আল-কুরআন তেলাওয়াতের ফযীলত
-আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম*
(২য় কিস্তি)
কুরআন তেলাওয়াতের সময় প্রশান্তি এবং ফেরেশতা অবতীর্ণ হয়
কুরআন তেলাওয়াতের সময় আল্লাহর রহমত, বরকত, দয়া ও প্রশান্তি অবতীর্ণ হয় এবং অসংখ্য ফেরেশতা উপস্থিত থাকেন। হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ أُسَيْدَ بْنَ حُضَيْرٍ قَالَ بَيْنَمَا هُوَ يَقْرَأُ مِنَ اللَّيْلِ سُوْرَةَ الْبَقَرَةِ وَفَرَسُهُ مَرْبُوْطَةٌ عِنْدَهُ إِذْ جَالَتِ الْفَرَسُ فَسَكَتَ فَسَكِنَتْ فَقَرَأَ فَجَالَتْ فَسَكَتَ فَسَكِنَتْ ثُمَّ قَرَأَ فَجَالَتِ الْفَرَسُ فَانْصَرَفَ وَكَانَ ابْنُهُ يَحْيٰى قَرِيْبًا مِنْهَا فَأَشْفَقَ أَنْ تُصِيْبَهُ وَلَمَّا أَخَّرَهُ رَفْعَ رَأْسَهُ إِلٰى السَّمَاءِ فَإِذَا مِثْلُ الظُّلَّةِ فِيْهَا أَمْثَالُ الْمَصَابِيْحِ فَلَمَّا أَصْبَحَ حَدَّثَ النَّبِيَّ ﷺ فَقَالَ إِقْرَأْ يَا ابْنَ حُضَيْرٍ! اقْرَأْ يَا ابْنَ حُضَيْرٍ! قَالَ فَأَشْفَقْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ أَنْ تَطَأَ يَحْيٰى وَكَانَ مِنْهَا قَرِيْبًا فَانْصَرَفْتُ إِلَيْهِ وَرَفَعْتُ رَأْسِيْ إِلَى السَّمَاءِ فَإِذَا مِثْلُ الظُّلَّةِ فِيْهَا أَمْثَالُ الْمَصَابِيْحِ فَخَرَجْتُ حَتَّى لَا أَرَاهَا قَالَ وَتَدْرِيْ مَا ذَاكَ؟ قَالَ لَا قَالَ تِلْكَ الْمَلَائِكَةُ دَنَتْ لِصَوْتِكَ وَلَوْ قَرَأْتَ لَأَصْبَحْتَ يَنْظُرُ النَّاسُ إِلَيْهَا لَا تَتَوَارَى مِنْهُمْ
আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, ছাহাবী উসাইদ ইবনু হুযাইর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এক রাতে সূরা আল-বাক্বারাহ পড়ছিলেন, তখন তাঁর কাছে ঘোড়া বাঁধা ছিল। হঠাৎ ঘোড়া লাফিয়ে উঠল। তিনি চুপ করলেন, ঘোড়া শান্ত হল। আবার তিনি পড়তে শুরু করলেন, আবার ঘোড়া লাফিয়ে উঠল। তিনি চুপ করলেন, ঘোড়া শান্ত হল। পুনরায় তিনি পড়া আরম্ভ করলেন, পুনরায় ঘোড়া লাফিয়ে উঠল। এবার তিনি ক্ষান্ত দিলেন। কেননা তাঁর পুত্র ইয়াহ্ইয়া ঘোড়ার নিকটে শয়ন করা ছিল। তিনি আশঙ্কা করলেন, তার কোন বিপদ হয় কি-না? এরপর তিনি তাকে দূরে সরিয়ে আকাশের দিকে মাথা উঠালেন এবং দেখলেন, শামিয়ানার ন্যায়, যাতে বাতিসমূহের মত রয়েছে। যখন তিনি সকাল উঠলেন, তখন নবী করীম (ﷺ)-কে এটা জানালেন। তখন তিনি বললেন, হে ইবনু হুযাইর! তুমি পড়তে থাকলে না কেন? হে ইবনু হুযাইর! তুমি পড়তে থাকলে না কেন? তখন ইবনু হুযাইর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমার ঘোড়া ইয়াহইয়াকে মাড়িয়ে দেবার ভয় করছিলাম। আর সে ছিল ঘোড়ার নিকটে। অতএব আমি ক্ষান্ত দিয়ে তার নিকটে গেলাম এবং আকাশের দিকে মাথা উঠালাম। দেখলাম, শামিয়ানার ন্যায়, এতে বাতিসমূহের মত রয়েছে। অতঃপর আমি সেখান থেকে বের হলাম, আর দেখতে দেখতে তা অদৃশ্য হয়ে গেল। শুনে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, এটা কী ছিল জানো? উসাইদ বললেন, না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তারা ছিল ফেরেশতাদের দল। তোমার স্বর শুনে তাঁরা এসেছিলেন। যদি তুমি পড়তে থাকতে তাঁরা ভোর পর্যন্ত সেখানে থাকতেন, আর মানুষ তাঁদের দেখতে পেত, তাঁরা মানুষ হতে অদৃশ্য হতেন না।[১]
عَنِ الْبَرَاءِ ঃ قَالَ كَانَ رَجُلٌ يَقْرَأُ سُوْرَةَ الْكَهْفِ وَإِلَى جَانِبِهِ حِصَانٌ مَرْبُوْطٌ بِشَطَنَيْنِ فَتَغَشَّتْهُ سَحَابَةٌ فَجَعَلَتْ تَدْنُوْ وَتَدْنُوْ وَجَعَلَ فَرَسُهُ يَنْفِرُ فَلَمَّا أَصْبَحَ أَتَى النَّبِىَّ فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ فَقَالَ تِلْكَ السَّكِيْنَةُ تَنَزَّلَتْ بِالْقُرْآنِ
বারা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি সূরা আল-কাহ্ফ তেলাওয়াত করছিলেন। তার ঘোড়াটি দু’টি রশি দিয়ে তার পাশে বাঁধা ছিল। তখন এক টুকরো মেঘ এসে তার উপর ছায়া দান করল। মেঘখণ্ড ক্রমেই নিচের দিকে নেমে আসতে লাগল। আর তার ঘোড়াটি ভয়ে লাফালাফি শুরু করে দিল। সকাল বেলা যখন নবী (ﷺ)-এর নিকট উক্ত ঘটনার কথা ব্যক্ত করেন, তখন তিনি বললেন, এ ছিল আস-সাকীনা তথা প্রশান্তি, যা কুরআন তেলাওয়াতের কারণে অবতীর্ণ হয়েছিল।[২]
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ ﷺ قَالَ وَمَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِىْ بَيْتٍ مِنْ بُيُوْتِ اللهِ يَتْلُوْنَ كِتَابَ اللهِ وَيَتَدَارَسُوْنَهُ بَيْنَهُمْ إِلَّا نَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِيْنَةُ وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ وَحَفَّتْهُمُ الْمَلَائِكَةُ وَذَكَرَهُمُ اللهُ فِيْمَنْ عِنْدَهُ
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘যখন কোন সম্প্রদায় আল্লাহর কোন ঘরে আল্লাহর কিতাব পাঠ এবং পরস্পর আলোচনা করার জন্য সমবেত হয়, তখন আল্লাহ তাদের উপর প্রশান্তি নাযিল করেন, আল্লাহর রহমত তাদের ঢেকে ফেলে এবং ফেরেশতারা তাদের ঘিরে রাখেন। আর আল্লাহ ফেরেশতাদের মাঝে তাদের সম্পর্কে আলোচনা করেন’।[৩]
আল-কুরআন মুখস্থকারী ছালাতের ইমামতির জন্য অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত
عَنْ أَبِىْ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَؤُمُّ الْقَوْمَ أَقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ اللهِ فَإِنْ كَانُوْا فِى الْقِرَاءَةِ سَوَاءً فَأَعْلَمُهُمْ بِالسُّنَّةِ فَإِنْ كَانُوْا فِى السُّنَّةِ سَوَاءً فَأَقْدَمُهُمْ هِجْرَةً فَإِنْ كَانُوْا فِى الْهِجْرَةِ سَوَاءً فَأَقْدَمُهُمْ سِنًّا وَلَا يَؤُمَّنَّ الرَّجُلُ الرَّجُلَ فِىْ سُلْطَانِهِ وَلَا يَقْعُدُ فِى بَيْتِهِ عَلٰى تَكْرِمَتِهِ إِلَّا بِإِذْنِهِ
আবূ মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, মানুষের ইমামতি করবে সেই ব্যক্তি, যার কুরআন বেশী মুখস্থ রয়েছে। যদি কুরআন তেলাওয়াতে সকলে সমান হয়, তবে যে সুন্নাত সম্পর্কে বেশি জ্ঞান রাখে। যদি সুন্নাতেও সকলে সমান হয়, তবে যে হিজরত করেছে সেই ইমামতি করবে। যদি হিজরতেও সকলে সমান হয়, তবে যে বয়সে বেশি। কেউ যেন অপর ব্যক্তির অধিকার ও ক্ষমতাস্থলে ইমামতি না করে এবং অনুমতি ব্যতীত যেন কেউ তার বাড়ীতে তার সম্মানের স্থলে না বসে।[৪]
আল-কুরআন হিফয ও তেলাওয়াত করার ব্যাপারে ঈর্ষা করা বৈধ
عَنِ بْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ لَا حَسَدَ إِلَّا عَلَى اثْنَتَيْنِ رَجُلٌ آتَاهُ اللهُ الْكِتَابَ وَقَامَ بِهِ آنَاءَ اللَّيْلِ وَرَجُلٌ أَعْطَاهُ اللهُ مَالًا فَهْوَ يَتَصَدَّقُ بِهِ آنَاءَ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ
ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, দু’টি বিষয় ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে ঈর্ষা করা যায় না। প্রথমত যাকে আল্লাহ তা‘আলা কিতাবের জ্ঞান দান করেছেন এবং তিনি তা থেকে গভীর রাতে তেলাওয়াত করেন। দ্বিতীয়ত যাকে আল্লাহ তা‘আলা সম্পদ দান করেছেন এবং তিনি সেই সম্পদ দিন-রাত দান করতে থাকেন।[৫]
কুরআন শিক্ষা করা এবং অপরকে শিক্ষা দেয়ার ফযীলত
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اَلرَّحۡمٰنُ . عَلَّمَ الۡقُرۡاٰنَ
‘পরম দয়াময় (আল্লাহ), তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন’ (সূরা আর-রহমান, আয়াত : ১-২)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ اِذۡ صَرَفۡنَاۤ اِلَیۡکَ نَفَرًا مِّنَ الۡجِنِّ یَسۡتَمِعُوۡنَ الۡقُرۡاٰنَ فَلَمَّا حَضَرُوۡہُ قَالُوۡۤا اَنۡصِتُوۡا فَلَمَّا قُضِیَ وَلَّوۡا اِلٰی قَوۡمِہِمۡ مُّنۡذِرِیۡنَ
‘আর স্মরণ করুন, যখন আমরা জিনদের একটি দলকে আপনার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। তারা কুরআন পাঠ শুনছিল। যখন তারা তার কাছে উপস্থিত হল, তারা বলল, চুপ করে শুন। তারপর যখন পাঠ শেষ হল তারা তাদের সম্প্রদায়ের কাছে সতর্ককারী হিসাবে ফিরে গেল’ (সূরা আল-আহক্বাফ, আয়াত : ২৯)।
عَنْ عُثْمَانَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ
ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) নবী করীম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সেই সর্বোত্তম ব্যক্তি যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়।[৬]
عَنْ عُثْمَانَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ أَفْضَلَكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ
ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) নবী করীম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়।[৭]
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَوْمًا وَنَحْنُ فِي الصُّفَّةِ فَقَالَ أَيُّكُمْ يُحِبُّ أَنْ يَغْدُوْ إِلَى بُطْحَانَ أَوْ الْعَقِيْقَ فَيَأْتِيْ كُلَّ يَوْمٍ بِنَاقَتَيْنِ كَوْمَاوَيْنِ زَهْرَاوَيْنِ فَيَأْخُذُهُمَا فِيْ غَيْرِ إِثْمٍ وَلَا قَطْعِ رَحِمٍ قَالَ قُلْنَا كُلُّنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يُحِبُّ ذَلِكَ قَالَ فَلِأَنْ يَغْدُوْ أَحَدُكُمْ إِلَى الْمَسْجِدِ فَيَتَعَلَّمَ آيَتَيْنِ مِنْ كِتَابِ اللهِ خَيْرٌ لَهُ مِن نَاقَتَيْنِ وَثَلَاثٌ خَيْرٌ مِن ثَلَاثٍ وَأَرْبَعٍ خَيْرٌ مِنْ أَربَعٍ وَمِنْ أَعْدَادِهِنَّ مِنَ الْإِبِلِ
ওক্ববা ইবনু আমের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বের হয়ে আসলেন আর আমরা মসজিদের একটি স্থানে উপবিষ্ট ছিলাম। অতঃপর তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কে চায় যে, প্রত্যহ সকালে বুত্বহান অথবা ‘আক্বীক্ব নামক বাজারে যাবে আর বড় কুঁজের অধিকারী দু’টি উটনী নিয়ে আসবে, কোন অপরাধ না করে ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন না করে? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমরা প্রত্যেকেই তো এমন সুযোগ গ্রহণ করতে চাই। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তবে কেন তোমাদের কোন ব্যক্তি মসজিদে গিয়ে আল্লাহর কিতাবের দু’টি আয়াত শিক্ষা দেয় না বা শিক্ষা গ্রহণ করে না? অথচ একাজ তার জন্য একটি অথবা দু’টি উটনী অপেক্ষা উত্তম! তিন আয়াত তিনটি উটনী অপেক্ষা উত্তম এবং চার আয়াত চারটি উটনী অপেক্ষা উত্তম। আর যত আয়াত পড়বে বা পড়াবে তত উটনী অপেক্ষা উত্তম হবে।[৮]
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ مَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِيْ بَيْتٍ مِنْ بُيُوْتِ اللهِ يَتْلُوْنَ كِتَابَ اللهِ وَيَتَدَارَسُوْنَهُ فِيْمَا بَيْنَهُمْ إِلَّا نَزَلَتْ عَلَيْهِمِ السَّكِيْنَةُ وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ وَحَفَّتْهُمُ الْمَلَائِكَةُ وَذَكَرَهُمُ اللهُ فِيْمَنْ عِنْدَهُ
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যখন কোন সম্প্রদায় আল্লাহর গৃহসমূহের কোন একটি গৃহে একত্রিত হয়ে আল্লাহর কিতাব পাঠ করে এবং একে অপরের সাথে মিলে (কুরআন) অধ্যয়নে লিপ্ত থাকে তখন তাদের উপর শান্তিধারা অবতীর্ণ হয়। রহমত তাদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলে এবং ফেরেশতাগণ তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখেন। আর আল্লাহ তা‘আলা তার নিকটবর্তীদের (ফেরেশতাগণের) মধ্যে তাদের কথা আলোচনা করেন।[৯]
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ كَانَ النَّبِيُّ ﷺ يَجْمَعُ بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ فِىْ قَتْلَى أُحُدٍ فِىْ ثَوْبٍ وَّاحِدٍ ثُمَّ يَقُوْلُ أَيُّهُمْ أَكْثَرُ أَخْذًا لِّلْقُرْآنِ؟ فَإِذَا أُشِيْرَ لَهُ إِلَى أَحَدِهِمَا قَدَّمَهُ فِى اللَّحْدِ
জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ওহুদ যুদ্ধের শহীদগণের দুই ব্যক্তিকে একই কাপড়ে রাখলেন এবং বললেন, তাদের মধ্যে কার অধিক কুরআন মুখস্ত ছিল? যখন তাদের কোন ব্যক্তির প্রতি ইঙ্গিত করা হল, তাকেই তিনি প্রথমে কবরে রাখতেন।[১০]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُرَيْدَةَ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ كُنْتُ عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فَسَمِعْتُهُ يَقُوْلُ إِنَّ الْقُرْآنَ يَلْقَى صَاحِبَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حِيْنَ يَنْشَقُّ عَنْهُ قَبْرُهُ كَالرَّجُلِ الشَّاحِبِ يَقُوْلُ لَهُ هَلْ تَعْرِفُنِىْ؟ فَيَقُوْلُ مَا أَعْرِفُكَ فَيَقُوْلُ لَهُ أَنَا صَاحِبُكَ الْقُرْآنُ الَّذِىْ أَظْمَأْتُكَ فِي وَأَسْهَرْتُ لَيْلَكَ وَإِنَّ كُلَّ تَاجِرٍ مِنْ وَرَاءِ تِجَارَتِهِ وَإِنَّكَ الْيَوْمَ مِنْ وَرَاءِ كُلِّ تِجَارَةٍ قَالَ فَيُعْطَى الْمُلْكَ بِيَمِيْنِهِ وَالْخُلْدَ بِشِمَالِهِ وَيُوْضَعُ عَلَى رَأْسِهِ تَاجُ الْوَقَارِ وَيُكْسَى وَالِدَاهُ حُلَّتَيْنِ لَا يَقُوْمُ لَهُمَا أَهْلُ الدُّنْيَا فَيَقُوْلَانِ بِمَ كُسِيْنَا هَذَا؟ قَالَ فَيُقَالُ لَهُمَا بِأَخْذِ وَلَدِكُمَا الْقُرْآنَ ثُمَّ يُقَالُ لَهُ اقْرَأْ وَاصْعَدْ فِىْ دَرَجِ الْجَنَّةِ وَغُرَفِهَا فَهُوَ فِىْ صُعُوْدٍ مَا دَامَ يَقْرَأُ هَذًّا كَانَ أَوْ تَرْتِيْلًا
আব্দুল্লাহ ইবনু বুরায়দা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তার পিতা বলেন, আমি একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট ছিলাম। তাঁকে বলতে শুনলাম যে, নিশ্চয় কুরআন ক্বিয়ামতের দিন হাফেযের সাথে সাক্ষাৎ করবে যখন কবর ফেটে যাবে- ফ্যাকাশে ব্যক্তির ন্যায়। কুরআন হাফেযকে বলবে, তুমি আমাকে চিনতে পারছ? হাফেয বলবেন, তোমাকে চিনতে পারছি না। কুরআন বলবে, আমি তোমার সাথী কুরআন। আমার জন্যই তোমাকে তৃষ্ণার্ত করেছি এবং তোমার রাতকে জাগিয়েছি। নিশ্চয় প্রত্যেক ব্যবসায়ীর ব্যবসার পরে লভ্যাংশ থাকে। নিশ্চয় তোমার জন্যও লভ্যাংশ রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ক্বিয়ামতের দিন কুরআনের হাফেযকে তার ডান হাতে মালিকানা দেয়া হবে আর বাম হাতে দেয়া হবে স্থায়ী নে‘মত এবং তার মাথায় সম্মানের মুকুট পরানো হবে। আর তার মাতা-পিতাকে এমন দুই জোড়া কাপড় পরানো হবে, দুনিয়াবাসীর কোন কিছুই তার সমপরিমাণ হবে না। তখন মাতা-পিতা বলবে, আমাদেরকে এটা কেন পরানো হল? তখন তাদেরকে বলা হবে, তোমাদের সন্তানকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছিলে তাই। অতঃপর হাফেযকে বলা হবে, তুমি কুরআন পড়তে থাক আর জান্নাতের মার্যাদা ও রূমসমূহের দিকে আরোহণ করতে থাক। স্বাভাবিকভাবে বা তারতীলসহ পড়তে পড়তে যেখানে আরোহণ করবে, সেটাই হবে মর্যাদা।[১১]
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
* পি-এইচ. ডি গবেষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
তথ্যসূত্র :
[১]. ছহীহ বুখারী, হা/৫০১৮, ‘ফাযায়েলে কুরআন’ অধ্যায়, ‘কুরআন তেলাওয়াতের সময় প্রশান্তি নেমে আসে এবং ফেরেশতা অবতীর্ণ হয়’ অনুচ্ছেদ; ছহীহ মুসলিম, হা/৭৯৬; মিশকাত, হা/২১১৬।
[২]. ছহীহ বুখারী, হা/৫০১১; ছহীহ মুসলিম, হা/৭৯৫; মিশকাত, হা/২১১৭।
[৩]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৯৯; আবূ দাঊদ, হা/১৪৫৫; তিরমিযী, হা/২৯৪৫; ইবনু মাজাহ, হা/২২৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৪২১; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৭৬৮; মিশকাত, হা/২০৪।
[৪]. ছহীহ মুসলিম, হা/৬৭৩; মিশকাত, হা/১১১৭।
[৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৫০২৫, ‘ফাযায়েলে কুরআন’ অধ্যায়, ‘কুরআন তেলাওয়াতকারী হবার আকাক্সক্ষা পোষণ করা’ অনুচ্ছেদ।
[৬]. ছহীহ বুখারী, হা/৫০২৭।
[৭]. ছহীহ বুখারী, হা/৫০২৮।
[৮]. ছহীহ মুসলিম, হা/৮০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪৪৪; মিশকাত, হা/২১১০।
[৯]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৯৯।
[১০]. ছহীহ বুখারী, হা/৪০৭৯।
[১১]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, হা/৩০০৪৫; দারেমী, হা/৩৪৩৪; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব, হা/১৪৩৪; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২৮২৯, সনদ ছহীহ।