বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৪ অপরাহ্ন

দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি ও মূল রহস্য


নিত্যপণ্যের মূল্য এখন লাগাম ছাড়া। শুধু ভোজ্যতেল, সবজি, চিনি, আদা, রসুন, পেঁয়াজ, আলু নয়, বরং সবকিছুর মূল্য অনেক অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। দুর্নীতিতে আসক্ত মানসিক বিকারগ্রস্ত ডিজিটাল প্রতিবন্ধীরা ছাড়া সব মানুষই এই অভিশাপের শিকার হচ্ছে। কিন্তু কোনভাবেই আয় বৃদ্ধি পায়নি। পরিবার বাঁচাতে সব সম্মান ও লজ্জাকে কুরবানী দিয়ে মুখ আড়াল করে টিসিবির ট্রাকের পেছনে দীর্ঘ লাইনে তীব্র দাবদাহের মধ্যে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর গভীর সংকটে দিনাতিপাত করছে। দিনে দিনে জ্বালানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আবাসন, পরিবহন ব্যবস্থা তাদের কঠিন চ্যালেঞ্জে ফেলেছে। অসৎ ব্যবসায়ীদের ভেজাল খাদ্যের কুপ্রভাবে প্রেসার, ডায়েবেটিস, কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগে  আক্রান্ত রোগীরা এখন ঔষধ পর্যন্ত কেনার সামর্থ্য নেই। প্রবীণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সাধারণভাবে মাসে কমপক্ষে ১০-১৫ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। কিন্তু নিম্ন আয়ের মানুষ যা আয় করছে তার পুরোটাই জীবন ধারণের জন্য ব্যয় করতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, শিক্ষার ইত্যাদির জন্য ব্যয় করার মত অর্থ তাদের হাতে থাকছে না। ফলে প্রবীণ জনগোষ্ঠীসহ নিম্ন মধ্যবিত্ত ও সাধারণ মানুষের বেশির ভাগই মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণ হিসাবে করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইত্যাদি কথা বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। অথচ আরো যেসমস্ত বড় বড় কারণ আছে সেগুলো ধামাচাপা দেয়া হচ্ছে। অসৎ ব্যবসায়ীর কারসাজি, অতি মুনাফাখোরি এবং সিন্ডিকেট ও মধ্যস্বত্বভোগী গন্ডারদের কথা বলা হচ্ছে না। স্বার্থরক্ষার জন্য সরকার ব্যবসায়ীদের নানা সুযোগ-সুবিধা দেয়ার কারণে তারাও সেটা দুর্নীতির ফাঁদ হিসাবে বাস্তবায়ন করছে। কিছু কিছু পণ্যের দাম সরকার বেঁধে দেয়ার পরও তা কার্যকর হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা পণ্য উৎপাদন করে নিজেদের ইচ্ছামত মূল্য নির্ধারণ করে দিচ্ছে। সাধারণ মানুষ আজ ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি। তাই বিপাকে পড়ছে সাধারণ মানুষ। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের দৃশ্যমান অপারগতার কথা জনগণ মুখে বলতে না পারলেও তাদের বুকে সীমাহীন ক্ষোভ বিরাজ করছে। ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে।

যারা সিন্ডিকেট তৈরি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে এবং সাধারণ মানুষের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়, তারা আর যাইহোক মানুষ হতে পারে না। সেজন্য সাধারণ মানুষ তাদেরকে আড়াল থেকে দুর্নীতিবাজ, চোর, ডাকাত, সন্ত্রাসী, মদখোর ইত্যাদি বাজে নামে চিত্রিত করে থাকে। কারণ তারা তো মানবতার শত্রু, দেশ ও জাতির শত্রু। তাদের এই অবৈধ হারাম উপার্জন তাদেরকে একদিন মমের মত নিঃশেষ করে দিবে। তারা, তাদের পরিবার এবং তাদের পরবর্তী প্রজন্ম বিভিন্ন মহামারি ও ভয়াবহ গযবের শিকার হবে। মূলত এরা অভিশপ্ত প্রাণী (আয-যুহদ, হা/১৩)। তাদের দু‘আ ও ইবাদত কবুল হবে না (সূরা আল-ফাতির : ১০; ছহীহ মুসলিম, হা/১০১৫)। তারা এই দুর্নীতি, আত্মসাৎ ও অবৈধ উপার্জনের সম্পদ বহন করে নিয়ে ক্বিয়ামতের মাঠে উপস্থিত হবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে তারা সাহায্য চাইলেও তিনি এই দুর্নীতিবাজদেরকে তাড়িয়ে দিবেন (সূরা আলে ইমরান : ১৬১; ছহীহ বুখারী, হা/১৪০৭)। তাদেরকে মুখের উপর ভর করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না (মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৩১৯, সনদ ছহীহ)। এরা দেখতে মাকাল ফলের মত। জুমু‘আর ছালাত, ঈদ ও জানাযার ছালাতের জন্য প্রথম কাতারে স্থান করে নেয়। যদিও পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত পড়ে না বা মসজিদে হাজির হয় না। এদের আবার অনেকেরই মুখে দাড়ি, গায়ে পাঞ্জাবীও শোভা পায়, যা সাইনবোর্ড হিসাবে ব্যবহার করে। এরা দেখতে খুবই ভদ্র। এদের ভিতরে আল্লাহর ভয় বলতে কিছু নেই। এরা কবর ও জাহান্নামের ভয় করে না। শুধু হারাম খেতে অভ্যস্ত। এদের পরিবারে ইসলামের কোন চর্চা নেই (মুসনাদে আহমাদ, হা/৭০৮৩, ছহীহ)।

সরকারকে এ ক্ষেত্রে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহল,
১. ভ্রাম্যমাণ আদালতকে জোরদার করা এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা
২. নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে যেসব পণ্য আমদানি হয় তার বড় অংশ দেশে উৎপাদন করা। এতে আমাদানির ওপর চাপ কমবে। ৩. দেশে প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের কাঁচামাল উৎপাদনের সুযোগ তৈরি করা
৪. মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখতে হলে পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে বিপণন ও ভোক্তার কাছে পৌঁছানোর পথ সহজ করা
৫. উৎপাদন খরচ কমানো
৬. নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিপণনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরিবহন, ভ্যাট, শুল্ক, সহনীয় পর্যায়ে রাখার পদক্ষেপ নেয়া
৭. অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি কৃষি ও শিল্প উৎপাদনে জোরদার করা
৮. কৃষ্টিপণ্য উৎপাদনের পর তা বিশেষ ব্যবস্থাপনায় স্টোরেজ করে সংরক্ষণ করা
৯. টিসিবিকে ব্যবহার করে বা বাজার মনিটরিং জোরদার করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা অব্যাহত রাখা।
১০. কৃষির উৎপাদন আধুনিকীকরণ করা এবং সুশুঙ্খল বাজার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা।
সর্বোপরি মহান আল্লাহর ভয় লালন করা এবং আল্লাহ প্রদত্ত ক্রয়-বিক্রয় নীতিমালার অনুসরণ করা। কেননা মূল্যের গতি আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতেই নির্ধারিত হয়ে থাকে। সঙ্কীর্ণতা ও প্রশস্ততা আনয়নকারী একমাত্র তিনিই এবং তিনিই রিযিকদাতা (তিরমিযী, হা/১৩১৪; আবু দাঊদ, হা/৩৪৫১)। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে হেফাযত করুন-আমীন!

 
رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّا اِنَّکَ اَنۡتَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ




প্রসঙ্গসমূহ »: সম্পাদকীয়
প্রতারণার পরিণাম - সম্পাদকীয়
শী‘আ প্রীতি ও সঊদী বিদ্বেষ - সম্পাদকীয়
রামাযান ও তাক্বওয়া : - সম্পাদকীয়
লৌকিকতামুক্ত কুরবানী: তাওহীদ বাস্তবায়নের উপায় - সম্পাদকীয়
অবরুদ্ধ কাশ্মীর : বিশ্ব মোড়লরা নীরব - সম্পাদকীয়
মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার পরাজয় : - সম্পাদকীয়
ঈদে মীলাদুন্নবী : শী‘আদের সৃষ্ট অভিশপ্ত অনুষ্ঠান - সম্পাদকীয়
নারী পোশাকের স্বাধীনতা ও প্রগতিবাদীদের ভ্রান্তি বিলাস - সম্পাদকীয়
সালাফী দাওয়াত ও বিদ‘আতীদের সন্ত্রাসী আগ্রাসন - সম্পাদকীয়
প্রচলিত রাজনীতি ও মানবতার করুণ পরিণতি - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
প্রচলিত কুসংস্কার : মুসলিমদের জন্য মরণব্যাধি ক্যান্সার - সম্পাদকীয়
ত্বাগূতী রাজনীতি অভিশাপ ও করুণ পরিণতি - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন

ফেসবুক পেজ