বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৯ অপরাহ্ন

ত্বাগূতী রাজনীতি অভিশাপ ও করুণ পরিণতি 


আল্লাহ প্রদত্ত আইন ও বিধানের বিরোধী যেকোন নীতিমালা ও সংবিধানকে ‘ত্বাগূত’ বলে। এছাড়া যারা এই মানবরচিত আইন দ্বারা সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করে তারাও ত্বাগূত। আর প্রচলিত অর্থে কাফের-মুশরিক নেতা ও শয়তানকেও ত্বাগূত বলে (ই‘লামুল মুওয়াক্কিঈন, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৪৮)। তাই মুসলিম জীবন থেকে ত্বাগূতকে সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে। যে কেউ ত্বাগূতের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন না করলে আল্লাহ তাকে কখনই হেদায়াত দিবেন না এবং আল্লাহর কাছে সে মুসলিম বা মুমিন হিসাবেও স্বীকৃতি পাবে না (সূরা বাক্বারাহ ২৫৬)। এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা সকল নবী-রাসূলকে ত্বাগূত উৎখাত করে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার নির্দেশ প্রদান করেছেন (সূরা নাহল ৩৬)। কারণ সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা ধ্বংস করার অভিশপ্ত মরণাস্ত্র হল, মানবরচিত ত্বাগূতী শাসনব্যবস্থা। অথচ এই ত্বাগূতের সাথেই সকল মানুষ আপোস করেছে এবং তার আলোকেই জীবন পরিচালনা করছে। দেশে বর্তমানে যে রাজনীতি চলছে তা পাশ্চাত্যের বিজাতীয় মতবাদ ভিত্তিক ত্বাগূতী রাজনীতি। সূদী অর্থব্যবস্থা, বস্তুবাদী শিক্ষাব্যবস্থা এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা সবই ইসলাম বিধ্বংসী জাহেলী ত্বাগূতের মডেল। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, খুন ও গুমতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, পূঁজিবাদ, ফ্যাসিবাদ সব ইজম ও মতবাদের জন্ম হয়েছে ইসলামের নাম-নিশানা মুছে ফেলার জন্য, মুসলিম উম্মাহকে ধ্বংস করার জন্য এবং মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য। অনুরূপ ধর্মের নামে পীরতন্ত্র, তরীকাতন্ত্র, ছূফীতন্ত্র, গুরুতন্ত্র, ফকীরতন্ত্র, বাউলবাদ, বেওবন্দীবাদ, ব্রেলভীবাদ ইত্যাদি ফের্কা ও মতবাদগুলোও ত্বাগূত। ইসলামকে কলুষিত ও বিতর্কিত করার জন্যই এগুলোর জন্ম হয়েছে। এগুলো সব শয়তানের পাতানো ফাঁদ ও ইবলীসের প্রতারণা। তাই কোন ব্যক্তি এ সমস্ত ত্বাগূতের সাথে সম্পর্ক রাখতে পারবে না। এই অপবিত্র ত্বাগূতের ছোঁয়া লাগলে ঈমান ও ইসলাম সবই নষ্ট হয়ে যাবে এবং ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে।

মুসলিম ব্যক্তির একমাত্র অনুসরণীয় দ্বীন হল ইসলাম (আলে ইমরান ১৯)। ইসলামের সাথে অন্য কোন থিউরি বা দর্শনকে মিশ্রিত করা যাবে না। কারণ মুসলিম ব্যক্তির অন্তরে কুফর, শিরক, ত্বাগূত ও নিফাকের স্পর্শ থাকলে সেখানে তাওহীদ ও ঈমান প্রবেশ করে না। বরং এমন নামধারী ব্যক্তিদেরকে আল্লাহ তা‘আলা মুশরিক বলে ঘোষণা দিয়েছেন (সূরা ইউসুফ ১০৬)। তাছাড়া যারা ত্বাগূতী মতবাদকে সঠিক মনে করবে, তারা ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে। অর্থাৎ তারা আর মুসলিম থাকবে না (সূরা বাক্বারাহ ২০৮)। এই অবস্থায় মারা গেলে তারা তাদের ত্বাগূতী প্রভুদের সাথে জাহান্নামে প্রবেশ করবে (মুসলিম হা/১৮২)। কারণ ত্বাগূতের মূল উদ্দেশ্যই হল, মানুষকে আল্লাহর ইবাদত থেকে বিমুখ করে শয়তানের ইবাদতের দিকে ধাবিত করা। কুরআন-সুন্নাহ ছেড়ে তারা যেন মানবরচিত আইন ও বিধানের তাবেদারি করে। আল্লাহর ফায়ছালা বর্জন করে যেন ত্বাগূতের ফায়ছালা গ্রহণ করে (ফাতাওয়া লাজনাহ আদ-দায়িমাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৭৮৪)। অথচ প্রত্যেক মুসলিমের দায়িত্ব হল, ইসলাম বিরোধী যত ত্বাগূতী ইজম ও মতবাদ আছে, সবগুলোকে চিরতরে উৎখাতের সংগ্রাম করা (সূরা ছফফ ৯)। এই সংগ্রামে সবাইকে শরীক হতে হবে।

আমরা ইসলামের নীতি ও আদর্শ থেকে দূরে সরে আসার কারণে আমরা ত্বাগূতী শাসনব্যবস্থার অভিশাপের শিকার হয়েছি। দুর্নীতির হিংস্র থাবা, রাজনৈতিক সন্ত্রাস, মাদক সন্ত্রাস, জঙ্গী সন্ত্রাস ও অস্ত্র সন্ত্রাসের আগ্রাসনে সর্বত্র ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। এই নাস্তিক্যবাদী নীতি আমাদেরকে দলে দলে বিভক্ত করে প্রতিহিংসা পরায়ণ করেছে। ভাইয়ে ভাইয়ে দ্বন্দ, মারামারি, হানাহানি, খুনাখুনির আগুন স্থায়ীভাবে জ্বালিয়ে দিয়েছে। বস্তুবাদী জাহেলী রাজনীতির হিংস্র আক্রমণে ইসলামী রাজনীতির সোনালী রূপ ও ইতিহাস বিদায় নিয়েছে। বিজাতীয় রাজনীতি আমাদের উপহার দিয়েছে অপশাসন, গুম-খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, হত্যা, দুর্নীতি-আত্মসাৎ, প্রতিহিংসা ও সন্ত্রাসের রাজনীতি। আরো শিক্ষা দিয়েছে হরতাল-অবরোধ, ধর্মঘট ও আগুন সন্ত্রাস করে অর্থনীতি ও দেশ ধ্বংস করার মূলমন্ত্র। এছাড়া আরো শিক্ষা দিয়েছে দখলদারিত্ব, ক্ষমতার অপব্যবহার, আইনের অপপ্রয়োগ, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী ও অস্ত্রবাজী। পশ্চিমারা আমাদের উপহার দিয়েছে, সন্তানকে সন্ত্রাসী বানানোর কৌশল, জাতিকে উলঙ্গ ও অসভ্য করার পদ্ধতি, একটি জাতিকে কিভাবে নাস্তিক ও মূর্খ বানানো যায় তার সবক। ত্বাগূতী সংস্কৃতির বিষবাষ্পে দেশ পঙ্গুত্ব ও বন্ধ্যাত্ব বরণ করেছে। জাতি হিসাবে আমরা গোলামের জিঞ্জিরে আবদ্ধ হয়েছি, বহির্বিশ্বের শ্যেনদৃষ্টিতে পড়েছি এবং তাবেদারির নর্দমায় এখন হাবুডুবু খাচ্ছি।

অতএব আমাদেরকে ত্বাগূতের পথ ছেড়ে আল্লাহর দেখানো পথে ফিরে আসতে হবে। রাসূল (ﷺ) ও খোলাফায়ে রাশেদার রেখে যাওয়া আদর্শের উপর আবার সুপ্রতিষ্ঠিত হতে হবে। খেলাফতী ব্যবস্থা ফিরে আনতে হবে। ত্বাগূতী শাসন ব্যবস্থাকে আস্তকুড়ে নিক্ষেপ করতে হবে। তবেই মুক্তি মিলবে এবং আল্লাহর রহমত নেমে আসবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যারা ত্বাগূতের দাসত্বকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর দিকে ধাবিত হবে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের সুসংবাদ। সুতরাং আপনি আমার বান্দাদেরকে সুসংবাদ দান করুন (সূরা যুমার : ১৭)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি ত্বাগূতকে অস্বীকার করল এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করল, সে সুদৃঢ় হাতলকে শক্ত করে ধারণ করল, যা কখনো বিচ্ছিন্ন হবার নয়। আল্লাহ সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞানী (সূরা বাক্বারাহ : ২৫৬)। উক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, ত্বাগূতকে বর্জন করলে আল্লাহ হেদায়াত দিবেন, রহমত বর্ষণ করবেন এবং জান্নাত দান করবেন। অন্য হাদীছে এসেছে, ত্বাগূতের বিরোধী ব্যক্তিগণ আল্লাহ তা‘আলার উপস্থিতিতে জান্নাতে প্রবেশ করবেন (ছহীহ মুসলিম, হা/১৮২)। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের দেশকে ত্বাগূতের অভিশাপ থেকে মুক্ত করুন এবং তাওহীদের দেশ হিসাবে কবুল করুন-আমীন!!

رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّا اِنَّکَ اَنۡتَ السَّیۡعُ الۡعَلِیۡمُ





প্রসঙ্গসমূহ »: রাজনীতি সম্পাদকীয়

ফেসবুক পেজ