সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ১০:১৭ অপরাহ্ন

নাগরিকের রাষ্ট্রচিন্তা


প্রত্যেক নাগরিকই নিজের অস্থিমজ্জায় দেশপ্রেম লালন করে। দেশাত্মবোধে উদ্বেলিত থাকে। সমস্যা যতই থাক অন্য দেশের তুলনায় নিজের দেশকেই শ্রেষ্ঠত্বের আসনে রাখে, নিজ দেশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকে। দেশকে নিয়ে তার গর্বের শেষ থাকে না। তাই প্রতিটি নাগরিক দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক নিরাপত্তা, পররাষ্ট্রনীতি, প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ক্ষণে ক্ষণে পরখ করে, উপলব্ধি করে। অনুভূতি সবার সমান না হলেও পর্যায়ক্রমে সবই বুঝতে পারে। সেজন্য জনস্বার্থ বিরোধী যেকোন রাষ্ট্রচিন্তা প্রত্যেক নাগরিককে পীড়া দেয়, ব্যথিত করে। নাগরিকদের অবজ্ঞা করে রাষ্ট্রের পরিকল্পনা অসম্ভব। তাই জনস্বার্থের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, অধিকারও নেই।

নাগরিকরা যেমন দেশপ্রেম লালন করে, তেমনি ধর্মীয় চেতনাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়। অনাহারে থাকলেও, বসবাসের জায়গা না থাকলেও ধর্মীয় চেতনাকে এক মুহূর্তের জন্যও ভুলে যায় না। কাউকে দেশছাড়া করা গেলেও তার চেতনাকে হরণ করা যায় না। তাই তার ধর্মীয় চেতনা ভুলুণ্ঠিত হলে, আঘাতপ্রাপ্ত হলে, ধর্মীয় মূল্যবোধকে অবজ্ঞা করা হলে সে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায়, কোনভাবেই মেনে নিতে পারে না। প্রকাশ না করতে পারলেও হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ হয়, ক্ষোভে ফুঁসতে থাকে। সময়মত বিস্ফোরিত হয়। বাংলাদেশের ৯৫% মানুষ ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্ববাসী। এই মূল্যবোধকে মোটেও মূল্যায়ন করা হয় না। বরং তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয়, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করা হয়, সর্বত্র অপদস্ত করা হয়। ধর্মের লেবাস পরে ক্ষমতা দখল করলেও নাগরিকের উপর স্বৈরতন্ত্রকে চাপিয়ে দেয়া হয়। তারা ইসলামকে যেমন কলঙ্কিত করে, তেমনি যারা ইসলামের আদর্শকে ধারণ করে তাদের ইসলামচর্চার অধিকারটুকুও নেড়ে নেয়া হয়। ইসলামিক প্রতিষ্ঠান সমূহে ত্রাসের রাজ্য কায়েম করা হয়। অফিস-আদালত, প্রশাসন সর্বত্র ধর্মীয় মূল্যবোধ ভূলুণ্ঠিত। দাড়ি-টুপি, মসজিদ-মাদরাসাকে উপহাসের পাত্র বানানো হয়। অথচ তামাসার নির্বাচন আসলে ধর্মীয় লেবাসগুলোকে তারা অতি যত্নের সাথে অপব্যাবহার করে। প্রার্থীরা এমন মোল্লার বেশ ধারণ করে- মনে হয় এই মুন্সী সরাসরি আসমান থেকে নাযিল হয়েছে, তার মত দরবেশ পৃথিবীতে এর আগে আগমন করেনি। তসবীহ, টুপি, মাযার যিয়ারত, মসজিদে গমন, মাদরাসা ও ওয়ায মাহফিল, মন্দির, ইমাম-খত্বীব তাদের কাছে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায়। আর দেশপ্রেমিক নাগরিকরা তাদেরকে ভণ্ড, বকধার্মিক, প্রতারক, ধান্দাবাজ ইত্যাদি ব্যঙ্গাত্মক ভাষায় চিত্রিত করে। কারণ তারা জানে নির্বাচন শেষ হওয়ার সাথে সাথে আসল চরিত্র প্রকাশ পেয়ে যাবে। পুরো জাতির সাথে তারা বেঈমানী করবে।

জনগণের সেবক হিসাবে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে আর প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছড়ায়। কিন্তু ক্ষমতার মসনদে বসার পর সব ভুলে যাবে। একেকজন দুর্নীতির রাজপুত্র বনে যাবে, সন্ত্রাসীদের লিডার হয়ে যাবে, যত আকাম-কুকাম সবই করতে থাকবে। বছরের পর বছর ক্ষমতার স্বাদ উপভোগ করলেও জনগণের অবস্থার কোন পরিবর্তন হবে না; বরং তাদের বেঁচে থাকার অধিকারটুকুও হরণ করবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে পয়সার অভাবে জনগণ বাজার করতে না পারলেও প্রত্যেক নেতার সম্পদ বেড়ে যাবে দুইশ’, তিনশ’ ও পাঁচশ’ গুণের বেশি। দেশ-বিদেশে তারা বিশাল বিশাল প্রাসাদ নির্মাণ করবে। এগুলো সবই জনগণের ঘামের পয়সা, যা হলফনামায় খতিয়ান হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এরাই আবার দেশের সেবক হিসাবে পরিচিত হবে। এভাবেই তারা দেশের কর্ণধার হিসাবে ভক্ষকের ভূমিকা পালন করবে।

প্রত্যেক নাগরিকের চূড়ান্ত প্রত্যাশা হল, প্রশাসন তাদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। সর্বত্র জান-মালের নিরাপত্তা পাবে। সিভিল প্রশাসনের কাছে ন্যায় বিচার পাবে। কিন্তু পুলিশ প্রশাসনের কাছেই মানুষ নিরাপদ নয়। প্রত্যেকেই প্রশাসনের লোককে ভয় পায়। না জানি তারা কোন বিপদের মধ্যে ফেলে দেয়। আর বিচার বিভাগের কাছেও ন্যায় বিচার পাবে না সেটাও সে ভালভাবেই জানে। পেশিশক্তির জোরের কাছে ন্যায় বিচারের কোন মূল্য নেই। টাকার জোর যার রায় তার পক্ষেই হবে। মামলার রায় হতে হতে কয়েক পুরুষ শেষ হয়ে যাবে। এই অবিচারের কারণে কোন মানুষ বিচারের বিভাগের শরনাপন্ন হতে চায় না। বিচার বিভাগ নাগরিকের কথা চিন্তা করে না, তাদের অধিকাংশই শুধু লেজুড়বৃত্তি করে আর রসদ ভোগ করে। এভাবে প্রতিটি নাগরিকই আজ নির্মম যুলমের শিকার। দেশপ্রেমিক কৃষক আর অসহায় খেটে খাওয়া মানুষের কথা শাসকশ্রেণী ও প্রশাসনের লোকেরা মূল্যায়নই করে না, ভাবারও প্রয়োজন মনে করে না। অথচ দেশের প্রতিটি বিভাগ পরিচালিত হয় জনগণের ট্যাক্সের পয়সায়। তাদের টাকা খেয়েই আমলারা এই জাতিকে শোসন করে।

রাষ্ট্র যতদিন নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত না করবে, ততদিন ঐ রাষ্ট্র উন্নত হতে পারবে না। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। তাই সর্বাগ্রে নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এর সর্বশ্রেষ্ট মডেল হলেন, বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (ﷺ) এবং চার খলীফা। তাঁরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে জনগণের অধিকার নিশ্চিত করেছেন। আর আমাদের শাসকরা জনগণের সম্পদ লুটপাট করে, দুর্নীতির পাহাড় গড়ে তুলে। জনগণের সাথে এই গাদ্দারির পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। রাসূল (ﷺ) বলেন, যদি শাসক মুসলিম জনগণের দায়িত্ব গ্রহণের পর আত্মসাৎ করে মারা যায়, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন (ছহীহ বুখারী, হা/৭১১৫)। অন্য হাদীছে এসেছে, আল্লাহ যদি কোন দায়িত্ব অর্পণ করেন, আর সে যদি সুষ্ঠুভাবে তা পালন না করে, তবে সে জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না (ছহীহ বুখারী, হা/৭১৫০)। তিনি বলেন, নিকৃষ্ট দায়িত্বশীল হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যে অধীনস্থ জনগণের উপর অত্যাচার করে (ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৩০)। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জন্য ন্যায়পরায়ণ শাসক ও উত্তম সাহায্যকারী মনোনীত করুন-আমীন!!

رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّا اِنَّکَ اَنۡتَ السَّیۡعُ الۡعَلِیۡمُ


 




প্রসঙ্গসমূহ »: সম্পাদকীয়
মানহাজের বিরোধিতা ও তার পরিণাম - সম্পাদকীয়
খুলূছিয়াত আবশ্যক - সম্পাদকীয়
নারী পোশাকের স্বাধীনতা ও প্রগতিবাদীদের ভ্রান্তি বিলাস - সম্পাদকীয়
অবৈধ সম্পর্কের পরিণাম - সম্পাদকীয়
‘শী‘আদের’ ব্যাপারে সতর্ক থাকুন! - সম্পাদকীয়
সার্বিক নিরাপত্তা আবশ্যক - সম্পাদকীয়
করোনা ভাইরাস : যালিমদের জন্য অশনি সংকেত - সম্পাদকীয়
ইলিয়াসী তাবলীগ নিষিদ্ধের নেপথ্যে - সম্পাদকীয়
অবরুদ্ধ কাশ্মীর : বিশ্ব মোড়লরা নীরব - সম্পাদকীয়
ইসলামী দলগুলোর লেজুড়বৃত্তি ও ফলাফল - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
আশ‘আরী ও মাতুরীদী মতবাদের কুপ্রভাব - সম্পাদকীয়
আহলেহাদীছদের বিরুদ্ধে বিষোদগার : চরম অজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ - সম্পাদকীয়

ফেসবুক পেজ