সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ১০:০২ পূর্বাহ্ন

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ وَحْدَهُ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى مَنْ لَا نَبِيَّ بَعْدَهُ


শান্তি, সমৃদ্ধি ও আদর্শ সমাজ গঠনে ইসলামী শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। তাওহীদ ভিত্তিক শিক্ষাই হাজার বছরের স্তূপীকৃত অন্ধকারাচ্ছন্ন জাহেলিয়াতকে বিদূরিত করেছিল। সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেই তা‘লীম প্রদানের মাধ্যমে যাবতীয় অন্যায়, অনাচার, খুনখারাবী, যেনা-ব্যভিচার, হিংসা-বিদ্বেষ মূলোৎপাটন করে সমাজকে আলোকিত করেছিলেন এবং শান্তিপূর্ণ নিরাপদ একটি মডেল রাষ্ট্র উপহার দিয়েছিলেন। তারই প্রভাবে পর পর তিনটি যুগ স্বর্ণযুগে পরিণত হয়েছিল। এর মূলভিত্তি ছিল তাওহীদ তথা আল্লাহ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করা। কারণ আল্লাহর পক্ষে থেকে সর্বপ্রথম অবতীর্ণ বার্তা ছিল, ‘পড়ুন আপনার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে রক্তপিণ্ড হতে। পড়ুন এবং আপনার প্রতিপালক মহিমান্বিত, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি শিক্ষা দিয়েছেন মানুুষকে (এমন জ্ঞান) যা সে জানত না’ (সূরা আল-‘আলাক্ব : ১-৫)। তাই এ শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল, সর্বাগ্রে আল্লাহ তা‘আলার পরিচয় সম্পর্কে জানা। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘আপনি জেনে নিন যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা‘বূদ নেই’ (সূরা মুহাম্মাদ : ১৯)। উক্ত নির্দেশ শুধু মাদরাসা-মক্তবে পড়ুয়া বা মসজিদের ইমাম-মুয়াযযিনের মত নির্দিষ্ট কোন শ্রেণীকে দেয়া হয়নি, বরং সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষ এই নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত। যাতে অন্তত দ্বীনের মৌলিক বিষয়গুলো যথাযথভাবে জেনে পালন করতে পারে। তাই রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘প্রত্যেক মুসলিমের ইলম অর্জন করা ফরয’ (ইবনু মাজাহ, হা/২২৪, সনদ ছহীহ)। ‘এখানে ‘ইলম দ্বারা মৌলিক উদ্দেশ্য হল, ‘ইলমে শারঈ তথা ইসলামী জ্ঞান। আর ‘ইলমে শারঈ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর যেসব সুস্পষ্ট দলীল-প্রমাণ অবতীর্ণ করেছেন সেগুলোর ‘ইলম (‘উছায়মীন, কিতাবুল ‘ইলম, পৃ. ৯)। সেজন্য এমপি, মন্ত্রী, সচিব, বিচারপতি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, প্রফেসর, আইনজীবী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ীসহ সকল শ্রেণীর লোকই মানুষের অন্তর্ভুক্ত। আর মানুষ মাত্রই সবাইকেই দ্বীনের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহ সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করতে পারলেই হৃদয়ে আল্লাহভীতি ঠাঁই পাবে। অন্যথা সম্ভব নয়। আর দ্বীনের শিক্ষা ও আল্লাহভীতি না থাকার কারণেই উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও দায়িত্বশীল হওয়া সত্ত্বেও দুর্নীতি, আত্মসাৎ, রাষ্ট্রের সম্পদ লুণ্ঠন, অসহায়-অক্ষম, ক্ষুধার্ত, রোগগ্রস্ত, দুস্থ মানুষের মুখের খাবার কেড়ে নেয়া, খুন-গুম-ধর্ষণসহ যাবতীয় অপকর্মের সাথে জড়িত। তাদের মধ্যে মানুষের কোন গুণাবলী থাকে না। তারা মানবরূপী পশুতে পরিণত হয়। তাই নৈতিক শিক্ষার উন্নয়ন আবশ্যক। অন্যদিকে শরী‘আতের ব্যাপারে অজ্ঞ থাকার কারণে তারা যেমন ইসলামী শিক্ষাকে চরম ঘৃণা করে, তেমনি আলেমদেরকে সর্বত্র অপমান-অপদস্থ ও হয়রানি করে থাকে। ফকীরী বিদ্যা বলে তাচ্ছিল্য করে থাকে। নাটক, উপন্যাস, সিনেমাসহ যাবতীয় প্রচার মাধ্যমে টুপিওয়ালা, দাড়িওয়ালা, মুছল্লী ব্যক্তিকে সবচেয়ে খারাপ মানুষ হিসাবে উপস্থাপন করা হয়। তাছাড়া নিজেদের সন্তানকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংকার, জাজ-ব্যারিস্টার, প্রশাসনিক ক্যাডার তৈরি করার জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করে থাকে। বিদেশে পড়ালেখা করার জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করতে কোন দ্বিধা করে না। তারাই বস্তুবাদী ও নাস্তিক্যবাদী সবক নিয়ে ইসলাম বিরোধী পাক্কা বুদ্ধিজীবীর আসনটা দখল করেন এবং ইসলামকে সমূলে উৎখাতের জন্য সকল কূটকৌশল বাস্তবায়ন করে থাকে। তারা ইসলামী শিক্ষাকে সহ্যই করতে পারে না। এটা সাময়িক দুনিয়াবী যন্ত্রণা ছাড়া অন্য কিছু উপহার দিবে না (সূরা আর-রূম ৭), যতক্ষণ পর্যন্ত এর সাথে দ্বীনের শিক্ষা সংযুক্ত না হবে। অনুরূপ ধণাঢ্য ব্যক্তিরাও দুনিয়াবী বিষয়ে অঢেল অর্থ খরচ করে থাকেন, কিন্তু ইসলামী শিক্ষার উন্নয়ন ও তাওহীদের প্রচার-প্রসারের জন্য একটি পয়সাও ব্যয় করতে চান না। বরং ঘৃণা ও অবজ্ঞা করে থাকেন। তাদের মধ্যে আল্লাহভীতি, কবরভীতি, পরকাল ও জাহান্নামভীতি বলতে কিছুই নেই। আল্লাহ তা‘আলা এবং রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলেমদেরকে এবং দ্বীনি ইলম শিক্ষাকে যে মর্যাদা দান করেছেন, তাকে তারা তোয়াক্কাই করেন না। আল্লাহ আলেমদের সম্পর্কে বলে দিয়েছেন, প্রকৃতপক্ষে আলেমরাই আল্লাহকে ভয় করে (সূরা আল-ফাতির ২৮)। অন্যত্র এসেছে, আলেমকে আল্লাহ অফুরন্ত কল্যাণ দান করেন (সূরা আল-বাক্বারাহ ২৬৯)। আল্লাহ আরো বলেন, ‘(হে মুহাম্মাদ!) আপনি বলুন! যারা জানে এবং যারা জানে না তার কি সমান?’ (সূরা আয-যুমার : ৯)। অন্যত্র বলেন, ‘(হে মুহাম্মাদ!) আপনি বলুন! অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান হতে পারে? আলো ও অন্ধকার কি এক হতে পারে?’ (সূরা আর-রা‘দ : ১৬)। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘আলিমগণই নবীগণের ওয়ারিছ’ (আবূ দাঊদ, হা/৩৬৪১, সনদ ছহীহ)। অন্য হাদীছে এসেছে, ‘আলেমগণই অন্যদের তুলনায় শ্রেষ্ঠ’ (তিরমিযী, হা/২৬৮৫, সনদ ছহীহ)। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ‘ইলম অর্জন করার উদ্দেশ্যে কোন পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তা‘আলা তা দ্বারা তাকে জান্নাতের কোন একটি পথে পৌঁছে দেন এবং ফিরিশতাগণ ‘ইলম তালাশকারী ছাত্রের উপর খুশি হয়ে নিজেদের ডানা বিছিয়ে দেন। আলিমদের জন্য আসমান ও যমীনের সকল অধিবাসী আল্লাহর নিকট দু‘আ ও প্রার্থনা করে। এমনকি পানির মধ্যে বসবাসকারী মাছও (তাদের জন্য দু‘আ করে)’ (আবূ দাঊদ, হ/৩৬৪১, সনদ ছহীহ)। অন্য হাদীছে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আলেমদেরকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করে না সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়’ (আহমাদ, হা/২২৮০৭; সনদ হাসান, ছহীহুল জামে‘, হা/৫৪৪৩; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২১৯৬)।

উক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, আলেম ও দ্বীনের জ্ঞান অর্জনকারীকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করা আল্লাহর নির্দেশ। তারা আল্লাহর কল্যাণ ও বরকত পাওয়ারও উৎস। যতদিন ইসলামী শিক্ষাকে মূল্যায়ন না করা হবে এবং সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষ নিজেদের সন্তানদেরকে দুনিয়াবী শিক্ষার সাথে সাথে তাওহীদের শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে না তুলবে, ততদিন দুর্নীতি, জাহেলিয়াত, সন্ত্রাস, মাদকমুক্ত নিরাপদ ও উন্নত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা মোটেও সম্ভব নয়। বরং ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল বিভাগ অপসংস্কৃতির হিংস্র ছোবলে ক্ষত-বিক্ষত হবে। কোন সন্তানই সৎ, যোগ্য ও সুনাগরিক হিসাবে গড়ে উঠবে না। ফলে তারাই এক সময় সমাজ ও রাষ্ট্র বিধ্বংসী বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে সমাজকে কলুষিত করে ফেলে থাকে। তাই ইসলামী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সুন্দরভাবে উপস্থান করতে হবে এবং এ শিক্ষাকে সর্বব্যাপী করার যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে বুঝার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!!

رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّا اِنَّکَ اَنۡتَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ





ফেসবুক পেজ