বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:৫৯ পূর্বাহ্ন

ইসকন: মুসলিম নিধনে হিন্দুত্ববাদী ইহুদী আগ্রাসন 


ইসকন একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক ও হিন্দুবেশধারী ইহুদী সংগঠন। যার অন্যতম থিউরি হচ্ছে- ‘নির্যবন করো আজি সকল ভুবন’। অর্থাৎ সারা পৃথিবীকে যবন মানে মুসলিম মুক্ত করো। এই সংগঠনের প্রধান কাজ হচ্ছে উস্কানিমূলক ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করা। এর পুরো নাম International Society for Krishna Consciousness (ISKCON), যার বাংলা ‘আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ’। ইসকনকে পশ্চিমা দুনিয়াতে ‘হরে কৃষ্ণ মুভমেন্ট বা হরে কৃষ্ণ আন্দোলন’ নামে পরিচিত। মূলত এটি একটি আন্তর্জাতিক সংঘ, যাদের কাজ হচ্ছে ‘কৃষ্ণ’-এর ধ্যান-ধারণা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া। বর্তমানে এ সংগঠনটিকে ইহুদীরা পরিচালনা করে। ইসকনের মূল নীতিনির্ধারকদের প্রায় অর্ধেকই হচ্ছে ইহুদী। তাদের অধিকাংশ অর্থের যোগানদাতা হল ইহুদীদের মোসাদ ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (বাংলাদেশে ‘র’, পৃ. ১৭১)।

১৯৬৬ সালে অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ নামক জনৈক কৃষ্ণভক্ত আমেরিকার নিউইয়র্কে ‘ইসকন’ প্রতিষ্ঠা করেন। আশ্চর্যের বিষয় হল- এ ব্যক্তি ভারতের কোন হিন্দু শিক্ষালয়ে লেখাপড়া করেননি, বরং খ্রিস্টানদের চার্চেই তিনি পড়াশুনা শেষ করেন। পেশায় ফার্মাসিউটিকাল ব্যবসায়ী হলেও অধিকাংশ হিন্দুদের বিরুদ্ধাচরণ সত্ত্বেও ইহুদী-খ্রিস্টান এজেন্টদের সহায়তায় তিনি এটাকে গোটা দুনিয়াতে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হন। ইসকন হচ্ছে হিন্দুদের মধ্যে পশ্চিমাদের তৈরি নতুন কৌশল। এর মাধ্যমে তারা ভারতবর্ষে হিন্দুদের উপরে নেতৃত্ব দখল করতে চাই। সংগঠনটি মুলত এনজিও টাইপের। এরা নিম্নবর্ণের হিন্দুদের দলে ভিড়িয়ে দল ভারি করে। এ কারণে তাদের আস্তানাগুলো হয় নিম্নবর্ণের হিন্দুদের আস্তানার পাশে। যেমন ঢাকা শহরে স্বামীবাগ মন্দিরের পাশে ইসকন মন্দির রয়েছে, যেখানে বিশাল মেথর পট্টি রয়েছে। এই মেথর পট্টির নিচুবর্ণের হিন্দুদের নিয়ে তারা দল ভারি করে। সিলেটেও ইসকনদের প্রভাব বেশি। কারণ চা শ্রমিকদের একটি বিরাট অংশ নিচু বর্ণের হিন্দু। এদেরকে দলে নিয়ে সহজে কাজ করে তারা।

ইসকনরা ‘পঞ্চগব্য’ নামের একটি খাবারের ব্যাপকভাবে প্রচার করে থাকে। যা তারা ঘি, দুধ, মাখন আর গোবর ও গোমূত্র দিয়ে তৈরি করে থাকে। শুধু এতটুকুই নয়, তারা গরুর গোবর ও গোমূত্র দিয়ে আরো নানা রকম খাবার তৈরি করে। তারা চায় তাদের সব খাবারেই যেন এই গোবর ও গোমূত্র মেশানো থাকে। এজন্য তারা বড় বড় গরুর খামারও তৈরি করেছে। এমনকি ঐ খাবার তারা গোটা দুনিয়াতে রপ্তানিও করে থাকে (http://www.goshala.com)। অথচ এটা মুসলিমদের ঈমান নষ্ট করার ইসকনীয় ষড়যন্ত্র বৈ কিছুই নয়।

বিনামূল্যে খাদ্যদান, আর্তমানবতার সেবা এবং সারা বছর বিভিন্ন দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় ক্ষুধার্তদের মধ্যে নিয়মিত খাদ্য বিতরণ করার মত কতিপয় বাহ্যিক ইতিবাচক কর্মকাণ্ড থাকলেও ষাটের দশকে নিউইয়র্কের ‘মার্কিন ফেডারেল কোর্টে’ তাদের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা হয়। ১৯৭৬ সালে নিউইয়র্ক দু’জন মার্কিন নাগরিক আদালতে ইসকনের বিরুদ্ধে এই মর্মে অভিযোগ করে যে, ইসকনের ধর্মগুরুরা তাদের কোমলমতি শিশু সন্তানদের ব্রেনওয়াশ করে প্রথমে তাদেরকে পরিবার থেকে আলাদা করেছে এবং পরবর্তীকালে ধর্মান্তরিত করেছে। অতঃপর ১৯৮৭ সালে আরেকটি মামলায় ইসকন নেতা কির্তানন্দের বিরুদ্ধে মার্কিন আদালতে হত্যা মামলার চার্জ গঠন হয় এবং তাকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামি তার সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে বিরাট এক অপরাধী গ্যাং গড়ে তুলেছে। এতদ্ভিন্ন তাদের বিরুদ্ধে সত্তর এবং আশির দশকে শিশু নির্যাতন এবং শিশু বলাৎকারের একাধিক মামলাও দায়ের করা হয়।

বাংলাদেশে ইসকনীদের সাম্প্রদায়িক উসকানীমূলক কিছু দাঙ্গা লাগানোর নমুনা রয়েছে। যেমন, বিভিন্ন মসজিদে সাম্প্রদায়িক হামলা করা। মসজিদে তারাবীহর ছালাত বন্ধ করা, ছালাতের সময় ইসকনের গান-বাজনা করা ইত্যাদি। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের সরকারী চাকুরীতে প্রচুর হিন্দুদের অনুপ্রবেশ। যা শতকরা ৩০ ভাগ। যদিও দেশে হিন্দু জনসংখ্যা মাত্র ২ ভাগ। এ ব্যাপারে ইসকন প্রচুর ইনভেস্ট করে। তাইতো দেখা যায়, ৯০ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত মুসলিম রাষ্ট্রের মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক হয় হিন্দু। ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশনে’র ইমাম ও মুওয়াজ্জিন প্রশিক্ষণ কর্মশালার প্রধান ও বিশেষ প্রশিক্ষক হিসাবে উপস্থিত থাকে হিন্দু। দেশের সচিবলায়ের প্রায় অধিকাংশই হিন্দু কর্তৃক পরিচালিত। সাবেক বিচারপতি এস. কে সিনহা ও শাহরিয়ার কবিরও ছিল ইসকন সমর্থক। এভাবে বর্তমানে প্রশাসন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ তাদের দখলে। ২০১৬ সালে সিলেটে ইসকন মন্দির থেকে পার্শ্ববর্তী মসজিদের মুছল্লীদের উপর গুলি বর্ষণ করে। ফলে ডজনখানেক মুছল্লী গুরুতর আহত হয়। ইসকনের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দেয়ায় ২০১৬ সালে খুন হয় সিলেটের এক মসজিদের ইমাম।

অতএব ইসকনের উদ্দেশ্য হল বাংলাদেশে রাম রাজত্ব কায়েম করা, অখণ্ড ভারত তৈরি করা, ইহুদী-খ্রিস্টানদের অনুগত রাষ্ট্র বানানো, নিজেদের মন্দির, বাড়ি ও ব্যক্তির উপর নিজেরা পরিকল্পিত হামলা করে মুসলিমদের উপর দোষ চাপিয়ে দেয়া। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২২ এপ্রিল ফরিদপুরে মন্দিরে আগুন লাগানোর অযুহাতে দুই মুসলিম ভাইকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। বর্তমানে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে যে দাঙ্গা-হাঙ্গামা কিংবা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চলছে তার অধিকাংশই ইসকন কর্তৃক সৃষ্ট। আইনজীবীকেও হত্যা করেছে ইসকন সমর্থিত হিন্দুরা। এভাবে তারা হিন্দু-মুসলিমদের মাঝে বিভিন্ন দাঙ্গা সৃষ্টি করার নোংরা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সর্বোপরি তাদের মূল টার্গেট হল মুসলিম নিধন করা। সুতরাং ইসকন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য চরম হুমকী। তাই সময়ের একান্ত দাবী হল, এদেশে ইসকন ও তার সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা এবং জনগণকে এ ব্যাপারে সতর্ক করা। আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম নিধনে ইসকনের সন্ত্রাসী আগ্রাসন থেকে বাংলাদেশ সহ গোটা মুসলিম উম্মাহকে হেফাযত করুন। আমীন!!

رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّا اِنَّکَ اَنۡتَ السَّیۡعُ الۡعَلِیۡمُ







প্রসঙ্গসমূহ »: সম্পাদকীয়
শী‘আদের ধ্বংসযজ্ঞ ও আমাদের করণীয় - সম্পাদকীয়
ইসলামী শিক্ষা : উন্নত জাতি গঠনের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম - সম্পাদকীয়
‘শী‘আদের’ ব্যাপারে সতর্ক থাকুন! - সম্পাদকীয়
উত্তম চরিত্রের দুর্ভিক্ষ ও পরিত্রাণের উপায় - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
তরুণদের মানহাজ বিভ্রান্তি ও তার কুফল - সম্পাদকীয়
ইসকন: মুসলিম নিধনে হিন্দুত্ববাদী ইহুদী আগ্রাসন - সম্পাদকীয়
অর্থ সংকট ও মূল রহস্য - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
অসুস্থ রাজনীতি ও তার কুপ্রভাব - সম্পাদকীয়
শৃঙ্খলাপূর্ণ উন্নত সমাজ কাঠামো কাম্য - সম্পাদকীয়
নিরাপদ সমাজ প্রতিষ্ঠায় আলেম সমাজের ভূমিকা - সম্পাদকীয়
খুন ও ধর্ষণ : নৈরাজ্যের চরম সীমা অতিক্রম - সম্পাদকীয়
মানহাজের বিরোধিতা ও তার পরিণাম - সম্পাদকীয়

ফেসবুক পেজ