মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৭:৪৩ পূর্বাহ্ন

কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা

মূল : ড. সাঈদ ইবনু আলী ইবনু ওয়াহাফ আল-ক্বাহত্বানী
অনুবাদ : হাফীযুর রহমান বিন দিলজার হোসাইন *


(৩য় কিস্তি) 

পঞ্চমতঃ হেদায়াত, কল্যাণ ও সফলতা তাদের জন্য, যারা আল-কুরআন ও সুন্নাহের অনুসরণ করে এবং তা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে থাকে

অল্লাহ তা‘আলা বলেন,

قَدۡ جَآءَکُمۡ  مِّنَ اللّٰہِ  نُوۡرٌ وَّ کِتٰبٌ مُّبِیۡنٌ- یَّہۡدِیۡ بِہِ اللّٰہُ مَنِ اتَّبَعَ رِضۡوَانَہٗ سُبُلَ السَّلٰمِ  وَ یُخۡرِجُہُمۡ مِّنَ الظُّلُمٰتِ اِلَی النُّوۡرِ بِاِذۡنِہٖ وَ یَہۡدِیۡہِمۡ  اِلٰی  صِرَاطٍ مُّسۡتَقِیۡمٍ

‘তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে জ্যোতি (আলো) ও স্পষ্ট কিতাব (কুরআন) এসেছে। আল্লাহ তদ্বারা তাদেরকে শান্তি ও নিরাপত্তার পথে পরিচালিত করেন যারা তাঁর সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করে এবং নিজ অনুমতিক্রমে তিনি তাদেরকে অন্ধকার হতে বের করে আলোর দিকে নিয়ে আসেন আর তাদেরকে সরল সঠিক পথে পরিচালিত করেন’ (সূরা আল-মায়েদাহ : ১৫-১৬)। তিনি আরো বলেন, فَاِمَّا یَاۡتِیَنَّکُمۡ مِّنِّیۡ ہُدًی ۬ۙ فَمَنِ اتَّبَعَ ہُدَایَ  فَلَا  یَضِلُّ وَ لَا یَشۡقٰی  ‘অতঃপর আমার নিকট থেকে তোমাদের কাছে সঠিক পথের নির্দেশ আসবে, তখন যে আমার পথ নির্দেশ অনুসরণ করবে সে পথভ্রষ্ট হবে না এবং কষ্টে পতিত হবে না’ (সূরা ত্বো-হা : ১২৩)। ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেছেন,

تَكَفَّلَ اللهُ لِمَنْ قَرَأَ الْقُرْآنَ وَعَمِلَ بِمَا فِيهِ أَنْ لَا يَضِلَّ فِي الدُّنْيَا وَلَا يَشْقَى فِي الْآخِرَةِ ثُمَّ قَرَأَ هَذِهِ الْآيَةَ

‘যে ব্যক্তি কুরআন পড়ে এবং তদনুযায়ী আমল করে আল্লাহ তার জন্য জিম্মাদার হয়ে যান। সে দুনিয়াতে পথভ্রষ্ট হবে না এবং আখেরাতে দুর্ভাগ্যদের অন্তর্ভুক্ত হবে না। অতঃপর তিনি এ আয়াতটি পাঠ করেন’।[১] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ ہٰذَا کِتٰبٌ اَنۡزَلۡنٰہُ مُبٰرَکٌ فَاتَّبِعُوۡہُ وَ اتَّقُوۡا لَعَلَّکُمۡ تُرۡحَمُوۡنَ ‘আর এ কিতাব যা আমরা অবতীর্ণ করলাম তা বরকতময়, কাজেই তা মান্য কর, আর আল্লাহকে ভয় করে চল, যাতে তোমাদের উপর দয়া বর্ষিত হয়’ (সূরা আল-আন‘আম : ১৫৫)। তিনি আরো বলেন,

الٓرٰ ۟ کِتٰبٌ اَنۡزَلۡنٰہُ  اِلَیۡکَ لِتُخۡرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمٰتِ اِلَی النُّوۡرِ ۬ۙ بِاِذۡنِ رَبِّہِمۡ  اِلٰی صِرَاطِ الۡعَزِیۡزِ  الۡحَمِیۡدِ

‘আলিফ-লাম-র, এটা কিতাব যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যাতে আপনি মানুষকে তাদের প্রতিপালকের নির্দেশে অন্ধকার নিয়ে আসতে পারেন আলোর দিকে- মহাপরাক্রমশালী প্রশংসিতের পথে’ (সূরা ইবরাহীম : ১)। মহান আল্লাহ বলেন, ہٰذَا بَیَانٌ لِّلنَّاسِ وَ ہُدًی وَّ مَوۡعِظَۃٌ لِّلۡمُتَّقِیۡنَ ‘এটা হচ্ছে মানুষের জন্য সুস্পষ্ট বর্ণনা এবং মুত্তাক্বীদের জন্য হেদায়াত ও নছীহত’ (সূরা আলি ‘ইমরান : ৩৮)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, وَ نُنَزِّلُ مِنَ الۡقُرۡاٰنِ مَا ہُوَ شِفَآءٌ وَّ رَحۡمَۃٌ  لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ ۙ وَ لَا یَزِیۡدُ الظّٰلِمِیۡنَ  اِلَّا  خَسَارًا ‘আমরা কুরআন হতে অবতীর্ণ করি যা মুমিনদের জন্য আরোগ্য ও রহমত, কিন্তু তা যালিমদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে’ (সূরা বানী ইসরাঈল : ৮২)। মহান আল্লাহ বলেন,

وَ کَذٰلِکَ  اَوۡحَیۡنَاۤ  اِلَیۡکَ رُوۡحًا مِّنۡ اَمۡرِنَا ؕ مَا کُنۡتَ تَدۡرِیۡ مَا الۡکِتٰبُ وَ لَا  الۡاِیۡمَانُ وَ لٰکِنۡ جَعَلۡنٰہُ  نُوۡرًا نَّہۡدِیۡ  بِہٖ مَنۡ نَّشَآءُ  مِنۡ عِبَادِنَا ؕ وَ اِنَّکَ لَتَہۡدِیۡۤ  اِلٰی صِرَاطٍ مُّسۡتَقِیۡمٍ

‘এভাবে আমার নির্দেশের মূল শিক্ষাকে তোমার কাছে আমি অহী যোগে প্রেরণ করেছি। তুমি জানতে না কিতাব কী, ঈমান কী, কিন্তু আমি একে (অর্থাৎ অহি যোগে প্রেরিত কুরআনকে) করেছি আলো, যার সাহায্যে আমার বান্দাদের মধ্য হতে যাকে ইচ্ছা আমি সঠিক পথে পরিচালিত করি। তুমি নিশ্চয়ত (মানুষদেরকে) সঠিক পথের দিকে নির্দেশ করছ’ (সূরা আশ-শূরা : ৫২)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন, وَ الَّذِیۡنَ یُمَسِّکُوۡنَ بِالۡکِتٰبِ وَ اَقَامُوا الصَّلٰوۃَ ؕ اِنَّا لَا نُضِیۡعُ اَجۡرَ الۡمُصۡلِحِیۡنَ ‘যারা কিতাবকে (কুরআনকে) শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে, ছালাত প্রতিষ্ঠা করে, আমি (এসব) সৎকর্মশীলদের কর্মফল কখনো বিনষ্ট করি না’ (সূরা আলÑ‘আরাফ : ১৭০)।

আর রাসূল (ﷺ)-এর আনুগত্য করার ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা (কুরআন মাজীদে) চল্লিশটি স্থানে আদেশ করেছেন।[২] যেমনটি তিনি বলেন,

قُلۡ اَطِیۡعُوا اللّٰہَ وَ اَطِیۡعُوا الرَّسُوۡلَ ۚ فَاِنۡ  تَوَلَّوۡا فَاِنَّمَا عَلَیۡہِ مَا حُمِّلَ وَ عَلَیۡکُمۡ مَّا حُمِّلۡتُمۡ ؕ وَ اِنۡ تُطِیۡعُوۡہُ تَہۡتَدُوۡا ؕ وَ مَا عَلَی الرَّسُوۡلِ  اِلَّا الۡبَلٰغُ الۡمُبِیۡنُ

‘(হে নবী!) আপনি বলুন, আল্লাহ‌র আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর। অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তার উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য সে - ই দায়ী এবং তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তোমরাই দায়ী; এবং তোমরা তার আনুগত্য করলে সৎপথ পাবে, আর রাসূলের কাজ তো কেবল স্পষ্টভাবে পৌঁছিয়ে দেয়’ (সূরা আন-নূর : ৫৪)। তিনি আরো বলেন,

قُلۡ  اِنۡ کُنۡتُمۡ تُحِبُّوۡنَ اللّٰہَ فَاتَّبِعُوۡنِیۡ یُحۡبِبۡکُمُ اللّٰہُ وَ یَغۡفِرۡ لَکُمۡ ذُنُوۡبَکُمۡ ؕ وَ اللّٰہُ غَفُوۡرٌ  رَّحِیۡمٌ

‘(হে নবী!) আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তবে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করবেন। বস্তুত আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা আলি ‘ইমরান : ৩১)। মহান আল্লাহ বলেন,

وَ مَنۡ یُّطِعِ اللّٰہَ وَ رَسُوۡلَہٗ یُدۡخِلۡہُ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَا ؕ وَ ذٰلِکَ الۡفَوۡزُ  الۡعَظِیۡمُ

‘এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের অনুসরণ করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করবেন, যার পাদদেশ ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, তারা তাতে চিরস্থায়ী হবে এবং এটাই বিরাট সাফল্য’ (সূরা আন-নিসা : ১৩)।

নবী করীম (ﷺ) বিদায় হজ্জের ভাষণে বলেন,

(تَرَكْتُ فِيْكُمْ مَا لَنْ تَضِلُّوْا بَعْدَهُ إِنِ اعْتَصَمْتُمْ بِهِ كِتَابَ اللهِ - (وَسُنَّةَ نَبِيِه

‘আমি তোমাদের মাঝে এমন এক জিনিস রেখে যাচ্ছি, যা শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে থাকলে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব [এবং নবীর সুন্নাহ তথা হাদীছ]’।[৩]

ষষ্ঠতঃ উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য নবী করীম (ﷺ)-এর সর্ববৃহৎ অছিয়ত হল কুরআন ও সুন্নাহ

আব্দুল্লাহ ইবনু আবূ ‘আওফা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) -এর বর্ণিত হাদীছ, যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে,

هَلْ أَوْصَى النَّبِيُّ ﷺ ؟ فَقَالَ بَعْدَ ذَالِكَ أَوْصَى بِكِتَابِ اللهِ

‘নবী করীম (ﷺ) কি কখনো অছিয়ত করেছিলেন? অতঃপর তিনি বললেন, তিনি আল্লাহর কিতাবের অর্থাৎ কুরআনের প্রতি অছিয়ত করেছেন’।[৪] নবী করীম (ﷺ) যখন মদীনার পথে ছিলেন, তখন তিনি আল্লাহর কিতাব (অর্থাৎ কুরআনকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরার) অছিয়ত করেন। অতঃপর বলেন,

وَأَنَا تَارِكٌ فِيْكُمْ ثَقَلَيْنِ أَوَّلُهُمَا كِتَابُ اللهِ فِيْهِ الْهُدَى وَالنُّوْرُ (هو حبل الله من اتبعه كان على الهدى ومن تركه كان على الضلالة) فَخُذُوْا بِكِتَابِ اللهِ وَاسْتَمْسِكُوْا بِهِ. فَحَثَّ عَلَى كِتَابِ اللهِ وَرَغَّبَ فِيْهِ ثُمَّ قَالَ وَأَهْلُ بَيْتِىْ أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِىْ أَهْلِ بَيْتِىْ أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِىْ أَهْلِ بَيْتِىْ أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِىْ أَهْلِ بَيْتِىْ.ثلاث مرات

‘আমি তোমাদের নিকট ভারী দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। এর প্রথমটি হল- আল্লাহর কিতাব। এতে হেদায়াত এবং আলোকবর্তিকা রয়েছে [আর তা হল- আল্লাহর রজ্জু; যে ব্যক্তি তার অনুসরণ করল সে হেদায়াতের উপর থাকল, আর যে ব্যক্তি তা ছেড়ে দিল সে গোমরাহির উপর থাকল]। অতএব তোমরা আল্লাহর কিতাবকে অনুসরণ করো, একে শক্তভাবে আঁকড়ে ধর। অতঃপর তিনি কুরআনের প্রতি উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিলেন। এরপর তিনি বলেন, আর দ্বিতীয়টি হল, আমার আহলে বায়েত তথা পরিবারবর্গ। আর আমি আহলে বায়েতের বিষয়ে তোমাদের আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। একথা তিনি তিনবার বললেন’।[৫]

সপ্তমতঃ কুরআনুল কারীম হক্বের উপর ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ প্রদান করে এবং মতানৈক্য সৃষ্টি করতে নিষেধ করে

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ اعۡتَصِمُوۡا بِحَبۡلِ اللّٰہِ جَمِیۡعًا وَّ لَا تَفَرَّقُوۡا ۪ وَ اذۡکُرُوۡا نِعۡمَتَ اللّٰہِ عَلَیۡکُمۡ  اِذۡ  کُنۡتُمۡ اَعۡدَآءً فَاَلَّفَ بَیۡنَ قُلُوۡبِکُمۡ فَاَصۡبَحۡتُمۡ بِنِعۡمَتِہٖۤ اِخۡوَانًا ۚ وَ کُنۡتُمۡ عَلٰی شَفَا حُفۡرَۃٍ مِّنَ النَّارِ فَاَنۡقَذَکُمۡ مِّنۡہَا ؕ کَذٰلِکَ یُبَیِّنُ اللّٰہُ لَکُمۡ اٰیٰتِہٖ  لَعَلَّکُمۡ  تَہۡتَدُوۡنَ

‘আল্লাহর রজ্জুকে সমবেতভাবে শক্ত করে আঁকড়ে ধর, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না এবং তোমাদের প্রতি আল্লাহর নে‘মত স্মরণ কর, যখন তোমরা ছিলে পরস্পর শত্রু। তিনি তোমাদের অন্তরে প্রীতির সঞ্চার করলেন, ফলে তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহে ভাই ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নি-গহ্বরের প্রান্তে ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদেরকে তাত্থেকে রক্ষা করলেন। এভাবে আল্লাহ নিজের নিদর্শনাবলী তোমাদের নিকট স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন যাতে তোমরা সঠিক পথপ্রাপ্ত হও’ (সূরা আলে ‘ইমরান : ১০৩)। সুতরাং এই কিতাবকে তথা কুরআনকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরার পরে তা হতে বিচ্ছিন্ন না হওয়ার প্রতি আদেশ করেছেন। ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

أَمَرَهُمْ بِالْجَمَاعَةِ وَنَهَاهُمْ عَنْ التَّفْرِقَة وَقَدْ وَرَدَتْ الأَحَادِيْثُ الْمُتَعَدِّدَة بِالنَّهْيِ عَنْ التَّفَرُّق والأَمْر بِالاِجْتِمَاعِ وَالاِئْتِلَاف

‘আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে জামা‘আতবদ্ধভাবে থাকার আদেশ করেছেন এবং পৃথক বা বিচ্ছিন্ন হতে নিষেধ করেছেন। পৃথক হওয়া থেকে নিষেধ করে জামা‘আতবদ্ধ এবং বন্ধু ভাবাপন্ন হওয়ার আদেশ করেন’।[৬]  যেমন ছহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে,

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ اللهَ يَرْضَى لَكُمْ ثَلَاثًا وَيَكْرَهُ لَكُمْ ثَلَاثًا فَيَرْضَى لَكُمْ أَنْ تَعْبُدُوْهُ وَلَا تُشْرِكُوْا بِهِ شَيْئًا وَأَنْ تَعْتَصِمُوْا بِحَبْلِ اللهِ جَمِيْعًا وَلَا تَفَرَّقُوْا وَيَكْرَهُ لَكُمْ قِيْلَ وَقَالَ وَكَثْرَةَ السُّؤَالِ وَإِضَاعَةَ الْمَالِ

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা তিনটি কাজ পসন্দ করেন এবং তিনটি কাজ অপসন্দ করেন। তোমাদের জন্য তিনি যা পসন্দ করেন, তা হল : ১. তোমরা তাঁরই ইবাদত করবে, ২. তাঁর সঙ্গে কিছুই শরীক করবে না এবং ৩. তোমরা সমবেতভাবে আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরবে এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না। আর যে সকল বিষয় তিনি তোমাদের জন্য অপসন্দ করেন, সেগুলো হল, ১. অনর্থক কথাবার্তা বলা, ২. অধিক প্রশ্ন করা এবং ৩. সম্পদ বিনষ্ট করা’।[৭] মহান আল্লাহ বলেন,

وَ مَنۡ یُّشَاقِقِ الرَّسُوۡلَ مِنۡۢ بَعۡدِ مَا تَبَیَّنَ لَہُ الۡہُدٰی وَ یَتَّبِعۡ غَیۡرَ سَبِیۡلِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ نُوَلِّہٖ مَا تَوَلّٰی وَ نُصۡلِہٖ جَہَنَّمَ ؕ وَ سَآءَتۡ مَصِیۡرًا

‘যে ব্যক্তি সঠিক পথ প্রকাশিত হওয়ার পরও রাসূলের বিরোধিতা করে এবং মুমিনদের পথ বাদ দিয়ে ভিন্ন পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে সে পথেই ফিরাব যে পথে সে ফিরে যায়, আর তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করব, কত মন্দই না সে আবাস’ (সূরা আন-নিসা : ১১৫)। অর্থাৎ মুহাম্মাদ (ﷺ) যে শরী‘আত (বিধি-বিধান) নিয়ে এসেছেন তা ব্যতীত যে ভিন্ন কোন পথে চলবে, সেই বিরুদ্ধাচরণের ধরনটি হবে তাঁর নিকট সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর স্বেচ্ছায় তাঁর বিরোধিতা করা এবং যে ব্যক্তি মুমিনদের পথ (ছাহাবায়ে কেরামের পথ) যে পথের উপর তাঁরা একত্রিত হয়েছেন তা ব্যতীত ভিন্ন কোন পথের অনুসরণ করবে, নিশ্চয় আমি এ কারণে তাকে তার প্রতিদান (শাস্তি) দিব।[৮]

(ইনশাআল্লাহ চলবে)

* নারায়ণপুর, নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর।

তথ্যসূত্র :
[১]. শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া, ১৯তম খণ্ড, পৃ. ৭৭।
[২]. শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া, ১৯তম খণ্ড, পৃ. ৮৩।
[৩]. ছহীহ মুসলিম, হা/১২১৮ ‘হজ্জ’ অধ্যায়, ‘নবী করীম (ﷺ)-এর হজ্জ’ অনুচ্ছেদ; মুস্তাদরাকে হাকেম, ১/৯৩ পৃ.; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, ১/২১ পৃ.; আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) একে ‘হাসান’ বলেছেন।
[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/২৭৪০ ‘অছিয়ত’ অধ্যায়, ‘অছিয়ত’ অনুচ্ছেদ; ছহীহ মুসলিম, হা/১৬৩৪ ‘অছিয়ত’ অধ্যায়, ‘যার কাছে অছিয়ত যোগ্য কিছু নেই, তার অছিয়ত না করা’ অনুচ্ছেদ।
[৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৪০৮ ‘ছাহাবী (রাযিয়াল্লাহু আনহুম)-গণের মর্যাদা’ অধ্যায়, ‘আলী ইবনু আবু ত্বালিব (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর মর্যাদা’ অনুচ্ছেদ।
[৬]. তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ২য় খণ্ড, পৃ. ৮৯।
[৭]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৭১৫  ‘বিচার ফায়ছালা’ অধ্যায়, ‘বিনা প্রয়োজনে অধিক প্রশ্ন করা এবং অনর্থক কথাবার্তা বলা নিষেধ’ অনুচ্ছেদ।
[৮]. তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪১২।




প্রসঙ্গসমূহ »: বিবিধ সমাজ-সংস্কার
বিদায় হজ্জের ভাষণ : তাৎপর্য ও মূল্যায়ন - অধ্যাপক মো. আকবার হোসেন
সূদ-ঘুষ ও অবৈধ ব্যবসা (৭ম কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ফিলিস্তীন, হে মুসলিম! - শায়খ মতিউর রহমান মাদানী
ইসলামে রোগ ও আরোগ্য (৪র্থ কিস্তি) - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
আল-কুরআন তেলাওয়াতের আদব - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
ফাযায়েলে কুরআন (৫ম কিস্তি) - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
আধুনিক যুগে দাওয়াতী কাজের পদ্ধতি - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
কুরআনী প্রবাদ সংকলন : তাৎপর্য ও শিক্ষা - প্রফেসর ড. লোকমান হোসেন
মূর্তিপূজার ইতিহাস - অধ্যাপক মো. আকবার হোসেন
তওবার গুরুত্ব ও ফযীলত (শেষ কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
ইসলামী তাবলীগ বনাম ইলিয়াসী তাবলীগ (৪র্থ কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা (৪র্থ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আযীযুর রহমান

ফেসবুক পেজ