَ دُوْنَ دَمِهِ فَهُوَ شَهِيْدٌঢ

সাঈদ ইবন যায়দ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজ মাল রক্ষার্থে যুদ্ধ করে মারা যায়, সে শহীদ। আর যে ব্যক্তি তার পরিবারের লোকদের রক্ষা করতে গিয়ে মারা যায়, সেও শহীদ, আর যে ব্যক্তি তার দীন রক্ষা করার জন্য নিহত হয়, সেও শহীদ। এবং যে নিজ প্রাণ রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয়, সেও শহীদ।[৩]

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ مَنْ قُتِلَ دُوْنَ مَالِهِ فَهُوَ شَهِيْدٌ

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি নিজের মাল-সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয় সে শহীদ।[৪]

عَنْ مُخَارِقٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ فَقَالَ الرَّجُلُ يَأْتِيْنِيْ فَيُرِيْدُ مَالِيْ قَالَ ذَكِّرْهُ بِاللهِ قَالَ فَإِنْ لَمْ يَذَّكَّرْ قَالَ فَاسْتَعِنْ عَلَيْهِ مَنْ حَوْلَكَ مِنْ الْمُسْلِمِيْنَ قَالَ فَإِنْ لَمْ يَكُنْ حَوْلِيْ أَحَدٌ مِنْ الْمُسْلِمِيْنَ قَالَ فَاسْتَعِنْ عَلَيْهِ بِالسُّلْطَانِ قَالَ فَإِنْ نَأَى السُّلْطَانُ عَنِّيْ قَالَ قَاتِلْ دُوْنَ مَالِكَ حَتَّى تَكُوْنَ مِنْ شُهَدَاءِ الْآخِرَةِ أَوْ تَمْنَعَ مَالَكَ

মুখারিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, যদি কেউ আমার মাল লুট করতে আসে, তখন আমি কি করব? তিনি বললেন, তুমি তাকে আল্লাহর নামে উপদেশ দাও। সে ব্যক্তি বলল, যদি সে উপদেশ গ্রহণ না করে? তিনি বললেন, তবে তুমি তোমার অন্যান্য মুসলিম পড়শীর সাহায্য গ্রহণ কর। সে বলল, যদি ঐরূপ কোন মুসলিম প্রতিবেশী আমার না থাকে? তিনি বললেন, তবে তুমি শাসকের আশ্রয় গ্রহণ করবে। সে বলল, যদি শাসকও দূরে থাকে? তিনি বললেন, তবে তুমি তোমার মাল রক্ষার্থে জিহাদ করবে; যাতে তুমি শহীদ হয়ে যাও কিংবা তোমার সম্পদ রক্ষায় সক্ষম হও।[৫]

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ أَرَأَيْتَ إِنْ جَاءَ رَجُلٌ يُرِيْدُ أَخْذَ مَالِيْ؟ قَالَ فَلَا تُعْطِهِ مَالَكَ قَالَ أَرَأَيْتَ إِنْ قَاتَلَنِيْ؟ قَالَ قَاتِلْهُ قَالَ أَرَأَيْتَ إِنْ قَتَلَنِيْ؟ قَالَ فَأَنْتَ شَهِيْدٌ قَالَ أَرَأَيْتَ إِنْ قَتَلْتُهُ؟ قَالَ هُوَ فِي النَّارِ

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! যদি কোন লোক এসে জোর পূর্বক আমার মাল ছিনিয়ে নিতে চায়, তখন আমি কী করব? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তুমি তাকে তোমার মাল দিও না। লোকটি বলল, যদি সে আমার উপর আক্রমণ করে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তুমিও তার উপর আক্রমণ করবে। লোকটি বলল, যদি সে আমাকে হত্যা করে ফেলে? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তখন তুমি হবে শহীদ। লোকটি বলল, যদি আমি তাকে হত্যা করে ফেলি? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, সে হবে জাহান্নামী।[৬]

৬ষ্ঠ আলোচ্য বিষয় : আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার ফযীলত

জিহাদের ফযীলতের ব্যাপারে অসংখ্য দলীল বর্ণিত হয়েছে এবং অনেক প্রকার নেকীর কথা এসেছে। সেখান থেকে উদাহরণ স্বরূপ,

১. আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ একটি লাভজনক ব্যবসা

মহান আল্লাহ বলেন,

اِنَّ اللّٰہَ اشۡتَرٰی مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اَنۡفُسَہُمۡ وَ اَمۡوَالَہُمۡ بِاَنَّ لَہُمُ الۡجَنَّۃَ ؕ یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ فَیَقۡتُلُوۡنَ وَ یُقۡتَلُوۡنَ ۟ وَعۡدًا عَلَیۡہِ حَقًّا فِی التَّوۡرٰىۃِ وَ الۡاِنۡجِیۡلِ وَ الۡقُرۡاٰنِ ؕ وَ مَنۡ اَوۡفٰی بِعَہۡدِہٖ مِنَ اللّٰہِ فَاسۡتَبۡشِرُوۡا بِبَیۡعِکُمُ الَّذِیۡ بَایَعۡتُمۡ بِہٖ ؕ وَ  ذٰلِکَ ہُوَ الۡفَوۡزُ  الۡعَظِیۡمُ

‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ মুমিনদের নিকট থেকে তাদের প্রাণ ও তাদের ধন সম্পদসমূহকে এর বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন যে, তাদের জন্য জান্নাত রয়েছে, তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, যাতে তারা (কখনও) হত্যা করে এবং (কখনও) নিহত হয়, এর কারণে (জান্নাত প্রদানের) সত্য অঙ্গীকার করা হয়েছে তাওরাতে, ইঞ্জীলে এবং কুরআনে। নিজের অঙ্গীকার পালনকারী আল্লাহ অপেক্ষা অধিক আর কে আছে? অতএব তোমরা আনন্দ করতে থাক তোমাদের এই ক্রয় বিক্রয়ের উপর, যা তোমরা সম্পাদন করেছ, আর এটা হচ্ছে বিরাট সফলতা’ (সূরা আত-তওবা : ১১১)।

যে সমস্ত বীরযোদ্ধাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা এই সুসংবাদ দিলেন তাদের উত্তম বৈশিষ্ট্য ও সুন্দর কর্ম সম্পর্কে স্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন,

اَلتَّآئِبُوۡنَ الۡعٰبِدُوۡنَ الۡحٰمِدُوۡنَ السَّآئِحُوۡنَ الرّٰکِعُوۡنَ السّٰجِدُوۡنَ الۡاٰمِرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ النَّاہُوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ الۡحٰفِظُوۡنَ لِحُدُوۡدِ اللّٰہِ ؕ وَ بَشِّرِ  الۡمُؤۡمِنِیۡنَ

‘তারা হচ্ছে তাওবাকারী, ইবাদাতকারী, আল্লাহর প্রশংসাকারী, ছিয়াম পালনকারী, রুকূ‘ ও সাজদাহকারী, সৎ বিষয় শিক্ষা প্রদানকারী এবং মন্দ বিষয়ে বাধা প্রদানকারী, আল্লাহর সীমাসমূহের (অর্থাৎ আহকামের) সংরক্ষণকারী; আর আপনি মুমিনদেরকে সুসংবাদ শুনিয়ে দিন’ (সূরা আত-তওবা : ১১২)। আল্লাহ তা‘আলা মুজাহিদদের লাভজনক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বলেন,

یٰۤاَیُّہَا  الَّذِیۡنَ  اٰمَنُوۡا ہَلۡ اَدُلُّکُمۡ عَلٰی تِجَارَۃٍ  تُنۡجِیۡکُمۡ مِّنۡ عَذَابٍ اَلِیۡمٍ . تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰہِ وَ رَسُوۡلِہٖ وَ تُجَاہِدُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ  بِاَمۡوَالِکُمۡ وَ اَنۡفُسِکُمۡ ؕ ذٰلِکُمۡ  خَیۡرٌ  لَّکُمۡ  اِنۡ کُنۡتُمۡ  تَعۡلَمُوۡنَ .  یَغۡفِرۡ لَکُمۡ  ذُنُوۡبَکُمۡ وَ یُدۡخِلۡکُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ وَ مَسٰکِنَ  طَیِّبَۃً  فِیۡ  جَنّٰتِ عَدۡنٍ ؕ ذٰلِکَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ  . وَ اُخۡرٰی تُحِبُّوۡنَہَا ؕ نَصۡرٌ  مِّنَ اللّٰہِ وَ فَتۡحٌ  قَرِیۡبٌ ؕ وَ  بَشِّرِ  الۡمُؤۡمِنِیۡنَ

‘হে মুমিনগণ! আমি কি তোমাদের এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান দিব যা তোমাদের রক্ষা করবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হতে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তোমাদের ধন সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা জানতে। আল্লাহ তোমাদের পাপ ক্ষমা করে দিবেন এবং তোমাদের দাখিল করবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং স্থায়ী জান্নাতের উত্তম বাসগৃহে। এটাই মহা সাফল্য। আর তিনি দান করবেন তোমাদের বাঞ্ছিত আরও একটি অনুগ্রহ; আল্লাহর সাহায্য এবং আসন্ন বিজয়; মুমিনদেরকে এর সুসংবাদ দাও’ (সূরা আছ-ছফ : ১০-১৩)। তিনি আরো বলেন,

فَلۡیُقَاتِلۡ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ الَّذِیۡنَ یَشۡرُوۡنَ الۡحَیٰوۃَ الدُّنۡیَا بِالۡاٰخِرَۃِ ؕ وَ مَنۡ یُّقَاتِلۡ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ فَیُقۡتَلۡ اَوۡ یَغۡلِبۡ فَسَوۡفَ نُؤۡتِیۡہِ اَجۡرًا عَظِیۡمًا

‘অতএব যারা দুনিয়ার বিনিময়ে আখিরাত ক্রয় করে তারা যেন আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে এবং যে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, অতঃপর নিহত অথবা বিজয়ী হয়, তাহলে আমরা তাকে মহান প্রতিদান প্রদান করব’ (সূরা আন-নিসা : ৭৪)।

২. আল্লাহর রাস্তায় প্রহরার ফযীলত

যে সমস্ত ঘাঁটি দিয়ে শত্রুরা মুসলিম অঞ্চলে প্রবেশ করতে সক্ষম সেই সমস্ত ঘাঁটিতে নিরাপদ ও সুরক্ষিত করা আবশ্যক। যাতে করে শত্রুরা মুসলিম অঞ্চলে প্রবেশের কোন রাস্তা বা পথ না পায়। এই কারণেই আল্লাহ তা‘আলা সীমান্ত প্রহরীদের জন্য ব্যাপক সওয়াবের ব্যবস্থা করে রেখেছেন।

عَنْ سَلْمَانَ الْفَارِسِيِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ رِبَاطُ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ خَيْرٌ مِنْ صِيَامِ شَهْرٍ وَقِيَامِهِ وَإِنْ مَاتَ جَرَى عَلَيْهِ عَمَلُهُ الَّذِيْ كَانَ يَعْمَلُهُ وَأُجْرِيَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ وَأَمِنَ الْفَتَّانَ

সালমান ফারেসী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আল্লাহর পথে একদিন ও একটি রাত পাহারা দেয়া এক মাস ছিয়াম ও রাতে জাগরণ তথা ছালাতে দণ্ডায়মান থাকার চেয়েও অধিক উত্তম। আর এই পাহারায় নিয়োজিত থাকা অবস্থায় মারা গেলে যে কাজে সে নিয়োজিত ছিল, তার প্রতিদান অনবরত সে পেতে থাকবে। তার রিযিক আসতে থাকবে এবং ফিতনা হতে নিরাপদে থাকবে।[৭]

৩. আল্লাহর রাস্তায় নজরদারির ফযীলত

عَنْ أَبِىْ رَيْحَانَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ حُرِّمَتْ النَّارُ عَلَى عَيْنٍ دَمَعَتْ أَوْ بَكَتْ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ وَحُرِّمَتْ النَّارُ عَلَى عَيْنٍ سَهِرَتْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ

আবূ রাইহানা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, সেই চক্ষুর জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেয়া হয়েছে, যে চক্ষু আল্লাহর ভয়ে অশ্রু বিসর্জন করেছে এবং যে চক্ষু আল্লাহর পথে পাহারা দিয়ে রাত্রি জাগরণ করেছে।[৮]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ عَيْنَانِ لَا تَمَسُّهُمَا النَّارُ عَيْنٌ بَكَتْ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ وَعَيْنٌ بَاتَتْ تَحْرُسُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ

ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, দু’ প্রকারের চক্ষুকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। ১. এমন চক্ষু, যা আল্লাহর শাস্তির ভয়ে ক্রন্দন করে এবং ২. এমন চক্ষু, যা আল্লাহর রাস্তায় জাগ্রত থেকে পাহারা দেয়।[৯]

৪. আল্লাহর রাস্তায় একটি সকাল বা সন্ধ্যা ব্যয় করার ফযীলত

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ رِبَاطُ يَوْمٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ خَيْرٌ مِنْ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا وَمَوْضِعُ سَوْطِ أَحَدِكُمْ مِنْ الْجَنَّةِ خَيْرٌ مِنْ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا وَالرَّوْحَةُ يَرُوْحُهَا الْعَبْدُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ أَوْ الْغَدْوَةُ خَيْرٌ مِنْ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا

সাহল ইবনু সা‘দ সা’ঈদী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহর পথে একদিন সীমান্ত প্রহরা দেয়া দুনিয়া ও এর উপর যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম। জান্নাতে তোমাদের কারো চিবুক পরিমিত জায়গা দুনিয়া এবং ভূপৃষ্ঠের সমস্ত কিছুর চেয়ে উত্তম। আল্লাহর পথে বান্দার একটি সকাল বা বিকাল ব্যয় করা দুনিয়া এবং ভূপৃষ্ঠের সব কিছুর চেয়ে উত্তম।[১০]

عَنْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَغَدْوَةٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ أَوْ رَوْحَةٌ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا

আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহর পথে একটি সকাল বা একটি সন্ধ্যা ব্যয় করা দুনিয়া ও উহার মধ্যকার সমস্ত কিছু হতে উত্তম।[১১]

৫. আল্লাহর রাস্তায় যার দু’পা ধুলোয় ধূসরিত হয়েছে তার ফযীলত

عَنْ أَبِيْ عَبْسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَا اغْبَرَّتْ قَدَمَا عَبْدٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَتَمَسَّهُ النَّارُ

আবূ ‘আবস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তির পদদ্বয় আল্লাহর পথে ধূলিমলিন হয় তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না।[১২]

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَا يَلِجُ النَّارَ رَجُلٌ بَكَى مِنْ خَشْيَةِ اللهِ حَتَّى يَعُوْدَ اللَّبَنُ فِي الضَّرْعِ وَلَا يَجْتَمِعُ غُبَارٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَدُخَانُ جَهَنَّمَ.‏

আবূ হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলার ভয়ে যে লোক ক্রন্দন করে তার জাহান্নামে যাওয়া এরূপ অসম্ভব যেমন অসম্ভব দোহন করা দুধ আবার পালানের মধ্যে ফিরে যাওয়া। আল্লাহ তা‘আলার পথের ধুলা এবং জাহান্নামের ধুঁয়া কখনও একত্র হবে না।[১৩]

৬. তরবারির ছায়ায় জান্নাত

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِيْ أَوْفَى رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ لَا تَتَمَنَّوْا لِقَاءَ الْعَدُوِّ وَاسْأَلُوْا اللهَ الْعَافِيَةَ فَإِذَا لَقِيْتُمْ فَاصْبِرُوْا وَاعْلَمُوْا أَنَّ الْجَنَّةَ تَحْتَ ظِلَالِ السُّيُوْفِ

আব্দুল্লাহ ইবনু আবু আওফা (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, হে লোকসকল! শত্রুর মোকাবিলার আকাঙ্খা কর না; বরং আল্লাহ্র কাছে নিরাপত্তার প্রার্থনা কর। তবে মোকাবিলা সংঘটিত হয়ে গেলে, তখন ধৈর্য্যধারণ কর এবং জেনে রাখ, তলোয়ারের ছায়ার নীচেই জান্নাত অবস্থিত।[১৪]

৭. জিহাদের সমতুল্য কিছুই নেই

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ فَقَالَ دُلَّنِيْ عَلَى عَمَلٍ يَعْدِلُ الْجِهَادَ قَالَ لَا أَجِدُهُ قَالَ هَلْ تَسْتَطِيْعُ إِذَا خَرَجَ الْمُجَاهِدُ أَنْ تَدْخُلَ مَسْجِدَكَ فَتَقُوْمَ وَلَا تَفْتُرَ وَتَصُوْمَ وَلَا تُفْطِرَ قَالَ وَمَنْ يَسْتَطِيْعُ ذَلِكَ.؟

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর নিকট এসে বলল, আমাকে এমন কাজের কথা বলে দিন, যা জিহাদের সমতুল্য হয়। তিনি বলেন, আমি তা পাচ্ছি না। (অতঃপর বললেন,) তুমি কি এতে সক্ষম হবে যে, মুজাহিদ যখন বেরিয়ে যায়, তখন থেকে তুমি মসজিদে প্রবেশ করবে এবং দাঁড়িয়ে ‘ইবাদাত করবে এবং আলস্য করবে না, আর সিয়াম পালন করতে থাকবে এবং সিয়াম ভাঙ্গবে না। ব্যক্তিটি বলল, এটা কে পারবে? [১৫]

৮. আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর মর্যাদা

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ  قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ... إِنَّ فِي الْجَنَّةِ مِائَةَ دَرَجَةٍ أَعَدَّهَا اللهُ لِلْمُجَاهِدِيْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ مَا بَيْنَ الدَّرَجَتَيْنِ كَمَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ فَإِذَا سَأَلْتُمُ اللهَ فَاسْأَلُوْهُ الْفِرْدَوْسَ فَإِنَّهُ أَوْسَطُ الْجَنَّةِ وَأَعْلَى الْجَنَّةِ وَفَوْقَهُ عَرْشُ الرَّحْمَنِ وَمِنْهُ تُفَجَّرُ أَنْهَارُ الْجَنَّةِ. 

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ...আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে ১০০ টি মর্যাদার স্তর প্রস্তুত রেখেছেন। দু’টি স্তরের ব্যবধান আসমান ও যমীনের দুরত্বের সমান। যখন তোমরা আল্লাহর নিকট চাইবে, তখন তোমরা জান্নাতুল ফিরদাউস চাইবে। কেননা এটাই হল সবচেয়ে উত্তম ও সর্বোচ্চ জান্নাত। এর উপরিভাগে করুনাময় আল্লাহর আরশ। সে স্থান হতে জান্নাতের নদী সমূহ প্রবাহিত হচ্ছে।[১৬]

৯. রবের নিকট শহীদদের আপ্যায়ন

عَنِ الْمِقْدَامِ بْنِ مَعْدِيْ كَرِبَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لِلشَّهِيْدِ عِنْدَ اللهِ سِتُّ خِصَالٍ يُغْفَرُ لَهُ فِيْ أوَّلِ دَفْعَةٍ وَيُرَى مَقْعَدَهُ مِنَ الْجَنَّةِ وَيُجَارُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَيَأْمَنُ مِنَ الْفَزَعِ الْأَكْبَرِ وَيُوْضَعُ عَلَى رَأْسِهِ تَاجُ الْوَقَارِ الْيَاقُوْتَةُ مِنْهَا خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا وَيُزَوَّجُ ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِيْنَ زَوْجَةً مِنَ الْحُوْرِ الْعِيْنِ وَيُشَفَّعُ فِيْ سَبْعِيْنَ مِنْ أَقْرِبَائِهِ.

মিক্বদাম ইবনু মা‘আদী কারিব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ্র নিকট শহীদের জন্য ৬টি বিশেষ পুরষ্কার রয়েছে। ১. শরীরের রক্তের প্রথম ফোটা ঝরতেই তাকে মাফ করে দেয়া হয় এবং জান্নাতের মধ্যে তার অবস্থানের জায়গাটি দেখানো হয় ২. কবরের শাস্তি হতে তাকে নিরাপদে রাখা হয় ৩. ক্বিয়ামতের দিনের ভয়াবহতা হতে তাকে নিরাপদে রাখা হয় ৪. তার মাথায় সম্মান ও মর্যাদার মুকুট ইয়াকুত পরানো হবে, যা দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছূ আছে সমস্ত কিছু হতে উত্তম ৫. তার স্ত্রী হিসাবে বড় বড় চক্ষুবিশিষ্ট বাহত্তর জন হূর দেয়া হবে ৬. তার নিকট আত্নীয়দের মধ্যে ৭০ জনের জন্য সুপারিশ কবুল করা হবে।[১৭]

আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণিত হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বড় বড় চক্ষবিশিষ্ট জান্নাতী হূরদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে বলেন,

وَلَوْ أَنَّ امْرَأَةً مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ اطَّلَعَتْ إِلَى أَهْلِ الأَرْضِ لَاضَاءَتْ مَا بَيْنَهُمَا وَلَمَلَاتْهُ رِيْحًا وَلَنَصِيْفُهَا عَلَى رَأْسِهَا خَيْرٌ مِنْ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا

‘জান্নাতী কোন মহিলা যদি দুনিয়াবাসীদের প্রতি উঁকি দেয় তাহলে আসমান ও যমীনের মাঝের সব কিছু আলোকিত এবং সুরভিত হয়ে যাবে। আর তার মাথার ওড়না দুনিয়া ও তার সব কিছু চেয়ে উত্তম’।[১৮]

১০. ক্বিয়ামতের দিন শহীদের রক্ত

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ لَا يُكْلَمُ أَحَدٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَاللهُ أَعْلَمُ بِمَنْ يُكْلَمُ فِيْ سَبِيْلِهِ إِلَّا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَاللَّوْنُ لَوْنُ الدَّمِ وَالرِّيحُ رِيْحُ الْمِسْكِ

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, কোন ব্যক্তি আল্লাহর পথে আহত হলে এবং আল্লাহই ভাল জানেন কে তাঁর পথে আহত হবে; ক্বিয়ামতের দিন সে তাজা রক্ত বর্ণে রঞ্জিত হয়ে আসবে এবং তা থেকে মিশ্কের সুগন্ধি ছড়াবে।[১৯]

১১. শহীদদের দশবার নিহত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করা

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ مَا مِنْ عَبْدٍ يَمُوْتُ لَهُ عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ يَسُرُّهُ أَنْ يَرْجِعَ إِلَى الدُّنْيَا وَأَنَّ لَهُ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا إِلَّا الشَّهِيْدَ لِمَا يَرَى مِنْ فَضْلِ الشَّهَادَةِ فَإِنَّهُ يَسُرُّهُ أَنْ يَرْجِعَ إِلَى الدُّنْيَا فَيُقْتَلَ مَرَّةً أُخْرَى

আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। নবী (ﷺ) বলেছেন, জান্নাতে প্রবেশের পর আর কেউ দুনিয়ায় ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা করবে না, যদিও দুনিয়ার সকল জিনিস তাকে দেয়া হয়। একমাত্র শহীদ ব্যতীত; সে শাহাদাতের ফযীলত দেখার কারণে আবার দুনিয়ায় ফিরে এসে আল্লাহর পথে শহীদ হবার প্রতি আগ্রহী হবে।[২০]

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

مَا مِنْ أَحَدٍ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ يُحِبُّ أَنْ يَرْجِعَ إِلَى الدُّنْيَا وَلَهُ مَا فِي الْأَرْضِ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا الشَّهِيْدُ يَتَمَنَّى أَنْ يَرْجِعَ إِلَى الدُّنْيَا فَيُقْتَلَ عَشْرَ مَرَّاتٍ لِمَا يَرَى مِنَ الْكَرَامَةِ

‘আল্লাহর রাস্তায় শহীদ ব্যতীত যে কোন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করার পর পুনরায় দুনিয়াতে ফিরে আসতে চাইবে না, যদিও পৃথিবীর যাবতীয় সম্পদ তাকে প্রদান করা হয়। শহীদগণ শাহাদত বরণের মর্যাদা দেখে আবার দুনিয়াতে ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা করবে যাতে সে আরো দশ বার শহীদ হতে পারে।[২১]

১২. শহীদদের রূহ তথা আত্মাগুলো জান্নাতে বিচরণ করবে

عَنْ مَسْرُوْقٍ، قَالَ سَأَلْنَا عَبْدَ اللهِ عَنْ هَذِهِ الآيَةِ، ‏(‏ وَ لَا تَحۡسَبَنَّ الَّذِیۡنَ قُتِلُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ اَمۡوَاتًا ؕ بَلۡ اَحۡیَآءٌ عِنۡدَ رَبِّہِمۡ یُرۡزَقُوۡنَ ‏)‏ قَالَ أَمَا إِنَّا قَدْ سَأَلْنَا عَنْ ذَلِكَ فَقَالَ ‏"‏ أَرْوَاحُهُمْ فِي جَوْفِ طَيْرٍ خُضْرٍ لَهَا قَنَادِيْلُ مُعَلَّقَةٌ بِالْعَرْشِ تَسْرَحُ مِنَ الْجَنَّةِ حَيْثُ شَاءَتْ ثُمَّ تَأْوِيْ إِلَى تِلْكَ الْقَنَادِيْلِ فَاطَّلَعَ إِلَيْهِمْ رَبُّهُمُ اطِّلَاعَةً فَقَالَ هَلْ تَشْتَهُوْنَ شَيْئًا قَالُوْا أَىَّ شَىْءٍ نَشْتَهِيْ وَنَحْنُ نَسْرَحُ مِنَ الْجَنَّةِ حَيْثُ شِئْنَا ‏"‏‏.‏

মাসরূক্ব (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি আব্দুল্লাহ (ইবনু মাসঊদ) (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-কে এ আয়াতটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম যাতে আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে কখনো তোমরা মৃত মনে করো না বরং তাঁরা জীবিত তাঁদের প্রতিপালকের কাছ থেকে তারা জীবিকা প্রাপ্ত’ (সূরা আলে ‘ইমরান : ১৬৯)। আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, আমি এ আয়াত সম্পর্কে (রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-কে) জিজ্ঞাসা করেছিলাম তখন তিনি বললেন, তাদের রূহসমুহ সবুজ পাখীর পেটে (রক্ষিত থাকে) যা আরশের সাথে ঝুলন্ত দীপাধারে বাস করে। জান্নাতের সর্বত্র তারা যেখানে চায় সেখানে বিচরণ করে। অবশেষে সেই দীপাধারগুলোতে ফিরে আসে। একবার তাদের পালনকর্তা তাদের দিকে তাকালেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের কি কোন আকাঙ্ক্ষা আছে? জবাবে তারা বলল, আমাদের আর কি আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে আমরা তো যথেচ্ছভাবে জান্নাতে বিচরণ করছি।

 (ইনশাআল্লাহ চলবে)

*শিক্ষক, মাদরাসাতুল হাদীস আস-সালাফিয়াহ, সাবগ্রাম, বগুড়া।

তথ্যসূত্র :
[১]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৫২; মিশকাত, হা/৩৬৭৭।
[২]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৫২; মিশকাত, হা/৩৬৭৮।
[৩]. ছহীহ বুখারী, হা/২৪৮০; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪১; আবূ দাঊদ, হা/৪৭৭২; তিরমিযী, হা/১৪২১; মিশকাত, হা/৩৫১২।
[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/২৪৮০; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪১।
[৫]. নাসাঈ, হা/৪০৮১, সনদ হাসান।
[৬]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৪০; মিশকাত, হা/৩৫১৩।
[৭]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৯১৩; মিশকাত, হা/৩৭৯৩।
[৮]. মুসতাদরাক হাকিম, হা/২৪৩২; দারেমী, হা/২৪০০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭২৫২।
[৯]. তিরমিযী, হা/১৬৩৯; মিশকাত, হা/৩৮২৯।
[১০]. ছহীহ বুখারী, হা/২৮৯২; তিরমিযী, হা/১৬৪৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৬০৪; মিশকাত, হা/৩৭৯১।
[১১]. ছহীহ বুখারী, হা/২৭৯২; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৮০; মিশকাত, হা/৩৭৯২।
[১২]. ছহীহ বুখারী, হা/২৮১১; মিশকাত, হা/৩৭৯২।
[১৩]. তিরমিযী, হা/১৬৩৩; নাসাঈ, হা/৩১০৮।
[১৪]. ছহীহ বুখারী, হা/২৯৬৬, ৩০২৫; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭৪২; মিশকাত, হা/৩৯৩০।
[১৫]. ছহীহ বুখারী, হা/২৭৮৫; নাসাঈ, হা/৩১২৮।
[১৬]. ছহীহ বুখারী, হা/২৭৯০; মিশকাত, হা/৩৭৮৭।
[১৭]. তিরমিযী, হা/১৬৬৩; ইবনু মাজাহ, হা/২৭৯৯, সনদ ছহীহ; মিশকাত, হা/৩৮৩৪।
[১৮]. ছহীহ বুখারী, হা/২৭৯৬।
[১৯]. ছহীহ বুখারী, হা/২৮০৩।
[২০]. ছহীহ বুখারী, হা/২৭৯৫; তিরমিযী, হা/১৬৪৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২২৯৫।
[২১]. ছহীহ বুখারী, হা/২৮১৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৭৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৭৯৪; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৪৬৬২; মিশকাত, হা/৩৮০৩।




প্রসঙ্গসমূহ »: দাওয়াত ও জিহাদ
বিদ‘আত পরিচিতি (১৫তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
জঙ্গিবাদ বনাম ইসলাম (৩য় কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
পরনিন্দা চর্চা ও তার পরিণাম - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ইসলামী জামা‘আতের মূল স্তম্ভ - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন
ভ্রান্ত ফের্কাসমূহের ঈমান বনাম আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের ঈমান : একটি পর্যালোচনা - ড. আব্দুল্লাহিল কাফী বিন লুৎফর রহমান মাদানী
আত্মহত্যাকারীর শারঈ বিধান - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (২৩তম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
ঈদুল ফিতরে করণীয় ও বর্জনীয় - আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
সন্ত্রাসবাদ : ইসলামের দিকে শ্যেনদৃষ্টি - অধ্যাপক মো. আকবার হোসেন
তাওহীদ প্রতিষ্ঠার উপায় (৩য় কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
বিদায় হজ্জের ভাষণ : তাৎপর্য ও মূল্যায়ন (শেষ কিস্তি) - অধ্যাপক মো. আকবার হোসেন
ইমাম মাহদী, দাজ্জাল ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর আগমন সংশয় নিরসন (১৪তম কিস্তি) - হাসিবুর রহমান বুখারী

ফেসবুক পেজ