রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৫ অপরাহ্ন

ইসলামী উত্তরাধিকার আইন:  উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ ধারা 

-ড. মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ* 


(২য় কিস্তি) 
 
মদীনায় ইসলামী উত্তরাধিকার আইনের বিকাশ 

যখন মুহাজিররা মদীনায় আগমন করেন তখন রাসূল (ﷺ) আনছার এবং মুহাজিরদেরকে পরস্পর ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ করে দেন। এর ফলে মুহাজির তার আনছার ভাইয়ের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতো।[১] আর মৃত ব্যক্তির নিকটাত্মীয় হিজরত না করলে স্বাভাবিকভাবেই তার উত্তরাধিকার থেকে সে বঞ্চিত হতো। এই আইনের লক্ষ্য খুব সম্ভব এই ছিলো যে, সমস্ত মুসলিম মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় চলে আসুক। আল-কুরআনে এসেছে, ‘নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে, দেশ ত্যাগ করেছে, স্বীয় জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর পথে জেহাদ করেছে এবং যারা তাদেরকে আশ্রয় ও সাহায্য সহায়তা দিয়েছে, তারা একে অপরের সহায়ক। আর যারা ঈমান এনেছে কিন্তু দেশ ত্যাগ করেনি, তাদের বন্ধুত্বে তোমাদের প্রয়োজন নেই। যতক্ষণ না তারা দেশ ত্যাগ করে’ (সূরা আল-আনফাল: ৭২)।

অতঃপর উত্তরাধিকার আইনকে ব্যাপকতর করা হলো। হিজরতের মধ্যদিয়ে পুত্ররাও সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হলো। তখন পর্যন্ত পিতা-মাতা কিংবা কন্যাদের জন্য কোন অংশ নির্ধারণ করা হয়নি। ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ‘ইসলামের প্রাথমিক যুগে এই নিয়ম ছিলো যে, শুধু সন্তান-সন্ততিরাই সম্পত্তির অধিকারী হতো’। এই নির্দেশটি নিম্নলিখিত আয়াতের ভিত্তিতে জারি করা হয়েছিলো। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমাদের কারো যখন মৃত্যুর সময় উপস্থিত হয়, সে যদি কিছু ধন-সম্পদ ত্যাগ করে যায়, তবে তার জন্য ওয়াসিয়াত করা বিধিবদ্ধ করা হলো, পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের জন্য ইনসাফের সাথে পরহেযগারদের জন্য ইহা অবশ্য কর্তব্য’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ১৮০)। এ বিধান দেয়া হয়েছিলো যখন উত্তরাধিকার স্বত্ত্ব বণ্টন সম্পর্কিত কোন আইন নির্দিষ্ট ছিলো না। সে সময় অন্তিম নির্দেশ বা ওয়াসিয়াত এর মাধ্যমে উত্তরাধিকারীদের জন্য অংশ নির্ধারণ করে দেয়া প্রত্যেক ব্যক্তির পক্ষে বাধ্যতামূলক করা হয়েছিলো। যাতে তার মৃত্যুর পর বংশের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ না হতে পারে এবং কোনো হকদারের হকও নষ্ট না হয়।

এ আয়াতের ‘এ হক আদায় করা হতে থাকলে মীরাসের ব্যাপারে যে সব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এবং যেগুলো আজকের মানব সমাজে অনেক জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন করেছে তার মীমাংসা অতি সহজেই হয়ে যেতে পারে যেমন দাদা ও নানার জীবদ্দশায় যে সব নাতি-নাতনীর বাবা-মা মারা যায় তাদের বিষয়টি (এদের এক তৃতীয়াংশ ওয়াসিয়াত থেকে সহজেই অংশ দান করা যায়)’।[২] কিন্তু বদর, উহুদ প্রভৃতি যুদ্ধে ওয়াসিয়ত করে যেতে পারেননি, এমন বহু ছাহাবী শহীদ হন। ফলে তাদের সম্পত্তি কিভাবে বণ্টন করা হবে সে প্রশ্ন দেখা দেয়। আউস ইবনু সাবিতের বিধবা স্ত্রী রাসূল (ﷺ)-এর খিদমাতে নিবেদন করেন যে, তার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে অথচ তিনি এবং তার ছোট মেয়েরা আউসের সম্পত্তি থেকে কিছুই পাননি। কেননা পুরো সম্পত্তিই মৃতের ভাই নিয়ে গেছে।[৩] কোন কোন বর্ণনায় সা‘দ ইবনু রাবীর দুই কন্যাসহ তাঁর স্ত্রী রাসূল (ﷺ)-এর কাছে উহুদ যুদ্ধে শহীদ স্বামীর মীরাসী সম্পত্তি কন্যাদের চাচা গ্রহণের বিষয়ে আপত্তি জানাতে আসলে মীরাসী বিধান প্রবর্তিত হয়।[৪] মৃত ব্যক্তির নিজের সন্তানকে বঞ্চিত করে মৃতের সম্পদ নিয়ে নেয়া বা কেবল পুরুষরা সম্পদ গ্রহণ করা তাদের কাছে সাধারণ ব্যাপার ছিলো। তারপরই মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত বণ্টনের বিস্তারিত বর্ণনা নিয়ে সর্ব প্রথম উহুদ যুদ্ধের পরই উত্তরাধিকার আয়াত অবতীর্ণ হলো। যেমন জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) আমাকে দেখার জন্য এলেন। তার আগমন মুহূর্তে আমি চেতনাহীন ছিলাম। রাসূল (ﷺ) তখন ওযূ করেন এবং ওযূ করার পর পাত্রে যে পানি বেঁচে ছিলো তা আমার উপর ছিটিয়ে দেন। ফলে আমার চেতনা ফিরে আসে। আমি তখন রাসূল (ﷺ)-এর কাছে নিবেদন করি, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমি আমার সম্পত্তির কী করবো? কীভাবেই বা এগুলোকে বণ্টন করে যাবো? রাসূল (ﷺ) কোনো উত্তর দিলেন না, এমনকি উত্তরাধিকার সম্পত্তি সম্পর্কিত আয়াত নাযিল হলো।’[৫]

অবতীর্ণ হলো মীরাসের বিস্তারিত বিধানের বর্ণনা সম্বলিত আয়াত। আল-কুরআনে উক্ত অবতীর্ণ সূরা নিসার ৬-৮ এবং ১১-১৪ নং ইসলামী উত্তরাধিকার আয়াত দ্বারা জাহিলী আরবে আবহমানকাল থেকে চলে আসা প্রাচীন মিরাসী পদ্ধতির গোটা ব্যবস্থাকে বাতিল ও নাকচ করে দিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ মিরাসী বিধান উপস্থাপন করে।[৬] তখন অনেক ছাহাবী এর প্রতিবাদ করেন। আল-আউফ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণনা করেন, যখন আল্লহর নবী (ﷺ) এই আয়াতের মাধ্যমে পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষ, নারী ও পিতা-মাতার অংশ বর্ণনা করেন, তখন কেউ কেউ তা অপসন্দ করেন এবং বলেন, নারীকে চারের এক অথবা আটের এক, মেয়েকে দুয়ের এক, এমনিভাবে ছোট শিশুকেও পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে অংশ দেয়া হচ্ছে, অথচ তাদের কেউ জিহাদে অংশ গ্রহণ করে না। তারা কীভাবে সম্পত্তি পেতে পারে? অতএব, তোমরা পরিত্যক্ত সম্পত্তির বণ্টন সম্পর্কে আলোচনা করা থেকে বিরত থাকো, কোন কথা বলো না, সম্ভবত রাসূল (ﷺ) তা ভুলে যাবেন অথবা আমরা তাঁকে পরিবর্তন করার জন্য বলব। অতপর তারা রাসূূূূূূূল (ﷺ)-এর কাছে আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! পিতার মৃত্যুর পর কন্যা যদি একজন হয় তাকে অর্ধেক সম্পত্তি দেয়া হয় অথচ সে অশ্বারোহণ করে যুদ্ধের মাঠে জিহাদে অংশগ্রহণ করে না। একইভাবে শিশুকেও মীরাসী সম্পত্তি দেয়া হয়, যে কোন কাজেই আসে না।[৭] এ থেকে বুঝা যায় সম্পত্তিতে নারীদের অংশ নিশ্চিতের প্রক্রিয়া সহজ ছিল না।

মীরাসী বিধান সম্বলিত সূরা নিসার আয়াতগুলোতে এ প্রথম মানব সভ্যতার ইতিহাসে নারীদের উত্তরাধিকারকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এ স্বীকৃতি সম্বলিত সম্পত্তিতে নারীদের অংশ প্রদানের মহান আল্লাহর ঘোষণায় তৎকালীন গোটা সমাজ পরিবেশটাই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়। অনেক পুরুষ এই আদেশ শুনে শঙ্কা প্রকাশ করে পরস্পর নানা রকম কথাবার্তা বলতে লাগলো। কেউ কেউ বললÑ‘কী অবাক কথা! এখন স্ত্রীরা চতুর্থাংশ পাবে, কন্যাদেরকে অর্ধেকাংশ দিতে হবে আর ছোট ছোট সন্তানদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির অংশ দিতে হবে। অথচ তারা কেউ যুদ্ধ করে না। আর যুদ্ধলব্ধ সম্পদও কুড়িয়ে আনে না।’[৮] অর্থাৎ কেউই কন্যা বা নারীদের সম্পত্তিতে অংশীদার করার আল্লাহর প্রক্রিয়ায় রাজি বা সন্তুষ্ট ছিল না। মনস্তাত্ত্বিকভাবে তাদেরকে তৈরি করার জন্য আল্লাহ তা‘আলা ধীরে ধীরে উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিধান জারি করেন। অবশেষে উত্তরাধিকার আইন এবং এর বাস্তবায়ন আরো ব্যাপকতা লাভ করলো। নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধÑ নির্বিশেষে সকলে নিজেদের অধিকার প্রাপ্ত হলো মৃতের উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে। ইতোমধ্যে ইসলামের বিভিন্ন বিধান ও ধর্ম চর্চার প্রতি মানুষের গভীর শ্রদ্ধা তৈরি হয়েছে। মহান আল্লাহর বিধানের প্রতি মমতাপূর্ণ মানসিকতায় ইসলামের সকল বিধান ও নির্দেশনা আন্তরিকতার সাথে গ্রহণের মানসিক প্রস্তুতি এসে গেছে। এর মধ্যে বিদায় হজ্জের যাত্রা শুরু হলো। মীরাসী সর্বশেষ বিধান জারী করার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হলো।

মানুষ হিসাবে নারী বা কন্যা সন্তান এখন মুসলিম আরবীয় সমাজে অনেক মর্যাদা ও সম্মানে ভূষিত হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে সূরা নিসার কালালার আয়াত (৪:১৭৬) অবতীর্ণ হয়ে কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে মৃতের ভাই-বোনের মীরাসী সম্পত্তির অধিকার সীমিত করা হলো। এ পর্যায়ে কোন সাহাবী পুত্রের মতো কন্যা সন্তানের মূল্যায়নে প্রশ্ন তোলেনি। যেভাবে প্রশ্ন তুলেছিল উহুদ যুদ্ধের পরবর্তী প্রথম মীরাসী বিধান (৪:১১-১২) প্রবর্তনের সময়। বিদায় হজ্জের কিছু সময় পূর্বে মীরাসী সর্বশেষ আইনের (কালালা সংক্রান্ত আয়াত অবতীর্ণের) মাধ্যমে ইসলামী উত্তরাধিকার আইনের পূর্ণতা দিয়ে সকলের অংশ নির্ধারণের মাধ্যমে এ আইন পরিপূর্ণতা পায়। এ পর্যায়ে বিধান জারি হলো যে, সন্তান থাকলে মৃতের ভাই-বোন কোনক্রমেই উত্তরাধিকার সম্পত্তি পাবে না। চাই সেই সন্তান পুত্র হউক বা কন্যাÑ এ ঘোষণাই ‘কালালা’ সংক্রান্ত আয়াতে আসলো। এর মাধ্যমেই মৃতের উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আল-কুরআনের বিধান প্রদান শেষ হলো। বিদায় হজ্জের কিছু দিন পূর্বে রাসূলের নবুয়াতী জিন্দেগীর সর্বশেষ পর্যায়ে এ কালালা সংক্রান্ত আয়াতের অবতীর্ণ হওয়ার পর উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আর কোন আয়াত অবতীর্ণ হয়নি।

রাসূল (ﷺ)-এর জীবদ্দশায় মুসলিমদের মধ্যে কোন শ্রেণি-উপশ্রেণি ছিলো না। রাসূল (ﷺ)-এর মৃত্যুর পর নানা শ্রেণি- উপশ্রেণি জন্ম নেয়।[৯] মুসলিমগণ প্রধানত দুই শ্রেণিতে বিভক্ত। সুন্নী ও শী‘আ।[১০] মুসলিম আইনের বিভিন্ন শাখায় সুন্নী ও শী‘আদের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। সুন্নীদের মাঝে বেশ কিছু মাযহাব রয়েছে। এ মাযহাবের ফক্বীহগণ উত্তরাধিকার সম্পর্কিত আলোচনাকালে তাদের গ্রন্থসমূহে এ বিষয়কে কিতাবুল ফারায়েয তথা ফারায়েয অধ্যায় নামে শিরোনাম নির্ধারণ করেছেন।[১১] কোন কোন ফিকাহবিদ ফিকহ এর গ্রন্থ থেকে আলাদা করে ‘ফারায়েযশাস্ত্র’ নামে স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেছেন।[১২] হিজরী দ্বিতীয় শতকে ফিক্বহী মাসআলা বিষয়ে গ্রন্থ প্রণয়ণের সূচনাকাল থেকেই এ ধারারও যাত্রা হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতকের দিকে যারা ফারায়েযশাস্ত্র সম্পর্কে প্রথম গ্রন্থ রচনা করেছেন তাদের মধ্যে ইবনে শুবরুমা, ইবনে আলী লায়লা ও আবু সাওর উল্লেখযোগ্য।[১৩]  উক্ত দুই শতকে রচিত ফিকহ গ্রন্থাবলীতে ফারায়েজ সম্পৃক্ত কোন আলোচনা ছিল না। অপরদিকে হাদীছ গ্রন্থাবলীতে সাধারণ ফিক্বহী বিধি-বিধানের সাথে ফারায়েযের বিধি-বিধানও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। যেমন সিহাহ সিত্তার হাদীছ গ্রন্থাবলীতে ফারায়েযের একটি করে অধ্যায় রয়েছে।

ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামী আইন চর্চা ও উত্তরাধিকার আইনের প্রকৃতি ও ধারা

উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর সময় ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে ৬৩৬ সালে প্রথম ভারতের দিকে যুদ্ধ জাহাজ ভাসায় এবং মুম্বাইয়ের থানা অঞ্চলে পরিচালিত হয়।[১৪] খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতকের প্রারম্ভে আরব বণিকদের মাধ্যমে ইসলামের মহান বাণী আফ্রিকা ও এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রচার হতে থাকে। স্থানীয় জাতিগোষ্ঠীর বর্ণভেদ প্রথা ও নিম্ম শ্রেণীভুক্তদের সামাজিক অস্পৃশ্যতার পরিবর্তে ইসলামের সাম্য-মৈত্রী ও উদারতার বাণী অনারব অধিবাসীগণকে প্রবলভাবে আকৃষ্ট করে। তারা মুসলিমদের বৈষয়িক সমৃদ্ধি ও মানবিক মুক্তির প্রতীক হিসাবে গণ্য করে।[১৫] মুহাম্মদ ইবনু কাসিমের সিন্ধু বিজয়ের মাধ্যমে ভারতবর্ষে রাজনৈতিকভাবে মুসলিম শক্তির গোড়াপত্তন হয়। সুলতান মোহাম্মদ ঘোরীর প্রচেষ্টায় ও সুলতান কুতুবুদ্দীন আইবেক কর্তৃক ভারত জুড়ে সার্বভৌম মুসলিম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ও অংশে বিচ্ছিন্নভাবে মুসলিমদের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ভারতের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে মুগলদের অভ্যুদয় ঘটে। ইংরেজদের নিকট পরাজয়ের আগ পর্যন্ত এবং মুগল সাম্রাজ্যের চূড়ান্ত পতনের পূর্বে মুগলরা প্রায় তিনশ’ বছর ভারত শাসন করে। এ সময়ে তারা ইসলামী সংস্কৃতির বিকাশের পাশাপাশি এ অঞ্চলে ইসলামী আইন-কানুন, রীতি-নীতি, ধর্মীয় তাহযীব-তামাদ্দুন চালুর মধ্য দিয়ে পৃথক একটি ইসলামী ভাবধারার উম্মেষ ঘটায়। দিল্লীর সুলতানগণ হানাফী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। তারা মুসলিম শরী‘আত আইনের কঠোর অনুসারী ছিলেন। এমনকি মুঘল সম্রাটগণও হানাফী মতাবলম্বী ছিলেন। এসব সম্রাট যেসব বিচারকদের নিযুক্ত করতেন তারাও হানাফী আইন প্রয়োগ করতেন।[১৬] উপমহাদেশ জুড়ে সর্বভারতীয় প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে মুসলিম শাসকদের ধারা পরিচালিত ও প্রতিষ্ঠিত ইসলামী বিচার ব্যবস্থাকে দু’টি পর্যায়ে ভাগ করা হয়। একটি হলো প্রাক- মুগল বা সুলতানী আমলের ইসলামী বিচার ব্যবস্থা ও ইসলামী আইনের চর্চা এবং অন্যটি হলো, মুগল আমলের ইসলামী বিচার ব্যবস্থা ও ইসলামী আইনের চর্চা। নিম্নে তা উপস্থাপন করা হলÑ

সুলতানী আমলে ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামী আইনের চর্চা ও উত্তরাধিকার প্রসঙ্গ

১২০৬ সালে সুলতান কুতুবুদ্দীন আইবেকের সিংহাসন আরোহণের সময় থেকে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে জহিরুদ্দীন মোহাম্মদ বাবর কর্তৃক ১৫২৬ সালে সুলতান ইব্রাহীম লোদীকে পরাজয়ের মাধ্যমে দিল্লির সিংহাসন আরোহণ পর্যন্ত মুসলিম শাসন আমলকে সুলতানী আমল হিসেবে গণ্য করা হয়। ১২০৬ সাল থেকে ১৫২৬ সাল পর্যন্ত তিনশত বছরের অধিককাল সুলতানী আমলে দিল্লিকে রাজধানী করে ভারতের মুসলিম সুলতানগণ সার্বভৌম মুসলিম সাম্রাজ্য পরিচালনা করেন।[১৭] সুলতানগণ বিজিত অঞ্চলে ধর্মপ্রচার, ইসলামী সংস্কৃতির বিকাশ, মসজিদ ও সরাইখানা নির্মাণসহ ধর্মীয় নতুন এক চিন্তার আদলে ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামী আইন-কানুন ও নিয়ম-নীতির প্রচলন করেন। সুলতান আলাউদ্দীন খলজী প্রজা সাধারণের কল্যাণের কথা চিন্তা করে শাসন ব্যবস্থায় সংস্কার আনেন এবং নতুন নতুন আইন প্রণয়ন করেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে আল-কুরআনের অনুশাসন মেনে চলতেন। তার সময় ইসলামী শরী‘আহ ভিত্তিক আইনের অনুশাসন মুফতি নির্ধারণ করতেন এবং কাযী আদেশ প্রদান করতেন।[১৮] লোদী সুলতানদের আমলে সুলতান সেকান্দর লোদী ন্যায়বিচারক ছিলেন। কোথাও অপরাধ সংঘটনের খবর পেলে সাথে সাথে তিনি তদন্তের নির্দেশ এবং প্রতিকারের ব্যবস্থা করতেন। আফগান সর্দারদের মধ্যে আইন অমাণ্য করার প্রবণতা দেখা দিলে তিনি তাদেরকে আইন শৃঙ্খলা মানতে বাধ্য করতেন। সুলতান ইবরাহীম লোদী তার শাসনামলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সব সময় সচেষ্ট ছিলেন।[১৯] সুলতান রাষ্ট্রপ্রধান এবং প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হিসেবে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা তাঁর অন্যতম দায়িত্ব ছিল। সুলতানের নামে বিচারকার্য চালানো হতো এবং মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ক্ষেত্রে সুলতানের অনুমোদনের প্রয়োজন হতো।[২০]

সুলতানী আমলে বাংলা ও দিল্লি উভয় স্থানের শাসকশ্রেণী একই রকম ও সমগোত্রীয় (তুর্কি, আফগান, ফারসিয়ান এবং আরব) হওয়ায় প্রশাসনের ধরন ছিল একই রকম; কারণ তারা ঐতিহ্যে আব্বাসীয় খলীফাদের নীতিতে অনুপ্রাণিত ছিল। তারা বিচার কাজ চালাত ইসলামী শরী‘আহ আইন অনুসারে।[২১] সুলতান প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ইসলামী আইন ও বিচার সংক্রান্ত কর্মে আলিমদের সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য আহ্বান করতেন।[২২] সুলতান নিরপেক্ষতা ও ন্যায়পরায়ণতার নীতি অনুসরণ করে বিচারকার্য পরিচালনার সময় ইসলামী আইনে অভিজ্ঞ আলেম ও মুফতীদের পরামর্শ গ্রহণ করতেন।[২৩] জেলা কাযীর আদালতের বিচারক নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন সরাসরি সদর-ই-জাহান কর্তৃক আথবা কাযী-ই-সুবাহ-এর সুপারিশ অনুযায়ী। তার বিচার কার্যের সহায়তার জন্য মুসলিম আইনের বিশেষজ্ঞ হিসাবে মুফতি, হিন্দু আইনের বিশেষজ্ঞ হিসাবে পণ্ডিত, সরকার পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্যে মুহতাসিব আদালতের সাথে যুক্ত থাকতেন।[২৪] এ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে কাযী-ই-সুবাহ-এর আদালতে আপীল দায়ের করা যেত।

সুলতানী আমলে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় সুলতান নিজে প্রধান বিচারক ছিলেন। বিচারকার্য পরিচালিত হত ইসলামী আইন অনুসারে। সুলতান নিজে রাজদ্রোহী ও ধর্মদ্রোহীদের বিচার করতেন। বিচার বিভাগীয় সুতলানের পরবর্তী পদে বিচারের জন্য কাজী নিযুক্ত করা হত। ইসলামী আইনে অভিজ্ঞ আলিম ও জ্ঞানী ব্যক্তিরা কাযীকে বিচারকার্যে সহায়তা করতেন। মুসলিম ছাড়া ভিন্নধর্মীদের সামাজিক বিষয়ে নিজ নিজ ব্যক্তিগত আইন প্রচলিত ছিল। সামাজিক বিষয়ে নিরপেক্ষ সামাজিক আইন চালু ছিল।[২৫] সুলতানগণ কোন আইনের বিপরীতে কাজ করলে কাযীগণ তা বাধা দিতে পারতেন; কেননা ইসলামী শরী‘আহ ভিত্তিক আইনের প্রচলন ছিল। এ আমলে উত্তরাধিকার সংক্রান্ত নথি পাওয়া যায়নি। তবে ফতোয়া আকারে লিখিত আছে। এ সময়ে মুসলিম শাসক এসেছেন, ইসলাম ধর্মও বিস্তার লাভ করেছে। ধর্মীয় বিধানের পাশাপাশি সামাজিক প্রচলিত আচার-আচরণ ও কুসংস্কার বিদ্যমান ছিল।[২৬]

(ইনশাআল্লাহ চলবে)


* সহকারী অধ্যাপক (বিসিএস সাধারণ শিক্ষা), সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকা।

তথ্যসূত্র :
[১]. নাসিরুদ্দীন আল-বায়যাভী, আনওয়ারুত তানযীল ওয়া আসরারুত তাভীল (তাফসীরে বায়যাভী), প্রথম খণ্ড,  লেবাবনন: দারু ইহইয়াইত তুরাছিল আরাবী, ১৯৯৮ ), পৃ. ৩২৪।
[২].  মাওলানা সদরুদ্দীন ইসলাহী, আল কুরআনের পয়গাম, ১ম খণ্ড, (ঢাকা: সৌরভ বর্ণালী প্রকাশনী, ২০১৮) পৃ. ৮৮।
[৩]. তাফসীরে রূহুল মায়ানী; আবু দাউদ, তিরমিযি, ইবনে মাজা ও ইবনে সাদ, পৃ. ২৮২।
[৪]. আহমাদ, তিরমিযি, আবুদাউদ, ইবনে মাজাহ।
[৫]. সহীহ বুখারী, ৬ষ্ঠ খণ্ড (ঢাকা: তাওহীদ পাবলিকেশন্স, ২০১৯), পৃ. ১৪৮।
[৬]. এ আয়াতগুলো ওহুদের যুদ্ধের পর অবতীর্ণ হয়। এ লড়াইয়ে ৭০ জন মুসলিম শহীদ হন। এ দুর্ঘটনার কারণে শহীদদের মীরাস কিভাবে বণ্টন করা হবে, এ প্রশ্ন বহু পরিবারের সামনে প্রকট হয়। এই আয়াতগুলোতে এ সমস্যার সমাধান দেখা যায়। গাজী শামসুর রহমান, ফারায়েজ আইন (ঢাকা: খোশরোজ কিতাব মহল, ২০০১), পৃ. ৭।
[৭]. সাইয়েদ কুতুব শহীদ, তাফসীর ফি যিলালিল কুরআন, অনুবাদ: হাফিজ মুনির উদ্দিন আহমদ, (লণ্ডন: আলকুরআন একাডেমি, ২০০১), ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৫৯; ইবনু আবি হাতিম, আত-তাফসীর (লেবানন: দারুল মাকতাবাতুল আসরিয়্যাহ), ৩য় খণ্ড, পৃ. ৮৮২; ইবনু জারীর আত-তাবারী, জামিউল বায়ানি ফী তাফবিলীল কুরআন (বৈরুত: মুওয়াসসাসাতুর রিসালাহ, ২০০০), ৭ম খণ্ড, পৃ. ৩২।
[৮]. আল বাহী আল-খাওলী, অনুবাদ, মোহাম্মদ নূরূল হুদা, নারী ও পুরুষ ভুল করে কোথায় (ঢাকা: পিস পাবলিকেশন, ২০১২), পৃ. ১৮৪।
[৯]. মুহাম্মদ ফয়েজ উদ্দিন, মুসলিম বিবাহ ও বিধিবদ্ধ আাইন (রাজশাহী: এম. ওমর ফারুক, ১৯৯৮), পৃ. ২৬।
[১০]. ৬৩২ খ্রি. রাসূল (ﷺ)-এর মৃত্যুর পর যারা পর্যায়ক্রমে আবূ বকর, উমার, উছমান ও আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) অপরদিকে রাসূল (ﷺ)-এর মৃত্যুর পর যারা আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে ইসলামের একমাত্র খলীফা হিসাবে মেনে নেয়; তারাই পরবর্তীকালে শী‘আ সম্প্রদায় নামে আত্মপ্রকাশ করে।
[১১]. নিহায়াতুল মুহতাজ, ৬ষ্ঠ খণ্ড (আল-মাকতাবাতুল ইসলামিয়্যাহ), পৃ. ২; আল-আযবুল ফায়েদ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৮; আল-মুগনী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ১৬৫।
[১২]. ইসলামী ফিকহ বিশ্বকোষ-২, ইসলামের পারিবারিক আইন, দ্বিতীয় খণ্ড, (ঢাকা: বাংলাদেশ ল’ রিসার্চ এণ্ড লিগ্যাল এইড সেন্টার, ২০১৬), পৃ. ৪৯৪।
[১৩]. তদেব।
[১৪]. এ কে এম শাহনাওয়াজ, ভারত উপমহাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ; সুলতানি পর্ব, পৃ. ২৯।
[১৫]. এ এম বি হাবিবুল্লাহ, ভারতের মুসলিম শাসনের বুনিয়াদ (ঢাকা: বাংলা একাডেমী), পৃ. ১।
[১৬]. এম. এ. আউয়াল, ইসলামী আইন বিজ্ঞান ও মুসলিম আইন, (ঢাকা: ন্যাশনাল ল’ পাবলিকেশন্স, ২০১৩), পৃ.৬৯।
[১৭]. সুলতানী আমলে দাস রাজবংশ ১২০৬-১২৯০ সাল, খলজি সুলতানগণ ১২৯০-১৩২০ সাল, তুগলক বংশের শাসকেরা ১৩২০ সাল ১৪১৩ সাল, সৈয়দ সুলতানগণ ১৪১৪-১৪৫০ সাল এবং লোদী সুলতানগণ ১৪৫০ সাল থেকে ১৪৬২ সাল দিল্লিকে শাসন করেন।
[১৮]. সম্পাদনা পরিষদ, ইসলামী আইন ও আইন বিজ্ঞান, ৩য় খণ্ড (ঢাকা: ইফাবা, ২০১২), পৃ. ২১৭।
[১৯]. এ কে এম শাহনাওয়াজ, পৃ. ৫৪, ৫৫।
[২০]. মুহাম্মদ মোহর আলী, হিস্টরী অব দ্য মুসলিমস অব বেঙ্গল, খণ্ড.২ (ঢাকা: বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউণ্ডেশন, ১৯৮৫), পৃ. ৬৮৭।
[২১]. তদেব, পৃ. ৭২৪-৭২৫।
[২২]. ভি. ডি কুল শ্রেষ্ঠ, ল্যান্ড মার্কস ইন ইন্ডিয়া লিগ্যাল এন্ড কনস্টিটিউশনাল হিস্টরী, পৃ. ১৮; এবাদুল হক, কাজী, পৃ. ১৪৬।
[২৩]. মুফতি: মুসলিম আইন ব্যাখ্যাকারী বা ইসলাম শাস্ত্রীয় ব্যবস্থা নির্দেশক। ব্যবহারিক বাংলা অভিধান, বা. এ., ১৯৯২।
[২৪]. মুহতাসিব: মধ্যযুগের মুসলিম শাসনামলে মুহতাসিব বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা ছিলেন। ধর্মীয় আইন লংঘনকারীদেও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করা তার দায়িত্ব ছিল। মুহতাসিব দ্রব্যাদির ওজন পরীক্ষা, খাদ্যশস্যেও ভেজাল ও মদ বিক্রয়ের জন্য শাস্তি প্রদান করতেন। মুহতাসিবদের সংশ্লিষ্ট কার্যালয় কাযী-উল-কুযযাতের বিভাগের সাথে সম্পর্ক ছিল। ইবনুল উখুয়ার ‘মা‘আলিমুল কুবরা ফী আহকামিল হিসবা’ নামক একাদশ শতাব্দীর একটি নিবন্ধে মুহতাসিবের পৌর, ধর্মীয় এবং পুলিশী নানাবিধ কর্তব্যের বিষয়ে উল্লেখিত হয়েছে। মুহতাসিব বিচারক ছিলেন না, কোন ঘটনার নিষ্পত্তির জন্য আইনের ব্যাখ্যা ও সাক্ষ্য-প্রমাণের প্রয়োজন হলে তা বিচারকের মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য কাযীর আদালতে পাঠাতেন।  লেভি কর্তৃক উক্ত নিবন্ধ, সংক্ষিপ্ত অনুবাদসহ সম্পাদিত হয়েছে, ই জি ডব্লিউ গিব, মেমোরিয়াল ভলিউমস, লণ্ডন, ১৯৩৮)।
[২৫]. চৌধুরী ড. আব্দুল মমিন, বাংলাদেশের ইতিহাস, পৃ.২৪০; এবাদুল হক, পৃ. ১৪৯-১৫০।
[২৬]. বেবী মওদুদ, বাংলাদেশের নারী (ঢাকা: আগামী প্রকাশনী-১৯৯৪), পৃ. ১৩।




প্রসঙ্গসমূহ »: বিধি-বিধান
মসজিদ: ইসলামী সমাজের প্রাণকেন্দ্র (৩য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (১০ম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
ফাযায়েলে কুরআন (৭ম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
সালাম প্রদানের গুরুত্ব ও মর্যাদা (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আরিফ হুসাইন
ইসলামের দৃষ্টিতে প্রেম ও ভালোবাসা - আব্দুল গাফফার মাদানী
আল-কুরআন এক জীবন্ত মু‘জিযা - আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইউনুস
ব্যভিচার ও ধর্ষণ: সমাধান কোন্ পথে
কুরআনী প্রবাদ সংকলন : তাৎপর্য ও শিক্ষা (শেষ কিস্তি) - প্রফেসর ড. লোকমান হোসেন
বিদ‘আত পরিচিতি (৩২তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
পরবর্তীদের তুলনায় সালাফদের ইলমী শ্রেষ্ঠত্ব (শেষ কিস্তি) - অনুবাদ : আযহার বিন আব্দুল মান্নান
জঙ্গিবাদ বনাম ইসলাম (৩য় কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
ইসলামী উত্তরাধিকার আইনের ধারণা: গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য - ড. মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ

ফেসবুক পেজ