সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২৯ অপরাহ্ন

সালাফী দাওয়াত ও বিদ‘আতীদের সন্ত্রাসী আগ্রাসন



বাংলাদেশে সালাফী দাওয়াত যত গতিশীল হচ্ছে, পীরপন্থী ভণ্ড ধর্মব্যবসায়ীরা ততই বেশি উন্মাদ ও আগ্রাসী হয়ে উঠছে। তাওহীদ ও সুন্নাতের আলোয় কবরপূজা, খানকাপূজা, মাযারপূজার ব্যবসায় যখন লালবাতি জ¦লতে শুরু করেছে, মীলাদ-ক্বিয়াম, শবেবরাত, কুলখানীর পুজিতে যখন ধস নামছে, পথভ্রষ্ট বিদ‘আতীরা তখন আহলেহাদীছ মসজিদ, মাদরাসা ভাঙ্গা শুরু করেছে, পুড়ানো শুরু করেছে। মুছল্লীদের উপর আক্রমণ শুরু করেছে। গত ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার ২০২৪ সোনারগাঁয়ে চেলাচর গ্রামের মোহাম্মাদিয়া সালাফিয়া মাদরাসা ভাংচুর করেছে এবং ইফতার মাহফিলে মুছল্লীদের উপর হামলা করে আহত করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এমন ঘটনা ঘটেই চলেছে। যেন আমরা মক্কার কাফের-মুশরিকদের সমাজে বসবাস করছি। মনে রাখা আবশ্যক যে, যারা মসজিদ-মাদরাসা ভেঙ্গে দেয়, পুড়িয়ে দেয়, তালা মেরে ছালাত বন্ধ করে দেয় তারা কখনো মুসলিম হতে পারে না। এরা ইহুদী-খ্রিস্টান, বিধর্মীদের চেয়েও নিকৃষ্ট।

এরা কাদিয়ানীদের উপর আক্রমণ করে না, দেশে কত খারাপ কাজ চলছে, ধর্ষণ হচ্ছে, সন্ত্রাসী কার্যক্রম চলছে, হাজার হাজার মাদকের কারখানা আছে, শত শত সিনেমা হল আছে, পতিতালয় আছে, যৌন সংস্কৃতি দিয়ে দেশটাকে উলঙ্গ করা হচ্ছে, বিশ^বিদ্যালয়ে ইফতার পার্টিতে হামলা হচ্ছে, এ সমস্ত ব্যাপারে পীরের পোষা বলদ সন্ত্রাসীদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। অভিশপ্ত ইহুদীরা যেমন রামাযান মাসে নিরীহ ফিলিস্তীনী ছিয়ামপালনকারীদের উপর হামলা চালাচ্ছে, তেমনি ভণ্ড পীরের সন্ত্রাসী মুরীদরা আহলেহাদীছদের উপর হামলা চালাচ্ছে। এদের মাঝে আর ইহুদীদের মাঝে আমরা কোন পার্থক্য খুঁজে পাই না। আর প্রতিবন্ধী প্রশাসন বসে বসে আঙ্গুল চুষছে। এ ব্যাপারে তাদের কোন ভূমিকায় নেই। অন্য কোন জাতির উপর এমন হামলা হলে সারা বিশে^ তোলপাড় হয়ে যেত।

বিদ‘আতীরা যে আল্লাহর শত্রু, নবীর শত্রু এবং ইসলামের দুশমন, তাদের কর্মকাণ্ডই তার জ¦লন্ত প্রমাণ। যারা কুরআন-সুন্নাহর তোয়াক্কা না করে দ্বীনের নামে মিথ্যাচার করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তারা শয়তানের এজেন্ট (সূরা আল-আন‘আম: ১১২ ও ১২১; ছহীহ বুখারী, হা/৩২১০)। এদের কাছে ইসলাম নিরাপদ নয়। ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘বিদ‘আতীরা বিদ্বেষপরায়ণ হয়ে এবং ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে নিজেদের নামকরণ করেছে ‘আছহাবুস সুন্নাহ’। মূলত এভাবে তারা মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছে। তারা আল্লাহর শত্রু, বরং ধূর্ত ও সর্বনিকৃষ্ট। তারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাদীছকে প্রত্যাখ্যান করে মস্তিস্কপ্রসূত ফৎওয়া দেয়, ভাল-এর নামে শরী‘আত রচনা করে এবং কুরআন-সুন্নাহর বিরুদ্ধে ফায়ছালা দেয়। বিদ‘আতীরা নিরেট মূর্খ, পথভ্রষ্ট। তারা এভাবে মিথ্যাচার করে এবং অপবাদ দিয়ে দুনিয়া কামাই করে (দুনিয়া পূজারী; পেটপূজারী)’ (ত্বাবাক্বাতুল হানাবিলাহ, ১/৩৫-৩৬ পৃ.)। আব্দুল ক্বাদের জীলানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘তুমি জেনে রাখ যে, বিদ‘আতীদের কিছু নিদর্শন রয়েছে, যা দ্বারা তাদের চেনা যায়। বিদ‘আতীদের লক্ষণ হল, আহলেহাদীছদের গালি দেয়া ও বিভিন্ন বাজে নামে তাদেরকে সম্বোধন করা। এগুলো সুন্নাতপন্থীদের বিরুদ্ধে তাদের দলীয় গোঁড়ামি ও অন্তর্জ্বালার বহিঃপ্রকাশ ছাড়া কিছুই নয়’ (গুনিয়াতুত ত্বালেবীন, ১/৯০ পৃ.)। তাই বিদ‘আতীদের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে এবং জাতিকে সতর্ক করতে হবে।

সালাফী দাঈ ও তরুণ ছাত্র ভাইদেরকে বলব, ধৈর্য ধারণ করুন! বিজয় আসবেই ইনশাআল্লাহ। সর্বত্র দাওয়াতী কাজ অব্যাহত রাখুন এবং ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করুন। নির্ভেজাল তাওহীদ ও সালাফী মানহাজের দাওয়াত সবসময় চ্যালেঞ্জের বিষয়। এই দাওয়াতের পথ কখনোই কণ্টকমুক্ত ছিল না, সবসময় ছিল কণ্টকাকীর্ণ। এই দাওয়াত নিয়ে নবী-রাসূলগণ যখন মানুষের দ্বারে দ্বারে গেছেন, তখন তাঁরাও হামলার শিকার হয়েছেন, অপমান ও লাঞ্ছনার কবলে পড়েছেন, হাজার হাজার নবী শহীদ হয়েছেন। অবশেষে বিজয় তাঁদেরই হয়েছে, তাঁরাই দুনিয়া-আখেরাতে সম্মানিত হয়েছেন। নূহ (আলাইহিস সালাম) কঠিন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-কে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতাদের রোষানলে পড়ে প্রজ্জ্বলিত আগুনে নিক্ষিপ্ত হতে হয়েছে, মাতৃভূমি ছাড়তে হয়েছে। মূসা (আলাইহিস সালাম) ফেরাউনের যন্ত্রণা সহ্য করেছেন। সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) আবূ জাহল গ্যাংয়ের আগ্রাসনের শিকার হয়েছেন বার বার। সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হয়েও নির্যাতনের কবল থেকে রক্ষা পাননি।

মুহাম্মাদ (ﷺ) যখন যুল মাজায বাজারে মানুষকে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ বলার দাওয়াত দিচ্ছিলেন, তখনই আবূ জাহল তাঁর মুখে মাটি নিক্ষেপ করেছে (মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৬৫৪, সনদ ছহীহ)। রাসূল (ﷺ) একদিন কা‘বা চত্বরে ছালাতে সিজদা অবস্থায় ছিলেন, তখন উতবা বিন আবূ মু‘আইত তাঁর গলায় চাদর পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে হত্যার চেষ্টা করে (ছহীহ বুখারী, হা/৩৬৭৮)। একদা আবূ জাহল ও তার সাঙ্গপাঙ্গ নবী করীম (ﷺ)-এর উপর উটের পচা ভুঁড়ি চাপিয়ে দিয়েছিল, তখন তিনি সিজদা অবস্থায় ছিলেন (ছহীহ বুখারী, হা/২৯৩৪)। তায়েফে দাওয়াত দিতে গেলে তায়েফের মুশরিকরা রাসূল (ﷺ)-এর পাথর বর্ষণ করে, তাঁকে বক্তাক্ত করে, বেহুঁশ করে দেয়। রাসূল (ﷺ) বলেন, এর চেয়ে কঠিন নির্যাতন আমার উপর আর কখনো করা হয়নি (ছহীহ বুখারী, হা/৩২৩১)। এভাবে তাঁকে অনেক অপমান-অপদস্ত করা হয়েছে। অথচ তিনিই পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানী ব্যক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। কিন্তু বিরোধী গোষ্ঠী ইতিহাসের নর্দমায় নিক্ষিপ্ত হয়েছে, অভিশপ্ত হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা অনেককে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন এবং দৃষ্টান্ত রেখে দিয়েছেন। নমরুদ, আযর, ফেরআউন, হামান, কারুন, আবূ জাহল, আবূ লাহাবরাই তার জ¦লন্ত প্রমাণ।

বর্তমানেও পৃথিবীর যেখানেই ছহীহ মানহাজের দাওয়াত প্রচারিত হচ্ছে, সেখানেই আহলেহাদীছদের উপর বিদ‘আতীরা কাফের-মুশরিকদের মত অত্যাচার নির্যাতন চালাচ্ছে। রাসূল (ﷺ)-এর কঠিন ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়িত হচ্ছে। তিনি বলেন, তোমাদের পর পরই ধৈর্যের যুগ আসবে। ঐ সময় যারা আমার সুন্নাতকে শক্তভাবে ধরে থাকবে, তাদের জন্য রয়েছে ৫০ জন শহীদের মর্যাদা (ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/১০৩৯৪, সনদ ছহীহ)। অন্য হাদীছে বলেন, যে আল্লাহর জন্য অপদস্ত হয়, আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন (ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৮৮)। অতএব মনে রাখতে হবে যে, যখনই তাওহীদ ও মানহাজের দাওয়াত বেগবান হবে, তখনই বাধা আসবে। আর সেই বাধার পরেই বিজয় সুনিশ্চিত হবে ইনশাআল্লাহ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ২১৪)। আল্লাহ তা‘আলা সালাফীদের দাওয়াতকে কবুল করুন এবং বিশ^ব্যাপী বিজয় দান করুন-আমীন!!

رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّا اِنَّکَ اَنۡتَ السَّیۡعُ الۡعَلِیۡمُ


 




প্রসঙ্গসমূহ »: দাওয়াত সম্পাদকীয়
বাবরি মসজিদের রায় : ইতিহাসের জঘন্য অধ্যায় - সম্পাদকীয়
দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি ও মূল রহস্য - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
ঈদে মীলাদুন্নবী : শী‘আদের সৃষ্ট অভিশপ্ত অনুষ্ঠান - সম্পাদকীয়
তাওহীদ সম্পর্কে জানা আবশ্যক কেন? - সম্পাদকীয়
সালাফী মানহাজ : পরিচিতি ও অনুসরণের আবশ্যকতা - সম্পাদকীয়
আহলেহাদীছদের বিরুদ্ধে বিষোদগার : চরম অজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ - সম্পাদকীয়
কুরআন মাজীদের হক্ব আদায় করুন! - সম্পাদকীয়
নাগরিকের রাষ্ট্রচিন্তা - সম্পাদকীয়
প্রতারণার পরিণাম - সম্পাদকীয়
ত্বাগূতী রাজনীতি অভিশাপ ও করুণ পরিণতি - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
­­অসহায় মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসুন! - সম্পাদকীয়
দুর্নীতি : সমাজ বিধ্বংসী মারণাস্ত্র - সম্পাদকীয়

ফেসবুক পেজ