আল-কুরআন তেলাওয়াতের ফযীলত
-আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম*
(৬ষ্ঠ কিস্তি)
৩. কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত
আয়াতুল কুরসী আল্লাহর কিতাবের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত। হাদীছে এসেছে,
عَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَا أَبَا الْمُنْذِرِ أَتَدْرِيْ أَيُّ آيَةٍ مِنْ كِتَابِ اللهِ تَعَالَى مَعَكَ أَعْظَمُ؟ قُلْتُ اللهُ وَرَسُوْلُهُ أَعْلَمُ قَالَ يَا أَبَا الْمُنْذِرِ أَتَدْرِي أَيُّ آيَةٍ مِنْ كِتَابِ اللهِ تَعَالَى مَعَكَ أَعْظَمُ؟ قُلْتُ "اَللّٰہُ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَۚ اَلۡحَیُّ الۡقَیُّوۡمُ" قَالَ فَضَرَبَ فِيْ صَدْرِيْ وَقَالَ لِيَهْنِكَ الْعِلْمُ يَا أَبَا الْمُنْذِرِ.
উবাই ইবনু কা‘ব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে বললেন, হে আবুল মুনযির! তুমি কি জান যে, আল্লাহর কিতাবের মধ্যে তোমার জানা কোন্ আয়াতটি সর্বশ্রেষ্ঠ? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি আবার বললেন, হে আবুল মুনযির! তুমি কি জান যে, আল্লাহর কিতাবের মধ্যে তোমার জানা কোন্ আয়াতটি সর্বশ্রেষ্ঠ? এবার আমি বললাম, اَللّٰہُ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَۚ اَلۡحَیُّ الۡقَیُّوۡمُ। উবাই (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, এ সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমার বুকে আঘাত করে করলেন এবং বললেন, হে আবুল মুনযির! জ্ঞান তোমাকে পরিতৃপ্ত করুক।[১]
৪. সকাল-সন্ধ্যা পাঠ করার ফযীলত
যে ব্যক্তি সকালে আয়াতুল কুরসী পড়বে তাকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জিন শয়তানদের থেকে হেফাজতে রাখা হবে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় তা পড়বে সকাল পর্যন্ত তাকে জিন শয়তানদের থেকে হেফাজতে রাখা হবে। হাদীছে এসেছে, উবাই ইবনু কা‘ব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। জিন তাঁর নিকট এসে তাঁকে বলেছেন,
إِذَا قَرَأْتَهَا غُدْوَةً أُجِرْتَ مِنَّا حَتَّى تُمْسِيَ، وَإِذَا قَرَأْتَهَا حِيْنَ تُمْسِيْ أُجِرْتَ مِنَّا حَتَّى تُصْبِحَ، قَالَ أُبَيٌّ فَغَدَوْتُ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فَأَخْبَرْتُهُ بِذَلِكَ، فَقَالَ: ্রصَدَقَ الْخَبِيثُগ্ধ .
‘যখন তুমি তা (আয়াতুল কুরসী) সকালে পাঠ করবে, সন্ধ্যা পর্যন্ত তোমাকে আমাদের নিকট হতে হেফাজতে রাখা হবে। আর সন্ধ্যায় পড়লে সকাল পর্যন্ত হেফাজতে রাখা হবে। উবাই (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি সকালে এসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে ঘটনা বললাম, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, খবীছ তথা জিন সত্য বলেছে।[২]
সূরা আল-বাক্বারাহর শেষ দু’টি আয়াত তেলাওয়াত করার ফযীলত
সূরা আল-বাক্বারাহর শেষ দু’টি আয়াত তেলাওয়াতের ফযীলত অত্যধিক। এ দু’টি আয়াত সকল প্রকার বিপদাপদ ও অনিষ্ট থেকে মুক্ত রাখে এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে নিরাপত্তা লাভ করা যায়। যেমন-
১. ঘুমানোর পূর্বে পাঠ করার ফযীলত
কেউ যদি রাতে ঘুমানোর পূর্বে সূরা আল-বাক্বারাহর শেষ দু’টি আয়াত পাঠ করে, সেটা তার ক্বিয়ামুল লাইলের তথা তাহাজ্জুদের জন্য যথেষ্ট এবং বিভিন্ন প্রকার বিপদাপদ ও অনিষ্ট থেকে মুক্ত থাকার জন্য যথেষ্ট।[৩] ঐ রাতে শয়তান তার কাছে আসতে পারবে না এবং মর্যাদা ও ছওয়াব অর্জনে তার জন্য তা যথেষ্ট হবে।[৪] হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَلْآيَتَانِ مِنْ آخَرِ سُوْرَةِ الْبَقَرَةِ مَنْ قَرَأَ بِهِمَا فِيْ لَيْلَةٍ كَفَتَاهُ.
আবূ মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘সূরা আল-বাক্বারার শেষ দুই আয়াত যে রাতে পড়বে তার জন্য তা যথেষ্ট হবে’।[৫] ইবনু খুযায়মা (রাহিমাহুল্লাহ) ‘ক্বিয়ামুল লাইলে সর্বনিম্ন যতটুকু ক্বেরাত যথেষ্ট’ এবিষয়ে অধ্যায় রচনা করে বলেন, আর এখানে যথেষ্ট হবে এর অর্থ হল, ঐ রাতে তার পাপের বিপরীতে ঐ দুই আয়াত যথেষ্ট হবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে আমাদের প্রতিপালক আমরা যদি ভূলে যাই অথবা ভুল করি তবে আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না (সূরা আল-বাক্বারাহ, আয়াত : ২৮৬)। আল্লাহই অধিক জ্ঞাত।[৬]
২. শয়তান থেকে সুরক্ষা
যে ঘরে তিন রাত এ দু’টি আয়াত তেলাওয়াত করা হয়, শয়তান সে ঘরের নিকট আসতে পারে না। হাদীছে এসেছে,
عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ اللهَ كَتَبَ كِتَابًا قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ بِأَلْفَيْ عَامٍ أَنْزَلَ مِنْهُ آيَتَيْنِ خَتَمَ بِهِمَا سُوْرَةَ الْبَقَرَةِ وَلَا تُقْرَآنِ فِيْ دَارٍ ثَلَاثَ لَيَالٍ فَيَقْرَبُهَا الشَّيْطَانُ.
নু‘মান ইবনু বাশীর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা আসমান ও যমীন সৃষ্টি করার দুই হাযার বছর পূর্বে একটি কিতাব লিখেছেন, যা হতে দু’টি আয়াত নাযিল করে তা দ্বারা সূরা আল-বাক্বারাহ সমাপ্ত করেছেন। এমন হতে পারে না যে, কোন ঘরে তা তিন রাত্রি পড়া হবে আর তারপরও শয়তান তার নিকটে যাবে’।[৭]
৩. প্রার্থনা মঞ্জুরের মাধ্যম
সূরা আল-বাক্বারার শেষ দু’টি আয়াত নূরের জ্যোতি। এর একটি অক্ষর পাঠের মাধ্যমে চাওয়া বস্তুও দেয়া হবে। হাদীছে এসেছে,
عَن ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ بَيْنَمَا جِبْرِيْلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَاعِدٌ عِنْدَ النَّبِيِّ ﷺ سَمِعَ نَقِيْضًا مِنْ فَوْقِهِ فَرَفَعَ رَأْسَهُ فَقَالَ هَذَا بَابٌ مِنَ السَّمَاءِ فُتِحَ الْيَوْمَ لَمْ يُفْتَحْ قَطُّ إِلَّا الْيَوْمَ فَنَزَلَ مِنْهُ مَلَكٌ فَقَالَ هَذَا مَلَكٌ نَزَلَ إِلَى الْأَرْضِ لَمْ يَنْزِلْ قَطُّ إِلَّا الْيَوْمَ فَسَلَّمَ وَقَالَ أَبْشِرْ بِنُوْرَيْنِ أُوْتِيْتَهُمَا لَمْ يُؤْتَهُمَا نَبِيٌّ قَبْلَكَ فَاتِحَةُ الْكِتَابِ وَخَوَاتِيْمُ سُوْرَةِ الْبَقَرَةِ لَنْ تَقْرَأَ بِحَرْفٍ مِنْهُمَا إِلَّا أُعْطِيْتَهُ.
ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সময় জিবরীল (আলাইহিস সালাম) নবী করীম (ﷺ)-এর নিকট বসে ছিলেন, এমন সময় উপর দিক হতে একটি দরজা খোলার শব্দ শুনলেন। ফলে তিনি তাঁর মাথা উপরে উঠালেন এবং বললেন, আসমানের এই যে দরজাটি আজ খোলা হল, এই দরজা এদিনের পূর্বে আর কোন দিন খোলা হয়নি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, সে দরজা হতে একজন ফেরেশতা যমীনে নামলেন। তখন জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেন, এই যে, ফেরেশতা যমীনে নামলেন, তিনি এদিন ছাড়া ইতিপূর্বে কোন দিন যমীনে নামেননি। অতঃপর তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে সালাম দিলেন এবং বললেন, দু’টি জ্যোতির সুসংবাদ গ্রহণ করুন, যা আপনাকে দেয়া হয়েছে এবং আপনার পূর্বে কোন নবীকে দেয়া হয়নি; সূরা আল-ফাতিহা ও সূরা আল-বাক্বারাহর শেষাংশ। আপনি তার যে অক্ষরই তেলাওয়াত করবেন, আপনাকে তারই প্রতিদান দেয়া হবে।[৮]
৪. মি‘রাজের রাতে মহান আল্লাহ প্রদত্ত উপহার
عَنْ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لَمَّا أُسْرِيَ بِرَسُوْلِ اللهِ ﷺ انْتُهِيَ بِهِ إِلَىْ سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى وَهِيَ فِي السَّمَاءِ السَّادِسَةِ إِلَيْهَا يَنْتَهِيْ مَا يُعْرَجُ بِهِ مِنَ الْأَرْضِ فَيُقْبَضُ مِنْهَا وَإِلَيْهَا يَنْتَهِيْ مَا يُهْبَطُ بِهِ مِنْ فَوْقِهَا فَيُقْبَضُ مِنْهَا قَالَ "اِذۡ یَغۡشَی السِّدۡرَۃَ مَا یَغۡشٰی"[النجم : ১৬] قَالَ فَرَاشٌ مِنْ ذَهَبٍ قَالَ فَأُعْطِيَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ ثَلَاثًا أُعْطِيَ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسَ وَأُعْطِيَ خَوَاتِيْمَ سُوْرَةِ الْبَقَرَةِ وَغُفِرَ لِمَنْ لَمْ يُشْرِكْ باللهِ مِنْ أُمَّتِهِ شَيْئًا الْمُقْحِمَاتُ.
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, যে রাতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে ভ্রমন করানো হল, তাকে সিদরাতুল মুনতাহায় পৌঁছানো হয়েছে। আর তা ষষ্ঠ আসমানে অবস্থিত। (তাকে সিদরাতুল মুনতাহা এই জন্যই বলা হয়) ভূপৃষ্ঠ হতে যা কিছু উর্ধ্বজগতে উত্থিত হয়, সেটাই তার শেষ সীমা এবং সেখান হতে কোন মাধ্যম ব্যতীত তা উপরে উঠিয়ে নেয়া হয়। আর ঊর্ধ্বজগত হতে যা কিছু অবতরণ করা হয়, তা সেই স্থান হতে পৌঁছে এবং তথা হতে গ্রহণ করা হয়। এরপর ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ করলেন, ‘তখন সিদরাহ বৃক্ষটি, যার দ্বারা আচ্ছাদিত হবার তার দ্বারা আচ্ছাদিত হচ্ছিল’ (সূরা আন-নাজম : ১৬)। তিনি বলেছেন, এইগুলো ছিল স্বর্ণের পতঙ্গ। অতঃপর ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, মি‘রাজের রাতে রাসূলুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে তিনটি জিনিস প্রদান করা হয়েছে। ১. পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত, ২. সূরা আল-বাক্বারার শেষ কয়েকটি আয়াত[৯] এবং ৩. নবী করীম (ﷺ)-এর উম্মাতের মধ্য হতে যারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করে না, তাদের মাফ করার ওয়াদা দেয়া হয়।[১০]
সূরা আলে ‘ইমরানের শেষ দশটি আয়াত তেলাওয়াত করার ফযীলত
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّهُ بَاتَ عِنْدَ مَيْمُونَةَ أُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا وَهِيَ خَالَتُهُ قَالَ فَاضْطَجَعْتُ عَلَى عَرْضِ الْوِسَادَةِ وَاضْطَجَعَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ وَأَهْلُهُ فِيْ طُوْلِهَا فَنَامَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ حَتَّى انْتَصَفَ اللَّيْلُ أَوْ قَبْلَهُ بِقَلِيْلٍ أَوْ بَعْدَهُ بِقَلِيْلٍ ثُمَّ اسْتَيْقَظَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ فَجَلَسَ فَمَسَحَ النَّوْمَ عَنْ وَجْهِهِ بِيَدِهِ ثُمَّ قَرَأَ الْعَشْرَ آيَاتٍ خَوَاتِيْمَ سُوْرَةِ آلِ عِمْرَانَ.
ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, তিনি তাঁর খালা উম্মুল মুমিনীন মাইমুনা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর ঘরে রাত কাটালেন। তিনি বলেন, আমি বালিশের প্রস্থের দিকে শুয়ে পড়লাম, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এবং তাঁর সহধর্মিণী বালিশের দৈর্ঘ্যে শয়ন করলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মধ্যরাত বা তার কিছু আগে বা পর পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জেগে উঠে বসলেন এবং দু’হাতে মুখমণ্ডল মুছে ঘুমের আমেজ দূর করলেন। এরপর তিনি সূরা আলে ‘ইমরানের শেষ দশ আয়াত তেলাওয়াত করলেন।[১১]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ بِتُّ عِنْدَ خَالَتِيْ مَيْمُوْنَةَ لَيْلَةً وَالنَّبِىُّ ﷺ عِنْدَهَا فَتَحَدَّثَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ مَعَ أَهْلِهِ سَاعَةً ثُمَّ رَقَدَ فَلَمَّا كَانَ ثُلُثُ اللَّيْلِ الْآخِرِ أَوْ بَعْضُهُ قَعَدَ فَنَظَرَ إِلَى السَّمَاءِ فَقَرَأَ (اِنَّ فِیۡ خَلۡقِ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ اخۡتِلَافِ الَّیۡلِ وَ النَّہَارِ لَاٰیٰتٍ لِّاُولِی الۡاَلۡبَابِ) حَتَّى خَتَمَ السُّوْرَةَ.
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি আমার খালা মায়মূনার গৃহে রাত্রি যাপন করলাম, আর নবী করীম (ﷺ) সেই রাতে তাঁর গৃহেই ছিলেন। তিনি তাঁর পরিবারের সাথে কিছু সময় আলাপ করলেন, অতঃপর নিদ্রায় গেলেন। অতঃপর যখন রাত্রির শেষ তৃতীয়াংশ অথবা কিছু বাকি ছিল, তখন তিনি উঠলেন এবং আকাশের দিকে তাকিয়ে তেলাওয়াত করতে লাগলেন, ‘নিশ্চয় আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি এবং রাত্র-দিনের পরিবর্তনের মধ্যে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শনসমূহ আছে’ (সূরা আলে ‘ইমরান, আয়াত : ১৯০)। এমনকি তিনি সূরা শেষ করে ফেললেন।[১২]
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, مَنْ قَرَأَ آلَ عِمْرَانَ فَهُوَ غَنِيٌّ ‘যে ব্যক্তি সূরা আলে ‘ইমরান পড়বে সে অমুখাপেক্ষী হবে’।[১৩] মাকহূল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিনে সূরা আলে ‘ইমরান পড়বে, ফেরেশতাগণ তার জন্য রাত পর্যন্ত দু‘আ করতে থাকবেন’।[১৪]
আল-কুরআনের বিশেষ বিশেষ সূরা তেলাওয়াত করার ফযীলত
সমস্ত কুরআনই ফযীলতপূর্ণ। এরপরও আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ﷺ) কুরআনের বিভিন্ন সূরাকে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। যা তেলাওয়াতের বিশেষ ফযীলত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজে তেলাওয়াত করেও সেগুলোর মর্যাদা দান করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ نُنَزِّلُ مِنَ الۡقُرۡاٰنِ مَا ہُوَ شِفَآءٌ وَّ رَحۡمَۃٌ لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ ۙ وَ لَا یَزِیۡدُ الظّٰلِمِیۡنَ اِلَّا خَسَارًا.
‘আর আমরা কুরআন নাযিল করি যা মুমিনদের জন্য শিফা ও রহমত, কিন্তু তা যালিমদের ক্ষতিই বাড়িয়ে দেয়’ (সূরা বানী ইসরাঈল, আয়াত : ৮২)। আল্লাহ আল্লাহ বলেন,
اِنَّ رَبَّکَ یَعۡلَمُ اَنَّکَ تَقُوۡمُ اَدۡنٰی مِنۡ ثُلُثَیِ الَّیۡلِ وَ نِصۡفَہٗ وَ ثُلُثَہٗ وَ طَآئِفَۃٌ مِّنَ الَّذِیۡنَ مَعَکَ ؕ وَ اللّٰہُ یُقَدِّرُ الَّیۡلَ وَ النَّہَارَ ؕ عَلِمَ اَنۡ لَّنۡ تُحۡصُوۡہُ فَتَابَ عَلَیۡکُمۡ فَاقۡرَءُوۡا مَا تَیَسَّرَ مِنَ الۡقُرۡاٰنِ ؕ عَلِمَ اَنۡ سَیَکُوۡنُ مِنۡکُمۡ مَّرۡضٰی ۙ وَ اٰخَرُوۡنَ یَضۡرِبُوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ یَبۡتَغُوۡنَ مِنۡ فَضۡلِ اللّٰہِ ۙ وَ اٰخَرُوۡنَ یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ۫ۖ فَاقۡرَءُوۡا مَا تَیَسَّرَ مِنۡہُ ۙ وَ اَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتُوا الزَّکٰوۃَ وَ اَقۡرِضُوا اللّٰہَ قَرۡضًا حَسَنًا ؕ وَ مَا تُقَدِّمُوۡا لِاَنۡفُسِکُمۡ مِّنۡ خَیۡرٍ تَجِدُوۡہُ عِنۡدَ اللّٰہِ ہُوَ خَیۡرًا وَّ اَعۡظَمَ اَجۡرًا ؕ وَ اسۡتَغۡفِرُوا اللّٰہَ ؕ اِنَّ اللّٰہَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ .
‘অবশ্যই আপনার রব জানেন যে, আপনি রাতের দুই তৃতীয়াংশের কিছু কম, অথবা অর্ধরাত অথবা রাতের এক তৃতীয়াংশ দাঁড়িয়ে থাকেন (ইবাদত করার জন্য) এবং আপনার সাথে যারা আছে তাদের মধ্য থেকে একটি দলও (দাঁড়িয়ে ইবাদত করে)। আর আল্লাহ রাত ও দিন নিরূপণ করেন। তিনি জানেন যে, তোমরা তা করতে সক্ষম হবে না। তাই তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমা পরবশ হয়েছেন। অতএব তোমরা কুরআন থেকে যতটুকু সহজ ততটুকু পড়। তিনি জানেন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে। আর কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে পৃথিবীতে ভ্রমণ করবে, আর কেউ কেউ আল্লাহর পথে লড়াই করবে। অতএব তোমরা কুরআন থেকে যতটুকু সহজ ততটুকু পড়। আর ছালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। আর তোমরা নিজেদের জন্য মঙ্গলজনক যা কিছু অগ্রিম পাঠাবে তোমরা তা আল্লাহর কাছে পাবে উহাকে উৎকৃষ্টতর এবং প্রতিদান হিসাবে মহত্তর। আর তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল পরম দয়ালু’ (সূরা আল-মুয্যাম্মিল, আয়াত : ২০)।
নির্দিষ্ট কতিপয় সূরা মুখস্থ করার ফযীলত
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ مَنْ أَخَذَ السَّبْعَ الْأُوْلَ مِنَ الْقُرْآنِ فَهُوَ حَبْرٌ.
আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআনের প্রথম সাতটি সূরা মুখস্থ করবে সে জ্ঞানী’।[১৫] সাতটি সূরা হল- সূরা আল-বাক্বারাহ, আলে ‘ইমরান, আন-নিসা, আল-মায়িদাহ, আল-আন‘আম, আল-আ‘রাফ ও আত-তওবাহ। তবে সাঈদ ইবনু জুবাইর (রাহিমাহুল্লাহ) সূরা আত-তওবাহর পরিবর্তে সূরা ইউনুসকে গণ্য করেছেন।[১৬]
সূরা ‘আল-ফাতিহা’ তেলাওয়াত করার ফযীলত
সূরা আল-ফাতিহা কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ ও মাহাত্ম্যপূর্ণ সূরা। এটা হল সূরাতুল হামদ[১৭], ফাতিহাতুল কিতাব[১৮], উম্মুল কুরআন[১৯], উম্মুল কিতাব[২০], সাবঊল মাছানী[২১] এবং কুরআনুল আযীম।[২২] আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ لَقَدۡ اٰتَیۡنٰکَ سَبۡعًا مِّنَ الۡمَثَانِیۡ وَ الۡقُرۡاٰنَ الۡعَظِیۡمَ.
‘আর আমরা তো আপনাকে দিয়েছি সাতটি আয়াত যা বারবার পাঠ করা হয় এবং দিয়েছি মহা কুরআন’ (সূরা আল হিজর, আয়াত : ৮৭)।
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أُمُّ الْقُرْآنِ هِىَ السَّبْعُ الْمَثَانِىْ وَالْقُرْآنُ الْعَظِيْمُ.
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘উম্মুল কুরআন (সূরা আল-ফাতিহা) হচ্ছে বারবার পঠিত সাতটি আয়াত এবং মহা কুরআন’।[২৩]
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
قَسَمْتُ الصَّلَاةَ بَيْنِيْ وَبَيْنَ عَبْدِيْ نِصْفَيْنِ وَلِعَبْدِيْ مَا سَأَلَ فَإِذَا قَالَ الْعَبْدُ (اَلۡحَمۡدُ لِلّٰہِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ) قَالَ اللهُ تَعَالَى حَمِدَنِيْ عَبْدِيْ وَإِذَا قَالَ (الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ ) قَالَ اللهُ تَعَالَى أَثْنَى عَلَيَّ عَبْدِيْ وَإِذَا قَالَ (مٰلِکِ یَوۡمِ الدِّیۡنِ) قَالَ مَجَّدَنِيْ عَبْدِيْ وَإِذا قَالَ ( اِیَّاکَ نَعۡبُدُ وَ اِیَّاکَ نَسۡتَعِیۡنُ ) قَالَ هَذَا بَيْنِيْ وَبَيْنَ عَبْدِيْ وَلِعَبْدِيْ مَا سَأَلَ فَإِذَا قَالَ ( اِہۡدِ نَا الصِّرَاطَ الۡمُسۡتَقِیۡمَ - صِرَاطَ الَّذِیۡنَ اَنۡعَمۡتَ عَلَیۡہِمۡ غَیۡرِ الۡمَغۡضُوۡبِ عَلَیۡہِمۡ وَ لَا الضَّآلِّیۡنَ ) قَالَ هَذَا لِعَبْدِيْ وَلِعَبْدِيْ مَا سَأَلَ.
‘আমি সূরা ফাতিহাকে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে অর্ধেক অর্ধেক করে ভাগ করেছি। আর আমার বান্দার জন্য রয়েছে যা সে চাইবে। বান্দা যখন বলে, اَلۡحَمۡدُ لِلّٰہِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ । তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করল। বান্দা যখন বলে, الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার বান্দা আমার গুণ ব্যক্ত করল। বান্দা যখন বলে مٰلِکِ یَوۡمِ الدِّیۡنِ। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার বান্দা আমার মর্যাদা বর্ণনা করল। বান্দা যখন বলে, اِیَّاکَ نَعۡبُدُ وَ اِیَّاکَ نَسۡتَعِیۡنُ । তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এটা আমার ও আমার বান্দার মধ্যে অর্ধেক অর্ধেক এবং আমার বান্দার জন্য তাই যা সে চায়। বান্দা যখন বলে, اِہۡدِ نَا الصِّرَاطَ الۡمُسۡتَقِیۡمَ- صِرَاطَ الَّذِیۡنَ اَنۡعَمۡتَ عَلَیۡہِمۡ- غَیۡرِ الۡمَغۡضُوۡبِ عَلَیۡہِمۡ وَ لَا الضَّآلِّیۡنَ । তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এটা আমার বান্দার জন্য এবং আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, যা সে চায়।[২৪]
عَن ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ بَيْنَمَا جِبْرِيْلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَاعِدٌ عِنْدَ النَّبِيِّ ﷺ سَمِعَ نَقِيْضًا مِنْ فَوْقِهِ فَرَفَعَ رَأْسَهُ فَقَالَ هَذَا بَابٌ مِنَ السَّمَاءِ فُتِحَ الْيَوْمَ لَمْ يُفْتَحْ قَطُّ إِلَّا الْيَوْمَ فَنَزَلَ مِنْهُ مَلَكٌ فَقَالَ هَذَا مَلَكٌ نَزَلَ إِلَى الْأَرْضِ لَمْ يَنْزِلْ قَطُّ إِلَّا الْيَوْمَ فَسَلَّمَ وَقَالَ أَبْشِرْ بِنُوْرَيْنِ أُوْتِيْتَهُمَا لَمْ يُؤْتَهُمَا نَبِيٌّ قَبْلَكَ فَاتِحَةُ الْكِتَابِ وَخَوَاتِيْمُ سُوْرَةِ الْبَقَرَةِ لَنْ تَقْرَأَ بِحَرْفٍ مِنْهُمَا إِلَّا أُعْطِيْتَهُ.
ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সময় জিবরীল (আলাইহিস সালাম) নবী করীম (ﷺ)-এর নিকট বসে ছিলেন, এমন সময় উপর দিক হতে একটি দরজা খোলার শব্দ শুনলেন। ফলে তিনি তাঁর মাথা উপরে উঠালেন এবং বললেন, আসমানের এই যে দরজাটি আজ খোলা হল, এই দরজা এদিনের পূর্বে আর কোন দিন খোলা হয়নি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, সে দরজা হতে একজন ফেরেশতা যমীনে নামলেন। তখন জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেন, এই যে, ফেরেশতা যমীনে নামলেন, তিনি এদিন ছাড়া ইতিপূর্বে কোন দিন যমীনে নামেননি। অতঃপর তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে সালাম দিলেন এবং বললেন, দু’টি জ্যোতির সুসংবাদ গ্রহণ করুন, যা আপনাকে দেয়া হয়েছে এবং আপনার পূর্বে কোন নবীকে দেয়া হয়নি; সূরা আল-ফাতিহা ও সূরা আল-বাক্বারাহর শেষাংশ। আপনি তার যে অক্ষরই তেলাওয়াত করবেন, আপনাকে তারই প্রতিদান দেয়া হবে।[২৫]
عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ بْنِ الْمُعَلَّى رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كُنْتُ أُصَلِّيْ فِي الْمَسْجِدِ فَدَعَانِيَ النَّبِيُّ ﷺ فَلَمْ أُجِبْهُ حَتّٰى صَلَّيْتُ ثُمَّ أَتَيْتُهُ فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ! إِنِّيْ كُنْتُ أُصَلِّيْ فَقَالَ أَلَمْ يَقُلِ اللهُ إِسْتَجِيْبُوْا لِلهِ وَلِلرَّسُوْلِ إِذَا دَعَاكُمْ ثمَّ قَالَ أَلَا أُعَلِّمُكَ أَعْظَمَ سُوْرَةٍ فِي الْقُرْآنِ قَبْلَ أَنْ تَخْرُجَ مِنَ الْمَسْجِدِ فَأَخَذَ بِيَدِيْ فَلَمَّا أَرَادْنَا أَنْ نَخْرُجَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ! إِنَّكَ قُلْتَ لَأُعَلِّمَنَّكَ سُوْرَةً هِىَ أَعْظَمُ سُوْرَةٍ فِى الْقُرْآنِ قَالَ الْحَمْدُ لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ هِىَ السَّبْعُ الْمَثَانِىْ وَالْقُرْآنُ الْعَظِيْمُ الَّذِىْ أُوْتِيْتُهُ.
আবূ সাঈদ ইবনু মু‘আল্লা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মসজিদে ছালাত পড়ছিলাম। এমন সময় নবী করীম (ﷺ) আমাকে ডাকলেন, আমি ছালাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত জবাব দিলাম না। অতঃপর তাঁর নিকট গিয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমি ছালাত আদায় করছিলাম। তিনি বললেন, ‘আল্লাহ কি বলেননি যে, আল্লাহ এবং রাসূল (ﷺ)-এর জওবাব দাও, যখন তারা ডাকেন’। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, আমি কি তোমাকে মসজিদ হতে বের হওয়ার পূর্বেই কুরআনের শ্রেষ্ঠতর সূরা শিখিয়ে দেব না? অতঃপর তিনি আমার হাত ধরলেন। তারপর যখন আমরা বের হতে ইচ্ছা করলাম, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আপনি বলেছিলেন যে, আমি তোমাকে কুরআনের শ্রেষ্ঠ সূরা শিখাব? তখন তিনি বললেন, ‘আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল ‘আলামীন’। এটি সাতটি পুনরাবৃত্ত আয়াত এবং মহিমান্বিত কুরআন, যা আমাকে দেয়া হয়েছে।[২৬]
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
* পি-এইচ. ডি গবেষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
[১]. ছহীহ মুসলিম, হা/৮১০; মুসতাদরাক হাকিম, হা/৫৩২৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৩১৫; মিশকাত, হা/২১২২।
[২]. মুসতাদরাক হাকিম, হা/২০৬৪; হাকিম, যাহাবী, ইবনু হিব্বান, আলবানী (রাহিমাহুমুল্লাহ) এ হাদীছের সনদকে ছহীহ বলেছেন। হায়ছামী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, বর্ণনাকারী ছিক্বাহ। মুনযিরী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, সনদ জায়্যিদ। দ্র. আযকারু ওয়া আ’দাবুছ ছাবাহি ওয়াল মাসাই, পৃ. ৮।
[৩]. ইমাম নববী, আত-তিবইয়ান ফী আদাবি হামালাতিল কুরআন (বৈরূত : দারু ইবনু হাযম, ৩য় সংস্করণ, ১৪১৪ হি.), পৃ. ১৮১।
[৪]. আব্দুল্লাহ ইবনু ছলিহ আল-উবাইল, ফাযাইলুল আ‘মাল (কুয়েত : দারু ইলাফিন আদ-দাওলিয়া, ২০১৫ হি.), পৃ. ২৮১।
[৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৪০০৮, ৫০০৯; ছহীহ মুসলিম, হা/৮০৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১০৯; তিরমিযী, হা/২৮৮১; আবূ দাঊদ, হা/১৩৯৭; ইবনু মাজাহ, হা/১৩৬৮; ছহীহ ইবনু খুযাইমা, হা/১১৪১; ছহীহ ইনবু হিব্বান, হা/৭৮১; দারেমী, হা/১৪৮৭; মিশকাত, হা/২১২৫।
[৬]. ছহীহ ইবনু খুযাইমা, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৭৯, হা/১১৪১-এর অনুচ্ছেদ দ্রষ্টব্য; ফাযাইলুল আ‘মাল, পৃ. ২৮১।
[৭]. তিরমিযী, হা/২৮৮২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৪৩৮; দারেমী, হা/৩৩৮৭; মিশকাত, ২১৪৫, সনদ ছহীহ।
[৮]. ছহীহ মুসলিম, হা/৮০৬, ‘ছালাতুল মুসাফিরীন ওয়া ক্বাছরিহা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪৩; মিশকাত, হা/২১২৪।
[৯]. সূরা আল-বাক্বারার শেষ কয়েকটি আয়াত বলতে শেষ দু’ আয়াত উদ্দেশ্য। দ্রষ্টব্য : আব্দুর রহমান মুবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াজী (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, তা. বি.), ৯ম খণ্ড, পৃ. ১১৬।
[১০]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৭৩।
[১১]. ছহীহ বুখারী, হা/১১৯৮; ছহীহ মুসলিম, হা/৭৬৩।
[১২]. ছহীহ মুসলিম, হা/৭৬৩; মিশকাত, হা/১১৯৫।
[১৩]. দারেমী, হা/৩৩৯৫, সনদ যায়্যিদ।
[১৪]. দারেমী, হা/৩৩৯৭; মিশকাত, হা/২১৭২, সনদ মওকূফ ছহীহ।
[১৫]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৫৭৫, সনদ হাসান, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২৩০৫।
[১৬]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/৭৪৯।
[১৭]. ‘সূরাতুল হামদ’ বলা হয় সূরা আল-ফাতিহাকে। কেননা এ সূরার মধ্যে আল্লাহর প্রশংসা আলোচিত হয়েছে; দ্র. ছহীহ মুসলিম, হা/৩৯৫; মিশকাত, হা/৮২৩।
[১৮]. ‘ফাতিহাতুল কিতাব’ বলা হয় সূরা আল-ফাতিহাকে। কেননা এ সূরার মাধ্যমে কুরআন শুরু হয়েছে।
[১৯]. ‘উম্মুল কুরআন’ বলা হয় সূরা আল-ফাতিহাকে। কুরআন মাজীদের সকল বিষয়বস্তু এর মধ্যে সংক্ষেপে রয়েছে বলে ‘উম্মুল কুরআন’ অর্থাৎ কুরআনের মা বলা হয়।
[২০]. সূরা আল-ফাতিহাকে উম্মুল কিতাব (কিতাবের মূল) হিসাবে নামকরণ করা হয়েছে এজন্য যে, সূরা আল-ফাতিহা লেখা দ্বারাই কুরআন গ্রন্থাকারে লেখা শুরু হয়েছে এবং এ সূরা পাঠের মাধ্যমে ছালাতও আরম্ভ করা হয়। দ্র. ছহীহ বুখারী, ‘ফাযায়েলে কুরআন’ অধ্যায়; অনুচ্ছেদ-৬৫।
[২১]. ‘সাবঊল মাছানী’ বলা হয় সূরা আল-ফাতিহাকে। কেননা এ সূরা বার বার পাঠ করা হয়। ছালাতে প্রত্যেক রাকা‘আতে পাঠ করা হয়। দ্র. সূরা আল হিজর, আয়াত : ৮৭; ছহীহ বুখারী, হা/৪৭০৪; ‘তাফসীরুল কুরআন’ অধ্যায়; অনুচ্ছেদ-৬৫।
[২২]. ‘কুরআনুল আযীম’ বলা হয় সূরা আল-ফাতিহাকে। কেননা এ সূরায় কুরআনের সকল জ্ঞান একত্রিত করা হয়েছে। আল্লাহর প্রশংসা, তাঁর ইবাদতের নির্দেশ এবং ছিরাতে মুস্তাক্বীমের মিনতি করা হয় এই সূরাতে। দ্র. সূরা আল-ফাতিহা, আয়াত : ১-৭; সূরা আল হিজর, আয়াত : ৮৭; ছহীহ বুখারী, হা/৪৭০৪; ‘তাফসীরুল কুরআন’ অধ্যায়; অনুচ্ছেদ-৬৫।
[২৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৭০৪; ‘তাফসীরুল কুরআন’ অধ্যায়; অনুচ্ছেদ-৬৫।
[২৪]. ছহীহ মুসলিম, হা/৩৯৫; মিশকাত, হা/৮২৩।
[২৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/৮০৬, ‘ছালাতুল মুসাফীরিন ওয়া ক্বাছরিহা’ অধ্যায়; অনুচ্ছেদ-৪৩; মিশকাত, হা/২১২৪।
[২৬]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৪৭৪, ‘তাফসীরুল কুরআন’ অধ্যায়; অনুচ্ছেদ-১; মিশকাত, হা/২১১৮।