উত্তর : আল্লাহ্ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল (ﷺ) যাদের সম্পর্কে জান্নাতী অথবা জাহান্নামী হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত ঘোষণা করেছেন শুধু তাদেরকেই জান্নাতী অথবা জাহান্নামী বলা যাবে। যেমন দুনিয়াতেই যারা জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন নবী (ﷺ), আবূ বকর, উমার, উছমান, আলী, ত্বালহা, যুবায়র ইবনুল আওয়াম, সা‘দ ইবনু মালিক, আব্দুর রাহমান ইবনু আওফ (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) তাঁরা সকলেই জান্নাতী (আবূ দাঊদ, হা/৪৬৪৯; তিরমিযী, হা/৩৭৪৭, ৩৭৪৮, ৩৭৫৭; ইবনু মাজাহ, হা/১৩৩; ছহীহুল জামি‘, হা/৫০, ৪০১০)। পক্ষান্তরে যারা দুনিয়াতেই জাহান্নামের দুঃসংবাদ পেয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছে আবূ লাহাব ও তার স্ত্রী, আবূ ত্বালিব ইত্যাদি (সূরা আল-লাহাব : ৩-৪)। কিন্তু যাদের ব্যাপারে ঘোষণা নেই, তাদেরকে নিশ্চিতরূপে জান্নাতী অথবা জাহান্নামী বলা জায়েয নয় (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনু বায, ২৫/১২১ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৭৩১)। খারিজাহ ইবনু যায়দ ইবনু ছাবিত (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, ...উম্মুল ‘আলা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, অতঃপর উছমান ইবনু মায‘উন (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আমাদের এখানে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমি তাঁর সেবা শুশ্রƒষা করলাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর মৃত্যু হয়ে গেল। আমরা কাফনের কাপড় পরিয়ে দিলাম। তারপর নবী (ﷺ) আমাদের এখানে আসলেন। ঐ সময় আমি ‘উছমান ইবনু মাযউন (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে লক্ষ্য করে বলছিলাম। হে আবূ সায়িব! তোমার উপর আল্লাহ রহম করুন। তোমার সম্পর্কে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ নিশ্চয় তোমাকে সম্মানিত করেছেন। তখন নবী (ﷺ) আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তুমি কেমন করে জানলে যে, আল্লাহ তাকে সম্মানিত করেছেন? আমি বললাম, আমার মাতা-পিতা আপনার উপর কুরবান হোক হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমি তো জানি না। তাহলে আপনি বলে দিন কাকে আল্লাহ সম্মানিত করবেন? নবী (ﷺ) বললেন, আল্লাহর শপথ! ‘উছমানের মৃত্যু হয়ে গেছে। আল্লাহর কসম! আমি তার সম্পর্কে কল্যাণের আশা পোষণ করছি। আল্লাহর কসম, আমি আল্লাহর রাসূল হওয়া সত্ত্বেও জানি না আল্লাহ আমার সাথে কী ব্যবহার করবেন। উম্মুল ‘আলা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আল্লাহর শপথ, আমি এ কথা শুনার পর আর কাউকে পূত-পবিত্র বলব না...’ (ছহীহ বুখারী, হা/১২৪৩)।
আমরা উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) সম্পর্কে নিশ্চিতরূপে বলতে পারি যে, তিনি জান্নাতী। কারণ তাঁর ব্যাপারে নিশ্চিত ঘোষণা আছে। যেমন,
عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ جِبْرِيْلَ جَاءَ بِصُوْرَتِهَا فِيْ خِرْقَةِ حَرِيْرٍ خَضْرَاءَ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ فَقَالَ إِنَّ هَذِهِ زَوْجَتُكَ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ
আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, জিবরীল (আলাইহিস সালাম) একখানা সবুজ রংয়ের রেশমী কাপড়ে তাঁর (‘আয়েশার) প্রতিচ্ছবি নবী (ﷺ)-এর কাছে নিয়ে এসে বলেন, ‘ইনি দুনিয়া এবং আখিরাতে উভয় জগতেই আপনার স্ত্রী’ (তিরমিযী, হা/৩৮৮০; ছহীহ বুখারী, হা/৩৮৯৫, ৫০৭৮, ৫১২৫, ৭০১১, ৭০১২; ছহীহ মুসলিম, হা/২৪৩৮, অনুরূপ আখিরাত শব্দ ব্যতীত)। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, রাসূল (ﷺ) আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তুমি কি এ ব্যাপারে সন্তুষ্ট নও যে, দুনিয়া এবং আখিরাতে উভয় জগতেই তুমি আমার স্ত্রী হবে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, ঠিক আছে তুমি আমার দুনিয়া এবং আখিরাতে উভয় জগতেরই স্ত্রী’ (সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২২৫৫)। অন্য বর্ণনায় রাসূল (ﷺ) বলেছেন, عَائِشَةُ زَوْجِيْ فِي الْجَنَّةِ ‘আয়েশা জান্নাতে আমার স্ত্রী হবে’ (সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামি‘, হা/৩৯৬৫; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১১৪২, ২৮৬৭, ৬/৮৬৮ পৃ.; ইবনু আবী শাইবাহ, হা/৩২৯৪১)।
প্রশ্নকারী : শিহাব, চট্টগ্রাম।