বিদ‘আত পরিচিতি
-মুহাম্মাদ বযলুর রহমান*
(৬ষ্ঠ কিস্তি)
(গ) ‘আলিমদের অন্ধ অনুসরণ (التعصب لاراء الرجال)
অন্ধ অনুসরণ মানুষকে সত্য গ্রহণ থেকে বিমুখ রাখে। অন্ধ অনুসারীরা পূর্ব পুরুষদের দোহাই দিয়ে সত্যকে উপেক্ষা করে। আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চেয়েও তাদের নিকট পূর্বপূরুষদের ভ্রান্ত রীতি-নীতি, ‘আক্বীদাহ-‘আমল অগ্রগণ্য হিসাবে বিবেচিত হয়। ‘আলিম ও পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণ মানুষকে দলীল-প্রমাণের অনুসরণ এবং সত্য জানার আগ্রহ ও তা কবুল করার পথে বিরাট অন্তরায়। এটি বিদ‘আত সৃষ্টির অন্যতম কারণ। মহান আল্লাহ বলেন,
وَ اِذَا قِیۡلَ لَہُمُ اتَّبِعُوۡا مَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰہُ قَالُوۡا بَلۡ نَتَّبِعُ مَاۤ اَلۡفَیۡنَا عَلَیۡہِ اٰبَآءَنَا اَوَ لَوۡ کَانَ اٰبَآؤُہُمۡ لَا یَعۡقِلُوۡنَ شَیۡئًا وَّ لَا یَہۡتَدُوۡنَ
‘যখন তাদেরকে বলা হয় আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তার অনুসরণ কর, তখন তারা বলে থাকে আমরা বরং আমাদের পূর্ব-পুরুষদেরকে যে বিষয়ের উপর পেয়েছি, তারই অনুসরণ করব। যদিও তাদের বাপ-দাদারা কিছুই জানত না এবং সত্য পথপ্রাপ্তও ছিল না’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৭০)। সঠিক কোন যুক্তি ছাড়াই বিগত যুগের লোকদের দোহাই পেড়ে কাজ করা জাহিলী যুগের লোকদের অন্যতম স্বভাব ছিল। আল্লাহ এই স্বভাবের তীব্র ভৎর্সনা করেছেন। যেমন তিনি বলেন,
فَلَمَّا جَآءَہُمۡ مُّوۡسٰی بِاٰیٰتِنَا بَیِّنٰتٍ قَالُوۡا مَا ہٰذَاۤ اِلَّا سِحۡرٌ مُّفۡتَرًی وَّ مَا سَمِعۡنَا بِہٰذَا فِیۡۤ اٰبَآئِنَا الۡاَوَّلِیۡنَ- وَ قَالَ مُوۡسٰی رَبِّیۡۤ اَعۡلَمُ بِمَنۡ جَآءَ بِالۡہُدٰی مِنۡ عِنۡدِہٖ وَ مَنۡ تَکُوۡنُ لَہٗ عَاقِبَۃُ الدَّارِ اِنَّہٗ لَا یُفۡلِحُ الظّٰلِمُوۡنَ
‘মূসা (আলাইহিস সালাম) যখন তাদের নিকট আমাদের সুস্পষ্ট নিদর্শনগুলো দিয়ে আসলেন, তারা বলল, এটা তো অলীক জাদু মাত্র! আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে আমরা কখনও এরূপ কথা শুনিনি। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমার প্রতিপালক সম্যক অবগত, কে তাঁর নিকট হতে পথ নির্দেশ এনেছে এবং আখিরাতে কার পরিণাম শুভ হবে। যালিমরা অবশ্যই সফলকাম হবে না’ (সূরা আল-ক্বাছাছ : ৩৬-৩৭)। অন্যত্র মহান আল্লাহ নূহ (আলাইহিস সালাম)-এর কওমের বর্ণনা দিয়ে বলেন,
وَ لَقَدۡ اَرۡسَلۡنَا نُوۡحًا اِلٰی قَوۡمِہٖ فَقَالَ یٰقَوۡمِ اعۡبُدُوا اللّٰہَ مَا لَکُمۡ مِّنۡ اِلٰہٍ غَیۡرُہٗ اَفَلَا تَتَّقُوۡنَ- فَقَالَ الۡمَلَؤُا الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا مِنۡ قَوۡمِہٖ مَا ہٰذَاۤ اِلَّا بَشَرٌ مِّثۡلُکُمۡ یُرِیۡدُ اَنۡ یَّتَفَضَّلَ عَلَیۡکُمۡ وَ لَوۡ شَآءَ اللّٰہُ لَاَنۡزَلَ مَلٰٓئِکَۃًۖ مَّا سَمِعۡنَا بِہٰذَا فِیۡۤ اٰبَآئِنَا الۡاَوَّلِیۡنَ
‘আমরা নূহ (আলাইহিস সালাম)-কে পাঠিয়েছিলাম তাঁর সম্প্রদায়ের নিকট, তিনি বলেছিলেন, হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহর ইবাদত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন সত্য মা‘বূদ নেই, তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না? তাঁর সম্প্রদায়ের প্রধানগণ, যারা কুফরী করেছিল, তারা বলল, এতো তোমাদের মত একজন মানুষ, তোমাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে চাচ্ছে, আল্লাহ ইচ্ছা করলে ফেরেশতাই পাঠাতেন; আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে এরূপ ঘটেছে, এ কথা আমরা তো শুনিনি’ (সূরা আল-মুমিনূন : ২৩-২৪)।
এমনিভাবে অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কেরামকেও শুনানো হয়েছে, যা কুরআনের বিভিন্ন আয়াত দ্বারা প্রমাণিত। নবীগণের দাওয়াতকে অস্বীকার করার মূলে সকল যুগের সকল কাফেরদের একই যুক্তি ছিল যে, তাদের বাপ-দাদারা এই নিয়মের অনুসারী ছিল না এবং তারা এসব কথা পূর্ব থেকে কখনো জানত না। তাদের এই বদ-অভ্যাস ও অনড় মনোভাব লক্ষ্য করার মত। যদি তাদের চোখ, কান ও হৃদয় খোলা থাকত, তাহলে তারা অবশ্যই সত্যকে দলীল সহকারে উপলব্ধি করত এবং সত্যের সম্মুখে বিনা বাক্যব্যয়ে মাথা নত করত। একই অবস্থা তাদের উত্তরসূরী লোকদের, যারা অন্তরের দিক দিয়ে পূর্বের লোকদের সদৃশ্য।[১] বর্তমান যুগের কতক ছূফী ও কবর পূজারীদের একই অবস্থা। তাদেরকে কিতাব ও সুন্নাতের দিকে ডাকা হলে এবং কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ‘আমলসমূহ বর্জন করতে বলা হলে তারা তাদের নেতা, পীর-মাশায়েখ, অলী-আওলিয়া এবং বাপ-দাদার দোহাই দিয়ে থাকে।[২] অন্যদিকে একপ্রকার ‘আমলহীন ফাসিক ‘আলিম এবং মূর্খ ‘আবিদগণের বাহ্যিক বেশভূষা ও চালচলন দেখে তাদেরকে বিরাট কিছু মনে করে ও তাদের অনুসরণ করে থাকে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা এ বিষয়ে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন,
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّ کَثِیۡرًا مِّنَ الۡاَحۡبَارِ وَ الرُّہۡبَانِ لَیَاۡکُلُوۡنَ اَمۡوَالَ النَّاسِ بِالۡبَاطِلِ وَ یَصُدُّوۡنَ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ
‘হে মুমিনগণ! অধিকাংশ (ইহূদী ও খ্রিষ্টানদের) ‘আলিম ও ধর্মযাজকগণ মানুষের ধন-সম্পদ অন্যায়রূপে ভক্ষণ করে এবং আল্লাহর পথ হতে বিরত রাখে’ (সূরাহ আত-তওবাহ : ৩৪)। এই অন্ধভক্তি, অতি শ্রদ্ধা মানুষকে বিদ‘আতের দিকে প্ররোচিত করে।
সমাজে ‘আলীমদের অনুসরণ তথা তাক্বলীদের প্রভাব এতই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে, ইসলামের কোন বিষয় জানার জন্য আল-কুরআন ও সুন্নাহকে যথেষ্ট মনে না করে নিজেদের মাযহাবী ইমাম ও মুফতীদের ফাতাওয়াকে অগ্রগণ্য করায়, যদিও তা আল-কুরআন ও সুন্নাহর বরখেলাফ হোক না কেন। তাক্বলীদের অনুসারী ব্যক্তি তার মাযহাবের অনুকূলে নয় বলে স্পষ্ট হাদীছ পাওয়ার পরেও তা মানতে রাযী হন না। মুক্বাল্লিদ ব্যক্তি এক ইমামের তাক্বলীদ করতে গিয়ে বাস্তবে অসংখ্য বিদ্বানের মুক্বাল্লিদ হয়ে পড়েন। ফলে বিনা দলীলে ফৎওয়া গ্রহণের সুযোগে ধর্মের নামে সমাজে অসংখ্য অনৈসলামী কার্যকলাপের উৎপত্তি হয়েছে। অথচ যার নামে মাযহাবী ফৎওয়া প্রদান করা হচ্ছে, গবেষণায় দেখা যায় যে, তিনি এসববের নাড়ী-নক্ষত্রেরও খবর রাখেন না। তাক্বলীদের সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষতি হল ইজতিহাদ বা শরী‘আত গবেষণার দুয়ার বন্ধ হওয়া।[৩] অথচ মাযহাব চতুষ্ঠয়ের সকল ইমাম এ তাক্বলীদের বিরোধিতা করে গেছেন। যেমন,
ইমাম আবূ হানীফা (৮০-১৫০ হি.) বলেন, إياكم والقول قي دين الله تعالي بالراي وعليكم باتباع السنة فمن خرج عنها ضل ‘তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে নিজ নিজ রায় অনুযায়ী কথা বলা হতে বিরত থাক, তোমাদের জন্য সুন্নাতের অনুসরণ করা অপরিহার্য। যে ব্যক্তি সুন্নাতের অনুসরণ করা থেকে বেরিয়ে যাবে, সে পথভ্রষ্ট হবে’।[৪] ইমাম মালেক (৯৩-১৭৯ হি.) বলেন,
إنما أنا بشر أخطي وأصيب فانظروا في رائي ما وفق الكتاب والسنة فخذوه وكل ما لم يوافق فاتركوه
‘আমি একজন মানুষ মাত্র। আমি ভুলও বলি, সঠিকও করি। অতএব আমার সিদ্ধান্তগুলো তোমরা যাচাই কর। যেগুলো আল-কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী পাও, সেগুলো গ্রহণ কর, যেগুলো না পাও, সেগুলো পরিত্যাগ কর’।[৫] তিনি আরো বলেন,ما من أحد إلا ومأخوذ من كلامه ومردود عليه إلا رسول الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যতীত দুনিয়াতে এমন কোন ব্যক্তি নেই, যার সকল কথা গ্রহণীয় ও বর্জনীয়’।[৬]
ইমাম শাফেঈ (১৫০-২০৪ হি.) বলেছেন,
إذا رأيتم كلامي يخالف الحديث فاعملوا بالحديث واضربوا بكلامي الحائط وقال يوما للمزاني يا إبراهيم لا تقلدني في كل ما أقول وانظر في ذلك لنفسك فإنه دين
‘যখন তোমরা আমার কোন কথা হাদীছের বরখেলাফ দেখবে, তখন হাদীছের উপর ‘আমল করবে এবং আমার কথাকে দেওয়ালে ছুঁড়ে মারবে’। অতঃপর তিনি তাঁর ছাত্র ইবরাহীম মুযানীকে বলেন, হে ইবরাহীম! তুমি আমর সকল কথার তাক্বলীদ করবে না। বরং নিজে চিন্তা-ভাবনা করে দেখবে। কেননা এটা দ্বীনের ব্যাপার’।[৭]
ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (১৬৪-২৪১ হি./৭৮০-৮৫৫ খ্রি.) বলেছেন, لَا تُقَلِّدْنِيْ وَلَا تُقَلِّدْ مَالِكًا وَلَا الثَّوْرِيَّ وَلَا الْأَوْزَاعِيَّ وَخُذْ مِنْ حَيْثُ أَخَذُوْا ‘তুমি আমার তাক্বলীদ কর না এবং তাক্বলীদ কর না মালেক, ছাওরীর, আওযাঈর। বরং তাঁরা যে উৎস হতে গ্রহণ করেছেন, সেখান থেকে তোমরাও গ্রহণ কর’।[৮]
উক্ত আলোচনায় প্রতীয়মান হল যে, বিগত কোন ইমাম পরবর্তীকালে সৃষ্ট বিভিন্ন মাযহাবী কোন্দলের জন্য দায়ী ছিলেন না। এ বিষয়ে ইমাম শাওকানী (১১৭৩-১২৫০ হি./১৭৫৯-১৮৩৪ খ্রি.) খুবই চমৎকার মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রত্যেক বিদ্বান এ কথা জানেন যে, ছাহাবী, তাবি‘ঈ ও তাবি‘ তাবি‘ঈন কেউ কারো মুক্বাল্লিদ ছিলেন না। ছিলেন না কেউ কোন বিদ্বানের প্রতি সম্বন্ধযুক্ত। বরং জাহিল ব্যক্তি ‘আলিমদের নিকট থেকে কিতাব ও সুন্নাত হতে প্রমাণিত শরী‘আতের হুকুম জিজ্ঞেস করতেন। ‘আলিমগণ সেই মোতাবেক ফৎওয়া দিতেন। কখনো শব্দে শব্দে বলতেন, আবার কখনো কখনো মর্মার্থ বলে দিতেন। সে মতে লোকেরা ‘আমল করত (আল-কুরআন ও হাদীছের) রেওয়াত (বর্ণনা) অনুযায়ী, কোন বিদ্বানের রায় অনুযায়ী নয়। বলা বাহুল্য যে, কারও তাক্বলীদ করার চেয়ে এ পদ্ধতিই সহজতর’।[৯] মোল্লা আলী কারী (রাহিমাহুল্লাহ) এ বিষয়ে আরো খোলামেলা আলোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন,
ومن المعلوم ان الله تعالي ما كلف أحدا أن يكون حنفيا أو مالكيا أو شافعيا أو حنبليا بل كلفهم أن يعملوا السنة
‘এটা জানা কথা যে, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা কাউকে বাধ্য করেননি এজন্য যে, হানাফী, মালিকী, শাফিঈ বা হাম্বালী হোক। বরং বাধ্য করেছেন এজন্য যে, তারা সুন্নাত অনুযায়ী ‘আমল করুক’।[১০]
(ঘ) কাফির-মুশরিকদের সাদৃশ্য করা (التشبه بالكفار والمشركين)
বিধর্মী কাফির-মুশরিকদের সাথে সাদৃশ্য রাখা নতুন নতুন বিদ‘আত সৃষ্টির বিরাট একটি কারণ। মুসলিম কর্তৃক পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল জয়লাভের সুবাদে বিভিন্ন গোষ্ঠী, ধর্ম ও সংস্কৃতির লোকেরা ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক ইসলাম গ্রহণ করেছিল। তাদের অনেকেরই ইসলাম সম্পর্ক পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান লাভের সুযোগ ছিল না। তারা গতানুগতিকভাবে ইসলামের কিছু অংশ শিখেছিল, যদিও তার অধিকাংশই ভ্রান্ত ছিল। এরপরেও প্রাচীন বিভিন্ন ধ্যান-ধারণা এবং আচার-অনুষ্ঠানের প্রভাব থেকেও তা সম্পূর্ণ মুক্ত ছিল না। কিন্তু কালক্রমে তা ইসলামের সংস্পর্শে কিছুটা পরিশোধিত হয়ে যায়। প্রখ্যাত ছাহাবী আবূ ওয়াক্বিদ আল-লাইসী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত,
لَمَّا خَرَجَ إِلَى خَيْبَرَ مَرَّ بِشَجَرَةٍ لِلْمُشْرِكِيْنَ يُقَالُ لَهَا ذَاتُ أَنْوَاطٍ يُعَلِّقُوْنَ عَلَيْهَا أَسْلِحَتَهُمْ فَقَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ اجْعَلْ لَنَا ذَاتَ أَنْوَاطٍ كَمَا لَهُمْ ذَاتُ أَنْوَاطٍ. فَقَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُبْحَانَ اللهِ هَذَا كَمَا قَالَ قَوْمُ مُوْسَى (اجْعَلْ لَنَا إِلَهًا كَمَا لَهُمْ آلِهَةٌ) وَالَّذِىْ نَفْسِىْ بِيَدِهِ لَتَرْكَبُنَّ سُنَّةَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ
‘হুনাইনের উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাত্রা শুরু করলেন। তিনি মুশরিকদের একটি গাছের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই গাছটিকে ‘যাতু আনওয়াত্ব’ বলা হত। তারা এর মধ্যে তাদের অস্ত্রসমূহ লটকিয়ে রাখত। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তাদের যাতু আনওয়াত্বের মত আমাদের জন্য একটা যাতু আনওয়াত্বের ব্যবস্থা করুন। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সুবহানাল্লাহ! এটা তো মূসা (আলাইহিস সালাম) এর উম্মতের কথার মত হল। তারা বলেছিল, কাফিরদের যেমন অনেক উপাস্য রয়েছে তদ্রুপ আমাদেরও উপাস্যের ব্যবস্থা করে দিন। সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীগণের নীতি অবলম্বন করবে’।[১১]
উক্ত হাদীছের মাধ্যমে বুঝা যায় যে, কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য করাই বনী ইসরাঈলদেরকে তাদের নবীর কাছে এরকম একটি জঘন্য আবদার করতে উৎসাহিত করেছে। তাদের আবদার ছিল, তাদের জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য একটি মা‘বূদ নির্ধারণ করে দেয়া হোক, তারা সে মা‘বূদের ‘ইবাদত করবে এবং তা থেকে বরকত হাসিল করবে। বর্তমান কালেও একই অবস্থা। অধিকাংশ মুসলমান বিদ‘আত ও শিরকী কর্মসমূহে কাফির-মুশরিকদের অনুসরণ করে চলেছে। যেমন হিন্দুদের শ্রাদ্ধকে অনুসরণ করে চল্লিশা, কুলখানী, কলেমাখানি, ফাতিহাখানি, চেহলাম। আবার তাদের কালী মেলাকে অনুসরণ করে উরস পালন, তাদের বিধবাদের অনুসরণে মুসলিম বিধবাদের অলংকারাদি ও রঙ্গিন পোশাক বর্জন করে শুভ্রবসন গ্রহণ ইত্যাদি। খ্রিষ্টানদের বড়দিনকে অনুসরণ করে ঈদে মীলাদুন্নবী, জন্ম দিবস, মৃত্যু দিবস পালন ইত্যাদি। ইহুদী-খ্রিষ্টানদের গির্জাকে অনুসরণ করে পীরগিরী করা। এভাবে বিভিন্ন উপলক্ষে দিন ও সপ্তাহ পালন করা, ধর্মীয় বিভিন্ন উপলক্ষে অনুষ্ঠান পালন করা, নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতিমূর্তি তৈরি করা, স্মৃতিচিহ্ন স্থাপন করা, মাতম করা, মৃত ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রকার বিদ‘আতের প্রচলন করা, কবরের উপর গম্বুজ নির্মাণ করা ইত্যাদি।[১২]
(ঙ) ‘আলিমগণের নীরবতা, স্বার্থপরতা ও দায়িত্ব পালনে অবহেলা
সমাজে বিদ‘আত প্রচলনের অন্যতম আরেকটি কারণ হল ‘আলিমগণের নীরবতা, স্বার্থপরতা ও তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা। অথচ ‘আলিমগণ নবীগণের ওয়ারিছ।[১৩] সমাজ থেকে সকল ধরনের অধর্ম, কুসংস্কার ও বিদ‘আত মুলোৎপাটনের গুরু দায়িত্ব তাদের উপর। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হল, এক শ্রেণীর ‘আলিম আছেন, যাদের সম্মুখে বিদ‘আতী কর্মকাণ্ড হতে দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন। কোনরূপ প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেন না এবং নিষেধও করেন না। এ সকল অবস্থায় ‘আলিমগণের দায়িত্ব, সুযোগ ও ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বিদ‘আত বা শরী‘আত বিরোধী কাজের প্রতিবাদ কিংবা বিরোধিতা না করার কারণে সাধারণ লোকদের মনে ধারণা জন্মে যে, এ কাজ নিশ্চয় অবৈধ হবে না। অথবা অমুক জালসায় এ কাজটি হয়েছে, এ কথাটি বলা হয়েছে, সেখানে অমুক বড় বড় ‘আলিম উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা যখন এর প্রতিবাদ করেননি, তখন বুঝতেই হবে যে, এ কাজ বা কথা শরী‘আত সম্মত হবেই। না হলে তো তাঁরা প্রতিবাদ করতেনই। এছাড়া অমুক আলিম তো অনেক বড় ও বুযুর্গানে দ্বীন তাদের কি কোন ভুল-ত্রুটি হতে পারে ইত্যাদি ধারণাও বিদ‘আত সৃষ্টি করে থাকে। এভাবে ‘আলিমগণের দায়িত্বহীনতা, অবহেলা ও দ্বীন গ্রহণে অন্ধত্ব মানসিকতার কারণে সমাজে বহু জঘন্য বিদ‘আত ও অবৈধ কাজ শরী‘আতসম্মত কাজ রূপে বিবেচিত ও প্রচলিত হয়ে পড়েছে। আরেক শ্রেণীর পেটপূজারী ও দুনিয়াদার ‘আলিম রয়েছে, যারা নিজেরাই বিদ‘আতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত আছে। ইমামতি টিকিয়ে রাখা, প্রতিবছর ইসলামী জালসায় দা‘ওয়াত পাওয়া এবং পকেটভারী করার জন্য বিদ‘আতকে বিদ‘আত হিসাবে জানা সত্ত্বেও এর বিরোধিতা তো করছেনই না বরং নিজেরা প্রতিনিয়ত বিদ‘আত করেই যাচ্ছে। এ শ্রেণীর ‘আলিমদের জন্যই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। তিনি বলেন,
وَ لَقَدۡ ذَرَاۡنَا لِجَہَنَّمَ کَثِیۡرًا مِّنَ الۡجِنِّ وَ الۡاِنۡسِ لَہُمۡ قُلُوۡبٌ لَّا یَفۡقَہُوۡنَ بِہَا وَ لَہُمۡ اَعۡیُنٌ لَّا یُبۡصِرُوۡنَ بِہَا وَ لَہُمۡ اٰذَانٌ لَّا یَسۡمَعُوۡنَ بِہَا اُولٰٓئِکَ کَالۡاَنۡعَامِ بَلۡ ہُمۡ اَضَلُّ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡغٰفِلُوۡنَ
‘আমি বহু জিন ও মানুষেকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি, তাদের হৃদয় রয়েছে; কিন্তু তারা তা দ্বারা উপলব্ধি করে না, তাদের চক্ষু রয়েছে; কিন্তু তারা তা দ্বারা দেখে না, তাদের কর্ণ রয়েছে; কিন্তু তা দ্বারা তারা শোনে না, তারাই হল পশুর ন্যায়; বরং তা অপেক্ষাও অধিক জঘন্য তারাই হল গাফিল বা অমনোযোগী’ (সূরা আল-আ‘রাফ : ১৭৯)।
‘আলিমদের উক্ত নীরবতার ও অবহেলার কারণে মানুষ বর্তমানে পার্থক্য করতে পারছে না যে, কোন্টা সুন্নাত, আর কোন্টা বিদ‘আত। এভাবেই রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আদর্শ সমাজ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে আর মনুষ্য সৃষ্টি বিদ‘আত মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। ফলে সাধারণ মুসলিমরা খুব সহজেই দ্বীন থেকে বিচ্যুত হয়ে বিদ‘আতে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে।
(চ) জাল ও যঈফ হাদীছের উপর নির্ভরতা
সমাজে বিদ‘আত চালু হওয়ার জন্য অন্যতম কারণ হল ‘আলিমগণের জাল ও যঈফ হাদীছের উপর নির্ভরতা। এমন অনেক বক্র হৃদয়ের ‘আলিম রয়েছে, যারা নিজেদের হীন স্বার্থকে চরিতার্থ করার জন্য এমন সব হাদীছের উপর নির্ভর করে থাকে যেগুলো মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও দুর্বল। দুঃখজনক বিষয় হল- ইসলামকে বিকৃত ও তার সৌন্দর্য নষ্ট করার জন্য ইহুদী-খ্রিষ্টানরা পরিকল্পিতভাবে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অসংখ্য হাদীছের রচনা করেছে এবং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছে। এ ব্যাপারে উম্মতকে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জোরালোভাবে সতর্ক করেছেন। হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ سَيَكُوْنُ فِىْ آخِرِ أُمَّتِىْ أُنَاسٌ يُحَدِّثُوْنَكُمْ مَا لَمْ تَسْمَعُوْا أَنْتُمْ وَلَا آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ
আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, অচিরেই আমার শেষ পর্যায়ের উম্মাতের মধ্যে এমন কিছু লোক জন্ম নেবে, যারা তোমাদেরকে এমন সব হাদীছ শুনাবে, যা তোমরাও শুননি এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরাও শুনেনি। অতএব তোমরা নিজেদেরকে তাদের থেকে রক্ষা করবে’।[১৪] বিনা ‘ইলমে ফৎওয়া দেয়ার পরিণাম সম্পর্কে ইসলামী শরী‘আতে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে। প্রখ্যাত ছাহাবী আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
مَنْ أَفْتَىْ بِغَيْرِ عِلْمٍ كَانَ إِثْمُهُ عَلَىْ مَنْ أَفْتَاهُ وَمَنْ أَشَارَ عَلَىْ أَخِيْهِ بِأَمْرٍ يَعْلَمُ أَنَّ الرُّشْدَ فِىْ غَيْرِهِ فَقَدْ خَانَهُ
‘যে ব্যক্তি ‘ইলম ব্যতীত ফৎওয়া প্রদান করল, তাঁর গুনাহ ফৎওয়া প্রদানকারীর উপরই বর্তাবে। যে ব্যক্তি তাঁর ভাইকে এমন পরামর্শ দিয়েছে যে সম্পর্কে সে জানে যে, কল্যাণ তাঁর অপর দিকেই রয়েছে, অথচ সে তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে’।[১৫] জেনে-বুঝে দুনিয়াবী স্বার্থে যেসকল ‘আলিম সত্যকে গোপন করে তাদের শাস্তি সম্পর্কে হাদীছে স্পষ্ট বক্তব্য এসেছে। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, مَنْ سُئِلَ عَنْ عِلْمٍ فَكَتَمَهُ أَلْجَمَهُ اللهُ بِلِجَامٍ مِنْ نَارٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‘যে ব্যক্তি তাঁর জানা ‘ইলম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয় কিন্তু সে তা গোপন করে, ক্বিয়ামতের দিন তাকে আগুনের লাগাম পরিধান করানো হবে’।[১৬]
জাল হাদীছ রচনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় পরিকল্পনা ছিল শী‘আ সম্প্রদায়ের। তারা তাদের নিজেদের মত ও পথকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অসংখ্য জাল হাদীছ রচনা করেছে। মূলত মুসলিম উম্মাহর মধ্যে তারাই সর্বপ্রথম বাড়াবাড়ির সূচনা করেছিল।[১৭] এই শী‘আরা ছাড়াও আরো অনেক পথভ্রষ্ট দলের অনুসারীরাও নিজেদের মতকে প্রতিষ্ঠা করা এবং প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে নতুন নতুন অসংখ্য হাদীছ রচনা করেছে। অতঃপর তারা তাদের তৈরি করা মিথ্যা হাদীছের উপর নির্ভর করে এবং তাদের স্বপক্ষে প্রধান দলীল হিসাবে উপস্থাপন করে। আর এভাবেই মুসলিম সমাজে অসংখ্য বিদ‘আত অনুপ্রবেশ করেছে।
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
* পি-এইচ. ডি গবেষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
তথ্যসূত্র :
[১]. শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু ‘আব্দিল ওয়াহহাব, মাসাইলুল জাহিলিয়্যাহ আল্লাতি খালাফা ফীহা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আহলাল জাহিলিয়্যাহ (কায়রো : আল-মাতবা‘আতুস সালাফিয়্যাহ, ১৩৪৭ হি.), পৃ. ১৫-১৬।
[২]. আল-ইরশাদু ইলা ছহীহিল ই‘তিক্বাদি ওয়ার রাদ্দি ‘আলা আহলিশ শিরকি ওয়াল ইলহাদ, পৃ. ২৪৯; আল-বিদ‘আতু : তা‘রীফুহা ওয়া আনওয়া‘উহা ওয়া আহকামুহা, পৃ. ২১।
[৩]. মুহাম্মাদ আল-মুঈন সিন্ধী, দিরাসাতুল লাবীব (লাহোর : বায়তুস সালতানাহ, ১২৮৪ হি./১৮৬৮ খ্রি.), পৃ. ১৫৬; ‘আব্দুল ‘আলী লাক্ষেèৗবী, ফাওয়াতিহুর রহমূত শারহ মুছাল্লামুস সুবূত (লাক্ষেèৗ : নওলকিশোর প্রেস, ১২৯৫ হি./১৮৭৮ খ্রি.), পৃ. ৬২৪।
[৪]. ‘আব্দুল ওয়াহহাব শা‘রানী, কিতাবুল মীযান, ১ম খণ্ড (দিল্লী : আকমালুল মাতাবে, ১২৮৬ হি.), পৃ. ১৮।
[৫]. ইউসুফ জয়পুরী, হাকীকাতুল ফিক্বহ (বোম্বাই : প্রকাশনা সংস্থা বিহীন, পরিবর্ধিত সংস্করণ, তা.বি.), পৃ. ৭৩।
[৬]. শাহ ওয়ালিউল্লাহ, ইক্বদুল জীদ (লাহোর : প্রকাশনা সংস্থা বিহীন, তা.বি.), পৃ. ৯৭।
[৭]. প্রাগুক্ত।
[৮]. ইবনুল ক্বাইয়িম আল-জাওযিয়্যাহ, ইলামুল মুওয়াক্কি‘ঈন ‘আন রাব্বিল ‘আলামীন, ২য় খণ্ড (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যাহ, ১ম সংস্করণ, ১৪১১ হি./১৯৯১ খ্রি.), পৃ. ১৩৯।
[৯]. আল-কাওলুল মুফীদ, পৃ. ১৫।
[১০]. হাকীকাতুল ফিকহ, পৃ. ৮৫।
[১১]. তিরমিযী, হা/২১৮০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৯৪৭; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৬৭০২; ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/৩২৯১, সনদ ছহীহ।
[১২]. আল-ইরশাদু ইলা ছহীহিল ই‘তিকাদি ওয়ার রাদ্দি ‘আলা আহলিশ শিরকি ওয়াল ইলহাদ, পৃ. ২৪৯-২৫০; আল-বিদ‘আতু : তা‘রীফুহা ওয়া আনওয়া‘উহা ওয়া আহকামুহা, পৃ. ২১-২২।
[১৩]. তিরমিযী, হা/২৬৮২; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৮৮; বায়হাকী, শু‘আবুল ঈমান, হা/১৬৯৬-১৬৯৭, সনদ ছহীহ।
[১৪]. ছহীহ মুসলিম, হা/৬।
[১৫]. আবূ দাঊদ, হা/৩৬৫৭; আল-মুসতাদরাকু ‘আলাছ ছহীহাইন, হা/৩৫০; মিশকাত, হা/২৪২, সনদ হাসান।
[১৬]. আবূ দাঊদ, হা/৩৬৫৮; তিরমিযী, হা/২৬৪৯; ইবনু মাজাহ, হা/২৬৪; আল-মুসতাদরাকু ‘আলাছ ছহীহাইন, হা/৩৪৪, ৩৪৫, ৩৪৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৪২৫; ত্বারারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/৩৩২২, সনদ ছহীহ।
[১৭]. ইবনু আবিল হাদীদ, শারহু নাহজিল বালাগাহ, ১১তম খণ্ড (মিসর : মাতবা‘আতু ‘ঈসা আল-হুল্লাবী, ১৩৮১ হি.), পৃ. ৪৮-৪৯।