সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২৪ অপরাহ্ন

 স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের আলোকে ছিয়াম সাধনা

-ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর



ভূমিকা

বান্দার জন্য ছিয়াম সাধনা করা মহান আল্লাহর এক অন্যতম নির্দেশ। আর আল্লাহ প্রদত্ত প্রতিটি বিধানই মানবকুলের জন্য কল্যাণকর। নিঃসন্দেহে ছিয়ামও মানব জাতির জন্য কল্যাণকর এক ইবাদত। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে- ‘বেশি বাঁচবি তো কম খা’। এটি বৈজ্ঞানিকভাবে সত্য। একাদশ শতাব্দীতে বিখ্যাত মুসলিম চিকিৎসক ইবনে সীনা তাঁর রোগীদের তিন সপ্তাহের জন্য উপবাস পালনের পরামর্শ দিতেন।[১] মাঝে মধ্যে ছিয়াম পালন করা মানুষের অত্যন্ত উপকারী, সেকথায় উপরের বাক্যে ফুটে উঠেছে। ছিয়াম অবস্থায় কিছু লোক ঘন ঘন থুথু ফেলেন। তাদের ধারণা থুথু গিললে ছিয়াম ভঙ্গ হয়ে যায়। এটা নিতান্তই ভুল ধারণা। ঘন ঘন থুথু ফেলা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। থুথুর সাথে দেহের অনেক মূল্যবান পদার্থ যেমন ‘টায়ালিন’ (Ptyalin) বেরিয়ে যাওয়ায় শরীর অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। এ বদভ্যাস অবশ্যই পরিত্যাজ্য। এক গবেষণায় সুস্থ ছিয়াম পালনকারীদের মধ্যে কোন প্রকার ক্ষতির লক্ষণ পাওয়া যায়নি। এদের রক্তচাপ, ECG, Blood, Biochemistry সহ সবরকম পরীক্ষার ফলাফল স্বাভাবিক পাওয়া গেছে।[২] নিম্নে ছিয়ামের স্বাস্থ্যগত উপকার তুলে ধরার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।

বদহজম

মানুষের অতি সাধারণ এবং বহুল পরিচিত রোগ বদহজম। যে রোগ সাধরণত ক্ষুধার পূর্বে খাওয়া, অধিক পরিমাণে আহার করা, পরিশ্রমের পর বিশ্রামের পূর্বেই আহার করা ইত্যাদি কারণে হয়ে থাকে। এই অতিরিক্ত খাবার দ্রুতগতিতে ক্ষুধান্দের নীচের অংশে নেমে আসে ফলে ঐ খাদ্যের সঙ্গে প্রয়োজনীয় এনজাইম সুষ্ঠুভাবে ক্রিয়া করতে না পারায়, উক্ত খাদ্যের সঙ্গে সিকামে অবস্থিত জীবাণু দ্বারা গ্যাস সৃষ্টি হয়। এর ফলে পেট ব্যথা, পেট ফাঁপা, দুর্গন্ধযুক্ত বায়ু নিঃসরণ হওয়া, বমি হওয়া, এমনকি শুরু হতে পারে ইনডাইজেসটিভ ডায়রিয়া। আর ডায়রিয়া থেকে শুরু হয় ডিহাইড্রেশন বা জলশূন্যতা। পরিণামে মৃত্যুও হতে পারে।[৩] ছিয়াম পালনকারী ব্যক্তি সাধারণত এসব সমস্যা থেকে বেঁচে থাকে। যা স্বাভাবিকভাবে বদহজম দূর হওয়ার প্রধান অবলম্বন।

একজন আমেরিকান অমুসলিমকে ছিয়াম পালন করতে দেখে ডাঃ তারেক মাহমুদ জিজ্ঞেস করেছিলেন, তুমি কেন ছিয়াম রাখ? সে বলল, ছিয়াম রাখার কারণ এই যে, বছরে কিছু সময় মানুষের জন্য এমনভাবে অতিবাহিত করা উচিৎ যেন সে ডায়েটিং করে স্বীয় হযম পদ্ধতিকে (Digestive System) কিছু সময়ের জন্য অবসর রাখবে, এভাবে তার মধ্যে বিদ্যমান আদ্রতা যা সময় সাপেক্ষে বিষে (Poison) পরিণত হয়ে যায় তা ছিয়াম দ্বারা নিঃশেষ হয়ে যায়। আর এই মারাত্মক আদ্রতা নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার ফলে অনেক জটিল জটিল রোগ নিঃশেষ হয়ে যায়। এভাবেই হযম পদ্ধতি পূর্ব অপেক্ষা শক্তিশালী হয়ে উঠে।[৪]

মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র

ছিয়াম মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নানাভাবে উপকার করে। ছিয়াম মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের উপর সর্বাধিক প্রভাব বিস্তার করে, তাকে উজ্জীবিত ও উর্বর করে। এর ফলে মানুষের ধ্যান-ধারণা, মন-মানসিকতা পরিচ্ছন্ন হয় এবং স্নায়ুবিক অবসাদ ও দুর্বলতা দূর করে, সুদীর্ঘ অনুচিন্তন ও ধারণ সম্ভব হয়। ফলে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের এক অতুলনীয় ভারসাম্য সৃষ্টি হয়, যা সুস্থ স্নায়ুবিক প্রক্রিয়ার পথ প্রদর্শন করে এবং সূক্ষ্ম অনুকোষগুলো জীবাণুমুক্ত ও সবল রাখে।[৫] ছিয়ামের বদৌলতে মস্তিষ্কের অবসাদ বিদূরিত হওয়ায় সুদীর্ঘ অনুচিন্তন এবং গভীর ধ্যান সম্ভব হয়। কারণ এতে মুক্ত রক্তপ্রবাহ স্নায়ুবিক যন্ত্রের অবগাহন ঘটায় এবং মস্তিষ্কের সূক্ষ্ম অনুকোষগুলো জীবাণুমুক্ত ও সবল হয়। এই অবস্থা মস্তিষ্ককে অধিক শক্তিশালী করে এবং স্বীয় শক্তি বাড়িয়ে দেয়।[৬]

পণ্ডিতগণ বলেছেন, Empty stomach is the power house of knowledge. ‘ক্ষুধার্ত উদর জ্ঞানের আঁধার’। ছিয়াম সাধনায় মানুষের মানসিক ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। মনোসংযোগ ও যুক্তি প্রমাণে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়। আর স্নায়ুবিক প্রখরতার জন্য ভালবাসা, আদর-স্নেহ, সহানুভূতি, অতিন্দ্রীয় এবং আধ্যাত্মিক শক্তির উন্মেষ ঘটে। তাছাড়া ঘ্রাণ শক্তি, দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি ও বোধশক্তির তীক্ষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। এ ব্যাপারে ডাঃ আলেক্স হেইগ বলেন, ‘ছিয়াম হতে মানুষের মানসিক শক্তি ও বিশেষ বিশেষ অনুভূতিগুলো উপকৃত হয়। স্মরণশক্তি বাড়ে, মনোসংযোগ ও যুক্তিশক্তি পরিবর্ধিত হয়’।[৭]

ডা. লাস্ট বারনার বলেন, ফুসফুসে কাশি, লোবার, নিউমোনিয়া, কঠিন কাশি, সর্দি এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রভৃতি রোগ ছিয়ামের দ্বারা আরোগ্য হয়। এছাড়াও একজন সুস্থ মানুষের জন্য ছিয়ামের গুরুত্ব কোন অংশেই কম নয়। এ সময় অবাধ গতিতে বাতাস ফুসফুসে প্রবেশ করতে পারে। ছিয়াম পালনকালে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র সর্বাধিক উজ্জীবিত হয়।[৮]

সিগমণ্ড নারায়েড (Sigmond Narayad) ছিলেন একজন বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী। তার থিওরি (Theory) মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের জন্য পথিকৃত। তিনি অভুক্ত থাকা ও ছিয়াম রাখার পক্ষপাতি ছিলেন। তিনি বলেন, ছিয়াম মনস্তাত্ত্বিক ও মস্তিষ্ক রোগ (Mental and Psychological) নির্মূল করে। মানব দেহে আবর্তন-বিবর্তন আছে। কিন্তু ছায়েম ব্যক্তির শরীর বরংবার বাহ্যিক চাপ (External Pressure) গ্রহণ করার ক্ষমতা অর্জন করে। ছায়েম ব্যক্তির দৈহিক খিচুনী (Body Congestion) এবং মানসিক অস্থিরতা (Mental Depression)-এর মুখোমুখী হয় না।[৯]

হৃদপিণ্ড ও ধমনিতন্ত্র

ছিয়াম সাধনায় হৃদপিণ্ড ও ধমনির সচলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। মানব দেহে অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি জমার কারণে রক্তে কোলেস্টেরল (Cholesterol) বেশি থাকে। রক্তে স্বাভাবিক কোলেস্টেরলের পরিমাণ হল ১২৫-১৫০ মিলিগ্রাম, ১০০ মিলিমিটার সিরামে (প্লাজমে)। এর বেশি হলে হৃদপিণ্ড, ধমনিতন্ত্র ও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো মারাত্মক রোগ-ব্যধি সৃষ্টি করে এবং ক্রমশ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। যেমন- হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, বহুমূত্র, পিত্ত থলিতে পাথর, বাত প্রভৃতি মারাত্মক জটিল রোগ। কিন্তু নিয়মিত ছিয়াম পালনের ফলে দেহে অতিরিক্ত মেদ জমতে পারে না এবং রক্তের কোলেস্টেরলের পরিমাণ স্থিতিশীল করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।[১০] ছিয়াম পালন করার কারণে সারাদিন না খাওয়ায় এবং দীর্ঘ এক মাস এই প্রক্রিয়া চালু থাকায় তাদের শরীরে নতুন করে কোন কোলেস্টেরল জমা হওয়ার সুযোগ পায় না। বরং আগের জমাকৃত কোলেস্টেরলগুলোও ব্যয়িত হয়ে তার পরিমাণ কমে যায়। ফলে ড্রেজার দিয়ে নদী ড্রেজিং করলে সেখানে যেমন পানির প্রবাহ বেড়ে যায়, তেমনি এই শিরাগুলোর রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পায় এবং তার ফলে তারা এসব ভয়াবহ রোগের হাত থেকে মুক্তি পায়।[১১] তাছাড়া হৃদপিণ্ডের ধমনি সহ সকল প্রকার ধমনিতন্ত্রগুলোও স্বাভাবিক পরিষ্কার, সচল ও সক্রিয় রাখে।

রক্তের উপর ছিয়ামের প্রভাব এবং তার পরিচ্ছন্নতা

হাড়ের মজ্জার মধ্যে রক্ত তৈরি হয়। শরীরে যখন রক্তের প্রয়োজন পড়ে তখন এক প্রকার স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি হাড়ের মজ্জাকে আন্দোলিত করে তোলে। ছিয়াম কালীন সময়ে যখন রক্তের মধ্যে খাদ্যের পদার্থ সর্বনিন্ম স্তরে পৌঁছে যায়, তখন হাড়ের মজ্জা আন্দোলিত হতে থাকে। এভাবে একজন দুর্বল লোক ছিয়াম পালনের দ্বারা সহজেই নিজের দেহে রক্ত বৃদ্ধি করে নিতে পারে।[১২] যে ব্যক্তি রক্ত দূষণজনিত মারাত্মক ব্যধিতে আক্রান্ত রয়েছে তার জন্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হতেই হবে, তবে ছিয়াম রাখাকালীন যেহেতু কিডনি স্বস্তি ও শান্তিতে থাকতে পারে, তাই তা হাড়ের মজ্জার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী এত পরিমাণ প্রয়োজনীয় পদার্থ সরবরাহ করতে পারে। যার দ্বারা অতি সহজেই আরো অধিক পরিমাণে রক্ত সৃষ্টি হতে পারে।[১৩]

ছিয়াম ব্লাডপ্রেসার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। দিনের বেলা ছিয়াম পালন করার ফলে রক্তের পরিমাণ কিছুটা হ্রাস পায়। কিন্তু এটি কোন ভাবেই ক্ষতিকর নয়। এর প্রভাবে যকৃত পায় বিশ্রাম। ছিয়াম দ্বারা Diastolic প্রেসারের মাত্রা সর্বদা কম থাকে। ছিয়াম পালনকালে রক্তের ধমনির উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়ে।[১৪]

এক গবেষণায় প্রমাণিত হয় যে, যারা মনে করেন যে, ছিয়াম পালনের দ্বারা রক্তের পটাসিয়াম কমে যায় এবং তাতে শরীরের ক্ষতি সাধিত হয়, তাদের এ ধারণা অমূলক। কারণ পটাসিয়াম কমার প্রতিক্রিয়া প্রথমে দেখা দিয়ে থাকে হৃৎপিণ্ডের উপর, অথচ ১১ জন ছিয়াম পালনকারীর হৃৎপিণ্ড অত্যাধুনিক ইলেকট্রোকডিওগ্রাম যন্ত্রের সাহায্যে (রামাযানের পূর্বে ও ছিয়াম রাখার ২৫ দিন পর) পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, ছিয়ামপালনের দ্বারা তাদের হৃৎপিণ্ডের ক্রিয়ার কোনই ব্যতিক্রম ঘটেনি।[১৫]

সুতরাং বুঝা গেল যে, ছিয়াম দ্বারা রক্তের যে পটাসিয়াম কমে তা অতি সামান্য এবং স্বাভাবিক সীমারেখার মধ্যে। তবে ছিয়াম দ্বারা যে কোন মানুষ কিছুটা খিটখিটে মেযাজের হয়ে যায়, তা সামান্য রক্ত-শর্করা কমার দরুনই হয়ে থাকে। যা স্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেই ক্ষতিকর নহে। অন্য সময় ক্ষুধা পেলেও এরূপ হয়ে থাকে।

উচ্চ রক্তচাপ (হাইপরটেনশান)

অধিক ভক্ষণ, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ ইত্যাদি কারণে চর্বি জমে রক্তবাহী নালিকাগুলো সরু হয়ে যায়। ফলে ভেইন (শিরা) ও আর্টারীতে রক্তচাপ বেড়ে যায়; একে বলে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশান। চর্বি জমে সূক্ষ্ম আর্টারীগুলো আরো সরু হয়, ফলে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রক্ত সরবরাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়। তা থেকে হার্ট, ব্রেইন, কিডনি ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সৃষ্টি হয় হার্টের করোনারী থ্রোম্বসিস, মস্তিষ্কে সেরিব্রাল থ্রম্বসিস, কার্ডিয়াক এ্যাজমা, এমনকি হার্টফেইলুর। চোখের রক্তবাহী আর্টারী সরু হওয়ায় চোখের রেটিনার নানারূপ পরিবর্তন দেখা দেয়। মস্তিষ্কে থ্রম্বোসিস হয়ে একচোখের দৃষ্টি কমে যাওয়া, মুখমণ্ডল বাঁকা হয়ে যাওয়া, দেহের অর্ধাংশ অবশ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায়। অত্যধিক রক্তচাপের কারণ হতে পারে C.V.A (কাডিও ভ্যাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট), তাতে হতে পারে তাৎক্ষণিক মৃত্যু বা কয়েকদিন পর্যন্ত বেহুঁশ এর পর মৃত্যু।[১৬] ছায়েম ব্যক্তির ছিয়ামের আগুনে তার শরীরের চর্বি কমিয়ে আনতে পারে। নিয়মিত তেলাওয়াত ও ইবাদতের ফলে হাইপারটেনশান ও তা থেকে সৃষ্ট নানাবিধ জটিল উপসর্গ থেকে শরীরকে রক্ষা করতে পারে।

লিভার ও কিডনি

লিভার ও কিডনি মানুষের শরীরের অন্যতম দু’টি ইঞ্জিন। যকৃত (Liver) মানব দেহের এক বৃহত্তম গ্রন্থি। যকৃতের ডান অংশের নীচে পিত্তথলি থাকে। যকৃত কর্তৃক ক্ষারিত পিত্ত জীবদেহের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় উপাদান। যকৃতের কার্যক্ষমতা লোপ পেলে জণ্ডিস, লিভার সিরোসীস সহ জটিল রোগে আক্রান্ত হতে হয়। স্নেহ পদার্থ শোষণে পিত্তলবণ অংশ নেয়। এ ছাড়াও ল্যাক্সেটিভ কাজে অংশ নেয় এবং কোলেস্টেরল লিসিথিন ও পিত্তরঞ্জক দেহ হতে বর্জন জরে।[১৭] কিন্তু ছিয়াম সাধনার ফলে এই কার্যক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পায় এবং সকল অঙ্গগুলো সক্রিয় হয়ে উঠ। অন্যথায় ছিয়ামের অসীলায় যকৃত ৪ হতে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত স্বস্তি গ্রহণ করে। বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে এ দাবী খুবই যুক্তিযুক্ত যে, যকৃতের এই অবসর গ্রহণের সময়কাল বছরে কমপক্ষে একমাস হওয়া একান্ত বাঞ্ছনীয়।[১৮] কেননা যকৃতের দায়িত্বে খাবার হযম করা ব্যতীত আরো পনের প্রকার কাজের উপর প্রভাব বিস্তার করে।[১৯] তাছাড়া যকৃত স্বীয় শক্তিকে রক্তের মধ্যে এষড়নঁষরহ সৃষ্টিতে ব্যয় করতে সক্ষম হয়।[২০]

অনুরূপ কিডনিও (Kidney) শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের নাম। কিডনিকে জীবনও বলা হয়। কিডনি দেহে ছাকনী হিসাবে কাজ করে। যাকে রেচনতন্ত্র বলা হয়। কিডনি প্রতি মিনিটে ১ হতে ৩ লিটার রক্ত সঞ্চালন করে। রক্তের অপদ্রব্য পৃথকীকরণের মাধ্যমে মূত্রথলিতে প্রেরণ করে।[২১] ছিয়াম অবস্থায় কিডনি বিশ্রামে থাকে।[২২] কিন্তু তার রেচনক্রিয়া অব্যাহত রেখে পেশাবের মাধ্যমে অতিরিক্ত বর্জ্য পদার্থ ত্যাগ করে, যার জন্য মানুষ সুস্থ থাকে এবং রক্ত পরিষ্কার ও বর্ধিত হয়।

পাকস্থলী ও অন্ত্র :

ডাঃ সলোমান তার গার্হস্থ্য স্বাস্থ্য বিধিতে মানব দেহকে ইঞ্জিনের সাথে তুলনা করে বলেন, ‘ইঞ্জিন রক্ষা কল্পে­ মাঝে মাঝে ডকে নিয়ে চুল্লি­ হতে ছাই ও অঙ্গার সম্পূর্ণরূপে নিষ্কাষিত করা যেমন আবশ্যক, উপবাস দ্বারা মাঝে মাঝে পাকস্থলী হতে অজীর্ণ খাদ্য নিষ্কাষিত করাও তেমনি আবশ্যক’।[২৩] যকৃত ও পাকস্থলীর অবস্থান পাশাপাশি। কখনো বিভিন্ন খারাপ খাদ্যের প্রভাব যকৃতের উপর পড়ে। পাকস্থলী স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটারাইজড মেশিন। যার ভিতরে অনায়াসে বিভিন্ন প্রকার খাবার হজম হয়। পাকস্থলীসহ অন্যান্য অঙ্গ সক্রিয়ভাবে ২৪ ঘণ্টা কর্তব্যরত থাকা ছাড়াও স্নায়ুচাপ ও খারাপ খাদ্যের প্রভাবে এতে এক প্রকার ক্ষয় সৃষ্টি হয়।[২৪] আবার অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের ফলে পাকস্থলীর আয়তনও বৃদ্ধি পায়। আর এই আয়তন বর্ধিত হওয়াতে মানুষের শরীরের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং তা স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর।[২৫]

কিন্তু দীর্ঘ একমাস ছিয়াম সাধনা পাকস্থলীকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। শরীরের অন্যান্য পেশির মত পাকস্থলীকে খাদ্যমুক্ত বা বিশ্রামে রাখা প্রয়োজন। এতে করে ক্ষয়পূরণ ও পুনর্গঠন কাজে সাহায্য করে। তাছাড়া গ্যাষ্টিক জুইস এনালাইসিস করে যে এসিড কার্ভ পাওয়া যায়, তাতে দেখা যায় যে, ছিয়াম অবস্থায় পাকস্থলীর এসিড সবচেয়ে কম থাকে। আমরা ধারণা করি যে, ছিয়াম অবস্থায় এসিডিটি বা গ্যাস বেড়ে যায়। এ ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। প্রকৃত সত্য হল, ছিয়াম অবস্থায় এসিডিটি বাড়ে না, বরং কমে যায় এবং পেপটিক আলসার নির্মূলে সাহায্য করে। এ ব্যাপারে ডাঃ মুহাম্মাদ গোলাম মুয়াযযাম দীর্ঘ গবেষণা করে (১৯৫৮-১৯৬৩ পর্যন্ত) বলেন, ‘শতকরা প্রায় ৮০ জন ছিয়াম পালনকারীর পাকস্থলীতে অম্লরসের এসিডিটি স্বাভাবিক। আবার প্রায় ৩৬% জনের অস্বাভাবিক এসিডিটি স্বাভাবিক রয়েছে। প্রায় ১২% ছায়েমের এসিডিটি সামান্য বেড়েছে। তবে কারো ক্ষতির পর্যায়ে যায়নি। সুতরাং ছিয়াম পালনকারীর পেপটিক আলসার হতে পারে এ ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ও মিথ্যা।[২৬]

ছিয়াম পালনের ফলে পাকস্থলী সংক্রান্ত রোগসমূহ যেমন-ক্ষুধামন্দা, পেটফাঁপা, টকঢেঁকুর, লিভারের দুর্বলতা, বমিবমি ভাব ইত্যাদি স্বাভাবিকভাবে উপশম হওয়ার সুযোগ পায়। ছিয়াম পালন করলে শরীরে পানির পরিমাণ কমে যায়। ফলে দেহে চর্মরোগ বৃদ্ধি হ্রাস পায়।[২৭]

উত্তর নাইজেরিয়ায় অবস্থিত জারিয়ার Wusasa Hospital-এর ডাক্তার E. T. Hess ১৯৬০ সালে লিখেছেন, As regards your inquiry reference cases of peptic the incidence of this disease here amongst the Africans living in a tribal manner appears to be absolutely nill. অর্থাৎ ‘পেপটিক আলসার রোগীর অনুসন্ধান করতে গিয়ে এ অঞ্চলে দেখা গেছে যে, উপজাতীয় জীবন ধারায় যারা জীবন-যাপন করে তাদের মধ্যে একজনও পেপটিক আলসারের রোগী নেই’।[২৮] কারণ উপজাতীয়রা ছিয়াম পালন করত এবং মদ ও তামাকযুক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত ছিল। তাই তাদের পাকস্থলীতে কোন প্রকার জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়নি।

অগ্নাশয়

অগ্নাশয় (Pancreas) মানব দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এর গ্রন্থিরসে ইনস্যুলিন (Insulin) নামক এক প্রকার হরমোন তৈরি হয়। এই ইনস্যুলিন রক্তের মাধ্যমে দেহের প্রত্যেক কোষে পৌঁছে এবং গ্লুকোজেন (Glycogen) অণুকে দেহ কোষে প্রবেশে সাহায্য করে। অন্যথায় ইনস্যুলিন তৈরি ব্যাহত হলে, রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে ডায়াবেটিস রোগ হয়।[২৯]

কিন্তু ছিয়াম সাধনার ফলে পাকস্থলী বিশ্রামে থাকে হেতু সেখানে খাদ্যরস বা গ্লুকোজ তৈরি ব্যাহত হয়। পক্ষান্তরে অগ্নাশয়ে ইনস্যুলিন তৈরি অব্যাহত থাকে। যার কারণে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত হয় না এবং ডায়াবেটিস সহ অন্যান্য মারাত্মক রোগব্যধি হওয়ার সম্ভাবনা সিংহভাগ কমে যায়। দেহের কোষের (Cell) মধ্যে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে গেলে, শরীর নিস্তেজ হয়ে যায় এবং কোষগুলো পূর্বের চেয়ে অনেক সংকুচিত হয়। এভাবে ছিয়াম মানব কোষকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।[৩০] আর এভাবেই ছিয়ামের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও স্থুলকার ধীরে ধীরে কমতে থাকে। আবার ওযন কমেও মানুষ দুর্বলবোধ করে না। বরং স্বস্থির নিঃশ্বাস ছেড়ে সুস্থতাবোধ করে।

জিহ্বা ও লালাগ্রন্থি :

জিহ্বা মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। জিহ্বা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য এক বিশেষ দান। জিহ্বায় অসংখ্য কোষের সমষ্টি স্বাদ নলিকা রয়েছে। এগুলো দ্বারা খাবারের বিভিন্ন স্বাদ গ্রহণ করা যায়। স্বাদ নলিকা চার ভাগে বিভক্ত। যথা- জিহ্বার গোড়ায় ঝাল-মিষ্টি, পেছনের অংশে তেঁতো, দু’পাশে নোনতা, টক ও কষা। তবে জিহ্বার ঠিক মাঝখানে কোন স্বাদ নলিকা না থাকায় সেখানে কোন স্বাদ পাওয়া যায় না।[৩১]  ছিয়াম সাধনায় ছায়েমের জিহ্বা ও লালাগ্রন্থিগুলো বিশ্রাম গ্রহণ করে। যার দরুণ জিহ্বার ছোট ছোট স্বাদ নলিকাগুলো সতেজতা ফিরে পায় এবং খাবারের প্রতি রুচিরও প্রবলতা ফিরে আসে। তাছাড়া আহারের সময় খাদ্যদ্রব্য চিবাতে, গলধঃকরণ ও হযম করতে লালা গ্রন্থিগুলো থেকে এক প্রকার রস নিঃসৃত হয়। ছিয়াম পালনের ফলে এ রস বেশি বেশি নির্গত হয়। ফলে পাকস্থলীর হযম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন প্রকার রোগ-ব্যধি দূর হয়।[৩২]

টেকিকার্ডিয়া :

অতিরিক্ত উদ্বিগ্নতা (Anxiety) মাদ্যপান, চা, কফি পান ইত্যাদি থেকে এ রোগ সৃষ্টি হয়। টেকিকার্ডিয়া হার্টের এক মারাত্মক অবস্থা। হার্টবিট মিনিটে ৯০ বা তরাও ঊর্ধ্বে চলে যায় (স্বাভাবিক প্রতি মিনিটে ৭২), হার্টের ব্যথা শুরু হয়, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়, রোগী অজ্ঞান হতে পারে। হার্টফেইলুরের সম্ভাবনা দেখা দেয়। ছিয়ামপালনকারী ব্যক্তি আল্লাহর ধ্যানে রত পবিত্র আত্মায় থাকেন, তাই থাকেন উদ্বীগ্নতাহীন। ধুমপান, মদ্যপান ইত্যাদি করার তো প্রশ্নই উঠে না। আর তাই ছায়েম ব্যক্তি থাকেন টেকিকার্ডিয়া থেকে বহুলাংশে নিরাপদ।[৩৩]

কোষের (Cell) উপর ছিয়ামের প্রভাব

ছিয়ামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব হল-শরীরে প্রবাহমান পদার্থসমূহের মধ্যে ভারসাম্য ঠিক রাখা। যেহেতু ছিয়ামের দ্বারা বিভিন্ন প্রবাহমান পদার্থের পরিমাণ হ্রাস পায়। তাই কার্যক্রমে ব্যাপক প্রশান্তির সৃষ্টি হয়। মুখের লালাযুক্ত ঝিল্লির উপরের অংশ সম্পৃক্ত Cell সমূহ যাকে প্রাপথেলীন সেল বলা হয় এবং যেগুলো দেহের আদ্রতা সমূহের অনবরত বের করার দায়িত্বে নিয়োজিত, সেগুলোও ছিয়ামের দ্বারা অর্জন করে এক অনাবিল শান্তি এবং তাদের সুস্থতায় যুক্ত হয় নতুন মাত্রা। জ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে এ কথা সহজেই বলা যায় যে, লালা তৈরিকারী মাংসগ্রন্থি গর্দানের মাংসগ্রন্থি এবং Pancreas-এর মাংসগ্রন্থি সমূহ অধির আগ্রহের সাথে মাহে রামাযানের অপেক্ষায় থাকে। যাতে রামাযানের বরকতে কিছুটা বিশ্রামের সুযোগ পায় এবং অধিক কাজ করার জন্য নিজস্ব অপারগতাসমূহ ভস্মীভূত করতে পারে।[৩৪]

ওযন হ্রাস

ছিয়াম পালন করলে শরীরের ভার আস্তে আস্তে কিছু কমে যায়। তবে তার ফলে কোন ক্ষতি হয় না। এভাবে শরীরের ভার কমে যাওয়া খুবই উপকারী। ছিয়াম সাধনার মাধ্যমে শরীরে বাড়তি মেদ (চর্বি) জমতে বাঁধাপ্রাপ্ত হয় এবং ক্যালোরির অভাবে মেদ ক্ষয় হতে থাকে। যার জন্য স্থুলকার কমে যায় এবং স্বাস্থ্য স্বাভাবিক সুঠাম হয়। শরীরের অধিক ভার কমানোর জন্য এটাও এক প্রকার ‘থেরাপিউটিক’ ব্যবস্থা।[৩৫]

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে শরীরের অতিরিক্ত ওযন হ্রাসের জন্য নানারূপ চিকিৎসা পদ্ধতি চালু রয়েছে, যার সবকয়টিই কষ্টসাধ্য ও ব্যয় সাপেক্ষ। যেহেতু ছিয়াম পালনের ফলে খুব ধীরে অল্প অল্প করে ওযন হ্রাস পায়, তাই শুধু ফরয নয় নফল ছিয়ামের মাধ্যমেও শরীরের অতিরিক্ত ওযন হ্রাস করা যেতে পারে বলে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মত প্রকাশ করেছেন।[৩৬] এক মাস ছিয়াম পালনের ফলে দেহের পরিপাকযন্ত্র এক প্রকার পরিশুদ্ধি লাভের সুযোগ পায়। এসময় পরিপাকযন্ত্র যে অবসর পায় তার ফলে দেহের অপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের সারাংশ ও সঞ্চিত বিষাক্ত রস নিঃশেষ হয়ে যায়। দেহের বাড়তি ওযন, রস, চর্বি ইত্যাদি হ্রাস পায়।[৩৭]

মনের প্রতিক্রিয়া

শারীরিক কতগুলো রোগ-ব্যধির উৎসের অন্যতম কারণ হল মানসিক অশান্তি বা অমানবিক পীড়া। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, কতগুলো শারীরিক ব্যধির কারণ হচ্ছে ‘মানসিক পীড়া’। এগুলোকে পৃথক রোগ সাইকোসোমেটিক (Psychosomatic) ব্যধি হিসাবে নামকরণ করা হয়েছে। যেমন-হাঁপানী, গ্যাসটিক-আলসার, বহুমূত্র, উচ্চ রক্তচাপ, মাইগ্রেন, হৃদরোগ, হিপার থিরোডিজম, কোরনারী, মাসিক ঋতুর অনিয়ম প্রভৃতি। সাধারণত মানুষ পরস্পর বিরোধী দু’টি স্বভাব, পশুত্ব ও মানবিক দিক দ্বারা পরিচালিত হয়। কোন ব্যক্তির উপর যদি পশুত্বের প্রভাব বেশী পড়ে, তবে মানুষ পশু সুলভ হয়। পক্ষান্তরে মানবিক দিকের প্রভাব বেশী প্রাধান্য পেলে সে আদর্শবান, নিষ্ঠবান, সৎ ও ধার্মিক হয়।

রামাযানের একমাস ছিয়াম সাধনা মানুষের মনের সকল প্রকার পশুত্বকে ভস্মিভূত করে এবং মানবিক দিক সমূহ উন্মোচিত করে। যার কারণে মানুষ আল্লাহর দিকে ধাবিত হয় এবং আদর্শবান মানুষ হিসাবে গড়ে উঠে। এ বিষয়ে The Cultural History of Islam গ্রন্থে যথার্থই বলা হয়েছে- The fasting of Islam has a wonderful teaching for establishing social unity, brotherhood and equity. It has also an excellent teaching for building a good moral character. অর্থাৎ ‘সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও সামাজিক ঐক্য প্রতিষ্ঠায় ইসলামে ছিয়ামের রয়েছে এক অভাবনীয় শিক্ষা। এতে উত্তম নৈতিক চরিত্র গঠনের এক চমৎকার শিক্ষাও রয়েছে’।[৩৮]

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ

পোপ এলফ গাল ছিলেন হল্যাণ্ডের একজন নামকরা পাদ্রি। ছিয়াম সম্পর্কে তিনি তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন যে, আমি আমার অনুসারীদের প্রতি মাসে তিনটি করে ছিয়াম রাখার নির্দেশ দিয়েছি। এ কর্মপদ্ধতিতে দৈহিক ও পরিমাপিক সমন্বয় অনুভর করেছি। আমার রোগীরা বারংবার আমাকে জোর দিয়ে বলেছে যে, আমাকে আরো কিছু পদ্ধতি বলে দিন, কিন্তু আমি নীতি বানিয়ে দিয়েছি যে, দূরারোগ্য রোগীদের প্রতিমাসে তিন নয় বরং পূর্ণ একমাস ছিয়াম রাখার নির্দেশ দেব। আমি ডায়াবেটিস (Diabetes), হৃদরোগ (Heart Diseases) ও পাকস্থলী রোগে (Stomach Diseases) আক্রান্ত রোগীদের পূর্ণ একমাস ছিয়ম রাখার নির্দেশ দিয়েছি। এ পদ্ধতি অবলম্বনে ডায়াবেটিস রোগের অবস্থার উন্নতি হয়েছে তাদের সুগার কন্ট্রোল হয়ে গেছে। হৃদরোগীদের অস্থিরতা ও শ্বাস স্ফীত হ্রাস পেয়েছে এবং সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছে পাকস্থলী রোগীরা।[৩৯]

নেশা পরিহারের সুবর্ণ সুযোগ

আমরা জানি ধুমপান সহ সর্বপ্রকারের মাদকতা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। যার শেষ পরিণাম মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে। ‘ধুমপানে বিষপান’ কথাটি সর্বাংশে সত্য। বরং সিগারেটের ধোঁয়া একজন অধুমপায়ী ব্যক্তির স্বাস্থ্যের বেশি ক্ষতি করে। যদিও অন্যের ক্ষতি করার কোন অধিকার কারো নেই, তথাপি ধুমপায়ী লোকেরা বাসে-ট্রেনে, লঞ্চ-স্টিমারে, অফিসে-ক্লাবে একাজটি করে থাকে সর্বদা মহা স্বস্তিতে বঙ্কিম ভঙ্গিতে ধোঁয়া উড়িয়ে। তিনি নিজে ধুমপান করেন ও অন্যের দেহে বিষপ্রয়োগ করেন। রামাযানুল মুবারাকে বাধ্যতামূলকভাবে সারাদিন ধুমপান না করায় ফুসফুস দীর্ঘ সময় ধরে নিকোটিনের বিষক্রিয়া হতে মুক্ত থাকে। যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী হয়।[৪০] তাছাড়া যারা ধুমপান ত্যাগ করতে চান, তাদের জন্য রামাযান একটি মোক্ষম সুযোগ এনে দেয়। ছিয়ামের এক মাসের প্রশিক্ষণ বাকী এগারটি মাসে কাজে লাগাতে পারলে চিরদিনের জন্য ধুমপান সহ সর্বপ্রকারের মাদকতা পরিহার করা সম্ভব।

জ্ঞানী-গুণী ও বিজ্ঞানীদের যাঁরাই ছিয়াম নিয়ে গবেষণা করেছেন, সকলেই ছিয়ামের উপকারিতা বিস্ময়ে হতবাক না হয়ে পারেননি। ছিয়াম পালনের দ্বারা শারীরিক, মানসিক সহ নানাবিধ উপকারের অস্তিত্বের কথা তাঁরা সকলেই অকপটে স্বীকার করেছেন। যেমন- ডা. লুথারজম (ক্যামব্রিজ) ছিলেন একজন ফারমাকোলজী বিশেষজ্ঞ। একবার তিনি ক্ষুধার্ত (ছায়েম) মানুষের পাকস্থলীর আর্দ্র পদার্থ (Stomach secretion) নিয়ে তার ল্যাবরেটারীতে টেস্ট করে দেখতে পেলেন যে, তাতে সেই খাদ্যের দুর্গন্ধময় উপাদান যার দ্বারা পাকস্থলী রোগ-ব্যধি গ্রহণ করে পাকস্থলীর রোগ নিরাময় করে।[৪১]

ড. হেনরিক স্টার্ন ছিয়ামের উপকারিতা বলতে গিয়ে বলেন, মানসিক ও স্নায়ুবিক বৈকল্যে ছিয়ামের উপকারিতা দেখে থ’ হয়ে যেতে হয়। পক্ষাঘাত এবং আধা-পক্ষাঘাত  রোগ ছিয়ামের বদৌলতে অতিদ্রুত সেরে যায়। স্নায়ুবিক দৌর্বল্য, এমনকি অনেক সময় উন্মত্ততা রোগও ছিয়ামের কারণে ভাল হয়ে যায়। ডা. জয়েলশ বলেন, যখনই এক বেলা খাওয়া বন্ধ থাকে, তখনই দেহ সেই মুহূর্তটিকে রোগমুক্তির সাধনায় নিয়োজিত করে।[৪২]

মিঃ গান্ধির বাসনা, গান্ধিজীর ক্ষুধার্ত থাকার ব্যপারটা খুব প্রসিদ্ধ। জনাব ফিরোজ রাজ গান্ধিজীর জীবনী গ্রন্থে লিখেছেন যে, তিনি ছিলেন ছিয়াম রাখার পক্ষপাতী। তিনি বলতেন যে, মানুষ খেয়ে খেয়ে স্বীয় শরীরকে অলস বানিয়ে ফেলে, আর অলস শরীর না জগৎবাসীর আর না মহারাজের। যদি তোমরা শরীরকে সতেজ ও সচল রাখতে চাও তাহলে শরীরকে দাও তার ন্যূনতম আহার আর পূর্ণ দিবস ছিয়াম রাখ। আর সন্ধ্যা বেলা রকরীদুগ্ধ দ্বারা ছিয়াম খোল।[৪৩]

ডা. আইজাক জেনিংস বলেন, যারা আলস্যের খনি এবং যারা অতিভোজন দ্বারা তাদের সংরক্ষিত জীবনীশক্তিকে আলস্যে ভারাক্রান্ত করে রাখে, তারা হাঁটিহাঁটি পা-পা করে আত্মহত্যার দিকেই এগিয়ে যায়। অধিক ভোজনে দেহে যে বিষ ক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, তা সমগ্র দেহের স্নায়ুতন্ত্রকে দূষিত করে দেয়। ফলস্বরূপ দেহে এক অস্বাভাবিক রকমের ক্লান্তিবোধ ও জড়তা নেমে আসে। ডাক্তার ডিউক বলেছেন, জীর্ণ-ক্লিষ্ট-রুগ্ন মানুষের পাকস্থলী থেকে সব খাদ্য সরিয়ে ফেলো, দেখবে রুগ্ন মানুষটি উপোষ থাকছে না, উপোষ থাকছে তার রোগটি। এ কারণেই বহু শতাব্দী পূর্বে (মেডিসিনের জনক) ডা. হিপোক্রেটিস বলেছিলেন, The more you nourish a diseased body, the worse you make. রামাযানের ছিয়াম দেহযন্ত্রের বিরতিকালে শরীর রোগ নিরাময়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।[৪৪]


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছিয়াম রত অবস্থায় সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থেকে সূর্যাস্তের সময় খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। ছাহবীগণকেও খেজুর দিয়ে ইফতার করতে নির্দেশ দিতেন। একান্তই যদি খেজুর পাওয়া না যায় তবে পানি দ্বারা ইফতার করার নির্দেশ দিযেছেন।

আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছালাতের (মাগরিব) পূর্বে কয়েকটি তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তিনি তাজা খেজুর না পেলে শুকনো খেজুর (অর্থাৎ খুরমা) দিয়ে ইফতার করতেন। আর যদি তাও না পেতেন তাহলে কয়েক ঢোক পানি পান করে নিতেন।[৪৫]

জ্ঞান-বিজ্ঞানের এই উন্নত যুগে গবেষণায় এ তথ্য উদঘাটিত হয়েছে যে, খেজুরের মধ্যে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। বিজ্ঞানীরা খেজুরের রাসায়নিক উপাদানের তালিকা এভাবে বর্ণনা করেছেন।

প্রোটিন
২.০০
ম্যাগনেসিয়াম
৫৮.৯০
কার্বোহাইড্রেট
২৪.০০
কপার
০.২১
ক্যালরি
২.০০
আয়রণ
১.৬১
সোডিয়াম
৪.৭০
ফসফরাস
৬৩৮.০০
পটাশিয়াম
৭৫৪.০০
সালফার
৫১.৬০
ক্যালসিয়াম
৬৭.৯০
ক্লোরিন
২৯০.০০।[৪৬]
খেজুরের পুষ্টিগুণ বর্ণনা করতে গিয়ে Scientific Indication in the holy Quran গ্রন্থে বিধৃত হয়েছে যে, The chief nutritional value being their light sugar content which varies from 60 to 70 percent and the presence of some quantity of vitamins A, B, B-2 and nicotinic acid. 

অর্থাৎ ‘খেজুরের চিনি-উপাদান অতিশয় পুষ্টিগুণের অধিকারী, খেজুরে চিনি উপাদানের পরিমাণ ৬০-৭০%। এছাড়া খেজুরে আছে স্বল্প পরিমাণ ভিটামিন A, B, B-2 এবং নিকোটিন এসিড’।[৪৭]

খাদ্যগুণ কম থাকার কারণে রক্ত স্বল্প রোগীদের জন্য ইফতারের সময় আয়রণ অত্যন্ত প্রয়োজন। আর তা প্রাকৃতিকভাবেই খেজুরের ভিতর রয়েছে। তাছাড়া মানুষের শরীরে সুগারের পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার কারণে ক্ষুধা লাগে। তাই ছিয়াম রেখে খেজুর দ্বারা ইফতার করার প্রতি ইসলাম উদ্বুদ্ধ করেছে। আর দু’টি খেজুর আহারেই সুগারের ঘাটতি পূরণ হয় এবং শরীর তার প্রয়োজনীয় আহার্য লাভ করে।[৪৮]

খেজুরে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন রয়েছে। এসব ভিটামিন নানাভাবে শরীরের স্বাভাবিক গঠন ও স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সহযোগিতা করে। খেজুরের ঔষধিগুণ হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। খেজুর আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় স্বাস্থ্যসম্মত আদর্শ খাবার হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। খেজুর মধুর শীতল, স্নিগ্ধ, রুচি বর্ধক, ক্ষয় ও রক্তপিত্ত রোগ নিবারক। এটা বল বাড়ায় ও শুক্র বৃদ্ধি করে।[৪৯]

কিছু কিছু লোকের শরীর শুষ্ক হয়ে যায়। এসব লোক যখন ছিয়াম রাখে তখন তাদের শুষ্কতা আরো বৃদ্ধি পায়। খেজুর যেহেতু স্বাভাবিক প্রাকৃতিক তাই তা ছায়েমের জন্য বড়ই উপকারী। গ্রীষ্মকালে ছায়েমগণ তৃষ্ণার্ত থাকেন, তারা ইফতারের সময় যদি সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডা পানি পান করেন তাহলে পাকস্থলীতে গ্যাস, তাপ বৃদ্ধি পেয়ে লিভার ফুলে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। যদি ছায়েম খেজুর খাওয়ার পর পানি খায় তাহলে নানা রকম বিপদ থেকে বেঁচে যায়।[৫০]

খেজুরের বহুবিধ পুষ্টিগুণের কারণেই বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মুহাম্মাদ (ﷺ) খেজুর দ্বারা ইফতার করার প্রতি মুসলিম জাতিকে উৎসাহিত করেছেন। সারাদিন ছিয়াম রাখার পর শরীরে শক্তি কমে যায়। এ কারণে ইফতার এমন জিনিস দ্বারা করা উচিত, যা দ্রুত হযম হয় ও শক্তি বৃদ্ধি করে। সাহারীর পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন কিছু পানাহার করা হয় না এবং শরীরের ক্যালরী অথবা স্নায়ুবিক শক্তি একাধারে কমতে থাকে। এ জন্য খেজুর স্বাভাবিক ও উৎকৃষ্টমানের খাদ্য, যা ভক্ষণে স্নায়ুবিক শক্তি স্বাভাবিক হয় এবং শরীর বিভিন্ন প্রকারের রোগ-ব্যধি থেকে বেঁচে যায়। যদি শরীরের স্নায়ুবিক শক্তি ও তাপমাত্রা কন্ট্রোল করা না যায়, তাহলে নিম্নোক্ত রোগগুলো সৃষ্টি হয়- লো ব্লাড প্রেসার, প্যারালাইসিস, ফ্যাসিয়াল প্যারালইসিস এবং মাথা ঘোরা ইত্যাদি।

ছিয়াম পালনকালে যথাসম্ভব ভাজা-পোড়া এড়িয়ে চলা উচিত। খাদ্য দ্রব্যাদি তেলে ভাজার সময় তেলকে একাধিকবার ব্যবহার করা হয়। এই তেল আবার ফুটানো হয় ৩০০-৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়, অথচ তেলের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তেল হচ্ছে এক প্রকার স্নেহ (Lipid) জাতীয় পদার্থ। এটি উচ্চ তাপমাত্রায় Acrolein নামের এক ধরনের জৈব হাইড্রোকার্বন তৈরি করে। এটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এটি ধীরে ধীরে মানুষের হজম শক্তি দুর্বল করে ফেলে। ফলে পেটের পীড়া যেমন- বদ হজম, ডায়রিয়া, পাকস্থলী জ্বালাপোড়া প্রভৃতি রোগ দেখা দেয়।[৫১]

শেষকথা

ছিয়াম পালনের মধ্যে প্রভূত কল্যাণ নিহিত রয়েছে। যা কতিপয় অমুসলিম পণ্ডিতের গবেষণায়ও প্রমাণিত হয়েছে। প্রফেসর মুর পাল্ড দিল অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিচিত নাম। তিনি তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন,

আমি ইসলামী বই পত্র অধ্যায়ন করেছি। যখন ছিয়ামের অধ্যায়ে পৌঁছলাম তখন আমি বিস্মিত হলাম যে, ‘ইসলাম স্বীয় অনুসারীদেরকে এক মহৎ ফর্মুলা শিক্ষা দিয়েছে। ইসলাম যদি স্বীয় অনুসারীদেরকে অন্য আর কিছুই শিক্ষা না দিয়ে শুধুমাত্র এই ছিয়ামের ফর্মুলাই শিক্ষা দিত তাহলেও এর চেয়ে উত্তম আর কোন নে‘মত তাদের জন্য হত না। আমি চিন্তা করলাম যে, ব্যাপারটা পরীক্ষা করে দেখা উচিত। এভাবে আমি মুসলিমদের পদ্ধতিতে ছিয়াম রাখা শুরু করে দিলাম। আমি দীর্ঘদিন যাবত পেটের ফোলা (Stomach Inflammation) রোগে আক্রান্ত ছিলাম। অল্পদিন পরেই অনুভব করলাম যে, রোগ অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। আমি ছিয়াম অনুশীলন অব্যাহত রাখলাম, কিছুদিনের মধ্যে শরীরে আমূল পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করলাম। এভাবে চলতে থাকলে দেখতে পেলাম আমার শরীর স্বাভাবিক হয়ে গেছে এবং দীর্ঘ একমাস পর শরীরে এক বৈপ্ল­বিক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে’।[৫২]

একজন অমুসলিমের পরীক্ষিত গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ছিয়াম পালনের মাধ্যমে মানুষের স্বাস্থ্যগত যে উপকার সাধিত হয় তা অবর্ণনীয়। জনৈক ইংরেজ ডাক্তার বলেন, বছরে এক মাস ছিয়াম পালন করলে দেহের মধ্যে সঞ্চিত অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো বের হয়ে যায়। ফলে শরীর নীরোগ হয়।[৫৩] মানুষ রামাযানের ছিয়ামের পাশাপাশি অন্যান্য নফল ছিয়ামগুলো পালন করলে এমনিতেই নানান রোগ থেকে নিরাপদে থাকতে পারবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন। আমীন!



* পরিচালক, ইয়াসিন আলী সালাফী কমপ্লেক্স, রাজশাহী।

তথ্যসূত্র:
[১]. সাপ্তাহিক মুসলিম জাহান, ৩১ ডিসেম্বর-২০০৬, পৃ. ১১।
[২]. মাসিক আত-তাহরীক, ১৩তম বর্ষ, ১১তম সংখ্যা, আগষ্ট- ২০১০ ইং, পৃ. ৩২।
[৩]. মর্ডাণ মেডিসিন, গৃহীত : মাসিক আত-তাহরীক, জানুয়ারী ১৯৯৮, পৃ. ১৯।
[৪]. ডাঃ মুহাম্মাদ তারেক মাহমুদ, সুন্নাতে রাসূল (ছাঃ) ও আধুনিক বিজ্ঞান (ঢাকা : আল-কাউসার প্রকাশনী, রমজান ১৪২০), ১ম খণ্ড, পৃ. ১৪১-১৪২।
[৫]. সুন্নাতে রাসূল (ছাঃ) ও আধুনিক বিজ্ঞান, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৫১।
[৬]. মাসিক আত-তাহরীক, প্রবন্ধ : সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত দৃষ্টিভঙ্গিতে ছিয়াম সাধনা, নভেম্বর ২০০১, ৫ম বর্ষ, ২য় সংখ্যা, পৃ. ৪-৫।
[৭]. অধ্যাপক সাইদুর রহমান, মাহে রমজানের শিক্ষা ও তাৎপর্য (ঢাকা : ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সংস্কৃতি কেন্দ্র, ১৯৮৫ ইং), পৃ. ১৭।
[৮]. মাসিক আত-তাহরীক, আগষ্ট-২০১০ ইং, পৃ. ৩৩।
[৯]. সুন্নাতে রাসূল (ছাঃ) ও আধুনিক বিজ্ঞান, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৪৪।
[১০]. মাসিক আত-তাহরীক, নভেম্বর ২০০১, ৫ম বর্ষ, ২য় সংখ্যা, পৃ. ৪-৫।
[১১]. ডাঃ (ক্যাপ্টেন) আব্দুল বাছেত, প্রবন্ধ : মেডিকেল দৃষ্টিতে সিয়াম, দৈনিক ইনকিলাব, ২৭ নভেম্বর ২০০০, পৃ. ১০।
[১২]. সুন্নাতে রাসূল (ছাঃ) ও আধুনিক বিজ্ঞান, পৃ. ১৪৯-১৫০।
[১৩]. তদেব, পৃ. ১৫০।
[১৪]. মাসিক আত-তাহরীক, আগষ্ট-২০১০ ইং, পৃ. ৩২।
[১৫]. বাংলা মিশকাত, ছিয়াম পর্ব, (ঢাকা : এমদাদিয়া লাইব্রেরী ১৯৯৬), ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ২১২।
[১৬]. মাসিক আত-তাহরীক, জানুয়ারী ১৯৯৮, পৃ. ১৯।
[১৭]. শরীর বিদ্যা, সেলফ্ এসেসমেনট (মাসিক কারেন্ট এ্যাফেয়ার্স, নভেম্বর ২০০২), পৃ. ৩২।
[১৮]. সুন্নাতে রাসূল (ছাঃ) ও আধুনিক বিজ্ঞান, পৃ. ১৪৮।
[১৯]. তদেব, পৃ. ১৪৭।
[২০]. তদেব, পৃ. ১৪৮।
[২১]. শরীর বিদ্যা, পৃ. ৩০-৩২।
[২২]. সুন্নাতে রাসূল (ছাঃ) ও আধুনিক বিজ্ঞান, পৃ. ১৪৯।
[২৩]. বাংলা মিশকাত, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ২১২।
[২৪]. সুন্নাতে রাসূল (ছাঃ) ও আধুনিক বিজ্ঞান, পৃ. ১৪৭।
[২৫]. শরীর বিদ্যা, পৃ. ৩০-৩২।
[২৬]. ডাঃ মুহাম্মাদ গোলাম মুয়াযযাম, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও ইসলাম (ঢাকা : আধুনিক প্রকাশনী, নভেম্বর ১৯৯৭ ইং), পৃ. ৮-৯।
[২৭]. ড. মোহাম্মাদ আজিবার রহমান, কুরআন ও হাদীছের আলোকে ছিয়াম ও রামাযান (রাজশাহী : সবুজবাংলা প্রকাশনী, জুন ২০১২ ইং), পৃ. ৪৪।
[২৮]. Scientific Indication in the Holy Quran, (Dhaka : Inlamic Foundation Bangladesh, June 1995), p. 63.
[২৯]. শরীর বিদ্যা, পৃ. ৩১।
[৩০]. Scientific Indication in the Holy Quran, p. 62-63.
[৩১]. শরীর বিদ্যা, পৃ. ৩৩।
[৩২]. তদেব।
[৩৩]. মাসিক আত-তাহরীক, জানুয়ারী ১৯৯৮, পৃ. ২০।
[৩৪]. সুন্নাতে রাসূল (ছাঃ) ও আধুনিক বিজ্ঞান, পৃ. ১৫০।
[৩৫]. Scientific Indication in the Holy Quran, p. 62-63.
[৩৬]. মাসিক আত-তাহরীক, নভেম্বর ২০০১, ৫ম বর্ষ, ২য় সংখ্যা, পৃ. ৬।
[৩৭]. কুরআন ও হাদীছের আলোকে ছিয়াম ও রামাযান, পৃ. ৪৪।
[৩৮]. মুহাম্মাদ আব্দুল মান্নান ইয়াকুবী, প্রবন্ধ : রোযার গুরুত্ব ও তাৎপর্য, দৈনিক ইনকিলাব, ২৭ শে নভেম্বর ২০০০ ইং, পৃ. ১০।
[৩৯]. সুন্নাতে রাসূল (ছাঃ) ও আধুনিক বিজ্ঞান, পৃ. ১৪৩-১৪৪।
[৪০]. মাসিক আত-তাহরীক, ডিসেম্বর ২০০০, পৃ. ২।
[৪১]. সুন্নাতে রাসূল (ছাঃ) ও আধুনিক বিজ্ঞান, পৃ. ১৪৪।
[৪২]. মাসিক আত-তাহরীক, আগষ্ট-২০১০ ইং, পৃ. ৩৩-৩৪।
[৪৩]. দাস্তান গান্ধী, বিশেষ সংখ্যা, গৃহীত : সুন্নাতে রাসূল (ছাঃ) ও আধুনিক বিজ্ঞান, পৃ. ১৪৩।
[৪৪]. মাসিক আত-তাহরীক, আগষ্ট-২০১০ ইং, পৃ. ৩৪।
[৪৫]. আবুদাউদ হা/২৩৫৬; তিরমিযী হা/৬৯৬; মুসনাদে আহমাদ হা/১২৬৯৮, সনদ ছহীহ।
[৪৬]. সুন্নাতে রাসূল (ছাঃ) ও আধুনিক বিজ্ঞান, পৃ. ১/১৫৯।
[৪৭]. Scientific Indication in the Holy Quran, p. 316.
[৪৮]. সুন্নাতে রাসূল (ছাঃ) ও আধুনিক বিজ্ঞান, পৃ. ১/১৫৯ ও ৩/১২৫।
[৪৯]. দৈনিক ইনকিলাব, ২৯ অক্টোবর, ২০০৪ ইং, পৃ. ১৩।
[৫০]. সুন্নাতে রাসূল (ছাঃ) ও আধুনিক বিজ্ঞান, পৃ. ১/১৬০।
[৫১]. মাসিক আত-তাহরীক, আগষ্ট-২০১০ ইং, পৃ. ৩৩।
[৫২]. সুন্নাতে রাসূল (ছাঃ) ও আধুনিক বিজ্ঞান, পৃ. ১৪৩।
[৫৩]. কুরআন ও হাদীছের আলোকে ছিয়াম ও রামাযান, পৃ. ৪৪। 




প্রসঙ্গসমূহ »: ছিয়াম-রামাযান
প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আত সম্পর্কে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের অবস্থান (শেষ কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির
বিদ‘আত পরিচিতি (৩০তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
তাওহীদ প্রতিষ্ঠার উপায় (৫ম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
ইসলামে রোগ ও আরোগ্য (৪র্থ কিস্তি) - মুকাররম বিন মুহসিন মাদানী
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
ছালাতে একাগ্রতা অর্জনের ৩৩ উপায় - আব্দুল হাকীম বিন আব্দুল হাফীজ
ছালাতের সঠিক সময় ও বিভ্রান্তি নিরসন (৫ম কিস্তি) - মাইনুল ইসলাম মঈন
ইসলামী পুনর্জাগরণের মূলনীতি (২য় কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
তাওহীদ প্রতিষ্ঠার উপায় (৪র্থ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
ছয়টি মূলনীতির ব্যাখ্যা (৪র্থ কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির
রামাযানের মাসআলা - আল-ইখলাছ ডেস্ক
দলাদলির কুপ্রভাব : উত্তরণের উপায় (শেষ কিস্তি) - শায়খ মতিউর রহমান মাদানী

ফেসবুক পেজ